হৃদমাঝারে শুধু তুমি পর্ব ১৩

#হৃদমাঝারে_শুধু_তুমি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট:১৩
সবাই আবার আগের জায়গায় বসলো,আর বোতল ঘুরিয়ে দিলো।এবার টার্ন আসলো লামিয়ার।
বিথী: ট্রুথ অর ডেয়ার?

লামিয়া:ট্রুথ!

অরিন:আদিব ভাইকে দেখলে এত লজ্জা কেন পাও,আর ঝগড়া কেন করো?(আদিব বিথীর বড়ো ভাই)

লামিয়া:জানি না।

বিথী:এটা তো কাউন্ট হবে না!

সামান্তা লামিয়াকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে বললো,
সামান্তা: সামথিং সামথিং?

লামিয়া মুচকি হেসে উপর নিচ মাথা নাড়লো।
সবাই: ওহো!

অরিন:কালকে ভাইয়া আসছে তখন দেখা যাবে কি হয়।

আকাশ:বড়ো ভাইয়ের সামনে এসব বলতে লজ্জা করে না?

লামিয়া:তুই যখন আমাকে বিথীর ব্যাপারে বলতি তখন তোর লজ্জা করতো না?

আকাশ চুপ করে গেলো।না জানি আর কি কি বলে দেয়।সবাই আবার খেলায় মত্ত হলো ,এবার টার্ন এলো হৃদিতার।হৃদিতা ট্রুথ নিবে তার আগেই অনিক বললো,
অনিক: ভীতুরা সবসময় ট্রুথ ই নেয়।
হৃদিতা: ডেয়ার!
অনিক:তোমার ডেয়ার হলো এই মুহূর্তে আমাদের সবাইকে গরম কিছু খাওয়ানো।
হৃদিতা: কীহ!আমি রান্না পারি না।
অনিক: তাতো হবে না,ডেয়ার ইস ডেয়ার।
অরিন:একদম!
হৃদিতা:কিন্তু..
সামান্তা:আরে ইউটিউব আছে তো!
হৃদিতা:ওকে।
হৃদিতা উঠে গেলো কিচেনে।প্রায় ১০ মিনিট পর এলো।একটা পাতিল নিয়ে।
অরিন:বাহ,১০ মিনিটে এত বড় পাতিলে কি আনলি?
মমি: স্পেশাল কিছু মনে হয়।
হৃদিতা ৩২ পাটি দাত দেখিয়ে বললো,
হৃদিতা:ঢাকনা সরিয়ে দেখ,স্পেশাল খাবার।
সামান্তা ঢাকনা সরিয়ে বেকুব বনে গেলো।সবাই একটু উকি দিতেই অবাকের চরম পর্যায়।
লামিয়া:গরম পানি?
হৃদিতা: হ্যাঁ।
অনিক:কিন্তু এটা তো চিটিং।
হৃদিতা:উহু আপনি বলেছেন গরম গরম যেনো কিছু খাওয়াই,তাই গরম পানি।সিম্পল।
অরিন:গ্রেট!!
এবার বাড়ি আসলো সামান্তার,ওকে দেওয়া হলো গান গাইতে কারণ ওর গানের গলা অনেক ভালো।বিথী আর অরিনের টার্ন এলে ওদের একজনকে কফি আরেকজনকে স্নাকস আমার ডেয়ার দেয়।
লামিয়া:এবার বাকি রইলো,আদ্রিয়ান ভাইয়া আর আকাশ ভাইয়া।
সামান্তা:এদের দুইজনকে স্পেশাল ডেয়ার দিবো।
আকাশ:কিন্তু আমি তো ডেয়ার নিবো না।
লামিয়া:নিতে হবে।কোনো নড়চড় না।
মমি:মুখে কুলুব এঁটে বসে থাকো।
সাগর: কুলুব আটা লাগবে না।আমি ওর মুখ ধরে রাখি,অনিক তুই আদ্রিয়ান কে ধর।
আদ্রিয়ান:আমাকে ধরা লাগবে না।আমি প্রস্তুত ।
হৃদিতা:হুমম,সাহসী।অবশ্য এটা তেমন কোনো কঠিন ডেয়ার না।
আদ্রিয়ান:কি তাহলে?
মমি:তোমাদের তো পরশু বিয়ে,তাই তোমরা এখন তোমাদের হবু বউকে কিউট করে প্রপোজ করো।
আকাশ সাগরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,
আকাশ: এ আর এমনকি!
সামান্তা:তাহলে তুমি আগে করো!!
আকাশ:ওকে!

আকাশ গিয়ে বিথীর সামনে বসলো,
আকাশ:”মিষ্টি হেসে কথা বলে,
পাগল করে দিল
তোমায় নিয়ে হারিয়ে যাবো,
আকাশের নীলে।
তোমার জন্য মনে আমার
অফুরন্ত আশা।
সারা জীবন পেতে চাই
তোমার ভালোবাসা।
ভালোবাসি মনের রানী,নিজের থেকেও বড্ড বেশি।
জীবন মরণ তোমার নামে,দিবো আমি লিখে..
মিষ্টি করে প্রেয়সী তুমি তাকাও আমার দিকে,
চোখে চোখে রেখে বলো না প্রিয়..
ভালোবাসো কি এই আমাকে?

বিথী অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।কেনো যেনো আকাশের প্রত্যেকটা কথা ওকে ঘোরে নিয়ে গেলো।নিজের অজান্তেই বললো,
বিথী:ভালোবাসি!
সঙ্গে সঙ্গে করতালির আওয়াজ।
মমি:জাস্ট অসাধারণ।
হৃদিতা:এবার আদ্রিয়ান ভাইয়া!
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অরিন কে দাড় করালো,ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
আদ্রিয়ান:”ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভূতির সপ্তপূর্নে পরিপূর্ণ আমার এই কল্পনারা,বড্ড ব্যাকুল।কিসের এই ব্যাকুলতা?যেখানে হারিয়েছে আমার অবাধ্য মন।জানি না,তবে এত টুকু জানি,আমার এই অবাধ্য মন, তোমার ঐ অন্তরে, জলফরিং এর পাখায় ভেসে,উড়ছে তোমার প্রান্তরে।কাব্যিক অক্ষরে গাঁথা মুক্তোর মালায়,খানিকটা নিভৃতে,খানিকটা যতনে তোমার নামটি লিখা।আমি নই কোনো কবি, নই কোনো লেখক।আমি শুধুই এক পাগল প্রেমিক,যে শুধু অন্ধ তার অরি পাখিতে।ভালোবাসি অরি পাখি!!নিজের থেকেও বেশি।অনেক কষ্ট পেরিয়ে এক হয়েছি আজ,হারাতে চাই না আর তোমাকে দ্বিতীয়বার।ফর এভরিডে , আই মিস ইউ।।ফর এভরি আওয়ার , আই নিড ইউ।।ফর এভরি মিনিট , আই ফিল ইউ।।ফর এভরি সেকেন্ড , আই ওয়ান্ট ইউ।।ফর এভার , আই লাভ ইউ! আই লাভ ইউ ফর অল দ্যাট ইউ হেভ বিন অ্যান্ড অল দ্যাট ইউ উইল বি!”
(~সাবরিন জাহান~)
পিন পিন নিরবতা,সবাই মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।কেও যে কাওকে এভাবে ভালোবাসতে পারে তা হয়তো ওদের জানা ছিল না।অরিন চোখে জল নিয়েই মুচকি হেসে বলল,
অরিন:”তোমার মত হয়তো কাব্যিক ভাবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারবো না,কিন্তু এত টুকু বলবো,আমি সেই তুমিতে মত্ব হতে চাই যেই তুমি শুধু আমার।কারণে অকারণে ভালোবাসতে চাই,যেখানে থাকবে না কোনো ভালোবাসার সীমা।ভালোবাসতে চাই শুধু তোমাকে কারণ যে একটাই!!তুমি শুধুই আমার।আমার ছিলে আমার আছো আর আমারই থাকবে।ভালোবাসি প্রিয়!”
সবাই হাত তালি দিল,সাগর আর অনিক সিটি বাজাচ্ছে।বিথীর কেনো জানি এখন কষ্ট হচ্ছে না।বরং এটা দেখে ভালো লাগছে আজ দুটি ভালোবাসার মানুষ ওর কারণে এক হতে পেরেছে।আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়াতেই অরিন জড়িয়ে ধরলো ওকে।আদ্রিয়ান ও জড়িয়ে ধরলো।আকাশ বিথীর কানে ফিসফিস করে বললো,
আকাশ:কষ্ট হচ্ছে?
বিথী:হয়তো হতো যদি তোমাক ভালো না বাসতাম।
আকাশ অবাক চোখে তাকালো।
বিথী : হ্যাঁ যা বলছি সত্যি,ভালোবাসি তোমায়।অনেক বেশি।আর সবার মত করে এত সুন্দর প্রপোজ করা আমার সাধ্যে নেই বাপু। যা বলছি সরাসরি।এখন তুমি চাইলেও আমার না চাইলেও আমার।বুঝলে?
আকাশ হালকা হেসে বললো,
আকাশ: তথাস্তু,মনের রানী!আপনার আদেশ শিরো ধার্য!!
বিথী হেসে জড়িয়ে ধরলো আকাশকে। আকাশও আগলে নিল ওকে।
খেলা শেষে যে যার রুমে চলে গেল।বিথী আর অরিন এক সাথে থাকবে।
অরিন:বিথী!

বিথী: কিছু বলবি?

অরিন:আমার না মনে হচ্ছে আমি তোকে ঠকাচ্ছি!

বিথী:কেনো?

অরিন:আজ আমি না থাকলে তুই আদ্রিয়ানকে পেতি।

বিথী অরিনের এক হাত নিজের মুঠোয় নিলো।অরিনের গালে হাত দিয়ে বললো,

বিথী:তুই একদম ভুল ভাবছিস!যদি এমন হত আমার আর আদ্রিয়ানের বিয়ের পর তুই আমাকে সব জানাচ্ছিস,তাহলে হয়তো বলতাম ঠকিয়েছিশ আমায়।কিন্তু এমনটা না।আর তুই আর আদ্রিয়ান একে অপরকে ভালোবাসিস।তার মধ্যে তৃতীয় ব্যাক্তি ছিলাম আমি।যদি আমার কারণে তোরা আলাদা হতি জীবনেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।

অরিন:আকাশ ভাইয়া কে ভালোবাসিস?

বিথী:জানিস এই একটা কাজের জন্য তোকে ধন্যবাদ দেওয়া দরকার।

অরিন:মানে?

বিথী:তোদের কারণেই আকাশ কে পাবো।যে আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে।নিজের খুশির কথা না ভেবে আগে আমার কথা ভাবে।এমন ভালোবাসাকে কি হারাতে দেওয়া যায়?

অরিন:তুই ওকে ভালোবাসিস?

বিথী: যদি এটা গতকাল জিজ্ঞেস করতি তাহলে হয়তো বলতাম না, কিন্তু আজ মন থেকে বলছি ভালোবাসি আমি আকাশকে।অনেক বেশি ভালোবাসি।

অরিন কিছু বললো না, মুচকি হাসলো।এই একটা কথা ওকে অনেক পুরাচ্ছিল যা এখন আর হচ্ছে না।কারণ ও ঠকায় নি বিথী কে।

আজ গায়ে হলুদ।হলুদ বাঙালি স্টাইল এ কুচি ছাড়া শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে অরিন। উদ্দেশ্য হৃদিতা বা মমিকে দেখলেই সাথে করে নিয়ে ওর সাথে বসিয়ে রাখা।বিথী আছে আকাশের সাথে,কি আর করবে। নিউ লাভ বার্ডস।গল্প করছে।অরিনের একা থাকতে ভালোলাগছে না।আর আদ্রিয়ানকে ও কোনো মতেই ডাকবে না।কারণ এই লোক ওর হার্ট বিট বেড়ে যাওয়ার এক মাত্র কারণ।কিছুক্ষণ উকি ঝুঁকি দেওয়ার পর কাওকে না পেয়ে যেই ঘুরতে যাবে ওমনি কেও টান মেরে ওকে ফাঁকা রুমে নিয়ে গেল।অরিন ভয়ে চোখ বন্ধ রেখেই বললো,
অরিন:হার্ট অ্যাটাক!

#চলবে..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here