হৃদপিন্ড ২ পর্ব ৪২+৪৩+৪৪

#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২৮
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ”

উক্ত বাণীটি শুনতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো ইমন। চোখ বুঝে লম্বা এক শ্বাস ছাড়লো। দু’হাতে আবদ্ধ করে নিলো মুসকানকে। মাথায় আলতো চুমু খেয়ে শক্ত করে বুকের ভিতর চেপে রাখলো। শান্ত গলায় বললো,

” আই নিড ইউ মুসকান। আই টোটালি ওয়ান্ট ইউ৷ বাট আই উইল গিভ ইউ টাইম। শুধু আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করো। ”

কেঁদে ফেললো মুসকান এইটুকুনিরই অভাব ফিল করছিলো সে। ক্রন্দনরত অবস্থায় দু’হাতে যতোটা পারে শক্ত করে জড়িয়ে রইলো ইমন’কে।
.
শাড়ির কুঁচি গুলো খুব যত্নশীলহাতে ঠিক করে দিচ্ছে ইমন৷ মুসকানের দৃষ্টিজোড়া আনন্দাশ্রুতে চিকচিক করছে। ইমন তার কাজ সম্পন্ন করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। আঁচল টা ঠিকভাবে গুছিয়ে দিয়ে ভাবুক কন্ঠে বললো,

“এবার ঠিকঠাক লাগছে। বিয়ের সপ্তম দিন অবদি অবশ্যই সর্বক্ষণ শাড়িতে দেখতে চাই। ”

মাথা ঝাকালো মুসকান। নিম্নস্বরে প্রশ্ন করলো,

“রাগ কমেছে? ”

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইমন। রাগ যদিও পড়ে গেছে তবুও গতরাতের কথা ভাবতেই ইচ্ছে করছে কঠোর হতে। কিন্তু তার কঠোরতায় যে মেয়েটা মিইয়ে যাচ্ছিলো। মুখ ফুটে যখন বলছিলো তার খুব কষ্ট হচ্ছে তখন তার বুকের ভিতর অস্থির হয়ে ওঠেছিলো। নিজের রাগটাকে ধামাচাপা দিয়ে নিজেকে সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ করে সেক্রিফাইস শব্দটাকেই বেছে নিলো। ভাবনার মাঝেই দু’বার হাঁচি দিয়ে ওঠলো ইমন৷ বৃষ্টিতে ভেজার ফল বুঝি কঠিন নিয়মেই ভুগতে হয় এবার! বারকয়েক হাঁচি দিয়ে ধীরে ধীরে পা এগিয়ে বিছানায় বসলো। মুসকান উদগ্রীব হয়ে ইমনের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“এখন কি হবে? ”

ইমন ভ্রু কুঁচকে ইশারা করলো,

” কি? ”

“ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে তো। ”

“কিছু হবে না এতো অল্পতেই ভয় পেলে চলবে নাকি লাইট অফ করে দিয়ে আসো। ”

মুসকান চিন্তান্বিত হয়ে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে দিলো। ইমন শুয়ে পড়লো শরীরটা তার ভীষণ উইক লাগছে। জ্বরে আক্রান্ত হবে বেশ বুঝলো কিন্তু কিছু বললো না আর না মেডিসিন খাওয়ার কথা ভাবলো। বউ আছে কাছে, বউয়ের থেকে বড়ো মেডিসিন হয় নাকি? নতুন নতুন বিয়ে করে নতুন নতুন জ্বরই বোধ হয় আসবে। নতুন নতুন সেবা যত্নও পাওয়া যাবে৷ ভাবতে ভাবতেই দুর্বল শরীরটা ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো। এদিকে মুসকান সব টিপটাপ করে ইমনের গা ঘেঁষে শুতেই অত্যাধিক উষ্ণতা অনুভব করলো। ইমনের ভারী নিঃশ্বাসের শব্দে বুঝলো সে ঘুমিয়ে গেছে। তাই আর কিছু না ভেবে গা ঘেঁষে একহাতে জড়িয়ে গুটিশুটি হয়ে সেও ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু শেষরাতে ইমনের শরীরের মাত্রাতিরিক্ত তাপে টিকতে পারলো না সে। ঘুম ছেড়ে গেলে বুঝতে পারলো ইমন মৃদু কাঁপছে। চোখ কচলে হাত বাড়িয়ে ললাট স্পর্শ করতেই বুকের ভিতর টা ধক করে ওঠলো তার। দুচোখ জলে ভরে ওঠলো। হাত, পা কাঁপতে শুরু করলো ভয়ে। পাতলা কাথা টেনে ইমনের গায়ে জড়িয়ে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে ইরাবতী’কে ডাকার জন্য ছুটে গেলো।

দরজায় বেশ কয়েকবার ঠকঠক শব্দ শুনতেই বিছানা ত্যাগ করে ওঠে আসে ইরাবতী। দরজা খুলে মুসকান’কে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখতে পেয়ে হকচকিয়ে যায় সে। বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করে,

“কি হয়েছে মা কাঁদছো কেন? ”

মুসকান হেঁচকি তুলে বললো,

“নানাভাইয়ের খুব জ্বর এসেছে কেমন যেনো করছে তুমি তাড়াতাড়ি আসো। ”

ভ্রু কুঁচকে দ্রুত পায়ে ইরাবতী ছুটে গেলো ছেলের ঘরে। ছেলের কপাল, গলা চেক করে কিছুক্ষণ জলপট্রি দিয়ে জ্বরের মেডিসিন খাওয়িয়ে দিলো। ইমন আধঘুম অবস্থায় মাথা,কপাল টিপে দিতে বললো। মুসকান তাই করলো। ইরাবতীও বেশ কিছু সময় বসে থেকে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য নিজ রুমে গেলো। যাওয়ার আগে মুসকানকে বলে গেলো,

“এভাবে কান্নাকাটি করলে কি ইমন সুস্থ হবে? নামাজ টা পড়ে নাও আর স্বামীর একটু খেয়াল রাখো। কাল রাতে কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফিরেছে। নিজের প্রতি ইদানীং অনেক বেশিই অযত্ন করছে। আমি আর কতো এই ছেলেকে বোঝাবো এবার তো দায়িত্ব নিতে শিখতে হবে মুসু। ”

ইরাবতীর দীর্ঘশ্বাসগুলো মুসকানের বুকে চিনচিনে ব্যাথা দিলো। কেন যেনো তার এই দীর্ঘশ্বাসে আফসোসের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। আর সে আফসোস তাকে ঘিরেই। ইরাবতী এই ভেবে আফসোস করছে না তো যে তার ছেলের জন্য মুসকান হয়তো উপযুক্ত নয়। মুসকান তার ছেলেকে সামলাতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ কিলবিল করছে না তো তার মনে?

মনের ভিতর অজস্র প্রশ্নগুলো জমা রেখে ইমনের বুকে মাথা রাখলো মুসকান। ফুঁপিয়ে ওঠে বললো,

“আর কখনো আমি তোমাকে ভিজতে দেবো না। আর কখনো তোমার অযত্ন করবো না, আর কখনো তোমার অবাধ্য হবো না। একবার তুমি ঠিক হয়ে যাও আমার খুব কষ্ট হচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। ”

জ্বরের ঘোরেই ইমন মুসকানের মাথায় এক হাত রাখলো। অস্ফুট স্বরে বললো,

“আমি ঠিক আছি মুসু এভাবে কাঁদছো কেন? ”

মাথা তুলে তাকালো মুসকান ইমন আধোআধো চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মুসকান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছলো। ইমন তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে মোহনীয় সুরে আবদার করলো,

“মুসু কিস মাই লিপস ওয়ান্স প্লিজ। ”

শব্দ করে কেঁদে ফেললো মুসকান। বুকটা ভারী হয়ে ওঠলো খুব। ইমনকে এভাবে দেখে এভাবে আবদার শুনে অদ্ভুত এক ভয় জেঁকে বসলো তার মনে। ইমনের ঝাপসা দৃষ্টিজোড়া ঝড় বইয়ে দিলো তার অন্তরে৷ কোন কিছু বুঝলো না সে কোন কিছু বুঝতে চাইলো না। আর না পরোয়া করলো কোন প্রকার লজ্জার। দৃষ্টিজোড়া বদ্ধ করে কেবল এগিয়ে গেলো ইমনের ওষ্ঠজোড়ার দিকে। দু’জোড়া ঠোঁট একে অপরের সঙ্গে মিলিত রইলো কয়েক সেকেণ্ড। জ্বরের ঘোরেও প্রিয়তমার ওষ্ঠের নেশায় মত্ত হতে ভুলেনি ইমন। মুসকান যখন ছাড় পাওয়ার জন্য ছটফট শুরু করলো ছেড়ে দিলো ইমন। হাঁপানো সুরে মুসকান বললো,

“আমি নামাজ পড়ে আসি। ”

চোখ বুজা অবস্থায় মৃদু হেসে সায় দিলো ইমন। লজ্জায় মাথা নুইয়ে ওঠে ছুটে পালালো মুসকান।
.
ঠিক চারদিনের মাথায় জ্বর কমলো ইমনের। মুরাদ, দিহান,সায়রী দেখতে এসেছে ইমনকে। সেই সাথে দিহান সকলকে মিষ্টি মুখও করাতে এসেছে। মুসকান ইরাবতী আর পারুলকে হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে। সকলে বসে আছে ড্রয়িংরুমে। কথায় কথায় দিহান মুখ ফস্কে বলে ফেললো,

“এবার তিন নাম্বার বেবি আসার অপেক্ষায়। ইমন শোন আমি কিন্তু কষ্ট কইরা ছেলের বউ খুঁজতে পারুম না৷ তোর মেয়েরেই পুত্রবধু বানামু। ”

কফির মগে লাষ্ট চুমুক দেওয়া অবস্থায় কেশে ওঠলো ইমন৷ চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো মুরাদের। সায়রী বিরবির করে দিহানকে গালাগাল করতে লাগলো। ইমন কাশি থামিয়ে চোখ কটমট করে তাকালো। মুরাদ অপ্রস্তুত ভণিতায় মৃদু হেসে বললো,

“তোরে বন্ধু বানাইয়াই যে বিপদে পড়ছে বেয়াই বানাইয়া পাগলা গারদে যাওয়ার দরকার নাই। ”

শব্দ করে হেসে ওঠলো সায়রী। দিহান সায়রীর বাহুতে চিমটি কেটে বললো,

“আরে ঘরে শত্রু বিভীষণ দাঁত কেলানি বন্ধ না করলে প্রতিটা দাঁত খুলে ব্রেসলেট বানাই হাতে দিমু।”

হাসি থামিয়ে বিরক্ত হয়ে ওঠে দাঁড়ালো সায়রী। গটগট পায়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে ইমন আর মুরাদকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“ফালতু বকবক শোনার একদম মুড নাই থাক তোরা। ”

“আরে আরে সাদির আম্মু কি করছো কি। রেগো না রেগো না আমার সাদি যদি তোমার মতো রাগি হয় বিপদ হয়ে যাবে আমার। একদিকে ছেলের রাগ অপর দিকে ছেলের মায়ের রাগ মাঝখানে আমি মাসুম বাচ্চা! ”

ইমন আর মুরাদ হা করে তাকিয়ে রইলো দিহানের দিকে। মুরাদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে প্রশ্ন করলো,

“এই সাদিটা কে? ”

“আরে বাল বুঝোনা বউ তোমার ছয় মাসের বাচ্চা পেটে নিয়া ঘুরতাছে আর তুমি ভেজা বেড়াল সাজতাছো? আমার বউয়ের পেটে যে আমার দুইমাসের পোলা আছে তা জানো না? আর আমার বউয়ের নামের প্রথম লেটার আর আমার প্রথম মিলাইয়া সাদি রাখছি এইডাও বুঝোনাই, তুমি আমার কি বাল বুঝো? ”

“শালা এলিয়েনের বাচ্চা তুই পারিসও বটে। ”

মুরাদ আর দিহান একে অপরকে পঁচাতে,হাসি তামাসা খুনসুটি করতে ব্যস্ত আর ইমন সোফায় বসে রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে একমনে মুসকানকে দেখতে ব্যস্ত। মেয়েটা কটাদিন না খেয়ে না ঘুমিয়ে শুধু তার সেবাই করে গেছে। কান্নাকাটি করে বিদঘুটে অবস্থা তৈরি করে ফেলেছিলো। সামান্য জ্বরেই এই অবস্থা কখনো তার বড়ো কোন অসুখ করলে ভয়ংকর পরিস্থিতি হয়ে যাবে। আর যদি সে এ পৃথিবী থেকে চলে যায় মেয়েটাও হয়তো বাঁচবে না। চোখ বন্ধ করে ফেললো ইমন বুক ভারী হয়ে গেলো। বিরবির করে কেবল কিছু বাক্যই উচ্চারণ করলো,

“আমার মৃত্যু ঘটলে এই মেয়েটাকে দেখে রাখবে কে? শেষ অবদি পারবোতো ওকে আগলে রাখতে? বয়সটা আমার সত্যিই অনেক বেশি হয়ে গেলো না, আমি কি পারবো সারাজীবন ওকে আগলে রাখতে?”
_____________________
রাত প্রায় এগারোটা ছুঁই ছুঁই। ইমন মুরাদ আর দিহানের সঙ্গে বাইক নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে। তাই ফিরতে হয়তো আরো অনেক সময় লাগবে। ইরাবতী আর আকরাম চৌধুরী ডিনার শেষ করে মুসকানের সঙ্গে বসে টিভি দেখছে। যদিও মুসকান ভাত খায়নি তবুও তার পেট খালি নেই। ইমনকে ছাড়া সে ভাত খাবে না তাই ইমন সন্ধ্যার দিকেই তার পছন্দের চিকেন উইংস আর চকোলেট কিনে দিয়ে গেছে। সেগুলো খাওয়ার ফলেই তার পেট ভরা৷ টিভি দেখতে দেখতে সোফায়ই গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে গেলো মুসকান। আকরাম চৌধুরী ওকে দেখে ইরাবতী’কে বললো,

“ছেলেকে ফোন দাও ইরা রাত কতো হলো খেয়াল আছে? মেয়েটা না খেয়ে অপেক্ষা করছে এখন সে বিবাহিত তা কি ভুলে গেছে? ”

“তুমি উপরে যাও আমি ইমনকে ফোন করছি। ”

আকরাম চৌধুরী উপরে চলে গেলেন৷ ইরাবতী ইমনকে কল দেবে ঠিক তখনি কলিং বেল বেজে ওঠলো। সঙ্গে সঙ্গেই ধড়ফড়িয়ে ওঠলো মুসকান৷ ইরাবতী বললো,

“আমি খুলছি আস্তে ধীরে ওঠো তুমি। ”

দরজা খুলেই ইরাবতী বেশ বকাঝকা করলো। ইমন মুচকি হেসে বললো,

“উফফ মা কতো দিন পর বেরিয়েছি আর তুমি বকছো? কদিন পর তো শুধু অফিস টু বাড়ি অফিস টু বাড়ি একটা দিন যতো পারি ঘুরাঘুরি করে নেই। ”

বলেই ভিতরে উঁকি দিয়ে মুসকানকে দেখে নিলো। ইরাবতী সরে দাঁড়িয়ে ইমনকে যাওয়ার জায়গা করে দিয়ে দরজা আঁটকে দিলো। তারপর মুসকান কে বললো,

“তোমরা খেয়ে শুয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে। ”

ইমন সোফায় বসেছে মুসকান তাকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিলো। গ্লাস হাতে নিয়ে ইমন মা’কে জিগ্যেস করলো সে আর তার বাবা খেয়েছে কিনা? ইরাবতী জবাব দিয়ে বললো,

“মুসু বাদে সবাই খেয়েছে এবার মেয়েটাকে খেতে দে।”

বলেই গটগট পায়ে উপরে ওঠে গেলো ইরাবতী। ইমন পানিটা শেষ করে মুসকান কে ফেরত দিয়ে বললো,

“আমি খেতে দেবো? ভাত বেড়ে দিতে হবে? ”

বিরক্ত হয়ে এক পলক তাকিয়ে সোজা খাবার বাড়তে চলে গেলো মুসকান৷ বিরবির করে বললো,

“নিজেই খাওয়ার সময় পায়না সে নাকি আমাকে ভাত বেড়ে দেবে। ”

ইমন ঝড়ের গতিতে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। বললো,

“সিরিয়াসলি জান একটুও সময় পাচ্ছি না আমার এই হাতটাও আজ বড্ড ব্যস্ত খাওয়িয়ে দিলে খুব উপকার হতো। ”

আড়চোখে তাকিয়ে খাবার বেড়ে ইমনের পাশে বসলো মুসকান। বললো,

“সহযোগিতা করলে ভালো হয়। ”

ইমন বাঁকিয়ে তাকিয়ে ওষ্ঠকোণে দুর্বৃত্ত হাসি ফুটিয়ে তুলে চট করে মুসকানকে দু’হাতে উচিয়ে ডায়নিং টেবিলের ওপর বসিয়ে দিলো। মুসকান মৃদু চিল্লিয়ে বললো,

“কি করছো কি আরে…”

ইমন হাসি হাসি মুখে মুসকানের সম্মুখে বসে বললো,

“এবার সুবিধা হবে। ”

মুসকান কিছুক্ষণ চুপ থেকে আচমকাই হেসে ফেললো। কিছুটা লজ্জাও পেলো। তারপর যত্নসহকারে ভাত মেখে খাওয়িয়ে দিতে লাগলো। ইমনও মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে তৃপ্তি সহকারে খাবারটা শেষ করলো। ইমনের খাওয়া শেষে মুসকান নিজের জন্য অল্প ভাত বেড়ে চেয়ারে বসলো। ইমন তখন চুপচাপ বসে ফোন ঘাটছিলো। হঠাৎই ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মুসকানের দিকে ঝুঁকে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

“তাড়াতাড়ি উপরে আসবে আমি ওয়েট করছি। ”

মুখে খাবার তুলে চিবুতে চিবুতে মাথা ঝাকালো মুসকান। ইমন দুষ্টু হেসে এবার তার উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে কানের কাছে ওষ্ঠ ছুঁই ছুঁই করে বললো,

“ফুল প্রিপারেশন নিয়ে আসা চাই। ”

আঁতকে ওঠলো মুসকান। আতঙ্কিত দৃষ্টিজোড়া মেলেও ধরলো ইমনের দৃষ্টিতে। নিঃশ্বাসে বেড়ে গেলো চঞ্চলতা। বক্ষঃস্থলে কম্পন ধরলো খুব। ইমন মুসকানের মুখশ্রী’তে আলতো ফুঁ দিয়ে আবেগঘন স্বরে বললো,

” ফোর্স করবো না মুসু শুধু অপেক্ষাতে থাকবো। ”

আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না ইমন। সোজা চলে গেলো উপরে। তার দৃঢ় বিশ্বাস আজ মুসকান তাকে ফিরিয়ে দেবে না। আর মুসকান ভাতের থালা রেখে দিয়ে সব গুছিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে চলে গেলো উপরে। সব ভয়, লজ্জাকে কাটিয়ে ওঠার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করে রুমে প্রবেশ করলো। ছোট্ট একটি শ্বাস ত্যাগ করে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো আর বিরবির করে নিজেই নিজেকে প্রশ্ব করলো,

“আর কতো অপেক্ষা করাবি মানুষ টাকে? আর কতো ধৈর্য্য ধরবে সে? আর কতোই বা সেক্রিফাইস করবে তোর জন্য? তার নিজেরও তো একটা চাওয়া, পাওয়া রয়েছে। তোর নিজেরও কি নেই মুসু তুই কি চাস না সম্পূর্ণরূপে তার হয়ে ওঠতে? ”

নিজের মনে প্রশ্ন গুলো করে নিজেই উত্তর দিলো,

” আমি সম্পূর্ণই তার হতে চাই। ”

“কার? ”

“তোমার ”

আর দেরী করলো না ইমন ঘোরের মাঝে মুসকান তার মনের যে সত্যিটা প্রকাশ করে দিয়েছে তা তাদের দুজনকে একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে মিলিত করার জন্য যথেষ্ট ছিলো। ইমন যখন তাকে পাঁজাকোল করে বিছানার দিকে এগুতে লাগলো সে তখন মৃদু কেঁপে ওঠলো। হুঁশে এসে বুঝলো সে কি ভয়ংকর বাক্য এবং শব্দ উচ্চারণ করে ফেলেছে!
#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২৯
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
আর দেরী করলো না ইমন ঘোরের মাঝে মুসকান তার মনের যে সত্যিটা প্রকাশ করে দিয়েছে তা তাদের দুজনকে একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে মিলিত করার জন্য যথেষ্ট ছিলো। ইমন যখন তাকে পাঁজাকোল করে বিছানার দিকে এগুতে লাগলো সে তখন মৃদু কেঁপে ওঠলো। হুঁশে এসে বুঝলো সে কি ভয়ংকর বাক্য এবং শব্দ উচ্চারণ করে ফেলেছে!

সর্বাঙ্গ কাঁপছে মুসকানের। একজোড়া মানব-মানবীর নিঃশ্বাসের তীব্র শব্দে পুরো ঘর মুখরিত হয়ে ওঠেছে। মুসকানের ভয়ার্ত মুখশ্রী সারা শরীরে ভয়ংকর কম্পন ওঠায় কিছুটা দুঃশ্চিতায় পড়ে গেলো ইমন৷ দু’হাতে বিছানা খামচে ধরে ঠোঁট কামড়ে কাঁপছে মুসকান। ইমন নিজের শার্টের বোতামগুলো পরপর খুলে দেহ থেকে শার্টটি বিচ্যুত করে ফেললো। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো মুসকানের দিকে। একহাত মুসকানের থুতনিতে রেখে মুখ উঁচিয়ে মাতোআরা সুরে বললো,

“আমার মনে হয় আরো সময় নেওয়া উচিৎ। ”

চোখ বুজেই ভয়ানকভাবে শ্বাস নিতে থাকলো মুসকান। ইমন বুঝলো সত্যি মুসকানের সময়ের প্রয়োজন তাই ওঠার জন্য উদ্যত হলো। মুসকান যখন টের পেলো ইমন সরে যাচ্ছে তখন আঁতকে ওঠে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে একহাতে খামচে ধরলো ইমনের হাত। ইমন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। মুসকান তাকে চাইছে আবার ভয়ও পাচ্ছে। কতোটা নার্ভাস হয়ে আছে তা কেবল ওর চোখে মুখেই স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। পুরো মুখশ্রীতে ঘামগুলো চকচক করে ওঠেছে৷ ঘাম জমেছে নাকে ওষ্ঠের উপরে, থুতনিতে। বক্ষঃস্থল করছে ক্রমশ ওঠানামা। এই অনুভূতি হবেই না বা কেন? একজন পুরুষ কে যে কিনা তার স্বামী তার কাছে নিজেকে পুরোপুরি বিলিয়ে দেবে। হয় যদি প্রথম অনুভূতি তাহলে তো বোঝাই যায় কতোটা ঝড় কতোটা যন্ত্রণাময় সুখ মিশ্রিত থাকে। ইমনও ঠিক বুঝলো মুসকানের ভিতর কি চলছে৷ তাই আর দূরত্ব নয় এভাবে আর সময় নেওয়ার মানে হয় না৷ বরং মুসকানের ভয়টুকুকে জয় করতে হবে। দূরে নয় কাছে গিয়ে এই ভয় দূর করতে হবে। হাজব্যান্ড ওয়াইফ তারা তাদের মাঝে কিঞ্চিৎ পরিমাণও দূরত্ব থাকতে পারেনা। একে অপরের কাছে নিজেকে মেলে ধরার প্রথম ধাপ বোধহয় আজ থেকেই শুরু৷

লম্বা এক শ্বাস ছাড়লো ইমন। অজস্র মায়া ভরা আদরে ভরিয়ে তুললো মেয়েটাকে। অন্যসব পুরুষদের মতো প্রথম মিলনে স্ত্রী’র যন্ত্রণায় সুখ খুঁজে পেলো না। বরং আফসোস হলো কেন এতোটা কষ্ট পেতে হলো মুসকান’কে?
.
রাত তখন বেশ গভীর। পুরো শরীর ভয়ংকর মাত্রায় কাঁপছে মুসকানের৷ দুচোখ বেয়ে ঝড়ছে অজস্র অশ্রুকণা। মুসকান’কে বুকে জড়িয়ে স্থির হয়ে শুয়ে আছে ইমন৷ কষ্ট হচ্ছে তার খুব কিন্তু করার সত্যি কিছু নেই। কিছু সুখ থাকে যা কেবল যন্ত্রণা দিয়েই পাওয়া যায়। যেমনটা একজন মা হাজারো ত্যাগ স্বীকার করে অকুলান প্রায় ব্যাথা সহ্য করে একটি শিশুকে জন্ম দেয় এবং তার ওষ্ঠকোণে ফুটে ওঠে সার্থকতার এক হাসি। পৃথিবীতে এমন অনেক যন্ত্রণা রয়েছে যা প্রতিটি মানুষই স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে কেবল মাত্র সুখের আশায় বড়ো কিছু প্রাপ্তির আশায়। সুখ জিনিস টা এমনই এক জিনিস যা দুঃখের সংস্পর্শে না এলে পাওয়াই যায় না৷ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুসকানের মাথায় আলতো হাত বুলালো ইমন। এক সময় বুকে মুখ গুঁজেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো মুসকান। ইমন হাত বাড়িয়ে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে ফোন করলো দিহান’কে। কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করে দিহান বললো,

“কিরে এই রাতে জাইগা ক্যা তুই? ”

“সকাল সকাল সায়রী’কে পাঠিয়ে দিস দিহান। ”

“কি হইছে তোর কন্ঠ এমন শোনায় কে? সিরিয়াস কিছু হইছে কি? ”

“এতো প্রশ্ন করিস না জাষ্ট সায়রী’কে পাঠাবি। ”

এটুকু বলেই কেটে দিলো ইমন। মুসকানের মাথা একটি গভীর কিস করে চোখ বুজে ভারী শ্বাস ছাড়তে লাগলো।
.
ফজরের আজান পড়েছে মাত্র। ইমন মুসকান’কে কয়েকবার ডাকলেও সে ওঠলো না। গালে আলতো থাপ্পড় দেওয়ায় একটু নড়ে ওঠে আধোচোখে তাকালো। ইমন আলতো হেসে বললো,

“মুসু আজান দিয়েছে শাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়তে হবে। ”

আঁতকে ওঠে পরোক্ষণেই মিইয়ে গেলো মুসকান। বুকে মুখ গুঁজে গভীর এক শ্বাস ছাড়লো। ইমন আবারো তাগাদা দিতে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো মুসকান। ইমনের বুকটা কেঁপে ওঠলো একগাল ছুঁয়ে বললো,

” ওঠতে হবে। ”

সায় দিয়ে ওঠতে উদ্যত হলো মুসকান। কিন্তু ইমন বাঁধা দিলো। তারপর নিজে ওঠে এলোমেলো শাড়িটা দিয়ে মুসকানকে পেঁচিয়ে কোলে তুলে নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।
.
বিছানার একপাশে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে মুসকান। আধঘন্টা হয়ে এলো ইমন তাকে প্রশ্ন করছে কি সমস্যা হচ্ছে কিন্তু মেয়েটা কিছুই বলছে না৷ প্রতিবার কোন সমস্যা হচ্ছে না আওড়াচ্ছে। অথচ তার হাবভাবে স্পষ্ট বিরাট সমস্যা হচ্ছে। হয়তো লজ্জার জন্যই বলতে পারছে না৷ বিরক্ত হয়ে সায়রীকে কল করলো ইমন। নিচে কল করে পারুলকে বলেও দিলো মুসকান, সায়রী আর তার জন্য পাস্তা বানাতে। পাস্তা বানাতে বানাতেই সায়রী হাজির হলো। ইরাবতী তখন রান্না ঘরে রান্নায় ব্যস্ত। আকরাম চৌধুরী রেডি হয়ে বের হচ্ছেন কোথাও। সায়রী তাদের সাথে আলাপচারিতা শেষ করে উপরের দিকে পা বাড়ালো । রুমের সামনে গিয়ে ঠকঠক করতেই ইমন বললো,

“আয় দরজা খোলাই আছে। ”

সায়রী রুমে প্রবেশ করতেই অস্বস্তি, লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেলো মুসকান। এক ঢোক গিলে আরেকটু গুটিয়ে ওড়না দিয়ে বেশ ভালো মতোন গা ঢেকে বসলো। সায়রী বেশ খোশমেজাজে ইমনের পাশে গিয়ে সোফায় বসলো। ইমন ল্যাপটব অফ করে বেশ নিচু গলায় বললো,

“আমি বাইরে যাচ্ছি ওর কি সমস্যা হচ্ছে সবটা শুনে সমাধান দিবি। ”

সায়রী ভ্রু কুঁচকে গলা উঁচিয়ে বললো,

“সমস্যা আবার কি সমস্যা মুসুর কি হয়েছে? মুরাদ জানে ওকে ফোন দিসনি আমি কি ফোন করবো? ”

বলেই দ্রুত ব্যাগ থেকে ফোন বের করলো সায়রী। ইমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওর হাত চেপে ধরলো। দাঁত চিবিয়ে বললো,

“আরে মহিলা উই বিকেম ইন্টিমেট ফর দ্যা ফার্স্ট টাইম! ”

“হোয়াট এতোদিনে কি বলস! ”

“দেখ আমি খুবই চিন্তিত প্লিজ হেল্প মি বাইরে যাচ্ছি আমি। ”

ইমন বাইরে চলে গেলো। সায়রী বিস্ময়ান্বিত হয়ে ইমনের যাওয়ার পান থেকে চোখ ফিরিয়ে মুসকানের দিকে তাকালো৷ মুসকান লজ্জায় মাথা নত করে ফেললো। দু’চোখে তার জলে ভরা৷ সায়রী নিজেকে স্বাভাবিক সত্তায় ফিরিয়ে এনে দ্রুত পায়ে মুসকানের কাছে গিয়ে বসলো৷ দু’হাতে মুসকানের কাঁধ চেপে ধরে বললো,

“মুসু তোর কি সমস্যা হচ্ছে ? ”

মুসকান কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে সায়রী’কে তার সমস্যা বললো সায়রী তাকে আশ্বস্ত করলো। বললো,

“ফার্স্ট টাইম তো এটা স্বাভাবিক ঠিক হয়ে যাবে ভয়ের কিছু নেই। বাট একটা সত্যি বলতো এই এতোদিনে ইমন তোর কাছে আসেনি? ”

মাথা নাড়ালো মুসকান সায়রী অবাক হয়ে বললো,

“বলিস কি বিয়ে করে বউ ঘরে রেখে দিছিলো? আল্লাহ ইমন ব্যাটার তো বেশ ধৈর্য্য। শুধু এরেন্জ ম্যারেজ হলে না হয় মানা যেতো লাভ ম্যারেজেও এতো ছাড় পাইছিস তুই কি ভাগ্যবতীরে। ”

লজ্জা পেলো মুসকান। সায়রী কথায় কথায় মুসকানকে ভালোভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে সাহস যোগালো মনে। ততোক্ষণে ওদের জন্য খাবার নিয়ে এলো পারুল। ইমনও চলে এলো তারপর তিনজন এক সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করলো। সায়রীর ক্লাস আছে তাই ইমনই ওকে স্কুল অবদি ড্রপ করে দিলো। এদিকে ইরাবতী মুসকান’কে নিচে নামতে না দেখে নিজেই উপরে চলে এলো। বললো,

“শরীর খারাপ নাকি মুসু? ”

ইরাবতী কে রুমে দেখেই চটপট বিছানা থেকে ওঠতে নিলো মুসকান। কিন্তু পারলো না ইরাবতী ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো তারপর নিজেই কাছে এসে বিছানায় বসলো। মুসকানও বসে পড়লো আমতা আমতা করে বললো,

“একটু জ্বর আর ঠান্ডা লেগেছে। ”

“ওষুধ খেয়েছো? দেখেছো ইমনের কাণ্ড তোমার জ্বর আর আমাকে বলেও নি। ”

কথাগুলো বলতে বলতেই মুসকানের কপাল চেক করে গলায় স্পর্শ করলো। সঙ্গে সঙ্গে শিউরে ওঠলো মুসকান। আঁতকে ওঠে হাত সরিয়ে ইরাবতী মুসকানের গলা দেখতেই লজ্জায় পড়ে গেলো খুব। মুসকানও মাথা নুইয়ে ফেললো। তার স্বামী যে আজ অজস্র লাভ বাইটে ভরিয়ে তুলেছে তার সর্বাঙ্গ। ইরাবতী ইতস্ততভাবে ওঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“আমি পারুলকে দিয়ে জ্বরের ওষুধ পাঠাচ্ছি। ”

“আমি খেয়েছি মা। ”

“তাহলে রেষ্ট করো নিচে আসার দরকার নেই। ”

বলেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো ইরাবতী। স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো মুসকান। আর কতো লজ্জা পেতে হবে তাকে? ইশ পরিস্থিতি গুলো কি বিদঘুটে!
____________________
সারাদিন শুয়ে বসেই কাটলো মুসকানের। ইমনও কিছুটা ব্যস্ততায় কাটালো। প্রকৃতিতে নির্মল বাতাস বইছে। সময়টি বিকালবেলা। লম্বা লম্বা চুলগুলো আঁচড়ে বেঁধে ফেললো মুসকান। আয়নার সামনে দাঁড়াতেও আজ তার লজ্জা লাগছে খুব। পুরো মুখশ্রীতে যেনো ছেয়ে আছে ইমনের প্রেমময় স্পর্শ। ইমনের সেই উন্মাদ রূপটি যতোবার মনে পড়ছে ততোবারই নিঃশ্বাস ভারী হয়ে ওঠছে তার। মানুষটা কেমন অস্বাভাবিক হয়ে গেছিলো, তার কষ্টে ব্যাকুলও হয়ে পড়েছিলো খুব৷ নিঃসন্দেহে মানুষ টা তাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। তার কষ্টে আহত হয় মানুষটার হৃদয়। এতো ভালো কেন বাসে? এমন যন্ত্রণাময় সুখের স্পর্শ কেন দেয়? প্রেম মানেই কি যন্ত্রণা, ভালোবাসা মানেই কি সুখ? তার জীবনে ইমন চৌধুরী মানেই প্রেম, ইমন চৌধুরী মানেই ভালোবাসা। ইমন চৌধুরী মানেই যন্ত্রণাময় সুখ। ভাবনার অতল গহ্বরে হারিয়ে গেলো মুসকান। ইমন যে কখন তার পিছনে এসে চুপটি করে দাঁড়িয়েছে একটুও খেয়াল করেনি৷ কিন্তু যখন এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। মাতালকরা স্পর্শে শিহরিত করে তুললো তীব্র উত্তেজনায় কেঁপে ওঠলো বুক। পিছন ঘুরতে চেয়েও পারলো না৷ কারণ তার প্রেমিক পুরুষটি তার মাঝে বিভোর হয়ে গেছে। রাতে উন্মাদের মতো যে স্পর্শগুলো শরীরে বিশেষ ক্ষত তৈরি করেছে। সে ক্ষতগুলোতে এখন পরম আবেশে ওষ্ঠাধর ছোঁয়াচ্ছে।
.
তিনমাস পর –

রিমির ডেলিভারির সময় হয়ে গেছে। বাড়ির সবাই তাকে নিয়ে গেছে হসপিটালে। ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে ইমনকে ফোন করে মুসকান জানায় সে হসপিটাল যাবে। ইমন তাকে বলে বাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে হসপিটাল যেতে ডেলিভারি চারটায় তখন বাজে দু’টা৷ কিন্তু মুসকান ইমনের কথা শুনে না৷ সে এতোটাই এক্সাইটেড কিসের গোসল কিসের খাওয়া। সে জাষ্ট হসপিটাল যাবে৷ ইমন কড়াভাবে বলার পরও মুসকান শুনে না সে অলরেডি সিএনজি নিয়ে নিয়েছে। অফিসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিলো ইমন৷ তারমধ্য মুসকান তার অবাধ্য হচ্ছে অযৌক্তিক বায়না করছে৷ তাই রাগ সামলাতে না পেরে জোরেশোরে এক ধমক দিলো। সঙ্গে সঙ্গে মাথা গরম করে ফোন অফ করে দিলো মুসকান। পৃথিবী উলটে গেলেও সে হসপিটাল ব্যতিত বাড়ি যাবেনা৷ কারণ বেবি হওয়ার পর সেই ফার্স্ট কোলে নেবে তাকে। বেবির নামটাও সে রাখবে। তাই ফোন অফ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে ইমনের চ্যাপ্টার ক্লোজ করে নতুন সদস্যটিকে নিয়ে কল্পনা জল্পনা করতে শুরু করলো। ছোট থেকেই সে বাচ্চা ভীষণ ভালোবাসে। আপনজন না হলেও অন্যদের বাচ্চাদেরই কতো আদর করে আর আজ তো তার নিজের ভাইয়ের বাচ্চা হবে। একদিকে খালামুনি অপর দিকে ফুপুমনি তার অনুভূতি কি ইমন বুঝবে নাকি। একটা ভেঙচি দিয়ে আনন্দের সহিত হসপিটাল চলে গেলো সে।

এদিকে আচমকাই ফোন অফ করায় চিন্তিত হয়ে পড়লো ইমন। বার বার ফোন করেও পেলো না৷ রাগ হচ্ছে ভীষণ এ মূহুর্তে মুসকানকে সামনে পেলে হয়তো কয়েকটা থাপ্পড় অনায়াসে দিয়ে দিতো। এতো ত্যাড়ামি সত্যি আর সহ্য করা যাচ্ছে না। সাড়ে তিনমাস হলো বিয়ে হয়েছে তাদের৷ এই তিনমাসে জাষ্ট একটা জিনিস নিয়েই সে হাঁপিয়ে গেছে তা হলো এই মেয়ে ঠিকভাবে খাবারটা খায় না। সারাদিন অফিস করে ঘ্যানঘ্যান করে খাওয়াতে আর কতো ভালো লাগে? কখনো কখনো মনে হয় মুসকান খুবই ম্যাচিওর আবার কখনো কখনো একেবারেই বাচ্চা। নানারকম টেনশন নিয়েই অফিস শেষ করলো ইমন। বিকাল পাঁচ টা বাজে তখন৷ দিহান ফোন করে জানালো মুরাদের ছেলে হয়েছে। খবর শুনে ইমন বললো,

“আলহামদুলিল্লাহ ছেলের বাপ খুশিতো? ”

“বহুত…”

“মুসকান কি করে? ”

“সে বেবি নিয়ে ব্যস্ত। তুই আয় একবার দেখে যা। ”

“আসছি মুসকান’কে নিতে তো আসতেই হবে। ”
.
কেবিনের বাইরে বসে আছে ইমন। সারাদিনের ক্লান্তি তার চোখে মুখে স্পষ্ট। মরিয়ম আক্তার মুসকান’কে বোঝাচ্ছে বাড়ি যেতে ইমন অপেক্ষা করছে। কিন্তু মুসকান এক পা’ও নড়তে নারাজ। অপেক্ষা করতে করতে ইমনের মাথা এবার সিরিয়াস গরম হয়ে গেলো। মুরাদ আর দিহানের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

“আমি কি ভিতরে যাব নাকি তোরাই ওকে আনার ব্যবস্থা করবি। ”

দিহান বললো,

“এ ভাই রাগ করিস না আমি সায়ুকে বলছি ওরে বোঝাই পাঠাতে। ”

মুরাদ বললো,

“তোর সমস্যা কি? অফিস করছোস ক্লান্ত বাড়ি গিয়া ফ্রেশ হো মুসু থাকুক আরেকটু পর আমি ওকে নিয়ে আমাদের বাড়ি যাব। কিছুদিন মুসকান এ বাড়ি থাকুক। ”

মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো ইমনের। বসা থেকে ওঠে রাগে রিরি করতে করতে বললো,

“ফাইজলামি করস আমার সাথে? তোর বোন ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে দুপুরের খাবারটুকু খেয়ে আসছে? না খাওয়া না গোসল এইসব কি পাগলামি এগুলা আমি এলাও করবো না। জাষ্ট পাঁচ মিনিটে ওকে বের করবি। ”

মুরাদ চিন্তিত হয়ে বললো,

“আমি ওকে এখুনি খাওয়িয়ে আনছি তুই চিন্তা করিস না বাড়ি যা। ”

দিহান বললো,

“মুরাদ ইমনের অবস্থা ভালো না তুই মুসুরে ডাক সকালে আসবেনি। ”

“তুই চুপ কর মুসকান যখন এখন যেতে চাইছে না তো যাবো না। ”

দু’হাত মুঠো বন্দি করে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো ইমন।পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দিহান কেবিনের সামনে গিয়ে মুসকানকে ডাকলো। মুরাদ ইমনকে বললো,

“বুঝলাম না তোর আসলে সমস্যা কি? সিম্পল বিষয়ে রাগ দেখাচ্ছিস কেন? ”

ইমন বললো,

“এতো প্যাচাল ভালো লাগেনা আমি যখন বলছি ওকে আমার সাথে যেতে হবে মানে যেতেই হবে। ”

এরই মধ্যে মুসকান বেরিয়ে এলো চোখে মুখে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,

“আমি আজ এখানে থাকবো। ”

ইমন অগ্নি দৃষ্টি তে তাকালো। থতমত খেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো মুসকান। মুরাদ বললো,

“ঐ ওরে ভয় দেখাস ক্যান? ”

ইমন কারো কথায় কান না দিয়ে মুসকানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“পাঁচ মিনিট সময় দিলাম গাড়িতে এসে বসবে। কথা যদি ঠিক থাকে সকালে নিয়ে আসবো নয়তো বাড়ি নিয়ে একদম ঘরবন্দি করে দেবো। ”

ইমনের এহেন কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠলো মুরাদ। চিল্লিয়ে বললো,

“ঐ ঐ কি কস সমস্যা কি? কি হইছে তোর? ”

ইমন বাঁকা হেসে মুরাদের কাঁধে চাপড় দিয়ে বললো,

“ছেলের বাপ কাল দেখা হচ্ছে। ”

আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না ইমন বড়ো বড়ো পা ফেলে হসপিটালের বাইরে চলে গেলো। এদিকে অঝর ধারায় অশ্রুপাত করতে লাগলো মুসকান। মুরাদ বিচলিত হয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

“অফিস থেকে এসেছে মাথা গরম তুই খাসনি কেন দুপুরে? ভয় পাস না থাক আমি ওরে বুঝিয়ে আসি। ”

মুসকান কাঁদতে কাঁদতে বললো,

“না আমি চলেই যাই সকালে আবার আসবো। ”

চিন্তিত হয়ে মুরাদ বললো,

“চল এগিয়ে দেই। ”
.
মুসকানকে গাড়িতে ওঠিয়ে দিয়ে ইমনকে মুরাদ বললো,

“ইমন রাগ করিস না কাল অফিস যাওয়ার পথে ওরে নিয়ে আসিস। আমি যদি শুনি তুই ওর সাথে রাগ দেখাইছোস খবর আছে কিন্তু…. ”

গম্ভীর ভঙ্গিতে গাড়ি স্টার্ট দিলো ইমন বললো,

“চিন্তা করিস না ছেলের কাছে যা। ”
.
বাড়ির পথে গাড়ি ঘোরালো ইমন। মুসকান নিঃশব্দে কেঁদেই চলেছে। ইমন এতোক্ষণ চুপ থাকলেও এবার দৃঢ় কন্ঠে বললো,

“ফোন অফ করেছো কেন? ”

……………..

“দুপুর থেকে না খেয়ে আছো কেন? ”

………………

“বাড়ি কেন ফিরতে চাইলে না? ”

……………….

“আমি অফিসে সার্কাস দেখাতে যাই? ”

………………….

“আমাকে তোমার কি মনে হয় স্বামী বলে মনে হয় না? ”

…………………
মুসকানের থেকে একটি উত্তরও পেলো না ইমন। তাই ক্রোধান্বিত হয়ে আচমকাই গাড়ির ব্রেক কষলো। মুসকানের দিকে ফিরে গায়ের সর্বচ্চ শক্তি দিয়ে কাঁধ চেপে ধরলো বললো,

“এই কথা বল তুই নয়তো খুন করে ফেলবো তোকে।”
#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৩০
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
ইরাবতী খাবার বেড়ে ছেলে এবং ছেলের বউয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। আকরাম চৌধুরী খাওয়া শুরু করেছে। খেতে খেতেই সে বললো,

“মুরাদ তো ছেলের বাবা হয়ে গেলো। কদিন পর দিহানও বাবা হবে। তোমার কি মনে হয় না আমাদেরও একটা বংশধরের প্রয়োজন? ”

“মনে হবে না কেন? সব কিছুরই একটা সময় আছে ওদের কেবল বিয়ে হলো বছর গড়াক তারপর না হয় বলা যাবে। ”

আকরাম চৌধুরী মুচকি হেসে ইরাবতীর কথায় সম্মতি দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিচে এলো মুসকান। পিছু পিছু এলো ইমনও। ইরাবতী মুসকান’কে উদ্দেশ্য করে বললো,

“মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে তাড়াতাড়ি বসো খেয়ে নাও। দুপুরের খাবারটা খেয়ে তো হসপিটাল যাবে। এ বাড়ি না আসো ও বাড়ি গিয়ে খেয়ে নিতে। ”

মাথা নিচু করে বসলো মুসকান বসলো ইমনও। মুসকানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি’তে তাকিয়ে খাবার খেতে শুরু করলো ইমন। ইরাবতী মুসকানের দিকে প্লেট এগিয়ে নিজেও বসে পড়লো। সবাই যখন খাওয়াতে মগ্ন মুসকানের তখন গা গুলিয়ে বমি পাচ্ছে। সেই সকালে খেয়েছিলো তারপর এক ফোঁটা পানিও পেটে পড়েনি। গ্যাস্ট্রিকে বুকে, পিঠে চাপ দিচ্ছে। ক্ষুধাও মরে গেছে কেমন। কিন্তু এই সমস্যা গুলো এখন কাউকে বোঝানো মানে নিজের ওপর আরেকদফা ঝড় ওঠা। তাই দাঁতে দাঁত চেপে খাবার গিলার চেষ্টা করলো। ইমনের বাবার খাওয়া শেষে তিনি চলে গেলেন৷ ইমনও খাওয়া শেষ করে উপরে চলে গেলো। মুসকানের গলা অবদি ভাত আঁটকে ছিলো। শ্বশুর আর স্বামী ওঠে যাওয়ার পর পরই সাহস করে ছুটে বেসিনের সামনে গিয়ে গড়গড় করে বমি করতে লাগলো। ইরাবতী চমকে গিয়ে ভয়ে শিউরে ওঠলো। ছুটে গিয়ে ধরলো মুসকান’কে। উপর থেকে দ্রুত পায়ে নেমে এলো ইমনও। কারণ সে আগেই টের পেয়েছিলো এমন কিছু ঘটবে। তাই রুমে না গিয়ে দোতলা থেকেই নিচের দিকে খেয়াল রাখছিলো। তার ধারণাই সঠিক হলো।

চোখে, মুখে পানি দিয়ে মুসকান’কে ধরে নিয়ে সোফায় বসালো ইরাবতী। ইমন গ্যাসট্রিকের ওষুধ ইরাবতীর হাতে দিয়ে প্রচণ্ড দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে চলে গেলো উপরে। শরীরে আর কুলচ্ছে না মুসকানের। বমি করে একেবারেই শরীরটা নেতিয়ে গেছে ওর। ইরাবতী ওষুধটুকু খাওয়িয়ে দিয়ে ইমনকে ডেকে পাঠালো। সে নিশ্চিত তার ছেলে চরম খারাপ লাগা নিয়ে রুমে ঘাবটি মেরে বসে আছে। যা নিয়ে দুশ্চিন্তা তাই ঘটে বারংবার। মুসকানটাও নিজের বোঝ টা বুঝতে চায় না। নিজের দোষে নিজে অসুস্থ হবে পাশাপাশি ছেলেটাকে মানসিক চাপ দেবে। এই মেয়ে এতো অবুঝ কেন বুঝে পায় না ইরাবতী। সবার বেলায় সব বোঝে শুধু নিজের বেলায় গাফিলতি। যার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয় ইমনেরও।
.
পারুল এসে এক প্লেট ফল আর এক গ্লাস জুস দিয়ে গেলো। ইমন সেগুলো নিয়ে গম্ভীর ভঙ্গিতে বিছানায় এসে বসলো। মুসকান চুপ মেরে বসে আছে। শরীর খারাপ লাগার পাশাপাশি ভয়ে দম বন্ধ লাগছে তার। ইমনের চিন্তান্বিত অস্থির মুখটুকু দেখেই বার বার গলা শুকিয়ে আসছে। কিন্তু ইমন অত্যন্ত শান্ত গলায় বললো,

“খেয়ে নাও। ”

মুসকান ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়িয়ে খেতে লাগলো। ইমন বললো,

“তাড়াহুড়োর কি আছে আস্তেধীরে খাও আমি বকবো না, রাগারাগিও করবো না। ”

ছলছল দৃষ্টিতে তাকালো মুসকান। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইমন এক হাত বাড়িয়ে মুসকানের কপোল ছুঁয়ে বললো,

“দুপুরের খাবারটা খেয়ে নিলে এমন অবস্থা হতো না মুসকান। আর আমিও রিয়্যাক্ট করতাম না। ”

চোখ বেয়ে জল পড়তে শুরু করলো। এক আঙুলে সে জলটুকু মুছে দিয়ে মাথা এগিয়ে কপালে চুমু খেলো ইমন। বললো,

“মুরাদ বাবা হয়ে গেলো দিহানও হবে। আর আমার বউটা এখন অবদি নিজের যত্নই শিখলো না। এভাবে চলতে থাকলে আমি বাবা হওয়ার সাহসটুকু কোথায় পাবো মুসু? ”

নিজহাতে এক টুকরো আপেল মুখে তুলে দিলো ইমন। মুসকান চিবুতে চিবুতে অস্ফুট স্বরে বললো,

” তোমার সাহস লাগবে না বাচ্চা তো আমার পেটে থাকবে সাহস তোমার দিয়ে কি হবে? আমি এ মাসেই কনসিভ করবো। ”

হেসে ফেললো ইমন। গ্লাস সম্মুখে ধরে জুস খেতে ইশারা করলো, বললো,

“শরীরে এক কেজি মাংস নাই সে আবার করবে কনসিভ। নিজেরই কেয়ার করতে জানেনা সে আমার বাচ্চা’কে কি করে কেয়ার করবে? ”

গ্লাস সরিয়ে দিয়ে অভিমানী সুরে মুসকান বললো,

“কি বললে আমি তোমার বাচ্চার কেয়ার করতে পারবো না? তোমার কেয়ার করতে পারলে বাচ্চার কেয়ার কেন পারবো না তুমি কি আমাকে অযোগ্য বউ এবং মা বলতে চাচ্ছো? ”

বাঁকা হাসলো ইমন। আবারো জুসের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে খেতে ইশারা করলো। মুসকান নাক কুঁচকে নিজেই গ্লাস ধরে জুস খেতে লাগলো। ইমন মুচকি হেসে বললো,

“হাজব্যান্ডকে আর কই কেয়ার করো এই তিনমাসে একটা দিন স্বেচ্ছায় কাছে এসেছো? ”

“স্বেচ্ছায় কাছে যাওয়ার সুযোগ তুমি দিয়েছো ? ”

ইমন হকচকিয়ে গেলো। হকচকিয়ে গেলো মুসকান নিজেও। জুস গলায় আঁটকে কেশেও ওঠলো সে। কথার তালে তালে এমন একটি কথা বলে ফেলবে মুসকান নিজেও টের পায়নি। এবার লজ্জায় তার নাজেহাল অবস্থা। ইমন চোখ বড়ো বড়ো করেই তাকিয়ে আছে। মুসকান আড়চোখে ইমনের অমন চাহনি দেখে কপট রাগ দেখিয়ে গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো,

“এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি খাবো না। ”

“এক গ্লাস জুস খেতে এতো আহানা বাহান কেন? এবার কি আমাকে লাঠি বানাতে হবে? ”

“তুমি আমাকে মারবে? ”

“এটা শেষ করো তাহলে আদর করবো। ”

মুসকান চটপট জুসটুকু শেষ করলো। তারপর ইমনের পকেট থেকে ফোন বের করে কল করলো মুরাদকে। মুরাদ কল রিসিভ করতেই মুসকান বললো,

“দাদাভাই মুয়াজ কেমন আছে? ”

ইমন ভ্রু কুঁচকে বললো,

“মুয়াজ আবার কে? ”

মুসকান ভ্রু নাচিয়ে বললো,

“বাবুর নাম মুয়াজ রেখেছি মুরাদের ছেলে মুয়াজ সুন্দর না। ”

ফোনের ওপাশ থেকে মুরাদ বললো,

“বাবু ভালো আছে তুই খেয়েছিস? ”

“হ্যাঁ তোমরা খেয়েছো আম্মু কোথায়? ”

“এইমাত্রই খাইলাম রে আম্মা এখন খাচ্ছে। ”

“আচ্ছা তাহলে সকালে দেখা হচ্ছে এখন রাখি। ”

“সাবধানে আসিস। ”
.
দু’বছর পর –

রাত তখন প্রায় এগারোটা ছুঁই ছুঁই। মুসকান বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে বই পড়ছে আর ইমন সোফায় বসে ল্যাপটবে কাজ করছে। বই পড়তে পড়তে চোখে প্রায় ঘুম নেমে এসেছে মুসকানের। এমন সময় ভিডিও কল এলো সায়রীর ফোন থেকে। সঙ্গে সঙ্গে ঘুম উড়ে গেলো মুসকানের। কল রিসিভ করেই সায়রীর দেড় বছরের ছেলেটার সঙ্গে মেতে ওঠলো সে। সায়রীর ছেলের নাম রিহান। নামটা রেখেছে মুসকান নিজেই। প্রায় সময়ই মুয়াজ আর রিহানের সঙ্গে ভিডিও কলে সময় কাটায় সে। যা দেখেই বুকটা হাহাকার করে ওঠে ইমনের। বিয়ের একটা বছর কতোই না আবদার করেছে মেয়েটা একটা বাচ্চার জন্য। চেষ্টায় কোন ত্রুটি রাখেনি কিন্তু ইমনের কঠিন নিয়মে ব্যর্থ হয়েছে বারবার। তারপর যখন সিদ্ধান্ত নিলো এবার বাচ্চা নেবে তখনই জীবনে নেমে এলো অন্ধকার। এক সন্ধ্যায় মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটে গেলো। কার এক্সিডেন্টে মারাত্মক ইনজুরি হলো ইমনের৷ দীর্ঘ ছ’মাস চিকিৎসা চলার পর ওঠে দাঁড়াতে সক্ষম হলেও ঠিকভাবে চলতে সমস্যা হতো। দেশ,বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে নিজেকে পুরোপুরি সুস্থ করে গতমাসেই মুসকান’কে নিয়ে দেশে ফিরেছে সে। এতো ঝামেলায় মুসকানের আর সেকেন্ড ইয়ারে এক্সাম দেওয়াও হয়নি। এইটুকু বয়সে এতোখানি সেক্রিফাইসই যথেষ্ট ইমনের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটার। প্রায় এক বছর হয়ে এলো তারা সেভাবে একে অপরের কাছাকাছি আসেনি। ২১ বছর বয়সী এক যুবতী মুসকান। জীবনের শুরুতেই এতো বড়ো ধাক্কা খেয়েও পিছু হাঁটেনি। বরং সবসময় নিজের সবটুকু দিয়ে ইমনের পাশে থেকেছে। এক্সিডেন্টের তিনমাস পর যখন শয্যায়িত ইমনের পাশে বসেই তার দাদি বলেছিলো,

“হায় হায় রে কি সর্বনাশ ঘটলোরে এমন অচল পোলাডার এখন কি হবে? এই বউতো এই ঘরে আর থাকবো না। না জানি কবে শুনি আকরামের ছেলের বউ গেছেগা। ”

এমন কথা শুনে অসুস্থ ইমনের দুহাত যখন মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেছিলো। অঝড় ধারায় কাঁদতে কাঁদতে মুসকান কেবল একটি কথাই বলেছিলো,

“দাদি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন আপনার নাতী’কে ছেড়ে চলে যাওয়ার আগেই যেনো আমার মৃত্যু ঘটে।”

তার কিছুদিন পর যখন পাড়া-পড়শীররা তাকে দেখে কানাকানি করতো বলতো,

“এই মেয়ে জীবনেও এই ঘর করবো না৷ এতো কম বয়সী মেয়ে তারওপর বাচ্চা কাচ্চাও হয় নাই। এতো বয়সী ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করছিলো। বছর গড়াতে না গড়াতে শয্যায়িত হয়ে গেলো। আমি নিশ্চিত পরোকিয়ায় লিপ্ত হবে এই মেয়ে। টগবগে শরীরেরও তো কিছু চাহিদা আছে…. ”

সেদিন এমন কথোপকথন কানে আসায় ছুটে এসে ইমনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিলো মুসকান। কথায় আছে মানুষের বয়স বাড়ে পরিস্থিতির চাপে। মুসকানেরও বয়স বেড়ে গেলো। চারদিকের পরিস্থিতি তাকে করে তুললো ধৈর্য্যশীল। বহু ত্যাগ তিতিক্ষার পর সফলতাও আসলো। সেদিন যারা নানারকম কথাবার্তা বলে ওকে ভেঙে চুড়ে দিয়েছিলো আজ তারাই ওকে নিয়ে গর্ব করে। ইমন’কে উচ্চবাক্যে বলে, ” অনেক ভাগ্য করে এমন বউ পেয়েছো। ” ইমন তখন মুচকি হাসে প্রশান্তি’তে ভরে ওঠে তার বক্ষঃস্থল।
.
কথা শেষ করে বিছানা গোছাচ্ছিলো মুসকান। বিছানা গোছানো শেষে লক্ষ্য করলো ইমন ঘরে নেই। ভ্রু কুঁচকে বিছানা ছেড়ে বেলকনিতে পা বাড়ালো। ইমন বেলকনির রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার আকাশের দিকে নিবদ্ধ। ছোট্ট একটি শ্বাস ছেড়ে ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো মুসকান। পিছন না ঘুরেই ডান হাত আকাশের দিকে ইশারা করে ইমন বললো,

“মুসকান একাকী রাতের সব থেকে প্রিয় সঙ্গী ঐ এক ফালি চাঁদ! আর আমার পুরো জীবনের সব থেকে প্রিয় সঙ্গী তুমি। ”

বুকের ভিতর অস্থিরতা বেড়ে গেলো মুসকানের। কাঁদতে ইচ্ছে করলো খুব৷ তার জীবনে অসংখ্য রাত কেটেছে নির্ঘুম। গত বছরগুলোতে অসংখ্য রাত দিন কেঁদে ভাসিয়েছে। উপরওয়ালার নিকট দু’হাত তুলে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছে মানুষটার জন্য। তার কিছু চাওয়ার ছিলোনা শুধু মাত্র ইমনের প্রাণ ব্যতিত। আজো তার কিছু চাওয়ার নেই ইমন ছাড়া কিছুই চাইনা তার। শুধু পাশে হাতে হাত ধরে মানুষ টা থাকলেই চলবে। নিস্তব্ধ রাতের আঁধারে মানুষ’টার বুকে একটুখানি ঠাঁই হলেই চলবে। দু’হাত বাড়িয়ে পিছন থেকে প্রচণ্ড শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মুসকান ইমনকে। ফুঁপিয়ে কেঁদেও ওঠলো খুব। পিছন দিক হাত বাড়িয়ে মুসকানের দুহাত ধরে তার দিকে ঘুরলো ইমন। কপাল কুঁচকে বললো,

“কাঁদছো কেন? রিহানের সাথে কথা শেষ? ”

আবারো জড়িয়ে ধরলো মুসকান। বুকে মাথা রেখে নাক টানতে টানতে বললো,

“অনেক আগেই কথা শেষ। ”

“তাহলে কান্না কেন? ”

“এমনি। ”

“উহুম এমনি তো নয় কিছু একটা ভেবেই তো কান্না এসেছে। ”

“কিছু না। ”

চোখ বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে বুকে পড়ে রইলো মুসকান। ইমন লম্বা এক শ্বাস ছেড়ে মুসকানকে সোজা করে দাঁড় করালো। দু’হাতের আঁজলে কপোলজোরা নিয়ে প্রগাঢ় চাহনিতে চেয়ে বললো,

” I want to give you baby gifts Do you want to give me baby gifts? ”

চমকে তাকালো মুসকান পরোক্ষণেই মাথা নুইয়ে ফেললো। নিঃশ্বাস ভারী করে শব্দ করে কেঁদে ওঠলো বললো,

“আমি কিছুই বলবো না তোমাকে, কিছুই বলবো না। ”

প্রচণ্ড অভিমানে আরক্ত হয়ে বলা কথাটি শুনতেই চোখ ছোট ছোট করে ফেললো ইমন। বললো,

“এতো অভিমান? সব অভিমান ভালোবাসা আর আদরে আদরে চুকিয়ে দেবো আজ।”

এক ঝটকায় ইমনের থেকে সরে গেলো মুসকান।
বাঁকা হেসে রুমে গেলো ইমনও।
.
সূর্যাস্তের সাথে সাথে পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসে। গোধূলির পরে আসে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা যতই বাড়তে থাকে রাতের আগমণ ততই ত্বরান্বিত হয়।রাত যেমন প্রতিটি মানুষের বিশ্রামের সময় তেমন বিশেষ কোন আনন্দঘন মুহূর্ত ও ভালোবাসার সময় কাটাবার জন্যও নিখুঁত।

দীর্ঘ একটা সময় পর দু’টো মানুষ একে অপরকে কাছে পেলো। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পবিত্র। সেই পবিত্রতাকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে মুসকান। নিজেকে পুরোপুরি প্রমাণ করতে পেরেছে সে। কঠিন সময় গুলোতে সকলকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সে ইমন চৌধুরীর যোগ্য স্ত্রী, সে ইমন চৌধুরীর অর্ধাঙ্গিনী। দীর্ঘদিনের তৃষ্ণার্ত একজোড়া মানব-মানবী যখন একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়। তখন তাদের মাঝে কতোটা আবেগ,কতোটা ভালোবাসা কতোটা সুখের বহিঃপ্রকাশ ঘটে তা কেবল যেসব স্বামী স্ত্রী একে অপরের থেকে দীর্ঘকাল দূরে থেকে আবারো এক হয়েছে তারাই জানে। ভালোবাসাময় একটি রাত, ভালোবাসাময় অজস্র স্পর্শগুলোয় বিভোর থেকে নতুন দিনের সূচনা ঘটলো ইমন মুসকানের। সারারাত আজ কেউ দু’চোখের পাতা এক করেনি৷ তৃষ্ণার্ত প্রেমিকটি আজ একটুও ছাড় দেয়নি তার প্রিয়তমাকে। আর না তার প্রিয়তমা বাঁধা দিয়েছে তাকে। সে কেবল নিজের সর্বস্বটা দিয়ে স্বামী নামক মানুষটিকে খুশি করতে চেয়েছে। কিন্তু আসল খুশি আসল সুখ তো সেদিন পাবে মানুষ টা যেদিন তাদের স্বামী স্ত্রীর মিলনে উপরওয়ালা খুশি হয়ে একটি সন্তান দান করবে।
___________________
অফিস থেকে হঠাৎই কল করে ইমন অর্ডার করলো শাড়ি পড়তে। হঠাৎ শাড়ি, কোথাও বের হবে এমন প্রশ্ন করতেই সে বললো,

“ইয়েস ডিয়ার আপনাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবো আজ। ”

তাই মুসকান নিজেকে বেশ পরিপাটি করে সাজাচ্ছে। এতোগুলো দিনে শাড়ি পরাটাও শিখে নিয়েছে সে। শিখবে নাই-বা কেন? মানুষ টা যখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে ছিলো তখন মাঝে মাঝেই যেভাবে হোক যেভাবে পারে সেভাবেই শাড়ি পরে পাশে বসে থাকতো। আর ইমন নির্নিমেষ দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়েই থাকতো। এভাবে বেশ কয়েকবার পরতে পরতে এক সময় পারফেক্টভাবে শাড়ি পরাও শিখে নিলো। ইমনের শূন্যতায় অনেক কিছুই শিখে নিয়েছে সে। আর সে শূন্যতাগুলোই একসময় পূর্ণতায় রূপ নিয়েছে। সব কিছুর পরও উপরওয়ালার নিকট শুকরিয়া জানায় সে। কারণ শেষ টা সব সময় ভালোই হয়।
.
রুমে প্রবেশ করতেই ইমন দেখতে পেলো মুসকান তার ব্লাউজের ফিতা বাঁধতে চেষ্টা করছে। তাই দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে ওর হাত সরিয়ে নিজেই বেঁধে দিতে দিতে বললো,

“আমি ছাড়া কিছুই সম্পূর্ণ হবে না। ”

আয়নায় তাকালো মুসকান ইমনের দৃষ্টিও আয়নাতে নিবদ্ধ। লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো মুসকানের চোয়ালজোড়া। তার সে লজ্জাটুকু আরেকটু গাঢ় করার জন্য ইমন আয়নাতে পুরোপুরি দৃষ্টি বুলিয়ে বললো,

“অনেকটাই চেঞ্জ এসেছে দেখছি… ”

ভ্রু কুঁচকে ইশারা করলো মুসকান,

“কিসের? ”

ইমন দুষ্টু হেসে ঘাড়ে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে ভারী আওয়াজে বললো,

“বউয়ের। ”

শিউরে ওঠলো মুসকান। সরে যাওয়ার চেষ্টা করে বললো,

“ধ্যাত সরো তুমি। ”

ইমন সরলো না বরং তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি ছুঁইয়ে বললো,

“চুল তো একে একে পেকে যাচ্ছে বউ এবার তো মন বাবা ডাক শুনতে চায়।”

“আমিও শোনাতে চাই। ”

ইমন মুসকানের পেটে আলতো স্পর্শ করলো। শিউরে ওঠে ইমনের হাত চেপে ধরলো মুসকান। ইমন কাঁধে থুতনি ঘষতে ঘষতে বললো,

“সে যে এতো শিঘ্রই আসবে ভাবিনি। ”

আঁতকে ওঠলো মুসকান পিছন ঘুরে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“তুমি রিপোর্ট পেয়েছো? ”

মাথা দুলিয়ে হাসলো ইমন বললো,

“বলা বারণ। ”

কেঁদে ফেললো মুসকান হাত বাড়িয়ে ইমনের দুগাল আঁকড়ে ধরে বললো,

“আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্লিজ বলো? ”

মুসকানের কাঁপা হাতের স্পর্শে ,কাঁপা কন্ঠে স্থির হয়ে গেলো ইমন। সহসা জড়িয়ে ধরে মাথায় পরপর তিনবার চুমু খেয়ে বললো,

” তোমার মাঝে আমার ছোট্ট অংশ বেড়ে ওঠছে মুসকান। ফাইনালি আমি বাবা এবং তুমি মা হতে যাচ্ছি। ”

দু’হাতে ইমনের পিঠ খামচে ধরলো মুসকান। ফুঁপিয়ে ওঠে বললো,

“মা’কে বলেছো? আমি আম্মুকে ফোন করবো। ”

“ভয় লাগছে না? ”

“একটুও না। ”

“আমি যতোটা খুশি ততোটাই ভীতিগ্রস্ত হয়ে আছি। আমার বউ, আমার পিচ্চি বউ এতোটা মাস পিচ্চি পেটটাতে বাচ্চাটা ক্যারি করবে কি করে? ”

“পিচ্চি বউ পিচ্চি পেট বলে বলে ঢং করোনা তো। এতোই যদি দরদ তোমার বড়ো পেটে নেওয়ার ব্যবস্থা করো তাহলে। ”

“হোয়াট! ”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here