#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৬
আজ শুক্রবার। সপ্তাহিক ছুটির দিন।সকাল থেকে আরাবী বসে নেই।একে একে ঘরের সব কাজ আজ সে একা হাতেই করছে।এখন রান্না করছে।অবশ্য রান্না প্রায় হয়ে এসেছে।ফাহিম বোনের হাতের পাস্তা খেতে চেয়েছে। সেটাই বানাচ্ছে আরাবী।চুলোয় পাস্তা সিদ্ধ দিয়ে কাটাকুটি করছে আরাবী।এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো।আরাবী ভ্রুক্ষেপ করলো না।বসার ঘরে লিপি বেগম আর ফিহা আছে। তাদের মাঝেই কেউ গিয়ে খুলে দিবে।আরাবী পেয়াজ,কাচা মরিচ কেটে নিয়েছে।পাস্তাটা চুলোয় বসিয়ে দিয়ে নাড়াচাড়া করছে আরাবী।এমন সময় রান্না ঘরে এসে হাজির হয় ফিহা।এসেই আরাবীকে দেখে মুখের বিকৃতি আকার করলো।ফিহা বলল,
-‘ তোর শশুড়বাড়ির লোক এসেছে। আম্মু তোকে ভালোভাবে হাত মুখ ধুয়ে পরিপাটি হয়ে আসতে বলেছে।’
আরাবী কথাটা শুনেই বড় বড় চোখে তাকালো।মনে মনে বললো,
-‘ ইয়া মাবুদ।হঠাৎ তারা আসলো যে?’
আরাবী ঝটপট পাস্তা বানিয়ে রুমের দিকে ছুট লাগালো।সুন্দরভাবে ফ্রেস হয়ে একটা বেবি পিংক কালার গোল জামা পরে নিলো।জামাটা আরাবীর খুব পছন্দ। স্পেশালি জামাটার ওড়না।ওড়নায় খুব সুন্দর কারুকাজ করা। আরাবী এইবার বসার ঘরে গেলো।গিয়ে দেখলো ওর হবু শাশুড়ি,চাচি শাশুড়ি আর নূর এসেছে।নূর আরাবীকে দেখা মাত্রই দৌড়ে উঠে গিয়ে আরাবীকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর বলল,
-‘ জানো ভাবি আমি তোমায় কত্তো মিস করেছি।ভাইয়াটা না অনেক শয়তান।কতো করে বললাম ভাবির নাম্বারটা দেও। আমি ভাবির সাথে ভিডিওকলে কথা বলবো।শয়’তানটা দিলোই নাহ।তুমি কিন্তু ভাইয়াকে ব*কা দিয়ে দিবে এরজন্যে ঠিক আছে?’
আরাবীর নূরের একনাগারে বলা এতোগুলো কথা ঠাওর করতে সময় লাগলো। তারপর জোড়পূর্বক হেসে আরাবী মাথা দুলালো।আরাবী সাথি বেগম আর মিলি বেগমকে সালাম দিলেন।তারাও সালামের জবাব নিলেন।সাথি বেগম বলেন,
-‘ আমরা এসেছিলাম আরাবীকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। ওকে নিয়ে আজ জুয়েলার্সের দোকানে গিয়ে গহনা বানাতে দিয়ে আসবো। আপনার এতে কোন আপত্তি আছে আপা,ভাই সাহেব?’
জিহাদ সাহেব হেসে বলেন,
-‘ নাহ নাহ আপা সমস্যা নেই।আপনারা যান নিয়ে ওকে।এমনিতেও তো আর কয়েকদিন পর মেয়ে আমার আপনাদেরই হয়ে যাবে।তখন উলটো ওকে নেয়ার সময় আমার অনুমতি লাগবে আপনাদের কাছ থেকে।’
বলতে বলতে জিহাদ সাহেব মন খারাপ করে আরাবীর দিকে তাকালেন।মেয়েটা তার বড্ড আদরের।কলিজার টুকরো মেয়েটাকে আর কয়েকদিন পর পরের ঘরে পাঠিয়ে দিবেন ভাবলেই তার দ’ম বন্ধ হয়ে আসে।আরাবীও বাবার দিকে মলিন হেসে তাকালো।চোখে ওর একরাশ কাতরতা।পরিবার, আপনজন ছেড়ে চলে যাবে কয়েকদিন পর।সেই দুঃখের হাহা*কারে ভীতরটা কেমন খালি খালি হয়ে আসছে এখনি।লিপি বেগম বলেন,
-‘ আরাবী যা রেডি হয়ে আয়।’
আরাবী নিচু স্বরে বলে,
-‘ আমি রেডিই মা। শুধু হিজাব বাধলেই হবে।’
আরাবী রুমে এসে সুন্দরভাবে একটা হিজাব বেধে নিলো।কি মনে করে যেন চোখে কাজল দিলো আর ঠোঁটে হালকা লিপগ্লোস।আনমনেই হাসলো আরাবী নিজেকে দেখে।সেদিন জায়ানের কথাগুলো মানে বুঝার পর থেকে আরাবী হুটহাট লজ্জা পেয়ে বসে। এইযে যেমন এখন হঠাৎই জায়ানের কথা ওর মনে পরে গেলো।আর এখন লজ্জায় গাল গরম হয়ে উঠেছে ওর। মনে মনে জায়ানকে আরেকবার অ*সভ্য উপাধি দিয়ে বেড়িয়ে আসলো আরাবী।এসেই দেখে ফিহাও তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে। ভ্রু-কুচকালো আরাবী।এই মেয়ে এমন সেজেগুজে আছে কেন? ওকে আরো অবাক করে দিয়ে ফিহা বলে,
-‘ চলুন আন্টি,আরাবী আপু এসে পরেছে।’
ফিহার মুখে আপু ডাক শুনে আসমান থেকে পরলো আরাবী।রাতারাতি এতো পরিবর্তন? ফিহার এসব নাটক সহ্য হচ্ছে না আরাবীর।দাঁত খিচিয়ে রয়েছে।নেহাত ওর শশুড়বাড়ির লোক আছে এখানে নাহলে।আরাবী ফিহা দুটো করা কথা নিশ্চিত শোনাতো।
সবাইকে বলে ওরা শপিংমলের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরলো।
——–
জুয়েলারি শপে আসতেই অবাক হলো আরাবী।কারন গাড়ি পার্কিং এরিয়াতে আগে থেকেই জায়ান আর ইফতি দাঁড়ানো।তারা নামতেই জায়ান আর ইফতি এগিয়ে আসলো।জায়ান আরাবীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো?’
আরাবী মাথা দুলিয়া ‘ না ‘ বুঝালো।লজ্জায় আরাবীর গালে লাল আভা দেখা দিলো।সেদিনের ঘটনার কথা মনে পরে গিয়েছে জায়ানকে দেখে।আরাবী লজ্জা পাচ্ছে এদিকে অ’সভ্য লোকটার কোন হেলদোল নেই।ফিহা হা করে তাকিয়ে আছে জায়ান আর ইফতির দিকে।কেউ কারো থেকে কম নাহ।দু ভাই-ই সুদর্শন।সাথি বেগম ফিহাকে পরিচয় করিয়ে দিলো।জায়ান ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করল,
-‘ ভালো আছো?’
ফিহা কেমন যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গিয়েছে।বেশ ভাব নিয়ে বলে,
-‘ আমি ভালো আছি জায়ান ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?বাই দ্যা ওয়ে আপনাকে এই ব্লাস স্যুটে দারুণ লাগছে।’
আরাবী ফিহার কথা শুনে রাগান্নিত দৃষ্টিতে ফিহার দিকে তাকালো।ছ্যা’ছড়ামো শুরু হয়ে গিয়েছে অসহ্য।আরাবীর মস্তিষ্কে যেন ঈর্ষা’রা কিলবিলিয়ে উঠলো। জায়ান ফিহার কথার কোন গুরুত্বই দিলো না।সবার উদেশ্যে বলল,
-‘ ভীতরে চলো সবাই।’
সাথি বেগম,মিলি বেগম ফিহাকে নিয়ে ভীতরে চলে গেলেন।নূর দাঁড়িয়ে আছে দেখে জায়ান শান্ত কন্ঠে বলে,
-‘ যাচ্ছিস না যে?’
-‘ ভাবিকে নিয়ে যাবো।’
-‘ তুই যা।ও পরে আসবে।’
-‘ নাহ, ভাবি আমার সাথেই যাবে।’
-‘ তোর অনলাইনে যেই যেই ড্রেসগুলো অর্ডার দিয়েছিলি সব কেন্সেল।’
-‘ ব্লেকমেইল করা হচ্ছে? ভালো হবে দেখো।এর শোধ আমি তুলবই।’
-‘ ইফতি, ওকে নিয়ে যাহ।’
ড্রেস কেন্সেল করে দেবার ভয়ে নূর ইফতির সাথে চলে গেলো।আরাবী ভাই বোনের খুনশুটি দেখে হাসছিলো।জায়ান তাকাতেই সাথে সাথে হাসি বন্ধ করে দিলো।জায়ান পকেটে দু-হাত ভরে টান টান হয়ে দাড়ালো।এদিক ওদিক ঘার নাড়িয়ে বললো,
-‘ হাসি থামালে যে?’
জবাব দিলো না আরাবী।এই লোকটার সামনে কেমন যেন মিইয়ে যায় ও লজ্জায়। কন্ঠ হতে শব্দ-রা বেরই হতে চায় না।
-‘ লজ্জা পাচ্ছো কেন?আমি তো কিছুই করি নি?’
এইবার ভয়ংকর রকম লজ্জা পেলো আরাবী।এই লোকটা ইচ্ছে করে ওর সাথে এমন করছে আরাবী ভালোভাবেই জানে।জায়ান আরাবীর অবস্থা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।আরাবী মিস করে গেলো জায়ানের সেই হাসি।হাসলে ছেলেটাকে যে মারাত্মক সুন্দর লাগে।
জায়ান আরাবীর দিকে একধ্যানে তাকিয়ে থাকলো।হঠাৎ জায়ান বলে উঠলো,
-‘ ভীষণ সুন্দর লাগছে।’
ঘোরলাগা এমন কন্ঠস্বর শুনে চকিতে তাকালো আরাবী।জায়ান ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।নে’শাগ্রস্ত সেই চাহনী।যা আরাবীর ভীতর শুদ্ধ কাঁপিয়ে দেয়।জায়ানের এই ছোট্টো প্রসংশাতেই যেন আরাবীর মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেলো।আকস্মিক জায়ান এসে আরাবীর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।হালকা কাঁপলো বোধহয় আরাবী। জায়ান আরাবীর হাত ধরে শপিংমলে ভীতরে প্রবেশ করলো।জুয়েলারি শপে যেতেই ফিহা এসে জায়ানের ডানহাত হঠাৎ করে চেপে ধরে বলে,
-‘ কোথায় ছিলে ভাইয়া? আমি অপেক্ষা করছিলাম তোমার?’
দাঁতেদাঁত চেপে আরাবী। আপনি থেকে সোজা তুমিতে এসে পরেছে? এটা যে ওর বোন ভাবতেও আরাবীর ঘৃনা লাগে।এদিকে জায়ান ভয়া*নক রেগে তাকালো ফিহার দিকে।ফিহা জায়ানের রাগত মুখশ্রী দেখে ভয় পেয়ে সাথে সাথে জায়ানের হাত ছেড়ে দিলো।জায়ান চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
-‘ আই সুড নেভার সি ইউ ডুয়িং দিস এগেইন।আদারওয়াইস আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।জাস্ট বিকয ওফ ওর বোন বলে আমি কিছু বললাম নাহ।বাট বি কেয়ারফুল নেক্সট টাইম।’
ফিহা ভয় পেয়ে সরে গেলো।আরাবী বোনের এমন কান্ডে ভীষন লজ্জিত হলো।আহত সুরে বললো,
-‘ আমার বোনটা একটু ছটফটে।ওর পক্ষ থেকে আমি মা…’
জায়ান আরাবীকে মাঝপথে থামিয়ে দিলো।বললো,
-‘ ডিড আই টোল্ড ইউ টু এপোলোজাইয ওন হার বিহাফ?’
আরাবী জায়ানের এমন হারকাপানো ঠান্ডা কন্ঠের কথায় ভয় পেয়ে বলে,
-‘ নাহ।আসলে…’
-‘ জাস্ট বি সাট আপ।’
আরাবী চুপ মেরে গেলো জায়ানের ধমক খেয়ে।লোকটা রেগে গিয়েছে ভীষণ।আরাবী জায়ানের অগোচরে ফিহাকে চোখ রাঙানি দিলো।ফিহার এতো কোন হেলদোল হলো নাহ।ও চলে গেলো জুয়েলারি দেখতে।
————-
পুতুলের মতো বসে আছে আরাবী।আর দুই শাশুড়ি একের পর এক গহনা ওকে পরিয়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই।জায়ান আরাবীর বরাবর বসে।সে ওর মাকে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে কোনটা ভালো লাগছে নাকি ভালো লাগছে না।অবশেষে অনেক বাছাই দাছাইয়ের পর গহনা সিলেক্ট হলো।আরাবী যেন হাফ ছেড়ে বাচঁলো।আরাবী উঠে একটু সাইডে গিয়ে দাড়ালো।একেরপর এক গহনা পরতে পরতে ও ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।সিলেক্ট করা গহনা গুলোর দিকে তাকিয়ে আরাবী শুকনো ঢোক গিললো।এতোগুলো গহনা ওর জন্যে নেওয়া হচ্ছে।এগুলো কিভাবে পরবে আরাবী?গহনা ভারে না জানি ও বিয়ের দিন হাটতে নিয়ে উল্টেই না পরে যায়।মান সম্মান আর থাকবে না তাহলে।
জায়ানের দৃষ্টি সর্বদা আরাবীর দিকে।মেয়েটার থেকে একপলকের জন্যে যেন ও চোখ সরাতে পারে নাহ।এমন সময় ফিহা আসলো হাতে একটা আংটি নিয়ে। এসেই বলে,
-‘ ভাইয়া আংটিটা আমার পছন্দ হয়েছে।আমায় কি এটা আপনি কিনে দিবেন?’
জায়ান তাকালো না পর্যন্ত ফিহার দিকে।সেভাবে বসে থেকেই ইফতির উদ্দেশ্যে বলে,
-‘ ইফতি ফিহা যেটা পছন্দ করেছে তা ওকে প্যাক করে দিয়ে দে।’
-‘ আচ্ছা ভাই।’
ফিহা দাঁতেদাঁত চেপে চলে গেলো।কেমন ছেলে এটা?সামনে এমন সুন্দরী মেয়ে ঘুরঘুর করছে।আর সে তাকাচ্ছেও নাহ।ওই মেয়েটার মাঝে কি আছে যা ফিহার মাঝে নেই? আরাবীর থেকে ফিহা আরো দ্বিগুন সুন্দর।আর মেয়েটার ড্রেসাপ দেখো আর ওকে দেখো।ও কি সুন্দর লেডিস জিন্স আর শর্ট টপ্স পরেছে। ওর ফিগার এমনিতেও সুন্দর।আরো ও আজ টাইট ফিট পোষাক পরায় তা আরো বেশি দৃশ্যমান।তাতে ওকে আরো আকর্শনীয় লাগছে।এইযে শপিংমলে প্রবেশ করার পর বেশ কয়েকজন ছেলে ওর দিকে তাকিয়েছিলো।কিন্তু এই ছেলেটা ওর দিকে ফিরিয়েও তাকালো নাহ। ফিহা বিরবির করলো,
-‘ কে জানে ওই কালি পে’ত্নিটাকে কি দেখো এতো এই ছেলে।’
————
আরাবী স্বর্ণের খুব সুন্দর একটা ব্রেসলেট হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছে।এমন সময় ফিহা এসে ওর হাতটা আরাবীর মুখের সামনে এনে বললো,
-‘ দেখ দেখ জায়ান ভাইয়া আমাকে এই আংটিটা গিফট করেছে সুন্দর নাহ?’
আরাবী কথাটা শুনে চটজলদি ফিহার হাতের দিক তাকালো।অবাক হয়ে বলে,
-‘ মানে কি?তোকে গিফট করবে মানে?’
-‘ মানে আবার কি?আমি আংটিটা দেখছিলাম।সে এসে বলে পছন্দ হয়েছে।আমি হ্যা বলে দিতেই সে আমাকে এটা ঝটপট কিনে গিফট দিলো।’
আরাবী নাক মুখ কুচকে ফেললো।জায়ানের দিকে একবার তাকালো।লোকটা তার দিকেই তাকিয়ে।আরাবী দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।আরাবী জানে ফিহা মিথ্যে বলছে।তবে এর মাঝে একটু সত্যিও আছে।আংটিটা ওকে সত্যিই হয়তো জায়ান কিনে দিয়েছে।নাহলে এই আংটি কিনার মতো কোন টাকা ফিহার কাছে নেই তা আরাবী ভালোভাবে জানে।মনটা কেমন যেন একটু খারাপ হয়ে গেলো আরাবীর।জায়ান ফিহাকে আংটিতা কিনে দিয়েছে শুনে বুকের ভীতরটায় একটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হলো ওর।আরাবী মুখটা মলিন করে হাতের ব্রেসলেট’টা রেখে চলে গেলো ওখান থেকে।গিয়ে নূরের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।এদিকে আরাবীকে মন খারাপ করতে দেখে পৈচা*শিক আনন্দ পেলো ফিহা।আংটিটার দিকে তাকিয়ে খুশিতে গদগদে হয়ে গেলো।
____________
শপিং শেষে সাথি বেগম আর মিলি বেগম চলে গেলেন।জায়ান,আরাবী,নূর,ইফতি,ফিহা ওরা রেস্টুরেন্টে যাবে। ছোটদের মাঝে তারা বড়রা অহেতুক না থেকে চলে গিয়েছেন। রেস্টুরেন্ট’টার ছাদে এসে বসেছে ওরা।খুব সুন্দর ভাবে সাজানো ছাদটা।আরাবীর মন খারাপ থাকায় ও সবার থেকে একটু সাইডে গিয়ে ছাদের রেলিং ঘেসে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। উত্তাল হাওয়া বইছে।ছাদে নানান রকম ফুলের গাছ রয়েছে সেখানে হরেকরকম ফুল ফুটেছে। বাতাসের সাথে সেই ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে।আরাবী লম্বা শ্বাস টানলো।ভীষন সুন্দর একটা ঘ্রাণ ফুলগুলোর সংমিশ্রণের।হঠাৎ নিজের পিছনে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে চোখ খুললো আরাবী।ঘার ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে জায়ান দাঁড়িয়ে।দৃষ্টি তার ওর দিকেই।আরাবী চোখ সরিয়ে নিলো।জায়ান গম্ভীর গলায় বলে,
-‘ কোন সমস্যা?’
আরাবীর মিনমিনে কন্ঠ,
-‘ কি সমস্যা আবার?’
-‘ সেটাই তো জিজ্ঞেস করছি। কোন সমস্যা?’
-‘ কোন সমস্যা নেই।’
-‘ মন খারাপ যে?’
-‘ একটুও নাহ।’
-‘ আমি তো দেখছি।’
-‘ আপনার চোখের সমস্যা,জেনে রাখুন।’
-‘ আচ্ছা জেনে নিলাম।’
বলতে বলতে জায়ান আরাবীর হাত টেনে ধরলো।আরাবী হকচকিয়ে গেলো। ঘাবড়ে গিয়ে বলে,
-‘ কি করছেন?’
জায়ান কিছুই বললো না।নিজের পকেট থেকে সেই স্বর্ণের ব্রেসলেটটা বের করে আরাবীর হাতে খুব যত্নে পরিয়ে দিতে দিতে বলে,
-‘ পছন্দের জিনিস কখনো হাতছাড়া করতে হয় নাহ।সময় করে নিজের করে নিতে হয়।’
ব্রেসলেট পরানো শেষে আরাবীর হাতের কবজি চেপে জায়ান আরাবীর ব্রেসলেট পরা জায়গায়টায় খুব আলতোভাবে ঠোঁটের নরম স্পর্শ করলো।হৃদপিন্ড থমকে যায় আরাবীর।মাথাটা ভণভণ করছে।চোখ খিচে দাঁড়িয়ে রইলো ও। এ কি করলো জায়ান ওর সাথে।আরাবী নিজের ভারসাম্য সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিলেই জায়ান আরাবীকে আগলে নিলো নিজের কাছে।আরাবীর শরীর ভীষণভাবে কাঁপছে।আর হবেই বা না কেন?এই প্রথম কোন পুরুষ ওর এতোটা কাছাকাছি এসেছে।তাই আরাবীর অবস্থা এমন হয়েছে।নিস্তব্ধে হাসলো জায়ান আরাবীর অবস্থা দেখে।আরাবীর কানের কাছে ফিসফিস করে আওড়ালো,
-‘ কৃষ্ণচূড়া,রাধাচূড়া অনেক আমি দেখেছি।
সব ভুলেছি যেদিন আমি কাঠগোলাপের প্রেমে পরেছি।’
#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৭
-‘ ঠিক আছো তুমি?’
জায়ানের কণ্ঠস্বর কানে এসে পৌছাতেই চট করে সরে আসলো আরাবী।লাজে রাঙা মুখ নিয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো।ভয়া*নক লজ্জা পেয়েছে ও।এমন অস’ভ্য লোকের ক্ষপ্পরে পরেছে ও।যার এক একটা কর্মকান্ডে জান বেরিয়ে আসে আরাবীর।এইযে একটু আগে ওর হাতের কব্জিতে চুমু খেলো লোকটা।কি রকম একটা অনুভূতি যে হচ্ছিলো বলে বুঝানো যাবে নাহ।শরীরটা এখনো স্থির হয়ে উঠেনা।এই লোকের এমন সব কর্মকান্ডে আরাবী কাঁপতে কাঁপতে না জানি কবে ইন্তেকাল করে।আরাবীর জবাব দিচ্ছে না দেখে।জায়ান ভ্রু উঁচু করে বলে,
-‘ আমি জাস্ট তোমার হাতের কব্জিতে কিস করেছি।এতেই এই অবস্থা?’
তারপর হঠাৎ করে আরাবীর কানের কাছে এসে বললো,
-‘ বিয়ের পর তো আরো কতো কি করবো তখন কি করবে তুমি?’
আরাবী ভয় পেয়ে কিঞ্চিৎ সরে গেলো। একেবারে লেগে দাড়ালো রেলিংয়ের সাথে।রিনরিনে কন্ঠে বললো,
-‘ আমি এমন অস’ভ্য মানুষ জীবনেও দেখিনি।’
জায়ান ভ্রু-কুচকালো আরাবীর দিকে চেয়ে।কথাটা সে শুনেছে।হাতের আঙুলগুলো দ্বারা চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করে বলে,
-‘ সে তুমি আমায় যতোই অস’ভ্য উপাধি দেও।ইট ডাজেন্ট ম্যাটার ফোর মি।আমি দুনিয়ার সবার কাছে সভ্য হলেও।শুধু একজনেরই কাছেই সারাজীবন অস’ভ্য থাকতে চাই।বুঝলে?’
কি সর্বনাষ?সব শুনে ফেলেছে।দেখা যায় এখন আর আরাবী একা একা নিজের সাথে কোন কথাই বলতে পারবে নাহ। জায়ান এগিয়ে গেলো আরাবীর দিকে।আরাবীর পেছানোর জায়গা নেই।তাও সমানে পেছাতে চাচ্ছে।পারলে ছাদের রেলিংটাকে ভেঙে আরাবী পালিয়ে যায়।জায়ান আরাবীর হাত ধরে দ্রুত নিজের কাছে নিয়ে আসলো। আরাবী ভড়কে তাকাতেই।জায়ান একধমক দিলো,
-‘ কি সমস্যা?আমি বাগ নাকি ভাল্লুক? যে তোমায় খেয়ে ফেলবো?আর একটু হলেই তো পরে যেতে।ডা’ফার একটা।’
লোকটা আসলেই পাগল।এই কিছুক্ষন আগে ওর সাথে অস’ভ্য অস’ভ্য কথা বলছিলো।আর এখন আবার ধমক দিচ্ছে।এমনিতেই জুয়েলারি শপের ব্যাপারটা নিয়ে আরাবীর মন খারাপ।এখন আবার লোকটা ধমকাচ্ছে।অভিমানে আরাবীর ছোট্ট হৃদয়টা টইটম্বুর হয়ে গেলো।নিজের হাত জায়ানের হাতের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যেতে নিতেই। জায়ান আবারও ওকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।আরাবীর দুহাত এইবার জায়ান তার একহাত দিয়েই অনায়াসে ধরে ফেলেছে।আরাবী ভয় পেয়ে গেলো।কি আশ্চর্য লোকটা ওকে এমনভাবে ধরেছে কেন? আর কিভাবে আরাবীর হাতদুটো একহাত দিয়েই শক্তপোক্ত ভাবে ধরে।ওর হাত কি এতোটাই ছোট? আরে নাহ ওর হাত ঠিকই আছে।এই লোকটাই অতিরিক্ত বড় মানে লম্বা।আরাবী লোকটার দিকে তাকাতে গেলে গলা টানা দিয়ে তাকাতে হয়। লম্বা আছে লোকটা।তাই তো হাতগুলোও ইয়া বড় বড়।আরাবী চোখ বড়বড় করে বলে,
-‘ কি..কি কর..করছেন?’
জায়ান ভাবলেসহীনভাবে বলে,
-‘ কোথায় কি করলাম?এখনো কিছুই করিনি। যা করবো বিয়ের পর।’
-‘ অস’ভ্য কথাবার্তা বন্ধ করুন আমার।’
-‘ তুমি তো মেইন কথাটা শুনলেই না।শুনো তবে…’
-‘ চুপ থাকবেন?আমি কিন্তু আর আপনার সাথে কথাই বলবো নাহ।’
-‘ আচ্ছা,ভয় দেখাচ্ছো?’
আরাবী মিনমিন করলো,
-‘ ভয় দেখালেই কি আপনি ভয় পান?এমন নির্ল’জ্জ কোন মানুষ হয়।’
-‘ ঠিক আমি কাউকে ভয় পাই নাহ।এমন কি আমার লজ্জা শরমও নেই।’
-‘ তা আর বলতে।’
-‘ মিনমিন করো কেন? ‘
আরাবী চুপ করে রইলো খানিকক্ষণ। তারপর বলে,
-‘ হাত ছাড়ুন।’
জায়ানের ত্যাড়া জবাব,
-‘ আগে মন খারাপের কারন বলো।’
আরাবী মুখ ভার করে বলে,
-‘ আমার মন খারাপ নেই।’
-‘ মিথ্যে!’
আরাবী চোখ পিটপিট করে তাকালো।এই লোক কি অন্তরযামি?নাহলে বুঝলো কিভাবে ওর মন খারাপ।জায়ান এখনও আরাবীর হাত চেপে ধরে।আরাবী বুঝলো সে এখন মন খারাপের কারন জায়ানকে না বলা পর্যন্ত জায়ান তাকে ছাড়বে নাহ। তবে আরাবীর ভালো লাগছে লোকটার কাছাকাছি থাকতে।একেবারে অন্যরকম ভীষণ সুন্দর একটা অনুভূতি।আরাবী কথা ঘুরানোর জন্যে মিনমিন করে বলে,
-‘ আচ্ছা আপনি তখন ফিসফিস করে আমার কানে কি বলেছিলেন?’
-‘ কথা ঘুরাচ্ছো?’
আরাবী হা।এতো চালাক এই লোক।তবুও আরাবী মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো।ও আসলেই তখন জায়ান কি বলেছিলো শুনতে পায়নি।প্রায় তো বেহুশই হয়ে যাচ্ছিলো ও।মাথার ভীতরে শুধু জায়ানের ওর হাতে চুমু দেওয়ার মুহূর্তটুকুই ভাসছিলো।তাই তো কৌতুহল বসত আরাবী জিজ্ঞেস করলো। জায়ান আরাবীর হাত ছেড়ে দিলো।ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
-‘ যা শুনতে পাওনি।তা আর শুনে লাভ নেই।’
আরাবী মুখ ভেংচি মারলো।জায়ান তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো।সে দেখেছে আরাবী মুখ ভেংচি কেটেছে ওকে।জায়ান চুলে হাত বুলিয়ে বললো,
-‘ মুখের বিকৃতি আকার আবার করলে যেটা একটু আগে হাতে দিয়েছি।সেটা ডিরেক্ট ঠোঁটে দিবো।’
আরাবী চোখ বড়বড় করে তাকালো জায়ানের দিকে।জায়ান চোখ মারলো আরাবীকে। ইশারা করলো ওর ঠোঁটের দিক।আরাবী সাথে সাথে দুহাতে ওর ঠোঁট চেপে ধরলো।এখনো ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেয়েটা।জায়ান আরাবীর কান্ডে নিস্তদ্ধে হেসে দিলো।আরাবী ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে বলে,
-‘ এমনিতে তো সবাই বলছিলো আপনি নাকি কথা কম বলেন।দরকার ছাড়া বেশি কথা বলেন না।তো এখন আপনাকে দেখে তো সেটা আমার কাছে মিথ্যে মনে হচ্ছে।’
জায়ান গভীর দৃষ্টিতে তাকালো আরাবীর দিকে।ওর চোখে চোখ রাখলো।আরাবী জায়ানের চোখের দিকে তাকাতেই যেন ও সেই চোখের গভীরে হারিয়ে গেলো।কি স্বচ্ছ সেই চোখজোড়া।আরাবী শতোবার এই চোখের গভীরতম মায়ায় ডুবে যেতে রাজি।জায়ান আরাবীর কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলে,
-‘ আমি কেন তোমার সাথে এতো কথা বলি?কেন তোমার এতো কাছে আসি।এর উত্তর তুমি নিজেই খুজে বের করে নিও কেমন? ফারদার আমি বুঝাতে গেলে কিন্তু বলে না করে বুঝাবো।বি কেয়ারফুল।’
কথাগুলো বলেই চট করে সরে আসলো জায়ান।আরাবীর হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বলে,
-‘ চলো ওরা অপেক্ষা করছে।’
আরাবীকে টেনে নিজের সাথে নিয়ে গেলো।নূর আর ইফতি জায়ান আর আরাবীকে হাতে হাত ধরে এখানে আসতে দেখে মিটিমিটি হাসছে।জায়ান বিরক্ত হলো।বলল,
-‘ কি সমস্যা?’
নূর মুচঁকি হেসে বলে,
-‘ কোন সমস্যা নেই।এইযে তুমি ভাবির হাত ধরে রেখেছো এতে আমাদের কোন সমস্যা নেই।তারপর ভাবির সাথে সাইডে গিয়ে একটু রোমান্স করে এসেছো এতেও আমাদের কোন সমস্যা নেই।একদম নেই।’
আরাবী নূরের কথায় যেন লজ্জায় ম’রে যাওয়ার মতো অবস্থা।গালে লজ্জা রাঙা আভা ফুটে উঠেছে। আরাবী নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো জায়ানের কাছ থেকে।কিন্তু জায়ান ছাড়লে তো।সে আরো শক্ত করে ধরলো আরাবীকে।তারপর নূরের উদ্দেশ্যে বলে,
-‘ তোর ড্রেসগুলো কেন্সেল।’
-‘ এই নাহ নাহ ভাইয়া।সরি হ্যা সরি।আমি আর কিছু বলবো না বিশ্বাস করো।এইযে আমি চুপ।’
ইফতি শব্দ করে হেসে দিলো এইবার।নূর গাল ফুলালো।কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
-‘ কেউ আমায় ভালোবাসে নাহ।আমি মানি আমি নাহয় একটু বেশি কথা বলি।তাই বলে তোমরা আমার সাথে এমন করবে?যাও আমি আর কথাই বলবো না তোমাদের সাথে।’
জায়ান এইবার মুচঁকি হাসলো বোনের অভিমানে। আরাবীকে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।তারপর নিজেও বসে পরলো।জায়ানের একপাশে আরাবী আরেকপাশে নূর।জায়ান এইবার নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।জায়ান এইবার নিজের পকেট থেকে একটা আংটি আর চকোলেট বের করে দিলো নূরের দিকে।নূর আংটিটা পছন্দ করেছিলো।কিন্তু মেয়েটা কথার তালে তালে সেটা কিনতেই ভুলে গিয়েছে।এটা পেয়েই নূর খুশি হয়ে গেলো।হাসিমুখে বলে,
-‘ ইস,এই আংটিটাই তো আমার পছন্দ হয়েছিলো খুব।কিন্তু কিনতে মনে নেই।ভুলে গিয়েছিলাম।এখানে এসেই মনে পরলো।ভাবছিলাম কাল গিয়ে কিনে আনবো।তুমি সেটা খেয়াল করেছিলে ভাইয়া?’
জায়ান নূরকে বুকে টেনে নিয়ে বলে,
-‘ আমার একমাত্র বোনের খেয়াল আমি রাখবো নাহ।’
ইফতি নিজেও একজোড়া নূপুর বের করে নূরকে দিলো।তারপর বলে,
-‘ কোন এক ফকিন্নি মিসকিন এর জন্যে পছন্দ হলো।ভাবলাম নিয়ে নেই।’
-‘ ভাইয়া,এই ইফতি ভাইয়াকে কিছু বলবা?’
জায়ান হাসলো।ইফতি জোড়ে হাসছে।নূর নিজেও ভাইদের হাসি দেখে হেসে দিলো।তারপর ইফতির হায় থেকে নূপুরজোড়া নিয়ে।ইয়া বড় একটা হাসি দিয়ে বলে,
-‘ থাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া।’
আরাবী তিনভাই বোনের খুনশুটি দেখে হাসছে।কতোটা প্রাণচ্ছল তারা একসাথে।ওর ভাইটাও ঠিক জায়ানের মতো।জায়ানের মতো হয়তো এতো টাকা না থাকায় ওকে দামি দামি গিফট দিতে পারে নাহ।তবে ফাহিমের সামর্থ্যে যেটুকু হয় সব করে ওর জন্যে।ফিহার জন্যেও সেম।তবে মেয়েটা কেন যে এমন করে।ওর ভাই কিছু গিফট আনলে সেটা কমদামি, এগুলো মানুষে পরে নাকি,লো ক্লাস।এসব বলে সেই গিফট আবার ঠিকই নেয়।আরাবীর কথা তুই গিফট যেহেতু নিবিই তাহলে খামোখা প্রথমে এই কথাগুলো বলিস কেন? ফাহিম শুধু কথাগুলো শুনে মলিন হাসি দিতো।বোনটা পুরোই উশৃঙ্খ’ল হয়ে গিয়েছে।এইযে এখনো বসে কিভাবে নির্ল’জ্জের মতো ড্যাবড্যাব করে জায়ান তো আবার ইফতির দিকে তাকাচ্ছে।আরাবী বিরক্ত হয়ে নিচু স্বরে বলে,
-‘ ফিহা নজর ঠিক কর।এভাবে তাকানোর কি হলো?’
ফিহা রাগি গলায় বলে,
-‘ তাতে তোর সমস্যা কি? আমি তোর থেকে সুন্দর তাই তোর হবু বরকে পটিয়ে ফেলতি পারি এইজন্যে বুঝি ইনসিকিউরড ফিল হচ্ছে।’
আরাবী ফিহার কথায় দাঁতেদাঁত চেপে বলে,
-‘ আজেবাজে কথা বললে থাপ্প’ড় দিয়ে তোর গাল ফাটিয়ে দিবো।’
-‘ ওহ রেয়েলি?দেখি তুই কি করতে পারিস।’
-‘ এনি প্রবলেম আরাবী?’
জায়ানের প্রশ্নে আরাবী দ্রুত নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো।মেকি হেসে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো কোন প্রবলেম নেই।সবাই খাওয়া দাওয়াতে মনোযোগ দিলো।জায়ান আরাবীকে এটা দিচ্ছে,তো ওটা দিচ্ছে।আরাবী এইবার সহ্য করতে না পেরে বলে,
-‘ কি হচ্ছে? আমি এতোসব খাবো কিভাবে?’
জায়ান আরাবীর প্লেটে আরেকটু ফ্রাইড রাইস দিতে দিতে বলে,
-‘ এইটুকু খাবার খেয়েই অবস্থা?জলদি শেষ করো।’
আরাবী মলিন মুখে খেতে লাগলো।শেষে আর না পেরে করুণ গলায় বলল,
-‘ আর খেতে পারছি না। সত্যি!’
জায়ান কিছু বললো না তবে আরাবীর প্লেটটা নিজের কাছে নিয়ে আরাবীর রেখে দেওয়া অবশিষ্ট খাবারটুকু খেতে লাগলো।ইফতি হেসে দিলো জায়ানের কান্ডে। হাসতে হাসতে বলে,
-‘ ভাই তোমার অনেক উন্নতি হচ্ছে।মাত্র কয়েকদিনেই এই অবস্থা?’
জায়ান নির্বিঘ্নে খেতে খেতে বলে,
-‘ ইট্স টেস্টি।’
-‘ হ্যা হ্যা,বুঝেছি।অনেক টেস্টি।’
আরাবী লজ্জায় জুবুথুবু হয়ে বসে।এই লোকটা এসব করে করে আরাবীকে লজ্জার সাগরে একদিন চুবি’য়ে মে’রে ফেলবে।ভয়ং’কর ব্যাপার-স্যাপার।বিয়ের পর এই লোকের সাথে থাকবে কিভাবে আরাবী? তখন মনে হয় শ্বাসটুকু ঠিকভাবে নিতে দিবে লোকটা।অস’ভ্য লোকটা অস’বভ্য কথাবার্তা বলে ওর শ্বাস চে’পেই ওর ইন্না-লিল্লাহ করে দিবে।তবে আরাবী এটা মানতে বাধ্য।জায়ান ভীষণ কেয়ার করে ওর।আর মানুষটার এই ছোট ছোট কেয়ারগুলোই আরাবীর ভীষণ ভালোলাগে।ভেবেই মুঁচকি হাসলো আরাবী।অতঃপর লাঞ্চ শেষে সবাই আরাবী ফিহাকে বাড়ি পৌছে দিয়ে।জায়ানরা নিজেদের বাড়ি চলে গিয়েছিলো। সবাই থাকায় জায়ান আরাবীকে আর কিছু বলতে পারে নি।শুধু ভালো থেকো/থাকিয়েন বলে দুজন বিদায় নিয়েছিলো।
____________
সুয়ে সুয়ে ফোন ঘাটছে আরাবী।এর মাঝে পেরিয়ে গেছে একদিন। কালকের সারাটা সময় জায়ানের সাথে বেশ ভালো কেটেছে।জায়ানের কথা মনে পরতেই লজ্জামিশ্রিত হাসি ফুটে উঠলো আরাবীর ঠোঁটে। লোকটার প্রতি যে ওর ভালোলাগা তৈরি হয়েছে মনে ইতিমধ্যে তা বুঝতে পেরেছে আরাবী। আরাবীর চারপাশে অদৃশ্য ভালোলাগার রঙিন প্রজাপতিরা এদিক সেদিন উড়াউড়ি করছে।ওদের ছুঁয়ে দিতে পারলেই বোধহয় ভালোবাসাও হয়ে যাবে।
বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো আরাবী।ফাহিম ডাকছে আরাবীকে।আরাবী ভাইয়ের ডাকাডাকি শুনে দ্রুত পায়ে ফাহিমের রুমের সামনে আসলো।ফাহিমের রুমের দরজায় দুটো টোকা দিতেই ভীতর থেকে ফাহিমের কণ্ঠস্বর ভেসে আসল,
-‘ ভীতরে আয়।’
আরাবী রুমে প্রবেশ করে দেখে ওর ভাই বিছানায় বসে আছে।ফাহিম হাতের ইশারায় ওর পাশে বসতে বলল।আরাবী বিনাবাক্যে ফাহিমের পাশে গিয়ে বসল।ফাহিম বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।আরাবী ভাইয়ের আদরে হাসলো।ফাহিম এইবার একটা ছোট্ট বক্স আর একটা ব্যাগ এগিয়ে দিলো আরাবীর দিকে।
আরাবী সেগুলো হাতে নিয়ে জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।ফাহিম চোখের ইশারায় দেখালো সেগুলো খুলে দেখতে।আরাবী আগে ব্যাগটা খুললো তারপর বক্সটা।ব্যাগের মাঝে একটা শাড়ি আর বক্সটার ভীতরে একটা স্বর্ণের লকেট।ফাহিম আলতো হেসে বলে,
-‘ বিয়ে উপলক্ষ্যে তোর জন্যে ছোট্ট উপহার আমার বোন।আমার তো ওতো ইনকাম নেই।তাই যেটুকু পেরেছি তাই এনেছি।’
আরাবীর চোখ ভড়ে উঠলো। সাথে সাথে ভাইকে ঝাপ্টে ধরে ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে কেঁদে উঠলো।কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-‘ তুমি আমার জন্যে যা এনেছো তাই আমার জন্যে আমার লাইফের বেস্ট গিফট ভাইয়া।আই লাভ ইউ ভাইয়া।তুমি পৃথিবীর সেরা ভাই।’
ফাহিমের চোখ ভরে উঠলো।বোনটা আর কয়দিন পর চলে যাবে।ভাবলেই কলিজা ফে’টে যায় ফাহিমের।ফাহিম আরাবীর মাথায় চুমু খেয়ে বলে,
-‘ তোকেও আমি ভালোবাসি অনেক আমার বোন।’
#চলবে____________