হৃদমাঝারে শুধু তুমি পর্ব ১৪

#হৃদমাঝারে_শুধু_তুমি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট:১৪

আদ্রিয়ান:চোখ বন্ধ করে কি বিড়বিড় করছো?
অরিন এক চোখ খুলে সামনে তাকালো।আদ্রিয়ান ওর একদম কাছে দাড়িয়ে আছে যা দেখে ও চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলো।

অরিন: দূরে সরে দাঁড়াও।

আদ্রিয়ান আরো এসে দাড়ালো।অরিন এক ঢোক গিলল।

অরিন: সরো বলছি।

আদ্রিয়ান:উহু!

অরিন:আরে তনয়া তুই!

আদ্রিয়ান:নো চালাকি।

তনয়া:হুমম নো চালাকি!

আদ্রিয়ান চট জলদি অরিনকে ছেড়ে দূরে দাড়ালো।অরিন ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে।
আদ্রিয়ান:কি শালী সাহেবা?

তনয়া:আসছিলাম আপি কে খুজতে কিন্তু এখানে যে অন্য কিছু চলে বুঝব কিভাবে?একটু দরজা আটকিয়ে নিতে।

অরিন:ওই,বেশি পেকে গেছিস না? একবারে আম্মুকে বলে তোর ও বিয়ে দিয়ে দিবো।

তনয়া: ইহ,আসছে আমার বিয়ে দিতে। যাই হোক ।তোমরা রোম্যান্স করো আমি গেলাম।

অরিন:তনুর বাচ্চা!!

তনয়াকে আর পায় কে।আদ্রিয়ান মাথা চুলকালো।
অরিন:এই তুমি ভুলেও আমার কাছে আসবে না।

আদ্রিয়ান:ওমা কেনো?

অরিন:তোমার কারণে কোনদিন না জানি হার্ট অ্যাটাক করে ফেলি।

আদ্রিয়ান: ও তাই!

অরিন:হুমম ।এভাবে হুট হাট কাছে এসে আমার হার্ট বিট বাড়িয়ে দেও।না জানি কোন দিন হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়।

আদ্রিয়ান অরিনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে কানে কানে বললো,
আদ্রিয়ান:বিয়ের পর মনে হয় হার্ট অ্যাটাকেই মৃত্যু হবে।

বলে বেরিয়ে গেলো।

অরিন এই কথার মানে বুঝার চেষ্টা করলো।কিছুক্ষণ পর কথার মানে বুঝতে পেরে বিড়বিড় করে বললো,”অসভ্য,চরম লেভেলের অসভ্য।”

ওদিকে
অনিক:এই বুচি!

হৃদিতা: ওয় মিস্টার আলু পটল ভেন্দী বিশিষ্ট লোক,আপনাকে আমি এক হাজার পাঁচশো চল্লিশ বার বলেছি আমাকে বুচি বলবেন না।

অনিক:এটা নিয়ে এক হাজার পাঁচশো এক চল্লিশ বার হলো।

হৃদিতা:ধুর।

অনিক:ওই মিস আমার উত্তর?

হৃদিতা:কিসের উত্তর?

অনিক:কালকে এত কিছু বললাম।আর এখন বলছো কিসের উত্তর।

হৃদিতা:আপনি তো একটা কবিতা বললেন।

অনিক বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো।এই মেয়ে বাচ্চা নাকি আমি একে কবিতা শোনাবো।অনিক মাথা চাপড়িয়ে উল্টো দিকে হাটা দিলো।হৃদিতা মুচকি হাসলো।

অন্য দিকে,মমি স্টেজ এর লোকদের সাথে কাজ করছে।
মমি:এটা ঐদিকে রাখুন,ওই ওই আপনি কই যান?এটা এদিকে রাখুন।

সাগর:বাহ বাহ,বহুত কাজের তো তুমি ।

মমি:আজাইরা প্যাচাল পারবেন না ।

সাগর:আজাইরা প্যাচাল?সেটা আবার কি?

মমি:তেলাপোকার মত মাথা নিয়ে এত কিছু বুঝা আপনার পক্ষে অসম্ভব।

সাগর:এই তেলাপোকার মত মাথার সাথেই সারাজীবন থাকতে হবে মিস মমি!

মমি অবাক চোখে তাকালো।সাগর ওকে চোখ মারলো।তারপর শীষ বাজাতে বাজাতে চলে গেলো।মমি বেকুব বনে গেলো।

আকাশ:এখানে কি করো?

বিথী:কেনো?পুকুর পানি দেখি!!

আকাশ:ওহ,তুমি দেখো আমি যাই।

বিথী:কেন?

আকাশ: গত কয়েকবছর দেখতে দেখতে অভ্যাস হয়ে গেছে,তাই।

বিথী:তুমি এত আনরোমান্টিক কেন?

আকাশ: কে বললো?

বিথী:কই নতুন বউ পাশে বসে আছে দুই একটা রোমান্টিক রোমান্টিক কথা বলবে , তা না,উনি চলে যাচ্ছে।

আকাশ বিথীর আরেকটু পাশ ঘেঁষে বসে বললো,
আকাশ:একবার বিয়েটা হোক, রোমান্টিকতা কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি দেখিয়ে দিবো!!

বিথী চুপ করে রইলো।এমন জবাব আশা করে নি।আকাশ কিছু বললো না।

হলুদ অনুষ্ঠান শুরু।অরিন এখনও ওই ভাবনায় আছে যখন ওকে বিথীর হাসব্যান্ড হিসেবে হলুদ লাগাতে হয়েছিল।আজ সব ঠিক।একে একে সবাই হলুদ লাগালো।
“মাস্টিও কা, এ সামা হে…
সেলিব্রেশন ওয়ালি বাত হে।(অনিক হৃদিতা কে ধাক্কা দিয়ে গেয়েই উঠলো)
ফিকার কিস্কো, এ জাহা কি
মে তেরে টু মেরে সাথ হে।(সাগর মমির দিকে তাকিয়ে বললো)
তো ঝুমে বানকে বেফিকার
জারা দেখ তো ইধার (আকাশ বিথীকে নিয়ে গেয়ে উঠলো)
মেরে আখো মে সব টেলিকাস্ট হো গেয়া…(অনিক,সাগর আর আকাশ)
যো তুনে আখো সে আখে লারাই
যো মেনে খিচ তেরি পাগড়ি কালাই
তো দিল মেরে ব্লাস্ট হো গেয়া(আদ্রিয়ান গেয়ে উঠলো অরিনের দিকে তাকিয়ে)
আখো মে টেলিকাস্ট হো গেয়া
কি দিল মেরে ব্লাস্ট হো গেয়া
আখো মে টেলিকাস্ট হো গেয়া!!”(সবাই)

রাতে খাবার টেবিল থেকে পানি নিয়ে ঘুরতে গিয়ে কোনো সুঠাম দেহী ব্যাক্তির বুকের সাথে বাড়ি খায় লামিয়া।

লামিয়া:আব্বে কোন কুত্তা রে..রে.. হে হে..আদিব ভাইয়া তুমি!!

আদিব:আমি কুত্তা?

লামিয়া:আরে না তোমায় কেন কুত্তা বলবো।আমি তো বোতল কে বলছি।

আদিব: সিরিয়াসলি।

লামিয়া: হ্যাঁ,আমার ,আমার মেক আপ এর কসম।

আদিব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে চলে গেলো।লামিয়া দম নিলো।এই একটা ব্যক্তিকে দেখলেই ওর মন ধুরপুর করে।
আদিব:শোন লামু।

লামিয়া:জি ভাইয়া ।

আদিব:বিথী আর অরিনের বিয়ের দিক টা একটু খেয়াল রাখিস।

লামিয়া:আচ্ছা ভাইয়া।

আদিব:আর একটু গেস্ট লিস্ট চেক করিস।

লামিয়া:ওকে ভাইয়া ।

আদিব:তনয়া,আরিফা কি ঘুমিয়ে গেছে?

লামিয়া:জি ভাইয়া।

আদিব এবার বিরক্ত সহিত তাকালো।
আদিব:কথায় কথায় ভাইয়া বলা কোথা থেকে শিখলি।

লামিয়া:জি ভাইয়া।
বলেই নিজের মুখ চেপে ধরলো লামিয়া।

লামিয়া:সরি ভাইয়া।

আদিব: থাপরিয়ে কান লাল করে ফেলবো আরেকবার ভাইয়া বললে,দুনিয়ার সবাই তোর ভাই হলেও আমি না।বুঝেছিস?

লামিয়া:জি ভাই..(বলেই মুখ চেপে ধরলো)তারপর উপর নিচ মাথা নাড়লো যে বুঝেছে।

পরের দিন,আজ বিয়ে।
সামান্তা কাপড় গুছাচ্ছে এমন সময় অরিন আর বিথী নিজেদের ৩২ পাটি দাত দেখিয়ে হাসতে হাসতে সামান্তার কাছে আসলো। সামান্তা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।এদের মতি গতি ওর ভালো লাগছে না।
অরিন:সামু আপি!

সামান্তা:হুমম

বিথী:গুড নিউজ আছে!

সামান্তা: সেকিরে বিথী বিয়ের আগেই প্রেগনেন্ট কিভাবে হলি?

অরিন বিস্ফোরিত চোখে তাকালো।
অরিন:মানে?বিথী তুই প্রেগনেন্ট?কেমনে কি?

সামান্তা:আকাশের সাথে এত জলদি,মানে কেমনে কি?

এদিকে বিথী বোকা বোকা চাহুনিতে তাকালো।
বিথী:আরে ধুর আমি কেন প্রেগনেন্ট হতে যাবো,আজব!

সামান্তা:তাইলে বললি যে গুড নিউজ?

অরিন: ওরে,ঐটা তোমার জন্য!

সামান্তা:কি?

পিছন থেকে তনয়া বলে উঠলো,
তনয়া:হৃদয় ভাইয়া এসেছে!

সামান্তার শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো,মন বলছে ছুটে এক পলক দেখে আসবে।কিন্তু সে যে অভিমান করেছে।তাই মুখ ফুলিয়ে রইলো।কেনো যাবে?সে কি একবারও খোঁজ নিয়েছে?কেমন আছে সামান্তা।

অরিন:কিরে যাবি না?

সামান্তা:তোরা রেডী কখন হবি?

বিথী:কথা ঘুরাচ্ছিস কেন?

সামান্তা:কই?

অরিন:কি হয়েছে বলতো?

হৃদয়:অভিমান!(ঘরে ঢুকতে ঢুকতে হৃদয় বললো)

সামান্তা:অরিন আয় তোকে সাজিয়ে দেই।

অরিন: নো ওয়ে!!আমি এসব আটা ময়দা ভুলেও মাখবো না!!

বিথী: মানে কি,দেখ হলুদে সাজিস নাই ঠিক আছে কিন্তু আজকে বিয়ে!!সাজতে তোকে হবেই।

তনয়া:বিথী আপু একে ধরো এ না সাজার ধান্দায়।

অরিন তার আগেই বেরিয়ে গেলো।যাওয়ার আগে হৃদয় কে উদ্দেশ্য করে বললো,
অরিন:ওই পচা রুই মাছ ওয়ালা,বউ এর রাগ ভাঙ্গা,তুই তো শালা আনরোমান্টিক!!
বলেই বেরিয়ে গেলো।(অরিন হৃদয় কে তুই করে বলে)

বিথী :দাড়িয়ে না থেকে চল, ওরে ধরি।

বলেই তনয়া কে নিয়ে দিল দৌড়।
সামান্তা মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।হৃদয় ওর পাশে এসে বসলো।
হৃদয়:আমার বউটা কি রাগ করেছে?

সামান্তা:আপনি যেই ব্যাক্তিকে বউ বলে সম্বোধন করেছেন সে এই মুহূর্তে কথা বলার মুডে নেই,অনুগ্রহ করে বেরিয়ে যান।

হৃদয় হালকা হেসে জড়িয়ে ধরলো সামু কে।
সামান্তা: ছাড়ো ছাড়ো,একদম আলগা পিরিতি দেখাবে না।ইহ খোঁজ খবর নেয় না,আবার আসছে পিরিত দেখাইতে।

হৃদয়: ওরে বউ কাজে বিজি ছিলাম।

সামান্তা:তো কাজকেই বিয়ে করতে,আমারে কেন করছো?

হৃদয়:আচ্ছা সরি সরি!আর হবে না।

সামান্তা:সত্যি তো?

হৃদয় সামান্তার ঠোঁটে ছোট্ট করে নিজের ঠোঁটের পরশ দিয়ে বললো,
হৃদয়:সত্যি!!

সামান্তা অন্য দিকে তাকালো।হৃদয় বুঝতে পারলো লজ্জা পাচ্ছে।
অন্য দিকে অরিন দৌঁড়িয়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজার কাছেই ঠাই দাড়িয়ে রইলো। পার্লারের মেয়েরা আর তার মা সহ মনিরা দাড়িয়ে আছে ।বিছানার উপর নজর যেতেই এক ঢোক গিলল।কম করে হলেও বিশ কেজি ময়দা আছে।
অরিনের মা:অরিন,দেখ লোক এসে গেছে এবার তৈরি হয়ে নে।
অরিন কল্পনা করতে লাগলো তার মা আর মনিরা মেক আপ নামক অস্ত্র নিয়ে তাকে ঘিরে রেখেছে আর তাকে ভুত বানানোর চেষ্টা করছে।ভুত ওয়ালি ফেসের কথা ভাবতেই অরিন চিল্লিয়ে বলে উঠলো,

অরিন:নট এট অল!!!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here