হিয়ার মাঝে পর্ব -০৯

#হিয়ার_মাঝে
#পর্বঃ৯
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

২০,
মায়ের প্রশ্নে তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলো না হিয়া। উপস্থিত সকলের দিকে তাকিয়ে বললো,

” ব্যক্তিগত কথা, সেটা একান্তই বলা উচিত মাম্মা৷ আমি রুমে যাচ্ছি। পরে বলবো। ”

কথাটুকু বলেই হিয়া নিজের রুমে চলে যায়। রাদ সহ সকলেই একটু অবাক হয়। এ ক’দিনের পরিচয়ে হিয়াকে এতোটা গম্ভীর দেখেনি তারা। নাতাশা ইহসাসের ঘাড়ে হাত দিয়ে চিন্তিত মুখে বললো,

” কেস টা হলো কি ভাইয়া? ”

” জানিনা। ”

ইহসাস নিরস মুখে উত্তর দেয়। মিসেস অন্তরা সকলের সামনে মেয়ের এমন রুড বিহেভিয়ারে অসস্তিতে পরেন। তিনি সকলের দিকে তাকিয়ে বলেন,

” তোমরা খাও, আমি আসছি। কিচেনে একটু কাজ আছে। ”

মিসেস অন্তরা চলে যেতেই ইহসাস উঠে হিয়ার রুমে দিকে চলে যায়। আনিকা চট করে ইহসাসের পিছু পিছু গিয়ে হিয়ার রুমের কাছাকাছি জায়গায় ইহসাসের মুখোমুখি দাড়ায়। রাদ আর নাতাশা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে ব্যাপারগুলো বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু কি হচ্ছে এসব! বোধগম্য হচ্ছে না তাদের। আনিকা ইহসাসের সামনে দাড়াতেই ইহসাস বললো,

” পথ আটকে দাড়ালে কেনো ভাবী মনি?”

” এটা হিয়াদের বাসা ইহসাস। তোমার বেডরুম নয়, যে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলে, আর হিয়াও তোমার বউ নয় যে হুটহাট তার রুমে ঢুকে যাবে৷ তাওই মশাই আর মাওইমা টের পেলে উনারা কি চোখে দেখবে! ভেবেছো? ”

ইহসাস আনিকার কথাটা বুঝতে পারলো। সে তবুও নাছোড়বান্দার মতো আনিকার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে,

” কিন্তু ভাবী! হিয়া ঘুরতে যাবে বলে চলে যেতে চাইছে! আমরা যাবো কি যাবো না! এটা তো জানা দরকার। এরপর না তুমি আংকেলের কাছে বলবে। ”

” আমাকে দুইটা দিন সময় দিন, এরপর আমি জানাবো আমি দেশে আছি, নাকি চলে যাচ্ছি। থাকলে ঘুরতে আমি অবশ্যই যাবো। আমি আমার মাতৃভূমির কিছু দেখিনি আজ অব্দি। ”

হিয়ার গলার স্বরে কথাটুকু শুনে হিয়ার রুমের দিকে তাকায় ইহসাস। আনিকাও মাথা ঘুরিয়ে তাকায়। হিয়া রুমের দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে বুকে হাত বেঁধে। ইহসাস সেদিকে খেয়াল না দিয়ে, আনিকার দিকে তাকালো। চোখের ইশারায় বুঝালো তাকে চলে যেতে। আনিকাও বুঝলো ইহসাসও জেদি, হিয়ার সাথে কথা না বলে যাবেনা এখান থেকে, তো সে কথা বলবেই। আনিকা যেভাবে এসেছিলো, সেভাবেই চলে গেলো। আনিকা চলে যেতেই হিয়া ভ্রুকুটি করে তাকালো। ইহসাস কয়েক কদম এগিয়ে হিয়ার মুখোমুখি দাড়ালো। হিয়া এবার নড়েচড়ে দাড়ালো। ইহসাস সামনে দাড়াতেই সে পরনে থাকা ওরনার এককোণা নিয়ে হাতের তর্জনীর আঙুলের সাথে পেচাচ্ছে আর খুলছে। ইহসাস যে তাকে কিছু বলবে, এটা সিওর। এখন সামনে থেকে চলে যাওয়া অসম্মান করার মতো। কিন্তু ইহসাসের সামনে প্রচুর অসস্তি বোধ হচ্ছে কেনো জানি!, তাদের একা দেখে ফেলে যদি তার বাবা অথবা মা! কি ভাববে! ইহসাস এক নাগারে নিষ্পলক হিয়াকে দেখছে। হিয়া এবার মুখ তুলে ইহসাসের দিকে তাকালো। তাকাতেই ইহসাসের ব্যাপার টা সে বুঝতে পারে। সে নিজেই জিগাসা করে এবার,

” কিছু বলবেন আপনি? ”

” চলে যেতে চাচ্ছেন কেনো? ”

” এটা একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। ”

” সে যেটাই হোক, দুদিন পর উত্তর টা যেনো এটাই হয়,যে আপনি যাচ্ছেন না। ”

” কেনো বলুন তো? আমি চলে গেলে আপনার কি? ”

ইহসাস এ কথাতেই একটু রেগে যায়। আর একটু এগিয়ে সে হিয়ার মুখোমুখি দাড়ায়। হিয়া হঠাৎ এভাবে এগিয়ে আসায় ভড়কে যায়। সে নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বলে,

” আপনার কি এটা জাতীয় স্বভাব হুটহাট আমার কাছে এগিয়ে আসা? ”

” আমি সব মেয়ের কাছে এভাবে এগিয়ে যাই না বেয়াইন সাহেবা। যার কাছে গিয়েছি সে আপনি। কেনো যাচ্ছি, কিসের অনুভূতি তৈরি হচ্ছে! এগুলো আমার বোধগম্য হচ্ছে না। যতোদিন না হচ্ছে আপনি কোথাও যাচ্ছেন না। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার? ”

২১,
হিয়া বাকশূণ্য হয়ে যায় ইহসাসের কথা শুনে। পাগল হয়েছে নাকি এই লোক! সে অবাক নয়নে ইহসাসকে দেখছে। ইহসাস হিয়ার চোখের দিকেই গভীর নয়নে হিয়াকে দেখে যাচ্ছে। কেমন একটা ঘোর কাজ করে তার মাঝে হিয়ার চোখের দিকে তাকালে। সে চোখের দিকে তাকিয়ে ফের বলে,

” আপনার জন্য কি আমার হিয়ার মাঝে কোনো অনূভুতি কাজ করে মিস হিয়া? এরকম হচ্ছে কেনো? আপনার সাথে থাকলে আমার সময়-জ্ঞান হারিয়ে যায়। ”

হিয়া কি বলবে বুঝতে পারলো না। সে মাথা নিচু করে নেয়। তখনই রায়া নিজের রুম থেকে বের হয়। হিয়ার রুমের পরেই রায়ার রুম। সে হিয়ার রুমে সামনে ইহসাস আর হিয়াকে এতোটা কাছাকাছির দেখে বুঝতে পারলো না ঘটনা কি! সে একটু এগিয়ে এসে জিগাসা করে,

” এখানে দাড়িয়ে কি করছো তোমরা? ”

হিয়া আর ইহসাস রায়ার উপস্থিতিতে চমকে যায়। ইহসাস ভাবীকে দেখেই হিয়ার থেকে একটু দূরত্ব তৈরি করে দাড়ায়। ইহসাস ভাবীকে দেখে একটু হাসার চেষ্টা করে। হিয়া বোনকে দেখে রুমের ভেতরে চলে যায়। রায়া দুজনের দিকেই আবারও সন্দেহের চাহনীতে তাকিয়ে আছে। হিয়াকে চো”রের মতো পালাতে দেখে সে ইহসাসকেই ফের জিগাসা করে,

” তোমাদের মাঝে কি চলছে বলো তো ইহসাস ভাইয়া?”

” কিছু না ভাবী। তোমার বোন ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে আজ হঠাৎ কানাডা যাওয়ার কথা আন্টিকে জিগাসা করলো! হঠাৎ কি হলো এটাই প্রশ্ন করছিলাম আর কি! তোমার গোছগাছ সব শেষ? হলে ড্রইং রুমে এসো। আমাদের বেরুতে হবে। ”

ইহসাস তাড়াহুড়ো করে কথাগুলো বলেই চলে যায়। রায়ার সন্দেহ দূর হলো না। সে নিশ্চিত হিয়া আর ইহসাসের মাঝে কিছু একটা অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে। রায়া একবার বোনকে জিগাসা করবে ভেবে হিয়ার রুমে যেতে ধরলো। কিন্তু পরে কথা বলবে ভেবে গেলো না৷ সে ড্রইং রুমে আসলো। আসতেই নাতাশা, রাদ, ইহসাস আর আনিকাকে বসে থাকতে দেখলো। সে আসতেই আনিকা বললো,

” এবার আমরা যেতে পারি রায়া? তোমার সব কাজ শেষ? ”

” জ্বি ভাবী। চলেন, আব্বুকে ডাক দিই। বলে যাই! ”

রায়া আব্বুর কথা মুখে আনতেই মিঃ শাহীন উপস্থিত হলেন ড্রইং রুমে। এসেই বললেন,

” বাইরে গাড়ি অপেক্ষা করছে। তোমরা এসো। ”

মিসেস অন্তরা হাতের কাজ শেষ করে তিনিও আসেন মেয়েকে বিদায় দিতে। উনি আসতেই রায়া মা-কে জড়িয়ে ধরলো। একটু জড়িয়ে রেখে রায়া মা-কে ছেড়ে দাড়ায়। যাওয়ার সময় ইহসাসের দুই চোখ হিয়াকে খুজে চলেছে৷ কিন্তু হিয়া এখানে উপস্থিত নেই। বোন চলে যাচ্ছে, অথচ এই মেয়ের খোজ নেই। কেমন মেয়েরে বাবা! ইহসাস মনে মনে ভেবে উঠে। মিসেস অন্তরা আর মিঃ শাহীন মেয়ের দুইপাশে দাড়িয়ে মেয়েকে এগিয়ে দিতে আসেন গাড়ি অব্দি। রাদ, নাতাশা,ইহসাস, আনিকা তাদের পিছনে আসছে। বাড়ির মূল ফটক পেরিয়ে বাড়ির সামনে বাউন্ডারি করে ছোট্ট বাগান করা। বাগানের মাঝ বরাবর রাস্তায় যাওয়ার জন্য সরু রাস্তা৷ দুইপাশে নানান রকমের ফুল। সেই বাগান পেরিয়ে গেট খুলে গাড়ির কাছে দাড়ায় সকলে। রায়ার দুই মামী, মামা, আরাফাত,রায়হান, আফরা এসেছে রায়াকে বিদায় জানাতে। রায়া হাসিমুখে সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। রাদ নতুন জামাই, সবাইকে সালাম দিয়ে গাড়িতে রায়ার পাশে বসে। এক গাড়িতে রাদ আর রায়া আর রায়ার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের লাগেজ, অন্য গাড়িতে নাতাশা,ইহসাস আর আনিকা উঠে বসে। তারা উঠতেই গাড়ি ছেড়ে দেয়। রায়া গাড়িতে বসেই গা এলিয়ে সীটে বসে পরে। রুমে গোছগাছ শেষে লুইসের সব স্মৃতি পুড়িয়ে এসেছে, যেটুকু কাছে ছিলো সেগুলো, এরপর কেঁদেছে। মাথাটা য’ন্ত্রণায় অসহ্য লাগছে সব৷ রাদ রায়ার দিকে তাকিয়ে কিছু বললো না। রায়ার মাথা টা নিজের কাঁধে নিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করে দিতে লাগলো। রায়া কিছু বললো না। কিছু বলার মতো শক্তি আপাতত তার নেই। রাদ মুচকি হাসলো, রায়াকে সে ঠিক ভালোবাসায় জড়িয়ে নিবে। এভাবে কাদতে দিবেনা৷ ভালো থাকবে রায়া, খুব ভালো থাকবে । আপাতত শুধু চিন্তা হিয়া আর ইহসাসের মাঝে কিছু চলছে কিনা এটা নিয়ে! ওরা একে অপরকে ভালোবাসলে এই সম্পর্কের পরিণতি কি হবে! ইহসাস তো জানেও না ইহসাসের মা ইহসাসকে নিয়ে কি ভেবে রেখেছে! চিন্তায় কপালে ভাজ পরে রাদের।

চলবে?

একটু অসুস্থ আমি, সেজন্য ছোটো হয়ে গেলো। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here