হঠাৎ ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব ৩৩+৩৪

#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_unexpected_love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-33

নীলাভ প্রীতির বিয়ের প্রায় এক মাস হয়ে এলো।

প্রীতি এখন পা ফেলতে পারে।অল্প অল্প হাটতে পারে।নীলাভ অফিস করে যতটা সম্ভব পারে প্রীতিকে সময় দেয়।

,

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়।একটু পরেই ঝুপ করে রাত নেমে যাবে।তারপর নীলাভ আসবে।প্রীতি ডেসিন টেবিলের সামনে বসে আছে।গাঢ় নীল একটা শাড়ি পড়ে আছে ও।নীলা চৌধুরীর কাছ থেকে জেদ ধরে শাড়ি পড়ে এসেছে।প্রীতি সাজছে।অনেক সাজছে না কিন্তু হালকা সাজছে।কানে ঝুমকা পড়েছে হাতে চুড়ি পড়েছে পায়ে নুপুর পড়েছে।প্রীতি নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিয়ে উঠে পড়লো। নীলাভের আসার প্রহর গুনছে ও। কখন আসবে নীলাভ?প্রীতি একবার ঘড়িতে চোখ বুলালো।ঘড়ির কাটা কেবল ৭ টার ঘরে ৯ টা বাজতে এখনো ঢের দেরি।আর প্রীতি এখনি সেজেগুজে বসে আছে।প্রীতি ছাদে গেলো। নয়টার ঠিক আগ মুহুর্তে সে ঘরে আসবে ভেবে রাখলো।

,

ক্লান্ত শরীর নিয়ে বেশ খানিক টা হেলে ধুলে বাড়িতে প্রবেশ করছে নীলাভ। ইদানীং বড্ড চাপ যাচ্ছে।নীলাভ গলার টাই টাকে একটু ঢিল করলো।জুতা খুলে রাখলো।কোট টা খুলে হাতে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো।

ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘর।শুধু একটা নীল ডিম লাইট জ্বলছে।নীলাভ একবার ভ্রু কুচকে রুমটার দিকে চোখ বুলিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেস হতে।

প্রীতি ছাদ থেকে মাত্র নিজের ঘরে এসেছে।নীলাভ এসে পড়েছে বুঝতে পেরে প্রীতি দাত দিয়ে জিভ কাটলো।তার দেরি হয়ে গেছে।
সে আস্তে করে ঘরে প্রবেশ করলো।রুমে ঢুকে আশেপাশে নীলাভকে খুজতে লাগলো চাপা আতংক নিয়ে।নীলাভ দেখে ফেললে কি রিয়েকশন দিবে তা ভেবেই প্রীতির ঘাম ছুটছে।নীলাভ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে প্রীতিকে এভাবে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ধমকে বলে উঠলো,

-এই ভাঙা পা নিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?বেশি চলাফেরা করতে না করেছি না?

নীলাভের আকস্মিক ধমকে প্রীতির শরীর কেপে উঠলো। পড়ে যেতে নিলো ও।সাথে সাথে নীলাভ এসে প্রীতির কোমড় জড়িয়ে ধরলো।প্রীতি চোখ মুখ খিচে আছে।আজ আবার সেই পায়ে ব্যাথা পেয়েছে।

নীলাভ প্রীতির মুখের দিকে মিনিট পাচেক তাকিয়ে থাকলো।তার বউটাকে আজ বেশ সুন্দর লাগছে।নীল শাড়িতে জড়ানো ‘পেখম তুলা ময়ূর’ লাগছে।যে ‘ময়ুরের কাজল কালো দুটি চোখ কলকল শব্দ করে ঢেউ দিচ্ছে’।মনে হচ্ছে ‘গোলাপি মসৃণ দুটো ঠোঁটে হাত দিলেই পিচ্ছলিয়ে যাবে’।’গালের খাজের ভাজেঁ যেনো মিশে আছে তার সকল রাজ্যের ভালোবাসার গল্প।’ নীলাভ বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নেশা ধরানো কন্ঠে বলে উঠলো,

-আমাকে মারার প্ল্যান করছো?এভাবে কেনো সেজেছো?

প্রীতি অনেক কষ্টে সোজা হয়ে দাড়ালো।নীলাভের পায়ের উপর নিজের দু পা রেখে উঠে দাড়ালো।নীলাভের গলা জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে প্রীতি বলে উঠলো,

-আমাকে ভালোবাসেন?

নীলাভ প্রীতির কোমড় জড়িয়ে ধরলো। বলে উঠলো,

-না তো।কে বলল?আমি তো শুধু ভালোবাসি না।আমি তো এমন ভালোবাসি যে ভালোবাসা মুখ দিয়ে যতবার বলবো ততবার আরো বলতে ইচ্ছে করবে।আমার ভালোবাসার কোনো পরিমান নেই। অসীম ভালোবাসা।এর চেয়ে বেশি আর ভালোবাসাই যায় না।

প্রীতি নীলাভের বুকে মাথা রেখে বলল,

-আমাকে আরেকবার আপনার দাদাবাড়ি থেকে ঘুরিয়ে আনুন না।ওইবার তো কারোর সাথেই ঠিক মতো কথা বলতে পারি নি।সারাদিন এই ভাঙা পা নিয়ে শুয়ে বসে ছিলাম। রাইসা আপুকেও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।বেচারা তো আপনাকে ভালোবাসে তাই না?ওর সাথে এতো খারাপ ব্যাবহার করাটা ঠিক হয় নি।

নীলাভ চোখ গরম করে প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল,

-ওই বাড়িটা তোমার জন্য একটা কুফা। বাড়িতে গিয়ে প্রথম দিন ই হাত পুড়িয়ে বসেছিলে।পা ভেঙে বসে আছো।ওই বাড়ির নাম মুখেও নিবে না।আর রাইসা ভালোবাসে বা না বাসে তাতে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই।আমার মাথা ব্যথা টা তুমি। বুঝলে?

প্রীতি মাথা নাড়িয়ে নিজের হাত দুটো নীলাভের পিঠে রেখে কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলে উঠলো,

-আমাকে কেমন লাগছে?

নীলাভ প্রীতির মাথায় চুমু দিয়ে বলল,

-আমার চোখের সবচেয়ে সেরা সুন্দরি আমার মা আর তুমি।তোমরা দুজন যেভাবেই থাকো না কেনো সবসময় আমার চোখে বেস্ট।

প্রীতি মাথা উচু করে নীলাভের চোখের দিকে তাকালো।নীলাভ প্রীতির চোখের দিকে তাকিয়েই থমকে গেলো।প্রীতির চোখ দুটো আজ বড়ই চঞ্চল। অনেক এলোমেলো।কোনো কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। আর না পাওয়ার অনুশোচনা। চোখ দুটোতে অনেক নেশা।চোখের পানি ছলছল করে।যেনো এই গাঢ় বাদামী চোখ জোড়া অনেক কিছু নীলাভকে বলতে চাইছে।অনেক কিছু নীলাভের কাছে চাইছে।নীলাভ প্রীতির বাদামী চোখ জোড়া থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলল।এই বাদামি চোখজোড়ায় নীলাভ যতই তাকিয়ে থাকুক না কেনো ততই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করবে।নীলাভ প্রীতিকে কোলে তুলে নিলো।প্রীতি নীলাভের গলা জড়িয়ে ধরে চেয়ে রইল।মুখে কিছু বলল না।নীলাভ প্রীতির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

-পায়ে ব্যাথা পেলে কিন্তু আমার দোষ নেই।মনে রেখো।এক মাস আগে আবদার করেছিলে বলেছিলাম তুমি একটু সুস্থ হলে সেই আবদার পুরন করবো।আজ সেই আবদার পুরন করার দিন।কি?পারবে তো সামলাতে?

প্রীতি লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে গেলো।কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হতে লাগলো।নীলাভের বুকে মুখ গুজে দিলো প্রীতি। স্বামীর কাছে থেকে প্রথম ভালোবাসার পরশ পাবে ভাবতেই প্রীতির গা শিউরে উঠছে।এই লোকটা তার আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে ভাবলেই অদ্ভুত এক শিহরন বুকে বয়ে যায়।

নীলাভ প্রীতির কপালে চুমু দিয়ে প্রীতিকে বিছানায় শুয়ালো।কপালে আরো একবার চুমু দিতেই প্রীতির উষ্ণ ঠোঁটজোড়া কেপে উঠলো।নীলাভ ঠোটের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে মিনিট খানিক চেয়ে থেকে নিজের ঠোঁট ডুবালো।প্রীতির গলায় মুখ ডুবালো।প্রীতি নীলাভের চুল গুলো এক হাত দিয়ে মুষ্ঠিবদ্ধ করে ধরলো।প্রীতির শরীর কাপছে।ভীষণ মাত্রায় কাপছে।স্বামীর এক একটা ভালোবাসার পরশে সে বিলিন হয়ে যেতে লাগছে।সব কিছু এলোমেলো লাগছে তার।স্বামীর প্রথম ছোয়া কি তাহলে এতোই মধুর হয় এতোই ভালোবাসাময় হয় এতোটাই মিষ্টির হয়।

___________________________

প্রীতি ঘুম থেকে উঠে পড়েছে।আজ নীলাভের আগেই ঘুম ভেঙেছে তার।ঘুম থেকেই উঠেই সে নিজেকে নীলাভের বুকে আবিষ্কার করে মাথা নুইয়ে ফেলল। লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে নীলাভের বুকে মুখ গুজলো।নীলাভের উদম খালি বুকে প্রীতি পরপর দুবার চুমু দিলো।বুকের হাত বুলিয়ে বিরবির করে বলে উঠলো,

-এই বুকটা শুধুই আমার।আর কারোর না।কারোর না।

প্রীতিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তখনই নীলাভ বলে উঠলো,

-হম এই বুকটা শুধুই তোমার।

প্রীতি নীলাভের কথা শুনে হকচকিয়ে গেলো।সরে আসতে চাইলো।কিন্তু নীলাভ ওকে ঝাপটে ধরে আছে।প্রীতি চুপ হয়ে যায়।শান্ত হয়ে শুয়ে থাকে নীলাভের বুকে।নেশা ধরানো কন্ঠে প্রীতি বলে উঠলো,

-আর কাউকে এ বুক দিবেন না।এ বুকে শুধু আমি ই থাকবো।
-আচ্ছা।
-আপনি কি জেগে ছিলেন?এতোক্ষণ আমার কথা শুনছিলেন?
-তুমি যখন এ কথাটা বলছো তখনই ঘুম ভেঙেছে।ভাগ্যিস ঘুম টা ভেঙেছে তা না হলে তো মারাত্মক মিস করে যেতাম।

প্রীতি নীলাভের বুকে একটা কামড় দিয়ে বলে উঠলো ‘অসভ্য’।
____________________________

ঠাটা পড়া ভিষন রোদে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে লিনা।খুব বিরক্তবোধে ব্যস্ত ভঙ্গিতে হাতের ঘড়ির সময় টাতে একবার চোখ বুলালো।রাস্তায় এদিক অদিক তাকিয়ে সে রিক্সা খুজছে।কিন্তু একটা রিক্সাও নেই।মনে হচ্ছে সব রিক্সার মাথায় আজ এক সাথে ঠাটা পড়েছে। রাস্তায় এদিক সেদিক তাকাতেই একটা পরিচিত মুখ লিনার চোখের সামনে ভেসে উঠলো।সূক্ষ্ম চোখে সচেতন দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে সে আবিষ্কার করতে লাগল লোকটি কে?তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়েই সে এগিয়ে গেলো।

মেডিকেলের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে তাহসিন।কাউকে খুজতে ব্যাস্ত সে।এমন সময় খুব উৎসাহের সহীত কেউ এসে বলে উঠলো,

-আপনি প্রীতির দেবর না?

তাহসিন তাকালো মেয়েটার দিকে।পরিচিত মুখ। কোথায় যেনো দেখেছে দেখেছে লাগছে।মুখে হাত দিয়ে চেনার চেষ্টা করলো তাহসিন।বেশ খানিক পর মেয়েটাকে চিনতে পেরে তাহসিন বলে উঠলো,

-ওহ…আপনি তো ভাবীর বান্ধবী তাই না।

লিনা হেসে মাথা নাড়ালো।তাহসিন ও হাসি মুখে বলে উঠলো,

-বিয়েতে তো আপনার সাথে ঠিক মতো কথাই হলো না।
-হ্যা।আসলে কীভাবে বিয়ে টা হলো তা তো দেখলেন ই।
-হম।তা এখানে আপনি?
-এইতো কিছু কাজ ছিলো।আপনি কি করছেন?
-আর বইলেন না আমার বন্ধুরা আমাকে এখানে আসতে বলে নিজেরাই এখন লা পাত্তা।কারোর টিকি টাও মিলছে না।

লিনা চুল গুলো কানের পিছে গুজে দিলো।শুকনো ঠোঁট দুটো জিহবা দিয়ে ভিজিয়ে বলে উঠলো,

-চলেন আশেপাশে কোথায় কফিশপে বসি।যদি আপনার আপত্তি না থাকে।

তাহসিন সময় দেখে বলে,

-বসাই যায়।কিন্তু আমার হাতে তো বেশি সময় নেই।খুব বেশি হলে ১ ঘন্টা সময় দিতে পারবো আপনাকে।
-তাতেই হবে চলেন।

,

রেসটুরেন্টের টেবিল টায় এপাশে লিনা আর ওপাশে তাহসিন।তাহসিনের দৃষ্টি ফোনে থাকলেও লিনা বার কয়েক তাহসিন এর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।সাদা শার্ট সাদা প্যান্ট এ ছেলেটাকে একদম ডাক্তার ডাক্তার লাগছে।তাহসিন কে ভালোভাবে দেখেই লিনা আবিষ্কার করলো তার বুকে কেমন জানি করছে।উথাল পাতাল ঢেউ বইছে এই অপরিচিত ছেলেটার জন্য।লিনা বুকে হাত দিয়ে বিরবির করে বলল,

-এই ডাক্তার সাহেব টা কি পারবে আমার বুকের চিকিৎসা করতে।আমার বুকের রোগ সারাতে পারবে কি?

তাহসিন চোখ তুলে তাকালো।কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে হাসি মুখে বলে উঠলো,

-কিছু বললেন?

লিনা থতমত খেয়ে বলে উঠে,
-না।আচ্ছা আপনি কি করছেন?
-ইন্টারনি করছি।আর দু মাস তাহলেই শেষ।ফুল ডক্টর হয়ে যাবো।

লিনা কফির মগে চুমুক দিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে বলে উঠলো,
-ওও..

তাহসিন আবার ফোনে মনোযোগ দিলো।লিনা এবার আর কোনো কথা খুজে পাচ্ছে না। কি বলবে কি বলবে ভেবে যাচ্ছে।কিছুক্ষন পর বেশ টেনে উচু স্বরে বলে উঠে,

-জানেন আমার না খুব শখ ছিলো আমাদের দুই বান্ধবী এক ই বাড়িতে বিয়ে হয়ে যাওয়ার।

তাহসিন তাকালো।মুচকি হেসে আবারো বলে উঠলো,

-রাফাদ ভাইয়ার তো ভাই নেই।তাই স্নেহা ভাবীর কোনো দেবর নেই।কিন্তু প্রীতি ভাবীর একটা দেবর আছে কিন্তু সেটা তো সম্ভব না।

লিনানা ঝটপট বলে উঠলো,
-কেনো? কেনো সম্ভব নয়?

তাহসিন সুক্ষ্ম চোখে লিনার দিকে তাকালো।লিনা একটু ঘাবড়ে গেলো।নড়েচড়ে বসলো ও।তাহসিন বেশ কঠিন সুরে বলে,

-আপনি কি মিন করতে চাইছেন মিস. লিনা?
-আমার মনে হচ্ছে আপনি রেগে গেছেন?
-না আমি রাগী নি।কিন্তু আপনি যেটা ভাবছেন সেটা আমি বুঝতে পেরেছি।
-বাহ!দু মিনিটেই বুঝে গেলেন?
-আমি বাচ্চা না মিস লিনা।আমি খুব বিচক্ষনী একটা মানুষ। মানুষের চোখের দৃষ্টি দেখে বলে দিতে পারি কে কি বলতে চায়।কেউ হা বললে হু বুঝার ক্ষমতা আমি রাখি।আর একটা কথা আপনি যা ভাবছেন তা কখনোই সম্ভব না।হঠাৎ করে কিছু হয় না।

তাহসিন দাঁড়িয়ে গেলো।লিনাও দাঁড়িয়ে গেলো।তাহসিনের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বলে উঠলো,

-হঠাৎ করে কি ভালোবাসা যায় না?

তাহসিন পকেটে হাত দিয়ে অন্যদিকে তাকালো।কঠিন গলায় বলে উঠে,

-হয়তো যায়।কিন্তু তা আমার জন্য না।

চলবে❤️#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_unexpected_love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-34

লিনা তাহসিনের দিকে তাকিয়ে বলে,

-কীভাবে কি হলো আমি কিছু জানি না।কিচ্ছু বুঝি না।কিন্তু যেহেতু কথা হয়েই গেলো তাহলে আমি বলছি, ‘আমি আপনাকে চাই।’

তাহসিন মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো।বলে উঠলো,

-দেখুন লিনা,আমি অনাথ আমার মা বেচে নেই।বাবা থেকেও নেই।ছোটো থেকেই খালামনির কাছে বড় হয়েছি।আমি তাদের আসল সন্তান না।এখন বলুন তাও কি আপনি এই অনাথ ছেলেটাকে চান?

লিনা অবাক।বেশ অবাক।তাহসিনের মা মারা গেছে।নীলা চৌধুরী ওর মা না।লিনার এমন অবাক দৃষ্টি দেখে তাহসিন তাচ্ছিল্য হেসে চলে যেতে ধরলো।লিনা পথ আটকালো।তাহসিনের চোখের দিকে তাকিয়ে এক নাগাড়ে বলে উঠলো,

– হঠাৎ ভালোবাসা বোধ হয় এটাকেই বলে।তা না হয় আমি যে মেয়ে, সব সময় বলতাম কখনো প্রেম করবো না সেই মেয়ে হঠাৎ করে আজ প্রেমে পড়ে গেলাম।আপনার সাথে দেখা তো আমার আগেও হয়েছে।প্রীতির বিয়েতে।এক দিন না তাও প্রায় দুদিন হয়েছে। দুদিনে অনেক বার দেখা হয়েছে।আপনার ফ্যামিলিতে কি আছে কে আছে তাতে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।আমার মাথা ব্যাথা আপনার কি আছে? আপনি আছেন কি না?আমার এই আপনি টা হলেই চলবে আর কিছু লাগবে না।হোক না নীলা আন্টি আপনার খালামনি।কিন্তু আপনাকে তো সে তার ছেলের মতো বড় করেছে।নীলাভ ভাইয়া আপনাকে নিজের ভাইয়ের মতো বড় করেছে।তৌফিক আংকেল নিজের ছেলের মতো বড় করেছে।আপনি অনাথ না কি সেটা দিয়ে আমি কি করবো?আমি তো আপনার সাথে থাকবো। আমার তো আপনিটা লাগবে।

তাহসিন লিনার চোখে চোখ রাখলো।বেশ মজার সুরে বলে উঠলো,

-এখন যেই ভালোবাসা দেখাচ্ছো।তোমার এই হঠাৎ ভালোবাসা।এই ভালোবাসা পরে থাকবে না।নিজের শ্বশুড় শ্বাশুড়ির আদর পাওয়ার জন্য বেকুল হয়ে যাবে।আমার কিন্তু কখনো একবারো মনে হয় নি যে নীলা চৌধুরী আমার খালামনি। নীলাভ ভাইয়া আমার নিজের মায়ের পেটের ভাই না। তৌফিক চৌধুরী আমার খালু হয়।কিন্তু তোমার মনে হতেও পারে।কারন, মেয়েদের কৌতুহল বেশি।না পাওয়া জিনিসে আগ্রহ বেশি।এমন হতেই পারে, তুমি চাইতে পারো নিজের শ্বশুড় শ্বাশুড়ির আদর কেমন হয়?আমি তোমাকে জীবনের সব সুখ দিতে পারবো না।

তাহসিনের এই শান্ত কন্ঠটাতে যেনো কত তাচ্ছিল্যতা কত ব্যাঙ্গমা। লিনা তেজে উঠলো।সব মেয়ে কি এক হয় না কি?গোমট মেরে কপট রাগ নিয়ে সে কপাল কুচকিয়ে বলে উঠলো,

-আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
-সত্যি ভালোবাসো?
-সত্যি?
-পারবে তো মানিয়ে নিতে?
-অনেক বেশি পারবো।
লিনা আবার উতসাহের সহীত বলে উঠলো,
-তাছাড়া আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ওই বাড়িতে পারবো না মানে।একশোবার পারবো।

তাহসিন মৃদু হেসে বলে উঠলো,

-কোনোদিন কোনো অভিযোগ করবে না তো?কখনো তোমার এই হঠাৎ ভালোবাসাটাকে বাচ্চামো বলে মনে হবে না তো?অনেক বছর পরে এই হঠাৎ ভালোবাসাটাকে নিয়ে আপসোস করবে না তো?

লিনা তাহসিনের দিকে তাকিয়ে মিস্টি হেসে বলে উঠলো,
-কক্ষনা না।
-এভাবেও কি ভালোবাসা যায়?প্রথম বার কথা বলেই একদম বিয়ে?কীভাবে বলো তো?
-হম বাসা যায়। তোমাকে তো আমি প্রীতি আর নীলাভ ভাইয়ার মেহেন্দির রাতে দেখেই ক্রাস খেয়েছিলাম।ফিদা হয়েছিলাম।
-তাই কি?
-অনেক কিছু।
-ফিদা,ক্রাস আর ভালোবাসা কি এক?

-আস্তে আস্তেই সব হয়।তুমি জানো না মানুষের আগে ভালোলাগে তারপর আস্তে আস্তে প্রেমে পড়ে তারপর ভালোবাসে।তো সেই অনুযায়ী আমি প্রথম দিন তোমার উপর ক্রাস খেয়েছিলাম।মানে ভালোলেগেছিলো।তার পরের বার ফিদা হয়েছিলাম।মানে প্রেমে পড়েছিলাম।আর তারপরে আজ ভালোবেসে ফেললাম।

-এতো তাড়াতাড়ি কি কিছু হয় লিনা?
-হয় তো।
-কীভাবে?
-এই যে তুমি আমাকে কতো তাড়াতাড়ি আপনি থেকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে ফেললে আর আমিও হঠাৎ করে ‘আপনি থেকে তুমি’ তে এসে পড়লাম।এটা কি সহজ কথা বলো তো?

তাহসিন হেসে দিলো লিনার কথা শুনে।লিনা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-প্রথম ভালোলাগাটা তোমার এই হাসিটাই ছিলো।
-তাই?
-হম।
-আচ্ছা যাই হোক আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব কবে নিয়ে যাবে।

তাহসিন অবাক হয়।বিস্ময়ে বলে,
-এতো তাড়াতাড়ি? আমি ইন্টার্নি শেষ করি।তারপর।

লিনা আপসোসের স্বরে বলে উঠে,
-তাহলে আরো দু মাস অপেক্ষা।

তাহসিন দুষ্টু হেসে বলে,
-মনে হচ্ছে বিয়ের জন্য খুব তাড়া।

লিনা কানের পিছে চুল গুজে বসে,
-হম তো।
_________________________________

এক ফালি চকমকে চাঁদ উঠেছে।প্রীতির কোলে মাথা রেখে দোলনায় দুলতে দুলতে ছাদে চন্দ্রবিলাশ করছে নীলাভ।প্রীতি তার নরম হাতে পরম আদরে স্বামীর চুলে হাত বুলাচ্ছে।নীলাভের আরাম লাগছে।ঘুম এসে যাচ্ছে চোখের পাতায়।নীলাভ প্রীতির হাত টা টেনে ধরলো।হাতের পাতায় চুমু দিলো।নীলাভ উঠে বসলো।প্রীতি অন্যমনস্ক ছিলো।নীলাভের স্পর্শে সজাগ হলো ও।সচেতন দৃষ্টিতে নীলাভের দিকে তাকাতেই নীলাভ প্রীতির কোমড় আকড়ে প্রীতির কাধে মাথা রেখে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠে,

-ঘুম ধরেছে।

প্রীতি নীলাভের হাতের ভাজে আঙ্গুল ঢুকিয়ে বলে উঠলো,
-ঘুমান।
-ঘুম ভাঙাও আমার।এই সুন্দর সময়ে ঘুমাতে একটু ও ইচ্ছে করছে না আমার।

প্রীতি চিন্তিত স্বরে জবাব দিলো,
-কীভাবে ঘুম ভাঙাবো?
-আমি কি জানি?

নীলাভের ‘ডোন্ট কেয়ার ‘ ভাবে প্রীতি কপালে ভাজ ফেলে ভাবতে লাগলো।ভাবনা চিন্তা শেষে প্রীতি বলে উঠে,

-কফি খাবেন?

নীলাভের মুখটা থমথমে হয়ে গেলো।নীলাভ অন্যকিছু ভেবেছিলো।খুশির চিকচিক করা মুখটা মুহুর্তের মধ্যেই কালো হয়ে গেলো।সে গোমড়া মুখে উত্তর দিলো,
-না।

প্রীতির কপালে আবারো চিন্তার ভাজ।কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রীতি বলে উঠলো,

-আসেন গল্প করি ঘুম ভেঙে যাবে।

নীলাভের উত্তর আবারো ‘না’।প্রীতি বুঝতে পারলো না।এবার সে তেরা ভাবে বলে,

-ঘুম ভাঙলে ভাঙলো না ভাঙলে নাই।আমার কি?

নীলাভ ভ্রু কুচকে বলে,
-তোমার কিছুই না।

প্রীতি কাধ নাচিয়ে বলে,
-না আমার কি?আপনার সব সময় অদ্ভুত সময়ে অদ্ভুত সমস্যা হয়?
-তার মানে তুমি বুঝাতে চাইছো আমি অদ্ভুত?
-হম তাই।
-তুমি অদ্ভুত। মহা অদ্ভুত। চরম মাত্রায় অদ্ভুত।

প্রীতি ফুসে উঠলো আঙ্গুল তুলে বলল,

-আপনার চৌদ্দ গুষ্টি অদ্ভুত।

সাথে সাথেই নিজের মুখ চেপে ধরলো প্রীতি। গুষ্টি নিয়ে কথা বলাটা একদম উচিত হয় নি তার।

নীলাভ প্রীতির দিকে খানিকক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে অন্যদিকে দৃষ্টি রাখলো।প্রীতি ঠোঁট উলটে দিলো।টুপ করে নীলাভের গালে একটা চুমু খেলো।

নীলাভ থমকে গেলো।অবাক হয়ে প্রীতির মুখ পানে চেয়ে আছে। নীলাভ বিস্ময়ের চরম শিখরে।প্রীতি চুমু দিলো?
নীলাভ যেই প্রীতির দিকে ঘুরতে যাবে ওমনেই প্রীতি আরেকবার নীলাভকে চুমু দিতে এলো।সাথে সাথে প্রীতির ঠোট গিয়ে নীলাভের ঠোটে ঠেকলো।প্রীতি হকচকিয়ে গেলো।দিতে চেয়েছিলো গালে আর হয়ে গেলো ঠোঁটে।প্রীতি লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছে।মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে।নীলাভ থেকে সরে বসলো ও।দোলনা থেকে উঠে প্রীতি ছাদের রেলিং ধরে দাড়ালো।

নীলাভ নিজের আশ্চর্যতা কাটিয়ে উঠে প্রীতির দিকে এগিয়ে গেলো।প্রীতি রেলিং এ হাত দিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে।বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ আওয়াজ হচ্ছে।নীলাভ পেছন থেকে প্রীতিকে জড়িয়ে ধরে প্রীতির ঘাড়ে চুমু দিলো।প্রীতি কেপে উঠলো।চোখ খিচে বন্ধ করে রাখলো।সারা শরীরে অদ্ভুত এক শিহরন বয়ে যাচ্ছে।নীলাভ প্রীতির ঘাড়ে নিজের থুতনি রাখলো।প্রীতির পেটের উপর নিজের দু হাত রেখে দাড়ালো।

প্রীতি আবেশে চোখ বন্ধ করে আছে।নীলাভ প্রীতির কানে ফিসফিস করে বলল,

-ফাইনালি কিস টা তাহলে দিলে।আমি সেই কখন থেকে এটা চাইছিলাম।আর তুমি বারবার কফি খাওয়া, গল্প করা এসব নিয়ে পড়ে ছিলে।বিয়ের পরে তোমার থেকে পাওয়া এই প্রথম কিস। কেমন ‘অদ্ভুত ভালোলাগা’ বুঝাতেই পারবো না।

নীলাভের হাতের বাধন শক্ত হলো।প্রীতির পেটে হাত দিয়ে চেপে ধরলো।প্রীতি কাপছে ওর ঠোঁট কাপছে হাত পা কাপছে।সর্বাঙ্গে কাপন ধরছে।প্রীতি তো হুট করে চুমু টা দিয়ে ফেলেছিলো।ও তো এতো ভেবে চিনতে দেয় নি।প্রীতি কাপা কাপা গলায় বলে উঠে,

-ছাড়ুন কেউ দেখে ফেলবে।

নীলাভ আরো শক্ত করে প্রীতিকে ধরলো।প্রীতির কাধে পরপর দুটো চুমু দিলো।প্রীতি চোখ বন্ধ করে আস্তে করে বলে উঠলো,

-উফফ…এতো জোড়ে ধরছেন কেনো?আমার হাড্ডি মাংস তো এক হয়ে যাবে।

নীলাভ মুচকি হেসে প্রীতির গালে টুপ করে চুমু দিলো। হাতের বাধন হালকা করে বলে,

-কাল আমার জন্য বেস্ট একটা রাত ছিলো।

প্রীতি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।অন্যদিকে তাকালো।নীলাভের দিকে তার তাকানোর সাহস নেই।নীলাভের চোখ প্রীতির পিঠের তিলে গেলো।নীলাভ সেখানে চুমু দিলো।প্রীতি চোখ বন্ধ।শরীরে ভালোবাসারা দোলা দিয়ে যাচ্ছে।রগে রগে বইছে ভালোবাসারা।সব কিছুতে যেনো ভালোলাগা কাজ করছে।নীলাভ ফিসফিস করে আবারো বলে উঠে,

-আজ ও আরেকটা বেস্ট রাত বানাতে চাই।

নীলাভের ফিসফিস করে বলা কথা প্রীতির কানে বাতাস লাগছে।ফসফস শব্দ হচ্ছে।অন্যরকম অনুভূতি ভেতরে কাজ করছে।প্রীতির গাল লাল হয়ে উঠছে।লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছা করছে।

প্রীতি মাথা নিচু করে বিরবির করে, ‘এই লোকটা এতো কেনো লজ্জা দেয়?’

নীলাভ প্রীতিকে কোলে তুলে নিলো।প্রীতি ভয় পেয়ে যায়।চোখ মুখ কুচকে ফেলে। নীলাভের গলা জড়িয়ে ধরে। নীলাভ মৃদু হেসে প্রীতির কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,

-‘তুমি আমার অন্যরকম সুখ মায়া ভালোলাগা প্রেম ভালোবাসা’।আমার ‘হঠাৎ ভালোবাসা’।কখনো ছাড়বো না তোমায়।

প্রীতির মুখে তৃপ্ততার হাসি।ও নীলাভের গালে হাত রেখে বলে উঠে,

-আপনি যে এতো বদ দেখে কিন্তু বোঝা যায় না।মিনমিনে শয়তান একটা। গোমড়ামুখো মানুষরা বোধ হয় এমন মিনমিনেই হয়।

নীলাভ হাসলো।এক ঝাক ঝাকড়া চুল গুলো পেছনের দিকে এলিয়ে দিয়ে প্রীতির নাকে নাক ঘষলো।প্রীতি মিস্টি করে হাসলো।নীলাভ বলে,

-আর আপনি একটা ঝামেলা ঝগড়ুটে তারছিড়া পাগল ছাগল গাধা ক্যায়ারলেস।

প্রীতি নীলাভের কথায় বড় বড় চোখ করে গাল ফুলিয়ে বলে,

-আবার?আবার এই কথাগুলো বলছেন?নামান আমাকে। আপনার কোলে আমি উঠবো না।

নীলাভ ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বলে,

-আর নিজে যখন আমাকে বলেন তখন।

প্রীতি আবার গাল ফুলিয়ে বলে,
-তা ক্যায়ারলেস, গাধা, ছাগল, পাগল, ঝগড়ুটে, ঝামেলা মেয়ে বিয়ে করেছেন কেনো?

নীলাভ আবারো প্রীতির নাকে নাক ঘষলো।প্রীতি মুখ ঘুরিয়ে নিলো।নীলাভ হেসে বলে উঠে,

-এতো গাল ফুলাও কেনো?এই গাল ফুলানো আর ঝামেলা ছাড়া আর কি পারো তুমি?

প্রীতি আবারো গাল ফুলিয়ে উত্তর দেয়,

-এই সব কথা গুলো আপনি বান্দরবান এ বলেছিলেন।আর আজ আবারো বলছেন।

নীলাভ প্রীতিকে শক্ত করে ধরলো।বলে উঠলো,

-যেমন ই হয়। যতই তোমার নাম দেই।তোমার একটাই পরিচয়।তোমার আসল নাম একটাই। ‘তুমি আমার বউ’।’নীলাভের বউ’।’মিসেস নীলাভ চৌধুরী’।

প্রীতি হেসে উঠলো।নীলাভ প্রীতির কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকালো।প্রীতি এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে নীলাভের দিকে।এই ছেলের তার স্বামী হবে সে ভাবেই নি কখনো।হঠাৎ দেখা হওয়া ছেলেটা আজ তার স্বামী।ভাবতেই কেমন অদ্ভুত লাগে।সব স্বপ্ন লাগে।শরীরের শিরায় শিরায় উপশিরায় এই ছেলেটা মিশে রয়েছে এখন।কি অদ্ভুত!

চলবে❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here