সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ-২৩

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-২৩
মোর্শেদা হাবিব!
***************
বেল বাজলে সাহেদা এসে দরোজা খুলে দিলেন।
ভাই ভাবীকে একসাথে দেখে তিনি কিছুটা অবাক হলেও খুশি হলেন।
-“এসো ভাইজান।ভাবী আসুন!”
-“পৌষী কোথায়, দেখছিনা যে….!”রানী প্রশ্ন করলেন।
-“ও আসরের নামাজ পড়ছে।আজ কলেজ থেকে ফিরতে দেরী হয়ে গেছে।এখনো ভাত খায়নি।বলে,আগে নামাজ পড়ে নেই!”
-“হমম…..!”
আমজাদ রানীকে ইশারা করে কার্ড বের করতে বললেন!রানী তার পার্স থেকে একটা সুন্দর কার্ড বের করে আমজাদের হাতে দিলেন।তিনি সেটা বোনের দিকে বাড়িয়ে ধরলেন।
-“দ্যাখ তো কেমন!ওদের বিয়ের কার্ডটা এরকম করবো!”
-“সুন্দর তো ভাইজান!তাছাড়া এখানে তোমরা যেভাবে যা করবে সেটাই হবে।আমার নিজস্ব কোনো মতামত নেই!”
-“এটা কোনো কথা হলো? তুমি একাধারে আমার ছেলের বৌ এর মা আমার ছেলের শ্বাশুড়ী প্লাস ওর আপন ফুপু।তোমার মতামত থাকবেনা কেন?”
রানী বললেন।
শুনে সাহেদা হেসে ফেললেন।
এমন সময় পৌষী ঢুকে দুজনকে দেখে হকচকিয়ে গেলো।সালাম দিয়ে একটা চেয়ারে বসলো।আমজাদ ওকেও বিয়ের কার্ডটা দেখালেন।
-“নে এটা দ্যাখ পছন্দ হয় কিনা!”
পৌষীর মুখটা ম্লান হয়ে গেলো কার্ডটা হাতে নিয়ে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



রাজের সেই বন্ধু মারুফের কথা মনে পড়লো!ওর কথাগুলো কানে বাজছে এখনো।কথার ডালপালা এতদুর মেলেছে যে মারুফের কান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। একই কথা রাজের বাকী আত্মীয় স্বজনের কানে পৌঁছানো অসম্ভব কিছুনা।তাহলে এটাই প্রতিষ্ঠিত হবে যে,মায়ের অসুস্থতার বাহানায় খালি বাড়ীতে রাজের মায়ের অগোচরে বড়মামাকে হাত করে তার ছেলেকে পাকড়াও করেছে পৌষী।

রানী একমনে পৌষীকে দেখছেন।
বললেন-“ভাত খাবিনা? যা ভাত খেয়ে আয়!এতো বেলা হলো!”
-“জ্বী….পরে খাবো।আপনাদের জন্য চা করে নিয়ে আসি!”
-“চা নাস্তা পরে হবে।তুই ভাত খা আগে।”আমজাদ ভারী গলায় বললেন।
পৌষী উঠে চলে গেলে রানী স্বামীর দিকে তাকালেন-“তোমরা কথা বলো,আমি একটু ভেতর থেকে আসি।পৌষীর কেনাকাটা নিয়েও কথা হওয়া দরকার।ও কি কালারের শাড়ী কিনবে জেনে নেই!”
সাহেদা হাত দিয়ে ইশারা করলেন-“হ্যাঁ,হ্যাঁ…যাওনা ভাবী!

রানী সোজা রান্নাঘরে চলে এলেন।পৌষী সিঙ্কের উপর ঝুঁকে কান্না করছিলো।হঠাৎ কাঁধে হাত পড়ায় দ্রুত চোখ মুছে পেছন ফিরে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো পৌষী।
-“ম্..মামী আপনি?”
-“হ্যাঁ,আমি।কাঁদছিলি কেন?”
-“কই না তো!”
-“সত্যি?”
-“জ্বী!”পৌষী মুখ নিচু করলো!
-“দ্যাখ পৌষী।ন্যাড়া দুবার বেলতলা যায়না।একইভুল দুবার করতে চাইনা।নিজের ছেলের সাথে গভীর রাতে তোকে একা দেখে মনে খটকা জেগেছিলো।এবারও খটকা জেগেছে তবে সেটাকে পাত্তা দেইনি কারন আমি বিশ্বাস করি এর পেছনে অবশ্যই কোনো কারন আছে!”

-“মামী আপনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারছিনা!”
রানী ব্যাগ থেকে খামটা টেনে বের করলেন।পৌষী যারপরনাই বিস্মিত হয়ে বিস্ফোরিত চোখে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর ভীরু চোখে একবার রানীকে দেখে মুখ নামিয়ে নিলো!
-“এই ছবিগুলোর মানে কি? আর এর সাথে চিঠিতে লেখা আছে।তুই এই ছেলের সাথে গোপনে যোগাযোগ রাখিস।এ তোর পুরোনো প্রেমিক।”
পৌষীর মুখ থেকে “আহ্”শব্দের একটা শীৎকার বেরুলো।রানী একই ভঙ্গিতে বললেন-
“আমি তোর মুখ থেকে সত্যটা জানতে চাই।আমার একমাত্র ছেলের বৌ কে নিয়ে লোকজন আজেবাজে কথা বলবে এটা আমি কখনোই মেনে নেবোনা।তোকে ছবিটা দেখিয়েছি তার মানে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস যে আমি তোকে বিশ্বাস করি!তোর বড়মামাও……!”
-“মামাও সব জানে?”
-“হমম….আমাকে সব খুলে বল্!একদম লুকোবি না!তোর কি এর সাথে এ্যাফেয়ার ছিলো?”
-“না,মামী!”
-“তো?”
-“একে আমি চিনি পর্যন্ত না।একে আমি আপনাদের বাড়ীতেই প্রথম দেখি!”
-“কিইই…..?”
-“জ্বী….উনি রাজের বন্ধু!ওনার সাথে আমার কোনো পূর্ব পরিচয় নেই!”
রানী হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন।পৌষী পেছনের সমস্ত ঘটনা একে একে খুলে বললো!এ বাড়ীতে আসার পরপর একদিন কাপড় শুকোতে যাবার সময় মারুফ ওকে কাজের বুয়া মনে করে হাত চেপে ধরে,সেদিন রাজ এসে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেবার পর রাজের সাথে ওর বাকবিতন্ডা হবার সমস্ত ঘটনাও রানীকে জানালো।পাশাপাশি তৃণার সাথে মার্কেটে দেখা হবার পরের সমস্ত ঘটনাও খুলে বললো!

রানী বুকে হাত দিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন-“উফ্,আর আমি কি ভাবছি।তো এই হারামজাদা এসব কেন লিখলো?”
-“বিশ্বাস করুন আমি জানিনা মামী।”
-“শোন্,তোকে অবিশ্বাস করিনি রে মা।তোর মামা তো কনফিডেন্টলি বলছিলো এখানে নিশ্চয়ই কোনো ঘটনা আছে।পৌষী এমন মেয়ে না!”
পৌষী একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুচোখ বন্ধ করলে ওর দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।রানী ওর কাঁধে হাত রেখে বললো-“এই জানোয়ারটার ব্যবস্থা তো তোর মামা করবে।রাজকে কিছু জানাইনি।যে মাথা গরম ছেলে। রাগে খুনই করে ফেলবে ওকে।”
-“মামী একটা কথা বলি…!”
রানী তাকালে পৌষী মৃদু স্বরে বললো-“মামী,যে কথা এই ছেলে বলেছে তা তো আপনার আত্মীয় মহলের অনেকেই বলবে।তাতে আমার সম্মান এমনিতেও থাকবেনা।তখন এসব শুনতে আপনারও খারাপ লাগবে।তারচে….!”
-“তারচে কি?”
-“এখনো অনেকেই জানেনা যে, রাজের বিয়ে হয়েছে।আর মায়ের বিপদও কেটে গেছে…তাই রাজ নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে মানে আপনি ওর জন্য….!”
রানী কিছু বলার আগেই আমজাদ পেছন থেকে বলে উঠলেন-
-“তোর মতো মেয়ের মুখ থেকে এই কথাটা আশা করিনি পৌষী!বিয়েটা তো আমি দিয়েছিলাম,তুই স্বেচ্ছায় করিসনি।কেউ বলতে চাইলে আগে আমাকে বলবে।তাছাড়া বিয়েটাতো কোনো ছেলেখেলা না!তোর একথা আমাদের সবাইকে কষ্ট দিলো।রাজ শুনলে সেও কষ্ট পাবে।তুই একথা মাথায় আনলি কিভাবে।তুই এই পরিবার থেকে আলাদা কেউ নস।”
রানী পৌষীর চোখ মুছে বললেন-
-“এতো বেশী সততা দেখাতে যাসনা যে নিজের হকটাই ছেড়ে দিবি।তুই আমার রাজের অর্ধাঙ্গিনী।রাজ তোকে খুব পছন্দও করে।এসব কথা আর কখনো মনে আনবিনা,মুখে তো না’ই!”
সাহেদা এসে মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন-“তোর মামী যখন তোকে ভুল বুঝেন নি তাহলে আর চিন্তা কি!ভাবী….!”বলে রানীর দিকে তাকালেন!
-“ও সেদিন মার্কেট থেকে ফিরেই সব আমাকে বলেছে।এ নিয়ে ও খুব ভয়ের মধ্যে ছিলো।গত ক’দিন ধরে এই আশঙ্কায় রাজের সাথেও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।আমি বললাম এতোটা ভেঙ্গে পড়িসনা।সত্য হলো ছাইচাপা আগুন।সামনে আসবেই।না, সে বলে মামীকে মুখ দেখাতে পারবোনা।”
-“আচ্ছা, তুই আমাকে ভাবিস কি,বল্ তো?আমি কি এতোই খারাপ?”পৌষীর দুকাঁধ ধরে নিজের দিকে ফেরালেন রানী!
পৌষী হঠাৎ মামীকে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মুখ গুজলো।রানী ওর পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন-“খবরদার, আর কখনো এভাবে নিজেকে স্যাক্রিফাইস করতে চাইবিনা।তোর সাথে রাজের বিয়ে হয়েছে এটাই সত্য।আল্লাহ না চাইলে বিয়েটা হতো না।বিয়ের জুড়ি আল্লাহর দান।এতো বেশী ভালোমানুষী ভালো না যে বিয়ের মতো একটা সম্পর্ক ভেঙ্গে হলেও অন্যকে খুশি করতে যাবি।তাছাড়া আমার ছেলের পছন্দই আমার পছন্দ।সন্তানকে কষ্ট দিয়ে কোনো মা কি সুখী হতে পারে?নে…এবার কান্নাকাটি বন্ধ কর্,আর আমাদের মজা করে তোর হাতের চা খাওয়া।আজ আমি আমার ছেলের বৌ’র হাতের চা খাবো!”

সবাই একসাথে হেসে উঠলেন।
পৌষী চা বানিয়ে সামনের রুমে ট্রে সাজিয়ে নিয়ে এলো।এরই মধ্যে সে কিছু পাকোরাও ভেজে ফেলেছে।ঘরে বাঁধাকপির কুচি করা ছিলো সেটা দেখেই পাকোরা বানানোর আইডিয়াটা মাথায় আসে।
রানী ওর পাকোরাটা পছন্দ করেন পৌষী জানে।হলোও তাই..! রানী পাকোরাটা বেশ আগ্রহ নিয়ে খেলেন।যাবার সময় পৌষীকে আগামীকাল তৈরী থাকতে বলে গেলেন।রানী কাল থেকেই কেনাকাটা শুরু করতে চান।পৌষী প্রশান্ত ভরা মনে মাথা নাড়লো।ওর ভেতরে অনাবিল আনন্দ খেলা করছে।রাজের মুখটা মনে পড়ছে।বেচারা,নিশ্চয়ই প্রচন্ড মন খারাপ করে আছে পৌষীর ওপর?রেগে থাকলেও অবাক হবার কিছু নেই।মামা মামী যেতেই পৌষী হুমড়ি খেয়ে পড়লো ফোনের ওপর।
কাঁপা হাতে রাজের নম্বর ডায়েল করলো।
তারপর নিঃশ্বাসের প্রবল ওঠানামাকে রুখতে মুখে হাতচাপা দিলো।রাজ রিসিভ করলে কি বলবে ও? প্রথমে তো সালাম দিবেই।তারপর?তারপর বলবে,আই এ্যাম স্যরি…?না,বলবে,আই লাভ ইউ…!”ভাবতেই পৌষীর দুকান গরম হয়ে গেলো।দুচোখ বন্ধ করে ফেললো।নাহ্, ক্ষমাই চাইবে!আরে….ফোন ধরেনা কেন?ঘরে নেই নাকি?”
কিছুটা হতাশ হয়ে আরেকবার ফোন করলো পৌষী।এবারও ফোন বেজে বেজে রয়ে গেলো!পৌষী ম্লান চোখে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে সেটা রেখে দিলো।
হয়তো কোনো কাজে ব্যস্ত।পরে মোবাইল চেক করলে অবশ্যই দেখবে।তখন নিশ্চয়ই কল ব্যাক করবে!”

রানী নীরাকে সাথে নিয়ে লিষ্ট করছিলেন।এমন সময় রাজ সেখানে এলো!
-“কি করছো মা,ব্যস্ত?”
-“মমম? একটু! কেন রে কিছু লাগবে?”
-“নাহ্,এমনিই ভালো লাগছিলো না।তাই ভাবলাম….!”
-“ভালো লাগছিলো না কেন?শরীর ভালো না?”
-“শরীর ভালোই! মনটা ভালো নেই!”
-“মনের আবার কি হলো?”কৌতুক ভরা চোখে তাকালেন রানী।তিনি আঁচ করতে পারছেন।ছেলে হয়তো পৌষীর কারনেই আপসেট।যাক্,ওদের সমস্যা ওরাই মিটমাট করে নেবে।তিনি আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে যাবেন না।তাছাড়া তিন বোন মিলে ভাইকে সারপ্রাইজ দেবার তালে তাকে কঠিন প্রমিজ করিয়ে ছেড়েছে।ওয়ালিমার খরব যেন রাজকে আগেভাগেই কিছু জানানো না হয়!
রানীর ফোন বেজে উঠলে তিনি মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।কথা বলতে বাইরে চলে গেলেন তিনি।

রাজ মায়ের বিছানায় এসে চিৎ হয়ে বিছানা জুড়ে শুয়ে পড়লো।নীরা খাতা বন্ধ করে বললো-
-“আচ্ছা,ভাইয়া তোমার যখন বিয়ে হবে তখন কি রঙের স্যুট পড়বে।এ্যাশ,ব্লু নাকি অফ হোয়াইট?”
-“ধুর… ব্লু কেউ পরে নাকি?আগে দ্যাখ আমার কপালে বিয়ে আছে নাকি!”
-“কেন থাকবেনা।দেখবে বাপ্পী একদিন ঠিকই মামনিকে মানিয়ে ফেলেছে!”
-“হমম,ততদিনে মামনির বৌমণি বিগড়ে যাবে!মেয়েদের তো কাজ একটাই।গায়ে জোর নাই তো,মেজাজের জোরটা একটু বেশী!”
-“কার কথা বলছো তুমি?”
-“আর কার কথা বলবো! আমার কপালের কথা বলি।” বড় করে নিঃশ্বাস ফেললো রাজ।নীরা ফিসফিস করে বললো-
-“আচ্ছা,ওয়ালিমাতে ভাবীকে কি কালারের শাড়ীতে দেখতে চাও তুমি?তোমার স্যুটের কালার ম্যাচ করে?”
রাজ শোয়াবস্থাতেই কেবল মাথাটা উঁচু করে বললো-“কি রে হঠাৎ ওয়ালিমা নিয়ে পড়লি কেন? আম্মু কিছু বলেছে?”
-“না না, সেরকম কিছুনা।এমনিই…জেনারেলি…!”
-“অহ্….!”রাজ মাথাটা ফের বিছানায় ঠেকিয়ে ছাদের দিকে চেয়ে রইলো।হঠাৎ ফোন বেজে উঠলে নীরা ব্যস্ত হয়ে ফোন রিসিভ করলো!
-“ওয়ালাইকুমসালাম,ভাবী!”
রাজ নীরার দিকে তাকালো।নীরা ফোন কানে রেখেই ভাইয়ের দিকে তাকালো!
-“তোমার ফোন কই?”
রাজ শুয়ে শুয়েই পকেট হাতড়ালো।
-“মনে হয়, ঘরে রয়ে গেছে,কেন?”
-“ভাবী তোমাকে সমানে ফোন দিচ্ছে আর তুমি ফোন রেখে এখানে শুয়ে আছে!”
-“ওকে ফোন দিতে বলসে কে!”বলে রাজ উঠে বেরিয়ে গেলো।নীরা অবাক হয়ে ভাইয়ের গমনপথের দিকে তাকিয়ে রইলো।হঠাৎ সচকিত হয়ে বললো-
-“ভাইয়া চলে গেছে ভাবী! একটু আগেও এখানে ছিলো।তোমাদের মধ্যে কি ঝগড়া চলছে নাকি ?”
-“কি যেন ভাইয়ার ফেস দেখে মনে হলো সে চাপা কষ্টে ভুগছে।একটু আগেও দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কপালের দোষ দিচ্ছিলো।তুমি ভাইয়ার নাম্বারে আবার ট্রাই করে দেখো।সে তো নিজের রুমেই গেলো!”
ফোন রেখে নীরা আবার খাতা নিয়ে বসলো।

নিজের ঘরে এসে বিছানা থেকে মোবাইল তুলে অন করতেই দেখলো দুটো মিসড কল।
ওপেন করতেই পৌষীর হাস্যোজ্জ্বল চেহারা স্ক্রীণে ভেসে উঠলো।রাজ নিরবে কিছুক্ষণ ছবিটা দেখে মোবাইলটা একপাশে রেখে দিলো।অমনি ফোনটা বেজে উঠলো।রাজ হাতে নিয়ে দেখলো পৌষী আবার ফোন করেছে।দাঁতে দাঁত চাপলো তারপর ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে দিলো।

রাত প্রায় বারোটা।
রাজের ফোন আবার বাজলো।
রাজ শুয়ে শুয়ে আল্লামা তাকী উসমানীর একটা বই পড়ছিলো।বইয়ে চোখ রেখে হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা চোখের সামনে আনলো।
এবারও সেই..”~~POUSHI~~”

রাজ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অবশেষে গ্রীন বাটন প্রেস করে ফোন কানের কাছে নিলো!
ওপাশ থেকে পৌষীই প্রথম কথা বললো।
-“হ্যালো!আস্সালামুআলাইকুম!”
রাজ কোনো জবাব দিলোনা।
দুচোখ বন্ধ করে রাখলো।
-“কথা বলছেন না কেন?খুব বেশী রাগ করেছেন আমার উপর?”
রাজ একদম নিশ্চুপ।
পৌষী নরম সুরে বললো-“আসলে ঐ ক’দিন আমি….!”
পৌষীর কথা মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে রাজ বললো
-“কেন ফোন করেছো সেটা বলো!আমি ব্যস্ত!”
-“এতো রাতে কিসের ব্যস্ততা?”
-“সেই কৈফিয়ত তোমাকে দিতে হবে?”
-“আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন?”
-“কিভাবে কথা বলছি?”
-“এই যে রেগে রেগে…!”
-“ও,তাই তো! আমি রেগে কথা বলবো কেন! আমি তো বখাটে নাম্বার ওয়ান।রাগ করার অধিকার তো শুধু তোমার।তুমি রাগ করবে!রাগ করে একদিন,দুদিন, তিনদিন,চারদিন পর্যন্ত ফোন না ধরে কাউকে রাগের চরম মাত্রা প্রকাশ করবে।যেহেতু তুমি জেনে গেছো,কেউ তোমার অপেক্ষায় ইগারলি ওয়েট করে, তাকে তো ফোন দিয়েই সাইজ করতে হবে,তাই না?”
-“আমি জানি,আমার উপর আপনার রাগটা জায়েয।কিন্তু আমারও কিছু বলার ছিলো!”
-“তোমার বলার থাকলেও আমার শোনার কিছু নাই!আমি কাউকে ফোনে অপদস্থ করা পছন্দ করিনা বিধায় তোমার ফোনটা ধরতে বাধ্য হয়েছি।তোমার মতো অতো রাগ আমি দেখাতে পারিনি।কিন্তু এখন আর এতো রাতে গপ মারার ইচ্ছা নাই,তাই রাখতে চাচ্ছি!”
বলেও রাজ ফোন কানে ধরে রাখলো।ও প্রানপণ চেষ্টা করছে রাগটা কন্ট্রোল করতে কিন্তু রাগে ওর গা মৃদু কাঁপছে।পৌষী ওপাশে চুপ মেরে গেছে।
-“কই ফোন রাখো!”রাজ ধমকালো।
-“আমি রাখবোনা,আপনি রাখেন!”কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো পৌষী!
পৌষীর কান্নাভেজা কন্ঠে রাজের রাগটা হঠাৎ করেই ব্যারোমিটারের পারার মতো নিচে নেমে এলো!
গলা খাদে নামিয়ে বললো-“কাঁদছো কেন?”
-“খুশিতে!”
-“ভালো।তাহলে কাঁদো।”
-“আপনি আমার কথাটা না শুনেই রাগ করছেন ।আমারও তো কিছু বলার থাকতে পারে!”
-“আচ্ছা,বলো। কি বলবে!”
-নিশ্চুপ!
-“কই বলো!”
-“আপনার বিরক্ত লাগলে থাক্!”
-“এই যে,আবার শুরু করলে? আমার রাগ কিন্তু এখনো পড়েনি!”
-“হ্যাঁ,পুরুষ মানুষরাই কেবল রাগ করবে, মেয়েদের তো রাগ করা সাজেনা।”
-“উফ্,পৌষ।এবার আসল কথাটা বলো তো!গত একটা সপ্তাহ কোথায় ছিলে তুমি সেই জবাব আগে দাও।প্রথম চারটা দিন কম করে হলেও একশটা কল দিয়েছি।আর তুমি এতটাই পাষাণ যে ফোনটা ধরলেনা তো ধরলেই না।কি ভাবো তুমি আমাকে?”

-“দেখুন,আমি মানছি।আমি ঐ চারটা দিন আপনার ফোন না ধরে ভুল করেছি।কিন্তু আমার আত্মসম্মানবোধ আমাকে এটা করতে বাধ্য করেছিলো।একটা সময় তো বিবাহবন্ধন ছিন্ন করার চিন্তাও মাথায় এসেছিলো কিন্তু পরে যখন…..!”
-“কি করার কথা মাথায় এসেছিলো?”
পৌষীর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো রাজ।
পৌষী চুপ করে গেলো!
রাজ গুরুগম্ভীর কন্ঠে বললো-“সাহস অনেক বেড়ে গেছে, তাই না?অহংকারে মাটিতে পা পড়েনা? বিয়েটা তোমার কাছে ছেলেখেলা?”
-“রাজ…আমি…!”
-“হাউ কুড ইউ পসিবলি সে ইট?”
-“রাজ…শুনুন…!”
-“তোমার কোনো কথা শোনার ইচ্ছা আমার নেই!”
বলে ‘কট’ করে ফোন কেটে দিয়ে মোবাইল ছুড়ে মারল রাজ।মোবাইল মাটিতে আছাড় খেয়ে তিন টুকরা হয়ে ছড়িয়ে পড়লো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here