#সে-কে-ছিলো
সিজন টু
পর্ব ৫
#সমুদ্রিত সুমি
ক্ষীণ পরিমাণ আশা জেগে উঠলেও মাটিতে পড়ে থাকা মেয়েটিকে তুলতে নিয়াজের খুব ভয় হচ্ছে।ভয় হচ্ছে এটা ভেবে যদি সত্যি এই মেয়েটা মনি হয়,আর যদি কোন ক্ষতি হয়ে থাকে মনির।তাহলে কি করবে নিয়াজ।তাই এক পা সামনে এগিয়েও দু পা পিছিয়ে আসছে। নিয়াজের পাশ থেকে একজন বলে উঠলো।
নিয়াজ ভাই আর কতক্ষন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন।মেয়েটা কে তুলি।
নিয়াজ হু বলতেই দু’জন নিলে মেয়েটিকে তুললো।মেয়েটির অবস্থা নাজেহাল। গাল ফেটে রক্ত পড়ছে।সারা হাত পায়ের অবস্থা খারাপ। দেখে মনে হচ্ছে কেউ খুব খারাপ ভাবে আঘাত করেছে।কিন্তু মেয়েটা বেঁচে আছে কিনা কেউ বুঝতে পারছে না।তাই একজন মেয়েটির নাকে হাত নিতেই বুঝতে পারলো খুব ধীরে ধীরে শ্বাস নিচ্ছে। হয়তো অনেক চেষ্টা করছে বেঁচে থাকার জন্য। সবাই মেয়েটিকে তুলে হসপিটালে ছুটলো।হসপিটালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সকাল ছয়টা সাত বেজে গেলো। ইমারজেন্সি ভর্তি করানো হলো মেয়েটিকে।প্রায় পৌনে এক ঘন্টা পর ডাক্তার এসে জানায় মেয়েটি এখন সুস্থ। কিন্তু একটা সমস্যা আছে।আর সেটা হলো মেয়েটির কেউ জিহ্বা কিছু দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।যাতে সে অনেক দিন কথা বলতে পারবে না।আর এতো খারাপের মাঝেও একটি ভালো খবর আছে।আর সেটা হলো মেয়েটি প্রেগন্ট ছিলো এবং অনেক নির্যাতন করলেও মেয়েটির সন্তান বেঁচে আছে।হয়তে এটা আল্লাহর মহিমা।সব কিছু ঠিক করে নিয়াজ কিছু লোক হাসপাতালের আশেপাশে থাকতে বললো।তারপর নিজে বাড়িতে ফিরে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিতেই বেজে উঠলো ফোন। ফোনের দিকে তাকাতেই দেখলো অচেনা একটা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। নিয়াজ রিসিভ করে কানে ধরলো।
হ্যালো
আপনি আমার ভালোবাসাকে বাঁচাবেন এটা আমি জানতাম। তাই আমিও আপনার ভালোবাসা বাঁচাবো। তাই এখন আমি আপনাকে যে ঠিকানা দেবো সেখানে চলে আসুন।আর হ্যা একা আসবেন না। আপনার মা আপনার বোন,মনির মা এবং মনির চাচাকে অবশ্যই নিয়ে আসবেন।আর একটা কথা বাহিরের কাউকে এই বিষয়ে কিছু জানাবেন না,এমনকি আপনার পরিবারের কাউকেও।শুধু তাঁদের নিয়ে আসুন। কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলেই লোকটা ফোন কেটে দিলো। ফোন কেটে দিতেই, একটা মেসেজ এলো ওই নাম্বার থেকে।মেসেজটা পড়লেই বুঝতে পারলো এটা কোন জায়গার নাম।জায়গার নামটা একটু চেনা চেনা মনে হলো।কিন্তু নিয়াজ ভালো করে মনে করতে পারছে না।কিন্তু এখন এতো সময় নেই মনে করার। তাই এক ছুটে নয়ন বেগমের ঘরে ছুটলো নিয়াজ। নিয়াজ ছুটে যেতেই নয়নার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলেই নিজেকে সামলে দাঁড়ায়।
আস্তে ভাইয়া,এখনি তো পড়ে যেতে।
নয়না মা কোথায়।
মা কোথায় ঘরেই আছে।তুমি এতো হাঁপাচ্ছো কেন।ভাবির কি কোন খবর পেলে।
ধরে নিতে পারিস ওমন কিছুই
সত্যি
সত্যি মিথ্যা কিছু জানি না,শুধু জানি মনিকে হয়তো পেয়ে যাবো।চল আমার সাথে। দু’জনেই ছুটলো নয়ন বেগমের ঘরে। দুই ভাইবোন দেখলো নয়ন বেগম মাত্র জায়নামাজ তুলেছেন।
মা চলো
কোথায়
আগে চলে তারপর বলবো।
আরে আরে এভাবে কোথায় যাবো।আগে বল কোথায়।আর আমার কাজ আছে।
মা কোন রকম সিনক্রিয়েট না করে আমাদের সাথে চলো।
আরে তোদের কি হয়েছে, আজ কতোদিন হলো মনিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আর তোরা কিনা। কি শুরু করলি বল তো।
মা আমি যা করছি সবার ভালোর জন্য তাই প্লিজ কোন কথা না বলে চলো।
নয়ন বেগম কিছু বলতে চেয়েও আর বলতে পারলেন না।তাই চুপচাপ নিয়াজের সাথে এলেন।নিয়াজ একজন একজন করে সবাই কে সাথে নিয়ে রওনা হলো মেসেজের সেই ঠিকানায়।ওরা যখন রওনা হলো তখন প্রায় দুপুর বারোটা পয়তাল্লিশ। রাস্তা যেন ফুরচ্ছেই না।মিনিটের পথও যেন ঘন্টার সমান লাগছে। পরিবারের সবার কৌতূহল জেগেছে এইসব কি হচ্ছে।নয়ন বেগম বার কয়েক প্রশ্ন করেও কোন উত্তর পায়নি, তাই আপাতত চুপ করে আছেন।প্রায় তিন ঘন্টা পর তাঁরা একটি এলাকায় পৌঁছালো। আশেপাশের সবার কাছে এই এলাকার নাম শুনতে জানা গেলো এলাকার নাম হচ্ছে শীতলপুর ( কাল্পনিক) হঠাৎ রুনা বেগম যেন চমকে উঠলেন গ্রামটির নাম শুনে।।তাই সে হাঁটার গতি থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।তাঁর ভয় হচ্ছে। কেন তাঁর এতো ভয় হচ্ছে সে নিজেও জানে না।কিন্তু তাঁর ভয় হচ্ছে। পুরানো সেই হারানো ভয়টা আবারও জেগে উঠেছে।তাই সে প্রশ্ন করেই বসলো।
নিয়াজ আমরা এখানে কেন
দরকার আছে আন্টি
কিন্তু কি দরকার
এখানে অনেক প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে।তাই চলুন।
আরো কিছু প্রশ্ন করতে গিয়েও রুনা বেগম করতে পারলেন না।রুনা বেগমের চোখে মুখে ভয় থাকলেও বাকি সবার মুখে কৌতুহল। সবাই কিছু দূর হাঁটার পরেই দেখতে পেলো একটি পোড়া বাড়ি।বাড়িটা কেউ খুব যত্ন করে তৈরি করেছিলো আবার হয়তো কেউ যত্ন সহকারে পুড়িয়েছে।সেখানেই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে রইলো সবাই। কিছু সময় প্রবাহিত হওয়ার পর বাড়ির পেছন থেকে বেরিয়ে এলো একটি হুইলচেয়ার। যেখানে ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ে আছে মনি।আর সেই হুইলচেয়ার টেনে নিয়ে এলো একজন পুরুষ।যাঁর চোখ মুখ কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা।
চলবে,,,