হৃদপিন্ড ২ পর্ব ৬

#হৃদপিন্ড_২
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পার্ট_৬

ছাদে গিয়ে ছাদের মেঝেতে গুটিশুটি হয়ে বসে কাঁদছে মুসকান৷ ইমন ছাদের দরজায় পা রাখতেই চমকে ওঠলো। মুসকান কাঁদছে? কেনো কাঁদছে? কি হয়েছে ওর? এভাবে চুপিচুপি কেনো কাঁদবে? ওর বাবার কথা মনে পড়েছে কি? মনে পড়লেই কাঁদবে কেনো? ও কেনো কাঁদবে? কাঁদতে দেবোনা ওকে আমি। ও কি বুঝেনা ওর কান্না আমার সহ্য হয় না। মনের ভিতর কথাগুলো আওড়াতে আওড়াতে এগিয়ে গেলো ইমন।
—- মুসু কাঁদছিস কেনো? কি হয়েছে মুসু বল আমায়?

হাতে ধরে হালকা টেনে ওঠানোর চেষ্টা করতে করতে ব্যাস্ত গলায় বললো ইমন৷ মুসকান চমকে তাকালো। ইমনকে দেখে তাঁর পুরো শরীরে যেনো আগুন ধরে গেলো। এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে ওঠে পড়লো। চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ইমন আবারো হাত ধরে ফেললো। মলিন চোখ, মুখে চেয়ে বললো,
—- বলে যা কেনো কাঁদছিস?

সাথে সাথে মুসকান হাতটা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে পাগলের মতো আশপাশে কি যেনো খুঁজতে লাগলো।ছাদের একপাশে গোলাপের টব লাগানো আছে বেশ কিছু। তাঁর পাশে ছোট ছোট সাদা পাথর, ভাঙা ইটের খন্ড পড়ে আছে। মুসকান দ্রুত পায়ে গিয়ে সেখান থেকে এক টুকরা ইটের খন্ড তুলে ইমনের দিকে দিলো এল ঢিল৷ ঢিলটা গিয়ে ইমনের বুক বরাবর লাগলো। অল্প লাগায় ছোট করে আহ করে ছিটকে দূরে সরে গেলো। বুকে হাত ঢলতে ঢলতে বিস্ময় চোখে তাকালো মুসকানের রাগান্বিত মুখের দিকে। ইমন যখন আহ করে আর্তনাদ করে তখনি মুসকানের হুশ ফিরে। সে কি করে ফেলেছে তা টের পেতেই অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে।

প্রথমত এভাবে রনমূর্তি ধারন করে ঢিল দিলো তারওপর আবার কেঁদে গা ভাসাচ্ছে। ইমন বিস্মিত হয়েই কয়েক পা এগিয়ে গেলো। মুসকানের মাথায় নিজের ডান হাতটা চেপে ধরে বললো,
—- এভাবে কাঁদিস না, রাগিস না এভাবে শরীর খারাপ করবে। কে কি বলেছে সেটা বল মুসু। প্লিজ কান্না থামিয়ে বল আমায়।

মুসকান কিছু বললো না কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিলো আরো। ইমন ধৈর্য হারা হয়ে দুহাতে মুসকানের কাঁধে চেপে ধরলো। কঠিন গলায় বললো,
—- খুলে বল কি হয়েছে৷

ইমনের কঠিন গলা শুনে ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো সে। ইমন তো হতবাক। কি করবে এখন সে? যা সহ্য করতে পারছেনা মেয়েটা তাই কেনো করছে? একটা থাপ্পড় দিবে কি? যা ভাবা তাই কাজ কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে হাতটা বেশ শক্ত করে নিয়ে থাপ্পড় দিতে যাবে তখনি বুকের ভিতর কেমন যেনো করে ওঠলো। খেয়াল করলো তাঁর বুক কাঁপছে। প্রথমে বুকের ভিতরের কাঁপুনি, তারপর হাতে,পায়ে থেকে সর্বাঙ্গে কম্পন ধরে গেলো। অথচ মেয়েটা কেঁদেই চলেছে। এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেকে সামলে নিলো। দুহাতে মুসকানের দুগালে আলতো করে ধরে আদুরে গলায় জিগ্যেস করলো,
—- মুসু কি হয়েছে বল প্লিজ, না বললে বুঝবো কি করে? আচ্ছা বলবিনা তো আমি এই নিচে যাবো সায়রী আর মা কে ইচ্ছে রকম ধমকাবো। ঘরের সব জিনিস ভাঙচুর করবো। তুই এটাই চাস তো তাহলে এটাই হোক।

মুসকানের কোন ভাবান্তর হলো না৷ সে কেঁদেই যাচ্ছে। একটা মানুষের চোখে এতো পানি কি করে থাকতে পারে ভেবেই পাচ্ছে না ইমন। তাঁর চোখ দুটোও লাল হয়ে আসছে। মুসকানের জায়গায় অন্য কেউ হলে তিন থাপ্পড়ে মুখ থেকে সব বের করে নিতো। কিন্তু এই মানুষ টাকে থাপ্পড় দিতে চাইতেই তাঁর বুকের ভিতর থেকে শুরু করে সর্বাঙ্গে কম্পন ধরে গেছে। তাই উপায় না পেয়ে নিজের ওপরই সব রাগ খাটালো। মুসকান কে ছেড়ে চিলেকোঠার ঘরের দেয়ালে একের পর এক নিজের হাত দিয়ে ঘুষি দিতে শুরু করলো।

মুসকানের কান্না থেমে গেছে। ইমনের অমন রিয়্যাক্ট দেখে তাঁর মাথা ঘুরে গেলো কেমন। ভয়ে শরীর কাঁপতে থাকলো। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি অবদি পেলো না আর সে। ধপাশ করে বসে পড়লো। মুখ দিয়ে অল্প আওয়াজ করলো ‘নানাভাই’। ডাক শুনে থেমে গেলো ইমন৷ ঘুরে মুসকান কে নিচে দেখে ছুটে গিয়ে ধরলো।
মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,
—- এবার বল কেনো কাঁদছিলি?

মুসকান চোখ বুজে শুধু ‘পানি খাবো’ বললো। আর কিছুই বললো না সে। ইমনও আর প্রশ্ন না করে কোলে তুলে নিয়ে নিচে নেমে গেলো। নিজের রুমে নিয়ে আধশোয়া করে বসিয়ে দিয়ে পানি দিলো মুসকান অর্ধেক গ্লাস পানি খেয়ে মুখ সরিয়ে নিলো৷ ইমন ভ্রু কুঁচকে গ্লাসটা রেখে বললো,
—- বসে থাক নামবি না৷ আমি আসছি।
.
মায়ের রুমে গিয়ে দেখলো সায়রী আর ইরাবতী কি যেনো আলোচনা করছে। এসব দেখে তাঁর রাগ ওঠে গেলো। এগিয়ে গিয়ে বললো,
—- এখানে কিসের মিটিং হচ্ছে? মুসু কান্না করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে আর তোমরা মিটিং করছো রুমে বসে?

ছেলের গলা শুনে ইরাবতীর বুকের ভিতর ডিপডিপ শুরু হয়ে গেলো৷ তাকিয়ে দেখেও নিলো ছেলের রাগের মাএাটা। চোখ দুটো অস্বাভাবিক লাল হয়ে আছে। ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে ৷ সায়রীর এতোক্ষণে হুশ ফিরলো চমকিত গলায় বললো,
—- মুসু কোথায় এখানেই তো ছিলো।
—- বাবা এতো রেগে গেলি কেনো কি হয়েছে?

ইমন আর কিছু বললো না। রুম ছেড়ে নিজের রুমে পা বাড়ালো। পিছন পিছন সায়রী আর ইরাবতীও গেলো।
.
—- ও কাঁদছিলো কেনো সায়ু সত্যি করে বল। কাঠ কাঠ গলায় জিগ্যেস করলো ইমন।
—- তুই এমন করছিস কেনো? আমি সত্যি জানিনা। এই মুসু বল না কেনো কান্না করছোস? দেখ ইমন কেমন রাগ দেখাচ্ছে। তুই বল কেনো কান্না করেছিস?

ইরাবতীও মুসকানের মাথায় হাত বুলিয়ে জিগ্যেস করতে থাকলো কেনো সে কান্না করেছে? মুসকান এবার ভয় পেয়ে গেলো। কি বলবে সে? টেনশনে মাথা ঘুরছে তাঁর কোন উত্তরই খুঁজে পাচ্ছে না বলার মতো৷ এদিকে ইমনের চোখ,মুখ দেখেও ভয় লাগছে। অনেকক্ষণ ধরে ভাবলো সে কি বলবে। এদিকে ইমন সমানে ছটফট করছে মুসকানের থেকে কান্নার কারণ জানার জন্য। সায়রী আর ইরাবতীও সন্দেহী চোখে চেয়ে আছে মুসকানের মুখের দিকে। অবশেষে মুসকান মুখ ফুটে বললো,
—- নানাভাই আমাকে মিলি আপুর জন্য সেদিন খুব বকেছিলো। সেটা মনে পড়তেই আমার খুব কান্না পাচ্ছিলো তাই কেঁদেছি।
—- আল্লাহ। মুরাদ কপাল করে এক পিস বোনই পেয়েছে। আন্টি চিন্তা করোনা ওর এমন অনেক আজগুবি স্বভাব রয়েছে। কেউ ওকে একমাস আগে বকলে সেই বকার কথা যদি আজ মনে পড়ে সেটা নিয়েই কান্না করবে। আর এ বাড়ি এসে ইমনের সেই কোন কালের বকার কথা মনে পড়েছে তাই কান্না জুরে দিয়েছে। আল্লাহ বইন তুই পারিসও বটে।

ইরাবতী হেসে দিলো সাথে ইমনকে বকাও দিলো কয়টা। কিন্তু ইমন ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো মুসকানের দিকে। আর মুসকান চেয়ে আছে ইমনের হাতের দিকে।

ইরাবতী নিচে গেছেন। কাজের মেয়ে পারুল এসেছে। রান্নার তোরজোর শুরু হয়ে গেছে। সায়ুরীও নিচের দিকে পা বাড়ালো। যেতে যেতে মুসকানকে বলে গেলো ‘একটু রেষ্ট নিয়ে নিচে আয়’।

ইমন দরজার বাইরে ওকি দিয়ে দেখে নিলো সবাই নিচে। তাই আবারো রুমে ফিরে এসে সন্দেহী চোখে তাকালো মুসকানের দিকে। মুসকান ইতস্ততভাবে ওঠে পড়লো। ইমন কাঁধে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে দিলো তাঁকে বললো,
—- এক পা ও নড়বিনা সত্যিটা না বলে গেলে মাইর দিব তাই সত্যি বল।
মুসকান কান্না করে দেবে তখনি ইমন বললো,
—- একদম কাঁদবি না মুসু। কথায় কথায় কান্না করার স্বভাব টা কিন্তু খুব খারাপ।

মুসকান ইমনের হাতের দিক চেয়ে শব্দ করে কেঁদে দিলো। ইমন আশ্চর্য হয়ে বললো,
—- আমি তোকে শুধু সত্যিটা বলে যেতে বলছি। তাই তোর এভাবে কাঁদতে হবে? ইটস ভেরী ব্যাড মুসু। কান্না থামিয়ে সত্যিটা বল।
—- তোমার হাতে রক্ত। কাঁপা গলায় বললো মুসকান।

ইমন মুসকানের থেকে চোখ সরিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকালো। তাঁর হাত ছিলে গেছে। খানিকটা রক্তও বের হচ্ছে। তা দেখে জিহ্বা দিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে আলতো হেসে বললো,
—- ভয় পাস না আমার লাগছে না৷ তুই বল কেনো কাঁদছিলি? আংকেলের কথা মনে পড়ছিলো নাকি অন্য কিছু?

মুসকান মাথা নাড়ালো। মানে তাঁর বাবার কথা মনে পড়ছিলো। ইমন গভীর দৃষ্টি তে চেয়ে সত্যি মিথ্যা বোঝার চেষ্টা করলো। তারপর বললো,
—- এবার যা।

মুসকান এক মূহুর্তও দেরী না করে পা বাড়ালো। দরজা অবদি যেতেই ইমন ‘মুসু’ বলে ডেকে ওঠলো। মুসকান চমকে গিয়ে থেমে গেলো। ইমন ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো মুসকান দাঁড়িয়েছে। তাই তাঁর থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। বললো,
—- আই এম সরি।
মুসকান নিশ্চুপ। তা দেখে ইমন আবারো বললো,
—- সেদিনের জন্য৷

মুসকান চলে গেলো আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ালো না সে। ইমন ফার্স্ট এইড বক্স বের করে সোফায় বসে হাতে মেডিসিন লাগালো। নিজের অনুভূতি কে নিজেই হাজারটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো। সেই সাথে মনে মনে মুসকানকেও প্রশ্ন করলো,’আমাকে এমন এলোমেলো কেনো করে দিলি মুসু? তোকে দেখলেই কেনো আমার সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়? কেনো তোর কান্না সহ্য হয় না আমার? তোর চোখের এক ফোঁটা পানি দেখলেই কেনো পাগল হয়ে যাই আমি? কেনোই বা এমন করে পাগলামি করি? আমার এই অনুভূতির মূল্য তুই দিবি তো? বুঝবিতো আমার হৃদয়ের কথা’? বসা থেকে ওঠে পড়লো ইমন।

আবারো নিজেকে প্রশ্ন করলো ‘ অন্যায় অনুভূতি কে এভাবে প্রশ্রয় দেওয়া কি ঠিক? হ্যাঁ অন্যায় বিবেক লোপ পেয়েছে তোর ইমন চৌধুরী। সত্যি তোর বিবেক লোপ পেয়েছে। নয়তো বন্ধুর বোনের প্রতি এমন অনুভূতি তৈরী করতে পারতিস না। তাও যদি হতো নিজের বয়সী কারো প্রতি। ঐ বাচ্চা মেয়েটার প্রতি এমন ফিলিংস কি করে আনতে পারলি তুই এতো বড় অন্যায় কি করে করতে পারলি’? পুরো রুমে পাইচারী করছে ইমন আর এক মনে নিজেই নিজের সাথে কথা বলছে। বিছানায় গিয়ে বসে চোখ বুজে শুয়ে পড়লো। আবারো ভাবতে লাগলো ‘ভালোবাসার অনুভূতি কি কখনো অন্যায় হয়? ভালোবাসা? হ্যাঁ ভালোবাসাই তো। আমি তো স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া ছেলে নই যে ভালোবাসা, ভালোলাগার তফাৎ বুঝবো না, আবেগে গা ভাসিয়ে দেওয়ারও তো কথা না তাইনা?’
________________________

ইমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর আবেগকে ভুলেও প্রশ্রয় দেবে না। নয়তো বন্ধু দের চোখে নিচু হয়ে যাবে। স্পেশালি মুরাদের চোখে। আর যাই হোক বিবেক বর্জন করে বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে পারবে না সে। মুরাদ তাঁকে অনেক বিশ্বাস করে, ভরসা করে। সেই বিশ্বাস সেই ভরসাকে ধুলোয় মিশে যেতে দেবে না কোনভাবেই।
.
সায়ুরী আর ইরাবতী রান্না করছে। কাজের মেয়ে পারুল সবজি কাটছে। মুসকানের শুধু দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছেনা। তাই বললো,
—- সায়ু আপু আমি শশা কাটি?
—- পারবিনা মুসু হাত কেটে যাবে। মুরাদ শুনলে আমাদের বকবে৷ বকা খাওয়ানোর চিন্তা করিস না তো।
—- আমি পারবো আপু। আমি তো আম্মু কে কেটে দেই৷ নিজের খেতে মন চাইলে নিজেই কেটে খাই৷
—- আচ্ছা সাবধানে তাহলে হাত যেনো কাটিস না আবার। ছুঁড়ি দিয়ে কাট।
—- না আমি ছুড়ি দিয়ে কাটতে গেলেই হাত কেটে ফেলবো ছোট বটি আছে তো এটা দিয়েই কাটি। বটি দিয়ে অভ্যাস আছে।

পারুলের পাশে বটি নিয়ে বসেছে মুসকান। একটা শশা নিয়ে যেই কাটতে যাবে তখনি ইমন এসে হাত চেপে ধরলো। আতঙ্কিত গলায় বললো,
—- কি করছিস পাগল হয়ে গেছিস। হাত কেটে যাবে তো৷

মুসকান চমকে তাকালো। পারুলও চমকে গেছে ইমনের অমন ভয়ার্ত গলা শুনে। ইরাবতী আর সায়ু রান্না ঘর থেকে সবটা শুনছে। মুসকান বিরক্তি চোখে চেয়ে আছে। ইমন তাঁকে টেনে তুলে বললো,
—- শশা খাবি তুই পারুল সবজি কাটতে পটু পারুল কেটে দেবে। ওখানে বোস গিয়ে।

সোফায় বসতে বলে ইমন মুসকানের হাত ছাড়লো। চলে যেতে নিয়েও পিছন ঘুরে বললো,
—- কি হলো ওখানে বসতে বলেছি। পারুল এক প্লেট শশা কেটে দে ওকে আগে।

মুসকান মুখটা ভাড় করে শশার দিক তাকালো। পারুল মুসকানের হাত থেকে শশা নিয়ে কাটতে শুরু করলো। মুসকান চুপচাপ গিয়ে সোফায় বসে রইলো। মনে মনে সে চরম বিরক্ত হয়েছে কিন্তু প্রকাশ করলো না।
.
সন্ধ্যার পর দিহান আসে। ইমন তখন রুমে বসে কিছু কাগজপএ দেখছিলো। দিহান মুসকানের সাথে গল্প করলো কিছুক্ষণ। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে সায়ুরীকে বিরক্ত করতে থাকলো। সেম এইজ কাপল তাঁরা সারাক্ষণ টম এন্ড জেরীর মতো ঝগরা লেগেই আছে তাঁদের। তাঁদের কান্ড দেখে ইরাবতী, পারুল, আর মুসকানের তো হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে সায়ুরী বললো,
—- দেখ দিহান তুই যদি এখান থেকে না যাস এই গরম ভাজাকাটা তোর পেটে ঢুকিয়ে দেবো বলে দিলাম।
—- আহ সায়ু এখনো নাম ধরে তুই তুকারি করো এ কেমন কথা। তোমার শাশুড়ী শুনলে তো রেগে যাবে। বললো ইরাবতী।
—- দেখেছেন আন্টি একটুও সম্মান করে না ছেড়িডা আমারে। সারাদিন তুই তুকারি লেগেই থাকে।
—- দেখ দিহান একদম মিথ্যা বলবিনা। ও বাড়িতে তোর নাম ধরে একদমই ডাকিনা আমি।
—- তাহলে কি ধরে ডাকিস? মুখে দুষ্টু হাসি একে বললো দিহান।
সায়রী অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
—- তোর মুন্ডু।
—- এই চুপ চুপ। দুজনই তো দোষী। তুই তুকারি দুজনেই করছো। দাঁড়াও তোমাদের শাস্তির ব্যবস্থা করছি বিচারক সাহেবকে বলে। বললো ইরাবতী।
—- আন্টি প্লিজ এই জোকার টা কে সামনে থেকে সড়তে বলো। ওকে সহ্য হচ্ছে না আমার।
—- কেনো বেপি রাতে তো ঠিকি কাছে টানো, ঠিকই সহ্য করো এখন কি সমস্যা? কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে কথাটা বলেই দৌড়ে পালালো দিহান।

সায়ুরী ক্ষেপে হাতে থাকা ভাজা কাটা নিয়েই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো। ইরাবতী এদের কান্ড দেখে বললো,
—- এই দুজন আর বড় হলোনা। সংসার জীবনে পা রেখেও উন্নতি হলো না। একজন আরেকজনের সাথে লেগেই থাকে।
_________________________

রাত আটটার দিকে দিহানকে দিয়ে মুরাদের জন্য খাবার পাঠিয়ে দেয় ইরাবতী৷ দিহান খাবারটা দিয়ে আসে। বাড়ি আসার পর সবাই একসাথে খেতে বসে। ইমন বেশ চুপচাপ রয়েছে। খুব দ্বিধায় আছে সে। খেতে বসে বারবার চোখ চলে যাচ্ছে মুসকানের দিকে। রুমে বসে নিজেকে বার বার বুঝিয়েছিলো বন্ধুর বোনের দিকে অন্যরকম দৃষ্টি সে কোনভাবেই ফেলবে না৷ অথচ দুমিনিটের জন্যও বন্ধুর বোন থেকে চোখ সরিয়ে রাখতে পারছেনা। এ মূহুর্তে তাঁর মনে হচ্ছে বন্ধুর বোনের আরেক নাম মহাবিপদ। কাছে গেলে হবে দোষ দূরে গেলে হবে কষ্ট।

নিজেকে ভীষণ অপরাধী লাগছে ইমনের। একজন বিচারক হয়ে আজ নিজেকেই নিজে কাঠগোড়ায় দাঁড় করাতে হচ্ছে। অপরাধ হিসেবে চিন্হিত করতে হচ্ছে অদ্ভুত সব অনুভূতি কে। আচ্ছা অনুভূতি কখনো অপরাধী হয়? অপরাধ হিসেবে চিন্হিত করা যায় অনুভূতি কে? অনুভূতিকে কি শাস্তি দেওয়া যায়? যদি অনুভূতির জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা হয় তাহলে তাঁর অনুভূতির কি শাস্তি হবে ?

—- আন্টি আমি আর খেতে পারছি না। আর খাবো না ওঠে যাই? বললো মুসকান৷
—- খাবিনা মানে? তুই তো মাএসাত লোকমা পোলাও, দুটুকরা মাংস, আর সাত পিস শশা খেয়েছিস৷ না মাছ খেয়েছিস না ডিম খেয়েছিস। এভাবে খাওয়া-দাওয়া করিস বলেই তো বারো মাসে তেরো রোগে ভুগিস তুই। এখন ওঠা চলবে না সম্পূর্ণ খাবার শেষ করেই ওঠবি। আস্তে ধীরে খা। শরীরের যা অবস্থা পুরো শরীরে এক ব্যাগ রক্ত পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। একদমে উত্তেজিত হয়ে বললো ইমন।

চলবে।
ভালো লাগছে কি সবার??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here