হিয়ার মাঝে পর্ব -০৯

#হিয়ার_মাঝে
#পর্বঃ১০
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

২২,
রাদের রুম টাকে নিজের মতো গুছিয়ে নিচ্ছে রায়া। কিছুক্ষণ হলো সে রাদদের বাসায় এসেছে। এসে সবার সাথে কথা বলে উপরে এসে ফ্রেশ হয়ে কাপড় গুছানো শুরু করেছে। রাদ তাদের নামিয়ে দিয়ে কোথাও একটা চলে গেছে। বলে যায়নি৷ নতুন সম্পর্কের সূচনা, নিজের মতো গুছিয়ে নেওয়াই উচিত। কতদিন আর উপেক্ষা করতে পারবে সম্পর্কের বন্ধন টাকে। দিনশেষে স্বামীর মুখ দেখতেই হবে, আর সে কারোর বিবাহিত বউ সেটাও মানতেই হবে। যতো দেরি করবে, ততটাই মানসিক যন্ত্রণা বাড়বে। তার থেকে বরং সম্পর্ক টাকে এখন থেকেই সুযোগ দেওয়া উচিত। লাগেজ থেকে কাপড়-চোপড় বের করে রায়া আলমারীতে গুছিয়ে নিচ্ছে। বিয়েতে পাওয়া শাড়িগুলো আলমারীতে ঝুলিয়ে দিয়ে, থ্রিপিস গুলো গুছিয়ে ওয়ার্ডড্রবের একটা ড্রয়ারে রাখছে সে। রাদ নতুন করে কাপড় কিনে দিতে চেয়েছিলো, সে মানা করে দিয়েছে। এমনিতেই দেশে আসা উপলক্ষে একগাদা থ্রিপিস কিনেছে। আবার কিনলে সেগুলো কি করবে ভেবেই থ্রিপিস কিনেছে। কানাডায় তো সবসময় জিন্স,ফুলহাতা টপস,স্কার্ফ পড়ে ঘুরতো। আর সবসময় তো শীতের কাপড় পড়েই থাকতে হতো চারমাস ছাড়া। ঐ চারমাস ওয়েদার একটু গরম থাকে। বাকি সময় তো শুধু শীত। জীবন টা কত সুন্দর ছিলো। কাপড় গুছানো শেষ করেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রায়া। কি জীবন, কি থেকে কি হয়ে গেলো। তার বাবা যদি লুইস কে একটা সুযোগ দিতো! শুধু একটা সুযোগ। বিয়ে ঠিকই হতো, তবে লুইসের সাথে। আর সেও ভালো থাকতো, বিয়ে নিয়ে খুশি থাকতো। কত স্বপ্ন ছিলো বিয়ে নিয়ে সব ভে’ঙে চু’রমা’র হয়ে গেছে। রায়া কাপড় গোছানো শেষে নিজের হ্যান্ডব্যাগে হাত দেয়। টুকটাক ব্যবহারের জিনিসগুলো ড্রেসিং টেবিলে গুছিয়ে ফেলে। ব্যাগ টা রাখতে যেতেও ব্যাগের সব জিনিস বের করলেও ব্যাগ টা ভারী ভারী হয়ে আছে। সে ব্যাগের সাইড চেইন খুলে। নিজের ফোন দেখতে পায়। গত কয়েকদিনে তার ফোন কোথায় ছিলো, সে খেয়ালও করেনি। ফোনের কথা মাথাতেও আনেনি। যখন তার বাবা বলেছিলেন, তার বিয়ে। সে আর হিয়া বাবাকে বুঝিয়েও লাভ যখন হয়নি, লুইসকে সব জানিয়ে ফোন ছুড়ে মে’রেছিলো। পালিয়ে কানাডায় চলে যাবে ভেবেওছিলো। কিন্তু বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে পারেনি। বাবার ২৪বছরের ভালোবাসা উপেক্ষা করে সে ২বছরের ভালোবাসার কাছে দৌড়ে যেতে পারেনি। হয়তো গেলে বাবা একসময় মেনেও নিতো, কিন্তু যে সম্মানহানী আর কষ্ট, আ’ঘাত বাবা মা পাবে সেগুলোর ক্ষ’ত কখনও মুছে দিতে পারবেনা রায়া। কিন্তু তাকে যে বে’ইমানির তকমা নিয়ে ঘুরতে হবে! কি এক অসহনীয় পীড়া এটা। জীবনের এক কেমন নিয়ম উপরওয়ালা জানেন, একদিকে ভাবলে অন্যদিক ভাবা যায়না। বাবার কথা ভেবে ভালোবাসা ভুলতে হয়, ভালোবাসা ভুললে নিজের ভালো থাকা ভুলতে হয়। রায়া আশা রাখে লুইস নিজের ধর্মের কাউকে বিয়ে করে খুব ভালো থাকবে৷ ফোনটা হাতে নিলেই লুইসের কল আসতো অবশ্যই, সে পারতো না লুইসে কল না ধরে থাকতে। লুইস তাকে চিটার বলেই দিয়েছে। এজন্য এরপর সে খোজ নেয়নি ফোনের। এটা ব্যাগে কিভাবে আসলো, ফোন টা হাতে নিয়ে ভাবছে রায়া। সে ফোন টা সুইচ ওন করে। ফোনে লুইসের সাথে তার কিছু ছবি আছে। ছবিগুলো ডিলিট করে দিতে হবে। সে বিছানায় বসে ছবিগুলো ডিলিট করে দিতে শুরু করে। হাত কাপছে রায়ার। দুইটা বছরের সমস্ত স্মৃতির সাক্ষর এই ফোন। একটা একটা ছবি জুম করে লুইসের মুখটা দেখছে আর ডিলিট করছে রায়া। কত্ত হাসিখুশি ছেলেটা, তার এই হাসি সহজে ফিরবে তো! রায়ার চোখ থেকে অশ্রু ঝ’ড়ে পরছে টপটপিয়ে। সে ছবি ডিলিট করে ডাটা ওন করে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে মেসেজ ডিলিট করতে। তখনই রাদ ঘরে আসে। রাদ কে দেখে সে কিছু বলে না। আপনমনে ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ ডিলিট করে মেসেন্জারে লগ ইন করতে নাম্বার পাসওয়ার্ড দেয়। সবসময় মেসেন্জারে আসা হতো না বলে লগ আউট করে রাখে রায়া।

২৩
রাদ এক পলক রায়াকে দেখে হাতের ঘড়ি টা খুলে ড্রেসিং টেবিলে রেখে বলে,

” আম্মু আপনাকে নিচে ডাকছিলো।”

” জরুরী কিছু? ”

রায়া ফোন থেকে চোখ তুলে রাদের দিকে তাকিয়ে জিগাসা করে। রাদ উত্তরে বলে,

” জানিনা, আম্মু বললো আপনাকে যেনো নিচে যাওয়ার কথা জানিয়ে দিই। আপনি কি ব্যস্ত?”

” ব্যস্ত নই, যাচ্ছি। ”

রায়া ফোন থেকে লুইসের মেসেজগুলো ডিলিট করতে লগ ইন করছিলো মেসেন্জারে, কিন্তু নেটওয়ার্ক একটু খারাপ থাকায় লগ ইন হতে সময় নিচ্ছিলো, সে আমার ফোন টা ওভাবেই বিছানায় ফেলে যায়৷ রাদ এ ক’দিনে রায়ার হাতে ফোন না দেখে আজ হঠাৎ রায়া ফোন নিয়ে বসে আছে দেখে সে আগ্রহ নিয়ে ফোন টা হাতে নেয়। নেটওয়ার্কের বা’জে অবস্থা দেখে সে ওয়াইফাই কানেক্ট করে নেয়। তার রুমে নেট একটু কমই পায়। সেজন্য ওয়াইফাই কানেক্ট করা। ওয়াইফাই কানেক্ট হতেই টুংটাং মেসেজের আওয়াজ। রাদ অন্যের মেসেজ দেখা উচিত হবে কি হবে না দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে ওপেন করেই ফেলে। এরপর একজন ছেলেকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে এডমিট থাকা দেখে হতবাক হয়ে যায় রাদ। মেসেজ গুলো পড়তে পারেনা, অন্য দেশের ভাষায় লেখা দেখে। কিন্তু ছেলেটা কি রায়ার প্রাক্তন! নানান প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করে রাদের মাথায়।

নিজের রুমে শুয়ে আছে হিয়া। হঠাৎই মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে তার৷ বাড়িটা ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা হয়ে আছে। বড় আপুকে ছাড়া বাড়িতে থাকতে দমটা কেমন আঁটকে আসছে তার। মাথা ব্যাথায় ঘুমিয়ে পরেছিলো সে। কিছুক্ষণ আগে ঘুম ভাঙে। এরপর চি’ল্লিয়ে বাড়ি মাথায় উঠায় বড় আপু বলে ডেকে ডেকে৷ এরপর তার মা এসে ধ’মক মা’রতেই তার হুঁশ হয় তার বোনের তো বিয়ে হয়ে গেছে। মনে পরে তার বোনের বিদায়ের সময় সে সামনে যায়নি। গেলেই কান্না আটকাতে পারতো না সে। এরপর এসে শুয়ে পরে, শুয়ে থাকতেই থাকতেই কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে খেয়াল নেই হিয়ার। কিন্তু আচমকা বা’জে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় মাথায় বড্ড ব্যথা করছে তার। মা-কে বলেছে কড়া করে এক কাপ কফি দিতে। এরপর বিছানায় ধপ করে শুয়ে পরেছে। ফ্যান ঘুরছে, সেইদিকেই এক নজরে তাকিয়ে আছে হিয়া। আম্মুকে তার ভাইয়ের অবস্থা জানানো দরকার, কিন্তু সে ভয়েই বলতে পারছেনা। তার ভাইয়ের অবস্থা উন্নতির খবর নেই, মাথায় আঘাত গুরুতর হওয়ায় সেন্স ফিরতে সময় নিচ্ছে। আর এদিকে না লুইসের ভালো হওয়ার কোনো খবর আছে। লুইসের বাবা মা যে হাসপাতালে অন্তর আছে, সেখানে এসে ওয়ার্নিং দিয়ে গেছে। লুইসের কিছু হলে কাউকে ছাড়বেন না উনারা। এলভিনা ব্যপারটা মেসেজ করে জানাতেই ঘাবড়ে গেছে হিয়া। অতিসত্তর কানাডা ফিরতে পারলে ভালো হতো। হিয়ার বাবার ভাই নেই, একটাই বোন, হিয়ার ফুফু। তিনিও কানাডাতেই আছেন। ভাতিজীর বিয়ে হবে এটা ধারণাও ছিলো না উনার। জানার পর চট করেই আসা সম্ভব হয়নি, স্বামীর কর্মক্ষেত্রের জন্য। হিয়া আপাতত ফুফুর সাথে কথা বলে অন্তরকে দেখাশোনা করতে বলেছে। বাবাকে জানাতে বারণ করেছে। তার বাবা এমনিই হাইপ্রেশারের রোগী। এসব জেনে অতিরিক্ত হাইপার হয়ে কিছু হয়ে বসলে, তখন আবার অন্য বিপদ। হিয়ার এসব ভাবনা চিন্তার মাঝেই মিসেস অন্তরা কফির মগ হাতে হিয়ার রুমে আসেন। মেয়েকে ওভাবে বিছানায় পরে থাকতে দেখে নরম সুরে ডাকেন,

” হিয়া মা? কফি চেয়েছিলি। নে। ”

হিয়া মায়ের গলার আওয়াজে উঠে বসে। খাটের বোর্ডের সাথে বালিশ দিয়ে তাতে হেলান দিয়ে বসে। মিসেস অন্তরা কাপ টা মেয়ের হাতে দেন। এরপর চলে যেতে ধরলে হিয়া ডেকে উঠে,

” মা?”

” হু কিছু বলবি?”

মিসেস অন্তরা মেয়ের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেন। হিয়া কফিতে চুমুক দিয়ে বলে,

” এখানে বসো। কিছু কথা ছিলো। ”

” কি কথা হিয়া? আর তখন কানাডায় ফেরার কথা বললি! কিছু হয়েছে ওদিকে? ”

” হু হয়েছে। অনেক বড় সমস্যা হয়েছে। তার আগে বলো, বাবা বাসায় আছে নাকি মামাদের বাসায় গেছে? নাকি অন্য কোথাও? ”

” এই তো আমি এখানে আম্মু। কিন্তু কি সমস্যা হয়েছে যে আমার থেকে লুকাতে এভাবে মায়ের সাথে গোপন বৈঠকে বসেছো? ”

মিঃ শাহীন হিয়ার রুমে এসে তার পাশে বসতে বসতে কথাটা বলে। হিয়া ভয়ে ফাঁকা ঢোক গিলে। যেখানে বা’ঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়। যা লুকাতে চাইলো, সেই এসে হাজির হয়। মিসেস অন্তরা এমনিই ভয়ে আছেন, তারমাঝে হিয়ার বাবা আসলো। তিনি আরও ভয়ে সিটিয়ে যান। হিয়া কি বলে কে জানে! সেটা শুনে যদি হিয়ার বাবা রে’গে যান বা কষ্ট পান! মিসেস অন্তরা ঘরে ফ্যান চলছে, তবুও ঘামছেন। মিঃ শাহীন মেয়ের কথার উত্তরে বলেন,

” হ্যাঁ আমি, বাজারে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাড়ি এসে তোমার মা-কে খুজতে খুজতে তোমার রুমে এসে তোমার কথা শুনলাম। কি হয়েছে আম্মু? ”

” তার আগে বলো, তুমি হাইপার হয়ে যাবে না?”

হিয়া ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয়। বাবাকে সে এমনিই ভয় পায়, সেখানে লুইসের কথা বললে, না জানি বাবা কি করে। হিয়ার গলা কাপছে রীতিমতো। বলবে আর কি! মিঃ, শাহীন উত্তর দেন,

” না হবো না। তুমি বলো। ”

চলবে?

অসুস্থতা কমেনি, উল্টো বেড়েছে। লিখার এনার্জি ছিলো না, তবুও ছোট্ট করে লিখেছি। সেজন্য আপলোড করতে দেরি হলো। ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন। হ্যাপি রিডিং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here