পর্বঃ৪৩
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষেধ।)
…
বিছানায় বসে ফোন সামনে নিয়ে কিছু একটা দেখায় ব্যস্ত রাইদা। সায়ন রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে রাইদার সামনে এসে দাঁড়ায়। শব্দ পেয়ে ফোন থেকে মুখ তুলে তাকায়। রাইদা ফোন লক করে রাখতে নিলে সায়ন ফোন কেঁড়ে নেয়।
‘সারাদিন ফোনে কার সাথে এতো আলাপ করো?’,ফোনের দিকে তাকিয়ে সায়ন প্রশ্ন করে।
‘কার সাথে আবার আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে।’,দুষ্টু হেঁসে রাইদা বলে।
রাইদার ফোনটা বিছানায় রেখে রাইদার দু’গাল এক হাতে চেপে ধরে সায়ন।
‘লুক এ্যাট মি। তোমার বয়ফ্রেন্ড আমার থেকেও হ্যান্ডসাম?’
সায়নের কথা শুনে রাইদা ভালো করে তার দিকে তাকায়।
‘অবশ্যই আপনার থেকে দ্বিগুণ হ্যান্ডসাম। হাজারো মেয়ের বাঁশ থুক্কু ক্রাশ।’
রাইদার কথা শুনে সায়ন হেঁসে দেয়।
‘এইটা একটু খাও।’
সরবতের গ্লাসটা রাইদার সামনে ধরে সায়ন।
‘আমি এখন সরবত খাবো না আপনি খান।’
রাইদার কথার কোনো প্রতিক্রিয়া সায়ন দেখায় না সে গ্লাসটা রাইদার সামনে ধরেই রাখে।
‘ঠিক আছে আমি একবার খাবো আর খেতে পারবো না। ‘,কথাটা বলে সরবতের গ্লাসটা নেয় রাইদা।
ছোট একটা চুমুক দিয়ে সরবত খেয়ে সায়নের দিকে গ্লাসটা ফেরত দেয়। সায়ন এটাই চাচ্ছিলো তবে মনের কথা প্রকাশ করলো না। গ্লাসটা নিয়ে রাইদার পাশে বসে বাকি সরবতটা খেয়ে নেয় সায়ন।
‘তোমার খাওয়া সরবত খেতে বেশি মজা।’,ঘাড় কাত করে রাইদার দিকে তাকিয়ে সায়ন বলে।
‘মজা মানে? আপনি কীভাবে জানেন? এর আগেও খেয়েছেন নাকি?’
‘বিয়ের আগে দুইবার খেয়েছিলাম। একবার মামার বাসায় তোমার রেখে যাওয়া ট্যাংয়ের সরবত আরেকবার তোমার নানুর বাসায়।’
সায়নের কথা শুনে রাইদার মনে পড়ে ঘটনা গুলো। চোখ বড়বড় করে অবাক চোখে সে সায়নের দিকে তাকায়।
‘আপনি আসলেই পারেন পাগলামি করতে। এতো পাগলামি করেন কেনো? আমি না থাকলে তো আপনার খুব কষ্ট হবে তখন কীভাবে নিজেকে সামলাবেন?’
রাইদার কথা শুনে সায়ন চোখ মুখ শক্ত করে ফেলে।
‘কেনো আমায় ছেড়ে যাওয়ার প্লান করছো? তোমার কি মনে হয় বিনা কারণে তুমি আমাকে ছাড়তে চাইলে আমি তোমায় যেতে দিবো?’, ঠান্ডা স্বরে কথাগুলো বলে সায়ন।
রাইদা বরাবরই সায়নের ঠান্ডা স্বরে বলা কথাগুলো ভয় পায়। হুট করে সায়ন এভাবে কথাগুলো বলবে বুঝতে পারেনি সে তাৎক্ষণিক নিজেকে সামলে জোর পূর্বক হাসি দেয়।
‘আরে আপনি সব বিষয় এতো সিরিয়াসলি নেন। আমি তো এমনি জানার জন্য জিজ্ঞেস করেছি।’
রাইদার কথা শুনে সায়ন কোনো জবাব দেয় না। বসা থেকে উঠে দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
সায়ন চলে যেতেই রাইদা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। আজকাল হুটহাট সায়নের মেজাজ সে আন্দাজ করতে পারে না। কখন কোন কথার কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে সায়ন সেটাই এখন রাইদার কাছে একপ্রকার সারপ্রাইজ।
..
কলিংবেল বেজে উঠলে মারিয়া গিয়ে দরজা খুলে। সকলকে ঠেলে বাপ্পি আগে ঢুকে গিয়ে সোফায় বসে হাঁপাতে থাকে।
‘মর্জিনা খালা জলদি বরফ পানি আনেন আমি মরে গেলাম গরমে।’,বাপ্পি চিল্লানি দিয়ে বলে।
‘এই তো এসে গেছে বাঁদরের দল। এই পোলাপান গুলোর সাথে মিশে আমার মেয়েটা যা একটু ভালো ছিলো তাও গেছে। এদের দেখলেই আমার শরীর জ্বলে।’,বিরবির করে কথাগুলো বলে রওশন আরা।
‘চিন্তা করবেন না আপা আমি আইজকা সবগুলারে সাইজ কইরা দিমু।’,মাইমুনা রওশন আরার কাঁধে হাত রেখে বলে।
অর্ক এসে বাপ্পির মাথায় থাপ্পড় দিয়ে ইশারায় রাইদার রুমে যেতে বলে।
‘ যা আমি আসতেছি। আরে ভাই আপনি এখানে? ভালো আছেন?’,সায়নকে সামনের সোফায় বসা দেখে বাপ্পি বলে।
‘এটা যেহেতু আমার শ্বশুড়বাড়ি তাই আমার এখানে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না। আমি ভালো আছি তোমাদের কি অবস্থা? ‘,হালকা হেঁসে সায়ন বলে।
‘এই তো ভাই ভালো। ওর কথায় কিছু মনে করবেন না বদমাইশি ওর রক্তে রক্তে।’,অর্ক জবাব দেয়।
মর্জিনা কাজে ব্যস্ত থাকায় মারিয়া ঠান্ডা পানি আর সরবত এনে বাপ্পিকে দেয়।
‘মর্জিনা খালা কি প্লাস্টিক সার্জারি করাইছো? চেহারা পালাইয়া গেছে আবার তোমারে কিশোরী লাগতাছে।’,বাপ্পি অবাক চোখে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
‘এইটা মারিয়া, রি এর খালাতো বোন।’,সায়ন জবাব দেয়।
‘ওহ আমি তো আরে ভাবলাম মর্জিনা খালা প্লাস্টিক সার্জারি করাইছে।’
বাপ্পির কথা শুনে মারিয়া সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়। মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বাপ্পি বোকা হাসি দিয়ে গ্লাস দুটো নিয়ে রাইদার রুমে চলে যায়।
ফাহিম,পায়েল,অর্ক রাইদার বিছানায় বসে গল্প করছিলো রাইদার সাথে। বাপ্পি এসে চেয়ার টেনে বসে ওদের সাথে গল্পে মেতে উঠে। একটু পর মারিয়া এসে বাকিদের সরবত দিয়ে যায়।
দুপুরে খাবার টেবিলে সায়ন,মান্নান রাফায়েত,অর্ক,ফাহিম,বাপ্পি আর পায়েল বসে খেতে। যদিও পায়েল চাচ্ছিলো রাইদার সাথে খেতে কিন্তু রাইদা ধমক দিয়ে পায়েলকে বসায়।
মর্জিনা,মারিয়া আর রাইদা মিলে সকলকে খাবার বেরে দেয়।
‘আইজকাইলকার পুলামাইয়া গুলা একছেড় বেয়াদব। লাজ- শরম বেবাক খাইয়া লাইছে। নিজেরা খাইতে বইছে অথচ মোগোরে একবারে হাদলো না।’,মাইমুনা বিলাপ করতে করতে বলে।
কথাটা শুনে রাইদার বন্ধুরা লজ্জা পায়। বিষয়টা বুঝতে পেরে সায়ন বিরক্ত হয়।
‘খালা শ্বাশুড়ি রোস্টটা মজা হয়েছে অনেক। এদিকে আসেন আপনাকে একটু খাইয়ে দেই। নেই একটু খান একদম লজ্জা পাবেন না। পোলাপানের লজ্জা নেই কিন্তু আপনার তো আছে তাই বললাম।’,পিছনে ঘুরে মাইমুনার দিকে রোস্টটা ধরে সায়ন কথাগুলো বলে।
সায়নের কথা শুনে মান্নান রাফায়েতের মুখে হাসি চলে আসে। মিটমিট করে সে হাসতে থাকে। রাইদা শব্দ করে হেঁসে দিলে সায়ন বাদে বাকিরাও হেঁসে দেয়।
‘মোর চিন্তা করা লাগবো না খাও বেশি বেশি।’,মাইমুনা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।
‘ঠিক আছে আপনি না খেলে আমিই খেয়ে ফেলে। উম মজা হয়েছে অনেক। কে রান্না করছে?’,সায়ন মর্জিনাকে জিজ্ঞেস করে।
‘রওশন আপা রানছে।’,মর্জিনা জবাব দেয়।
‘শ্বাশুড়ি আপনার হাতে তো জাদু আছে। এই রকম মজার রান্না খেতে হলেও প্রতি সপ্তাহে শ্বশুড়বাড়ি আসবো।’,রওশন আরার দিকে তাকিয়ে সায়ন বলে।
রওশন আরা কোনো জবাব না দিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। পিছন পিছন মাইমুনাও যায়। রাইদা সায়নের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙালে ভদ্র ছেলের মতো সায়ন কথা বন্ধ করে খেতে থাকে।
খাওয়া শেষ হতেই রাইদার বন্ধুরা এসে রুম দখল করে নেয়। সায়ন অসহায়ের মতো পাশের শুয়ে যায় বিশ্রাম নিতে। রাইদা খাবারের প্লেট নিয়েই রুমে আসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে।
ঘন্টা খানেক আড্ডা দেওয়ার পর বিকাল নামলেই রাইদার বন্ধুরা বিদায় নেয়। রাইদা ফোন হাতে নিয়ে দেখে সায়ন কল দিয়েছিলো কিন্তু ফোন সাইলেন্ট থাকায় সে দেখেনি। রাইদা যায় পাশের রুমে সায়নের সাথে কথা বলতে কিন্তু সায়নকে সেখানে পায় না। বসার ঘরে গেলেও সায়নকে দেখে না। সায়নের নাম্বারে কল দিলে সায়ন কল কেটে মেসেজ দেয়।
‘তখন তুমি কল রিসিভ করনি তাই এখন আমি তোমার কল রিসিভ করবো না।’
মেসেজটা পড়ে আগামাথা কিছুই রাইদা বুঝতে পারে না।মারিয়াকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে সে জানায় সায়ন তার বাবার সাথে আবারো বাহিরে হাঁটতে গেছে।
মাগরিবের পর মান্নান রাফায়েত আর সায়ন বাসায় ফিরে। রাইদা নিজের রুমে মারিয়াকে নিয়ে জামা দেখাচ্ছিলো।
‘দেখ এখান থেকে যেটা পছন্দ হয় নিয়ে নে।’,মারিয়াকে বলে রাইদা।
মারিয়া একে একে রাইদার জামা গুলো দেখতে থাকে।
‘রি আজকে কিন্তু আমরা ফ্ল্যাটে ফিরবো। চলো এখনই বের হই না হলে রাত হলে শ্বাশুড়ি আবার তোমাকে যেতে দিতে চাবে না।’,সায়ন রাইদাকে বলে।
হুট করে সায়নের গলা পেয়ে রাইদা এবং মারিয়া দু’জনে তাকায়।
‘মাত্র তো সন্ধ্যা হলো। রাতে খেয়ে তারপর ফিরবো।’,রাইদা বলে।
‘একদম না এখনই চলো। কালকে না তোমার সিটি আছে? এখান থেকে ভার্সিটি যেতে লেট হবে।’
সায়নের কথা শুনে রাইদার মনে পড়ে সিটির কথা।
‘আচ্ছা বাবাকে গিয়ে বলেন আমি আসতেছি।’
রাইদার কথা শুনে সায়ন বসার ঘরে চলে যায় মান্নান রাফায়েতকে বলতে। সায়ন চলে যেতেই মারিয়া এসে রাইদাকে জড়িয়ে ধরে।
‘আপা এতো জলদি চইলা যাবেন? আপনে গেলে গা আমার একলা একলা ভালা লাগবো না।’,রাইদার দিকে তাকিয়ে মারিয়া বলে।
‘ক্লাস শেষ করে কালকে আবার আমি আসবনি। এখন যদি না যাই তোর ভাইয়া রাগ করবে আর ওনাকে রাগ করতে দেখলে আমার মোটেও ভালো লাগে না।’
রাইদার কথা শুনে মারিয়া চমকে তাকায়।
‘আজকে রাতটা আমার রুমে ঘুমা তবে তোর মাকে কিন্তু এই রুমে ঘুমাতে দিবি না।’,মারিয়ার গাল টেনে রাইদা বলে।
রাইদার কথা শুনে মারিয়া খুশি হয়। রাইদা এসেছে পরে এই রুমে সে ঢুকতে পেরেছে। রাইদা না থাকলে রুমটা তালা মারা থাকে। রুমের তালার চাবি মারিয়ার হাতে দেয় রাইদা।
বসার ঘর থেকে রওশন আরার চেচামেচি শুনে বুঝে যায় নিশ্চয়ই সায়নের কথায় তার মা চেতে গেছে।
ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রাইদা রুম থেকে বের হয়।
‘বাবা আমরা এখন ফ্ল্যাটে ফিরবো। কালকে আমার সিটি আছে আবার গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে মিস দেওয়া যাবে না। আমি চেষ্টা করবো ক্লাস শেষ করে আসার।’,মান্নান রাফায়েতকে বলে রাইদা।
‘বিয়ে করে তোর কি পা বড় হয়ে গেছে? এখন বাপ মায়ের কথার মূল্য নাই?’,রওশন আরা রেগে রাইদাকে বলে।
‘আরে তুমি থামো তো। মেয়েটার কথা বুঝার চেষ্টা করো আগে। যাবি ঠিক আছে কিন্তু রাতে খেয়ে যা না হলে গিয়ে এখন কি খাবি?’,মান্নান রাফায়েত বলে।
‘না বাবা এখনো তেমন রাত হয়নি। খাওয়ার অপেক্ষা করলে রাত বেড়ে যাবে। আমরা গিয়ে একটা ব্যবস্থা করে নিবো চিন্তা করো না।’,রাইদা জবাব দেয়।
‘তা করতে হইবো না। টিফির বাডিতে আমি খাবার দিয়া দিছি। এই নাও ধরো।’,রাইদার হাতে একটা বড় টিফিন বাটি ধরিয়ে দিয়ে মর্জিনা বলে।
রাইদা হেঁসে বাটিটা নেয়। মর্জিনা খালাকে জড়িয়ে ধরে এরপর মান্নান রাফায়েতকে বিদায় জানায়। সায়ন আগে নেমে যায় গাড়ি বের করতে গ্যারাজ থেকে। মারিয়া এসে রাইদাকে লিফট পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। রওশন আরা আর মাইমুনা এক পাশে দাঁড়িয়ে সব দেখতে থাকে। একসময় রাগ করে রওশন আরা নিজের রুমে চলে যায়।
লিফট দিয়ে নিচে নেমে রাইদা দেখে সায়ন গাড়ি বের করেছে। রাইদা গাড়িতে উঠলে সায়ন গাড়ি স্টার্ট দেয়।
সায়ন আর রাইদা যখন ফ্ল্যাটে ফিরে তখন প্রায় রাত দশটা বাজে। জ্যাম ঠেলে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেছে। রাইদা হাত মুখ ধুয়ে খাবার নিয়ে বসে। সায়ন এলে দু’জনে মিলে খেয়ে নেয়। খাবার শেষ করে নোট গুলো বের করে রাইদা পড়তে বসে বিছানার এক পাশে। আরেক পাশে সায়ন শুয়ে রাইদার দিকে তাকিয়ে থাকে। রাইদার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে সায়ন।
মধ্য রাতে রাইদা দেখে সায়ন ঘুমাচ্ছে। পড়া শেষ করে রাইদাও শুয়ে পড়ে।
….
সকালে ঘুম থেকে উঠে রাইদা তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়। সায়নও রেডি হয়ে বের হয় রাইদাকে পৌঁছে দিতে।
রাইদাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে সে গাড়ি ঘুরায় তার বাসার দিকে। মাকে দেখতে তারপর যাবে অফিসে।
ক্লাস,সিটি আবার ক্লাস শেষ করে রাইদা এসে ক্যান্টিনে বসে। অর্ক,রুহি,যামিনী,বাপ্পি,ফাহিম ও এসে বসে। ছোটু এসে সকলকে চা দিয়ে যায়।
চা খেয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে মাথাটা টেবিলের উপর রাখে রাইদা।
‘আর ভালো লাগছে না বাসায় গেলাম আমি।’,রাইদা বলে।
‘আরেকটা ক্লাস আছে শেষ করে যা। জানিস তো কোন স্যারের ক্লাস? অনুপস্থিত দেখলে পরের ক্লাসে কি করবে সেটা মনে নেই?’,পায়েল বলে উঠে।
‘ভালো করেই মনে আছে আমার। এই খচ্চর স্যারের ক্লাসের কথা কীভাবে ভুলি? উফ বিরক্ত লাগে ওনার ক্লাস।’,রাইদা বলে।
‘জরিনা তোর প্রেম কেমন চলে?’,বাপ্পি পায়েলের দিকে তাকিয়ে হুট করে বলে।
বাপ্পির কথা শুনে পায়েল চোখ বড়বড় করে তাকায়।
‘তুই তো পুরাই সিসিটিভি বাপি দা।’,পায়েল বাপ্পিকে গুঁতা দিয়ে বলে।
‘পায়েলের সাথে কেউ প্রেম করে তাও সত্যি সত্যি? আমার মোটেও বিশ্বাস হয় না। দু’দিন পরই পায়েল এসে বলবে ছেলের এই সমস্যা সেই সমস্যা। এরকম কত প্রেমিক আসলো গেলো।’, হঠাৎ ফাহিম বলে।
ফাহিমের কথা শুনে পায়েল বাদে সবাই হেঁসে দেয়।
‘ফাহিমের বাচ্চা চুপ। এমনে তো সবসময় চুপ থাকিস আজকে দেখি তোর মুখে কথা ফুটছে। আমাকে পচানোর জন্য সবগুলা রেডি থাকিস সবসময়। ‘,পায়েল ফাহিমের দিকে তাকিয়ে বলে।
‘আচ্ছা এসব বাদ দে। কেমন চলছে সব?’,রাইদা পায়েলকে জিজ্ঞেস করে।
‘চলছে যেমন চলার কথা।’,পায়েল লজ্জা পেয়ে বলে।
পায়েলকে লজ্জা পেতে দেখে সবাই জোরে জোরে হাসতে থাকে। সকলের হাসি দেখে পায়েল মুখ গোমড়া করে বসে থাকে। অর্ক আঁড়চোখে রুহির হাসির দিকে তাকায়। রুহি তার দিকে তাকাতেই সে চোখ নামিয়ে ফেলে।
ক্লাসের সময় হয়ে যাওয়াতে ক্লাসের দিকে দৌড় দেয় সবাই।
..
ক্লাস শেষ করে রাইদা ফ্ল্যাটে ফিরে তখন প্রায় বেলা তিনটা বাজে। ফ্ল্যাটে ফিরে গোসল সেরে বিছানায় শুয়ে পড়ে বিশ্রামের জন্য। বাহির থেকে বন্ধুদের সাথে খেয়ে এসেছে তাই খাবারের ঝামেলা এখন নেই।
সবেই বিছানায় শুয়েছি রাইদা তখনই ফোন বেজে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে সায়নের কল।
‘হ্যা বলেন শুনছি।’,ক্লান্ত স্বরে রাইদা বলে।
‘তুমি কই?’,সায়ন প্রশ্ন করে।
‘আবার কই থাকবো? ক্লাস শেষ করে ফ্ল্যাটে আসছি এখন বিছানায় ঘুমাবো।’
‘আমি আরো ভাবলাম তোমার বাবার বাসায় গেছো তাই কল দিলাম।’
‘অনেক ক্লান্ত আমি এখন অতদূর যাওয়ার শক্তি শরীরে নেই।’
‘ঠিক আছে ঘুমাও। ঘুম ভাঙলে কল দিও আমাকে।’
রাইদা হ্যা না কিছু বলেই কল না কেটেই ফোন রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে। সায়ন বিষয়টা বুঝতে পেরে কল কেটে দেয়। কল কেটে সায়ন নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।
রাইদার চোখ জোড়া ঘুমে প্রায় লেগে এসেছে তখন দরজায় জোরে জোরে নক করার শব্দ হয়। ঘুম ঘুম চোখে রাইদা এগিয়ে যায় দরজা খুলতে।
দরজা খুলে দেখে এক মধ্য বয়সী মহিলা দাঁড়িয়ে আছে।
রাইদাকে দেখে মহিলা চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়। রাইদার পরনে থাকা গেঞ্জি আর হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট দেখে ওনার ভালো লাগেনি। বিষয়টা রাইদা তার চোখ মুখ দেখে আন্দাজ করে নেয়।
‘কে তুমি? এখানে কি করো?’,মহিলাটি বলে উঠে।
হুট করে অযাচিত প্রশ্নে রাইদা অবাক হয়।
‘আন্টি কি কাউকে খুঁজতেছেন? আমি এই ফ্ল্যাটে থাকি।’,রাইদা অপ্রস্তুত হয়ে উত্তর দেয়।
‘আমি আফরিনকে খুঁজতেছি। আফরিন ভেতরে থাকলে ডাক দাও।’,মহিলাটি আবারো বলে।
‘সরি আন্টি এই নামে কেউ এখানে থাকে না। আপনি হয় তো ভুল করে এই ফ্ল্যাটে খুঁজতে এসেছেন।’
‘এই ফ্ল্যাটের মালিক তো ইমতিয়াজ।’
অপরিচিত মহিলার মুখে এমন কথা শুনে রাইদা অবাক চোখে তাকায়।
‘আমি সামনের ফ্ল্যাটে থাকে। ইমতিয়াজ আমাকে চিনে না তবে আফরিন আমাকে চিনে ভালো করেই।’
মহিলাটির কথাগুলো এবার রাইদার মাথায় এলোমেলো ভাবে ঘুরতে থাকে। সামনের ফ্ল্যাটে তাকালে দেখে সেদিন যেই কাজের মেয়েটা এসেছিলো ও দাঁড়ানো।
‘তুমি ইমতিয়াজের কি হও? ওর স্ত্রী আফরিন কোথায়?’
‘কি যা তা বলছেন? অনেকক্ষণ ধরে আপনার আজগুবি কথা শুনছি তার মানে এই না যা বলবেন চুপ করে শুনবো। আমি ইমতিয়াজের একমাত্র স্ত্রী। ‘,রেগে কথাগুলো বলে রাইদা।
‘খালাম্মা আপানারে কইছিলাম না বেডায় আবার বিয়া করছে দেখেন বিশ্বাস হইলো তো? আহারে আগের বউডা কত ভালো আছিলো সেই বউরে রাইখা এইডা কি বিয়া করছে বেডায়?’,কাজের মেয়েটা এসে বলে।
‘ইমতিয়াজ ওর স্ত্রী আফরিনের সাথে এই ফ্ল্যাটে থাকে। কয়েকমাসে আফরিনের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়। মেয়েটা সাত মাসের প্রেগন্যান্ট ছিলো। ইমতিয়াজ তো ফ্ল্যাটে থাকতোই না কাজে বাহিরে থাকতো আর মাঝে মাঝে এসে আফরিনকে দেখে যেতো। একা একা মেয়েটার কষ্ট হয় তাই আমি এসে ওর দেখাশোনা করতাম। মাস তিনেক আগে আমার মেয়ে অসুস্থ হলে আমি ওর বাসায় বেড়াতে যাই তখন আফরিনের সাথে আমার শেষ দেখা হয়। সেদিন ফিরে কাজের মেয়েটাকে পাঠিয়েছিলাম আফরিনের খোঁজ নিতে কিন্তু ও এসে জানায় আফরিন নেই ওর বদলে অন্য এক মেয়েকে দেখেছে। গতকালকে এসেছিলাম ঘটনা যাচাই করতে কিন্তু দরজায় তালা দেওয়া ছিলো। তাই তো আজকে আবার এলাম আফরিনকে খুঁজতে। ‘
মহিলার বলা কথা গুলো শুনে রাইদা কি বলবে শব্দ খুঁজে পায় না।
‘আফরিনকে কি ইমতিয়াজ ডির্ভোস দিয়ে দিয়েছে? আহারে মেয়েটা বাচ্চা নিয়ে কীভাবে আছে কে জানে। তুমি কাজটা ঠিক করো নায় আফরিনের মতো এতো লক্ষী মেয়েরা সংসার ভাঙছো।’
কথাটা বলে মহিলাটি রাইদার পা থেকে মাথা দেখে।
‘মর্ডান দেইখা ঐ আপারে রাইখা এরে বিয়া করছে বুঝছেন খালাম্মা? আফরিন আপা তো ভদ্র জামাকাপড় পরতো।’,কাজের মেয়েটা ফোঁড়ন কেটে বলে।
‘এই রকম কিছু মেয়ের জন্য মানুষের সাজানো সংসার ভাঙে। আফরিন ভালো মেয়ে তাই এরে কিছু বলেনায় আমি হলে পুলিশে দিতাম।’,মহিলাটি বলে।
‘আফরিনের কোনো ছবি আছে আপনার কাছে? এখানে কতমাস ধরে আফরিন থাকতো?’,নিচু স্বরে রাইদা জিজ্ঞেস করে।
‘না ছবি নেই আমার কাছে। প্রায় পাঁচ মাস ধরে আফরিন আর ইমতিয়াজ এখানে থাকতো। মাঝে মাঝে ইমতিয়াজ একটানা থাকতো আবার কাজে বাহিরে যেতো। তুমি কি বিয়ের বিষয়ে জানো না?’
মহিলার শেষের প্রশ্নটা শুনে রাইদা মলিন হাসে।
‘ধন্যবাদ আপনাদের। আমি বড় ক্লান্ত এখন আমার ঘুম প্রয়োজন পরে কথা হবে।’
কথাটা বলে রাইদা দু’জনের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয়। কাজের মেয়েটা আর মহিলাটি একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বিলাপ করতে করতে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে যায়।
ধীর পায়ে দরজা লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে রাইদা। এতক্ষণ সে কী শুনেছে? সায়ন বিবাহিত? তাহলে সায়ন তাকে ধোঁকা দিয়েছে?
…
চলবে..