সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ-২২

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-২২
মোর্শেদা হাবিব!
***************
রাজের মেজাজটা সকাল থেকেই খিঁচড়ে আছে।কয়েকবার পৌষীর নাম্বারে ট্রাই করার পরও ওপাশ থেকে কেউ রিসিভ করছেনা।ব্যপার টা কি ?
পৌষী করছেটা কি?
সে আজ অফিসের কাজে চিটাগং যাচ্ছে।ফিরতে তিন চারদিন লাগতে পারে।গত দুদিন ধরে প্রচন্ড ব্যস্ততার জন্য “নীড়ে”ও যেতে পারেনি সে।তাই ফোনেই পৌষীর সাথে কথাটা সেরে নিতে চেয়েছিলো।কিন্তু পৌষী তো ফোনই রিসিভ করছেনা।
পৌষীর সাথে কথা না হলে সে কাজে মন বসাতে পারবেনা!মনের ভেতরের চোরাগলিতে পৌষীর আনাগোনা চলতেই থাকবে।রাজ নিজেও বুঝতে পারছে যে পৌষীর ব্যপারে সে একটু বেশী রকমের সেনসিটিভ হয়ে পড়ছে !
পৌষীর প্রতি এই অতিরিক্ত দুর্বলতার কারন কি তা রাজ নিজেও জানেনা! নিজেকে এ ব্যপারে অনেক প্রশ্ন করেছে রাজ।কোনো সদুত্তর পায়নি।এমন না যে রাজের জীবনে কোনো সুন্দর মেয়ে আসেনি।প্রচুর এসেছে!তাদের অনেকে রাজের জন্য পাগলপারাও ছিলো কিন্তু পৌষীর সৌন্দর্য্যে তাদের সেই আকাশ চমকানো আতশবাজির ঝিলিক নেই বরং পৌষীর নম্র সৌন্দর্য্যে আছে মিষ্টি কৌমুদী স্নিগ্ধতা যা কেবল চোখই জুড়ায়না মনও ভোলায়।
রাজের কাছে পৌষীর সরলতা আর দ্বীনদারিতাই সবচে বেশী টানে!
পৌষীর নারীত্বের নম্রতা যে কোনো পুরুষের সাধনার ধন।
রাজ চোখ বুঁজে পৌষীর মুখটা ধ্যান করতে থাকে আর অমনি ফোনটা বেজে ওঠে!রাজ দ্রুত ফোনটা হাতে নেয় এই আশায় যে হয়ত পৌষীই হবে কিন্তু ক্লায়েন্টের নাম দেখে হতাশ হয়ে ফোনটা কানে ঠেকালো।
★★“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



পৌষী চুপ করে বিছানায় শুয়ে আছে।ফোনটা সামনেই বিছানায় অসহায়ের মতো পড়ে আছে।
বেচারা ফোন বেজে বেজে ক্লান্ত হয়ে এখন থেমে গেছে।পৌষী জানে রাজ ওকে ফোনে না পেলে অস্থির হবে কিন্তু এ মুহূর্তে রাজের সাথে কথা বলার মানসিকতা নেই পৌষীর!দুপুরের ক্যাফের ঐ ঘটনার পর নিজেকে উচ্ছিষ্ট মনে হচ্ছে তার।
সত্যিইতো সে রাজের উপযুক্ত নয়,তার মতো মেয়ে রাজের সম্পত্তি দেখে আকৃষ্ট হয়ে বিয়েতে রাজী হয়েছে এটা যদি কেউ বলে তবে তার মুখ কি দিয়ে আটকাবে সে?
পৌষী যে ধরনের ছেলে মনে মনে চেয়ে এসেছে রাজের মাঝে তার কিছুই নেই,তবু রাজকে সে বিয়ে করেছে!
কোনো উচ্চবাচ্য করেনি!প্রশ্ন তো উঠবেই।
লোকেতো এটাই বলবে যে, পৌষী রাজের ধনাঢ্যতা দেখেই বিয়ে করেছে নতুবা বলবে রাজের পরিবারের আশ্রয়ের দেনা শোধ করেছে!
যে যাই বলুক,পৌষী নিজেতো জানে সে এসবের কোনো কারনেই রাজকে বিয়ে করেনি!তবে যে কারনেই হোক বিয়েটা হয়ে গিয়েছে!এবং এ থেকে এখন ফেরার কোনো পথ নেই!
যদিও এই ঘটনাটা এখনো সবাই জানেনা ঘনিষ্ট দুএকজন ছাড়া!
তাহলে কি ঘটনাটা আত্মীয় স্বজনকে জানানোর আগেই ওদের সম্পর্কটা ইতি টানতে হবে?
মামীও এ বিয়েতে প্রথম থেকেই রাজী ছিলেননা,আজকাল মেয়েদের জীবনের নানা টানাপোড়েন দেখে মামীর মন দুর্বল হয়ে গিয়েছে হয়তো এ কারনেই রাজের সাথে তার সম্পর্কটাকে মেনে নিচ্ছেন!
কে জানে!
কোনটা যে সত্যি আর কোনটা যে মিথ্যে তা পৌষী ধরতে পারছেনা!
ভাবতে ভাবতে লম্বা করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল পৌষী! রাজের ফোন এ কারনেই ধরছে না সে।
কি বলবে সে?
শপিং কমপ্লেক্স এর ঘটনাটা ঘটার পর থেকে পৌষীর অস্থির লাগছে।কোনোভাবে রাজকে এড়িয়ে সরে যেতে পারলে ভালো লাগতো ওর।
সব কিছুর জন্য নিজেকেই দায়ী মনে হচ্ছে ।

ইরা বাইরে যাবার জন্য তৈরী হয়ে সবেমাত্র বেরুতে যাবে তখনি ডোরবেল বাজলো!ইরা দরজা খুলে খানিকটা চমকে গেল!ফিন দাঁড়িয়ে আছে।ইরা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো!
নার্ভাস হেসে সালাম দিয়ে ফেললো!
ফিনও হাসলো-“রাজের কাছে এসেছিলাম!!
-“ওহ্!আসুন!”বলে ইরা পিছিয়ে গিয়ে ফিনকে বসতে ইঙ্গিত করলো!
-“আপনি বসুন,আমি চা করে নিয়ে আসি!”
-“উম….নাহ্…আমি বসবোনা,রাজের সঙ্গে দেখা করে একটু নিউমার্কেটের দিকে যাবো,কাজ আছে!”
-“ওহ্..স্যরি রাজ তো ঢাকায় নেই,আজ সকালেই চিটাগং গেছে!”
-“অহ্…তাহলে আজ আর বসবোনা।তুমি বোধহয় বেরুচ্ছিলে! তোমার দেরী করিয়ে দিলাম!”
-“না দেরী আরকি..!আমিও নিউমার্কেটের দিকেই যাচ্ছিলাম!”
বলে ইরা হেসে ফেলল!
ফিন সপ্রতিভ হয়ে বলল-“ভালোই তো হলো,আমি তো ঐ দিকেই যাবো,চাইলে তোমাকে লিফট দিতে পারি!”
ইরা খানিক ভেবে মাথা কাত করে বলল-“আপনার যদি কষ্ট না হয়!”
-“আরে নাহ্..কষ্ট কি! আসো!”
-“চা টা খেয়ে নিলে ভালো হতো!”
-“আজ নাহয় আমিই তোমাকে চা খাওয়াবো…যদি তোমার আপত্তি না থাকে!”
ফিন বেরিয়ে এসে গাড়ীর দরোজা মেলে ধরলো!ইরা তাতে উঠে বসলো!
দুজনে একসাথে নিউমার্কেটে এলো!ইরা তার কাজ সারলো, ফিনও নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে দুজনে গাড়ীতে এসে বসল।
ফিন গাড়ী স্টার্ট দেবার আগে জিজ্ঞেস করলো-“কোনটাতে যাবো?ক্যাফেতে না রেস্টুরেন্টে? তুমি কোনটাতে কমফোর্ট ফিল করো!”
-“রেস্টুরেন্টে না,বরং ক্যাফে ঝিলে যাওয়া যেতে পারে!”
-“ওকে!”
বলে ফিন গাড়ী টান দিয়ে সোজা ক্যাফে ঝিলে চলে এলো।গাছপালা ঘেরা নিরিবিলি আর মনোরম পরিবেশে ক্যাফে ঝিলটা ফিনেরও পছন্দ!বেছে বেছে এক কোণে ইউক্যালিপটাস গাছের নিচের টেবিলটা বেছে নিয়ে তাতে বসে পড়লো ওরা!
ইরার মতামত জেনে নিয়ে ফিন অর্ডার দিলো!অর্ডার দিয়ে ফিন পকেট হাতড়ে মোবাইল আর বাইকের চাবিটা বের করে টেবিলে রেখে স্থির হয়ে বসল-
-“তারপর?তোমার কথা বলো!”
-“আমার কি কথা?” ইরা বলল!
-“এই তো….তোমার হাজবেন্ড যেন কি করেন?”
ইরা অস্বস্তিতে মুখ নামিয়ে ফেললো।ফিন সেটা লক্ষ্য করে বললো-
-“সেদিনও লক্ষ্য করেছি,তোমার হাজবেন্ড সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেই তোমার মুখের রং বদলে যায়।কোনো সমস্যা?অবশ্য বলতে না চাইলে, থাক্!”
-“ন্ না…আসলে, সত্যটাই বলে দেই।আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে ফিন ভাই।গেলো সপ্তাহে আমি তাকে ডিভোর্স করে নিজেকে মুক্ত করে নিয়েছি।”
ফিন চুপ মেরে গেলো!
একটু পর বললো-“আ’ম এক্সট্রিমলী স্যরি!”
-“বাট আ’ম নট স্যরি।বরং মুক্ত হতে পেরে আমি খুশী।বড় অশান্তির জীবন যাপন করছিলাম।”ইরা বললো।
-“তা এখন কি করবে ভেবেছো?”
-“কি আর করবো?পরিকল্পনা করে কি জীবন চালানো যায় ?মানুষ ভাবে এক হয় আরেক!”
-“হমম…তা ঠিক।তবু একটা লক্ষ্য তো থাকে যাকে টার্গেট করে এগিয়ে যাওয়া যায়!”
-“আমার সেসব কিছু নেই!”
-“এতো হতাশ গলায় কথা বলছো কেন!ভেঙ্গে পড়ার মতো কিছু হয়নি!তুমি আবার নতুন করে সব শুরু করো!যা গেছে তা নিয়ে ভেবে মনকে ভারাক্রান্ত করে রাখাটা ঠিক না।তোমার সামনে গোটা জীবন পড়ে আছে।সেটাকে তো সুন্দর করে সাজাতে হবে!”
ইরা কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো কারন ততক্ষণে কফি এসে পড়েছে!
ফিন কফির কাপটা ইরার এগিয়ে দিলো!তারপর নিজের কাপটা টেনে নিয়ে পিরিচের ওপর কাপটা ঘোরাতে ঘোরাতে আনমনে বলল-“আমি বরাররই সরাসরি কথা বলার মানূষ!ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলা আমার পছন্দ না,স্বভাবও না।এই সরাসরি এপ্রোচিংয়ের জন্য একদিন এক কোমল হাতের চড়ও খেয়েছি তবু সাহস হারাইনি।
ফিনের এ কথায় ইরা আড়ষ্ট হয়ে উঠল-“ইয়ে…..এ প্রসঙ্গটা থাক্!বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন কেন!বললাম তো!সেদিনের সে আচরণের জন্য আমি স্যরি!সেদিন এতোটা বুঝিনি,বয়স কম ছিলো…বুঝতে পারিনি!”
-“এখন তো বয়স বেড়েছে,নিজের ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা হয়েছে!সেদিনের সেই প্রশ্নটা যদি আবার করি!যদি এ মুহূর্তে তোমাকে সেইরকম পরিস্থিতিতে ফেলা হয় তোমার উত্তর কি হবে?”
ফিন আগের কথায় ফিরে গেলো!
ইরা নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো।সে কফির কাপেও যেন চুমুক দিতে ভুলে গেছে!ফিন এক দৃষ্টিতে ইরার দিকে তাকিয়ে আছে!
ইরা মৃদু স্বরে বলল-
-“উত্তরটা জানা কি খুব দরকার?”
ফিন একই সুরে উত্তর দিলো-“ধরে নাও…এটা কারো জীবন মরণের প্রশ্ন!”
ইরা চুপ করে হাতের পার্সটা খুঁটতে লাগলো!তারপর বলল-
“মাত্র সেদিনই আমার ডিভোর্স হলো।এখনি নতুন কিছু ভাবছি না।তাছাড়া লোকে কি বলবে…!”
-“লোকের ঐ একটাই কাজ।কথা বলা।কাজেই ও নিয়ে ভেবে লাভ নেই।তাছাড়া মানুষের মন তো আর ক্যালেন্ডার বা ঘড়ির কাটার সাথে তাল মিলিয়ে চলে না।তোমার ভঙ্গুর হ্রদয়ে সান্তনার প্রলেপ তো হতে পারি!”
-“কেন আমার এই হতভাগ্য জীবনটার সাথে নিজেকে জড়াতে চাইছেন!”
-“আজ নতুন করে তো চাইনি।অনেক আগে থেকেই এই চাওয়া।” ফিন একইভাবে বলল!
ইরা চুপ করে কিছুক্ষণ বসে রইল তারপর বলল-“আপনার কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে!”
-“কফির চেয়েও তোমার উত্তরটা অনেক বেশী জরুরী !”
-“কি শুনতে চান আপনি?”
-“আমি হ্যাঁ শুনতে চাই!”
ইরা উসখুস করে উঠলো-
“আচ্ছা,বাড়ী গিয়ে ফোন দেবো! ”
-“পাত্রী পছন্দ না হলে পাত্রপক্ষ কিন্তু এই কথাটা বলে!”ফিন হতাশ সুরে বললো!
ইরা এবার খিলখিল করে হেসে ফেলল।
ফিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বলল-“আমি আমার কথাটাই বলে ফেলি।আমি আমার আম্মাকে নিয়ে আন্টির সাথে মানে তোমার আম্মুর দেখা করতে চাচ্ছি !”
-“এখনই ?”ইরা আঁতকে উঠল!
ফিন চোখ কুঁচকে বলল!
-“তারমানে তোমার আপত্তি নেই!”
ইরা লজ্জা পেয়ে হেসে ফেললো।
-“আমার পেপার্স রেডী হতে মাসতিনেক সময় লাগবে…!”
-“পেপার্স রেডি হোক,তিনমাস সময়ের ইদ্দতকালীন যে ব্যপারটা সেটা আমারো মাথায় ছিলো! তবে তোমার সাথে আলাপ না করে তো সামনে এগোতে পারিনা!যা হবার তিনমাস পরেই হবে!কি…ঠিক আছে?”
ইরা ফিনের দিকে তাকালো!
কি বলবে ভেবে পেলোনা! ফিন ঘড়ি দেখে বলল-“তোমার একটা আংটি আমার গাড়ীতে রয়ে গেছিলো সেদিন!”
-“ও…হ্যাঁ…!আমিও সেদিন খুঁজে হয়রান!”
ফিন পকেট থেকে আংটিটা বের করে দিলো।
-“ধন্যবাদ।”
-“ধন্যবাদ তো আমার তোমাকে দেবার কথা।তোমার এই আংটির সুবাদে আমরা আবার একত্রিত হলাম।যে কথাগুলো গত সাত বছরে বলতে পারিনি আজ তা বলার সুযোগ পেয়ে গেলাম।”
ইরা আংটিটা আঙ্গুলে পড়ে বললো-“চলুন উঠি।”
-“চলো…!”
দুজনে একসাথে উঠে দাঁড়ালো।

আজ তৃতীয় দিন।
রাজের কোনো ফোনই ধরছেনা পৌষী!সারাদিনের ব্যস্ততায় সময় যেমন তেমন কাটলেও রাতটা পাহাড়ের মতো লাগে রাজের কাছে।
অসহনীয় এক যন্ত্রনা কুঁড়ে খাচ্ছে রাজকে!পৌষীর এমন কি হলো যে সে ফোন রিসিভ করছেনা?আবার কোন সমস্যা বাঁধলো!মা কি কিছু বলেছে? নাকি নিকিতাদের বাড়ী থেকে কেউ কিছু বললো?নাকি একেবারেই ভিন্ন কোনো সমস্যা!
এই দুদিন বাবার সাথে কথা হয়েছে রাজের। তার কথায় তো কোনো সমস্যার আভাস মেলেনি!বরং পৌষীর কথা জিজ্ঞেস করায় উনি বললেন-“পৌষীরা ভালো আছে।গত তিন দিন পর্যন্ত পৌষীর ফোন না ধরাটা কষ্টের চুড়ান্ত পর্যায়ের মনে হলেও আজ চতুর্থদিন রাজের মনটা ভিন্নখাতে মোড় নিলো!সে জানেনা কেন পৌষী তাকে এতটা কষ্ট দিচ্ছে।কারন যা ই হোক,সে ফোনে কথা বলে তা রাজকে জানাতে তো পারতো!ফোন রিসিভ করবেনা এটা কি?”
রাজ প্রচন্ড অভিমানে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল!যদি তার সাথে কথা না বলে পৌষীর দিন কেটে যায় তাহলে পৌষীর সাথে কথা বললেও রাজের দিন থেমে থাকবেনা!না ধরুক ফোন।রাজও আর ফোন দেবেনা!দেখাও করবেনা।কথাও বলবেনা।
★★
চায়ের কাপটা স্বামীর হাতে তুলে দিয়ে তার পাশে বসলেন রানী।
আমজাদ চৌধুরী চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন-“কি…..কিছু বলবে?”
-“হ্যাঁ….!”
-“বলো!”
-“তুমি তো জানো আমি সেদিন ইরা আর মীরাকে নিয়ে নীড়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু কথাটা রাজকে জানাইনি।ইরা আর মীরা চাচ্ছে ওকে সারপ্রাইজ দিতে।”
-“কিভাবে দেবে?কিছু করতে গেলে তো ও জানবেই!”
-“তা জানুক। তবে ওদের ওয়ালিমাটা দেরী করতে চাইনা।সামনের মাসে মীরা চলে যাবে।ও যাবার আগেই তুমি তারিখটা ঠিক করে ফেলো।এটাতে তো আর ফর্মালিটির ঝামেলা নাই।ঘরের মেয়ে, ও বাড়ী থেকে এ বাড়ী আসবে।চলো আজ বিকালে গিয়ে সাহেদার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলে আসি!”
-“হমম….ভালোই বলেছো।রাজ নিজেও চায় ওর বিয়েটা খুব বেশী জাকজমক যেন না হয়!”
-“জাকজমক না হোক,সবাইকে তো দাওয়াত দিতে হবে।একটা মাত্র ছেলের বিয়ে,আত্মীয় স্বজন কাউকে বাদ দিতে পারবা?”
-“না,তা দিবো কেন!তুমি ইরা মীরাকে নিয়ে লিষ্ট করে ফেলো।আমি কার্ড ছাপাতে দিয়ে দেবো।আজকেই তো রাজের ঢাকায় ফেরার কথা।ও ফিরলে ওর জামাকাপড়গুলোও বানাতে দিতে হবে।”
-“তাহলে বিকালে গিয়ে সাহেদাকে জানিয়ে আসি যে সামনের মাসেই ওয়ালিমা করবো!”
-“হুঁ….চলো যাই!”

রাজ বাড়ী ফিরেছে ঘন্টাখানেক হলো।ফিরেই সে গোসল সেরে দুপুরের নামাজ পড়তে মসজিদে চলে গেলো।আল্লাহর আনুগত্য করার মধ্যে যে একটা অপার তৃপ্তি আছে তা আগে কখনো টের পায়নি রাজ।স্বেচ্ছাচারিতায় ঐ আনন্দ নেই, রবের আনুগত্যে যে আনন্দ আছে।
গত চারটে দিন সে একরকম অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটিয়েছে।পরে নিজেকেই সান্তনা দিয়েছে,যে আল্লাহ তাদের এক সুতোয় বেঁধে দিয়েছেন সেই আল্লাহই তাদের মধ্যকার সমস্ত বাধা দুর করে দেবেন।পৌষী যে কারনেই যোগাযোগ বন্ধ করে থাকুক না কেন,রাজ এরপর থেকে আর অস্থির হবেনা।সব কিছুতে ধৈর্য্যকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে এখন থেকে তাহলে কষ্টের তীর এখন থেকে আর তাকে আহত করতে পারবেনা।
রাজ কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো।আল্লাহর ইচ্ছায় ওদের ওয়ালিমা না হওয়া পর্যন্ত সে ধৈর্য্যের চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে যাবে।পৌষী যখন ওর কাছ থেকে দুরে থেকেই খুশি থাকে তো দুরে থাকাই হোক আপাত সমাধান।
মসজিদ থেকে ফিরেও রাজ আর পৌষীকে ফোন করলোনা।বাবা নীড়ের তদারকির দায়িত্ব দিয়েছে সেটা সে পালন করবে ঠিকই তবে ফুপির সাথে যোগাযোগ রেখে।পৌষীর সাথে সবরকমের যোগাযোগ বন্ধ রাখবে রাজ।কষ্ট কি জিনিস, ওকে হাড়েমাংসে চেনানো দরকার।

রানী নীড়ে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছিলেন।এমন সময় রাহেলা এসে তার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে জানালো পিয়ন এসে দিয়ে গেছে।
রানী হাতের কাজ রেখে খামটা খুললেন।পৌষীর বোরকা পড়া কিছু ছবি বেরুলো।ওর পাশে একটা লাল শার্ট পড়া ছেলের ছবি।এরকম দু তিনটে ছবি।সাথে একটা চিঠিও আছে।রানী থমথমে মুখে চিঠিটা পড়লেন।
এমন সময় আমজাদ চৌধুরী ঘরে ঢুকতেই রানী তাকে চিঠি আর ছবিগুলো দেখালেন।
-“এ্যাই,রাজের বাবা,এগুলো দেখোতো!”
-“কি,এগুলো?”
আমজাদ ভ্রু কুঁচকে ছবিগুলো দেখে রানীর দিকে তাকালেন!
রানীর মুখ গম্ভীর।
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here