___”আমি আপনাকে ভালোবাসি ‘আলুরদম’,ওপস সরি ‘অরিন্দম’ নানা ‘বরবাবু’!”
কথা বলে অনু লজ্জামাখা হাসি একটা দিল!আর অরিন্দম ক্ষিপ্ত নয়নে অনু’র মুখপানে চেয়ে রইল! সে মেয়েটাকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে আর পারছে’না! তাকে না বোঝাতে পারায় নিজের ওপরে হতাশ হলো অরিন্দম! মনে মনে রাগী ভাব আসলে ও মুখে প্রকাশ না করে গাম্ভীর কন্ঠে বলল,
____তোমার মাথা ঠিক আছে, কি আবোল তাবোল কথা বলছো,আর আমি কতবার বলবো! প্লিজ এসব করো না! একটু বোঝার চেষ্টা করো! এসব ঠিক না!
অনু ঠোঁট উল্টে ইনোসেন্ট ফেসে প্রশ্ন করলো,,
__”কেনো এসব ঠিক নয়?”
অরিন্দম একটু সিরিয়াস হয়ে আরো একবার বোঝানোর বৃথা চেষ্টা করে বলল,,
____ দেখো তোমার বয়স কতো,আই থিঙ্ক এইটিন! রাইট?আর আমার জানো? আমি তোমার থেকে গুনে গুনে ন’বছরের বড়ো,আর তাছাড়া আমি তোমাকে
অনু গোলাপী রঙের ওড়নার খুঁট আঙুলে পেঁচিয়ে ধরে লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলল,
___ তাতে কি হয়েছে,বরে’রা,তো বউদের থেকে বড়োই হয়!আপনি না হয় একটু বুড়ো হলেন,তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই! আমার মন খুব দয়ালু! আমি বুড়ো বর নিয়েই থাকবো!তাই আমার আপনাকেই চাই!
অরিন্দমের এবার মেজাজ তুঙ্গে ওঠে সে রাগী গলায় ধমকের সুরে বলল,,
___এই মেয়ে কতবার বলবো আমার কাছে এসব ভালোবাসা নিয়ে আসবে না!বাড়ি গিয়ে পড়াশোনা করো! যাও বলছি!
অনু ও রাগ দেখিয়ে দু হাত কোমড়ে দিয়ে কড়া গলায় বলল,,
__’যাবো না! কি করবেন আপনি,,?এই মাঠটা আপনি কিনে রেখেছেন? আর তাছাড়া এটা আমার গ্রাম! আমি কোথায় থাকবো না থাকবো এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার!
অরিন্দম বিরক্ত হয়ে বলল,
_’তাহলে আমি চলে যাব!বলে পিছনের দিকে ঘুরতে অনু তাড়াতাড়ি অরিন্দমের সামনে গিয়ে দুহাত দুদিকে বাড়িয়ে বলল,,
__”যাবেন না প্লিজ বরবাবু!”
অরিন্দমের মেজাজ বিগড়ে গেলো আবার আর এই মেয়েটা এত ঘাড় ত্যাড়া কেনো? কিছু বুঝতেই চায় না! সে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,,
_______”আমি তোমার কোন জন্মের বর হয়েছিলাম শুনি?”
অনু লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বলল,,
_____”কোন জন্মে হয়েছিলেন জানি না! কিন্তু এ জন্মের আপনি আমার একমাএ বর হবেন!”
অরিন্দম ডান হাতের দু আঙুল দিয়ে অনুর কপাল ঠেলে বলল,,
____আর ইউ ক্রেজি,আমি কতবার তোমাকে বলবো যে আমি–
অনু ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,,
_’জানি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন না! সমস্যা নেই আমি একাই আপনাকে ভালোবাসব! খুব ভালোবাসে আগলে রাখবো দেখবেন!হিহি করে হেসে মুখ চাপা দেয় সে!’
অরিন্দম চোখ মুখ লাল করে অনুকে কিছু বলতে যাবে পিছন থেকে কাউকে অনু’র নাম ধরে চিল্লাতে শুনতে পেল অরিন্দম! অরিন্দম পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখল অনুর মামাতো বোন তনুশ্রী সে পুকুরে ওপারে দাঁড়িয়ে বলল,
_’অনু তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয়! তুই কি ভেঙে এসেছি মা খুব রেগে আছে চট জলদি আয়! না হয় আরো রেগে যাবে!’
কথাটা শুনে অনু জিভ কামড়ে মাথায় হাত দিয়ে বললো,
____যা ধরা পরে গেলাম!
অরিন্দম ওর দিকে তাকাতে অনু হাসার চেষ্টা করে বলল,
_’হিহি আপনি থাকুন পরে কথা হবে ঠিক আছে আমি এখন আসছি! বলে দিল এক দৌড় ঘাসের মাঠ দিয়ে অরিন্দম তা দেখে বলল,
___আরে আস্তে যাও পরে যাবে তো!
অনু কথাটা শুনে দাঁড়িয়ে পিছন দিকে তাকিয়ে বলল,
_’আপনি আমার এত চিন্তা করেন আর বলেন আমাকে ভালবাসেন না! মিথ্যুক একটা!’
অরিন্দম বোকা বনে গেলো সে তেমন কিছু ভেবে বলেনি! অনু হেসে দৌড়ে যেতে যেতে বলল,,লাভ ইউ আলুর দম!
অরিন্দম আনমনে হেসে নিজের গন্তব্য দিকে এগিয়ে গেল!
_________
অরিন্দম গ্রামে এসেছে তার ফ্রেন্ড মৃন্ময় এর বিয়ের জন্য,ওরা এক অফিসে কাজ করে! মৃন্ময় ওকে জোর করেই বিয়ের একমাস আগেই গ্রামে নিয়ে এসেছে! অরিন্দমের ও অনেক দিন ছুটি কাটানো হয় নি তাই বেশি নাকচ না করেই গ্রামে চলে এসেছে, কিন্তু এসে যে সে এমন এক পরিস্থিতিতে পড়তে হবে সে কখনো কল্পনাও করেনি!মৃন্ময়ের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে প্রায় এক বছর আগে থেকে অনুর মামাতো বোন তনুশ্রীর সাথে,যেদিন অরিন্দম আর মৃন্ময় তনুশ্রী দের বাড়ি গিয়েছিল তনুশ্রীর সাথে দেখা করতে তখনই অনুর সাথে অরিন্দমের প্রথম দেখা হয়! অরিন্দম সোফায় বসে ছিল তখন!তনু আর মৃন্ময় কিছু কথা বলছিল,অরিন্দম একমনে বসে ফোন স্ক্রল করছিল তখনই অনু এসে কিছুক্ষণ অরিন্দম কে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে লোকটিকে সে তিনদিন আগেই দেখেছে কিন্তু চেনে না! তাই সে মৃন্ময় কে জিজ্ঞাসা করল ,
“জামাইবাবু উনি কে?”
মৃন্ময় হেসে বলল,
‘ওটা আমার ফ্রেন্ড অরিন্দম!’
অনুর সোজাসাপ্ট প্রশ্ন করে বলে,
_’ওনার বিয়ে হয়ে গিয়েছে?’
অরিন্দম চোখ তুলে অনুর দিকে তাকায় অনুর পরনে মিষ্টি রঙের সালোয়ার কামিজ, লম্বা চুল বেনি করে সামনের দিকে নিয়ে রেখেছিল, ফর্সা মুখে ঘামে ভিজে কয়েকটা চুল লেপ্টে ছিল কপালে,, অরিন্দম কিছুক্ষণ তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়!
মৃন্ময় স্বভাব সুলভ মজার ছলে হেসে বলল,
‘না হয়নি! তবে ভবিষ্যতে হবে হয়তো!’
অনু জুসের গ্লাস অরিন্দমের সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
‘এ নিন আলুরদম জুস খান!’
অরিন্দম চোখ তুলে আবার তাকায়!তাকে আলুর দম বলায় সে অবাক হয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে থাকে মৃন্ময় তনু ও!তনু উঠে দাঁড়িয়ে অনুর কাছে এসে বলল,
‘তুই কি সব বলছিস উনাকে!’
অনু ঠোঁট উল্টে বলল,
‘অরিন্দম কি করে বলবো? উনি তো আমার থেকে বড়ো!’
‘তুই দাদাভাই বলবি!’
অনু চিল্লিয়ে বলল,
‘কখনো না!’
সবাই ওর দিকে আবাক হয়ে তাকায়,,অনু লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
‘আপনি ঠোঁটে লিপস্টিক দেন?’
অরিন্দমের হাত আপনাআপনি নিজের ঠোঁটে চলে গেল তার ঠোঁট জোড়া মাত্রাতিরিক্ত লাল বলে সবাই থাকে এই কথাটাই বলে,,কিন্তু প্রতিবারই সে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে এবারও তার ব্যতিক্রম হল না! সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অনু বলল,
‘আপনার ঠোঁটজোড়া কেমন চেরি ফলের মতো! মনে .. কথা শেষ করার আগেই অলকা দেবীর কর্কশ কন্ঠ কানে ভেসে এলো! অনু গ্যাসে চা বসিয়ে এসে ভুলে গেছে,অনু আর এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে দিল দৌড়!
তনু একটু লজ্জা পেয়ে বলল,
‘আপনি কিছু মনে করবেন না প্লিজ!ও একটু এমন বাচ্চা বাচ্চা টাইপে! কেমন করে কথা বলতে হয় সেটাও জানেনা, মনে যা আসে তাই বলে দেয়!’
অরিন্দম জুসের গ্লাস রেখে বলল,
‘সমস্যা নেই আমি কিছু মনে করিনি!ওকে আপনারা কথা বলুন আমি বাইরে উঠানে আছি!’বলে সে বাইরে বেরিয়ে এলো!
____
অরিন্দম উঠানে নেমে চারিপাশে ভালো করে দেখছে এ বাড়িতে চারটে রুম আছে ছোটখাটো কিন্তু বেশ সুন্দর করে সাজানো পরিষ্কার সব! পুরো বাড়ি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা,, পেয়ারা গাছ আর কিছু ফুলের গাছ আছে, অরিন্দম এগিয়ে গেলো জবা গাছের কাছে ঠিক তখনই পিছন থেকে কিছু ভাঙার শব্দ হলো, কাঁচ ভাঙ্গার,, কৌতুহল নিয়ে সে এগিয়ে গেল রান্না ঘরে জানালার দিকে গিয়ে দেখলো অনু নিশব্দে চোখের জল মুছছে ওড়না দিয়ে! অরিন্দম ভ্রু কুঁচকে গেল তাকে কাঁদতে দেখে সে কৌতুহলী দৃষ্টিতে ভালো করে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলো অনুর ডান হাতটা অনেকটাই কেটে গিয়েছে, অরিন্দম মেঝেতে দেখলো কাচের গ্লাস ভাঙা সেগুলো তুলতে গিয়েই তার হাতে বিঁধে গিয়েছে,,অনুর মামী চোখ লাল করে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘একটা কাজ তুই ঠিক করে করতে পারিস না,,এমন শুভ দিনে কাঁচ ভাঙলি?’
অনু কাঁচ গুলো ডাস্টবিনে দিতে দিতে শক্ত গলায় বলল,
‘আমি কি ইচ্ছে করে গ্লাসটা ভেঙেছি!তাই যে আমাকে এত মুখ করছো?’
অলকা দেবী যেন তেতে উঠলেন সে দাঁতে দাঁত চেপে ধরলেন,
‘তোর এই মুখের উপর কথা বলার জন্য একদিন তুই আমার হাতে মার খাবি অনু!’
অনু কাঁচের টুকরো গুলো সব তুলে নিয়ে বলল,
‘কোনদিন না বলো মারবে কিন্তু একদিন ও যে মারলে না মামী তাই আমি ভয় পাবো না!’
বলে বেরিয়ে গেলো!
অলকা দেবী চুপ করে গেলেন,মেয়েটা ছোট থেকে উনার কাছেই মানুষ, একটু বেশি চঞ্চল আর দুষ্টু বলে উনি ধমকে ধমকে রাখেন! কিন্তু গোপনে খুব ভালোবাসেন তাকে! তাই হালকা উঁচু গলায় বললেন.. মলম লাগিয়ে নে হাতে!
অরিন্দম সরে এসে বাগানের এক সাইডে দাড়ালো, হঠাৎ মনটা তার ভারী হয়ে এল!অনু কান্না মাখা মুখ দেখে!
হঠাৎ তার পিছনে অনু এসে দাঁড়িয়ে বলল,
‘এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো আলুরদম?’
অরিন্দম পিছনে ঘুরে দেখলো অনু হাতে কিছু পাতা কাটা জায়গা দিচ্ছে,আর তার দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু তাকে বারবার আলুরদম বলায় সে বেজায় ক্ষেপে উঠলো গমগমে গলায় বলল,
‘তোমার থেকে আমি বড়ো অনেক তাই এসব উদ্ভট কিছু না ডেকে দাদাভাই বলে ডাকবে!’
মুখ ফটকা অনু বলল,
‘সবাই যদি দাদা হয় উনি হবে কে শুনি?’
অরিন্দম ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘উনি মানে?’
অনু একগাল হেসে বলল,
‘তনু দির সাথে আমার ও বিয়ে হয়ে গেলে কেমন হয় আপনার সাথে বলুন তো? আপনাকে আমার হেব্বি লেগেছে, আই থিঙ্ক লাভ অ্যাট ফাস্ট সাইট এটাকেই বলে!’
অরিন্দম চোখ বড়বড় করে বলল,
_’হোয়াট? কি সব বলছ কি তুমি?এখানে ভালোবাসা এলো কোথা থেকে এই তো জাস্ট পাঁচ মিনিট আগে আমাকে দেখেছো!’
__’সো হোয়াট? আই জাস্ট লাভ ইউ!’
#হবে-কি-আমার(2)💞
#writer_Ruhi-mondal
সূচনা পর্ব
#চলবে
[