হবে কি আমার পর্ব -০৩

#হবে-কি-আমার(২)💞
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_৩

মাথার ওপর সিলিং ফ্যান দ্রুত গতিতে ঘুরে চলছে, অরিন্দম চোখ বুজিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে! বাহিরে সূর্যিমামা ও তেজ দেখাচ্ছে, তীব্র গুমোট গরম রান্না ঘরে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছেন মৃন্ময়ের মা তমাসা দেবী! তিনি অরিন্দমের জন্য দুধ গরম করছেন,কারন মৃন্ময় বাড়ি ফিরে বলেছে অরিন্দমের ইলেকট্রনিক শকট লেগেছে ল্যাম্পপোস্ট থেকে তাই সে ছিটকে মাটিতে পড়ে যায় আর সেখানে ইট ছিল বলে কপাল ভুলে আলু হয়ে গিয়েছে, এছাড়া যে অন্য কোনো অজুহাত ছিল না বলার! সত্যি বলে দিলে সবাই কি ভাববে তাই!

অরিন্দম খাটের ওপর হেলান দিয়ে বসে আছে চোখ বন্ধ করে মৃন্ময় ঠোঁট চেপে হাসছে অরিন্দমের অবস্থা দেখে আর মৃন্ময়ের হাসি অরিন্দম ভালো করে বুঝতে পেরে বলল,

মৃন্ময় আমি এদিকে কপালে আলু নিয়ে বসে আছি আর তুই মজা নিচ্ছিস! দিস ইজ নট ফেয়ার ইয়ার!

মৃন্ময় হাসি থামিয়ে বলল,

কি করবো তুই বল,তোকে দেখে হাসি পাচ্ছে,আর মেয়েটা পারেও বটে আলুর দম বলতে বলতে সত্যি তোকে আলু বানিয়ে দিল!

অরিন্দম কপালে হাত রেখে বলল,

সিরিয়াসলি ইয়ার মেয়েটা পাগলি। কথা বলতে বলতে সাডেনলি আমার কপালে ঠুকে দিল এত জোরে তোকে কি বলবো!

মৃন্ময় হোহো করে হেসে বলল,

তুই দেখ ওর সাথে তোর বিয়ে হলে, ও তোর আর কি কি অবস্থা করে!

দরজা খট করে খোলার মাঝে অরিন্দম কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে যায় দরজা খুলে তমাসা দেবী হাতে গরম দুধ নিয়ে এগিয়ে এসে অরিন্দমের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,

নাও বাবা গরম গরম দুধ খেয়ে নাও না জানি কারেন্ট শর্ট খেয়ে কতটাক্ষতি হলো শরীরের এবার থেকে দেখে শুনে গ্রামের রাস্তায় চলাফেরা করবে কারণ আমাদের পোস্টারের এমনভাবে কারেন্ট লেগে থাকে!

অরিন্দম মাথা চুলকে সায় দিল তার বলার কিছুই নেই!তমাসা দেবী চলে গেলেন মৃন্ময় আবার হেসে বলল,

শর্ট লেগেছে তবে এইটা ইলেকট্রিক শকট নয় তবুও ফিউজ উড়ে গিয়েছিল!

অরিন্দম রেগে গিয়ে হাতে থাকা গরম দুধের গ্লাসটা মৃন্ময় উন্মুক্ত পায়ে চেপে ধরে বলল… ঠিক যেমন এখন তোর এখানে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে বিনা আগুনে পুড়ে ও!

_______________

পুজো সেড়ে দুই বোন রুমের মধ্যে বসে আছে, তনু চিন্তিত গলায় বলল,

তুই এমন পাগলামী কি করে করলি বোন একেবারে ওনার মাথা ফাটিয়ে দিলি?

অনু কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলল,

আমি ইচ্ছে করে ওনাকে আঘাত করিনি দি,ভুলবশত হয়ে গিয়েছে আর তাছাড়া ওনার মাথা ফাটেনি শুধু কপালটা ফুলে গিয়েছে, আমি বিকালে গিয়ে আমাকে সরি বলে আসবো!

সরি বলে আসবি এখন এর ঘটনার জন্য আর ওনাকে যে এতদিন জ্বালিয়েছিস তার জন্যেও!

অনু কান্না আটকে নাক টেনে বললো,

আমি ওনাকে জ্বালাচ্ছি না দি! আমি উনাকে সত্যি ভালোবাসি!

তনুশ্রী এগিয়ে গিয়ে অনুকে জড়িয়ে ধরলো সে মৃন্ময় কে বলেছিল যদি অরিন্দম রাজি থাকে তাহলে তনুশ্রী বাড়িতে কথা বলবে কিন্তু অরিন্দম বারবার কথা এরিয়ে যায় বলে তনুশ্রী আশাহত হয়ে পড়েছে,সে ধরেই নিয়েছে যে অরিন্দম তার বোন কে রিজেক্ট করবে বারংবার ,সে অনুকে বোঝাবার চেষ্টা করে বলল,

ভালোবাসা একপাক্ষিক হলে সেটা বেদনাদায়ক, আর উনি যেহেতু তোকে পছন্দ করেন না, ভালোবাসেন না, তাহলে তার কাছ থেকে সরে আসায় মঙ্গল!

অনু বাচ্চাদের মতো বলল,

উনি আমাকে ভালোবাসবে দি, ভালোবাসবে আমাকে!

তনুশ্রী বোন কে এমন দেখে আর কিছু বলতে সাহস পেলো না আর কিছুই বললেই অনু এখনই কাঁদতে শুরু করে দেব!সে তার বোনের কান্না সহ্য করতে পারে না তাই সে বলল,

সকাল থেকে কিছু খায়নি চল খেয়ে নিই!

অনু নাক টেনে কান্না আসবে বলল,

আমি বিকালে গিয়ে উনাকে এখনের ঘটনার জন্য স্যরি বলে আসবো,আর একবার জিজ্ঞাসা করবো উনি আমাকে চান কি না!

তনুশ্রী ওর হাত ধরে বাইরে যেতে যেতে বলল,

আর যদি এক উওর আসে তখন?

তাহলে আবার কাল জিজ্ঞাসা করবো!

তনুশ্রী হেসে ফেলল কারন অনু তাকে এই কথাটাই এই দুই সপ্তাহ বলে চলেছে সে আবার বলল,

তোর লজ্জা করে না বারবার ফিরে আসতে

অনু হেসে বলল,

ভালোবাসতে গেলে একজন কে নির্লজ্জ হতে হয় দি, আর ভালোবাসার মানুষের কাছে কিসের লজ্জা কিসের রাগ!

________

গোধূলি বেলা ঠান্ডা ফুরফুরে হাওয়া আসছে অরিন্দমের রুমের বড়ো জানালা দিয়ে সে জানালার দুই পাল্লা খুলে দিয়েছে, সেখান থেকেই সুন্দর শীতল হাওয়া এসে তার শরীর মন দুটোই চাঙ্গা করে দিচ্ছে, সে চোখ বন্ধ করে খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে কপালে ফোলাটা অনেকটাই কমে গিয়েছে কিন্তু গা তার ম্যাজম্যাজ করছিল বলে আজ বিকেলে আর ঘুরতে বেরোইনি সে! হঠাৎ রুমের দরজা খোলার শব্দের চোখ খুলে তাকিয়েই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল অরিন্দমের সে উঠে দাঁড়াতেই তাকে গিয়ে একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরলো, অরিন্দম একটু আন ইজি ফিল করলো,সে তাড়াতাড়ি করে তার দু’কাধে হাত দিয়ে সরানোর চেষ্টা করে বলল,

‘কলি তুমি এখানে এখন?’

মেয়েটা অরিন্দম আর মৃন্ময়ের সাথে এক অফিসেই কাজ করে,তিনজন খুব ভালো বন্ধু কিন্তু কলির এই মর্ডান ভাবটা অন্য সবার পছন্দ হলেও অরিন্দমের খুব একটা ভালো লাগে না, কিন্তু মেয়েটা মিশুকে বলে মেলামেশা করাটা বন্ধ করতে পারে না!

কলি হেসে অরিন্দম কে ছেড়ে বলল,

কেনো আমি আসতে পারি না বুঝি? কেমন সারপ্রাইজ দিলাম বলো?

অরিন্দম হেসে বলল,

সারপ্রাইজ টা খুবই শকিং ছিল কারন তুমি যে বললে এখানে বিয়ের দিন আসবে!

কলি দুহাতে ক্লাপ দিয়ে বলল,

আরে ইয়ার আমি জাস্ট দুদিনের জন্য এসেছি আবার চলে যাব বিয়ের দিনকে আসবো!

অরিন্দম ভ্রু কুঁচকে বলল… তাহলে আজ এলে কেন?

এখান থেকে কিছুটাই দূরত্বে আমার পিসিমণির বাড়ি উনার সাথে কিছু পার্সোনাল কাজ আছে সেজন্য আসা কিন্তু সন্ধ্যা নেমে যাওয়ায় আজ আর ওখানে যেতে পারব না কারণ ওই দিকের রাস্তা প্রচুর খারাপে তাই আজ এখানেই থাকবো!

ও দ্যাটস গ্রেট তাহলে আজ জমিয়ে আড্ডা দেয়া হবে!

কলি হেসে বলল,

ইয়াপ! এখন আমি যাই ফ্রেশ হয়ে আছি তার পর কথা হবে কথাটা বলে সে যেমন দ্রুত গতিতে এসেছিল যেমন দ্রুত গতিতেই রুম ত্যাগ করল!

অরিন্দম হেসে পিছন দিকে তাকাতেই চমকে উঠল, কারন জানালার গ্রিল ধরে অনু কেমন ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে এ দৃষ্টি আজ প্রথম দেখছে অরিন্দম!এই চোখে আজ দুষ্টুমি নেই আছে ক্ষোভ! অরিন্দম ধীর পায়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেল অনুর চোখ ছলছল করছে সে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

ওই মেয়েটা কে ছিল? আপনাকে জড়িয়ে ধরেছিল কেন?

অরিন্দম সত্যি বলতে গিয়েও থেমে গেল ভাবলো এই মোক্ষম সুযোগ মেয়েটা তার পিছু ছাড়বে তাকে নিয়ে আর পাগলামী করবে না! ছেলেমানুষী দূর হবে! তাই অরিন্দম জানালার গ্রিল ধরে বলল,

কেন বলোতো?

অনু কান্না আটকে বলল,

বলুন না কে ছিল!কেনো জড়িয়ে ধরেছিল?

ওই মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে!ও আমার…

অনু কম্পিত গলায় বলল

ও আপনার কি?

অরিন্দম থম মেরে গেল অনুর কন্ঠ শুনে বুকটা ধ্বক করে উঠলো তার! একটু কি বেশি বলে ফেললো সে!এতটা বাড়িয়ে না বললেও হতো। তাই সে কিছু বলতে যাবে আবেগী মেয়ে ছরছর করে কেঁদে ওঠে বলল,

আপনি আমাকে এত কষ্ট দিলেন অরিন্দম?এত কষ্ট দিলেন!আমি আর কখনো আপনার সামনে আসবো না! কখন আপনাকে ভালোবাসার কথা বলবো! না কখন না!

#চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here