হবে কি আমার পর্ব -০৪

#হবে-কি-আমার(2)💞
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_4

সন্ধ্যা নেমেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো জোৎস্নার আলোআঁধারিতে সরু রাস্তা দুপাশের গাছগাছালির ঝাঁপিয়ে এসে অরিন্দম খোলা মাঠের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে! সে সামনে মন্দিরে সন্ধ্যাআলতি দিকে তাকিয়ে মন্দিরের আশেপাশে দেখছে, তার দৃষ্টি খুব গভীরভাবে কাউকে খুঁজে চলেছে ব্যাকুল হয়ে পড়েছে সে, কিন্তু না সে যার জন্য এসেছে তার সন্ধান পাওয়া গেল না!তার মানে আজ তার জন্য মেয়েটা সত্যি সত্যি মন খারাপ করে ঘরে বসে আছে! অরিন্দম গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ির দিকে রওনা দিল,তখন অনু এমনভাবে কেঁদে চলে আসায় তার কান্না মাখা লাল মুখ দেখে অরিন্দমের বুকে হঠাৎ করেই মোচড় দিয়ে উঠলো কেমন চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করতে লাগলো সে, তার উচিত হয়নি মেয়েটার মন ভাঙার, তাকে কষ্ট দেওয়ার,তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় ও মিথ্যা বলেছিল তখন তাকে বলে দেবে এখানে এসে,কারন অরিন্দম জানে অনু রোজ সন্ধ্যা আরতি দেখতে আসে। অনু প্রতিটি কাজ তার স্বভাবসুলভ কথা বলা সব সময় হাসা ছোট ছোট বাচ্চাদের পিছন থেকে চুল ধরে টেনে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া সে মুখস্ত করে নিয়েছে অরিন্দম আর সে অনুকে আরো একটি বার দেখার লোভটা সামলাতে পারে না। তাই রোজ ছুটে চলে আসে লুকিয়ে তাকে দেখার জন্য! সে জানে না এটা কেন করে সে, হয়তো সে জেনেও জানতে চায় না, শুধু মেয়েটার দুষ্টু মিষ্টি কান্ডকারখানা দেখতে তার ভালো লাগে,আর আজ তাকে না দেখতে পেয়ে আজ বুঝছে সে মেয়েটার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে মারাত্মক ভাবে ফেসে গিয়েছে সে! তাই তার কান্না দেখে নিজের মনে ছটফটানি অনুভব করছে সে!

_________

আবেগী অনু তনুশ্রী কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে চলেছে বাড়িতে ফিরেই, তনুশ্রী বোনের কান্না দেখে সে ও সমানে কেঁদে চলেছে বিনা কারন জেনেই,তার বোন তার কাছে সব!সে বোনের একটুও কান্না সহ্য করতে পারে না। তাকে কাঁদতে দেখলে নিজেও কেঁদে দেয় সেই ছোট্ট থেকেই তার থেকে অনু চার বছরের ছোট। তনুশ্রী যখন দশ বছরের ছিল তখন একদিন খবর এল অনুর মা বাবা কি যেন ছোঁয়াচে রোগে হয়েছে,তখন তনুশ্রীর বাবা মহেশ বাবু তাদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে অনুকে নিজেদের কাছে রাখে কিন্তু তার মা বাবা এক ঘন্টা পর পর মারা যায়, ছোট্ট অনু তখন মৃত্যু মানে বুঝত না কিন্তু প্রায় মা বাবার কাছে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করত আর তার কান্না দেখে তনুশ্রী যখন কেঁদে ফেলত অনু তখন কান্না ভুলে দিদির কোলে উঠে গলা জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে খেতে বলত,

কাঁদে না সোনা দিদি আমার তোকে আজ আমার পুতুলের বরের সাথে বিয়ে দেব!

দুই বোনের একেঅপরের কান্না সহ্য করতে পারে না, ঠিক এখন তাই হলো অনু তনুশ্রীর কান্না বুঝতে পেরে কান্নারত কন্ঠে বলল,

_তুই কেন কাঁদছিস দি?

তনুশ্রী নাক টেনে বলল,

_তুই কান্না থামা আমি আর কাঁদবো না!

অনু আরও কাঁদতে কাঁদতে বলল,

_আমি কান্না থামাতে পাচ্ছি না, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে দি!

তনুশ্রী ওকে ছাড়িয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিতে দিতে বলল,
_কেন কাঁদছিস বল না বোন?

অনু হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে তনুশ্রী কে সব বললো সব শুনে তনুশ্রীর মনে খটকা লাগলো কারন ও মৃন্ময় কে অনেক বার জিজ্ঞেস করেছে অরিন্দমের জীবনে কেউ আছে কিনা কিন্তু ততবারই উওর না এসেছে,সে সব সময় মেয়েদের থেকে দূরে থাকে! তাহলে? তনুশ্রী অনুর দিকে তাকিয়ে দেখল তার চোখ মুখ কুচকে গেছে তনুশ্রী বুঝতে পারলো তার মাথা যন্ত্রনা শুরু হয়েছে সে তাড়াতাড়ি উঠে ঔষধের বাক্স থেকে দেখে মাথা ব্যাথা ঔষধ নিলো অতঃপর সে টেবিলের উপর থেকে জলের গ্লাস নিয়ে অনুর কাছে বসে চিন্তিত কন্ঠে বলল,

_কতদিন ওষুধ খাসনি বলতো!মা দেখলেই বকবে ওষুধের পাতা পুরো ভর্তি!

অনু পিটপিট করে তাকিয়ে নিজের দি’র চিন্তিত মুখশ্রী দেখে হালকা দুর্লভ হেসে হা করলো নিয়ম মতো তনুশ্রী তাকে প্রত্যেক বারের মতো নিজ হাতে ওষুধ দিয়ে জল খাইয়ে দেয়,অনু ছোট বাচ্চা মত তা খেয়ে বলল,

_আমার মাথা ব্যাথা আর করে’না তাই ওষুধ খাইনা, কিন্তু আজ খুব করছে!

তনুশ্রী ওকে ধরে বালিশে মাথা ঠেকিয়ে বলল,

_বেশি চিন্তা করতে হবে না সব ঠিক হয়ে যাবে! আর পরের জন্য নিজের শরীর খারাপ করার কোনো মানে হয় না!

অনু চোখ বুজিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলল,

_কিন্তু আমার যে উনাকে আপন মনে হয় দি!

তনুশ্রী কিছুক্ষণ বোনের দিকে তাকিয়ে থাকে অতঃপর সে দু হাতে অনুর কপাল আলতো ভাবে টিপে দিতে লাগলো,অনু চোখ মুখ কুঁচকানো কমলো! তনুশ্রীর এটা অভ্যাস অনুর যখন মাথা ব্যাথা করে সে রাতের পর রাত জেগে বোনের সেবা করে!

মাঝরাতে অনুর জ্বর আসে অলকা দেবী তার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন তনুশ্রী জল পট্টি দিয়ে চলেছে অনবরত,অলকা দেবী চিন্তিত কন্ঠে বললেন,
_হ্যাঁ রে মা মেয়েটার হঠাৎ করে জ্বর এল কেনো,ও কি কান্নাকাটি করেছে, কাঁদলেই তো ওর জ্বর মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়,ও ওষুধ গুলো নিয়ম মত নেয় তো?কিছুদিন পর সময় মতো তোর বিয়ের পর ওকে শহরের ভালো ডাক্তার দেখাবো!

তনুশ্রী চুপ করে গেল বোনটাকে নিয়ে তার দুশ্চিন্তার শেষ নেই !সে জলপট্টি বাটিতে রেখে বলল,

_মা তোমরা গিয়ে শুয়ে পড়ো,ওর এখন জ্বর নেমেছে আমি আছি ওর কাছে!

মহেশ বাবু দরজার কাছ থেকে বললেন,
_ওর জ্বর বাড়লে আমাদের ডাকবে,একা একা সব করতে যেওনা!

তনুশ্রী মাথা নাড়াল,অলকা দেবী রুম ত্যাগ করলেন!

তনুশ্রী অনুর গায়ে কাঁথা ভালো করে জড়িয়ে দিয়ে ফোনটা নিয়ে জানালার কাছে চলে যায়, তাকে সত্যিটা জানতে হবে!

_____________

সূর্য তখন পূর্ব আকাশে নিজের রাজত্ব করে ফেলেছে, তার তেজে গাছপালা ও যেনো নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়ে ঝিমিয়ে পড়েছে,জনমানবের তো আর দেখার অবস্থা নেই ঘামে ভিজে যাচ্ছে বারংবার শরীরের পরিহিত বস্তু, ঘড়িতে এখন বেলা এগারোটা অরিন্দমের কাল রাত হয়েছে ঘুম ধরতে এক কথায় সে ভোর রাতেই ঘুমিয়েছে!তাই লেট হচ্ছে ঘুম ভাঙতে সিলিং ফ্যানের হাওয়ায় সে ঘুমিয়ে আছে শান্তি তে কিন্তু হঠাৎ ইলেকট্রনিক চলে যাওয়া তার ঘুম ভাঙে,গরমে বিরক্ত হয়ে উঠে বসে সে অতঃপর লম্বা একটা হাই তুলে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই একটা ঝটকা খেল,মনের ভুল ভেবে সে দুহাতে চোখ কচলে নিল অতঃপর সে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নারী মূর্তি টা সত্যিই উপলব্ধি করলো, তার সামনে কোমড়ে দু হাত দিয়ে চোখ পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনু!

অরিন্দম চরম বিস্মিত হয়ে রইল তাকে এখানে দেখে কাল যেভাবে কেঁদে কষ্ট পেয়ে সে গিয়েছিল সে তো ভেবেছিল অনু তার সামনেই আসবে না! আর আর তার সরি বলা ও হবে না!কিন্তু অনুকে এখন দেখে তার মনটা উৎফুল্লিত হয়ে উঠল, সকাল শুরু হলো তার এই মিষ্টি মুখটা দেখে, অরিন্দম গোপনেই হেসে উঠলো,সে ঠিক করে নিয়েছে মেয়েটাকে সে আর ফিরিয়ে দেবে না,তাই সে কিছু বলার উদ্ধত্য হতেই হঠাৎ করে বাহির থেকে কলি’র চিৎকার কানে আসে আর তা শুনেই অনুর মুখে রাজ্যের হাসি ফোটে !অনু ভাব দেখি বলল……যান গিয়ে আপনার ফুলকলি’ আনারকলি সে যাই হো তাকে গিয়ে দেখুন তার কি সর্বনাশ হল!

অরিন্দম অনুর কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল নিশ্চয়ই মেয়েটা বড়সড় কোনো ব্লাডার করে তার সামনে এসেছে সে তাড়াতাড়ি করে খাট থেকে নেমে অনুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,

_কি করেছ তুমি ওর সাথে?

অনু হিহি করে হেসে বলল,

_সব জামা কাঁচি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে দিয়েছি!এটা আপনাকে জড়িয়ে ধরার শাস্তি!আর আপনারটা তোলা রইলো একবার বিয়েটা হয়ে যাক! কড়ায়-গণ্ডায় শাস্তি পাবেন আপনি! আমাকে কাঁদানো! আমাকে মিথ্যা বলার! সবকিছুর ভয়ঙ্কর শাস্তি দেবো আপনাকে!এই বলে দিলাম!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here