#হিংস্রতার আড়ালে থাকা ভালোবাসা
#part:12
#Writer:Jeba
🌼
-সায়ন তুই আমাকে ভালোবাসিস?
হিয়ার কথায় চমকে উঠল সায়ন।
-হুম,,,
-কবে থেকে?
-মেডিক্যালে পড়াকালীন আমি বুজতে পেরেছি আমি তোকে খুব ভালোবাসি।
-সায়ন তাহলে কি রিহান ও একসময় বুঝতে পারবে ও আমাকে ভালোবাসে?
-কি????
।
নদীর ধারে বসে কথা বলছে হিয়া আর সায়ন।
।
-হুম,,,আমি নিজেই ওর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি।যখন ও আমাকে হিংস্রতার চোখে দেখতো তখন ও আমি ওর চোখে হিংস্রতার আড়ালে ভালোবাসা দেখতে পেতাম।এতোদিন ও হিংস্রতার জন্য নিজের আড়ালে চেপে রাখা ভালোবাসা টা বুঝতে পারে নি কিন্তু আজ যখন সময় হলো বুঝার তখন ও ঐ সময় টা কেই প্রাধান্য দেয় নি।
।
-তুই কেন সাইন করলি হিয়া ডিভোর্স পেপারে?
-কখনওই করতাম না কিন্তু যখন দেখলাম ডিভোর্স পেপারে ওর সাইন তখন আমার হৃদয় টা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল।পাথর হয়ে গেল মন।অভিমানে জমে গেলো আমার মনটা।
।
-তাহলে তুই কিভাবে বুঝলি ওর হিংস্রতার আড়ালে তোর জমা আছে ভালোবাসা ?
-ওকে ভালোবাসি বলেই বুজেছি।ও হয়তো একদিন বুঝবে সেই সময় টা হয়তো আর ওর কাছে ধরা দিবে না।
-কি বলতে চাইছিস তুই হিয়া?
-কিছু না।ক্ষমা করে দিস আমাকে সায়ন।কখনওই বুঝতে পারি নি তোর ভালোবাসা টা।সবসময় ভালো বন্ধুই ভেবেছি তোকে।
।
-ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই রে।এমন তো না যে আমি তোকে ভালোবেসেছি বলে তুই আমাকে ভালো বাসতেই হবে।
-সত্যিই এমন টা না রে।তবুও আমাদের মন টা সবসময় চাই যাকে আমরা ভালোবাসি সে ও যেনো আমাদের ভালোবাসে।
।
-হিয়া এখন কি করবি?
-আমাকে একটু সাহায্য করবি সায়ন?
-বল,,,,,,
-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
-কি বলছিস তুই এইসব হিয়া?
-তুই শুধু এতটুকু সাহায্য করে দে প্লিজ।
-ওকে।
।
।
🌼
কেমন লাগছে আজ ভালোবাসার মানুষ টা কে দূরে সরিয়ে দিয়ে?
(মায়ের কথায় মায়ের দিকে ফিরে তাকালো রিহান )
-আমার ভালোবাসার মানুষ টা সেই কবেই হারিয়ে গিয়েছে।
-তাহলে হিয়ার জন্য কষ্ট হচ্ছে কেন?
-আমার কেনো কষ্ট হবে মা?হিয়া কে তো আমি নিজের ইচ্ছায় ডিভোর্স দিয়েছি।
-মেয়ে টা কে বিনা দোষে শাস্তি দিয়েছো।আজ বিনা দোষে তার ভালোবাসা টা কে ও গলা টিপে হত্যা করে এসেছো?
-হিয়া একা আমাকে ভালোবেসে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে দূরে থাকাই ভালো।আমি ওকে ভালোবাসি কিনা তাও জানিনা আমি।
-হয়তো কখনও বুঝতে পারবে কিন্তু দেরি যেন না হয় সেই দোয়া করি।হিয়ার মতো ভালোবাসার মানুষ কে যেনো হারিয়ে না ফেলো।
কথাটা বলে সাথেই সাথেই চলে গেল রিহান এর মা।
।
।
নিজের রুমে এসে রিহান বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।সেই সময় তার নজর পড়ল পাশে থাকা তার আর হিয়ার বিয়ের ছবি টা তে।ছবি টা হাতে নিয়ে এক পলক দেখে সে আবার রেখে দিলো।
।
চোখ বন্ধ করতেই সে যেন এক পলক দেখতে পেল হিয়ার মুখ টা।
পাগল হয়ে গেলি রিহান চোখ বন্ধ করে কেউ কাউকে দেখতে পারে নিজের অজান্তেই বলল সে।
আবার চোখ বন্ধ করে ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলো সে।বিকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের আনমনেই সে হিয়া কে খুঁজতে লাগল।রুমে না পেয়ে ছাদে গেল হিয়ার খুঁজে ।পরক্ষণেই মনে হলো সে নিজেই তো আজ হিয়া কে ডিভোর্স দিয়ে বলে এসেছে নতুন একটা জীবন শুরু করতে।কিন্তু এখনও সে বুঝতে পারছে না কেন সে খুঁজছে হিয়া কে।
।
।
🌼
একমাস পর,,,,,
প্রিয়ার কবরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে চোখের জল ফেলছে রিহান ।এই চোখের জল কষ্টের সাথে সাথে খুশির ও।হেহ,,,এতদিনে সে উপলব্ধি করতে পেরেছে ভালোবাসে সে হিয়া কে।এই একমাসে একদিন ও দেখা হয় নি তার হিয়ার সাথে।এই এক মাসে সে বুঝতে পেরেছে প্রিয়ার মতো হিয়া ও দূরে যাওয়াতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার ।
আজ সে যাবে তার হিয়া কে তার জীবনে ফিরিয়ে আনতে।কিন্তু বড্ড ভয় হচ্ছে তার হিয়া তাকে ফিরিয়ে দিবে না তো।আর তার সবচেয়ে বেশি ভয় কাজ করছে ঐদিনের বলা কথা টাই যে নতুন জীবন শুরু করতে বলেছিল সে হিয়া কে।তবে হিয়া কি শুরু করে দিয়েছে তার নতুন জীবন সায়ন এর সাথে?না এমন টা হলে এইবার মরেই যাবে রিহান।
।
।
হিয়া কে ফিরিয়ে নিতে হিয়াদের বাসায় এসেছে রিহান।হিয়ার বাবা রিহান কে দেখে বলতে শুরু করল,,,,
-কেন এসেছ এই বাড়িতে? আমার মেয়ে টা কে এতো কষ্ট দিয়ে ও স্বাদ মিটে নি?
হামিদ সাহেবের পায়ে ধরে বসে পড়ল রিহান।আজ সে যতই ক্ষমা চায় না কেন হিয়া কে দেওয়া কষ্টের কাছে খুব কম হবে এই ক্ষমা চাওয়া টা।
হামিদ সাহেব রিহান কে উঠিয়ে বলল,,,
-আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে কি হবে বলো?যাকে কষ্ট দিয়েছ সে তো ক্ষমা করে দিছেই তোমায় এক মাস আগেই কিন্তু ওর মনে যে ছিলো বড্ড অভিমান ।খুব ভালোবাসত আমার মেয়ে টা তোমাকে।ওর সাথে এতোকিছু করার পর ও ও তোমাকে খুব সহজেই ক্ষমা করে দিল ভালোবাসে বলে।কিন্তু নিজেকে খুব দূরে ঠেলে দিল সবার কাছ থেকে।
।
।
-মানে?হিয়া কোথায় বাবা?আমি বুজতে পেরেছি আমি খুব ভালোবাসি ওকে।আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।প্লিজ আমি ওকে আমার জীবনে চাই।
-চলো আমার সাথে।
-কোথায়?
-হিয়ার কাছে নিয়ে যাবো তোমায়।
হামিদ সাহেবের কথায় খুশি তে ভরে গেল রিহান এর মন টা।আজ সে ফিরে পেতে যাচ্ছে তার হিয়া কে যেভাবেই হোক ফিরিয়ে আনবে আজ হিয়া কে তার জীবনে আর প্রকাশ করবে হিয়ার কাছে হিংস্রতার আড়ালে ভালোবাসা।
।
।
🌼
হামিদ সাহেবের গাড়ি এসে কবরস্থান এর কাছে থামল।গাড়ি এইখানে থামায় রিহান কেমন যেন থমকে গেল।
-আমরা এইখানে এসেছি কেন বাবা?
-তোমাকে তোমার হিয়ার কাছে নিয়ে এসেছি।
।
হামিদ সাহেবের কথায় রিহান এর মনে হলো তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে ।
-হিয়া এইখানে থাকবে কেনো?
-একমাস আগে হিয়া তোমার থেকে দূরে যাওয়ার ডিসিশন নিয়েছিল।এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় ওদের গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছিল।তখন,,
-তখন কি বাবা?
হামিদ সাহেব চোখের জল মুছে বলল,,,হিয়া নিজের স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলে আর সায়ন মারা যায়।
।
-বাবা তুমি এইখানে কি করছো?
হিয়ার ডাকে রিহান হিয়া কে দেখে শক্ত করে জরিয়ে ধরল।হিয়া এক ঝটকায় রিহান কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।আর তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
-কে ওনি আর আমাকে জরিয়ে ধরার সাহস হলো কিভাবে?
রিহান হিয়ার কাছে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন হামিদ সাহেব রিহান কে বলল,,,,
-তুমি যদি হিয়া কে কিছু বলতে যাও হিয়া তা শুনে ব্রেইনে খুব আঘাত পাবে ।এতে হিয়ার স্মৃতি থেকে বাকি সবকিছু মুছে যাবে।
হিয়া সায়ন এর কবর দেখতে এসেছিল ।রিহান এর কথা কিছুই মনে নেই তার।হামিদ সাহেব হিয়া কে নিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেল।
।
।
রিহান সেখানেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল আর বলতে লাগল,,,,,
-এই সবকিছুর জন্য আমি দায়ী।ঐদিন এমন না হলে আজ আমার হিয়ার এই অবস্থা হতো না।আমার হিয়া আজ আমার বুকে থাকত।কিন্তু যেই হিয়া আমাকে ভালোবাসত সেই হিয়াই আজ আমাকে চিনতে পারছে না।এই সবকিছুর জন্য আমি দায়ী।আমি আমার কর্মের শাস্তি পাচ্ছি আজ।মা ঠিকি বলেছিল আমি যেনো বড্ড দেরি করে না ফেলি বুঝতে ।মা আমি আজ বড্ড দেরি কে ফেলেছি।আমি আজ হারিয়ে ফেলেছি আমাকে যে ভালোবাসত সেই হিয়াকে ।বড্ড দেরি করে ফেলেছি বুঝতে,,,,আমার হিংস্রতার আড়ালে হিয়ার জন্য লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা কে বুঝতে ।
।
রিহান পাগলের মতো চিৎকার করছে আর বলছে,,,,
হিয়া আজ বন্ধ হয়ে গেছে সব রাস্তা ।আর অপ্রকাশিত রয়ে গেল আমার হিংস্রতার আড়ালে ভালোবাসা।
🌼
(সমাপ্ত )
।
।
(সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না মানুষের ভুলে।কিছু কিছু ভালোবাসা অপূর্ণ রয়ে যায় বুঝার ভুলে।।।।
জানিনা কেমন হয়েছে ।আর আপনাদের কেমন লাগবে সেটাও জানিনা।বাট যতটুকু পেরেছি ভালো ভাবে লিখার চেষ্টা করেছি।ভালো থাকবেন সবাই।আর আমার জন্য দোয়া করবেন।আর খুব ভালোবাসা রইল আপনাদের প্রতি ভালোবেসে আমার গল্প গুলো পড়ার জন্য )