#হৃদমাঝারে_শুধু_তুমি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট:০৮
বিথীর মাথায় একটা কথাই ঘুরছে।অরিনের ফোনে আদ্রিয়ান আর অরিনের পিক কেন?আর ওদের আগে থেকে আলাপ হলোই বা কিভাবে?ছাদে দাঁড়িয়ে এসবই ভাবছিলো তখন আকাশ এলো।
আকাশ:বিথী তুমি এখানে?
বিথী:কিছু না এমনেই।তুমি এখানে কি করছো?
আকাশ:আমি তো রোজ আসি।
বিথী:রোজ ছাদে এসে কি করো?গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলো নাকি?
আকাশ মলিন হাসলো।
আকাশ: নাহ। শুধু কারো স্মৃতির পাতায় ঘুরে আসি!
বিথী:মানে?
আকাশ:কিছু না।
বিথী:তোমার আর তোমার কথা!
আকাশ: আদ্রিয়ানকে খুব ভালোবাসো না?
বিথী:হুমম অনেক।
আকাশ আর কিছু বলল না।
বিথী:ঘুমাবে না?
আকাশ:কত রাত নির্ঘুম কেটেছে,আর এখনও কাটবে (মনে মনে)হুমম তুমি ঘুমাও।কালকে তো এনগেজমেন্ট।
বিথী:হুমম যাই।শুভ রাত্রি।
বিথী চলে গেলো।আকাশ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
সকালে সবাই ব্যাস্ত।কাজ কাম করতে করতে বেচারা অর্গানাইজাররা ক্লান্ত।চারদিকে সবাই কত উৎফুল্লতার মাঝে আছে।কিন্তু এত খুশির মাঝেও কারো মনে কাল বৈশাখীর মত।সবার সামনে হাসিখুশি থাকলেও,মনটা ওর ভেঙ্গে যাচ্ছে।নিজের চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষ কে অন্য কারো হতে কোনো মেয়ে দেখতে পারে না।তাও অরিন সামলাচ্ছে নিজেকে।
হৃদিতা:অরিন!
অরিন:হুমম?
হৃদিতা:তুই উঠানে ঘুরে আয়। ভাল লাগবে।
অরিন:তুই এরকম চোখ নামিয়ে কথা বলছিস কেনো?
হৃদিতা চুপ রইলো।
অরিন:দেখ যা হওয়ার হয়ে গেছে। দোষটা শুধু তোর না আমারও ছিল। অন্তত যাচাই করে নিলে এসব হতো না । যা হয়েছে ভুলে যা।আবার আগের মত থাক।
হৃদিতা কিছু বললো না,অরিন উঠানে গেলো।উঠান ঘুরতে ঘুরতে একসময় বাইরে হাঁটতে বের হলো।এইসব আর ও নিতে পারছে না।ওর রিফ্রেশমেন্ট এর প্রয়োজন।হাঁটতে হাঁটতে প্রায় কিছুদূর যাওয়ার পর হুট করে ওর সামনে একটা গাড়ি আসলো।অরিন কিছু বুঝে উঠার আগেই গাড়িতে থাকা ব্যাক্তি ওকে টেনে গাড়িতে উঠিয়ে নিল।
অরিন:এগুলো কোন ধরনের অসভ্যতা মিস্টার আদ্রিয়ান?
আদ্রিয়ান কিছু বললো না। হ্যাঁ আদ্রিয়ান ই ওকে তুলেছে।
অরিন:আমি কিছু বলছি?
আদ্রিয়ান তাও চুপ।অরিন বেশ খানিকক্ষণ চিল্লাচিল্লি করলেও একসময় দমে গেলো।কারণ চিৎকার চেঁচামেচির সময় যদি বিপরীত পক্ষ চুপচাপ থাকে তাহলে সেই চিৎকার চেঁচামেচির কোনো মজাই নেই,বলে ওর ধারণা।বেশ খানিক পর আদ্রিয়ান এক পুকুর পাড়ে গাড়ি থামালো। জায়গাটা গ্রাম থেকে বেশ দুর। আদ্রিয়ান নিজে নেমে অরিনকে টেনে নামালো।
অরিন:আজব,কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়?
আদ্রিয়ান ওকে পুকুর পাড়ে দাড় করালো।
আদ্রিয়ান:সত্যিটা কি অরিন?
অরিন চমকে তাকালো।কিসের সত্যির কথা বলছে আদ্রিয়ান?
অরিন:মানে?
আদ্রিয়ান:তনয়া যা বললো তা কি সত্যি?
অরিন অবাক হয়ে বললো,
অরিন:কি বলেছে ও?
আদ্রিয়ান: যা যা হয়েছে,আমাদের বিচ্ছেদ.. সব কিছু সাজানো!
অরিন এবার ঢোক গিলল,তনয়া কিভাবে সব জানে?
সেদিন অরিনের থেকে তনয়া ফোন চেয়েছিল।কিন্তু অরিন ফোন উঠানে ফেলে এসেছিল।অরিন সেটা নেওয়ার জন্য আসলেই, তনয়া ও পিছে পিছে আসে।আর ওদের কথা শুনতে পায়।তনয়া আদ্রিয়ান আর অরিনের ব্যাপারে আগে শুনেছিল সামান্তার কাছে।আর আজ বিচ্ছেদের কাহিনীও জেনে নিলো।অরিন কোনোদিনও আদ্রিয়ানকে সত্যি বলবে না।তাই ও নিজেই সিদ্ধান্ত নিলো ও সব আদ্রিয়ানকে জানাবে।কিন্তু সেদিন আর কথা বলতে পারে নি।আর পরের দিন মানে আজকে আদ্রিয়ানকে সব বলে ।আর শুনার পরই আদ্রিয়ান অরিনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।
সব শুনে অরিন চুপ।আকাশের অবস্থাও অত ভালো না।বৃষ্টি পড়বে যখন তখন ।
অরিন:আমি বাড়ি যাবো!
আদ্রিয়ান:উত্তর না দিয়ে এক পাও নড়তে পারবে না অরিন।
অরিন:আমি বাড়ি যাবো।
আদ্রিয়ান:আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দেও।
অরিন:কি প্রশ্ন?
আদ্রিয়ান:তনয়া যা বললো তা কি সত্যি?
অরিন:না(অন্যদিকে তাকিয়ে)
আদ্রিয়ান:সত্যি বলছো?
অরিন: হ্যাঁ (অন্যদিকে তাকিয়ে)
আদ্রিয়ান:আমাকে কি তোমার গাঁধা মনে হয়?
অরিন:মানে?
আদ্রিয়ান:মানে মাই ফুট!তোমার কি মনে হয় আমি গাধা?অরিন আমি তোমাকে সেই ক্লাস নাইন থেকে চিনি।তুমি যে চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে বলতে পারো না তা আমি জানি।
অরিন কিছু বললো না।
আদ্রিয়ান:তনয়া যা বলেছে সব সত্যি?
অরিন:হুমম
আদ্রিয়ান এর মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেলো।কিন্তু অরিনের কথা শুনে নিমিষেই আবার খারাপ হয়ে গেলো।অরিনের কথা এমন যে,”কিন্তু সত্য হলেই সব আগের মত হবে না।”
আদ্রিয়ান:মানে?
অরিন:ভুলে যেও না তোমার বিয়ে আদ্রিয়ান!
আদ্রিয়ান:বিয়ে হবে না। আমি এখনি সবাইকে না করছি।
বলে ফোন বের করে কল দিতে নিলেই অরিন বলে উঠে,
অরিন:তুমি চাচ্ছো আমি সবার কাছে ছোটো হয়ে থাকি?
আদ্রিয়ান:আমি কেন তা চাইবো?
অরিন:আদ্রিয়ান ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড!! বিথীর বিয়ে ভেঙ্গে গেলে গ্রামের লোক ওকে ধিক্কার দিবে।
আদ্রিয়ান:তো?আমরা সবাইকে বুঝিয়ে বলবো!
অরিন:আদ্রিয়ান বিথীর মা বাবা ছোটো হবে!!
আদ্রিয়ান:তুমি আসলে কি বলতে চাচ্ছো?
অরিন:ওকে শুনো,আমি চাই না আমার কারণে বিয়ে ভাঙুক আর মা বাবা কে ছোট হতে হোক।এমনেই আমার মা বাবার জন্য মনি’রা বাড়ি ছেড়েছে।আমি চাই না আবার আমার কারণে তাদের মান ক্ষুণ্ণ হোক।
আদ্রিয়ান:তার মানে..
অরিন:মানে হলো আমাদের বিচ্ছেদ ছিল আছে আর থাকবে।
আদ্রিয়ান:অরি পাখি!
অরিন চোখ খিচে বন্ধ করলো।কত বছর পর এই ডাক শুনলো।কিন্তু এই ডাকে ও সারা দিতে পারবে না।
অরিন:আগে যেমন আমায় ঘৃনা করতে ,প্রতারক ভাবতে এখনও তাই ভাবো।
আদ্রিয়ান কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
আদ্রিয়ান:সত্য জানার পরও?জানো অরি পাখি ,যখন ওই মিথ্যে নাটক সাজানো হয়েছিল ,তখনও তোমায় ঘৃনা করি নাই।ভালোবেসে গেছি।বলেছিলাম না তুমি ছেড়ে গেলেও ভালোবেসে যাবো, হ্যাঁ ভালোবেসে গেছি।এখনও বাসি।সত্য জানার পর আমি কি করে ঘৃনা করবো?
অরিন:আদ্রিয়ান,তুমি..
অরিন এর কথা আটকে যাচ্ছে।
আদ্রিয়ান অরিনের দুই হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বললো,
আদ্রিয়ান:প্লিজ অরি পাখি,আর পারবো না।তোমায় ছাড়া বাঁচতে পারব না তা এই কয়েকটা মাসে বুঝে গেছি।
অরিন:কয়েকটা মাস পেরেছো,বাকি মাস ও পারবে।(শক্ত কণ্ঠে)
আদ্রিয়ান: অরি পাখি!
অরিন:গেলাম,আর প্লিজ আমাকে ছোটো করিও না।
(কাঁপা গলায়)
আদ্রিয়ান:অরিন!
অরিন কিছু না বলে উল্টো দিকে হাটা দিলো।আদ্রিয়ান অরি পাখি বলে ডাকছে কিন্তু অরিন কিছু না বলে হেঁটেই যাচ্ছে।আদ্রিয়ান পাড়ে হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়লো।হুট করে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো।অরিনের মনকে সেই চিৎকার ছন্নছাড়া করে দিচ্ছে।আদ্রিয়ান বার বার বলছে অরি পাখি ছেড়ে যেও না। মরে যাচ্ছি।পারছিনা ।কিন্তু অরিন শুনলো না।রিকশায় উঠে চলে গেলো।আদ্রিয়ান এখনও কাঁদছে।অরিন পাখি বলে।কিন্তু কেও শুনছে না।তার কান্নার শামিল হতে বৃষ্টিও পড়তে শুরু করলো।ওদিকে অরিন কিছুদূর যেতেই রিকশা থেকে নেমে পড়লো,রিকশা ওয়ালাকে কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করলো।ফাঁকা রাস্তায় কেও নেই।বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে ওর ভ্রুক্ষেপ নেই। সেও ধপ করে রাস্তায় বসে পড়লো।চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
অরিন:কেনো?কেনো আমাদের সাথেই এমন হয় আদ্রিয়ান?কেনো আজ আবারও বিচ্ছেদের স্বাদ নিতে হলো?ভাগ্য কেনো এরকম করলো আমাদের সাথে?সরি,কিন্তু আমি নিরূপায়।নিজের সুখের জন্য বিথীকে কষ্ট দিতে পারবো না।মায়ের কথা ভাঙতে পারবো না । মাকে ছোটো করতে পারবো না। আই এম সরি,এডি!!সরি।
চিৎকার করে কাদঁছে দুই ভালোবাসার মানুষ, যার সাক্ষী শুধু নির্জনতা আর বৃষ্টি।
অরিন ভিজে বাড়ি প্রবেশ করলো।
লামিয়া:একিরে অরিন এভাবে ভিজেছিশ কেনো?
অরিন:এমনেই,আম..আমি চেঞ্জ করে আসি।
লামিয়া আর কিছু না বলে নিজের রুমে গেলো।
অরিন শাওয়ার নিতে গেলো। শাওয়ার নিয়ে এসে বারান্দায় দাড়ালো।আদ্রিয়ান এখনও ফিরে নি।অরিনের চিন্তা হলেও কিছু করার নেই।
বেশ দুপুর করে আদ্রিয়ান বাড়ি আসলো।সিড়ি দিয়ে উঠার সময় হৃদিতার সামনে পড়লো।আদ্রিয়ান ছল ছল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
আদ্রিয়ান:কেনো করলে এমন হৃদিতা?না করলেও পারতে।
বলেই নিজের রুমে চলে গেল।
হৃদিতার বুক মোচড় দিয়ে উঠলো।মুখ চেপে ধরে এক দৌড়ে বাড়ির পিছনে গেলো।মুখ চেপে কাদঁছে ও ।
হৃদিতা :আজ সব আমার জন্য হলো,আমার জন্যে!!
#চলবে।
(