পর্বঃ৩৪
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট করা সম্পূর্ণ নিষেধ।)
…
রাইদা আইসক্রিম খাচ্ছে আর সায়ন মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আইসক্রিম খাওয়া রেখে রাইদা মিটমিট করে হাসছে একটু আগের ঘটা ঘটনা মনে করে।
রাইদা আর সায়ন যখন হেঁটে আসছিলো তখন রাইদা আইসক্রিম খাওয়ার বায়না করে সায়ন তো মুখের উপর নাকচ করে দেয় রাইদার আবদার। রাইদা রাস্তার মধ্যেই কান্না শুরু করে দেয়, রাইদার কান্নায় আশেপাশের মানুষ যখন তাকায় সায়ন লজ্জায় সাথে সাথে আইসক্রিম কিনে দেয়।
আইসক্রিম খাওয়া শেষ করে রাইদা এবার আবদার করে ঝালমুড়ি খাওয়ার।
‘রি এই রাতের বেলা মানুষ এইসব খায় বলো? চলো অন্য কিছু কিনে দিচ্ছি।’,সায়ন রাইদার হাত ধরে বলে।
‘না আমি এখন ঝালমুড়ি খাবো দুনিয়া উল্টে গেলেও।’,রাইদা জেদ করে বলে।
‘ঠিক আছে কিন্তু কম ঝাল দিয়ে।’,সায়ন বলে।
‘না অনেক ঝাল দিয়ে। মামা আপনি বেশি ঝাল দিয়ে মুড়ি বানান।’,সায়নকে আঁটকে রাইদা বলে।
মুড়ি ওয়ালা অনেকগুলো কাঁচা মরিচ দিয়ে ঝাল করে মুড়ি বানিয়ে দেয়। রাইদা খেতে শুরু করে আর সায়ন অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে এতো ঝাল খাওয়া।
‘চলেন বাসায় ফিরি রাত হয়েছে অনেক। বাসায় গিয়ে রাতের খাবার খাবো।’,রাইদা বলে।
‘তোমার ঝাল লাগছে না?’
সায়নের এমন প্রশ্নে রাইদার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপে।
‘একদম ঝাল নেই। আপনি একটু খেয়ে দেখেন,নেন একটু খান।’,সায়নের মুখের সামনে মুড়ি ধরে বলে রাইদা।
সায়ন খেতে চাচ্ছিলো না কিন্তু রাইদা মুখের সায়নে ধরে রেখেছে তাই খেয়ে নেয়। মুড়িটা মুখে দিয়ে সায়ন ঝালে কাশতে শুরু করে। কাশতে কাশতে সায়নের ঠোঁট নাক লাল হয়ে যায়। রাইদা যখন বুঝতে পারে ঝালটা বেশি লেগেছে সায়নের তখন সে দ্রুত গিয়ে এক বোতল পানি কিনে এনে সায়নকে দেয়।
‘নেন পানি খান ঝাল কমে যাবে।’,পানির বোতলের ঢাকনা খুলে সায়নের সয়নে ধরে বলে রাইদা।
পানির বোতলটা নিয়ে পানি খেয়ে বোতলটা প্রায় খালি করে ফেলে সায়ন।
‘কীভাবে খাও এসব এতো ঝাল দিয়ে?’,রাইদাকে সায়ন জিজ্ঞেস করে।
‘এই যে এভাবে খাই।’,ঝালমুড়ি মুখে দিয়ে খেতে খেতে বলে রাইদা।
‘মেয়ে মানুষ সব পারে। আর কিছু খাবা নাকি রিকশা ডাকবো? ‘, বোতলের পানি রাইদার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে সায়ন।
‘উহু রিকশা ডাকেন বাসায় যাবো।’
রাইদার কথা শুনে সায়ন রিকশা ডাক দেয়। রিকশা চলতে শুরু করলে রাইদা চুলগুলো হাত খোঁপা করে নেয়। রাতের বেলা লাল-নীল বাতির আলোতে শহরটা দেখতে মন্দ লাগছে না। রাইদা আশেপাশে তাকিয়ে মানুষজন দেখতে থাকে। রিকশা এসে ফ্ল্যাটের নিচে থামলে সায়ন ভাড়া মিটিয়ে রাইদার পিছন পিছন হাঁটতে শুরু করে। বিল্ডিং এর দারোয়ান রাইদাকে দেখে এগিয়ে আসে।
‘আপনের শরীর এখন ঠিক আছে? গত রাইতে তো দেইখা মনে হইছে অনেক অসুস্থ। ‘,দারোয়ান রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।
‘হ্যা আমি তো একদম সুস্থ কেনো কি হয়েছে?’,রাইদা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
‘কিছু হয়নি চলো ঘরে। চাচা আপনি গেটটার সামনে গিয়ে বসেন।’,সায়ন এসে তাড়া দিয়ে বলে।
‘আপনি কিন্তু এখনো আমাকে বলেননি কীভাবে বাসায় আমাকে নিয়ে গেছেন গতরাতে। জিজ্ঞেস করলেই বলছেন আমি নাকি নিজে হেঁটে গেছি আমার মনে নেই। মানছি আমি ক্লান্ত ছিলাম তাই হয়তো গভীর ঘুমে ছিলাম কিন্তু তাই বলে রাতের কথা ভুলে যাবো?’
কথাগুলো বলতে বলতে সায়ন আর রাইদা লিফটে উঠে। লিফটে আরো মানুষ থাকায় সায়ন কোনো জবাব দেয় না রাইদার কথায়। আটতলায় এসে লিফট থাকলে সায়ন ফ্ল্যাটের দিকে এগিয়ে যায় পিছন পিছন রাইদাও নানান প্রশ্ন করতে থাকে।
ফ্ল্যাটে ঢুকে সায়ন শোবার ঘরে চলে যায়। দরজা লাগিয়ে রাইদাও যায় শোবার ঘরে নিজের প্রশ্নের উত্তর নিতে।
শোবার ঘরে গিয়ে রাইদা সুইচ টিপে রুমের আলো জ্বালিয়ে দেখে সায়ন তার পরিহিত পাঞ্জাবী খুলে ফেলেছে। সায়ন বারান্দায় যেতে নিলে রাইদা পথ আঁটকায়।
‘কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেনো?’,সিরিয়াস ভঙ্গিতে সায়নকে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
আচমকা রাইদাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় সায়ন।
‘ঠিক এভাবে নিচ থেকে কোলে তুলে তারপর এভাবে এনে বিছানায় শুইয়েছি। কীভাবে গতরাতে ঘুমিয়েছি সেটা জানতে চাও?’
সায়নের মুখে এমন কথা শুনে রাইদা শোয়া থেকে উঠে বসে সায়নের বুকে কিল দেয়। বিরবির করতে করতে বাথরুমে চলে যায় হাতমুখ ধুতে। সায়ন হাই তুলে বিছানায় শোয় তখনই সায়নের ফোনে একটা কল আসে। ফোনটা হাতে নিয়ে সায়নের মুখে আঁধার নেমে আসে।
সায়ন ফোন হাতে নিয়ে রান্নাঘরের পাশে যে ছোট খালি রুমটা আছে সেখানে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। ফোনে ডায়াল করে একটু আগে কল আসা নাম্বারটায়। কল দিয়ে গম্ভীর গলায় কথা বলতে শুরু করে সায়ন।
মিনিট পাঁচেক পর বাথরুমের দরজা খুলে বের হয় রাইদা। শাড়ী পাল্টে সে এখন গেঞ্জি আর ট্রাউজার পরেছে। মুখে মেকআপ না করায় হাতমুখ ধুতে সময় লাগেনি। রুমে সায়নকে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় যায় সেখানেও সায়নকে পায় না। বসার ঘর, রান্নাঘরে সায়নকে না পেয়ে ছোট রুম টার দরজায় চোখ যায়। দরজায় হাত দিয়ে বুঝে ভেতর থেকে লাগানো। সায়ন হঠাৎ রুমের দরজা লাগিয়ে কি করছে সেটা জানার কৌতুহল জাগে রাইদার। দরজায় কান লাগিয়ে শোনার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুই শুনতে পায় না। বিরক্ত হয়ে দরজায় নক করতে থাকে। মিনিট খানেক পর সায়ন দরজা খুলে।
‘তুমি ভাত বারো আমি একটা জরুরি কল রিসিভ করে আসতেছি। বেশি সময় লাগবে না আমার।’,সায়নের কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই সায়নের ফোন বেজে উঠে।
সায়ন তড়িঘড়ি করে রাইদার মুখের উপর রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। রাইদা কিছু বলতে নিচ্ছিলো তার পূর্বেই রুমের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। কিছু না ভেবে রান্নাঘরে গিয়ে ভাত এনে টি-টেবিলে রাখে এরপর তরকারি ফ্রিজ থেকে বের করে গরম করে আনে।
ভাত তরকারি সামনে নিয়ে বিশ মিনিটের মতে বসে ছিলো রাইদা। একসময় বসে থাকতে থাকতে ঘুমে চোখ লেগে যায়। ছোট রুমটার বন্ধ দরজার দিকে না তাকিয়ে শোবার ঘরে গিয়ে রাইদা শুয়ে পরে।
প্রায় পঞ্চাশ মিনিট পর রুমের দরজা খুলে সায়ন বের হয়। বসার ঘরে এসে দেখে টি-টেবিলে ভাত তরকারি রাখা। সব কিছুর ঢাকনা তুলে বুঝে রাইদা খায়নি। শোবার ঘরে গিয়ে দেখে রাইদা ঘুমাচ্ছে।
বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে রাইদার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সায়ন।
‘বউ উঠো খেয়ে ঘুমাও। না খেয়ে ঘুমালে মাঝ রাতে খিদে পাবে কিন্তু। ‘,রাইদার মাথায় হাত বুলিয়ে সায়ন আদুরে গলায় ডাকতে থাকে।
রাইদা ঘুমে চোখ খুলতে পারছিলো না কিন্তু সায়নের ডাক ঠিকই শুনতে পায়।
‘সরুন ঘুমাবো।’,বিরবির করে ঘুম কাতুর গলায় বলে রাইদা।
‘খেয়ে ঘুমাও আমি তো না করছি না।’
সায়ন রাইদাকে ডাকতে থাকে কিন্তু রাইদার আর কোনো সাড়াশব্দ পায় না। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সায়ন হাত মুখে ধুতে যায়। হাতমুখ ধুয়ে কাপড় পাল্টে বসার ঘরে যায়। খাবার গুলো সব ফ্রিজে রেখে বিছানায় এসে দেখে রাইদা আজকেও কোল বালিশটা মাঝে দিয়ে রেখেছে। বালিশটাকে আগের রাতের মতো সরিয়ে সেখানে শুয়ে পরে। পাশ ফিরে ঘুমন্ত রাইদার দিকে তাকায় সায়ন। হুট করে রাইদাকে হারানোর ভয় জেঁকে বসে সায়নের মনে। শোয়া থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরায় সায়ন। চোখ বন্ধ করে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে থাকে আর ভাবতে থাকে কীভাবে কি করবে।
ঘন্টা খানেক পর রুমে এসে রাইদার পাশে শুয়ে পরে সায়ন। নির্ঘুম চোখে সিলিংফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। ঘুমের মধ্যে রাইদা পাশ ফিরে এক হাত সায়নের বুকের উপর রাখে। রাইদার হাতের উপর নিজের হাত রেখে সায়ন চোখ বন্ধ করে ফেলে।
….
একদিন পেরিয়ে ভার্সিটির ওরিয়েন্টেশনের দিন চলে আসে।
রুমের দরজা লাগিয়ে শাড়ী পরছিলো রাইদা। বসার ঘরে ল্যাপটপে অফিসের কাজে ব্যস্ত সায়ন। শাড়ী পরা শেষ হলে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় রাইদা। আজকে অনুষ্ঠানের রঙ হলো সাদা কালো। রাইদা সাদা ব্লাউজের সাথে কালো রঙের শাড়ী পরেছে। বিছানার উপর থেকে সিলভার রঙের গলার হার আর দুল জোড়া নিয়ে কানে পরে নেয়। চিরুনী দিয়ে চুল আঁচড়ে ভাবতে থাকে চুলগুলো খোলা রাখবে নাকি খোঁপা করবে। ভাবতে ভাবতে শেষে চুলগুলো খোলাই রাখে। দেরি করে ঘুম থেকে উঠায় রাইদার হাতে রেডি হওয়ার সময় কম থাকে তাই তাড়াহুড়ো করে হালকা সেজে নেয়।
রুমের দরজা খুলে শাড়ীর আঁচল ঠিক করতে করতে সায়নের সামনে এসে দাঁড়ায় রাইদা। সায়ন ল্যাপটপের স্কিনে তাকিয়ে ছিলো রাইদার চুড়ির শব্দ চোখ তুলে সামনে তাকায়।
‘দেখেন তো সব ঠিক আছে কিনা? ভেবেছিলাম অন্য কিছু পরবো কিন্তু অর্ক আগেই বলে দিয়েছে শাড়ী না পরলে অনুষ্ঠানে ঢুকতে দিবে না।’,চুল ঠিক করতে করতে বলে রাইদা।
‘কিছু ঠিক নেই।’,সায়ন গম্ভীর গলায় বলে।
‘কেনো সাজ খারাপ হয়েছে? সময় কম তাই তাড়াহুড়ো করলাম।’,রাইদা ব্যস্ত গলায় বলে।
ল্যাপটপ বন্ধ করে পাশের সোফায় রেখে সায়ন উঠে রাইদার সামনে আসে।
‘এতো বেশি সুন্দর লাগছ যে আমার ইচ্ছে করছে না তোমাকে অনুষ্ঠানে যেতে দিতে। কত ছেলেরা আমার সুন্দরী বউকে দেখবে এটা আমার মোটেও ভালো লাগছে না।’,রাইদার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলে সায়ন।
‘হয়েছে বুঝেছি আর ঢং করতে হবে না চলেন এবার না হলে দেরি হবে অনেক।’,শোবার ঘরে গিয়ে বলে রাইদা।
সায়ন নিজের পরিহিত কালো পাঞ্জাবীটার হাতা গুটিয়ে দাঁড়ায়। রুম থেকে ব্যাগ এনে রাইদা দরজা খুলে বের হয়। ফ্ল্যাটে তালা মেরে দু’জনে লিফটে চড়ে।
..
শাড়ীর কুঁচি ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে ভার্সিটির গেট দিয়ে ঢুকছিলো পায়েল তখনই কারো ডাকে মাথা তুলে তাকায়। তাকিয়ে দেখে দূর থেকে বাপ্পি ডাকছে।
‘ঐ জরিনা জলদি আয় কাজ আছে।’
বাপ্পির ডাক শুনে পায়েল রেগে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে বাপ্পির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
‘কেমন আছেন মিস উম নামটা মনে করতে পারছি না আপনার।’
কারো মুখে এমন আজগুবি কথা শুনে পায়েল পাশে তাকায়। পাশে তাকিয়ে দেখে রুবেল হাসিমুখে তাল মিলিয়ে হাঁটছে। হাঁটা থামিয়ে পায়েল দাঁড়ায়। পায়েলের হাসি বিহীন মুখটা দেখে রুবেল আবার কিছু বলবে কিনা সেটা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায়।
‘নাম পায়েল জাহান আর আমি ভালো আছি কিন্তু এই মূহুর্তে মন মেজাজ খারাপ অনেক।’,বাপ্পির দিকে তাকিয়ে বলে পায়েল।
‘আপনি কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছেন? ঐদিন আসলে আমার মেজাজ খারাপ ছিলো একটা বিষয় নিয়ে তাই আপনার সাথে অমন ব্যবহার করেছিলাম। পরবর্তীতে আমার নিজেরই খারাপ লেগেছি নিজের ব্যবহারে। আমি খুবই লজ্জিত সেদিনের ব্যবহারে।’,রুবেল সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে কথা গুলো।
‘আরে না আমি তো ভুলেই গেছি সেই ঘটনা যদিও ঐ সময় আপনার উপর অনেক রাগ লেগেছিলো কিন্তু পরে মনে হলো এসব মনে রেখে লাভ কি।’,জোর পূর্বক হেঁসে বলে পায়েল।
‘একটা কথা বলি? যদি না কিছু মনে করেন।’,রুবেল বলে।
‘হ্যা বলেন কি বলবেন।’,পায়েল বলে।
‘আপনার খোঁপাটা খুলে চুলগুলো যদি খোলা রাখেন আর কানের ভারী দুল জোড়া যদি খুলে ফেলেন তাহলে একদম পারফেক্ট লাগবে আপনাকে।’,পায়েলের দিকে তাকিয়ে বলে রুবেল।
রুবেলের মুখে এমন কথা শুনে পায়েল চোখ তুলে রুবেলের দিকে তাকায়।
‘না আসলে আমার মনে হলো আপনাকে এভাবে বেশি সুন্দর লাগবে যদিও এখনো আপনাকে সুন্দর লাগছে তাও বললাম।’,রুবেল হাসিমাখা মুখে বলে।
‘আপনি এখানে হঠাৎ? ‘,কথা ঘুরাতে প্রশ্ন করে পায়েল।
‘বন্ধুর ছোট বোন এখানে পড়ে ওরেই দিতে এসেছিলাম। বেচারি শাড়ি পরে হাঁটতে পারে না তাই আমারি আসতো হলো ওরে অনুষ্ঠানে পৌঁছে দিতে। এখন চলে যাচ্ছিলাম আপনাকে দেখে ভাবলাম ক্ষমা চেয়ে যাই।’,রুবেল জবাব দেয়।
‘বন্ধুর বোনকে আপনি কেনো আনলেন? আপনার বন্ধুর কি হয়েছে?’,পায়েল ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে।
‘বন্ধু বাসার বাহিরে বউ নিয়ে আলাদা থাকছে তাই সকালে আমাকে কল দিয়ে বললো বোনকে পৌঁছে দিতে। বেচারা নিজের সংসার ঠিক করার জন্য দিনরাত এক করে বউকে সময় দিচ্ছে। এত বছর পর ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছে তাও সেই মানুষটাকে কাছে রাখার জন্য কত কিছু করতে হচ্ছে।’,রুবেল হেঁসে বলে।
‘মেয়েটা অনেক ভাগ্যবতী। আজকাল তো এমন স্বার্থহীন ভালোবাসা পাওয়া মুশকিল। দোয়া করি ভাইয়াটার সাথে যেনো তার ভালোবাসার মানুষের খুব জলদি মিল হয়।’,পায়েল আনমনে বলে।
‘আপনি এখন তো স্টেজের ঐখানে যাবেন? আপনাকে আঁটকে আপনার সময় নষ্ট করলাম। আমি গেলাম আপনি স্টেজের দিকে যান।’,রুবেল বলে।
‘আরে আপনি কই যাচ্ছেন চলেন অনুষ্ঠান শেষ হলে যাবেন।’,পায়েল তড়িঘড়ি করে বলে।
‘আমার অফিস আছে একটু পর এখন না গেলে দেরি হয়ে যাবে।’,রুবেল হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে।
‘আজকে না গেলে হয় না? বলছি অনুষ্ঠান শেষ হলে যান।’,পায়েল বলে।
রুবেল হেঁসে মাথা চুলকে পায়েলের দিকে তাকায়।
‘বসকে কল দিয়ে কি বাহানা দেওয়া যায় বলেন তো।’,রুবেল পায়েলকে জিজ্ঞেস করে।
‘বলেন আপনার অনেক জ্বর আর বমি।’,পায়েল জবাব দেয়।
পায়েলের কথা শুনে রুবেল হাসতে থাকে।
‘তারপর বস বলবে আপনাকে আর কাল থেকে অফিসে যেনো না দেখি।’
রুবেলের কথা শুনে পায়েলও হেঁসে দেয়।
‘আপনি যান আমি অফিসে কল দিয়ে দেখি যদি বসকে ম্যানেজ করতে পারি তাহলে দেখা হবে না হলে একনই শেষ দেখা।’
রুবেলের কথা শুনে পায়েল কোনো জবাব দেয় না স্টেজের দিকে যেতে থাকে।
অর্ক,বাপ্পি আর ফাহিম স্টেজটা দেখছে সব ঠিকঠাক কিনা। পায়েল এসে একটা চেয়ার টেনে বসে। অর্ক পায়েলকে এক দেখে আশেপাশে তাকায়।
‘রাই কই?’,পায়েলকে প্রশ্ন করে অর্ক।
‘রাইয়ের খবর জানি না ও তো দু’দিন ধরে আমার কলই রিসিভ করে না আর রুহি বললো আসতেছে রিকশায় আছে। আমি বললাম আমার সাথে আসতে ও বললো ওর নাকি দেরি হবে।’,পায়েল উত্তর দেয়।
‘জিজ্ঞেস করছি রাইয়ের কথা মাঝে রুহিকে টানিস ক্যান?’,অর্ক বিরক্ত হয়ে বলে।
‘তুই যে কি চাস সেটা আদোও বুঝলাম না।’,পায়েল ফোঁড়ন কেটে বলে।
‘তোর এতো বুঝা লাগবে না অডিটোরিয়ামে গিয়ে দেখ যারা নাচ পারফর্ম করবে ওরা সবাই এসেছে কিনা।’, অর্ক পায়েলকে বলে।
পায়েল বসা থেকে উঠে অডিটোরিয়ামে যায়। অডিটোরিয়ামে গিয়ে সবাইকে দেখতে থাকে। সেখানের জুনিয়ারদের সাহায্য নিয়ে চুলের খোঁপা খুলে ফেলে সাথে কানের দুল জোড়াও। ব্যাগ থেকে আয়না বের করে নিজেকে দেখতে থাকে।
..
ভার্সিটির বিপরীত পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বান্ধবীকে নিয়ে ফুচকা খাচ্ছিলো সায়ন্তিকা। বেশি করে টক দিয়ে ফুচকাটা মুখে দিতেই স্বাদে সায়ন্তিকার চোখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। মুখের ফুচকাটা খাওয়া শেষ করে চোখ খুলে আরেকটা ফুচকা খাওয়ার জন্য তখনই সায়নের গাড়ি তার নজরে আসে।
সায়নের গাড়ি এসে থামে ভার্সিটির গেট থেকে একটু দূরে। ড্রাইভিং সিট থেকে সায়ন বেরিয়ে দৌড়ে অপরপাশে এসে গাড়ির দরজাটা খুলে দেয়। গাড়ি থেকে কে বের হয় সেটা দেখার জন্য চাতক পাখির ন্যায় সায়ন্তিকা তাকিয়ে থাকে। গাড়ির ভেতর থেকে হাসতে হাসতে রাইদা বের হয়। রাইদাকে দেখে সায়ন্তিকার চোখ বড়বড় হয়ে যায়। হাতে থাকা ফুচকার প্লেটটা বান্ধবীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে আড়ালে দাঁড়ায় সে।
রাইদা সায়নকে কিছু বলছিলো আর সায়নও রাইদার শাড়ীর আঁচল ধরে পিছনে দাঁড়িয়ে ঠিক করে দেয়। রাইদা হাঁটা দেয় কি ভেবে আবার সায়নের দিকে ফিরে তাকিয়ে আবার হাঁটা দিয়ে সায়নের সামনে এসে সায়নের চুলগুলো ঠিক করে দেয়। সায়ন হাসতে হাসতে রাইদার হাতে চুমু খেলে রাইদা সায়নকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে ভার্সিটির গেটের দিকে যায়।
দূর থেকে এসব দেখে সায়ন্তিকা কি রিয়াকশন দিবে ভেবে পায় না। মাথায় হাত রেখে চেয়ারে বসে পরে। ফোন বেজে উঠলে দেখে সায়ন কল দিয়েছে তাকে। কল রিসিভ করে সায়ন্তিকা ফোন কানে দেয়।
‘কিরে তুই কি ভার্সিটিতে এসেছিস? আমি তোর ভার্সিটির সামনে।’,সায়ন বলে।
‘হ্যা রুবেল ভাইয়া আমাকে নিয়ে এসেছে। তুমি কি একা এসেছো? ভাবী কোথায়?’,সায়ন্তিকা গলা ঝেরে প্রশ্ন করে।
‘তোর ভাবী তো বাসায় আসলে ওর শরীরটা খারাপ একটু। সুস্থ থাকলে নিয়ে আসতাম। কই আছিস বল আমি দেখা করে যাই।’,আমতাআমতা করে সায়ন বলে।
সায়নের এমন জবাব পেয়ে সায়ন্তিকার কান্না পেয়ে যায়।
‘লাগবে না তোমার দেখা করা।’,কথাটা বলে সায়ন্তিকা কল কেটে দেয়।
সায়ন্তিকার এমন ব্যবহারের কারণ সায়ন খুঁজে পায় না। সে চলে যায় গাড়িটা পার্ক করতে।
‘শেষে কিনা ভাইয়া ভাবীকে ঠকাচ্ছে তাও এই দু’দিনের পরিচিত হওয়া দ*জ্জা*ল মেয়েটার জন্য! আমারই দোষ কেনো যে ঐ দিন ভাইয়ার সাথে ওনার দেখা করালাম। দেখা না করালে আজকে এই দিন দেখতে হতো না।’,বিরবির করে বলতে থাকে সায়ন্তিকা।
ফুচকার বিল মিটিয়ে বান্ধবীকে ফেলে ভার্সিটির দিকে দৌড় দেয় সায়ন্তিকা। বেচারি সায়ন্তিকার বান্ধবী আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে ফুচকার প্লেট হাতে।
..
রাইদা স্টেজের দিকেই যাচ্ছিলো তখনই দেখে অডিটোরিয়াম থেকে পায়েল আর রুহি বের হচ্ছে। ওদের দু’জনকে দেখে হাঁটা থামিয়ে রাইদা দাঁড়ায়।
পায়েল আর রুহি এসে দু’পাশ থেকে রাইদাকে জড়িয়ে ধরে। কথা বলতে বলতে স্টেজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তিনজন। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। হোস্টের দায়িত্ব পালন করছে বাপ্পি আর অন্য একটা মেয়ে।
অর্ক এসে তিনজনের বসার ব্যবস্থা করে দেয়। বসার পর রাইদা এদিক সেদিক তাকিয়ে সায়নকে খুঁজতে থাকে।
গাড়ি পার্ক করে সায়ন ভার্সিটির ভেতর যায় তবে সায়নের নজরে আসে গেটের পাশে দাঁড়ানো রুবেল।
‘কিরে তুই অফিস যাসনি?’,সায়ন এগিয়ে রুবেলকে জিজ্ঞেস করে।
সায়নকে দেখতে পেয়ে রুবেল ভ্যাবাচ্যাকা খায়।
‘না আসলে সায়ু বললো থাকতে তাই ছুটি নিলাম। তুই না বললি আসবি না?’,জোর পূর্বক হেঁসে বলে রুবেল।
‘হ্যা অফিসের কাজ ছিলো কিছু কিন্তু রি জেদ করলো তাই আসলাম। সায়ন্তিকার কিছু হয়েছে কিনা জানিস? আমি কল দিলাম ঠিক ভাবে কথা বললো না উল্টো রাগ দেখালো।’,সায়ন চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে।
‘সেটা তো বলতে পারলাম না।’,রুবেল জবাব দেয়।
‘চল গিয়ে দেখি রি ঠিকঠাক বসেছে কিনা। তারপর না হয় তুই আর আমি টংয়ে গিয়ে আড্ডা দিবো।’,সায়ন বলে।
সায়ন আর রুবেল চলে যায় স্টেজের সামনে বসা দর্শকের সেখানে। খুঁজতে খুঁজতে সায়ন রাইদাকে পেয়ে যায়। রাইদার দিকে সায়ন যেতে নিলে সায়ন্তিকা এসে সায়নের হাত ধরে। হুট করে কেউ হাত ধরায় সায়ন তাকায়।
‘কিরে কি হয়েছে এভাবে হাত ধরেছিস কেনো?’,সায়ন প্রশ্ন করে।
‘তোমার সাথে কথা আছে এদিকে আসো।’,সায়ন্তিকা হাত টেনে বলে।
সায়নও চলে যায় সায়ন্তিকার সাথে। রুবেল কিছু না বুঝতে পেরে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।
স্টেজ থেকে একটু দূরে সায়নকে এনে দাঁড় করায় সায়ন্তিকা।
‘কি হয়েছে বল এবার।’,সায়ন বিরক্ত হয়ে বলে।
‘চলো ভাবীর সাথে দেখা করবো।’,সায়ন্তিকা বলে।
‘আরে বললাম তো ওর শরীর খারাপ। সুস্থ হলে তোর সাথে অবশ্যই দেখা করাবো।’,সায়ন বলে।
‘ভাবীর শরীর খারাপ তাহলে তুমি এখানে কি করছো? যাও এখনই বাসায় গিয়ে ভাবীর খেয়াল রাখো।’
সায়ন্তিকার এমন আচরণের কারণ বুঝতে পারে না সায়ন। তার ইচ্ছে করছে রাইদার সাথে সায়ন্তিকার দেখা করাতে কিন্তু রাইদা স্পষ্ট বলে দিয়েছে এখনই সে সায়নের পরিবারের কারো সাথে দেখা করবে না।
‘ঠিক আছে চলে যাচ্ছ আমি। কিছু প্রয়োজন হলে কল দিস।’
কথাটা বলে সায়ন ভার্সিটি থেকে বের হয়ে যায়। সায়ন যেতেই ফোন বের করে কাউকে কল দেয় সায়ন্তিকা।
গাড়ির সামনে গিয়ে রাইদাকে কল দেয় সায়ন। সায়নের কল রিসিভ করে কিছু শুনতে পায় না রাইদা তাই সে চেয়ার থেকে উঠে হাঁটা দেয় দূরে গিয়ে কথা বলার জন্য। রুবেলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাইদা সেখানে যায়।
‘আরে ভাইয়া আপনি? এখানে দাঁড়িয়ে কেনো যান গিয়ে বসেন। এই পায়েল ভাইয়াকে আমসর জায়গায় বসতে দে।’,রুবেলের সামনে গিয়ে রাইদা বলে।
‘আরে না আপু সমস্যা নেই।’,রুবেল জবাব দেয়।
‘অবশ্যই সমস্যা আছে আপনি যান গিয়ে বসেন।’
কথাটা বলে রাইদা ফোন কানে দিয়ে হাঁটা দেয়।
রুবেল গিয়ে পায়েলের পাশের চেয়ারে বসে। রুবেলকে দেখে পাশের চেয়ারে বসা জুনিয়রকে সরিয়ে চেয়ার খালি করিয়েছে পায়েল। রুবেল চেয়ারে বসে পায়েলের দিকে তাকিয়ে হাসি দেয় কিন্তু পায়েল কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
ফোন কানে দিয়ে স্টেজ থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে কথা বলতে শুরু করে রাইদা।
‘কি হলো আপনি আবার কোথায় হারালেন?’,রাইদা জিজ্ঞেস করে।
‘তোমার ননদিনী আমাকে ভার্সিটি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।’,সায়ন জবাব দেয়।
‘কেনো আপনি আবার কি করেছেন?’,রাইদা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
‘সে তার ভাবীর কথা জিজ্ঞেস করেছে বলেছি ভাবী অসুস্থ ব্যস সে আমাকে বললো বাসায় গিয়ে ভাবীর সেবা করতে।’
সায়নের কথা শুনে রাইদা হেঁসে দেয়।
‘মিথ্যা বলেছেন যখন এখন ভোগ করুন শাস্তি।’
‘তাহলে তেমার ননদিনীকে বলে দেই তার ভাবী সুস্থ একদম আর সে শাড়ী পরে ঘুরঘুর করছে।’
‘একদম না আপনাকে তো বলেছিই এখন আপনার পরিবারের কারো সাথে দেখা করবো না।’
‘ঠিক আছে দেখা করতে হবে না। আমি গাড়িতে বসে আছি তুমি কখন আসবা?’
‘অপেক্ষা করতে থাকেন আমার দেরি হবে। কল রাখছি।’
‘শুনো বেশি দেরি করলে কিন্তু আমি আবার আসবো তাই জলদি বের হও।’
সায়নের কথায় পাত্তা না দিয়ে কল কেটে দেয় রাইদা।
কল কেটে হাঁটা দেয় স্টেজের দিকে। বিপরীত পাশ থেকে সায়ন্তিকা রাইদার দিকে আসতে থাকে। সায়ন্তিকাকে রাইদা ভালো করে খেয়াল করতে থাকে। সায়ন আর সায়ন্তিকার চেহারার গঠন একই রকম।
‘কি দেখছেন এভাবে?’,সায়ন্তিকা রাইদাকে রাইদাকে প্রশ্ন করে।
‘তোমাকে দেখছি। তুমি অনেক সুন্দর আর মিষ্টি একটা মেয়ে।’,রাইদা হাসি দিয়ে বলে।
রাইদার কথায় সায়ন্তিকা লজ্জা পায়।
‘আপনি আমার ভাইয়াকে চিনেন?’,সায়ন্তিকা আবারো প্রশ্ন করে।
‘সেদিন যে এসেছিলো সে তোমার ভাইয়া?’
‘আপনি উল্টো আমাকেই প্রশ্ন কেনো করছেন? আজকে ভাইয়ার গাড়িতে আপনি কেনো এসেছেন?’
‘তোমার ভাইয়া আমাকে লিফট দিয়েছে তাই। তাছাড়া তুমি এতো প্রশ্ন কেনো করছো?’
‘অপরিচিত কেউ লিফট দিলো আর আপনি চড়ে বসলেন গাড়িতে? ভাইয়া বিবাহিত আর আমার ভাবী আপনার থেকেও সুন্দরী তাই আমার ভাইয়ার থেকে দূরে থাকুন।’,সায়ন্তিকা গম্ভীর গলায় কথাগুলো বলে।
‘এত কিছু তোমার না জানলেও চলবে। আর আমি সুন্দর করে কথা বলছি তার মানে ভেবোনা আমি তোমাকে ভয় পাচ্ছি আসলে আমার আর ইচ্ছে করে না তোমার মতো মিষ্টি মেয়েকে ধমক দিতে। আমার ইচ্ছে করে তোমাকে দেখলে গাল টেনে দিতে কিন্তু এখন গাল টানলে তোমার। মেকআপ নষ্ট হবে তাই ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখলাম। সরো স্টেজের দিকে যাবো পরে কথা হবে।’
কথাগুলো বলে রাইদা সায়ন্তিকার পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
রাইদার বলা কথাগুলো শুনে সায়ন্তিকা রেগে যায়। কীভাবে রাইদাকে শায়েস্তা করবে ভাবতে থাকে।
স্টেজের পিছনে গিয়ে রাইদা দাঁড়ায়। অর্ক রাইদাকে দেখে এগিয়ে আসে।
‘শরীর কেমন এখন তোর?’,অর্ক জিজ্ঞেস করে।
‘শরীর মন দুটোই ভালো একদম একশত ভাগ ভালো।’,রাইদা হেঁসে বলে।
‘নে তোর স্পিচ। প্রতি সেমিস্টারের জুনিয়রদের একই স্পিচ দ্যাস বোর লাগে না?’,রাইদার হাতে একটা কাগজ দিয়ে বলে অর্ক।
‘ফ্রেশাররা তো জানে না আমি একই স্পিচ দিচ্ছি তাই বোর হওয়ার কোনো কারণ নেই।’,রাইদা বলে।
‘রুহিকে ঠিক ভাবে দেখেছিস? পুরাই মাখন লাগছে ওরে আজকে।’,রাইদা বলে।
‘তুই দেখ আমি সময় পেলে পরে দেখে নিবো।’,অর্ক জবাব দেয়।
রাইদা কিছু বলার পূর্বেই স্টেজে রাইদার নাম ঘোষণা করা হয়। রাইদা চলে যায় স্টেজে বক্তব্য দিতে। ফ্রেশারদের উদ্দেশ্যে সবসময় ওরিয়েন্টেশনে রাইদা বক্তব্য রাখে। রাইদার বক্তব্য শেষ হলে সে স্টেজ থেকে নেমে পায়েল আর রুহি যেখানে বসে ছিলো সেখানে চলে যায়।
মিনিট বিশেক পর অর্ক,বাপ্পি এলে রাইদা,পায়েল আর রুহি বসা থেকে উঠে যায়। রুবেলকে ডেকে রাইদা সাথে নিয়ে নেয়। হাঁটতে হাঁটতে সকলে ভার্সিটির গাছ তলায় চলে যায় সেখানে ফাহিম বসে আছে।
রুবেলের হাতে রাইদা ক্যামেরা ধরিয়ে দিয়ে বলে তাদের গ্রুপ ছবি তুলে দিতে। একে একে রুবেল রাইদাদের অনেকগুলো ছবি তুলে দেয়। ছবি তোলা শেষ হলে অর্ক,বাপ্পি,ফাহিম চলে যায় স্টেজের দিকে। অর্ক, বাপ্পি পারফর্ম করবে এখন আর ফাহিম তা ভিডিও করবে।
রাইদার ফোন আবারো বেজে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে রাইদা দেখে সায়ন কল দিয়েছে। কথা বলার জন্য রাইদা সেখান থেকে সরে যায়।
‘আমি তাহলে চলে যাই অনেকক্ষণ বসলাম।’,পায়েলকে বলে রুবেল।
‘চলুন আপনাকে এগিয়ে দেই।’,পায়েল বলে।
রুহি পায়েলের কথা শুনে চোখ তুলে তাকায়।
‘না সমস্যা নেই আমি যেতে পারবো।’,রুবেল না করে দেয়।
‘আরে না চলেন। রুহি তুই থাক আর শোন।’,পায়েল গিয়ে রুহির কানেকানে কিছু বলে।
রুহি সব দেখছে আর অবাক হচ্ছে। পায়েল হাঁটা দেয় সাথে রুবেলও যায়। ফোনে কথা শেষ করে রাইদা এসে দেখে শুধু রুহি দাঁড়িয়ে আছে।
‘কিরে পায়েল কই?’,রুহিকে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
‘ঐ ভাইয়ার পকেট ফাঁকা করতে গেছে।’,রুহি জবাব দেয়।
‘মানে?’,রাইদা আবারো জিজ্ঞেস করে।
‘ঐ যে ভাইয়াটা ছিলো সেদিন অনুষ্ঠানে ওর পায়ে জুস মেরেছিলো সেটার শোধ নিতে আজকে ভাইয়াটাকে নিয়ে ক্যাফেতে গিয়ে ওনাকে জব্দ করবে।’,রুহি বলে।
‘বুঝেছি সব খেয়ে বেচারা রুবেল ভাইয়ার হাতে বিল ধরিয়ে দিবে।’,রাইদা হতাশ গলায় বলে।
..
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই রাইদা ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেছে। রুহি একা বসে ছিলো সেটা দেখে অর্ক এসে রুহির পাশে বসে।
‘তোকে সুন্দর লাগছে অনেক।’,হুট করে রুহির দিকে না তাকিয়ে বলে অর্ক।
অর্কের মুখে এমন কথা শুনে রুহি মুখ তুলে তাকায়।
‘তোকে তো সবসময়ই সুন্দর লাগে কিন্তু বলা হয় না যদি ভাব নিস তাই। তোকে কি পৌঁছে দিবো? বিকাল হয়ে আসছে চল পৌঁছে দেই।’,অর্ক আবারো বলে।
অর্কের কথার জবাব রুহি দেয় না সে জানে উত্তর না দিলেও অর্ক তাকে পৌঁছে দিবে।
অর্ক বাইকে উঠলে রুহি পিছনে উঠে বসে। এক হাত অর্কের কাঁধে রেখে আরেক হাত দিয়ে বাইক ধরে শক্ত হয়ে বসে রুহি। লুকিং গ্লাসে রুহির মুখের দিকে তাকিয়ে বাইক স্টার্ট দেয় অর্ক।
…
(চলবে..)
(দুদিন গল্প দিতে পারিনি তাই আজকে বিশাল পর্ব দিয়ে পুষিয়ে দিলাম। প্রায় ৩৫০০ শব্দের পর্ব এটা। ইচ্ছে ছিলো ৪০০০ শব্দের পর্ব দিবো কিন্তু নোটপ্যাডে একটা পর্বে এতো শব্দ নিলো না। কমেন্টে জানাবেন কেমন লাগলো। পড়া শেষ হলে অবশ্যই লাইক,কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো।)পর্বঃ৩৫
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট করা সম্পূর্ণ নিষেধ।)
…
সায়ন ভদ্র ছেলের মতো বসার ঘরের সোফায় বসে আছে। সায়নের সামনে বিভিন্ন রকম নাশতা এনে রেখে যায় মর্জিনা। সোফায় বসে সায়ন রান্নাঘরে থাকা রাইদাকে দেখার চেষ্টা করে। ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে দু’জনে যখন রেস্টুরেন্টে খেতে যাচ্ছিলো তখন মান্নান রাফায়েত কল দিয়ে জানায় রওশন আরা রাইদার সাথে দেখা করতে চায়। সায়ন গাড়ি ঘুরিয়ে মিষ্টির দোকানে গিয়ে কয়েকরকম মিষ্টি কিনে যদিও রাইদা না করেছিলো কিন্তু সায়ন তাতে কান দেয়নি। এই ফাঁকে রাইদা জেনে নেয় প্রথমদিনও রাইদাদের বাসায় সায়ন মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলো কিন্তু রাইদা এই বিষয়ে জানতো না। মিষ্টি কিনে রাইদাকে নিয়ে আসে তার বাবার বাসায়। আসার পর থেকেই সায়ন চুপ করে বসার ঘরে বসে আছে আর রাইদা রান্নাঘরে গেছে।
রাইদা চুলার সামনে দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখছে কীভাবে রওশন আরা চা বানাচ্ছে।
‘তোরে একা আসতে বলছি তুই তো জামাইকে নিয়ে হাজির। মায়ের সাথে দেখা করবি তাও জামাইকে আনা লাগে? জামাইকে নিজের আঁচলে বেঁধে রাখবি উল্টা এখনই তুই নিজেই জামাইয়ের হাতে বাঁধা।’, রওশন আরা রাগ অপমান মিশিয়ে কথা গুলো বলে।
চুলায় বলক হওয়া চায়ের দিকে রাইদা তাকিয়ে কিছু ভাবছিলো এরমধ্যে রওশন আরার কথাগুলো শুনে রাইদার হাসি পায়। হাসি দমিয়ে না রেখে রাইদা জোরে হেঁসে দেয়।
‘আমি বললাম সিরিয়াস কথা আর তুই হাসছিস? এই তুই কি ছেলেটার সাথে থেকে পাগল হয়ে গেলি নাকি তোরে তাবিজ টাবিজ করছে?’,চুলা থেকে চা নামিয়ে রওশন আরা বলে।
‘যে নিজে থেকে আঁচলে বাঁধা আছে তাকে আর কীভাবে বাঁধবো? তাছাড়া লোকটা অতো খারাপ না যতটা ভেবেছিলাম। তুমিও ওর সাথে কয়েকটা দিন থাকলে বুঝবা।’,রওশন আরার দিকে তাকিয়ে রাইদা বলে।
রওশন আরা আশ্চর্য হয়ে তাকায়। রাইদা রওশন আরার কাছ থেকে চায়ের মগটা নিয়ে বসার ঘরে যায়।
বসার ঘরে গিয়ে চায়ের মগটা সায়নের দিকে এগিয়ে দিলে সায়ন মগটা হাতে নেয়। সায়নের চেহারা দেখে রাইদা আচঁ করে সায়নের এখানে মোটেও ভালো লাগছে না। রাইদা এসে সায়নের পাশে বসে।
‘মর্জিনা খালা টেবিলে ভাত দাও। যা তরকারি আছে তাই দিয়েই দাও অন্য কিছু রান্না করতে হবে না। তরকারি না থাকলে ডিম ভেজে ভাত দাও আর এই নাশতা গুলো সরাও ও এগুলো খাবে না।’, রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে রাইদা গলার স্বর উঁচিয়ে বলে।
‘রি কি করছো থামো। তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা শেষ করো এরপর আমরা বের হয়ে কোথাও থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে নিবো সমস্যা নেই।’,সায়ন রাইদার হাত ধরে বলে।
‘কেনো এখানে খেলে কি সমস্যা? তা ছাড়া এটা আপনার শ্বশুড় বাড়ি, এখানে আপনার পূর্ণ অধিকার আছে। দুপুর বেলা এসে না খেয়ে বের হবে আপনার শ্বশুড় অনেক রাগ করবে।’,রাইদা সায়নের হাতের উপর হাত রেখে বলে।
‘কিন্তু তোমার উপর এখনো আমার পূর্ণ অধিকার হলো না।’,রাইদার রাখা হাতের দিকে তাকিয়ে বলে সায়ন।
‘যতক্ষণ একসাথে আছি প্রতি মূহুর্ত এনজয় করেন বলা তো যায় না কখন কি হয়ে যায়। দেখা গেলো আপনি এমন কিছু করলেন তাতে আমি আর জীবনেও আপনার চেহারা দেখলাম না।’,সায়নের কানের কাছে মুখ এনে রাইদা বলে।
রাইদার বলা কথা গুলো শুনে সায়ন ঘামতে শুরু করে। এই প্রথম সায়নের মনে হচ্ছে রাইদাকে সে একেবারে কখনোই পাবে না।
রাইদার ফোন বেজে উঠলে সায়নের হাত ছেড়ে টি-টেবিলের উপর থেকে ফোন হাতে নেয় রাইদা। মান্নান রাফায়েতের কল দেখে হাসিমুখে কল রিসিভ করে রাইদা।
‘কখন আসবা তুমি?’,রাইদা প্রশ্ন করে।
‘আমি প্রায় চলে এসেছি সময় লাগবে না। তুই জামাইকে নিয়ে খেতে বস আমি চলে আসবো।’,মান্নান রাফায়েত জবাব দেয়।
‘জলদি আসো আমি অপেক্ষা করছি।’
কল কেটে রাইদা সায়নের দিকে তাকায়। সায়ন চায়ের মগের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে।
‘কি হলো চা খান এভাবে বসে আছেন কেনো? চা খাওয়া শেষ করেন আমি হাত মুখ ধুয়ে আসি।’, সায়নকে বলে রাইদা।
রাইদা কানের দুল জোড়া আর হাতের চুড়ি গুলো খুলে সায়নের পাশে রাখে। বসার ঘরের সাথে থাকা বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে এসে খাবার টেবিলে বসে।
‘সায়ন চা রেখে আসেন ভাত দিচ্ছে খেয়ে নেন।’,সায়নকে ডেকে বলে রাইদা।
সায়ন গুটি পায়ে এসে রাইদার পাশের চেয়ার টেনে বসে। ভাত তরকারি বেরে সায়নকে দিয়ে তারপর রাইদা নিজে নিয়েও খেতে শুরু করে। রওশন আরা এসে রাইদার পাশে দাঁড়ায়। সায়ন খাওয়ার মাঝে বারবার অন্য মনস্ক হয়ে যায়।
‘জামাইয়ের কি খাওয় ভালা লাগে নায়? আইজকা একদম চুপচাপ ক্যান?’,মর্জিনা খালা বলে উঠে।
‘শ্বাশুড়ি কথা বলছে না তাই জামাই চুপ।’,রাইদা খেতে খেতে জবাব দেয়।
‘রাই আজকে থাকুক তুমি চলে যেয়ো।’,গলা ঝেরে রওশন আরা সায়নকে বলে।
‘অসম্ভব রি কে রেখে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। গভীর রাত হোক তাও ওকে নিয়েই ফিরবো আমি সমস্যা নেই।’,রওশন আরার কথার প্রতিবাদ করে সায়ন বলে।
রাইদা চুপ করে খেতে থাকে সে চায় সায়ন নিজে থেকে নিজের ইচ্ছে বলুক।
‘ভুলে যেয়ো না তোমার হাতে এখনো মেয়ে তুলে দেইনি শুধু জেদ করে মেয়ে গিয়ে তোমার কাছে থাকছে।’,রওশন আরা গম্ভীর গলায় বলে।
‘তাতে কি হয়েছে রি আমার বিয়ে করা বউ আর বিয়ের পর স্বামীর কথাই শেষ কথা এটা ভুলে যাবেন না শ্বাশুড়ি।’,সায়ন রওশন আরার দিকে তাকিয়ে বলে।
‘দেখেছিস আমি বলেছি না এই ছেলে তোরে একদম বেঁধে রাখবে দেখ তুই। এখনই তোর স্বাধীনতা কেঁড়ে নিতে চাইছে বাকি দিন তো পরেই আছে।’,রওশন আরা রাইদাকে বলে।
‘শুনেন আমি কখনোই আপনার মেয়েকে কোনো বিষয়ে বাঁধবো না যদি না সেটা তার জন্য ক্ষতিকর হয়। কয়েকটা দিন আমার সাথে আছে এরপর তো ও বাসায় ফিরেই আসবে। এই কয়েকটা দিন ও থাকুক আমার সাথে।’,সায়ন রওশন আরার কথার জবাব দেয়।
‘উনি ডরাইতাছে যদি রাইয়ের বাচ্চা পেটে আইসা পরে সেটা নিয়া।’,মর্জিনা খালা হুট করে বলে উঠে।
মর্জিনা খালার কথা শুনে রাইদা খাবার খাওয়া রেখে রওশন আরার দিকে তাকায়। সায়ন লজ্জায় মাথা তুলে তাকায় না। রওশন আরা মর্জিনার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রুমে চলে যায়। রওশন আরা চলে যেতেই রাইদা আর সায়ন হেঁসে দেয়। দু’জনের হাসি দেখে মর্জিনা খালাও হেঁসে দেয়।
খাওয়া শেষ করে রাইদা নিজের রুমে চলে যায়। সায়নও রাইদার পিছন পিছন রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। দরজা লাগানোর শব্দে রাইদা ঘুরে দাঁড়ায়।
‘কি হলো দরজা লাগালেন কেনো?’,রাইদা প্রশ্ন করে।
সায়ন এগিয়ে এসে রাইদার দুই হাত মুঠো বন্দি করে ফেলে। এদিকে ওদিক তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে তারপর রাইদার হাত জোড়া তুলে কয়েক দফা চুমু খায়। রাইদা সায়নের কান্ডে কি প্রতিক্রিয়া দিবে বুঝতে পারে না। টান দিয়ে সায়নের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় রাইদা। বন্ধ চোখ জোড়া খুলে সায়ন রাইদার দিকে তাকায়।
‘কি হয়েছে আপনার? হঠাৎ এতো অস্থির লাগছে কেনো? পরশু রাত থেকে দেখছি আপনি উল্টাপাল্টা আচরণ করছেন। আমি সেই সায়নকে দেখছি না যাকে আমি এই কয়দিন ধরে দেখছি।’,রাইদা চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে।
সায়ন রাইদার কথার জবাব না দিয়ে রাইদার ডান হাত টেনে নিজের বুকের উপর রাখে। রাইদা নিজের বাম হাত সায়নের কপালে গলায় ছুঁয়ে বোঝার চেষ্টা করে জ্বর আছে কিনা।
‘সময় যত বাড়ছে হুট করে তোমায় হারানোর ভয় তত গভীর ভাবে আমাতে জেঁকে বসেছে রি। আমার কিছুই ভালো লাগছে না খালি মনে হচ্ছে তোমাকে হারিয়ে ফেলবো।’,অসহায় গলায় বলে সায়ন।
সায়নের কথা শুনে রাইদার মায়া হয়।
‘আরে আপনি এমন করছেন কেনো আমি তো আপনার সাথে আছি নাকি। আমি তো এখনো আপনাকে আমার সিদ্ধান্ত জানাইনি। এমনও হতে পারে আমি আপনার সাথে সারাজীবনের জন্য থেকে গেলাম। আপনি শুধু শুধু অতিরিক্ত চিন্তা করছেন।’,রাইদা সায়নের গালে হাত রেখে বলে।
‘তোমাকে ছাড়া আমার একটা দিনও এখন কল্পনা করা অসম্ভব। কথা দাও যা-ই হোক কখনোই আমার ভালোবাসার উপর সন্দেহ করবে না। আমি তোমায় মন থেকে ভালোবেসেছি এটা একমাত্র সত্যি।’,সায়ন কাতুরে গলায় বলে।
‘আচ্ছা আপনি কি আপনার শ্বাশুড়ির কথায় কষ্ট পেয়েছেন? ঠিক আছে আমি রাতে এখানে থাকবো না। বাবা ফিরলেই দেখা করে আমি আর আপনি ফ্ল্যাটে ফিরে যাবো।’,রাইদা বলে।
রাইদার কথায় সায়ন আশ্বস্ত হয় না। এর মধ্যে রুমের দরজায় কেউ নক করে। রাইদা গিয়ে খুলতে নিলে সায়ন রাইদার হাত টেনে ধরে। হাত টেনে রাইদাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
‘ভালোবাসা দিয়ে রাখতে চাইছি যদি তুমি কোনো কারণে ভুল বুঝো বা আমার ভালোবাসায় আঘাত করে চলে যেতে চাও তাহলে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখবো তাও যেতে দিবো না। তোমায় এতো ভালোবেসে ফেলেছি এখন আর আমি কোনটা ঠিক কোনটা ভুল তা মানতে চাই না। শুধু তোমাকে চাই আর কিছুই চাই না।’,ঠান্ডা গলায় রাইদাকে বলে সায়ন।
‘আপনি আবারো আমায় হু*ম*কি দিচ্ছেন ইমতিয়াজ সায়ন? ‘,সায়নের চোখের দিকে তাকিয়ে রাইদা বলে।
‘বউকে পেতে হলে যদি হু*ম*কি দিতে হয় ভেবে নাও তাই দিচ্ছি। তোমার কোনো আইডিয়া নেই তুমি আমার জীবনের কতটা জুড়ে মিশে গেছো।’,সায়ন রাইদার গালে আঙুল স্লাইড করে বলে।
রাইদা সায়নের এমন আকষ্মিক ব্যবহারে কি জবাব দিবে খুঁজে পায় না। সায়ন রাইদার কোমড় আঁকড়ে রাইদাকে কাছে টেনে আনে। নিজের ওষ্ঠ জোড়া এগিয়ে দেয় রাইদার দিকে। হুট করে দরজায় আবারো নক করার শব্দ হয়। দরজার শব্দে রাইদার ধ্যান ভাঙে। এক হাত নিয়ে সায়নের ওষ্ঠের উপর রাখে রাইদা। সায়ন কোনো জোর না করে রাইদাকে ছেড়ে দিয়ে গিয়ে দরজা খুলে।
দরজা খুলে সায়ন দেখে মর্জিনা খালা এতক্ষণ নক করছিলো।
‘আপনাগো বিরক্ত করতাম না ভাই বাসায় আইছে তাই আপনাগো ডাকতে কইছে আপা।’,মর্জিনা হাসি দিয়ে কথাগুলো বলে।
সায়ন মর্জিনা খালার সাথে বসার ঘরে যায়। রাইদা নিজের বিছানায় বসে ভাবতে থাকে সায়নের বলা কথাগুলো। এখনো সে বুঝে উঠতে পারছে না সায়ন হঠাৎ এতো কঠোর ভাবে কথাগুলো বলছে কেনো। যেই ছেলে তাকে কাছে রাখতে আদুরে গলায় ভালোবেসে বলতো সে এখন বলছে জোর করে রাখবে তাও শিকল পরিয়ে!
এই বিষয়ে আর কিছু ভাবতে চাইলো না রাইদা পরে ফ্ল্যাটে ফিরে সায়নকে জেরা করবে বলে ভেবে নেয়। বিছানা থেকে উঠে বসার ঘরে যায়।
সায়ন আর মান্নান রাফায়েত কিছু নিয়ে কথা বলছিলো, রাইদা গিয়ে মান্নান রাফায়েতের পাশে বসে। রওশন আর নিজের রুমে বসে আছেন।
‘হঠাৎ করে আসতে বললে যে কোনো জরুরি প্রয়োজন?’,রাইদা মান্নান রাফায়েতকে জিজ্ঞেস করে।
‘আসলে আমি আর তোর মা তোকে কিছু বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলতে চাচ্ছিলাম সামনাসামনি। ‘,মান্নান রাফায়েত জবাব দেন।
‘বলো কি বলবা।’,রাইদা কৌতুহল হয়ে বলে।
‘তোকে তো এখনো আমরা সায়নের হাতে তুলে দেইনি তাছাড়া সায়নের পরিবারের কারোর সাথেও এখনো পরিচয় হয়নি। আমরা চাচ্ছিলাম সায়নের পরিবারের সাথে বসে আলাপ করে তোকে তুলে দিতে। যেহেতু তোরা এক সাথে থাকছিস তারমানে এই বিয়ে নিয়ে তোদের কোনো আপত্তি নেই তাই বলছি একেবারে তোকে তুলে দিতে চাই।’,মান্নান রাফায়েত কথাগুলো বলে।
মান্নান রাফায়েতের মুখে এমন কথা শুনে সায়ন রাইদার দিকে তাকায়। সায়নের ইচ্ছে করছে বলতে,’এক্ষুণি আপনার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দেন শ্বশুড়মশাই।’ সায়ন নিজের মনের কথা মনের মধ্যেই চাপা দিয়ে রাখলো।
‘এখন এসবের কোনো প্রয়োজন নেই। আমার যখন মনে হবে এসব প্রয়োজন তখন আমি জানাবো।’,রাইদা বলে উঠে।
‘কেনো প্রয়োজন নেই? এক ছাদের নিচে থাকছিস দু’জনে আবার তুলে দিতে চাচ্ছি এতে তোদের আপত্তি কিসের? নাকি তোর শ্বশুড় বাড়ির লোকেরা মেনে নেয়নি? এমনিতেই মানুষকে তোর বিয়ের বিষয়ে জানাতে পারছি না তার উপর আরেক কাহিনী শুরু করলি তুই।’,রওশন আরা নিজের রুম থেকে বেরিয়ে বলে।
‘আশ্চর্য সবাই এমন উঠে পরে আমার পিছনে লাগছো কেন? আমি কি চাই সেটা আমাকে ঠিক করতে দাও। তোমাদের সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপানোর চেষ্টা করবা না একদম। যেহেতু জীবন আমার সিদ্ধান্ত ও আমার হবে অন্য কারো কোনো কথায় আমি কোনো রকম সিদ্ধান্ত নিবো না।’,বসা থেকে উঠে রাইদা রওশন আরাকে বলে কথাগুলো।
সায়ন মাথা নিচু করে রাইদার কথাগুলো শুনে। সে বুঝতে পারে তখন তার বলা কথাগুলো শুনে রাইদা ক্ষেপেছে।
‘আচ্ছা ঠিক আছে আমরা তাড়াহুড়ো করবো না। তুই আমাদের জানাস তোর ইচ্ছে।’, মান্নান রাফায়েত রাইদার মাথায় হাত রেখে বলে।
‘মেয়েটাকে আশকারা দিয়ে আজকে এই অবস্থা করছো তুমি। দেখো এখন সব কিছুতেই সে জেদ করে।’,রওশন আরা রাগী স্বরে বলে মান্নান রাফায়েতকে।
রাইদা রওশন আরার দিকে বিরক্তিকর চাহনিতে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
‘তুমি চুপ করো তো সব সময় তাড়াহুড়ো করো। বিয়ে হয়েছে যখন আজ নয়তো কাল ঠিকই ও শ্বশুড়বাড়িতে যাবে।’,মান্নান রাফায়েত রওশন আরাকে ধমক দিয়ে বলে।
রওশন আরা কথার জবাব না দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। মান্নান রাফায়েত এসে সায়নের বিপরীতে থাকা সোফায় বসে।
‘তুমি কিছু মনে নিও না আমার বিশ্বাস মেয়েটা তোমার সাথেই সংসার করতে আগ্রহী। হয়তো এখনো ও সময় চাচ্ছে তোমাকে আরো বুঝার।’
মান্নান রাফায়েতের কথা শুনে সায়ন চোখ তুলে তাকায়।
‘আমিও তাড়হুড়ো চাই না। ও সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেক তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। আপনার মেয়ের দেখা এই জীবনে দ্বিতীয়বার পাবো এটাই কখনো কল্পনা করিনি সেখানে ওর সাথে বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। ভাগ্যে আপনার মেয়ে লেখা ছিলো বলেই আজ আমি আপনার সামনে আপনার মেয়ে জামাই হয়ে বসে আছি এখন পুরো জীবন যদি ওর সাথে কাটানোর বিষয় ভাগ্যে না থাকে এতে আমার বা আপনার কিছু করার নেই।’
সায়নের মুখে এমন বুঝদার কথা শুনে মান্নান রাফায়েত অনেক খুশি হয়।
‘আমার দোয়া সবসময় তোমাদের সাথে থাকবে। সত্যিকারের ভালোবাসার জয় একদিন হবেই।’
মান্নান রাফায়েতের কথার প্রতি উত্তর দেয় না সায়ন। এই মূহুর্তে নানান চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ফোন বেজে উঠলে পকেট থেকে ফোন বের করে। স্কিনের সেভ করা নাম্বারটা দেখে সায়নের চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়। কল কেটে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় সে।
‘আমি একটু বের হচ্ছি গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে। পরে এসে রি কে নিয়ে বাসায় ফিরবো।’,মান্নান রাফায়েতকে বলে সায়ন।
‘ঠিক আছে যাও।’
সায়ন বাসা থেকে বের হলে দরজা আঁটকে মান্নান রাফায়েত নিজের ঘরে চলে যায়।
রাইদা তখন জেদ করে এসে নিজের রুমে শুয়েছিলো ভেবেছে সায়নও রুমে আসবে তাই রুমের দরজা আঁটকায়নি। সায়নের অপেক্ষায় থেকে রাইদা ঘুমিয়ে যায় একসময়। এর মধ্যে যে সায়ন বেরিয়ে গেছে সেটাও রাইদার অজানা।
..
সন্ধ্যার সময় দরজায় নক করার শব্দ হলে রাইদার ঘুম ভাঙে। চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলে দেখে মান্নান রাফায়েত দরজায় দাঁড়িয়ে। রাইদা ঘুম ঘুম চোখে মান্নান রাফায়েতের বুকে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে। মান্নান রাফায়েত মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কয়েক মিনিটের জন্য সায়নের কথা রাইদার মস্তিস্ক থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো।
‘মাগরিবের আজান দিবে এখন কি কেউ ঘুমায়? পরিহিত শাড়িটাও পাল্টাসনি। যা শাড়ি বদলে হাত মুখ ধুয়ে আয় তোর মা তোর পছন্দের নাশতা বানাচ্ছে বাপ মেয়ে এক সাথে বসে খাবো আর গল্প করবো।’
মান্নান রাফায়েতের কথা শুনে রাইদা ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে বাথরুমে চলে যায়।
হাত মুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে শাড়ি পাল্টে থ্রি-পিস পরে নেয়। মাগরিবের আজান দিলে ওড়না মাথায় দিয়ে রুমের দরজা খুলে রাইদা চলে যায় রান্নাঘরে। মান্নান রাফায়েত নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে গেছে। রওশন আরা মাথায় ওড়না দিয়ে নামাজ পড়ার জন্য রুমে ছুটে। মর্জিনা খালা চুলার কাছে দাঁড়িয়ে কাজ সারতে থাকে।
রাইদা ফোন নিয়ে বসার ঘরের সোফায় বসে। হুট করে সায়নের কথা মনে পড়ে রাইদার। নাম্বার বের করে সায়নকে কল দেয় রাইদা। দু’বার রিং বাজতেই সায়ন কল কেটে দেয়। সায়নের এহেন আচরণে রাইদা বিরক্ত হয়।
নামাজ শেষে মান্নান রাফায়েত বাসায় ফিরে আসে। বসার ঘরে রাইদা,মান্নান রাফায়েত আর রওশন আরা বসে চা খাচ্ছিলো আর গল্প করছিলো। মূলত রাইদা আর মান্নান রাফায়েত গল্প করছে রওশন আরা বসে সেগুলো শুনছে।
চা খাওয়া শেষ করে রওশন আরা রান্নাঘরে চলে যায় রান্না সারতে। মান্নান রাফায়েত রাইদাকে সাথে নিয়ে টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখতে বসে। রাইদাও তার বাবার সাথে বসে খুবই আগ্রহ নিয়ে খেলা দেখতে থাকে।
রাত বাজে এগারোটা রওশন আরার রান্না শেষ আরো আগে কিন্তু মান্নান রাফায়েত অপেক্ষা করছে সায়নের। রাইদা এর মধ্যে আরো কয়েকবার কল দিয়েছে কিন্তু সায়নের ফোন বন্ধ। সায়নের ফোন বন্ধ পেয়ে প্রথমে রাইদার রাগ হলেও এখন চিন্তা হচ্ছে সায়নকে নিয়ে। বসার ঘরে রাইদা চিন্তিত হয়ে বসে আছে আর মান্নান রাফায়েত টিভি দেখছে। হুট করে কলিং বেলের শব্দ হলে রাইদা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখে সায়ন দাঁড়িয়ে আছে। সায়নের চোখ মুখে বিশাল ক্লান্তির ছাপ।
‘কোথায় ছিলেন আপনি? ফোন বন্ধ কেনো আপনার? কি হয়েছে জবার দেন।’,রাইদা একটার পর একেকটা প্রশ্ন করতেই থাকে।
‘ভেতরে গিয়ে সব কথায় উত্তর দিচ্ছি।’,সায়ন ক্লান্তির স্বরে বলে।
‘আরে ছেলেটাকে আগে ফ্রেশ হতে দে। দেখে বুঝতেছিস না অফিসে কাজে গিয়েছিলো সেই জন্যই হয়তো সময় পায় নি। তুমি যাও গিয়ে গোসল সেরে নাও।’,মান্নান রাফায়েত বলে উঠে।
রাইদা দরজা থেকে সরে দাঁড়ালে সায়ন রাইদার দিকে একবার তাকিয়ে রাইদার রুমে চলে যায়। রাইদা দরজা লাগিয়ে মান্নান রাফায়েতের একটা গেঞ্জি আর ট্রাউজার নিয়ে সায়নকে দেয়। সেগুলো নিয়ে সায়ন গোসল করতে বাথরুমে ঢুকে।
‘মর্জিনা খাবার দে টেবিলে।’,মান্নান রাফায়েত বলে।
মর্জিনা খালা খাবারগুলো টেবিলে এনে রাখতে শুরু করে। রাইদা, মান্নান রাফায়েত, রওশন আরা এসে টেবিলে চেয়ার টেনে বসে।
কিছুক্ষণ পর সায়ন মাথা মুছতে মুছতে এসে রাইদার পাশের চেয়ার টেনে বসে।
‘অনেক রাত হয়ে গেছে আজকে তোমারা থেকে যাও।’,মান্নান রাফায়েত সায়নের দিকে তাকিয়ে বলে।
‘এটা আবার বলতে হয় নাকি। এতো রাতে মেয়েকে আমরা যেতে দিবো না এটা তো বলার কিছু নেই।’,রওশন আরা বলে উঠে।
‘কেনো শ্বাশুড়ি আপনার কি মেয়ে জামাইয়ের উপর বিশ্বাস নেই? মানছি এখন আমি সেই টগবগে কিশোর নেই তাও কেউ আমার বউয়ের দিকে হাত বাড়ালে দু -চারটা কিল ঘুষি মেরে বাপের নাম ভুলিয়ে দেওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তি আমার আছে।’,সায়ন রওশন আরার কথায় ফোঁড়ন কেটে বলে।
সায়নের কথা শুনে রওশন আরা খাবার মুখে দিয়ে কাশতে শুরু করে। মর্জিনা খালা এক পাশে দাঁড়িয়ে ওড়না মুখে দিয়ে হাসি থামানোর চেষ্টায় ব্যস্ত।
মান্নান রাফায়েত রওশন আরার দিকে পানি এগিয়ে দেয় খাওয়ার জন্য।
‘শ্বাশুড়ি আপনি ঠিক আছেন?’,সায়ন জিজ্ঞেস করে।
‘হ্যা আমি ঠিক আছি কিন্তু তুমি তোমার মুখটা বন্ধ রাখো। কোথায় কী বলতে হয় এখনো শেখোনি।’,রওশন আরা বলে।
সায়ন কিছু বলতে চাচ্ছিলো এর মধ্যে রাইদা নিজের খাওয়া শেষ করে উঠে যায়। কথা বন্ধ করে সায়নও খাওয়াতে মনোযোগ দেয়।
রুমে এসে চুলের খোঁপা খুলে রাইদা ফোন হাতে নিয়ে গ্রুপ চ্যাটে ব্যস্ত হয়ে যায়। মিনিট দশেক পর সায়ন রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। দরজা লাগানোর শব্দে মুখ তুলে রাইদা তাকায় এরপর আবারো নিজের ফোনের দিকে মনোযোগ হয়। রুমের লাইট নিভিয়ে সায়ন বিছানায় এসে বসলে রাইদা মাঝে কোল বালিশটা রেখে বিপরীত দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ে। সায়ন হতাশ হয়ে রাইদার চুলে হাত দিলে রাইদা সেই হাত সরিয়ে দেয়।
‘তুমি কি আমার উপর রেগে আছো?’,সায়ন জিজ্ঞেস করে।
‘অনেক রাত হয়েছে ঘুমান। যা কথা বলার আগামীকালকে ফ্ল্যাটে ফিরে বলবো।’,রাইদা কড়া স্বরে বলে।
মাঝের বালিশটা সরিয়ে সায়ন এসে রাইদাকে পিছন থেকে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। রাইদা সায়নের হাত সরিয়ে দিলে সায়ন আবারো জড়িয়ে ধরে। রাইদা বিরক্ত হচ্ছে বিষয়টা বুঝতে পেরে এক সময় সায়ন নিজ থেকেই রাইদাকে ছেড়ে পাশ ফিরে শোয়। প্রায় ঘন্টা খানেক পর রাইদা ঘুমিয়ে যায়। রাইদা ঘুমালে সায়ন রাইদার দিকে ফিরে নির্ঘুম চোখে রাইদার চুলের ভাঁজে ভাঁজে হাত বুলাতে থাকে।
…
(চলবে..)