হবে কি আমার পর্ব -০২

#হবে-কি-আমার(2)💞
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_2

সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে রক্তিম লাল হয়ে ঢলে পড়েছে! ঝাঁক ঝাঁক পাখির দল নিড়ে ফিরছে! আর অরিন্দম ও অনু বাড়ি চলে যাওয়ার পর সেও গন্তব্যের দিকে রওনা দিয়েছে! সেদিন অনু তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ায় অরিন্দম তখন ড্যাবড্যাব চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কোনো উত্তর না দিতে পেরে সে দ্রুত পায়ে ফিরে এসেছিল মৃন্ময় কে রেখেই সেখান থেকে, তারপর থেকেই মেয়েটা তাকে জ্বালিয়ে যাচ্ছে ভালোবাসি আর বিয়ের কথা বলে!অরিন্দম প্রথমে মজা ভেবে অতটা সিরিয়াস হয়নি কিন্তু দিন দিন অনুর পাগলামি বেড়ে যাচ্ছে তার প্রতি, সে গ্রামে কারোর সাথে কথা বললেই সন্ধিহান চোখে অনু তাকিয়ে থেকে অরিন্দম কে একা পেলে হুমকি দেয় যে একবার বিয়ে হয়ে যাক আপনাকে কোনো মেয়ের ছায়াও গায়ে পড়তে দেবো না.. এই বলে দিলাম! মাঝেমাঝে অরিন্দমের মন গলে যায় তার প্রতি কিন্তু মাঝেমাঝে কি যেনো ভেবে গম্ভীর হয়ে যায় সে! একবার ভাবে সে অনুকে নিয়ে ভাবলে মন্দ হয় না আবার নিজের মনকে জোড়ে ধম দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়! এসব ভাবতে ভাবতেই অরিন্দম মৃন্ময় দের বাড়ির সাইডে চলে এল! ভিতরে যেতে ইচ্ছা করছে না তার আবছা দিনের আলো আছে এখনো! সে তুলসী মঞ্চে থানের ওপর উঠে বসে!এখন তার কিছু ভালো লাগছে না! নিজের মনে মনে হাজার জনপনা কল্পনা করতে করতে ‌কেটে যায় কিছুক্ষণ নিরবতায়! এর মধ্যেই মৃন্ময় এসে তার পাশে বসে বলল,

“কি হলো অরি তুই কোথায় যেনো গিয়েছিলিস একা একা, চলে এলি যে?”

অরিন্দম হতাশ হয়ে বলল,

“আরে গিয়েছিলাম একটু গ্রামে পুকুরের পাড়ে কিন্তু আজও সেই একই রকম হয়ে ফিরে এলাম!”

মৃন্ময় হেসে বলল,

‘মেয়েটা তো ভালোই তাহলে তুই রাজি হচ্ছিস না কেন?’

অরিন্দম চোখ রাঙিয়ে বলল,

‘তুই পাগল হয়েছিস নাকি?ওর এসব পাগলামি আর আমি ওকে প্রশয় দিলে আরো পাগলামি শুরু করবে!’

“না রে আমার মনে হয় না যে এটা অনু’র পাগলামি! অনু তোকে সত্যিই পছন্দ করে কারণ আমি তনুশ্রীর কাছ থেকে জেনেছি অনু এমন ভাবে কাউকে প্রপোজ করেনি বা কারো সাথে এতটা কথা বলেনি! ও চঞ্চল এটা ঠিক আছে আর ওর অনেক বন্ধুবান্ধব আছে, সেটাও ঠিক আছে!কিন্তু ও কখনো দুষ্টুমি করে ও কাউকে ভালোবাসার কথা বলেনি! তোকে ছাড়া!’

অরিন্দম কিছুক্ষন নিরব থেকে বলল,

“এটা ভালোবাসা নয়, এটা ভালো লাগা! আজ ওর আমাকে ভালো লাগছে কাল নাও লাগতে পারে!হুট করে ভালোবাসা হয় না! ভালো লাগা হয়! বিষয়টা তুই বোঝ!’

‘সে তুই যাই বলিস আমি জানি তোর ও অনুকে বেশ ভালো লাগে!তাই জন্য তুই রোজ একা একা যাস ও আসবে জেনেও!এখন যখন দুজনের দুজন কে পছন্দ তাহলে প্রবলেমটা কিসের?ধীরে ধীরে ভালোবাসাটা না হয় তুই ওকে শিখিয়ে দিবি ভালোভাবে!’

অরিন্দম বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকে কারণ মৃন্ময় যা বলল ভুল বলেনি কারন অরিন্দমের ও সত্যি অনুকে ভালো লাগে কিন্তু অনুর উপর ডাউট হচ্ছে অনু এখন তাকে ভালোবাসে বলছে কিন্তু যখন অনু ম্যাচিউর হবে তখন অনুর ওকে ভালো না লাগতেও পারে!তাই ক্ষণস্থায়ী ভালোলাগার জন্য সারাজীবন পস্তাতে না হয় সেটা ভেবেই অরিন্দম পিছিয়ে আসছে আর অনুকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করছে!’

__________

আজ সোমবার শিবের বার,অনু প্রতি সোমবার শিবের মাথায় দুধ গঙ্গা জল ঢালে,আজ ও তার ব্যাতিক্রম হবে না!মামী তাকে বলেছে যে রোদে বাইরে না বার হতে মেয়েটা খালি মাথা ব্যাথা করে তাই তিনি বলেছেন আজ বেলপাতা ছাড়াই পূজো দিতে,বেল গাছ অনেকটা দূরে তাই এই রোদে যেনো সে না যায়! কিন্তু অনু তো অনু সে সুযোগ বুঝেই বার হয়ে পড়েছে রোদ্দুরে বেলপাতা পাড়তে আর এই সুযোগে অরিন্দম কে দেখার লোভে সকাল সকাল বেরিয়ে পরেছে, তনুশ্রী স্নান সেরে পূজোর আয়োজন করছে তার কিছুদিন পর বিয়ে বলে অলকা দেবী তাকেও বাড়ীর বাহিরে যেতে নিষেধ করেছেন!মা’র কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তনুশ্রী,সে চন্দন কাঠ ঘষছে তখন অলকা দেবী এসে বললেন,

কিরে মা তোর হয়েছে,আর অনু একবার আসুক তাকে বারন করলাম বেল পাতা আনতে না যেতে মেয়েটা আমার কথাই শোনো না!আজ আচ্ছা মত বকা দেবো!

তনুশ্রী হেসে বলল… তোমার বকা সে শোনার জন্য বসে আছে,ও ঘাড়ত্যাড়া যা যন চায় তাই করবে মা!

অলকা দেবী তপ্ত শ্বাস ফেলে বললেন,

‘সেই আমার কথা যদি কোনো দিন শুনতো একটু! যাই হোক পূজা সেড়ে কিছু খেয়ে নিবি আর তাকে ও খাইয়ে দিবি না হয় টনাকটনাক করে ঘুরে সেই দুপুর খাবে!’

তনুশ্রী হেসে বললো..’মা তুমি ওকে এত ভালোবাসো তাহলে ও সামনে কেন এত বকো আর সব সময় ধমকে ধমকে রাখো তুমি?’

তুই থাম যা মেয়ে ওকে প্রশ্রয় দিলে আরো মাথায় চেপে বসে,আর সাড়া দিন বাগানে ঘুরে বেড়াবে। তাই ওকে সব সময় ধমকে রাখতে হবে আমাকে!আর এবার আবার আমার বেশি চাপ পড়ে গেল তুই চলে যাবি ওই মেয়েটা আমাকে জ্বালিয়ে খাবে!

তনুশ্রী বলল,,’ মা অনুও যে কিছুদিন পরে চলে যাবে তখন কি হবে?’

অলকা দেবীর বুক ভারি হয়ে এল,এক মেয়ে চলে যাবে অত দূর আর অনু ও তাকে ছেড়ে চলে যাবে তিনি তো এটা ভাবেনি,অলকা দেবীর চোখ ছলছল করে ওঠে তিনি পলক ঝাপটে বললেন,

তোকে দূরে দিচ্ছি আর ওকে এ গ্রামেই রাখবো! বলে উনি চলে গেলেন!

তনুশ্রী চন্দন ঘষা থামিয়ে ভাবতে লাগলো অনু যে মন দিয়ে ফেলেছে একজন কে আর এটা পাগলামি না সেটা ও এতদিনে বুঝেছে, কিন্তু তার মা রাজী না হলে জেদি মেয়েটা কি করবে কে জানে!

___________

অনু একটা বড় লাঠি নিয়ে বেল গাছে ঝাপটা মারছে পাতা নেওয়ার জন্য, অনেকক্ষণ চেষ্টা করে বেশ অনেকটাই পাতার নিচে পড়েছে সে একটা একটা করে তুলে হাতের মধ্যে ঘটি তে নিয়ে নিল!পাতা নেওয়া শেষে একবার ভাবলো মৃন্ময় দের বাড়ির দিকে গিয়ে একবার উঁকি দিয়ে অরিন্দম কে দেখে আসবে তারপর আবার ভাবল অনেক বেলা হয়ে গেছে পূজোর জন্য অনেকটা দেরি হয়ে যাবে তাই সে মন বদলালো বিকালে দেখা করবে অতঃপর সে বেলপাতা নিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে দেখল অরিন্দম খেজুর গাছের গোড়ায় দাঁড়িয়ে থেকে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে! অনু তা দেখে এগিয়ে গেল কিন্তু অরিন্দম পলক ফেললো না! অনু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,

কি হলো আপনি এমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন কেন?আমাকে চোখে হারাচ্ছেন বুঝি!চলুন বিয়ে করে নিই!তখন মনপ্রাণ ভরে দিনরাত দেখবেন আমাকে! আমি কিচ্ছু বলবো না!

অরিন্দম অনুর কথায় ভড়কে গেল সে পরপর কয়েকবার চোখের পলক ফেলল, আসলে অরিন্দম অনুর দিকে তাকিয়ে তাকে এমন ভেজা চুলে আর অগোছালো লাল সাতা শাড়ীতে দেখে অন্য জগতে হারিয়ে গিয়েছিল কিন্তু সে ধরা পরে যাবে বুঝতে পারেনি!

অরিন্দম গলা পরিষ্কার করে বলল,

“এই রোদ্দুরে এখানে কি করছ?”

অনু ঘটির ভিতর পাতাগুলো অরিন্দম এর সামনে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে বলল,

“বেলপাতা নিতে এসেছিলাম! জানেন তো আমি শিব পুজো করি বেশি বেশি করে ভোলেনাথ মা পার্বতী কে অনেক ভালোবাসেন,তাই আমার বর ও আমাকে খুব ভালো বাসবেন,আর মনপ্রাণ দিয়ে পূজা করলে ভালো ফল হয়! আমার শিবের মতো বর হবে ঠাম্মিরা বলেন তাই জানি! কিন্তু আমি যে আমার বর পেয়ে গেছি জানেন! আচ্ছা বলুনতো আপনি কি শিবের মতো নেশা ভাং করেন যদি করেন এসব বাদ দিন, এসব চলবে না আগে থেকেই বলে দিলাম আমি ড্রিঙ্ক করা পছন্দ করি না!তাই আজকের পর থেকে ওসবে হাত ও দেবেন না! যদি দেন আপনার হাতা আমি কেটে ফেলবো!

অরিন্দম তাজ্জব ভাবে অনুর দিকে তাকিয়ে থাকলো,সে ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করেনি তার আগেই তাকে এত হুমকি দিচ্ছে এই মেয়েটা! অরিন্দম গমগমে গলায় বলল,

“তোমার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই!”

অনু চোখ পাকিয়ে বলল,

আমার কথা আপনি শুনতে বাধ্য বুঝেছেন? আমি আপনার অর্ধাঙ্গিনী হবো কথাটা মাথায় সেট করে নিন, বলে ঘটিটা কথা বলতে বলতে অরিন্দমের কপালে জোরে ঠুকে দেয় যা টাং করে আওয়াজ হয়, অরিন্দম মাথা ঘুরে ঘাসের উপর পড়ে! অনু জিভ কেটে নিচে বসে অরিন্দমের কাছে! সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না,সে তো মজার ছলে অরিন্দমের কপালে একটু ঠোকা মারতে চেয়েছিল কিন্তু প্রেশারটা একটু জোরেই হয়ে গিয়েছে। অনু নিচে বসে অরিন্দম কে ঝাঁকায় অরিন্দম সেন্সলেস হয়নি কিন্তু জোরে লাগায় সে নিজেকে সামলাতে পারেনি। অরিন্দম পিটপিট চোখে তাকিয়ে আবার চোখ বুঝিয়ে নেয়,অনু কি করবে না করবে ভেবে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো মৃন্ময় ওদের দিকেই আসছে তা দেখে অনু উঠে দাঁড়িয়ে দৌড় মৃন্ময়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, মৃন্ময় অনুকে এমনভাবে দৌড়ে আসতে দেখে বিচলিত হয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,

“কি হলো অনু এমনভাবে হাঁফিয়ে গেলে কেন? এত দৌড়াচ্ছিলেই বা কেন এই রোদে?”

অনু হাঁফাতে হাঁফাতে বলল,

_”তাড়াতাড়ি চলুন জামাইবাবু! আলুরদমের অটোকাট হয়ে ফিউজ উড়ে গিয়েছে!”

মৃন্ময় অনু কথার মানে বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করল,

_’ফিউজ উড়ে গেছে! অটোকাট হয়ে গিয়েছে এসব কি?’

অনু তাড়াতাড়ি করে বলল

_’আলুরদমের নড়াচড়া বন্ধ করে জ্ঞান হারিয়ে নিচে পরে আছে!এটাই বলছি!’

#চলবে

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন গল্পটা কেমন হয়েছে জানাবেন]

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here