সেদিন দেখা হয়েছিলো পর্ব -৫৫ ও শেষ

পর্বঃ৫৫(অন্তিম পর্ব)
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষেধ।)

গ্রীষ্মকাল পেরিয়ে শীতকাল চলে এসেছে তবুও ঢাকায় গরমের অস্তিত্ব বিদ্যমান। সারাদিন সূর্যতাপে অস্থির ঢাকা বাসী তবে রাত হলে শীত এসে জানান দেয় এখন শীতকাল।

রাইদা আর সায়নের জীবনে পাকাপোক্ত ভাবে এসেছে মাস খানেক পেরিয়েছে। এর মধ্যে জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। অবশ্য অর্কের সাথে রাইদা দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।
ক্লাস শেষ করে রাইদা,পায়েল,বাপ্পি,ফাহিম এসে ক্যান্টিনে বসে।

‘গত অনুষ্ঠানে পারফরম্যান্সটা দারুণ হয়েছিলো। আমি তো ভেবেছিলাম রাইকে সায়ন ভাই পারফর্ম করতেই দিবে না।’,বাপ্পি বলে।

‘সত্যি আমারো তাই মনে হয়েছিলো।’,পায়েল বলে।

‘উনি তো আমাকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে তোমার নেশাকে যদি পেশা হিসেবে নাও আমার কোনো সমস্যা নেই। আমার শ্বশুড় বাড়ির মানুষজন তো আমার থেকেও বেশি উৎসাহিত ছিলো অনুষ্ঠানের দিন।’,রাইদা বলে।

‘আমরা তাহলে শনিবারে পেজের জন্য একটা নাচের ভিডিও শ্যুট করছি?’,ফাহিম প্রশ্ন করে।

‘হ্যা অনুশীলন করা শেষ আমাদের তিনজনের।’,রাইদা বলে।

‘আমাকে বাদ দিয়েই তোরা শ্যুটের পরিকল্পনা করছিস?’,চেয়ার টেনে বসে অর্ক বলে।

‘আমার কাজ আছে আমি উঠলাম পরের ক্লাসটা করবো না।’,কথাটা বলে ব্যাগ নিয়ে রাইদা দাঁড়ায়।

‘আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছিস রাই? আমি কি এতো বড় অন্যায় করেছি? তুই তো জানিস কেনো আমি এসব করেছি তাও এমন করছিস।’,অর্ক বলে।

‘শোন তোর যেটা ভালো মনে হয়েছে তুই করেছিস এখন আমার যেটা ভালো মনে হয়েছে আমি করলাম। রুহিকে কষ্ট দিয়েছিস এর শাস্তি তুই সারাজীবন পাবি। শুধুমাত্র তোর খামখেয়ালীতে রুহি আজ আমাদের মধ্যে নেই।’,রেগে কথাগুলে বলে রাইদা।

‘অর্কের জায়গায় আমি থাকলে একই কাজ করতাম। ভালোবাসা ভালোবাসার জায়গায় আর পরিবার পরিবারের জায়গায়। সবাই সায়ন ভাইয়ের মতো সাহসী হয়ে নিজের ভালোবাসাকে আদায় করে নিতে পারে না কেউ কেউ ভীতুও হয়। ভালোবাসার সময় এতো কিছু মাথায় থাকে না তবে সময়ের সাথে বিষয়গুলো একে একে সামনে আসতে শুরু করে।’,কথাগুলো বাপ্পি রাইদাকে বলে

‘অনু আপুকে সুখী করতে গিয়ে অর্কের এই অবস্থা সেটা তো তোর অজানা না। মানছি অর্ক চাইলে একটা ব্যবস্থা করতে পারতো কিন্তু রুহিও নিজের পরিবারের কথা ভেবেই বিয়ে করেছে আমাদের কাউকে জানানোর প্রয়োজনবোধ করেনি। সব বিবেচনা করলে অর্ক এবং রুহি সমান তালে অপরাধী। তুই একবার বিষয়গুলো নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখিস।’,পায়েল রাইদাকে বলে।

রাইদা কারো কোনো কথার জবাব না দিয়ে ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে যায়।

ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে রিকশা ডেকে উঠে। রাইদা মোটেও অর্কের উপর রাগ করেনি সে শুধু অর্ককে বুঝাতে চাচ্ছে সে কতো বড় ভুল করেছে। অর্ক আর রুহির বিষয়টাতে কারোই কিছু করার ছিলো না। দু’জনে নিজেদের খামখেয়ালীর কারণে নিজেদের ভালোবাসার মানুষটাকে খুইয়েছে।

রাইদার ভাবনার মাঝে রিকশা এসে হাসপাতালের সামনে থামে। রিকশা থেকে নেমে রাইদা হাসপাতালে প্রবেশ করে। সেই যে প্রেগন্যান্সি টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে গিয়েছিলো আজকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে এসেছে ডাক্তার দেখাতে।

বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর রাইদার সিরিয়াল আসে। ডাক্তারের রুমে প্রবেশ করে বিস্তারিত সব কিছু ডাক্তারকে জানায় রাইদা ডাক্তারও রাইদাকে এমন কিছু তথ্য দেয় যা রাইদার মনে সংশয় এনে দেয়।

প্রায় পনেরো মিনিট পর রাইদা ডাক্তারের কক্ষ থেকে বের হয়। রাইদার চোখ মুখ দেখে বুঝার উপায় নেই তার মনের মধ্যে কি চলছে।
অন্যমনষ্ক হয়ে রাইদা হাঁটতে থাকে তখনই এক মেয়ের সাথে ধাক্কা খায়। ধাক্কা লাগার ফলে মেয়েটার হাতে থাকা ফাইল পড়ে যায়।

‘আমি দুঃখিত দেখতে পাইনি। আপনার ফাইল তুলে দিচ্ছি।’,ব্যস্ত গলায় রাইদা বলে।

‘আরে সমস্যা নেই।’,মেয়েটা জবাব দেয়।

ফাইলটা তুলে রাইদা মেয়েটার হাতে দেয়। মেয়েটার কোলে তার ছেলে ঘুমাচ্ছে এটা দেখে রাইদার ইচ্ছে করে ছেলেটাকে কোলে নিতে।

‘ধন্যবাদ আপনাকে।’,মেয়েটা রাইদাকে বলে।

‘আপনাকে কোথাও দেখেছি মনে হয় কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে করতে পারছি না।’,রাইদা বলে।

‘আমারো মনে হয় আমি আপনাকে চিনি। আপনার নাম কি রাই?’
মেয়েটার এমন প্রশ্নে রাইদা ভালো করে মেয়েটার দিকে তাকায়।

‘আপনি আফরিন তাই না?’

রাইদার কথায় আফরিন হেঁসে দেয়।

‘একদম ঠিক চিনেছো। এভাবে তোমার সাথে দেখা হবে ভাবতে পারিনি। সায়নের ফোনে তেমার ছবি দেখে তোমার চেহারা মুখস্থ হয়ে গেছে তাও হুট করে চিনতে পারিনি। ছবির থেকেও বাস্তবে তুমি এতো সুন্দর সায়ন কেনো যে কেউ পাগল হবে।’

আফরিনের এমন কথায় রাইদা লজ্জাবোধ করে।

‘আপনি হাসপাতালে একা এসেছেন? ‘,রাইদা প্রশ্ন করে।

‘হ্যা বাবুকে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। আমি একাই ওর দেখাশোনা করি।’

‘কেনো আপনার বর.. ‘

‘আমার বরের সাথে আমার তালাক হয়ে গেছে। আমি যখন অন্তঃসত্ত্বা তখন সে আরেক মেয়েকে বিয়ে করে। আমরা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম অথচ হুট করেই তার ভালোবাসা পাগলামি সব গায়েব হয়ে গেছিলো। আমাকে রেখে অন্য মেয়েদের সাথে প্রেম করতো। বিষয়টা আমি প্রতিবাদ করলে সে আমাকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেয়। আমি আর সায়ন ছোট বেলার বন্ধু। বাসা থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম সেই সাহায্য সায়নই করেছিলো। যখন স্বামী ঘর থেকে বের করে দিলো সায়ন আমাকে ওর ফ্ল্যাটে জায়গা দিলো। অনেকগুলো মাস সায়নের ফ্ল্যাটে থেকেছি। শেষে সায়ন আমাকে আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেয় যাতে আমার সমস্যা না হয়। ছেলে নিয়ে সেখানেই থাকছি। মাঝে সায়নের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম কিন্তু শেষে একা সব সামলাতে পারছিলাম না তাই আবারো যোগাযোগ করি। এখন ছোট একটা চাকরির ব্যবস্থা সায়ন করে দিয়েছে সাথে মাসের শুরুতে বাবুর প্রয়োজনীয় সব কিছু ও কিনে দিয়ে যায়। তোমার বিষয়টা আমাকে ও আমাকে অনেক আগে বলেছিলো কিন্তু তোমাদের বিয়ে হয়ে গেছে জানতাম না আমি। আমার জন্য তোমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হলো এতে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। যাতে তোমাদের মধ্যে আর সমস্যা না হয় তাই আমি তোমাদের বিয়েতে যাইনি।’

আফরিনের মুখে সব শুনে রাইদার অপরাধবোধ কাজ করে।

‘না আপু আমি ঐসব ভুলে গেছি। আপনার বিপদে সায়ন বন্ধু হিসেবে পাশে থেকেছে এটা জেনে ভালো লাগলো। এরপর কোনো সমস্যা হলে নিরদ্বিধায় সায়নকে বলবেন আমি কিছু মনে করবো না। বাবুকে নিয়ে অবশ্যই বাসায় বেড়াতে আসবেন।’,রাইদা আফরিনের বাহুতে হাত রেখে বলে।

‘সত্যিই তুমি অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে। দোয়া করি সবসময় এভাবেই হাসি খুশি থাকো।’

‘আমি বাসায় যাচ্ছি আপনিও চলেন আমার সাথে বেড়িয়ে আসবেন।’

‘না না বাবুকে ডাক্তার দেখিয়ে আমার মায়ের কাছে ওকে রেখে চাকরিতে যাবো। আমার বাসার কেউ আমায় না মানলেও মা ঠিকই আমার কষ্টটা বুঝেছে তাই আমার ডিউটির সময়টা সে এসে বাবুকে দেখাশোনা করে। তুমি হাসপাতালে কি করছো? ডাক্তার দেখাতে এসেছিলে? হাতে তো দেখছি গাইনি চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন। তুমি কি মা হতে চলেছো?’

আফরিনের এতো প্রশ্নে রাইদা ইতস্ততবোধ করে। তাড়াতাড়ি প্রেসক্রিপশনটা ভাজ করে ফেলে।

‘এটা আমার না আমার বান্ধবীর। আসলে ও সাথে এসেছিলাম। ও বাহিরে গেছে আমি যাচ্ছলাম আর তোমার সাথে দেখা হলো। আচ্ছা চললাম আমি পরে তোমার সাথে কথা হবে।’

আফরিনের সাথে কথা শেষ করে রাইদা দ্রুত হাসপাতাল থেকে বের হয়। হুট করে রাইদার এমন ব্যবহার আফরিনকে ভাবায়।

..

বাসায় ফিরে নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয় রাইদা। প্রেসক্রিপশন আর রিপোর্ট গুলো লাগেজ নামিয়ে সেখানে রেখে লাগেজটা তালা মেরে দেয় যাতে এগুলো কেউ না পায়।
লাগেজটা জায়গা মতো রেখে গোসলে চলে যায় সে। গোসল সেরে বেরিয়ে দেখে ফোনে রিং বাজছে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে সায়নের কল।

কল রিসিভ করে ফোন কানে দিয়ে রাইদা চুপ করে থাকে।

‘গোসলে ছিলা তাই না? কতবার বলবো গোসলে গেলে ফোনটা সাথে নিয়ে যাবা।’

সায়নের কথা শুনে বরাবরের মতো রাইদা হাসতে শুরু করে।

‘দশ মিনিট পরে কথা বললে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘তোমার শ্বশুড় বাসায় কত ভালো লোক অথচ অফিসে আমাকে যেই খাটান খাটায় তার উপর ফোন হাতে নিলে চিল্লায়। এই দুপুর বেলাই তো ব্রেকের সময় তোমাকে কল দেওয়ার সুযোগ পাই এছাড়া তো আজকাল তেমন সুযোগ পাই না।’

‘আপনি যে বাবার নামে বদনাম করছেন এটা কি আমি বাবাকে বলে দিবো তখন আপনার চাকরি নিয়ে টানাটানি লাগবে।’

‘হ্যা করো নালিশ ঐ একটা কাজই তো তুমি ভালো পারো তবে মনে রেখো তোমাকে হাতের কাছে পেলে নালিশের ঝাল তুলবো।’

‘ঠিক আছে আজকে তাহলে সায়ন্তিকার রুমে ঘুমাবো। টাটা এখন কল রাখছি।’

‘রি এসব উল্টাপাল্টা কাজ করলে কিন্তু তোমাকে দ্বিগুণ জ্বালাবো। ঐদিনের মতো যদি সায়ন্তিকার রুমে ঘুমাতে যাও তাহলে তোমার পা আমি আজকে সত্যিই ভেঙে দিবো।’

‘দেখা যাবে কে কার পা ভাঙে।’

‘দুপুরে তো এখনো খাওনি? গিয়ে আগে খাও তারপর আমাকে কল দিও।’

‘আচ্ছা খেয়ে কল দিচ্ছি রাখলাম এখন।’
কল কেটে ফোন রাখতে নিলে রাইদার নজরে একটা মেসেজ আসে। মেসেজটা খুলে পড়তে শুরু করে।

‘কেমন আছো রাই? নিশ্চয়ই অনেক ভালো আছো। আমিও বেশ ভালো আছি। সায়ন আর তোমার বিয়েতে থাকতে পারিনি তার জন্য কিছু মনে নিও না। মিথ্যা বলবো না ইচ্ছে করেই আসিনি। সায়ন আমাকে অনেকবার কল দিয়েছে কিন্তু রিসিভ করিনি ওকে মিথ্যা বলতে পারবো না সেইজন্য। আজকে ল্যাপটপে পুরাতন ছবিগুলো দেখতে গিয়ে তোমার কিছু ছবি পেয়েছি যেগুলো কুয়াকাটায় তুলেছিলাম। এখানে এমন কিছু ছবিও আছে যা আমি তোমার অনুমতি না নিয়েও তুলেছিলাম। যেহেতু এখন তুমি অন্যের স্ত্রী তাই তোমার ছবিগুলো গুলো আমার কাছে রাখা অনুচিত। ছবিগুলো ডিলিট করার আগে ভাবালাম তোমাকে পাঠিয়ে দেই যদি তোমার ভালো লাগে সেটা ভেবেই তোমাকে ছবিগুলো মেইল করে দিয়েছি। আমার কাছে এখন তোমার কোনো ছবিই নেই সব ডিলিট করে দিয়েছি শুধু তোমার পায়েল পরিহিত পায়ের ছবিটা আছে কেনো জানি ছবিটা ডিলিট করতে পারলাম না অবশ্য তুমি বললে ডিলিট করে দিবো। তোমার নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভকামনা রইলো। ভালো থেকো আর সায়নকে ভালো রেখো।’

মেসেজটা পড়ে রাইদা বুঝতে অসুবিধা হয়নি আরাফের মেসেজ এটা। ফোন পাল্টানোর পর আরাফের নাম্বারটা রাইদা হারিয়ে ফেলে।
মেইলে ঢুকে রাইদা সবগুলো ছবি দেখে। ছবিগুলো দেখে রাইদা অনেক খুশি হয়। আরাফকে ধন্যবাদ জানাতে একটা মেসেজ করে দেয়।

‘আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ছবিগুলোর জন্য। আপনিও ভালো থাকবেন।’
মেসেজটা পাঠিয়ে ফোন রেখেই রাইদা নিচে নামে খেতে।

রাইদা এসে তার জন্য বেড়ে রাখা খাবারের প্লেটটা নিয়ে মিসেস রিনার রুমের দিকে যায়। দুপুর বেলা সবাই কাজে বাহিরে তাকে তাই যে যখন আসে সে তখন খেয়ে নেয়। রাইদা বাসায় ফিরলেই নিপা তার ভাত বেড়ে রাখে। অবশ্য ছুটির দিনে এবং প্রতি রাতে সকলে একত্রে বসে খাবার খায়।

মিসেস রিনা টিভিতে অনুষ্ঠান দেখছিলো রাইদা এসে তার পাশে বসে খেতে শুরু করে। রাইদার নিত্য দিনের কাজ এটা। মিসেস রিনার সাথে দুপুরে খায় যদি কোনোদিন খেতে না পারে তাহলে খাবারের প্লেট এনে তার সাথে গল্প করে আর খাবার খায়।

‘এতক্ষণ পর তোমার মনে পড়লো দুপুরের খাবার খেতে হবে? বাসায় ফিরেছো সেই কখন অথচ খাবার খেতে বসছো এখন এতক্ষণ কি করলা?’,মিসেস রিনা গম্ভীর গলায় রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।

‘এসেই তো গোসল করতে ইচ্ছে করে না। রেস্ট করলাম গোসল করলাম তারপর আপনার ছেলে কল দিলো তার কথা শুনলাম এরপরই তো খাবারের প্লেট নিয়ে আপনার রুমে আসলাম।’,রাইদা মুখটা চুপসে বলে।

‘হ্যা মা জননী আপনি তো মহা ব্যস্ত। এতো ব্যস্ত একদিনও দুপুরে ঠিক সময়ে খাবার খান না।’

মিসেস রিনার কথা শুনে রাইদা হাসি দেয়।

‘সায়ন্তিকা ফিরেনি এখনো?’,রাইদা মিসেস রিনাকে প্রশ্ন করে।

‘সায়ন্তিকা তো ফিরে তোমার সাথে আজকে কি তুমি ওর সাথে ফিরনি?’,মিসেস রিনা পাল্টা প্রশ্ন করে।

‘আসলে আমার একটা কাজ ছিলো তাই আগেই বেরিয়েছি ভার্সিটি থেকে।’

‘দেখো হয়তো সায়ন্তিকার কোনো এক্সট্রা ক্লাস আছে সেইজন্য দেরি হচ্ছে।’
মিসেস রিনার কথার কোনো জবাব রাইদা দেয় না সে ভাবনায় পড়ে যায়। খাওয়া শেষ করে রান্নাঘরে গিয়ে প্লেট রেখে হাত ধুয়ে নিজের রুমে চলে আসে রাইদা।

একটু বিশ্রাম নিয়ে প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে বসে। সন্ধ্যা নেমে আসলে রুম থেকে বেরিয়ে বসার ঘরে যায় রাইদা। এই সময় মিসেস রিনা, নিপা, সায়ন্তিকা আর সে বসে আড্ডা দেয় নানান রকমের নাশতা খায় কখনো আবার টিভিতে ছবি কিংবা সিরিয়াল দেখে।

বসার ঘরে এসে সায়ন্তিকাকে দেখতে না পেয়ে রাইদার ভ্রু কুঁচকে আসে।

‘সায়ন্তিকা বাসায় ফিরেনি?’,নিপাকে প্রশ্ন করে রাইদা।

‘আপুর নাকি শরীর খারাপ লাগতেছে তাই বললাম রুমে গিয়ে ঘুমাইতে।’,নিপা উত্তর দেয়।

‘আচ্ছা তাহলে মাকে ডেকে আনো।’
রাইদার কথা মতো নিপা গিয়ে মিসেস রিনাকে ডাকে। তিনজনে বসে সিরিয়াল দেখতে। মিসেস রিনা সিরিয়াল দেখছে আর নানান কথা বলছে রাইদা মনোযোগ দিয়ে সেগুলো শুনছে আর হাসছে।

বাসার কলিং বেল বাজলে নিপা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। আরমান শেখ এবং সায়ন বাসায় প্রবেশ করে। রাইদা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেকে রাত নয়টা বাজে।

সায়ন বাসায় প্রবেশ করেই রাইদাকে ইশারা করে রুমে আসতে কিন্তু রাইদা না দেখার ভান করে থাকে। রুমে না গিয়ে সে রান্নাঘরে দিয়ে দাঁড়িয়ে নিপাকে সাহায্য করতে থাকে।

রাতে খাবারের টেবিলে সায়নের বিপরীতে রাইদা সায়ন্তিকার সাথে এসে বসে। এতে সায়ন চোখ রাঙালেও রাইদা পাত্তা দেয় না। রাইদা আরমান শেখের সাথে গল্পে মশগুল হয়ে যায়।

খাবারের পর রাইদা গিয়ে সায়ন্তিকার রুমে বসে থাকে। বেচারি সায়ন্তিকা কিছু না বলে বই বের করে নিজের পড়া পড়তে থাকে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর সায়নের সাড়াশব্দ না পেয়ে রাইদা অবাক হয়। অন্য সময় হলে সায়ন এসে দরজা ধাক্কাতো কিন্তু আজকে সায়ন কেনো আসছে না তা নিয়ে রাইদা ভাবনায় পড়ে যায়।
হুট করে সায়ন্তিকা রুমের দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রাইদা কিছু বুঝার আগেই রুমের সায়ন প্রবেশ করে।

‘কি ভাবছো তোমার ননদিনী তেমাকে বাঁচাবে? ওরে জাস্ট শপিং করানোর লোভ দেখালাম দেখো দরজাটা কি সুন্দর খুলে দিয়েছে।’
সায়নের কথা শুনে রাইদা হতাশ চোখে তাকায়। সায়ন হাসতে হাসতে এসে রাইদাকে কোলে তুলে নিজের রুমের দিকে যায়।

‘সায়ন্তিকা তোমাকে ছাড়বো না তুমি আমার সাথে বেইমানী করলা।’,রাইদা চিল্লিয়ে সায়ন্তিকাকে বলে।

সায়ন্তিকা রুমের বাহিরের দাঁড়িয়ে ছিলো রাইদার কথা শুনে সেও হাসতে থাকে।
রুমে প্রবেশ করে রাইদাকে বিছানায় বসিয়ে সায়ন চলে যায় দরজা লাগাতে। দরজা লাগিয়ে সায়ন রাইদার পাশে এসে বসে।

‘আমি এখন ঘুমাবো এখন একদম বিরক্ত করবেন না।’,কথাটা বলে রাইদা সায়নকে দূরে সরানোর চেষ্টা করে।

‘ঘুমাও না করছে কে কিন্তু আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করছো কেনো? আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে সরাতে চাইছো?’,সায়ন রাইদাকে বলে।

‘আপনার সাথে তর্ক করার ইচ্ছে নেই ঘুমাবো কালকে প্রেজেন্টেশন আছে। আমাকে একদম বিরক্ত করবেন না বিরক্ত করলে আমি নিপার রুমে গিয়ে ঘুমাবো।’

‘এবার বুঝলাম আসল কাহিনী। তুমি তো জানোই আমি একদমই কথা শুনি না।’

রাইদা সায়নের দিকে ফিরে কিছু বলতে নিলে সায়ন রাইদাকে সেই সুযোগ না দিয়ে তাকে কাছে টেনে নেয়।
রাইদা চোখমুখ কুঁচকে সায়নের দিকে তাকালে সায়ন হেঁসে রাইদার ওষ্ঠ জোড়া আঁকড়ে নেয়। সায়নের স্পর্শ পেয়ে রাইদা আর কোনো বাঁধা দেয় না।

….

পরেরদিন সকাল বেলা উঠে রাইদা আর সায়ন্তিকাকে সায়ন ভার্সিটিতে পৌঁছে দেয়।
রাইদা দৌড়ে ক্লাসে যায় কারণ প্রথম ক্লাসেই তার প্রেজেন্টেশন ছিলো একটু দেরি হলে স্যার ক্লাসে প্রবেশ করতে দিবে না।
ক্লাস শেষ হতেই রাইদা আর পায়েল ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়। সকলকে বলে যায় তারা আজকে আর ক্লাস করবে না।

ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে দু’জনে বাহিরে অপেক্ষা করতে থাকে। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর পায়েলের ফোন বেজে উঠলে কল রিসিভ করে কথা বলে পায়েল। কল কাটার পর রাইদা পায়েলের দিকে তাকালে পায়েল হেঁসে রিকশা ডাক দেয়। রিকশা নিয়ে দু’জনে গন্তব্যে রওনা দেয়।
রিকশা এসে থামে এক রেস্টুরেন্টের নিচে। রিকশা থেকে নেমেই রাইদা দ্রুত পা চালিয়ে আসে পিছনে ভাড়া মিটিয়ে পায়েলও আসে।
রেস্টুরেন্টে ঢুকে রাইদার চোখ জোড়া খুঁজতে খুঁজতে কাংখিত যুগলদের পেয়ে যায়। দু’জনেই পাশাপাশি বসা আর রাইদা তাদের পিছনে তাই রাইদাকে তারা দেখেনি।

‘তাহলে তুমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছো? সত্যিি তুমি পারবে আমাকে ছাড়া থাকতে?’,মেয়েটা ছেলেটাকে বলে।

‘আমি কি এবারো বলেছি এটা আমার সিদ্ধান্ত? আমি বলেছি আপাততঃ আমরা দূরে থাকবো যখন আমার গ্রাজুয়েশন শেষ হবে চাকরি নিয়ে তোমার বাসায় গিয়ে কথা বলবো। যদি সবাই মানে মানলো না হলে আমার কিছু করার নেই।’,ছেলেটা জবাব দেয়।

‘কেনো তোমার কিছু করার নেই? আমার জন্য এই টুকু করতে পারবা না?’,মেয়েটা জিজ্ঞেস করে।

‘না পারবো না কারণ আমার পরিবারের চিন্তা আছে।’,ছেলেটা জবাব দেয়।

‘এতোই যখন চিন্তা সায়ন্তিকাকে ভালোবাসতে গেলি কেনো? মায়ের ছেলে মায়ের আঁচলের নিচেই থাকতি।’
রাইদার কথা শুনে ছেলেটা চমকে উঠে।

‘কিরে বাপি দা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম হচ্ছে? একবারো আমাদের বুঝতে দিলি না কিন্তু দেখ আমিও তোর পিছনে সিসিটিভি লাগিয়ে খুঁজে বের করলাম তুইও প্রেম করিস।’,পায়েল দাঁত কেলিয়ে বলে।

রাইদাকে দেখে সায়ন্তিকা মাথা নিচু করে ফেলে।

‘তোরা একে অপরকে ভালোবাসিস এতে আমার আপত্তি নেই আর সায়নেরও আপত্তি হবে না তবে বাপ্পি একটা কথা মনে রাখবি সায়ন্তিকা যদি তোর কারণে কষ্ট পায় তাহলে সায়ন তোকে জ্যান্ত রাখবে না। বিগত একমাস ধরে তুই সায়ন্তিকাকে এরিয়ে যাচ্ছিস এতে মেয়েটা কষ্ট পেয়ে সারাদিন রাত মন খারাপ করে কান্না করে। সায়ন্তিকা তোকে অনেক ভালোবাসে আর এমন একটা মেয়েকে নিজের জীবন থেকে হারাতে দিস না। আমি আগেই জানতাম সায়ন্তিকা কাউকে ভালোবাসে কিন্তু সেটা তুই জানতাম না। আশা করি অর্কের করা ভুল তুই রিপিট করবি না। ভালোবেসে সায়ন্তিকার হাতটা ধর সব কিছুর ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে।’

রাইদার কথা শুনে বাপ্পি মুখ তুলে রাইদার দিকে তাকায়।

‘তোদের দু’জনকে আমার বিয়েতে কাপল হিসেবে চাই আর বাপ্পি কালকে ট্রিটটা দিবি এখন তোদের ছেড়ে দিলাম। চল রাই আমরা বাসায় যাই আমাদের আর কাজ নেই।’
পায়েলের কথায় রাইদা বেরিয়ে যায়।

সায়ন্তিকা অশ্রুসিক্ত নয়নে বাপ্পির দিকে তাকালে বাপ্পির চোখমুখে বিষাদ দেখা যায়। নিজের বাম হাতটা তুলে সায়ন্তিকার হাতের উপর রাখে বাপ্পি। চোখের ইশারায় সায়ন্তিকাকে আশ্বস্ত করে। বাপ্পির কাছ থেকে উত্তর পেয়ে সায়ন্তিকার চোখমুখে খুশির ঝিলিক দেখা যায়। বাপ্পির কাছে মনে হলো হুট করেই বুকের মধ্যে চেপে রাখা সমস্যাটা রাইদা এসে এক নিমিষে সমাধান করে দিয়ে গেলো।

..

খাবারের টেবিলে বসে সায়ন আর মান্নান রাফায়েত খাচ্ছে তার সাথে নানান গল্প করছে। রাইদা আর রওশন আরা পাশে দাঁড়িয়ে দু’জনকে খাবার দিচ্ছে। আজকে সকালে মান্নান রাফায়েত সায়নকে কল দিয়ে বলেছে রাইদাকে নিয়ে দুপুরে দাওয়াত খেতে আসতে। সকালে অফিস সেরে রাইদাকে নিয়েই সায়ন চলে এসেছে শ্বশুড়বাড়িতে দাওয়াত খেতে। রাইদা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়েই সায়নকে কল দিয়ে সব বললে সায়ন সেখান থেকেই রাইদাকে নিয়ে আসে।

‘তুমিও খেতে বসতা আমাদের সাথে।’,মান্নান রাফায়েত রাইদাকে বলে।

‘না তোমরা জামাই শ্বশুড় খেয়ে গল্প করো তারপর আমি আর মা খাবো।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘শ্বাশুড়ি আপনার রান্নার তুলনা নেই। কোথা থেকে শিখেছেন এত মজার রান্না? আমার বউটাকে একটু শিখিয়ে দিয়েন তো।’,সায়ন খেতে খেতে বলে।

‘তোমার কাছে বিয়ে দিয়েছি যাতে মেয়ে আয়েশ করে থাকে আর তুমি কিনা আমার মেয়েকে দিয়ে রান্না করিয়ে সেই রান্না খাওয়ার স্বপ্ন দেখো!’,রওশন আরা গম্ভীর গলায় বলে।

‘মনে আছে শ্বাশুড়ি আট বছর আগে বলেছিলেন আমার কাছে মেয়ে দিবেন না অথচ আট বছর পর আমাকে নিজে রান্না করে খাইয়ে জামাই আদর করছেন। একেই বলে কপাল বুঝলেন?’

সায়নের কথায় রওশন আরার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে।

‘তুমি কখনোই ভালো হবে না। সবই আমার কপাল না হলে তোমাকে আমি জীবনেও মানতাম না।’,রওশন আরা বলে।

‘শ্বাশুড়ি আরেকটু মাংসের ঝোল দেন তো আপনার রান্না করা মাংসের ঝোলও অনেক মজা।’

সায়নের কথায় রাইদা,মান্নান রাফায়েত,মর্জিনা মিটমিট করে হাসতে থাকে। রওশন আরা সায়নকে মেনে নিলেও সায়ন রওশন আরাকে বেশ বিরক্ত করে এসব কথা বলে। রওশন আরা চেতলেও চুপ করে থাকে। আর এসব জিনিস দেখে রাইদা,মান্নান রাফায়েত প্রচুর মজা নেয়।

খাওয়া শেষ করে সায়ন আর মান্নান রাফায়েত গিয়ে সোফায় বসে। দুপুর বেলা বাংলাদেশের একটা ক্রিকেট ম্যাচ চলছিলো টিভি ছেড়ে জামাই-শ্বশুড় সেটা দেখতে থাকে।

রাইদা,রওশন আরা,মর্জিনা এক সাথে খেতে বসে। খাওয়া শেষ হলে রাইদা তার মায়ের রুমে গিয়ে বিশ্রাম করে।
রাতের খাবার খেয়ে বাসার জন্য রওনা দেয় সায়ন আর রাইদা যদিও দু’জনকে থাকতে বলেছিলো কিন্তু মিসেস রিনা কল দিয়ে ফিরতে বলছে তার নাকি রাইদাকে ছাড়া বাসায় ভালো লাগছে না।

ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাচ্ছে সায়ন আর পাশে বসে গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে রাইদা।

‘তুমি তখন সায়ুর বিষয়ে কি বলছিলে?’,নিরবতা ভেঙে রাইদাকে প্রশ্ন করে সায়ন।

‘বাপ্পি আর সায়ন্তিকা একে অপরকে ভালোবাসে তবে আপনারা মানবেন কিনা সেটা নিয়ে ওরা একটু ভয়ে আছে।’,রাইদা উত্তর দেয়।

‘ওহ এই বিষয়! সমস্যা নেই বাপ্পি বলে দিও সায়ু ওকে ভালোবাসলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই শুধু সায়ুর খেয়াল রাখলেই হবে।’

‘সেটা তো বলেছি।’
রাইদার উত্তরের পর আবারো দু’জনে চুপ হয়ে যায়। সায়ন নিজেকে আঁটকে না রাখতে পেরে আবারো জিজ্ঞেস করে।
‘রি তুমি আবার আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো? কতবার বলবো আমার থেকে কিছু লুকিয়ো না আমি কষ্ট পাই।’

সায়নের এমন কথায় রাইদা ঘুরে সায়নের দিকে তাকায়। তার বুকের মধ্যে টিপটিপ করছে।

‘গতকালকে হাসপাতালে কেনো গিয়েছিলে? না করবা না তোমার সাথে আফরিনের দেখা হয়েছে আর আফরিনই আমাকে কল দিয়ে বলেছে। প্লিজ আমাকে সব বলো না হলে চিন্তায় আমি কোনো কাজেই মন বসাতে পারবো না।’

সায়নের কথায় রাইদা ঢোক গিলে চুপ করে থাকে।

‘চুপ করে থেকো না রি বলো আমাকে। আমাকে না বললে আমি বুঝবো এখনো আমাকে তুমি বিশ্বাস করো না।’

‘আমি বোধহয় কখনো মা হতে পারবো না।’,হুট করে রাইদা বলে।

রাইদার কথা শুনে গাড়ির ব্রেক কষে সায়ন। বিস্ময়ে রাইদার দিকে তাকায়।

‘কিসব যা তা বলছো তুমি! মাথা ঠিক আছে তোমার?’

‘ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি সেই বললো। আসলে আমার পিরিয়ড অনিয়মিত তাই ডাক্তার দেখিয়েছি তখন ডাক্তার বললো আমার চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে আমি মা হতে পারবো কিনা এটায় সন্দেহ আছে। যাদের অনিয়মিত পিরিয়ড তাদের মা হওয়ার চান্স কম থাকে।’

রাইদা বিস্তারিত ঘটনা একে একে সায়নকে বলে। সব শুনে সায়নের মুখ গম্ভীর হয়ে যায়। হুট করে সিট বেল্ট খুলে সায়ন রাইদার দিকে ঝুঁকে রাইদার ললাটে গভীর চুম্বন এঁকে দেয়।

‘সামান্য এই বিষয়টা আমার থেকে লুকাতে হয়? আমি তো আরো ভয় পেয়েছিলাম ভেবেছিলাম কি না কি হয়েছে। তুমি সুস্থ থাকলেই হবে আমার আর কিছু লাগবে না। বাচ্চার প্রয়োজন হলে আমার দত্তক নিয়ে নিবো এ বিষয় নিয়ে একদম মন খারাপ করবা না।’

সায়নের কথা শুনে রাইদা অবাক হয়ে যায়। সায়ন নিজের সিট বেল্ট লাগিয়ে আবারো গাড়ি স্টার্ট দেয়। গাড়ি এসে থামায় একটা ফুলের দোকানের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে গাঁদাফুলের মালা কিনে এনে রাইদার খোঁপায় পরিয়ে দেয় সায়ন।

‘সারাজীবন শুধু আমার হয়ে থেকে যাও বিনিময়ে আর কিচ্ছু চাই না। কথা দিচ্ছি এভাবেই আগলে রাখবো আর তোমায় ভালোবেসে যাবো।’,রাইদার হাতে চুমু দিয়ে বলে সায়ন।

রাইদা হেঁসে এগিয়ে এসে সায়নের ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ ছোঁয়ায়। রাইদার এহেন কান্ডে সায়ন গাড়ির বাহিরের মানুষজনের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কেউ দেখেছে কিনা। জলদি গাড়ি স্টার্ট দেয়। রাইদা হাসতে হাসতে সায়নকে বিরক্ত করতে থাকে।

‘বাসায় যাই একবার তারপর তোমাকে বুঝাচ্ছি। বউ হয়েছো তাই বলে এভাবে বরের মান সম্মান কেঁড়ে নিবে তা তো মেনে নিতে পারি না।’,রাইদার দিকে তাকিয়ে বলে সায়ন।

‘বেশি বললে আজকে মায়ের রুমে ঘুমাবো।’

‘ঠিক আছে আজকে বাসায় ফিরবো না।’

‘কই যাবো তাহলে?’
সায়ন ঠোঁট নাড়িয়ে একটা শব্দ বলে যা বুঝতে রাইদার অসুবিধা হয় না।

চোখমুখ কুঁচকে রাইদা বলে,’ধ্যাত অসভ্য লোক।’

রাইদার কথা শুনে সায়ন হাসি দিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে।


(সমাপ্ত)

(বিশাল পর্ব দিয়েছি কোথাও বানান ভুল হলে আমি দুঃখিত। যারা এতোদিন সাথে থেকে গল্পটা পড়েছেন সকলের জন্য ভালোবাসা রইলো। লেবু বেশি চিপলে তিতা হয় তাই গল্পটার প্রতি আপনাদের ভালোবাসা থাকতেই শেষ করে দিলাম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here