#হৃদপিন্ড
#জান্নাতুল নাঈমা
#পর্ব-২৫
সাজিয়া বেগম রাগের মাথায় এমন একটা কাজ করে ফেললেন এবার একটু ভয় হচ্ছে তাঁর।
পুরো রুম জুরে পায়চারি করছে আর ভাবছে মুসকান ইমনের কাছে নালিশ জানালে কি বলবে না বলবে।
–বজ্জাত মেয়েটা না জানি ইমনের কাছে কি বলে আজ। শয়তান মেয়ে বড় লোকের ছেলেকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিস রাজরানি হওয়ার খুব শখ তাইনা।
দিনরাত সকলের প্রশংসা কুড়োতে ব্যাস্ত থাকে অসহ্য গাঁ পিত্তি জ্বলে যায় একদম।
“দিয়েছি না প্রশংসা কুড়োনোর শখ মিটিয়ে ”
বির বির করতে করতে রুম ছেড়ে বেরুতে নিতেই
কারো বিশাল দেহের সাথে মাথাটা বাড়ি খেলো।
উপর দিকে তাকাতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।
এক ঢোক গিলে খানিকটা দূরে গিয়ে আমতা আমতা করতে করতে বললো,
— আমি কিছু করিনি ঐ মেয়ে সব মিথ্যা বলেছে,আমি শুধু কফি খেতে চেয়েছিলাম। আর ঐ মেয়েটা অসাবধানতার জন্য নিজের গায়ে ঢেলেছে আমার কোন দোষ নেই।
কি বলেছে ঐ মেয়ে মিথ্যাবাদী, ছোটলোকের সন্তান দের ঘরের বউ করলে এই এক সমস্যা।
ইমন রহস্যময় এক হাসি দিলো।
–ইয়েস ইউ আর এবসিলিউটলি রাইট।
মিথ্যাবাদী, ছোটলোক ঘরের সন্তান দের ঘরের বউ করলে এই এক সমস্যা।
সাজিয়া বেগম খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন –হ্যাঁ বাবা ঠিক বলেছো বলেই আরো কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই ইমন বলে ফেললো।
–যেমনটা আপনার জন্য এই পরিবারটা আজ ধ্বংসের পথে। ছোট লোক ফ্যামিলি থেকে ওঠে এসেছেন বলেই বাড়ির বউ এর গায়ে গরম কফি ছুঁড়ে দিতে আপনার বিবেকে বাঁধে নি।
ছোট লোক ঘর থেকে ওঠে এসেছেন বলেই নিজে অপরাধ করে সেই অপরাধ ধামা চাপা দিতে গিয়ে মিথ্যার ঝুড়ি খুলে বসেছেন।
–ইমনন,,,
— ডোন্ট শাউট। গলাটা নামিয়ে, আপনি ভুলে যাবেন না আপনি কার সাথে কথা বলছেন। আপনি একরামুল চৌধুরীর সামনে নয় আপনি ইমন চৌধুরীর সামনে রয়েছেন।
আপনার মতো আমি বা মুসকান যদি ছোট লোক ঘরের সন্তান হতাম তাহলে আপনার অসভ্যতামির জন্য আপনার সাথে কি করে ফেলতাম ভেবেও পাচ্ছেন না। আর হ্যাঁ বলা আর করা একি কথা হলো তাই এই অসম্মান টা মাথায় রাখবেন।
আর কি বললেন মুসকান ছোটলোক তাইনা,,,
এ বাড়িতে মুসকানের জায়গা টা ঠিক কি সেটা আপনি কল্পনাও করতে পারছেন না। যতোটা সম্মানিত ব্যাক্তির সন্তান এই ইমন চৌধুরী তাঁর থেকেও বেশী গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সন্তান মুসকান চৌধুরী।
সাজিয়া বেগম চমকে ওঠলো কথাটা শুনে। কিন্তু এর কোন কোল কিনারা পেলো না। মুখে বিরক্তিমাখা, রাগ, চিন্তার ছাপ রেখেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
দরজার বাইরে ইয়ানা,ইয়াশফা, অভ্র অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দাদী নিচ থেকে চেচামেচি করছে ইমনের হুংকার শুনে।
–কি ভেবেছেন আপনি? বাড়িতে কি ঘটছে না ঘটছে কিছুই আমি জানতে পারবো না। যে মেয়েটা শুধুমাএ আমাকে ভরসা করে আমার ওপর নির্ভর করে এ বাড়িতে রয়েছে তাঁর কোন সিকিউরিটিই আমি দেবো না? হ্যাঁ একটু ক্ষতি হয়েছে ওর কিন্তু নেক্সট এটুকু করার সুযোগ কেউ পাবে না ।
পুরো বাড়িতে মুসকান যেখানে যেখানে অবস্থান করে সেখানেই আমি সিসি ক্যামেরা সেটআপ করেছি এমনি এমনি না। বাড়িতে যখন স্বার্থপর, বেঈমান, পশু সমতুল্য মানুষের বসবাস তখন তো আমাকে এই পদক্ষেপটা নিতেই হতো।
সাজিয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।
ইমনের কাছে মুসকান গুরুত্বপূর্ণ জানতো তাই বলে এতোটা তা ভাবার বাহিরে ছিলো।
রাগের মাথায় ইমন গোপন কিছু প্রকাশ করে ফেলেছে। এটাই আবার কাল হয়ে দাঁড়াবে না তো তাঁদের জীবনে???
,
ইমন রুম ছেড়ে বেরুতে নিতেই তিনজন ভয়ে দৌড়ে সরে গেলো।
দাদীর চেচামেচি শুনে ইমন উপর থেকেই বললো –দাদী সব ঠিক আছে তুমি রুমে যাও। পরে তোমার সাথে দেখা করছি আমি।
,
ইমন প্রতিদিন রাত দশটা এগারোটায় আসে। আজ সাতটায়ই চলে আসবে মুসকান জানতো না। শরীর খারাপ লাগছিলো বুকে জ্বালাও হচ্ছিল তাই বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে আছে।
ইমন রুমে ঢুকতেই রুমটা অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখতে পেলো। লাইট অন করতেই মুসকান ধড়ফড়িয়ে ওঠে বসলো ইমনকে দেখেই চট করে বিছানা ছেড়ে নেমে পড়লো।
–আপনি আজ এতো তারাতারি এসে পড়েছেন।
ফ্রেশ হয়ে নিন আমি খাবাড় রেডি করি গিয়ে প্রচন্ড তারাহুরোয় কথা গুলো বলে দরজার দিকে যেতে নিতেই ইমন হাত আটকে ধরলো তাঁর।
–মানুষ যখন কারো থেকে কিছু লুকাতে চায় তখন এমন দ্রুত কথা বলে। আর তুমি যেহেতু এই স্বভাবের নয় তাই তুমি এতো চঞ্চলতার সাথে কথা বলে এভাবে চোরের মতো পালাতে চাইলে অবশ্যই বুঝতে হবে তুমি কিছু লুকাতে চাইছো।
আঁতকে ওঠলো মুসকান ভয়ে তাঁর বুকটা হুহু করে কেঁদে ওঠলো। জোর পূর্বক হেসে বললো–কই না তো। আপনার খিদে পেয়েছে তো আসুন খেতে দিবো।
–আমার খিদে পায় নি,,,
ইমনের ধমকে কেঁপে ওঠলো মুসকান। চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে।
ইমন মুসকান কে একটানে বিছানায় নিয়ে বসালো।
না কোন কথা না কোন তাকানো সোজা জামার চেইন টান দিলো।
মুসকান ভয়ার্ত স্বরে বললো কি করছেন??
–জাষ্ট স্যাট আপ,,, আমাকে হাত তুলতে বাধ্য করো না মুসকান।
বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠলো মুসকানের।
–ওনি কি সব জেনে গেছেন। কে বলেছে উনাকে। ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো সে।
ইমন জামাটা পুরোই খুলে ফেললো। লজ্জায় চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো এমন পরিস্থিতি তে পড়বে সে ভাবতেও পারেনি। পুরো শরীরে কাঁপুনি ধরে গেলো।
ইমন মুসকানকে পিছন দিক ঘুরিয়ে মুসকানের পিঠ তাঁর বুকে ঠেকালো। পকেট থেকে বার্নার ক্রিম বের করে মুসকানের কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে ফোস্কা পড়া জায়গায় ক্রিম লাগাতে লাগলো।
মুসকানের যতোটা না যন্ত্রণা হচ্ছিল তাঁর থেকেও বেশী লজ্জা লাগছিলো,ভয় লাগছিলো । পুরো শরীরে শিহরন জাগাচ্ছিলো ভীষনভাবে।
ইমনের মুখের সম্পূর্ন শ্বাস তাঁর গলায় পড়ছিলো।
ইমন তাঁর চোখ দিয়ে তাঁকে এ অবস্থায় দেখছে, ফোস্কার জায়গা গুলোতে হাত বিচরন করছে ভাবতেই শিউরে ওঠলো এক হাতে খামচে ধরলো বিছানার চাদর,আরেক হাতে খামচে ধরলো ইমনের এক হাত।
বার বার হাতে বাঁধা সৃষ্টি করায় ইমন গম্ভীর গলায় বললো “স্টপ দিস ননসেন্স ”
–তোমার সাথে এখানে আমি তামাশা করছি না।
আমাকে আমার কাজ করতে দাও ।
কাজ শেষে ওড়না দিয়ে ঢেকে কাবার্ড থেকে একটা শার্ট বের করে আনলো ইমন। ওড়নাটা সড়াতেই মুসকান দুহাতে নিজেকে ঢাকার প্রানপন চেষ্টা করতে লাগলো। লজ্জায় যেনো সে মাটির সাথে মিশে যাবে পারলে।
–হেই ইউ,,, প্রবলেম টা কোথায়? দাদী এতো কিছু শিখিয়েছে এতো কিছু বুঝিয়েছে এটা বোঝায়নি তোমার সবটাতে তোমার থেকেও বেশী অধিকার আমার রয়েছে। আমার সামনে লজ্জা পাচ্ছো কেনো। তোমায় আমি কিছু করছি না শুধু ট্রিটমেন্ট দিচ্ছি।
বলতে বলতেই শার্ট টা পড়িয়ে দিয়ে বোতামগুলো খোলাই রাখলো ওড়নাটা সামনে মেলে দিয়ে বললো–ধীরে ধীরে আরাম পাবে এবার।
মুসকান অবাক নয়নে চেয়ে রইলো।
–মানুষ টা এতো ভালো কেনো?
এই মানুষ টার মতো করে কেউ এতোটা আগলে রাখেনি আমায় সত্যি আমি খুবই ভাগ্যবতী।
পরোক্ষনেই চমকে ওঠলো।
–ওনি কিভাবে জানলো সব,,,
ইমন শার্ট পালটে টি শার্ট পড়ে নিলো। বাথরুম যাবে তখনি মুসকান ওঠে বললো আপনার খাবাড় রেডি করতে হবে তো। আমি কাপড় পাল্টে নেই ।
এবার যেনো ইমন ফুঁসে ওঠলো।
নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে পিছন ঘুরে এক লাফ দিয়েই মুসকানের দুকাধ আঁকড়ে ধরলো।
–কিচ্ছু করতে হবে না তোমায় চুপচাপ রুমে বসে থাকবে। এক পা এদিক ওদিক হলে তোমায় আমি কি করবো নিজেও জানিনা।
–আপনি এতো রাগ করছেন কেনো? আসলে কফি বানাতে গিয়ে একটু লেগে গেছে।
–হোয়াট! মিথ্যে বলছো আমায় তুমি? হাউ ডেয়ার ইউ মুসকান।
মুসকান এক ঢোক গিলে ভয় চোখে তাকালো ইমনের দিকে।
–কাকে বাঁচাতে মিথ্যে বলছো তুমি। ঐ সেলফিশ মহিলা কে?
মুসকান চমকে ওঠলো। ভয়ার্ত দৃষ্টি তে চেয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো প্লিজ আপনি মা কে কিছু বলবেন না।
ওনি ইচ্ছে করে করেনি হঠাৎ ই হয়ে গেছে।
প্লিজ আপনি রাগ করবেন না প্লিজ।
ভুল হয়ে গেছে আমার বলেই কাঁদতে লাগলো।
মুসকানের অজস্র চোখের পানিতে ইমন রেগে গেলো।
–মুসকান,,,এতোটা নির্বোধ হওয়া মানায় না। তুমি চার,পাঁচ বছরের বাচ্চা নও যে কেউ তোমার সাথে অন্যায় করলে তুমি প্রতিবাদ করতে পারবে না।
কেউ তোমায় ব্যাথা দিলে সেটা লুকিয়ে রেখে গোপনে কষ্ট পেয়ে তুমি কোন মহৎ ব্যাক্তি হয়ে যাবে না। তুমি কোন গল্পের নায়িকা না,বা তুমি কোন নাটক,সিনেমার হিরোইন না যে, যে কেউ এসে যখন তখন তোমাকে যা খুশি তাই বলে যাবে, যে কেউ এসে তোমাকে আঘাত করে যাবে আর তুমি সিনেমার হিরোইনদের মতো সবটা সহ্য করে নেবে।
মুসকানের দু কাধে ধরে মাথাটা একটু ঝুকিয়ে চোখে চোখ রেখে কড়া গলায় বললো —
লিসেন,,,ইউ আর মাই প্রপার্টি, ইয়েস ইউ আর মাই ওয়াইফ,ইমন চৌধুরীর অর্ধাঙ্গিনী তুমি।
কেঁপে ওঠলো মুসকান ভয় ভয়ে চেয়ে রইলো ইমনের দিকে।
–তোমাকে আঘাত করার রাইট কারো নেই।
তোমাকে ভালোবাসার অধিকার সবার থাকলেও তোমাকে আঘাত করার অধিকার আমি কাউকে দেইনি।
এ বাড়িতে তোমার সাথে কখন কি হচ্ছে না হচ্ছে সবটা আমি জানতে পারি, সবটা আমি এই দুচোখে দেখতে পারি। মুসকানন,,,কি মনে করো তুমি আমায়? ইমন চৌধুরী তাঁর ওয়াইফকে বিনা সিকিউরিটি তে রেখে সারাদিন বিজনেসে মুখ গুঁজে থাকে? এতোটা দায়িত্ব জ্ঞান হীন সে?
“যেখানে, যে বাড়িতে আমিই দুদন্ড শান্তি পাইনি সেই বাড়িতে আমি বিহীন তুমি শান্তিতে স্বস্তিতে থাকবে”?
আমার কথা সেটাতে নয় আমার কথা হচ্ছে তুমি এতোটা স্টুপিট কেনো, হোয়াই??
“ইমন চৌধুরীর ওয়াইফকে এটা মানায় না”
“সারা দুনিয়ার কাছে যেমন ইমন চৌধুরী বাঘের মতো বেঁচে আছে তাঁর ওয়াইফকেও বাঘিনী হয়েই বাঁচতে হবে”
“শুধু আমার জন্য নয় নিজের জন্যও প্রতিবাদী হয়ে ওঠতে হবে ”
একটা কথা মাথায় রেখো তোমার নির্মল স্বভাবটা শুধুই আমার জন্য বাকিদের জন্য নয়।আমার সামনে তুমি যতোটাই কোমলপ্রাণ থাকবে বাইরের মানুষ দের সাথে ততোটাই কঠিনপ্রান হয়ে বাঁচতে হবে।
“মিথ্যাকে সকলের সামনে মিথ্যা বলার সাহস দেখাতে হবে।সত্যি কে সকলের সামনে সত্যি বলতে হবে ”
“অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে তোমায়”
নয়তো সকলেই সুযোগ নিবে নরম মাটি পেয়ে প্রত্যেকটা লোকই সেখানে আঘাত হানবে।
এটা শুধু তোমার ক্ষতি করবে না মুসকান তোমার এই স্বভাবের জন্য আজ তুমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছো। কাল আমি হবো ভবিষ্যতে আমাদের সন্তান রা হবে।
পারিবারিক, সামাজিক সব দিক দিয়েই আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হবো।
“দুনিয়াটা কি হয়ে গেছে মুসকান এখন আর কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না।
” চোখ থাকতে অন্ধ মুখ থাকতে বোবা হয়ে বসবাস করে মানুষ ”
“সময়মতো যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা না হয়, তাহলে এর ফল গোটা জাতিকে ভোগ করতে হয়। তাই সমাজে কোনো অন্যায়-অনাচার দেখা দিলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করা আবশ্যক।
কিন্তু আমাদের সমাজে এখন আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে অনেকে আগ্রহ দেখায় না। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া হাজারো অন্যায়কে ঠাণ্ডা মাথায় এড়িয়ে চলে। অন্যায়ের প্রতিবাদকে তারা অযথা ঝামেলায় জড়ানোই মনে করে। এতে মানুষ নিজেদের অজান্তেই গোটা জাতির ওপর আরো বড় বিপদ ডেকে আনে”
“আর এসব মানুষের কাতারে আমি আমার ওয়াইফকে ফেলতে চাইনা”
“মুসকান,,, যে নিজের প্রতি করা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না, লড়াই করতে পারেনা সে কি করে অন্যদের জন্য লড়বে??
“একটা মেয়ে মানেতো শুধু তাঁর একার জীবন নয়”
“একটা মেয়ে মানে তাঁর সাথে অনেক গুলো জীবন জরিয়ে থাকে” মা,বাবা,ভাই -বোন,স্বামী,সন্তান আরো অনেকেই। আর কারো জন্য না হলেও এমন একটা সময় আসবে নিজের সন্তানের জন্য লড়তে হবে তোমায় আর এ জন্য তোমাকে মানসিকভাবে,শারীরিক ভাবে প্রিপেয়ার হতে হবে।
স্ট্রং পার্সোনালিটির অধিকারী হতে হবে তোমায়।
এখন সময় এসেছে নিজেকে স্ট্রং ভাবে তৈরী করার।
এসময়টা নিজেকে তৈরী করতে না পারলে আর কখনোই পাবেনা।
–“অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সয় সেও সমান অপরাধী ”
ইয়েস আমার চোখে তুমি আজ অপরাধী।
মুসকানের চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়লো।
ইমন মুসকানকে ছেড়ে বিছানায় গিয়ে বসলো।
চোখ দুটো বন্ধ করে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কোমল দৃষ্টি তে তাকালো সে মুসকানের দিকে।
নিজের রাগটাকে সংযত রেখে শান্ত গলায় বললো —
নামাজ তো পড়ো আমি নামাজ পড়িনা তাই মনে মনে রাগ ও হয় তোমার। নামাজ যখন পড়ো অবশ্যই ইসলাম ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান থাকা অতি জরুরি।
আজ যেসব কথা আমি রেগে ধমকে বলছি এসব কথা বহুবছর পূর্বেই একজন বলে গেছেন।
আমার ওপর অভিমান না করে ঐ গবরযুক্ত মাথায় একটু কথাগুলো ঢুকিয়ে নাও দেখবে আমার প্রতি রাগ অভিমান কিচ্ছু হচ্ছে না।
–“রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষ যখন কোনো অত্যাচারীকে দেখেও অন্যায় থেকে তার হাতকে প্রতিরোধ করবে না, শিগগিরই আল্লাহ তাদের সবার ওপর ব্যাপক আজাব নাজিল করবেন।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)
সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার কোনো বিকল্প নেই। একটা সমাজে অপরাধ তখনই বেড়ে যায়, যখন অপরাধী বারবার অপরাধ করে পার পেয়ে যায়। তাই মহান আল্লাহ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! ন্যায়বিচারে তোমরা অটল থেকো, আল্লাহর পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারীরূপে যদিও নিজেদের প্রতিকূলে যায় অথবা পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের, সে ধনী বা গরিব হোক, আল্লাহই উভয়ের জন্য উত্তম অভিভাবক। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে নিজ নিজ খেয়ালখুশির (পক্ষপাতিত্বের) বশীভূত হয়ো না।’ (সুরা আন-নিসা)
আয়াত-১৩৫।
মুসকানের কান্না থেমে গেলো। অবাক নয়নে ইমনের দিকে চাইলো। যে মানুষ টা নামজ পড়েনা প্রায় রোজই নামাজের সময় তাঁকে ডাকে কিন্তু সে রাগ দেখিয়ে দেয় এক হাঁড়ি।
অভিমান করে আর ডাকেও না। তাঁর মুখে এসব কথা বেশ অবাক হলো সে।
তাহলে কি দাদীর কথাই ঠিক মানুষ টা উপরওয়ালার সাথেও অভিমান করেছে। কিন্তু এটা তো ঠিক না।
ওনাকে তো তাহলে আমায় বোঝাতে হবে।
এই মহা বিশ্বে, সকল মানবজাতির সাথে যাই ঘটে যাক না কেনো কখনোই নিরাশ হওয়া যাবে না।
উপরওয়ালার উপর সব-সময় ভরসা করতে হবে বিশ্বাস রাখতে হবে।
–“আপনি যেমন আমায় বুঝালেন আমিও আপনাকে বোঝাবো ”
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটাই যে এমন। যেই ভুল করুক না কেনো? যেই ভুল পথে যাক না কেনো একে অপরের ভুলগুলো ভাঙিয়ে দিয়ে পাশে থাকতে হবে।
একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠতে হবে।
এটাই যে নিয়ম,,,
“দাদী বলেছে স্বামী সেবা, স্বামীর আদেশ নিষেধ মান্য করাতেও পূন্য”
“তাহলে অবশ্যই স্ত্রীর কথা মানাও পূন্য আদেশ না করতে পারি আমি না হয় অনুরোধই করবো”
চলবে……