সেদিন দেখা হয়েছিলো পর্ব -৫৪

পর্বঃ৫৪
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষেধ।)

বিয়ে বাড়ি থেকে ফাহিমের বাসায় ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। অর্ককে সাথে আসতে বলেছিলো কিন্তু অর্ক আসেনি। ফাহিমের ধারণা অর্ক আজকে রাতে নিজের বাসায়ও ফিরবে না তারপরও এই সময় অর্ককে একা ছেড়ে দেওয়া ফাহিমের কাছে বুদ্ধিমানের কাজ মনে হয়েছে।

বাসায় প্রবেশ করে নিজের রুমে চলে যায় ফাহিম। ক্যামেরার ব্যাগটা বিছানায় রেখে রুমে পায়চারী করতে থাকে। মিসেস ফিরোজা এক গ্লাস ঠান্ডা পানি হাতে রুমে প্রবেশ করে। ফাহিমের উদাসীনতার কারণ তার অজানা নয়।

‘মনিকে নিয়ে ফিরলি না কেনো?’,ফাহিমকে জিজ্ঞেস করে মিসেস ফিরোজা।

‘মারিয়ার সাথে থাকতে চাচ্ছিলো তাই না করলাম না। কালকে নিয়ে আসবো সমস্যা নেই। থাকুক একরাত রাইয়ের বাসায়।’,ফাহিম জবাব দেয়।

‘পানিটা খেয়ে বস তোকে ভীষণ অস্থির লাগছে।’

ফাহিম তার মায়ের হাত থেকে পানির গ্লাসটা নেয়। মা-ছেলের চেহারায় বিষাদের ছাপ স্পষ্ট।

‘রাই তোমার কথা বারবার জিজ্ঞেস করছিলো। ওর ফোনটা ভেঙে গেছে তাই বোধহয় তোমাকে কল দিয়ে বিরক্ত করতে পারেনি।’

‘তুই তো আমাকে নিলি না। যদিও মেয়েটার বিয়ে হোক আমি কখনোই চাইতাম না। অর্কের সাথে ওর এতো মেলামেশায় আমি তো ভেবেছিলাম অর্ককে পছন্দ করে কিন্তু পরে জানলাম অর্ক রুহিকে পছন্দ করে। শেষে কই থেকে এই ছেলেটা এসে রাইকে কীভাবে মানিয়ে নিলো সেটাই এখনো আমি বুঝতে পারলাম না।’

‘রুহির বিয়ে হয়ে গেছে।’

‘কি বলছিস! তার মানে দুই বন্ধু মিলে এক সাথে গলা ধরে কাঁদবি? অর্কের বিষয়টা না হয় তোরা সবাই জানতি কিন্তু তুই তো কখনোই কাউকে বুঝতে দিলি না।’
মিসেস ফিরোজার কথা শুনে ফাহিম হেঁসে দেয়।

‘জানো মা রাই হলো বাগানের সেই ফুল যাকে দূর থেকে যে দেখে সেই মনোবাসনা করে ছুঁয়ে দেখার কিন্তু এই ফুল যার তার কাছে ধরা দেয় না। রাইকে দেখে সবসময় অবাক হতাম মেয়েটা কত চঞ্চল যেখানে যায় সকলকে মাতিয়ে রাখে। কীভাবে হুট করে আমাদের জীবনে এলো আমাদের সুখ দুঃখের সাথী হলো অথচ ওর নিজের জীবন নিয়ে কখনোই ওর মাথা ব্যথা ছিলো সবসময় আমাদের নিয়ে ভাবতো। এমন একটা মেয়েকে কে না চাইবে নিজের জীবনে বলো।’

‘যেদিন ও প্রথম বাসায় এলো সেদিনই তোর চোখ দেখে বুঝেছিলাম মেয়েটাকে তুই ভালোবাসিস। প্রথমে আমি ক্ষেপেছিলাম তোর উপর রাইকে পছন্দ করার জন্য কিন্তু মেয়েটার আচার-আচরণে আমাকেও বাধ্য করলো ওকে নিজের মেয়ের স্থান দিতে। আমার অল্প ভাষী ছেলেটাকে কীভাবে বশ করলো যে সে আমার কথা না শুনলেও রাইয়ের সব কথা শুনতো। রাইয়ের মনোযোগ পেতে সেই সকল কাজ করতো যা রাইয়ের অপছন্দ।’

‘একবার ও অর্ককে আমার থেকে বেশি এটেনশন দিচ্ছিলো কেনো জানি আমার বিষয়টা ভালো লাগেনি তাই জেদ করে গ্লাস ভেঙে কাঁচের টুকরো গুলো হাত দিয়ে তুলেছিলাম সেবার তোমার কাছ থেকে বকা খেলেও রাইয়ের কেয়ার পেয়েছিলাম অনেক। কিন্তু দিন শেষে এখন এগুলো পুরোনো স্মৃতি রাই এখন অন্যের স্ত্রী ওকে নিয়ে ভাবা অনুচিত। ভেবেছিলাম রাই বিয়েটা মানবে না কিন্তু শেষে কি থেকে কি হয়ে গেলো।’

‘তুই কেনো ওরে একবার বুঝতে দিলি না তুই ওরে ভালোবাসিস। তোর পছন্দের সাদা রঙের কাপড়ে আমি হাতে সেলাই করে সেই কাপড় দিয়ে রাইয়ের জন্য জামা বানিয়ে দিলাম সেটাও মেয়েটাকে জানালি না মিথ্যা বলতে হলো। রাই যখন সেদিন ঐ কামিজটা পরে আমি ভেবেছিলাম তুই ওকে বলেছিস এ বিষয়ে কিন্তু পরে বুঝলাম তুই কিছুই বলিসনি। একবার মেয়েটাকে বলে দেখতে তো পারতি।’

‘রাইয়ের কাছে আমি সবসময়ই ভালো বন্ধু হিসেবে ছিলাম তাই থাকবো। দিন শেষে কাউকে তো কষ্ট পেতে হবে সেটা না হয় আমিই পেলাম।’

ফাহিমের কথা শুনে মিসেস ফিরোজা এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে।

‘তোর জন্য জীবনে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে বাবা। এই বিষয়টা নিয়ে তুই ভেঙে পরিস না। তুই সুখ আমার সুখ আবার তোর দুঃখ আমার দুঃখ। এই সময়টা কেটে যাবে ধীরে ধীরে বুঝবি যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে।’

‘আমি এ বিষয়টা নিয়ে মন খারাপ করছি না মা। আমি রাইকে আগলে রাখতে পারতাম না যেভাবে ওর বর রাখবে। লোকটা ভীষণ ভালোবাসে রাইকে এতো ভালোবাসা আমি দিতে পারতাম না।’

‘দোয়া করি মেয়েটা সুখী হোক। জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে এখন সুখের দেখা পেয়েছে সেটা স্থায়ী হোক।’

‘সারাদিন দৌড়া ঝাঁপ করে এখন আমার ঘুম পাচ্ছে অনেক। তুমি গিয়ে ঘুমাও আমিও ঘুমাবো।’

মিসেস ফিরোজা রুম থেকে বেরিয়ে গেলে ফাহিম পাঞ্জাবী পরেই বিছানায় শোয়।

….

সকালবেলা রাইয়ের ঘুম ভাঙে চোখেমুখে রোদ পড়ায়। চোখমুখ কুঁচকে মুখ তুলে তাকায়। সায়ন বেঘোরে রাইদার গলায় মুখ লুকিয়ে ঘুমাচ্ছে। রাইদা বিরক্ত হয় জানালা দিয়ে আসা রোদের কারণে। সময় দেখার জন্য বালিশের কাছে হাতরে ফোন খুঁজে পায় না। ঘুমের ঘোরে ভুলেই গিয়েছিলো তার ফোনটা সে ভেঙে ফেলেছে। বিরক্ত হয়ে উঠার চিন্তা করে কিন্তু সায়ন রাইদাকে এমন ভাবে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে দেখে মনে হবে রাইদা সুযোগ পেলে পালিয়ে যাবে তাই সায়ন এভাবে রাইদাকে আঁটকে রেখেছে।

সায়নের হাত জোড়া ধীরে ধীরে সরিয়ে রাইদা উঠে বসে। চুলগুলো হাত খোঁপা করে ঘুমন্ত সায়নের দিকে তাকায়। ঘুমন্ত সায়নকে দেখতে রাইদার কাছে বেশ ভালো লাগে।

বিছানা থেকে উঠে রাইদা জানালার পর্দা টেনে রুমে রোদ আসতে বাঁধা দেয়। নিজের লাগেজ খুলে সায়ন্তিকার উপহার দেওয়া শাড়িটা বের করে। তোয়ালে আর শাড়ি নিয়ে গোসল করতে বাথরুমে ঢুকে।
গোসল সেরে চুল মুছতে মুছতে রাইদা বের হয়। সায়নকে ঘুমে দেখে শাড়িটা খুলে ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেয়। সায়নের পুরো রুমে ড্রেসিং টেবিল কিংবা বড় কোনো আয়না না পেয়ে রাইদা হতাশ হয়। রাইদার বুঝতে অসুবিধা হয় না সায়নের আয়না অপছন্দ।

প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বাথরুমের বেসিনের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হালকা সেজে চুল আঁচড়ে পরিপাটি হয় রাইদা।
রুমের দরজা খুলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে দাঁড়ায়। কি করবে বুঝতে পারে না। নিপাকে রান্নাঘরে দেখে রাইদা এগিয়ে যায়।

‘আরে ভাবী সকাল সকাল উঠছেন কিছু লাগবে?’,নিপা রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।

‘না আমার কিছু লাগবে না। বাসার মেহমানরা সব কি ঘুমে? কাউকে দেখছিনা যে।’,রাইদা নিপাকে বলে।

‘যারা ছিলো ফজরের সময় চইলা গেছে ওরা আবার অনুষ্ঠানের দিন আসবে।’

‘ও আচ্ছা। চা কাদের জন্য? ‘

‘খালাম্মা আর খালুর জন্য। আপনি এক কাজ করেন চা নিয়ে তাদের দেন খুশি হইবো।’

নিপার দেওয়া প্রস্তাব রাইদার পছন্দ হয়। রাইদা চায়ের ট্রে টা তুলে হাতে নেয়।

‘ভাবী আপনি নতুন বউ এখন থেকে সবসময় মাথায় ঘোমটা দিয়ে রাখবেন শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির সামনে।’

নিপার কথায় চায়ের ট্রে রেখে রাইদা মাথায় ঘোমটা দিয়ে আবারো ট্রে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়। রুমে মিসেস রিনা বসে তসবিহ গুণছিলো আর আরমান শেখ অফিসের ফাইল দেখছিলো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রাইদা নক করে।

‘আসতে পারি?’,রাইদা জিজ্ঞেস করে।

‘হ্যা মা আসো আসো।’,রাইদাকে আরমান শেখ বলে।

রাইদা হেঁসে রুমে প্রবেশ করে।

‘আসসালামু আলাইকুম। শুভ সকাল, আপনাদের চা আমি নিয়ে এসেছি।’

‘ওয়ালাইকুমুস সালাম। তুমি কেনো কষ্ট করতে গেলা? আর এতো সকালে ঘুম থেকে উঠছে কেনো আরেকটু ঘুমাতা।’
আরমান শেখের কথার জবাব রাইদা হেঁসে চায়ের কাপ আরমান শেখের হাতে দেয়।

‘ঘুম ভেঙে গেছে তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে দেখা করে নেই।’,রাইদা মিসেস রিনার হাতে চায়ের কাপ দিয়ে বলে।

‘তোমার কিছু লাগলে নিপাকে না হলে আমাকে বলবা একদম লজ্জা পাবা না বাসা তো এটা তোমারই। যা মনে চায় করবা যা খেতে ইচ্ছে করে আমাকে বলবা আমি রান্না করে দিবো।’,মিসেস রিনা রাইদাকে বলে।

‘তুমি এখন রুমে গিয়ে বিশ্রাম করো। নাশতা বানানো হলে তোমাকে ডাকবো।’

আরমান শেখের কথায় রাইদা মাথা নেড়ে রুম থেকে বের হয়।
রুমে এসে দেখে সায়ন এখনো ঘুমাচ্ছে। রাইদা কি করবে ভেবে না পেয়ে লাগেজ নিয়ে বসে কাপড় গুছিয়ে রাখার জন্য। লাগেজ থেকে নিজের সমস্ত কাপড় বের করে ফ্লোরে রাখে। চাবি দিয়ে আলমারি খুলে কাপড় রাখারা জন্য। আলমারির দুই পার্ট খোলার পর রাইদার নজরে ছবি দু’টো আসে যা সায়ন লাগিয়েছিলো। গতরাতে আলমারির এক অংশ খুলতেই শাড়িটা পেয়েছিলো তাই আর অন্য অংশ খুলে দেখেনি। ছবি দু’টো দেখেই রাইদার মুখে হাসি ফুটে উঠে। ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুমন্ত সায়নের দিকে তাকায়।

লোকটা তাকে এতোটা ভালোবাসে সে কখনো আন্দাজ করতে পারেনি। আলমারি খোলা রেখেই রাইদা ঘুমন্ত সায়নের দিকে এগিয়ে যায়। বিছানায় বসে সায়নের গালে পরপর কয়েকবার ওষ্ঠ ছুঁইয়ে আবারো আলমারির সামনে এসে দাঁড়ায়।

নিজের জামাকাপড় ভাজ করে একে একে আলমারিতে রাখতে শুরু করে। সব কিছু রাখার পর আলমারি বন্ধ করতে নিলে রাইদার নজরে একটা ব্যাগ আসে। কৌতুহল বশে রাইদা ব্যাগটা নামিয়ে খুলে। ব্যাগ খুলে বালিশের কভার,গ্লাস,পায়েল সহ তার ব্যবহৃত নানান জিনিস দেখে বিস্ময়ে তার চোখ বড়বড় হয়ে যায়।

‘লোকটা সত্যিি পাগল।’,বিরবির করে বলে রাইদা।

আলমারি লক করে জিনিস সহ ব্যাগটা সোফার উপরেই রাখে। দরজায় নক করার শব্দ হলে রাইদা গিয়ে দরজা খুলে দেখে সায়ন্তিকা দাঁড়িয়ে আছে।

‘ভাবী নাশতা খেতে আসো আমার আবার আজকে সিটি আছে তাই খেয়েই ভার্সিটিতে যাবো।’,কথাটা বলেই সায়ন্তিকা হাই তুলে।

সায়ন্তিকার চোখমুখ দেখে রাইদা বুঝে নেয় বেচারীর ঘুম হয়নি ক্লাসের চক্করে।

‘যাও আমি আসছি।’
রাইদার কথা শুনে সায়ন্তিকা চলে যায়।
রাইদা এসে সায়নকে ডাকতে শুরু করে।

‘সায়ন উঠুন জলদি। নাশতা খেয়ে ঘুমান।’
রাইদার ডাকে জোর পূর্বক চোখ খুলে সায়ন তাকায়।

‘কি হলো বউ ডাকছো কেনো? আসো ঘুমাই।’,ঘুম জড়ানো স্বরে সায়ন বলে।

‘আর ঘুমাতে হবে না উঠেন এবার। আপনার নামে নালিশ আছে উঠেন।’

‘পরে উঠবো এখন না। এতো জলদি তুমি উঠলা কেনো।’,কথাটা বলেই সায়ন রাইদার হাত ধরে টান দেয়।
সায়নের টানে টাল সামলাতে না পেরে রাইদা সায়নের বুকের উপর পড়ে যায়। দু’হাতে রাইদাকে জড়িয়ে নেয় সায়ন।

‘আরে সরেন আমার শাড়ির কুঁচি নষ্ট হবে।’
রাইদার কথা শুনে সায়ন ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

‘সামান্য শাড়ির কুঁচির জন্য তোমাকে ছাড়তে বলছো! এখন তো তোমাকে কিছুতেই ছাড়বো না।’

‘আমার খিদে পেয়েছে উঠেন নাশতা খাবো। আপনি না গেলে আমিও যেতে পারছি না।’,কাঁদো কাঁদো মুখ করে রাইদা কথাগুলো বলে।

‘ঠিক আছে এখন ছেড়ে দিচ্ছি কিন্তু পরে এর শোধ নিবো।’
সায়নের হাত সরাতেই রাইদা দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। আড়মোড়া ভেঙে সায়নও উঠে বসে।

‘এই জিনিসগুলো নিশ্চয়ই চুরি করেছেন?’,সোফার উপরের ব্যগটা উঁচিয়ে সায়নকে জিজ্ঞেস করে রাইদা।

‘তোমাকে মিস করলে সব সময় দেখার তো উপায় ছিলো না তাই তোমার ব্যবহৃত জিনিসগুলো দেখতাম। এখন অবশ্য এগুলোর দরকার নেই মিস করলে জ্বলজ্যান্ত তুমি আছো এসে শুধু তোমাকে চুমু খাবো। আলমারির ভেতরে ছবি দু’টো দেখেছো? কেমন হয়েছে?’

‘আমাকেই আলমারির সামনে টাঙিয়ে রাখুন তাহলে আপনার দেখতে সুবিধা হবে।’

রাইদার কথা শুনে সায়ন এগিয়ে এসে রাইদাকে জড়িয়ে ধরে।

‘বুদ্ধিটা খারাপ না কিন্তু তুমি তো অনেক এক্সপেন্সিভ তাই যেখানে সেখানে রাখলে চোরে চুরি করে নিয়ে যেতে পারে। তোমাকে লকারে রেখে দিবো।’

‘বহুত ঢং হয়েছে এবার সরেন।’

‘আজকে তো কোথাও বের হচ্ছি না বাসাতেই আছি সারাদিন তোমাকে বিরক্ত করবো।’

‘দেখা যাবে কে কাকে বিরক্ত করে।’

রাইদার কথা শুনে সায়ন রাইদাকে ছেড়ে দেয়। ওয়ারড্রবের ড্রয়ার খুলে একটা ফোন বের করে এনে রাইদার সামনে ধরে।

‘তোমার সিম এই ফোনটায় ভরে নাও। বিয়ে উপলক্ষে এটা আমার পক্ষ হতে তোমার জন্য উপহার।’

রাইদা হেঁসে ফোনটা নেয়। সায়ন বাথরুমে ঢুকে হাত-মুখ ধুতে।
সিম বের করে ফোনে ভরে নেয় রাইদা। ফোনটা বিছানায় রেখে মাথায় কাপড় দিয়ে রুম থেকে বের হয়।

খাবারের টেবিলে আরমান শেখ, মিসেস রিনা, সায়ন্তিকা,নিপা বসে খাচ্ছে। রাইদা এসে একটা চেয়ার টেনে বসে।

‘সায়ন এখনো ঘুমে?’,মিসেস রিনা জিজ্ঞেস করে।

‘না আসতেছে।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘তুমি তাহলে খেয়ে নাও।’
মিসেস রিনা রাইদাকে নাশতা দেয় খেতে। আরমান শেখ রাইদার সাথে গল্প শুরু করে দেয়। সায়ন্তিকার ফোন বেজে উঠলে সে তাড়াহুড়ো করে নাশতা রেখে বেড়িয়ে যায়। বিষয়টা রাইদার নজর এড়ায় না। একটু পর সায়ন এসে রাইদার পাশে বসে।
নাশতা খাওয়া শেষ হতেই মিসেস রিনা রাইদাকে রুমে আবার পাঠিয়ে দেয় বিশ্রাম নিতে। সায়ন তার বাবার সাথে বাজারে যায়।

রুমে এসে রাইদা দেখে তার ফোন বাজছে। ফোন হাতে নিয়ে অপরিচিত নাম্বার দেখে কলটা রিসিভ করতে চায়নি কিন্তু পরে কলটা রিসিভ করে।

‘হ্যালো, কে বলছেন?’,রাইদা প্রশ্ন করে।

‘কেমন আছিস? তোর নতুন জীবনের শুরুতে থাকতে পারলাম না।’

‘রুহি তুই! কই আছিস তুই আর কি অবস্থা তোর?’

রাইদার উত্তলা কন্ঠ পেয়ে রুহি হাসে।

‘ব্যস্ত হচ্ছিস কেনো বলবো সব কিছু একে একে। খবর পেলাম তোর বিয়ে হলো তাই ভাবলাম তোকে কল দিয়ে শুভকামনা জানাই।’

‘দেখ একদম হেয়ালি করবি না আমি জানি নিশ্চয়ই তোর কিছু হয়েছে না হলে তুই হুট করে গায়েব কেনো হবি? তুই অর্কের সাথে অভিমান করে চলে গেছিস তাই না?’

রাইদার কথা শুনে রুহির গলা ধরে আসে।

‘বিয়ে করেছি ভাইয়ার পছন্দের পাত্রকে। ভার্সিটি থেকে আমাকে ট্রান্সফার করিয়ে এনে এখানেই এক ভার্সিটিতে ভর্তি করাবে বলেছে। যার সাথে সংসার করছি লোকটা খারাপ না তবে এটা সংসার কম যান্ত্রিক জীবন বেশি। সারাদিন সকলের জন্য রান্নাবান্না করি রাতে একা একা ঘুমাই। উনি বলেছে ধীরে ধীরে আমাকে মেনে নিবে কারণ তার ভালোবাসার মানুষ তাকে ধোঁকা দেওয়াতে সে রাগ করে আমাকে বিয়ে করেছে। আমার কিন্তু কারো উপর রাগ অভিমান কিছু নেই। কেউ তো আমাকে কখনোই বলেনি সে আমাকে ভালোবাসে কিংবা আমাকে চায় তাহলে আমার রাগ করাটা অস্বাভাবিক।’

‘এ বিষয়ে আমি কিছুই বলবো না রুহি। তুই ভালো থাকলে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। অর্ক তখন না বুঝলেও তোকে হারিয়ে এখন হয়তো বুঝবে। বিশ্বাস কর অর্ক তোকে অনেক ভালোবাসে তোর উচিত ছিলো একবার ভেবে দেখা।’

‘আমিও কি অর্ককে কম ভালোবাসি? ভালোবাসার দায়বদ্ধতা কি একা আমার? ও যখন নিজের পরিবারের কথার অবাধ্য হতে পারবে কিংবা আমার হাতটা ধরে যখন বলতে পারেনি তোর সাথে আছি তখন আমি কিসের ভরসায় থাকতাম বল? ও যেমন ওর পরিবারের কথা ভেবেছে আমিও আমার পরিবারের কথা ভেবেছি। এখানে আমরা দু’জনই স্বার্থপরতা করেছি শুধু ভিন্নতা হলো অর্ক সাহস করতে পারেনি আর আমি সাহস করেও পিছিয়ে গেছি।’

‘কোথায় আছিস এখন? আমাদের সাথে একবার দেখা কর।’

‘আছি কোথাও তোদের থেকে দূরে তবে খারাপ নেই ভালোই আছি। পৃথিবীটা খুব ছোট একদিন হঠাৎ দেখা হবে আমাদের।’

‘তোরে খুব মিস করি। অর্কের সাথে রাগ করে এমনটা না করলেও পারতি।’

‘আমিও তোদের অবেক মিস করি রোজ। সকালে উঠলে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত তোদের সাথে কাটানো সময়টা প্রতি ক্ষণে মিস করি। ভালো থাকিস এখন রাখছি পরে কল দিবো।’

‘তুইও সাবধানে থাকিস আর পারলে আমাদের ক্ষমা করে দিস আমরা কিছুই করতে পারলাম না।’

রাইদার কথার কোনো জবাব না দিয়ে রুহি কল কেটে দেয়।

রাইদা মুখ ভাড় করে বসে থাকে। কীভাবে কি হলো এখনো তার বোধগম্য নয়। পায়েলের নাম্বার বের করে কল দেয়। কয়েকবার রিং হতেই পায়েল কল রিসিভ করে। পায়েলকে একটু আগের ঘটনা সব জানালে পায়েলও গতরাতের ঘটনা জানায়। সব শুনে কল কেটে রাইদা কি করবে বুঝে উঠতে পারে না।

ফোনটা হাতে নিয়েই মিসেস রিনার রুমে গিয়ে বসে।

‘কি হলো তোমাকে অস্থির লাগছে কেনো? কিছু হয়েছে?’,মিসেস রিনা রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।

‘আচ্ছা কেউ যদি নিজের ভালোবাসার সাথে অভিমান করে দূরে চলে যায় তাহলে কি ভালো থাকে?’,রাইদা প্রশ্ন করে।

‘কোনো মানুষই ইচ্ছে করে নিজের ভালোবাসা ছেড়ে দূরে যায় না এর পিছনে অনেক কারণ থাকে। হয়তো সে পরিস্থিতির স্বীকার নয়তো সে বুঝে গেছে যেই মানুষটাকে সে ভালোবাসে তার সাথে কখনোই সুখী হবে না তাই এমন সিদ্ধান্ত বাধ্য হয়ে নিয়েছে। পৃথিবীর সবাই তো নিজের ভালোবাসার মানুষকে পায় না কিংবা পেলেও নিজের করে রাখতে পারে না। যারা পায় তারা ভাগ্যবান। ভালো থাকাটা অনেকটা নিজের উপর নির্ভর করে। আমরা চাইলেই নিজেকে ভালো রাখতে পারি আবার চাইলেই খারাপ লাগাটাকে প্রধান্য দিয়ে খারাপ থাকতে পারি।’

মিসেস রিনার কাছ থেকে এমন উত্তর পেয়ে রাইদা সন্তুষ্ট হয়। রাইদা উঠে এসে মিসেস রিনাকে জড়িয়ে ধরে।

বাজার থেকে ফিরে সায়ন নিজের রুমে এসে রাইদাকে পায় না। রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে উঁকি দিলে দেখে রাইদা মনোযোগ দিয়ে মাছ কাটা দেখছে।

সায়ন গলা ঝেরে রাইদাকে ডাক দেয়,’রি আমার মানিব্যাগ পাচ্ছি না একটু খুঁজে দাও।’

সায়নের এমন কথায় রাইদা বিরক্তি চাহনি দেয়।

‘মানিব্যাগ না পেলে বাজারে গেলেন কীভাবে? এখন আমি কাজ শিখছি আসতে পারবো না।’

‘মা তোমার বউমাকে রুমে পাঠাও না হলে তুলে নিয়ে যাবো।’

সায়নের লাগামহীন কথায় রাইদা সায়নকে চোখ রাঙায়। সায়ন তা পাত্তা না দিয়ে রুমের দিকে হাঁটা দেয়। রাইদা হতাশ চোখে সায়নের পিছন পিছন যায়।

রুমে ঢুকে সায়নকে কিছু বলতে নিলে সায়ন উল্টো এসে রাইদার হাত জোড়া টেনে কাছে আনে।

‘হানিমুনে কই যাবা? জলদি ঠিক করতে হবে না হলে তোমার শ্বশুড় পরে আমাকে ছুটি দিবে না।’

‘এই বিষয়টা আমরা পরেও আলোচনা করতে পারতাম। শুধু শুধু ঐসব বলে মায়ের সামনে আমাকে লজ্জা দিয়েছেন।’

‘উহু এখনই আলোচনা করার উপযুক্ত সময়।’

‘আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো।’

‘কি কথা বলো শুনছি।’

‘আমার মনে হয় সায়ন্তিকা কাউকে পছন্দ করে আর কাকে পছন্দ করে সেটাও আমি আন্দাজ করতে পারছি। আপনাকে কথা দিতে হবে আপনি ওর পছন্দকে সাপোর্ট করবেন।’

‘তুমি যেহেতু বলছো ছেলেটা নিশ্চয়ই ওর যোগ্য কেউ হবে। ঠিক আছে আমার আপত্তি নেই।’

সায়নের উত্তর শুনে রাইদা খুশি হয়।

‘এখন তাহলে আমার পাওনা দেও যেগুলে বাকি রেখেছো।’

‘কীসের পাওনা? সরেন সরেন কাজ আছে।’

‘কোথায় যাচ্ছো সুন্দরী? এতো সহজে তোমাকে ছাড়ছি না দুইবার বিয়ে করা বউ তুমি আমার।’

‘আপনি আসলেই অসভ্য।’
রাইদার কথা শুনে সায়ন হাসতে থাকে।


(চলবে..)

(আগামীকালকে গল্প দিতে পারবো না শনিবার গল্প দিবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here