হৃদমাঝারে শুধু তুমি পর্ব ১২

#হৃদমাঝারে_শুধু_তুমি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট:১২

অনিক:এই বুচি!

হৃদিতা এড়িয়ে যেতে গিয়েও পারলো না।কারণ অনিক পথ আটকে দাড়িয়েছে।সেদিনের পর হৃদিতা অনিকের সামনেই আসে না।ওই সময় লজ্জা না লাগলেও এখন বেশ লজ্জা লাগে ওর।আর থাপ্পড়ের কথাটা বেশি মনে আছে।হৃদিতা গালে হাত দিয়ে সামনে দাড়ালো।অনিক তা দেখে মুচকি হাসলো।
অনিক:তো মিস বুচি!!আমাকে দেখে পালাচ্ছ কেনো?

হৃদিতা:আমি কেন পালাবো?

অনিক: তাতো দেখতেই পারছি।তো মিস গালে হাত দিয়ে রয়েছেন কেনো?

হৃদিতা চট জলদি গাল থেকে হাত সরালো।আরচোখে অনিককে দেখতে লাগলো।অনিক হাসছে। হৃদিতার কেন জানি লজ্জা লাগছে।অনিক হৃদিতার কিছুটা কাছে এগিয়ে এলো, হৃদিতার সামনে পড়ে থাকা চুল গুলো কানে গুঁজে দিতে দিতে বললো,
“বাতাসে প্রেম প্রেম গন্ধ…
তোমার প্রেমে আমি অন্ধ।
সব মিলিয়ে রটবে কাহিনী,
বন্দী আমার এই হৃদয়ের বাহিনী।
মনের অনুভবে অনুভূত তুমি…
মন শুধু বলতে চায়
হৃদমাঝারে শুধু তুমি!!”
হৃদিতা এক মুহুর্ত দেরি না করে দৌড়ে অরিনের কাছে গেলো।গিয়ে হাঁটু ভর দিয়ে হাপাতে লাগলো।
অরিন: কিরে কি হয়েছে?

হৃদিতা:মনটা করে উড়ু উড়ু!

অরিন:মানে?

হৃদিতা:আমি প্রেমে পড়েছি বেবি।

অরিন: কার?

হৃদিতা:তোকে কেন বলবো?

মমি:অনিকের!!

হৃদিতা:তোকে কে বলছে?

মমি:একটু আগে তোমাদের রোম্যান্স দেখলাম ।
হৃদিতা ছোট ছোট চোখ করে বললো,
হৃদিতা:রোম্যান্স কই দেখলি?

মমি: ইহ,কানে চুল গুঁজে ফুসুর ফুসুর করে কি যেন বলছিলো।

হৃদিতার গাল লাল হয়ে গেল।অরিন ভ্রু কুচকে তাকালো।
অরিন:কি চলে?

মমি:হৃদিতার প্রেম!

অরিন:আর আপনার?

মমি চমকে তাকালো,
মমি:আব..মানে?

অরিন:কি হচ্ছিলো বাড়ির পিছনে বেবি ?
মমি এদিক সেদিক তাকালো,
মমি:ইয়ে মানে…

হৃদিতা: ডুবে ডুবে জল খাও?

মমি:এমনেই কথা বলছিলাম।

বিথী:হুমম পুকুরে পা ডুবিয়ে,দুইজন কাছাকাছি বসে অনেক সুন্দর গল্প করছিলে।
বলতে বলতে বিথী ভিতরে ঢুকলো।
মমি:তুই ও?

বিথী: ইয়াপ!

হৃদিতা:এই মেয়ে আমাদের কিছু বলেও নাই।
সবাই ভ্রু কুচকে হৃদিতার দিকে তাকালো।হৃদিতা বুঝতে পারলো নিজের ভুল। বেক্কল মার্কা হাসি দিল আর সবাই ভেংচি কাটলো।
সব কিছু পেরিয়ে আজ আবার এলো এনগেজমেন্টের দিন।শুধু ভিন্ন আজ মানুষ গুলো,সব কিছু পেরিয়ে আজ পেয়েছে আকাশ তার মনের রানী কে আর পূর্ণতার প্রথম ধাপ পারবে আদ্রিয়ান আর অরিন। প্রথমে আদ্রিয়ান আর অরিনের আংটি বদল হবে।অরিন আজকে প্রাণ ভরে আদ্রিয়ান কে দেখছে। সেদিন আদ্রিয়ানকে এভাবে দেখতে বাঁধছিল কারণ তখন ওর আদ্রিয়ান অন্য কারোর হতে যাচ্ছিল।কিন্তু আজ কোনো বাঁধা নেই।আদ্রিয়ানের অরিনকে আংটি পড়ানোর দৃশ্য দেখে বিথী হাত মুষ্টি করে নিল।মানতে পারছে না ও। মুষ্টিবদ্ধ হাতে কারো স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে হাতের মালিকের দিকে তাকালো।আকাশ!!আকাশ বিথীকে আশ্বস্ত করল।বিথী আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আকাশ:সইতে পারবে,ওদের?

বিথী এক নজর ওদের দিকে তাকিয়ে আকাশের দিকে তাকালো।আচ্ছা এই মানুষটা তো বুঝতে পারছে যে বিথী ওদের সইতে পারছে না,তাও কি এর বিন্দু পরিমাণ অভিমান হয় না!

বিথী:তোমার অভিমান হয় না,তোমার হবু বউ তোমারই সামনে আরেকজনের জন্য কষ্ট পাচ্ছে?

আকাশ:এক তরফা ভালোবাসা আমিও বেসেছি,হয়তো কষ্টটা বুঝি বলে হয় না!
বিথী স্নিগ্ধ ভরা চোখ নিয়ে তাকালো,হাতের মুষ্টি খুলে আকাশের এক বাহু জড়িয়ে ওদের দিকে তাকালো। কেনো জানি এখন ওর আর সইতে কষ্ট হচ্ছে না ।হয়তো আকাশ নামক মানুষটা পাশে আছে বলেই।একে একে বিথী আর আকাশেরও এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হলো।
রাতে বিথী ফ্রেশ হয়ে শুয়ে ছিল,তখন অরিন এলো।
বিথী: কিরে কিছু বলবি?

অরিন: নাহ ভাবছি আজকে তোর সাথে আড্ডা দিবো।

বিথী:বস।

অরিন:বিথী একটা কথা বলবো?

বিথী:না।

অরিন:কেন?

বিথী:এখন বাইরে যাবো চল!!

অরিন: কোন কাজে?

বিথী:আরে চল না!!

অরিনকে টেনে বাইরে নিয়ে গেলো বিথী।ওখানে গিয়ে দেখলো অলরেডী সবাই গোল হয়ে বসে আছে।মানে সামান্তা,তনয়া,সোহা, লামিয়া,আরিফা,আকাশ,আদ্রিয়ান,অনিক,সাগর,হৃদিতা,মমি।বিথী সামান্তার পাশে আর অরিন গিয়ে তনয়ার পাশে বসলো।বিথী আর অরিন মুখোমুখি।

বিথী:কি খেলবে?

তনয়া:ট্রুথ আর ডেয়ার।
সামান্তা:হুমম আর কেও চিটিং ও করতে পারবি না।
লামিয়া:একদম।
সোহা:তো বোতল আমি ঘুরাই?
আরিফা:কর।
সোহা প্রথমে ঘুরাতে গেলো তখনই ওদের মেজো মনির ডাক।
মেজো মনি:বাচ্চারা এখানে বড়দের মাঝে কি করিস?
তনয়া:খেলতেছি।
মেজো মনি:তোরা পিচ্ছি, যা ঘরে খেল,ওদের একা টাইম দে।
আরিফা:এটা ঠিক না,পিচ্ছি বলে আমাদের দাম নেই?
মেজো মনি:না,তনয়া,সোহা যা রুমে।দেখেছিস কত রাত ?তোদের থাকা লাগবে না, যা।আরিফা যা।
সোহা ভাব নিয়ে উঠে দাড়ালো। সামনে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো উড়িয়ে দিয়ে বললো,
সোহা: একদিন আমরাও বড় হবো ,তখন তোমাকে এন্ট্রি দিবো না বলে দিলাম।
মেজো মনি:তবে রে পাজি মেয়ে!
সোহা,তনয়া আর আরিফা মিলে দিল দৌড়।
মেজো মনি:তোরাও যা।
লামিয়া:এই মাত্র বললে আমরা আড্ডা দিবো।
মেজো মনি:কালকে হলুদ।সকালে উঠতে হবে না?
লামিয়া:না,ভাইয়া বোঝা না মা কে!!
সামান্তা:মনি চিন্তা করো না আমরা চলে যাব।একটু আড্ডা দিবো।
মেজো মনি:বেশ,তাড়াতাড়ি ।
মেজো মনি চলে গেলো।
সামান্তা:আচ্ছা তাহলে আমি ঘুরাই বোতল।
বলেই বোতল ঘুরালো। প্রথম বারে আসছে মমি।
সামান্তা:ট্রুথ অর ডেয়ার?
মমি:আম…ডেয়ার।
সাগর:আমি দেই!
মমি:এই না আমি ট্রুথ নিবো।
লামিয়া: নো নো, নো চেঞ্জ।
মমি:সহজ দিয়েন।
সাগর নিজের কলার ঠিক করলো,
সাগর:তো মিস মমি,আপনাকে এখন কিচেনে যেতে হবে আর ওখান থেকে গুনে গুনে চারটা আরশোলা ধরে আনতে হবে।
মমি:না!!(জোড়ে করে বললো)
অরিন:নিয়ম ভঙ্গ করা যাবে না!!
হৃদিতা:নিয়ম ভঙ্গ করলে পানিশমেন্ট ডাবল।
বিথী: সো লক্ষ্মী মেয়ের মত পূরণ কর।
মমি:সব গুলি একেকটা বান্দর।
সাগর:বান্দর বললেই ডেয়ার বদলে যাবে না।
মমি:আপনাকে পরে দেখবো।
সাগর:কেনো এখন দেখতে পারছোনা?
মমি:অরিন!
অরিন: নো অপশন!!
মমি অজ্ঞতা উঠে গেলো। প্রায় মিনিট খানেক হয়ে গেলো কিন্তু মমির আসার খবর নেই।তাই সবাই গেলো দেখতে।রান্নাঘরে উকি ঝুঁকি মারছে ওরা।মমি একটা কৌটার সামনে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে।সাগর তা দেখে এগিয়ে গেলো।
সাগর: তোমাকে বসে থাকতে বলেছি নাকি আরশোলা ধরতে?
মমি কটমট চোখে তাকালো।
মমি:চোখ থাকলে এই কথা বলতেন না!!
সাগর:মানে?
মমি:সামনের কৌটায় আছে!
সাগর:ওহ আচ্ছা,আগে বলবে না..
বলেই কৌটা উঠালো আর সব তেলাপোকা ওর গায়ে উঠে গেলো।সাগর এক চিৎকার দিয়ে উঠে দাড়ালো। তা দেখে আর সবাই হাসতে হাসতে বেহুঁশ।আসলে মমি কৌটা দ্বারা আরশোলা কে আটকে রেখেছিল।
সাগর:তুমি এগুলো কৌটায় ভরো নি কেনো?
মমি:আপনি বলেছেন আরশোলা ধরতে,এটা বলেন নি সেগুলো ধরে আপনার কাছে নিয়ে যেতে হবে।তাই ধরে এদের আটকে রেখেছি।

সাগর ভ্রু কুঁচকে তাকালো,এই মেয়ে যে ডাবল গেম খেলল তা স্পষ্ট।
সাগর:তোলা রইলো,পড়ে ফেরত দিবো।
মমি:আমি দান করা জিনিষ নেই না..
অনিক: আল্লাহর ওয়াস্তে আমার হাতের উপর রহম করো।
অনিকের কথায় সবাই ওর দিকে তাকালো,হৃদিতা খামচে অনিকের হাত ধরে আছে।অনিকের কথায় চট জলদি হাত ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালো।
মমি:এই মেয়ে আরশোলায় ভয় পায়।
অনিক:হুমম,বেচারা আমার হাত।
হৃদিতা:কেমন হাত সামান্য খামচি সইতে পারে না।
সামান্তা:হুমম,ওদিকে আদ্রিয়ানের হাত তো গেছেই!
সবাই আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো।অরিন খামচে আদ্রিয়ানের বাহু ধরে আছে।
সামান্তা:আরশোলা দেখলেই এর কাম হয়েছে,আরে অরিন ওর হাত ছাড়।
অরিন তরি ঘড়ি করে হাত ছেড়ে দিল।
সামান্তা:বেচারার হাত তো তুই পুরাই ঝালাপালা করে ফেললি!!
অরিন মিন মিন করে বললো,
অরিন:সরি!!
আদ্রিয়ান অরিনের বাহু জড়িয়ে অরিনকে নিজের কাছে দাড় করালো।
আদ্রিয়ান:আমার বউ-ই তো !সমস্যা নাই।সয়ে নিবো।
সবাই: ওহো!!!
অরিন খানিকটা লজ্জা পেলো।

#চলবে
(পার্সোনাল প্রবলেমের কারণে গল্প দিতে পারি নাই।আর এক্সামের কারণে একদিন পর পর গল্প দিবো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here