#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_১০
আমি তখন ক্লাস টুতে পড়তাম।বয়স আর কতই বা হবে ৬/৭।একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে শুনি ছোট মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।আমাকে ছোট মা অনেক ভালোবাসত। আমিও ছোট মায়ের নেওটা ছিলাম।তখন তৃষ্ণার্ত কাকের মত বসে ছিলাম কখন ছোট মা আসবে।কিন্তু তিনি আর ফিরলেন না।ছোট কাকা একটা তোয়ালে পেচিয়ে একটা শিশুকে আনেন। আমি যখন ধরতে গিয়েছিলাম তিনি আমাকে ধরতে দেননি।তার কিছুক্ষণ পরে দাদু আরেকটা শিশুকে নিয়ে আসেন।কেউ সেই শিশুটাকে নিতে চাচ্ছিল না।তখন আমি এগিয়ে গিয়ে শিশুটিকে কোলে নিলাম।বিশ্বাস কর সেই মুহূর্তটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত ছিল। ওর ছোট ছোট হাত পা আমায় মুগ্ধ করেছিল। ওর কাছে আমার হাতটা নিতেই ও সেটা খপ করে ধরে ফেলে।আমি তখন আনন্দে কান্না করে দিয়েছিলাম।দাদু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন
-মাহিন বাবুটিকে তোমার পছন্দ হয়েছে?
-হ্যাঁ দাদু।
-তোমার ছোটমা তো অনেক দূরে চলে গেছেন।কিন্তু বলেগেছেন যে এইশিশুকে আগলে রাখতে।পারবে তো রাখতে?
-হুম।
তখন থেকে আমি ওকে দেখে রাখতাম।যদিও আর কেউ ওকে তত ভালো নজরে দেখতো না।তুলি প্রথম প্রথম ওকে দেখতে আসত।কিন্তু পরে মায়ের বকা খেয়ে আর আসত না।
সাতদিন পরে যখন অন্য শিশুটির আকিকা করা হয় তখন তার নাম দেওয়া হয় পিহু বিনতে কবির।কিন্তু এই শিশুটির কোনো নাম কেউ দেয় নাই।যেহেতু পিহুর বোন ও,তাই আমি মিল করে রাখলাম মিহু বিনতে কবির।কিন্তু দাদু কোনো কারণে বিনতে কবির নামটা পছন্দ করেনি।তিনি নাম দিলেন তাসমীম মিহু।জানো তাসমীম অর্থ কী?
তাসমীম অর্থ দৃঢ়তা।দাদু চেয়েছিলেন মিহু ওর নামের মতোই দৃঢ় হোক।কিন্তু মিহু হয়েছে উল্টো।একদম নামের বিপরীত। ধরতে গেলে দাদুর পরে আমিই ওর অভিভাবক। আমি সব সময় স্কুল থেকে এসেই ওকে কোলে নিতাম। অনেক সুখী ছিলাম সেই দিনগুলোতে।কিন্তু আমার সেই সুখের দিন গুলো কর্পূরের মতো উড়ে চলে যায়।কারণ টু থেকে থ্রীতে উঠতে গিয়ে আমি দুই বিষয়ে ফেল করি।আমার রোল তিন থেকে গিয়ে পৌছায় ৭৮ এ।যেহেতু আমি ভালো ছাত্র ছিলাম তাই টিচার রা আমাকে থ্রীতে উঠিয়ে দেয়।কিন্তু মিহুর সাথে মেলামেশা একদম বন্ধ করে দেয় মা।দাদুর সাথে প্রায় ঝগড়া করে যে হয় বাড়ি ভাগ করা হোক না হয় মিহুকে এতিম খানায় দেওয়া হোক।ছোট কাকাও মাকে সমর্থন করলেন।দাদু তখন এক কাপড়ে মিহুকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেলেন।মিহু সেখানেই বড় হতে লাগল।সেখানে না মিহু অনেক আদরে আদরে বড় হতে লাগল।কিন্তু বিবাদ বাজলো তখন,দাদু অসুস্থ হয়ে পড়েন।তার চিকিৎসার জন্য আমাদের এখানে আনা হয়।তিনি মিহুকে ছাড়া কিছুতেই থাকতে পারবেন না।তাই মিহুকেও নিয়ে আসা হয়।তখন ওর বয়স ছিল সাত বছর।দাদুর জন্য কাকা বা আম্মু কেউ কিছু ওকে বলত না।তারপর দাদু একদম মুমূর্ষু হয়ে পড়েন।সবাই ধরেই নিয়েছিলো যে তিনি মারা যাবেন।তাই মিহুকে এতিমখানায় দিয়ে আসা হয়। ওকে ভালোবাসার শুরুটা তখনই হয়।
তিনমাস হলো দাদু অসুস্থ। আর ওর এতিম খানার বয়স ও তিন মাস। আমি তখন নাইনে পড়ি।ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে ওর কাছে যেতাম। ও দৌড়ে আমার কাছে আসত। এসে বলত
-মাহিন ভাই জানো এরা না আমাকে অনেক মারে।অনেক কাজ করায়।দেখো দেখো কালকে রাতে আমি কাজ না করে ঘুমিয়েছি তাই আমার হাতে গরম রড দিয়ে মেরেছে।
আমি তখন ওর ঐ ছোট হাতদুটো ধরে চোখের পানি ছেড়ে দিতাম।যে হাত দিয়ে পিহু চকলেট খায় সেই হাত দিয়ে মিহু রডের মার খাচ্ছে।তখন মনের মধ্যে ওর জন্য কিছু করার কথা মাথায় আসে।তখন আমি ওর জন্য আলাদা কিছু ফিল করি।যেটা পিহু বা তুলির জন্য ফীল করতাম না।মিহুর জন্য ঐ তিনমাস ছিল জাহান্নামের মতো।কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে দাদু সুস্থ হয়ে যায় তারপর মিহুকে বাসায় নিয়ে আসে।কয়েকদিন পরে শুনি ঐ এতিমখানা টা ছিল শিশুশ্রমের কারখানা।পুলিশ ওটাকে উঠিয়ে দিয়েছে।
তারপর থেকে আমি একটা জিনিস বুঝেছি যে মিহুর জন্য যা করতে হবে তা গোপনে।কারণ আমি যদি মিহুর কাছে যাই তাহলে মা আবার দাদুর সাথে ঝগড়া করবে আর দাদু মিহুকে নিয়ে চলে যাবেন।তাই অনেক কিছু দেখেও সহ্য করি।কিছুই বলতে পারি না।তবে আমি অনেক ভালোবাসি ওকে।
বিদিশা নিজের চোখের জল মুছল।তারপর মাহিনকে জিজ্ঞেস করল
-কিন্তু মাহিন ভাই সবাই আপুর সাথে এতো খারাপ আচরণ করে আর পিহু আপুর সাথে এত ভালো ব্যবহার করে কেন?তারাতো একই মায়ের মেয়ে।
-আমিও জানি না।বড়রা সব সময় এ ব্যাপারে আমাদের থেকে গোপন রেখেছে।তবে দাদু এ ব্যাপারে সব জানে।এসব তিনিই বলতে পারবেন
-তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করনি?
-জিজ্ঞেস করলেই কি আর বলে?থাক এব্যাপারটা বাদ দে।তুই কাউকে আমার কথা বলিস না প্লিজ।
-কিন্তু তুমি তো আপুকে ভালোবাসো।তাহলে তাকে জানাও না কেন আর কেনই বা তাকে অন্য কারো হতে দিচ্ছ?
-শোন আমি মিহুকে আমার করলে ওকে এই আজাব থেকে মুক্তি দিতে পারব না।আর সবথেকে বড় কথা মিহু আমাকে একজন বড় ভাই হিসেবে দেখে।আমি চাইনা আমার কারণে মিহুর আর কোনো বিপদ হোক। আরফানের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখেছি ও খুব ভালো একজন মানুষ।তাই ওর হাতে মিহুকে তুলে দিলে আমি নিজেকে খুব ভালো মনে করব
-ভাই তুমি একজন সত্যিকারের প্রেমিক।যে ভালোবাসার পূর্ণতা না দিয়েও ভালোবাসার মর্যাদা রক্ষা করল।
এই সময়ে মিহু একটু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে গেল।মাহিন বিদিশাকে বলল
– লাইট অফ করে বাইরে যা।আমি গেলাম
বিদিশার মিহুকে শুয়ে দিয়ে মনে পড়ল যে লাইট অফ করেনি।তখন রুমের কাছে এসে মাহিনের কথাগুলো শুনে ফেলে।আর মাহিন বাধ্য হয়ে ভালোবাসার কথা স্বীকার করে।বিদিশা মিহুর কপালের চুলগুলো সরিয়ে দেয় আর বলে
-আপু তুই সত্যিই অনেক লাকি যে মাহিন ভাইয়ের মত একজন তোকে ভালোবাসে।আর আরফান ভাইও অনেক লাকি যে তোর মতো একজনকে পাবে।আমি শুধু আল্লাহর কাছে এটাই চাইব যেন বিয়ের পর তোর জীবনে আর কোনো দুঃখ না আসে।তুই সুখে থাকবি।
এখন রাত আটটা বাজে।পিয়াস এর ডেয়ারের সময় কাল রাত বারোটা পর্যন্ত।সব ভাইবোন মিলে ওকে ধরে বেধে নিয়ে এসেছে আরফানের রুমের সামনে।নেহাল ওকে ঠেলে রুমে পাঠাচ্ছে তখনই পিয়াস বলে
-ভাই ভাই জরুরী কাজ আছে।প্রকৃতি আমায় স্মরণ করেছে।
এরকম করে পাঁচ বার বাথরুম থেকে ঘুরে এসেছে।আরেকবার এইকথা বলতেই নেহাল বলল
-এবার কিন্তু তোকে ইন্জেকশান দিব।
-না না এমন করিস কেন? আমি যাচ্ছি তো
পিয়াসের যাচ্ছি বলতে দেরি কিন্তু নেহালের ধাক্কা দিতে দেরি নাই।ধাক্কা দিয়ে ওরা পর্দার আড়ালে লুকিয়ে বসল। আরফান ওর কাজ নিয়েই ব্যস্ত।পিয়াস কে দেখে জিজ্ঞেস করল
-পিয়াস বলবি কিছু?
পিয়াস অনেকভাব সাব নিয়ে আরফানের কাছে গেল গিয়ে বলল-ভাই তুমি মিহু ভাবিকে একটা ফোন দিয়ে কথা বল।তোমার তো একবার কথা বলা উচিত বিয়ের আগে বলো।
তারপর এক থাপ্পড়ে পিয়াস বাস্তবে ফিরে এল।মানে এতক্ষণ কল্পনা করছিল যে ও আরফানকে এই কথা বললে কি হতে পারে।আরফান পিয়াসকে কিছু না বলতে দেখে জিজ্ঞেস করল
-বলবি কিছু?
-হুম।
-বলে ফেল। আমার সময় নেই ততটা।কালকে তো কাজ করতে পারব না তাই এখন গুছিয়ে রাখছি।
-ভাই বলছিলাম কি,মানে বলছিলাম কি
-হ্যাঁ বল
পর্দার আড়াল থেকে ওরা ইশারা করে বলার জন্য। ওদের থেকে নজর সরিয়ে আরফানের দিকে ফেলে বলে
-বলছিম মানে ইয়ে
-তুই বলবি না থাপ্পড় খাবি?
থাপ্পড়ের কথা শুনে বড়বড় করে বলে দেয়
-তুমি বলেছিলে না ক্যামেরা দিবে সেটা দাও নাই তো
নেহাল কপালে হাত দিল। আরফান ল্যাপটপে কাজ করতে করতে বলল
-তোকে সেটা অফিস থেকে নিতে বলেছি না।সেখান থেকে নিস নি কেন? আর এখন লাগবে কেন?
-কালকে বিয়েতে ছবি তুলতে হবে তো।
-সকালের মধ্যে পেয়ে যাবি এখন যা।
নেহালের দিকে তাকাতেই ওর ধারালো চোখ দেখে মনে মনে বলে-হয় এখানে মরতে হবে না হয় বাইরে মরতে হবে।
পিয়াসকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরফান জিজ্ঞেস করল-আর কিছু বলবি?
– ইয়ে মানে ভাই তোমার ফোনটা দেবে?
-কেন?
-আমার ফোনে চার্জ,টাকা,ডাটা কিছুই নাই
আরফান আড়চোখে তাকিয়ে ফোনটা দিল।
-ভাই পাসওয়ার্ড বলো
-নীলু
-নীলুকে ডাকো কেন?
-আরে গা*ধা পাসওয়ার্ড নীলু
-ও ও ও
মিহুর নম্বরে দুইবার ফোন দেওয়ার পরে ধরল না।তৃতীয়বারে ফোন দিয়ে পিয়াস পেটে ব্যথার অভিনয় করল।বলল
-ভাই ফোন ধরলে কথা বলো।আমার না একটু বাথরুমে যাওয়া লাগবে।দুইমিনিট সময় দাও পাঁচ মিনিটে আসছি।
বলে এক দৌড়ে বাহিরে চলে গেল। আরফান অবাক হয়ে আছে।ওর এতই যদি চাপ এসে থাকে তাহলে আরফানের রুমের বাথরুমে না গিয়ে আর কোথায় গেল। আসলেই একটা গা*ধা।
ফোন রিসিভ করা দেখে কানের কাছে ধরল।মিহু ফোনের রিং শুনে ঘুম থেকে উঠলো।না দেখেই ফোন রিসিভ করেছে।যেহেতু কান্না করতে করতে ঘুমিয়েছে তাই কন্ঠস্বর একটু অন্যরকম হয়ে গেছে।ফোনটা ধরেই বলল
-আসসালামু আলাইকুম।কে বলছেন?
মিহুর কন্ঠস্বর শুনেই আরফান ফোনটা কেটে দিল। আর সারারাত কাজ করা হলো না।যখনই কাজ করতে যায় তখনই একটা লাইন কেবল মাথার মধ্যে ঘুরছে।এমন কি ঘুমাতে গেলেও বা ঘুমের মধ্যেও। আর সেটা হলো
‘ আসসালামু আলাইকুম।কে বলছেন?’
#চলবে
(রি-চেক করিনি তাই ভুলত্রুটি থাকলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।)#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_১১
আজ সকালটা যেন খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেল।সকাল থেকেই সারা বাড়িতে একটা খুশি খুশি ভাব।ছোটরা সারাবাড়ি জুড়ে ছোটাছুটি করছে।মিহু চাইছিল ফুফুর হাতে হাতে ধরে কাজগুলো এগিয়ে দিতে।কিন্তু ফুফু দিলেন না।বললেন
-এখন কাজ করতে হবে না।একটু পরে জীবনে একটা অনেক বড় ঘটনা ঘটবে।তাই এর জন্য প্রস্তুত নাও।
-ফুফু সেটাতো দুপুরে।এখনও তো কত সময় বাকি।
মিহু যত যাই বলে ওর ফুফু ওকে কিছুই করতে দেয় না।বিদিশাকে ডেকে ওকে ঘরে নিয়ে যেতে বলে।বিদিশা এসে ওকে নিয়ে যায়।ঘরে নিয়ে গিয়ে বলে
-আপু দেখো এখন আমি যা যা বলব তাই তাই করবে।ঠিক আছে?
-হ্যাঁ তা না হয় করলাম।কিন্তু তুই বলবিটা কী?
-আগে প্রমিস করো যে যা বলব তাই করবে
-আগে বলতো কী করতে হবে?
-না আগে প্রমিস করো
-আচ্ছা বাবা করলাম। এবার তো বল।
বিদিশা একটা রহস্যময়ী হাসি দিল।
আজকে সকালে আরফানের ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে।যেখানে সে সবার আগে ঘুম থেকে ওঠে সেখানে আজ তাকে তার বন্ধুরা ঘুম থেকে উঠিয়েছে।ওর বন্ধুরা তো এটা নিয়ে একদম ওকে পচাচ্ছে।ওর এক ফ্রেন্ড আবিদ বলল
-কি মামা সারারাত ধরে ভাবির সাথে কি এমন কথা বলেছো যে ঘুমাও নি।
-আবিদ এসব কিছুই না।
রিয়াদ বলল-তাহলে আসল কাহিনীটা বলে ফেলো।
-দেখ তোরা যেটা ভাবছিস এমনটা কিছুই না।
-তাহলে যেটা সত্যি সেটা বল
ওর বন্ধুরা সবাই ওর ফোনের পাসওয়ার্ড জানে।রিয়াদ ফোনটা খুলে কল লগে গেল।সেখানে একটা আননোন নম্বরে তিনবার ফোন দেওয়া দেখে বলল
-আচ্ছা যা তোর কথা বিশ্বাস করলাম। এখন বলতো এই নম্বর টা কার?তুই তো আননোন কাউকে তোর ফোন দিয়ে কল করো না।
-আরে ওটা কেউ না তোরা যা ভাবছিস সব ভুল
-ঠিক আছে এখনই ফোন দিচ্ছি।প্রমাণ হয়ে যাক তাহলে।বলে ফোন দিল।পিয়াস এসেছিল ক্যামেরার বিষয়ে একটা কথা বলতে।ওকে ক্যামেরা এনে দিয়েছে কিন্তু কালারটা ওর পছন্দ হয় নি।এটা বলতেই এসেছিল।কিন্তু এসে যা শুনলো তাতে এ জনমে আর আরফানের সামনে যেতে পারবে না।কারণ ও যদি ফোন না দিত তাহলে আরফানকে ওর বন্ধুরা এভাবে হেনস্থা করতে পারত না।ও যেভাবে এসেছিল সেভাবেই চলে গেল।তবে আরফানের ভাগ্য ভালো বলতে হবে কারণ মিহু বদলে ফোনটা বিদিশা ধরল।
বিদিশা মিহুকে সকাল থেকেই সাজাতে লেগে গেছে।কারণ ও চায় আজকে যাতে সব থেকে সুন্দর মিহুকে লাগে।চোখটা অর্ধেক এঁকে একটু শুকাতে দিল। এমন সময় মিহুর ফোনে কল এল। বিদিশা ফোন ধরে বলল
-হ্যালো কে বলছেন?
রিয়াদ মেয়ে কন্ঠ শুনে বুঝেছে মিহুকে।তাই সিওর হতে জিজ্ঞেস করল
-আপনি কি তাসমীম মিহু?
বিদিশা বুঝেছে কোন ছেলে হয়তো মিহুকে ডিস্টার্ব করতে ফোন দিয়েছে।তাই বলল
-হ্যাঁ।বলুন তো কী চাই
রিয়াদ একটু শয়তানি করে বলল
-যদি বলি আপনাকে?
-ও হ্যালো আমার আজকে বিয়ে বুঝলেন?সো আপনি এবার রাখতে পারেন।ঠিক আছে
-আরে আরে রাখবেন না।শুনুন একটা কথা
-বলুন
-আসলে আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি।তাই বলছিলাম কি আপনি তো আর ভালোবেসে বিয়ে করছেন না বা আপনার হবু বরের সাথে তেমন তো কোনো সম্পর্ক নেই তাহলে যদি পালিয়ে আসতেন
-তোর ভালোবাসা আমি ঝাড়ু দিয়ে ছুটাবো বদমাশ।ফোন রাখ (ধমক দিয়ে )।আর একবার যদি ফোন দিস তাহলে তোকে পাতাল দেখিয়ে আনবো।
বলে ফোন কেটে দিল।বিদিশাকে এভাবে চিৎকার করতে দেখে মিহু জিজ্ঞেস করল
-কি হলো?এভাবে চিৎকার করে কার সাথে কথা বলছিস?
-আর বলো না আপু।কোন বদমাশ তোমাকে ফোন দিয়েছিল।বলে কিনা সে তোমাকে ভালোবাসে
-আরে কালকে রাতেও আমাকে ফোন দিছিল।শেষে ত্রিপল আট।ঐ নম্বরটা?
-হ্যাঁ হ্যাঁ ।দাঁড়াও ব্লক করে রাখি।
বলে ব্লক করে দিল।বেচারা বিদিশা জানলোই না কার নম্বর ব্লক করেছে।
তুলিকে বাসায় আনা হয়েছে।কিন্তু ও সবার সাথেই স্বাভাবিক ব্যবহার করছে।এমনকি মিহুর সাথেও ভালো ব্যবহার করছে।ব্যপারটা বিদিশার খটকা লেগেছে তাই মাহিনকে বিষয় টা জানালো।তবে এ পর্যন্ত কোনো গন্ডগোল হয়নি
বরযাত্রী এসে গেছে।কথাটি শুনেই বিদিশা দৌড় দিয়েছে।অন্য ভাইবোনেরাও গেট ধরতে গেছে।প্রমির আসতে একটু দেরী হয়েছে তাই ও নিজের বান্ধবী মিহুর কাছে না গিয়ে একেবারে গেটে চলে গেছে।সেখানে বসে গেটের টাকা নিয়ে দর কষাকষি হচ্ছে।বিদিশারা বিশ হাজার টাকা দাবি করেছে।যেহেতু দুইজন বর তাই টাকা ডাবল।পিয়াস ওদের কথা শুনে বলল
-বেয়ান সাবরা তাহলে তো প্রত্যেক খাবারের পদ দুইটা করে থাকতে হবে।যেমন ধরেন রোস্ট দুইটা চিংড়ি দুই পিছ।সব কিছুই দুই পিছ।
বিদিশা বলল-বেয়াই সাব আপনাদের পেটে যদি এত জায়গা থাকে তাহলে অবশ্যই দেওয়া হবে।আর সব থেকে বড় কথা হলো ইংরেজি ষাঁড় একটু বেশীই খায়।
পিয়াস বলল-কিন্তু জীনের বাদশা আপনার কাছে যে এত জীন আছে তাদের কাছ থেকে টাকা আনলেই তো হয়।তাহলে আপনি এখানে চাইছেন কেন?
প্রমি ওদের কথার মাঝে বলে উঠল-কিন্তু আমাদের আরেকজন দুলাভাই কই?তিনি আসেন নি?
পিয়াস বলল-তিনি এখানকার দূষিত বাতাস পরিষ্কার করতে বলেছেন। এখানের কোলাহল তার পছন্দ নয়।
-তা বললে তো হবে না।বরের টাকাটা দিতে হবে।এবং আমাদের তৈরি শরবত খেয়ে তারপর ঢুকতে হবে।
-আমি আপনাদের দুলাভাইদের বোন। আমি দিচ্ছি টাকা।তবে আমার বড় ভাইয়া এইসব শরবত খেতে পারবে না।মানে তিনি এসব রীতি পছন্দ করেন না।
গেটের গন্ডোগোল পেরিয়ে যাওয়ার সময় পিয়াস নীলুকে বলল-ভালো হলো সবুজ ড্রেস পড়েছেন।যদি সাদা ড্রেস পড়তেন তাহলে সত্যি সত্যিই জীন আপনাকে তাদের বাদশা বানিয়ে দিত
-আরে কালো ড্রেসে আপনাকে যা লাগছে না।একদম পারফেক্ট,কালো ষাঁড় হয়ে গেলেন।
বরের আসনে বসা নেহাল আর আরফান।নেহালের পাশে বসে পিয়াস ওকে খোঁচাচ্ছে আর বলছে
-ভাই শান্তির জীবন থেকে বিদায়ের শুভেচ্ছা।তোমার সাংসারিক জীবন যেন সুখের হয়
-মজা নিচ্ছিস?
-না মজা কই নিলাম?
-দেখবি তোর এই সুখের দিন বেশি থাকবে না।কারন সুখের পরে আসে দুঃখ।
এইদিকে আরফানকে ঘিরে আছে ওর বন্ধু বান্ধব।ফারিশ ওদের সাথে যাত্রা পথে এসেছে।ফারিশ বলল
-ভাই সেই তো বিয়ে করলিই শুধু সারাজীবন বিয়ের বিরুদ্ধে কথা বললি।আর তার জন্য আমি এখনো সিঙ্গেল।তোর এই বিয়েতে আমি আজকে মিঙ্গেল হবোই।
-ফারিশ এই বিয়েতে বলছিস কেন? আরফান কি আরো বিয়ে করেছিল নাকি?
এসব করতে করতেই সেই কাক্ষিত মুহূর্ত চলে আসে।প্রথমে নেহাল আর পিহুর বিয়ে পড়ানো হয়।নেহাল তো মুচকি হেসে কবুল বলে দিয়েছে।পিহুও একটু সময় নিয়ে কবুল বলে দিয়েছে।আরফানকে কবুল বলতে বলার সময় ও নীলুর দিকে একবার তাকালো।ওর হাসি মুখখানা দেখে কবুল বলে দিল।তবে মিহুর কবুল বলতে টাইম লেগেছিল।কারণ যে দুজন ছোট থেকে পাশে থেকেছে তারা কেউ ই পাশে নেই।দাদু তো কোথায় সেটা নিজেও জানেনা আর মাহিন ভাই ও নাই আসে পাশে।তারপরও বিদিশা প্রমি ফুফুর কথা শুনে কবুল বলে দিয়েছে।সবাই আলহামদুলিল্লাহ বললো।
এবার এসে গেছে কন্যা বিদায়ের পালা।কবির সাহেব অনেক কান্না করে আবেগ দিয়ে কথা বলে নেহালের হাতে পিহুকে তুলে দিলেন
-বাবা আমার একমাত্র রাজকন্যাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। আমার কন্যাটাকে কষ্ট দিও না বাবা।
-আপনি দোয়া করবেন বাবা আমি যেন আপনার মেয়েকে সুখে রাখতে পারি।
মিহু আজকে একটা সাহসের কাজ করল।কবির সাহেবের সামনে গিয়ে বলল
-বাবা আমি জানিনা তুমি আমাকে কেন ঘৃণা কর।তবে আজকে মেয়ে হিসেবে একটা দোয়াই চাই তুমি যে কারণে আমায় ঘৃণা কর সেই কারণটা যেন একদিন আমার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে দাড়ায়।
কবির সাহেব চক্ষু লজ্জার ভয়ে কিছুই বললেন না।আরফান এতক্ষণ এইসব নাটক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল।কিন্তু হঠাৎ মিহুকে পড়ে যেতে দেখায় এগিয়ে গিয়ে ধরল।কবির সাহেব ধরতে চাইলে ও দৃঢ় গলায় বলল
-মিস তাসমীম মিহু এখন আমার মিসেস।তাই আশা করি তাকে ধরার অধিকার যে সে রাখে না।
বলে মিহুকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসায়। সবাই গাড়িতে ওঠার পরে পিয়াস আর নীলুর খোঁজ পড়ল।নীলুকে পাওয়া যাচ্ছে না।কথাটি শুনে আরফানের বুক কেঁপে উঠল। আর এই কথাটি শুনে তুলি একটা হাসি দিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে স্টোর রুমের দরজা বন্ধ পাওয়া যায় ।সবাই এখানে বসে আছে তুলির চোখে আনন্দের ঝিলিক।কিন্তু তুলির চোখে সে আনন্দ বেশিক্ষণ টিকল না।কারণ কোথা থেকে পিয়াস এসে বলে তুলি স্টোর রুমেই আছে।তুলি মনে মনে বলে
-তাহলে ভেতরে কে আছে?
স্টোর রুমের দরজা খুলে নীলুকে দেখতে পাওয়া যায় ।তবে তার সাথে আরো একজনকে পাওয়া যায় ।যাকে দেখে সবাই অবাক হয়ে আছে। আর সেই ব্যক্তি হলো
‘মাহিন”
#চলবে
(রি চেক করিনি।ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন)