সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ-২৪

0
2066

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-২৪
মোর্শেদা হাবিব!
***************
সারাটা রাতই চোখের পাতা দুটো খোলা রইলো পৌষীর।চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারলো না!
সকালে একবারে ফজরের নামাজ পড়ে তারপর শুয়েছে!
ফলে একটু দেরীতেই ঘুম ভেঙ্গেছে ওর।
হাতমুখ ধুয়ে রান্নাঘরে ঢুকলো নাস্তা বানাবে বলে।
চারটা পরোটার খামির করলো।
পরোটাগুলো ভেজে দুটো ডিম ভাজা করলো।
একটা বাটিতে সব্জি নিলো।তারপর চায়ের পানি চড়িয়ে নাস্তার প্লেটটা নিয়ে মায়ের ঘরে চলে এলো।
সাহেদা ফজরের পরপর নামাজ কুরআন পড়ে এসময়টাতে একটু ঘুমান।
পৌষী এসে তাকে ওঠালো।
-“নাস্তাটা খেয়ে নাও মা।তোমার অষুধ খেতে হবে।
-“তুই খাবিনা?”
-“হুম,একসাথেই খাবো চলো!”
-“তোর চোখ লাল কেনো!রাতে ঘুম হয়নি ঠিকমতো!”
-“কই…ও..হ্যাঁ…একটু দেরী করে ঘুমিয়েছি তো!”
সাহেদা আর কথা বাড়ালেন না।চোখে মুখে পানির ঝাপ্টা দিয়ে এসে নাস্তার প্লেটটা টেনে নিলেন।
পৌষী নিজেও একটা টুল নিয়ে মায়ের পাশে বসলো!
খেতে খেতে সাহেদা হঠৎ বললেন-
-“আজ এক সপ্তাহের ওপর হয়ে গেলো রাজ আসেনা কেন রে?”
পৌষী নিরবে খেতে লাগলো।কোনো জবাব দিলোনা।
-“তোর সাথে কথা হয়?”
-“গতরাতে হয়েছে!”মৃদুস্বরে বললো।
-“কি বললো? সব ঠিক আছে তো?”
পৌষী মুখ নামিয়ে রাখলো।খাবারগুলো পেটে যেতে চাচ্ছেনা।সে হাত তুলে বসে রইলো।
এমন সময় বেল বেজে উঠলো!
পৌষী অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকালো!
এমন সময় কে আসতে পারে?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



সবসময়ের মতো সাহেদাই দরোজা খুলতে যাচ্ছিলেন।পৌষী তাকে থামালো।
-“তুমি বসো,আমি দেখছি।”
-“আই ভিউ দিয়ে আগে দেখে নিস্,তারপর দরজা খুলিস!”
পৌষী আইভিউ দিয়ে দেখলো।
হঠাৎ যেন একটা হার্টবিট মিস করলো।না কি ভুল দেখেছে!রাজ এসময়ে?
আবার দেখলো।
এরই মধ্যে আরেকবার বেল বাজলো।
অজান্তেই পৌষীর হাত চলে গেলো মাথায়।সকালে ঘুম থেকে উঠে চুল আঁচড়ানো হয়নি।কোনোমতে পাঞ্চ ক্লিপ আটকে রান্না ঘরে ঢুকেছে।চেহারাও না ঘুমানোর দরুন শুকনো ম্যারমেরে হয়ে আছে।দ্রুত ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে জামা টেনে টুনে নিজেকে ভদ্রস্থ করার চেষ্টা করলো!বুকের ভেতর যেন হাতুড়ী পিটছে কেউ।
নব মুচড়ে দরোজা খুললো!

রাজ একবার ওর দিকে তাকিয়ে সোজা সাহেদার দিকে চলে গেলো!
-“আসসালামুআলাইকুম,ফুপি!”
বলে ফুপুকে জড়িয়ে ধরলো।
কপালে চুমু খেলো!
-“সাতদিন পর ফুপির কথা বুঝি মনে পড়লো!তা তুই এতো সাত সকালে কোত্থেকে?”
-“পোষাক দেখে বুঝতে পারছোনা?ব্যয়াম সেরেই বাইক নিয়ে সোজা তোমার এখানে ছুটে এসেছি।”
রাজের পরনে লেমন ইয়েলো গেঞ্জী আর ধবধবে সাদা ট্রাউজার।মাথায় সাদা ক্যাপ।ওকে দেখতে খেলোয়াড়দের মতো দেখাচ্ছে।
পৌষী চোখ নামিয়ে নিলো।
রাজ এমন ভাবে সাহেদার সাথে কথা বলছে,ঘরে যে দ্বিতীয় আরেকটা প্রাণী আছে তা যেন সে জানেইনা।

পেটে হাত দিয়ে বললো-“খুব খিদে পেয়েছে ফুপি,নাস্তা খাবো নাস্তা দাও।আজ তোমার সাথে নাস্তা করবো বলেই চলে এলাম! ”
বলতে বলতেই সে টের পেলো পৌষী আস্তে করে চলে গেলো।রাজ চোখের কোন দিয়ে সেটা দেখেও কিছু বললো না।

সাহেদা নিজের প্লেট থেকে পরোটার এক কোনা ভেঙ্গে ভাতিজার মুখে দিয়ে বললেন-“আনতে গেছে।ততক্ষণে আমার এখান থেকে খা!”
-“আরে না,আনুক না।তুমি অসুস্থ মানুষ তুমি খেয়ে নাও!ঔষধ টৌষধ ঠিকমতো খাচ্ছো তো?”
-“হ্যাঁ,খাচ্ছি তো!আর কি করবো!যতদিন বেঁচে আছি ততদিন এই ঔষধ খেয়েই যেতে হবে!
-“হমম….!”বলে রাজ সেদিনের পত্রিকাটা টেনে নিলো!

প্রায় বিশ মিনিটের মাথায় পৌষী ট্রে এনে রাজের সামনে রাখলো।অল্প সময়ের মধ্যে সে অনেক কিছু করে ফেলেছে।চারটে পরোটা ভেজেছে।ডাবল ডিমের পোচ,সাথে একবাটি সব্জি,আরেক বাটিতে সুজির হালুয়া।
রাজ মনোযোগ দিয়ে পত্রিকা দেখছিলো।
পৌষী ট্রে টা রেখে নিজের নাস্তার প্লেটটা নিয়ে সরে দাঁড়ালো।

সাহেদা ওদের দুজনের হাবভাবে বুঝলেন দুজনের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে।তার মেয়ের যা স্বভাব।
রাজকে উল্টাপাল্টা কিছু বলে বসেছে কিনা কে জানে।
তিনি তাড়া দিলেন-“নে বাবা,পেপার রাখ্,আগে নাস্তা খা।পরোটা গরম আছে, সব্জিটা ভালো হয়েছে, গতকাল আমিই ওটা করেছিলাম।খেয়ে দেখ ভালো লাগবে!হালুয়াটা এক্ষুণি করলো পৌষী।ওর হালুয়াও খুব মজার হয়!

রাজ সব্জির বাটিটা টেনে নিয়ে বললো-“আমার সব্জিই পছন্দ।হালুয়া ফালুয়া আমি খাইনা। চা দিতে বলো!”
-“ডিম টা অন্তত খা!”
রাজ কিছু বললোনা।পৌষী কিছুটা রেগে ভেতরে চলে গেলে রাজ আড়চোখে ওর চলে যাওয়া দেখলো।

সে পরোটা দিয়ে সব্জি মুখে তুললো।
সাহেদা গলার স্বর নামিয়ে বললেন-
-“পৌষীর সাথে তোর কি হয়েছে রে?”
-“কই,কি হয়েছে?”
-“আমার চোখকে ফাঁকি দিসনা।বেশ বুঝতে পারছি,তোদের মধ্যে কিছু একটা হয়োছে।ও কিছু বলেছে তোকে?”
-“এমন কেন মনে হলো তোমার?
-“মনে হলো বলে না।আমার মেয়েতো,আমি ওকে খুব চিনি।আত্মসম্মানবোধ বড় চোখা।কেউ কিছু একটা বললেই হলো।ব্যস্,সে ঐটা নিয়ে পড়বে।কেন,ভাবী তোকে কিছু বলেনি?”
-“আম্মু? না তো কি বলবে?”
-“গতকাল তো ভাইজান ভাবী দুজনেই এখানে এসেছিলো!”
-“আম্মু…এখানে?”রাজ খাওয়া বন্ধ রেখে ফুপুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো!
-“হ্যাঁ,কেন? তুই জানিসনা কিছু?”
-“আম্মু যে পৌষীকে মেনে নিয়েছে এখবরই তো জানিনা।আম্মু জানলো কিভাবে তোমরা এখানে? নিশ্চয়ই বাপ্পী বলেছে!”
-“না,মীরা একদিন পৌষীকে ফোন করে বাসার ঠিকানা নেয়।সেদিনই ভাবী ইরা আর নীরাকে নিয়ে এসে গেছে।গতকাল আবার তোর বাপ্পীকে নিয়ে এলো!”
-“ওহ্,এতো কিছু হয়ে গেছে আর আমি জানি না?”
সাহেদা মারুফের কথাটা বলতে গিয়েও চেপে গেলেন।প্রয়োজন মনে করলে ভাইয়া ভাবীই ওকে জানাবে।তিনি আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে গেলে কোথা থেকে কি হয়।রাজ নিজেই যদি ছেলেটার সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে বসে! রানী হয়তো ব্যপারটা পছন্দ করবে না। তারচে চুপ থাকাই ভালো।”

রাজ ভাবতে লাগলো।আম্মু যদি এখানে এসে থাকে সেটা তো খুবই ভালো কথা।
এর মধ্যে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ঝামেলা বাঁধলো কোথায়? পৌষী বিবাহ বিচ্ছেদ প্রসঙ্গ টানলো কেন?আম্মু কি ওকে পারসোনালী কিছু বলেছে?সেটা হলে অবাক হবার মতো কিছু থাকবেনা তবে আম্মু যেহেতু বাপ্পীর সাথে এসেছে তারমানে সে এমন কথা নাও বলতে পারে।তাহলে ঝামেলাটা বাঁধলো কোথায়?”

পৌষী এসে চায়ের কাপ রেখে চলে যেতেই রাজ উঠে দাঁড়ালো।
-“ফুপি,তোমার অনুমতি থাকলে আমি পৌষীর সাথে একটু কথা বলতে চাই! একা!”
সাহেদা মাথা নাড়লেন।
-“যা না,ও তো ঘরেই আছে!”
রাজ চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে আগুন গরম চা টা গলা পুড়িয়ে প্রায় দুই ঢোকে শেষ করলো।
তারপর ভেতরের দিকে পা বাড়ালো!

রাজকে চা দিয়ে নিজের জন্যেও চা নিয়ে বসেছে পৌষী।দ্রুত কাজ করতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে উঠেছে ও।রাজ নাস্তা খাবে শুনে ঝড়ের গতিতে কাজ করেছে।
ফলে সর্বাঙ্গ ভিজে গেছে ঘামে।
ফ্যানের স্পিড বাড়ীয়ে চুলগুলো বাতাসের নিচে মেলে দিয়ে দাঁড়ালো পৌষী।
ওড়না দিয়ে ঘাম মুছে সেটাকেও বাতাসে মেলে দিলো।
পৌষী গরম চা খেতে পারেনা।চা একটু ঠান্ডা করে খাওয়ার অভ্যাস ওর।চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক দিতে যাবে তখনি রাজ ঢুকতেই ও বেশ হকচকিয়ে গেলো আর ওর হাত থেকে কিছু চা ছলকে ওর জামার উপর পড়লো।

বিষম বিব্রত হয়ে পৌষী একবার রাজের দিকে তাকিয়েই দ্রুত চায়ের কাপ রেখে ওড়নাটা টেনে নিলো।
রাজ নিরব দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললো-
-“দাগ বসে যাবে,ঐ জায়গাটা পানি দিয়ে ধুয়ে আসো!”
পৌষী ঝুঁকে তাকালো।
পেটের কাছে খানিকটা জায়গা জুড়ে চায়ের দাগটা ছড়িয়ে পড়েছে।
সে হাত বুলিয়ে বললো-
-“থাক্,জামা বদলে ফেলবো!”
-“যদি দাগ না উঠে? তো কি জামাটা ফেলে দেবে?”
পৌষী চুপ রইলো!রাজ বলে চললো-
“সব কিছুকেই তুমি এভাবে পাল্টে ফেলো তাই না? যেটাতেই সমস্যা পাও সেটাকেই গোড়া থেকে নির্মুল করে দাও,তাই না !”
-“মানে?”
-“এই যে,আমি তো তোমার হিসেবে ভালো ছেলে না,দ্বীনদার নই!তাই আমাকে বাদ দিয়ে দেবার কথা ভাবতে পেরেছো?”
-“এসব কি বলছেন আপনি? আমি কখন এমন বললাম!”
-“গতকাল ফোনে এমন কিছুই শুনেছিলাম আমি!”
-“আমি এমন কিছু বলিনি,পুরোটা না শুনেই সেটা নিয়ে লাফালাফি করা আপনার মজ্জাগত হয়ে গেছে!”
-“আর একটু কিছু শুনেই সেটা নিয়ে লাফালাফি করা তোমার মজ্জাগত হয়ে গেছে।স্বীকার করো এটা !”
-“আপনি কি এই সাতসকালে আমার সাথে ঝগড়া করতে এসেছেন?'”
-“ঝগড়া আমি করতে চাইনি,তুমি আমাকে উত্তেজিত করে তুলেছো!কাল ফোনে তুমি ওই কথাটা বললে কেন? এমন কি হয়েছিলো যে তোমাকে এতো চরম পর্যায়ে ভাবতে হলো!”

পৌষী মুখ নামালো।সে বেশ বুঝতে পারছে,কথাটা আজ রাজের কাছে পরিস্কার না করলে রাজ ওকেই ভুল বুঝবে।সে আস্তে করে বলতে শুরু করলো-
-“সেদিন আমি তৃণাকে নিয়ে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে গিয়েছিলাম…..!”
পৌষী অবনত মস্তকে পুরো কথাটা বলে গেলো।কথার ফাঁকে দুবার চোখের কোন মুছলো।কথা শেষ করে রাজের দিকে তাকালো।
রাজ অবাক হয়ে পৌষীর সমস্ত কথা শুনে বললো-
-“এই কথাগুলো আমাকে বলতে পারতে না তুমি?এই সব কিছুতে আমার অপরাধটা কোথায় ছিলো বলবে? তাহলে,তুমি আমাকে শাস্তি দিতে চাইলে কেন ?”
পৌষী মাথা নাড়লো!
-“আমি আসলে ঐ কথাগুলো শোনার পর স্বাভাবিক ভাবে আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না!কেবলই মনে হচ্ছিলো,সবাই এভাবেই ভাববে।আর বলছেন…আপনাকে শাস্তি দিতাম….আমি নিজে কি শাস্তি পেতাম না?”
রাজ অপলক চোখে তাকিয়ে রইলো পৌষীর দিকে।পৌষীর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।থেকে থেকে নাক টানছে ও।

রাজ দুহাত কোমড়ে রেখে কঠিন স্বরে বললো-“মারুফকে তো আমি দেখে নেবো!”
-“কোনো দরকার নেই!”ঝট করে মুখ তুলে বললো পৌষী!”ছেলেটা সামনাসামনি কিছু বলেনা কিন্তু পেছন থেকে ক্ষতি করার চেষ্টা করে।এমন লোক ভয়ংকর ধরনের হয়।আপনি ওকে কিছু বলতে যাবেন না।”
-“ও এতোবড় একটা ঝামেলা পাকালো ওকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবো ভেবেছো?”
-“না,প্লিজ আমার ভয় লাগে!”
-“তাহলে ওর কথা শুনে এতোবড় ডিসিসান তুমি নাও কিভাবে!এতো প্রায়োরিটি কেন দিলে ওকে?”
-“আ..আমার ভুল হয়েছে!”
রাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো-“আমাদের নিটোল নব-দাম্পত্যে বিচ্ছেদের সুর প্রথম তুমিই তুললে।রাগটা তখনি এমন চড়ে গিয়েছিলো।কাছে থাকলে হয়তো কষে চড়ই লাগিয়ে দিতাম।এতো দ্বীনদারী জানো,আর এটা জানোনা যে,যে মেয়ে স্বেচ্ছায় তুচ্ছ কারনে,অকারনে তার স্বামীর কাছে তালাক চায় সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবেনা!এটা সহীহ হাদীস!রেফারেন্স লাগবে?”

পৌষী ঠোঁট ফুলিয়ে তাকালো রাজের দিকে।
ওর তাকানোর ধরনে রাজ হেসে ফেললো।তারপর এগিয়ে গেলো ওর দিকে।
দুহাতে ওর মুখখানি তুলে ধরলো।
ওর মুখের আধাইঞ্চি তফাতে নিয়ে গেলো নিজের মুখটা ।
পৌষী চোখ বন্ধ করে ফেললো।
রাজের নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে পৌষীর মুখে।
রাজ সেভাবেই বললো-
-“একটা ছোট্ট ঘটনাতেই তুমি প্রমান করে দিয়েছো,তুমি আজো আমাকে নিজের করে নিতে পারোনি।জীবনে দুর্যোগ আসবেই,তাই বলে সরে দাঁড়ানোটা কোনো সমাধান হতে পারেনা।কি করে ভাবলে,তুমি সরে যেতে চাইলেই আমি তোমাকে সরে যেতে দেবো।”
পৌষী কাতর দৃষ্টিতে তাকালো-“স্যরি!”
-“ব্যস্….? স্যরি ডাজন’ট কভার এভরিথিং।
পৌষী হঠাৎ আধাইঞ্চির দুরত্বটুকু ঘুচিয়ে ফেললো।
চুমু খেলো রাজের থুতনীতে।
এবার রাজ নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলোনা।
শক্ত বাঁধনে বেঁধে ফেললো পৌষীকে।দখল করে নিলো ওর শুশ্রুষার মতো মুখখানি।

মিনিট পাঁচেক পরে পৌষী নিজেকে একরকম জোর করেই ছাড়িয়ে নিলো!
রাজ ওর কপালে চুমু খেয়ে বললো-
-“যে কোনো দুর্যোগ আসবে,দুজনে একসাথে ফেস করবো…মনে থাকবে!”
পৌষী ছোট্ট করে মাথা ঝাঁকালো।

রাজ সরে গিয়ে টেবিলের দিকে তাকিয়ে বললো-“পড়াশোনার কি অবস্থা!”
-“লাটে উঠেছে!”বলে ফিক করে হেসে ফেললো পৌষী।
রাজ ওর দিকে তাকিয়ে বললো-
-“আচ্ছা,আম্মু কেন এসেছিলো?বিয়ের ব্যপারে কিছু বললো?কবে কি?”
পৌষী বুঝলো রাজ বিয়ের খবর জানে না!মামীর কাছে মারুফের ছবি পাঠানোর ঘটনাও জানে না!পৌষী নিজে থেকে আর সেটা বললোনা।মামীর মুখ থেকেই শুনুক!”
-“কই,কিছু বলছো না যে…?”
পৌষী হাসি চেপে বললো-
-“বাড়ী যান্,গিয়ে সব শুনবেন!”
-“তুমি বলবেনা!”
পৌষী মাথা নাড়লো!'”
রাজ এগিয়ে গিয়ে ওকে ধরবার আগেই সে ফাঁক গলে দ্রুত বেরিয়ে পড়লো।

রাজ বেরিয়ে সামনের ঘরে চলে এলো।সাহেদা পত্রিকা রেখে তাকালেন!
রাজ তাকে একহাতে জড়িয়ে বিদায় নিলো।
-“গেলাম ফুপি!যে কোনো প্রয়োজনে ফোন দিও।আর তোমার মেয়েকে মানে মিস ট্রাজেডী কুইনকে বলো সব ব্যপারে যেন পটর পটর কম করে।আমার রাগ চড়িয়ে দেয় তোমার মেয়ে।এজন্য কোনদিন মাইর খাবে আমার হাতে।”
সাহেদা মুখ টিপে হাসলেন।
পৌষী গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো!
রাজ ওর দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপলে পৌষী চোখ গরম করে শ্যেন দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো।রাজ হাসতে হাসতে ক্যাপ মাথায় দিয়ে বেরিয়ে পড়লো!

ফিন সবে মাত্র বেরোচ্ছিলো তখনই মোবাইলটা বেজে উঠলো!
-“রাজ….কি খবর বন্ধু?”
-“তুই ফ্রি আছিস?”
-“এখন? এখন একটু জরুরী কাজে বেরুচ্ছি রে…!তোর কখন লাগবে বল্!ঠিকসময়ে হাজির হয়ে যাবো!”
-“বিকেলের দিকে আয়!”
-“খুব জরুরী কিছু?”
-“অনেকটা সেরকমই।সমস্যা নেই তুই কাজ সেরে আয়!”
-“আমারও তোকে একটু দরকার ছিলো রে!”
-“ফোনে বলবি?”
-“না,ফেস টু ফেস!”
-“ওকে বাই!”
ফোন রেখে রাজ মায়ের ঘরে গেলো।নীরা আর ইরা বসে কিসের একটা ক্যাটালগ দেখছিলো।রাজ কে দেখেই ওরা ক্যাটালগ বুক বন্ধ করে দিলো।
রাজ ওদের মাঝখানে ধপ করে বসে বললো-“কি রে,এতো গুজুর গুজুর কিসের!”
-“বলা যাবেনা,টপ সিক্রেট!”
-“আচ্ছা,আম্মু যে হঠাৎ পৌষীদের বাড়ী গেলো! কারন কি কিছু জানিস?”
-“তোকে কে বললো?”
-“বলার তো একজনই আছে।”
ইরা হেসে বললো-“তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
-“তাই নাকি?তা সেটা কি?”
-“বলে দিলে তো আর সারপ্রাইজ হলো না!”
-“আমি কিছুটা গেস করতে পারছি!”
-“করতে থাকো,বাট আমরা বলবো না!”
রাজ উঠে বসতেই রানী ঘরে ঢুকলেন।ইরা আর নীরা কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলো।রাজ মা’কে জড়িয়ে ধরলো!
রানী মুচকি হেসে বললো-“আজ মা’কে বড় আদর করা হচ্ছে।ব্যপার কি?”
-“মমম….আই লাভ ইউ মা!”
রানী হেসে ছেলের কপালে চুমু খেয়ে বললো-“আমিও!”
রাজ মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লে রানী ওর চুলে বিলি দিয়ে বললো-
-“তোর মারুফ নামে কোনো বন্ধু আছে?”
রাজ সচকিত হলো!
-“আছে! কেন বলো তো?”
রাজ বেশ অবাক হলো,মা জানলো কি করে মারুফের নাম? ব্যপারটা গোলমেলে ঠেকছে।
রানী উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে খামটা বের করে আনলেন।রাজের হাতে সেটা দিলে রাজ উঠে বসলো।
খামটা খুললে খামের ভেতর থেকে কিছু ছবি বের হয়ে এলো!
রাজ বিস্ফোরিত চোখে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো।
ছবিগুলোর সাথে একটা ছোট্ট চিরকুট।রাজ দ্রুত সেটাকে পড়ল।পড়তে গিয়ে ওর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল!ডান পা ভাঁজ করে বসে আছে ও।এবার চিঠি ধরা ডান হাতটা হাঁটুর উপর রেখে আপনমনে কিছুক্ষণ ভাবল।এবার ওর কাছে সব পরিস্কার হলো।পৌষী আম্মুর হাতে ছবি পড়ার ব্যপারটা বেমালুম চেপে গেছে।এই মেয়েকে নিয়ে ওর কপালে বেশ ভোগান্তি আছে দেখছি।এ কথাটা বললে কি এমন ক্ষতি হতো!

রানী বললেন-“পৌষী মেয়েটা একটু বেশীই সরল।ছেলেটার আজে বাজে কথায় ভড়কে গিয়ে….যা হোক্! আমাদের এতো কথায় কাজ নেই! আমি পৌষীকে বিশ্বাস করি!”
রাজ বললো-“চাইলে পৌষীর সাথে এ নিয়ে
কথা বলতে পারো!”
-“যতটুকু বলা দরকার বলেছি!এটা নিয়ে এতো বাগাড়ম্বর করার দরকার দেখিনা।ছিড়ে ফেলে দে এটাকে।বাজে ছেলে।এর সাথে কোনো ঝামেলায় যাবার দরকার নেই।সুযোগ বুঝে এরা ভয়ংকর হয়ে উঠে!”
-“বদমাশটাকে সামনাসামনি পেলে জিজ্ঞেস করতাম….!”
-“কোনো দরকার নেই বাবা।ওকে ঘাটানোর কোনো দরকার নেই।পৌষীর এতো পর্দার মধ্যেও ওকে দেখে এরকম করছে।পৌষী বেপর্দা বাইরে গেলে বিপদ তো আরো বাড়তো।আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।ওর পর্দা করাই উচিত।”
রাজ ছবি আর চিঠিগুলো ছিড়ে বাস্কেটে ফেলে দিলো।তারপর মায়ের দিকে তাকালো!
-“তুমি ফুপির ওখানে যে গেছো,আমাকে তো বলোনি?”
রানী হেসে ছেলের মাথায় হাত রাখলেন।রাজ বাচ্চাদের মতো মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।

বিকেলের দিকে ফিন এলো।রাজ হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো।
গলা মেলালো দু বন্ধুতে।
রাজ বললো-“আমাকে খুঁজছিলি কেন,বলতো?”
-“বলবো..!বলতেই তো এলাম। তার আগে
তোর খবর বল্!”
-“আমার সব খবর আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।আম্মু পৌষীকে মেনে নিয়েছে।সব ঠিক থাকলে হয়তো অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ভালো কোনো নিউজ শুনতে পাবি ইনশাআল্লাহ।আসলে ইরার ব্যপারটা নিয়ে আম্মু এমনিতেই ভীষণ আপসেট।”
ফিন দুই হাতের কনুই হাঁটুতে ঠেকিয়ে দুহাত একত্রে মুঠো করে মুখের সামনে ধরে বললো!
-“রাজ,এই পারপাসে আমি তোকে কিছু বলতে চাই!জানিনা এটা বলার পর তোর সাথে আমার বন্ধুত্ব কোথায় গিয়ে ঠেকবে।বাট আমার অনুরোধ, এই কথাটার প্রভাব যেন আমাদের বন্ধুত্বকে নষ্ট না করে।উই আর বেষ্ট ফ্রেন্ড।উই উইল বি অলওয়েজ বেষ্ট ফ্রেন্ড!”
রাজ চিন্তিত চোখে তাকালো!
ফিন খানিক দম নিয়ে বললো-
“ইরাকে আমি সেই ক্লাস টেন থেকে চিনি।সেও আমাকে চেনে।আমি ওকে পছন্দ করি কারন সি ইজ আ গুড গার্ল।ওর বিয়ের ব্যপারটা যখন ঘটে তখন আমি শহরের বাইরে থাকায় প্রস্তাব দেবার সুযোগ পাইনি তাছাড়া ইরার দিক থেকে পজিটিভ কোনো সাইনও তখন আমি পাইনি তাই যা হবার তাই হয়েছে।বাট এখন এরকম একটা ট্র্যাজেডীর পর আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না।ইরার পূর্ণ সম্মিতেই আমি ওকে বিয়ে করতে চাই!এখন তোর মতামত চাই!তুই ইয়েস বললে সোজা আন্টির কাছে যাবো আর…..!”
-“আর…..?”রাজ অল্প অল্প হাসছে।
ফিন মাথা দুলিয়ে বললো-“আর না হলে,সোজা এই বাড়ী ছেড়ে বেরিয়ে যাবো।জীবনেও এ মুখো হবো না!”
-“এই না বললি,বন্ধুত্বে কোনো প্রভাব পড়বে না?”রাজ হাসিমুখে বললো।
ফিন কিছু বলার আগেই রাজ উঠে দাঁড়িয়ে দুহাত বাড়িয়ে দিলো!
ফিন বিস্ময়ের ধাক্কা কাটিয়ে রাজকে সজোরে জড়িয়ে ধরলো!
-“থ্যাংক্স দোস্তো…মেনি থ্যাংক্স।”
-“উঁহুঁ…সে যাজাকাল্লাহ!”
-“যাজাকাল্লাহু খাইরন!”

ফিন চলে যাবার পর রাজের মনে পড়লো।নানান কথায় ওকে মারুফের কথাটাই তো বলা হলোনা।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here