#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_৩৭
#Saji_Afroz
.
.
-তোমার বিয়ের পর বলবো ।
.
পরশের কথা শুনে ছোঁয়া বলল-
বিয়ের পর কেনো?
-বিয়ের সময় বাড়তি ঝামেলার প্রয়োজন নেই । নিজের আর বোনের বিয়েটা এনজয় করো । বিয়ের পরে সবটা জানাবো ।
-এটা মোটেও ঝামেলার কাজ নয় ।
-আচ্ছা নয়! কিন্তু আমি চাইনা তুমি এখন আর কোনো বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ো । ওকে?
-বিয়ের পর জানাবেন তো?
-হু ।
-প্রমিজ?
-হুম ।
.
ছোঁয়া চলে গেলো । পরশের ঠোঁটের কোণে হাসি । কি হবে বিয়ের পর জানিয়ে? তবে ওয়াদা যখন করেছি, জানাবো । তোমাকে পাইনি তাতে কি! তোমাকে ভালোবাসি, এটা জানাতেই পারি । ভালোবাসা তো অন্যায় নয় । কারণে অকারণে হয়ে যায়…
.
.
সকাল বেলা কফি নিয়ে সাফিনা আহম্মেদের রুমে এলো ছোঁয়া ।
-আজ কলেজে গেলেনা?
-আজ ক্লাস নেই ।
-ও আচ্ছা! বসো ।
.
ছোঁয়া বসতেই তিনি বললেন-
বিয়ের তারিখ ঘনিয়ে আসছে । তোমার কেনাকাটা শুরু করা উচিত ।
-তুষারকে পাওয়া আমার স্বপ্ন ছিল । তাছাড়া আর কোনো…
-কি যে বলোনা! বিয়ে নিয়ে প্রতিটা মেয়েরই কিছু ইচ্ছে থাকে ।
-তুষারকে পাচ্ছি, এটাই অনেক ।
-ওদের বাড়ি থেকে বিয়ের শপিং নিয়ে কিছু বলেনি?
-না ।
-আশফাকের বাড়ি থেকে?
-বলেছে । আপুকে নিয়ে যাবে শপিং করাতে ।
-ভালোই হলো । তোমার বিয়ের শাড়ি আমি উপহার দিবো, এমনটা ইচ্ছে ছিল ।
-আপনি কেন..
-আমি কেন মানে! আমি তোমার কেউ নয়?
-অবশ্যই কেউ! বরং আপন কেউ ।
-তবে তৈরী হয়ে নাও । পরশের সাথে বেরিয়ে শপিং করে আসো ।
-আজই?
-হুম এখুনি । সন্ধ্যার পর পরশ ফ্রি থাকেনা ।
-অন্যদিন গেলে হয়না?
-না ।
.
.
নিজের বাসায় এসে তুষারকে ফোন দিলো ছোঁয়া ।
-হ্যালো ছোঁয়া । কেমন আছো?
-ভালো । তুমি কেমন আছো?
-আছি ভালো ।
-আমি বিয়ের শপিং করতে যাচ্ছি ।
-ওহ তাই! ভালো ভালো । করে ফেলো ।
-তুমি করবে কবে?
-আমাদের ছেলেদের আর কিসের শপিং! কোনো এক ফাঁকে করে ফেলবো ।
-হুম । আমি ডাক্তার পরশের সাথে যাচ্ছি । তার মা আমাকে বিয়ের শাড়ি উপহার দিচ্ছেন ।
-আচ্ছা তাই!
-হুম । কেমন শাড়ি নিবো? একটা আইডিয়া দাও তো ।
-তোমাকে সবটায় মানাবে । যেমন ইচ্ছে নিও ।
-তোমার কোনো ইচ্ছে নেই?
-আমার ইচ্ছেই কেনো পরবা তুমি! নিজের ইচ্ছেতে পরবে ।
.
কেনো যেন কথাটি পছন্দ হলোনা ছোঁয়ার । সে পরশের সাথে শপিং করতে যাচ্ছে শুনেও কিছু বলল না তুষার । তাই বেশি কথা না বলে ফোনের লাইন কেটে তৈরী হতে লাগলো ।
এরইমাঝে তুষারের ফোন এলে রিসিভ করে বলল-
হ্যাঁ বলো?
-আমার পরী টাকে যা পরে তাতেই মানায় । কিন্তু আমি কি পরবো বলো তো? তোমার পাশে আমাকে মানাবে কিনা মহা চিন্তায় আছি । লোকে আবার বানরের গলায় মুক্তোর মালা বলবে না তো?
.
তুষারের কথা শুনে হেসে ফেললো ছোঁয়া ৷ তুষার বলল-
ইশ! কদিন বাদেই এই হাসিটা সামনাসামনি দেখব । খুব কাছ থেকে দেখব ।
.
.
মুনতাহা বেগম টিভি দেখছেন । তুষারের বাবা রবিউজ্জামান এসে বললেন-
ছেলের খুশির জন্য বিয়েটায় রাজি হয়েছি । কেননা ছোঁয়া চলে যাওয়ার পর থেকে ডিপ্রেশনে ছিল সে । বিয়েটা যখন হচ্ছেই আত্নীয়স্বজন জানাজানি হলেও সমস্যা কি ছিল? আমার মাকে পর্যন্ত জানাতে দিলেনা তুমি । নাতির বিয়েতে দাদি আসবেনা? বাইরে থেকে জানতে পারলে মনে কতটা কষ্ট পাবে ভেবেছ?
-কি করে জানবে! বউ ঘরে তুলেতো আনছিনা । তোমার ছেলের শান্তির জন্য বিয়েটা করিয়ে রাখছি । তোলার সময় সবাইকে জানিও । তোমার মা কেনো! চৌদ্দ গোষ্ঠীর মাকে বলো তখন ।
.
মুনতাহা বেগম টিভির দিকে মনোযোগ দিলেন আবার ।
এদিকে তার দিকে মনোযোগ দিলেন রবিউজ্জামান । এতবছরের সংসার জীবনে মুনতাহা বেগমকে যতটুকু তিনি চিনেছেন, তার মাথায় কোনো একটা দুষ্টু বুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছে । নাহলে এত সহজে বিয়েটায় রাজি হতো না সে । কিন্তু কি ঘুরপাক খাচ্ছে তার মনে!
.
.
-প্রায় হাজার খানেক শাড়ি দেখেছেন মনেহয় আপনি? একটা শাড়িও পছন্দ হচ্ছেনা? মেয়েরা শপিং করে সময় নিয়ে । এখন দেখছি ছেলেরাও এমন!
.
ছোঁয়ার কথা শুনে পরশ বলল-
মা বলেছে বেস্টটায় কিনতে । এখানে বেস্ট কিছু আমি দেখছিনা ।
-একটা নিয়ে নিলেই তো হয় ।
-না হয়না ।
.
ছোঁয়া বিরক্তিভাব নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে । পরশ বলল-
এই প্রথম কোনো মেয়েকে দেখলাম, যার বিয়ের শপিং নিয়েও কোনো আগ্রহ নেই ।
-সবাই একরকম না ।
-তবে তুমি বসে থাকো । আমিই ঘুরি ।
-কোনো দরকার নেই । চলুন ।
.
হঠাৎ পরশের চোখ গেল পুতুলের গায়ে থাকা একটি লেহেঙ্গার দিকে । মনেহচ্ছে পুতুলটি যেন ছোঁয়া!
পরশ তাকে দেখিয়ে বলল-
এটি কেমন?
-এটা তো লেহেঙ্গা ।
-বিয়েতে লেহেঙ্গা পরেনা?
-হ্যাঁ পরে ।
-তবে ওটাই তুমি পরবে ।
-কিন্তু….
-ভালো লাগেনি?
-তা নয় ।
-তবে?
.
মুচকি হেসে ছোঁয়া বলল-
কিছুনা ।
.
.
দেখতে দেখতে বিয়ের তারিখ এগিয়ে আসলো ৷ আজ ছোঁয়া ও নয়নতারার গায়েহলুদ । খুব বেশি বড় না হলেও, ঘরোয়াভাবে গায়েহলুদের আয়োজন করা হয়েছে ।
হালকা হলুদ রঙের একটি শাড়ি পরে স্টেজে বসে আছে ছোঁয়া । তার পাশেই রয়েছে নয়নতারা ৷
রুপালি এসে ছোঁয়াকে হলুদ ছুঁইছে দিয়ে বলল-
আমার বিয়ের পর পরই তোর বিয়েটা হয়ে যাচ্ছে । আমি অনেক খুশি হয়েছি, তুষার ফিরে এসেছে তোর জীবনে ।
.
পরশকে স্টেজের এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুপালি তাকে টেনে নিয়ে এসে বলল-
আপনি কেনো ওত দূরে দাঁড়িয়ে আছেন! হলুদ লাগাবেন না দুবোন কে?
.
পরশ মৃদু হেসে নয়নতারার হাতে আলতো করে হলুদ ছুঁইয়ে দিলো । সে চলে যেতে চায়লে রুপালি বলল-
ছোঁয়া কি দোষ করেছে?
.
ছোঁয়াকে হলুদ লাগাবে পরশ, এটা তার জন্য যেমন সুখকর তেমনি বেদনার । কেননা তার নামের হলুদ ছোঁয়ার শরীরে লাগছেনা ৷ তবুও সে বাহানায় নিজের ভালোবাসাকে একটু ছুঁয়ে দিতে পারবে সে ।
ছোঁয়ার কপালে হলুদ লাগিয়ে পরশ বলল-
আজ এই হলুদসন্ধ্যার মতো, ভালো কাটুক তোমার প্রতিটা সন্ধ্যা ।
.
চলবে
.