হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব -০৪+৫

#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৪
সূর্যের প্রখ’র তেজে যেন ঝলছে যাচ্ছে চারপাশ।অসহ্য গরমে নাস্তানাবুদ অবস্থা সবার।একটুখানি শীতল বাতাস এসে গা ছুঁয়ে দিলেই যেন কলি*জা জুড়িয়ে যায়। গরমে অস্থির হয়ে গিয়েও বেঁচে থাকার তাগিদার জন্যে সবাই কাজের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরেছে।থেমে নেই কারো নিত্যদিনকার কাজকর্ম।
এইতো আরাবীও আজ ইউনিভার্সিটিতে এসেছে।আজ মাস্টার্সের প্রথম ক্লাস।মিস দিলে হবে বুঝি?ক্লাস শেষ করে ইউনিভার্সিটি’র গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ও।পাশেই দাঁড়ানো ওর বান্ধবী আলিফা।আলিফা গরমে হাসফাস করে এইবার আরাবীর উদ্দেশ্যে বললো,
-‘ দোস্ত,ভাল্লাগে না।গরমে সি*দ্ধ হয়ে যাচ্ছি।’

আরাবীও ক্লান্ত স্বরে বললো,
-‘ হু,আজ অনেক গরম পরেছে।’
-‘ চল না আরাবী পাশে একটা ক্যাফে আছে ওখানে যাই।’

আলিফার কথায় আরাবী ভাবলো আসলেই ক্যাফে গিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা কিছু খেলে মন্দ হয় নাহ।গলাটা শুকিয়ে এসেছে এমনিতেও।ব্যাগে যে বোতল আছে সেগুলোর পানি খাওয়া আর না খাওয়া সমান ব্যাপার।তাই আরাবী রাজি হয়ে গেলো।
-‘ হ্যা,যাওয়া যায়।’

আরাবী ব্যাগ খুলে ফোন বের করলো।বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।বাবাকে না বলে ও কোথাও যায় নাহ।ফোন বের করতে নিয়ে আঙুলের ব্যাথা জায়গায় আবারও ব্যাপা পেলো আরাবী।ব্যাথায় ‘ইস’ করে উঠলো।ফলে ব্যান্ডেজটায় র’ক্ত উঠে লাল হয়ে গেলো।আলিফা তা দেখে বলে,
-‘ আরে কি করলি? আবারও ঘা*টা তাজা হয়ে গেলো।একটু দেখে শুনে ব্যাগটা খুলবি নাহ?’

আরাবী মলিন হেসে বলে,
-‘ এইটুকুতে কিছু হবে নাহ।চিন্তা করিস নাহ।’

বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দিলো আরাবী।তারপর আলিফার সাথে ক্যাফের উদ্দেশ্যে চললো।
____________
-‘ অফিস টাইমে আমি কাজ রেখে এখন তোদের সাথে এখানে এসেছি।আমার কতো ইম্পোর্টেন্ট কাজ ছিলো জানিস?’

নূর জায়ানের কথায় বিরক্তিতে ‘চ’ এর মতো শব্দ করলো।তারপর বললো,
-‘ একটু আধটু কাজ বাদ পরলে কিছু হয় না ভাইয়া।তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।ট্রিট দিবে না আমাদের? তুমি এতো কিপ্টা কেন?’

জায়ান ভ্রু-কুচকালো।বললো,
-‘ কিপ্টামি কোথায় করলাম?তোদের কার্ড দিয়েছিলাম নাহ?’
-‘ কার্ড দিয়ে কি হবে?যার বিয়ে তাকেও আসতে হবে স্বয়ং নিজে থেকে ট্রিট দিতে হবে।এটাই নিয়ম।’

একটা মাত্র বোন তার কথা ফেলতে পারবে না জায়ান।তাই চুপচাপ বসে রইলো না চাওয়া সত্তেও।অফিসে গিয়ে সেখান থেকে জায়ান আর ইফতিকে একপ্রকার ধরে টেনেহিছড়ে নিয়ে এসেছে নূর।পুরোটা সময় নূরকে দিতে হবে আজ।শপিং করিয়ে দিতে হবে সাথে যা যা নূর চাইবে তাই দিতে হবে।জায়ানের কাজ থাকায় নিজের কার্ড দিয়ে বলেছিলো ইফতিকে সাথে নিতে। কিন্তু আরাবী নারাজ সে আজ তার দু ভাইকে সাথে করে নিয়েই তবে ক্ষ্যান্ত হয়েছে।ওদের খাওয়ার মাঝে জায়ানের কল আসলো একটা ফোনে।তাই জায়ান উঠে একটু সাইডে চলে গেলো কলটা এটেন্ড করার জন্যে।
নূর বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলে,
-‘ ভাইয়া এমন কেন? আমি উইশ করি ভাইয়াকে যেন ভাবি নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরায়।’

ইফতি মাছি তারাবার মতো করে বলে,
-‘ হাহ সেটা স্বপ্নে।’

কথাটা বলেই ইফতি ক্যাফের দরজার দিকে তাকালো।তাকানো মাত্র হা করে রইলো।নূর ইফতিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু-কুচকালো। নিজেও তাকালো সেদিকে।বিষ্ময়ে গোলগোল হয়ে গেলো নূরের চোখ। তারপর কোন কিছু না ভেবে একদৌড় লাগালো সেদিকে।নূরকে এমন করতে দেখে ইফতি চেচিয়ে উঠলো,
-‘ নূর আস্তে যা পরে যাবি।’

কে শুনে কার কথা সে নূর দৌড়।
———
কথা বলতে বলতে আরাবী আর আলিফা ক্যাফেতে ঢুকছিলো।এমনসময় কেউ এসে হুরমুর করে আরাবীকে জড়িয়ে ধরলো।এমন করায় বেশ ভড়কে গেলো আরাবী।আলিফা চেঁচিয়ে উঠলো,
-‘ আরে আরে কে আপনি?ওকে এইভাবে চেপে ধরেছেন কেন?’

আরাবী হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে।এদিকে সে আর কেউ না নূর আরাবীকে ঝাপ্টে ধরেছে।নূর আরাবীকে লম্বা একটা হাগ করে তারপর আরাবীকে ছাড়লো।তারপর হাসিমুখে বললো,
-‘ ভাবি,ভাবি।ইস,তুমি এখানে এসেছো।আমি তোমাকে দেখে একেবারে খুশি হয়ে গেলাম।’

আরাবী চিনতে পারছে না নূরকে।আসলে সেদিন ও ভয়ে আর লজ্জায় কারো দিকেই ভালোভাবে তাকায়নি।আরাবী আমতা আমতা করে বললো,
-‘ কিন্তু তুমি কে?’

নূর হা করে রইলো আরাবীর প্রশ্নে।পরক্ষনে আবার চেহারা দুঃখী দুঃখী করে বলে,
-‘ ভাবি এটা কি বললে তুমি?আমি তোমার জামাইয়ের একমাত্র বোন।তোমার একমাত্র ননদিনী নূর। আর তুমি কিনা আমায় চিনতেই পারোনি।’

আরাবী নূরের কথায় সাথে সাথে জিহবায় কামড় দিলো।সর্বনাষ বড় ভুল করে ফেলেছে।ইস, নূর মেয়েটা এখন কি ভাবছে ওকে নিয়ে।আরাবী জোড়পূর্বক হেসে বলে,
-‘ আসলে বুঝোই তো সেদিন একটু নার্ভাস ছিলাম তাই কারো দিকে তেমনভাবে তাকাইনি।এইজন্যেই চিনতে পারিনি তোমাকে।সরি হ্যা।’

নূর ফিঁক করে হেসে দিলো,
-‘ আরে ভাবি চিল।আমি তো এমনিতেই একটু দুষ্টুমি করছিলাম।’

এরমধ্যেই এখানে এসে ইফতি উপস্থিত হলো।ইফতিকে মনে আছে আরাবীর।তাই ইফতির উদ্দেশ্যে বলল,
-‘ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।ভালো আছেন।’
-‘ ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ভালো আছি ভাবি।আপনি ভালো আছেন?’
-‘ আলহামদুলিল্লাহ!ভালো।’

আলিফা এতোক্ষন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে পুরো ঘটনা দেখছিলো।আরাবীর ওর দিকে নজর যেতেই আরাবী আলিফার হাত ধরলো।ধ্যান ভাংলো আলিফার।আরাবী হালকা হেসে বললো,
-‘ ও আমার বান্ধবী আলিফা।’

নূর বললো,
-‘ হ্যালো আলিফা আপু।আমি আরাবী ভাবির একমাত্র একটা কিউট ননদ নূর।’

ইফতি প্রথমে সালাম জানালো।আলিফাও সালামের উত্তর নিলো।ইফতি বলে,
-‘ আমি ভাবির দেবর ইফতি সাখাওয়াত। ‘

সাক্ষাৎ শেষ হতেই।নূর আরাবীর হাত টেনে ধরলো,
-‘ ভাবি তোমরা নিশ্চয়ই ক্যাফেতে কিছু খেতে এসেছো।’

আরাবী নূরের প্রশ্নে বলে,
-‘ হ্যা, আসলে বাহিরে অনেক গরম।তাই ভাবলাম আমি আর আলিফা কোল্ড কফি খাই।’
-‘ বেশ ভালো করেছো।চলো আমরাও এখানে কফি খেতে এসেছিলাম।চলো আমাদের সাথে জয়েন করবে তোমরা আসো।জায়ান ভাইয়াও এসেছে। অনেক মজা হবে।জানো আমি আজ ভাইয়াকে অফিস থেকে ধরে নিয়ে এসেছি।আমার একমাত্র বড় ভাই।তার বিয়ে ঠিক হয়েছে।সে আমাকে ট্রিট দিবে না এটা কি হয়?তাই আমি জায়ান ভাইয়া আর ইফতি ভাইয়া দুজনকেই ধরে বেধে নিয়ে এসেছি।’

জায়ানও এখানে আছে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসলো আরাবীর।লোকটা এখানে আছে তারমানে।এখন আরাবী কিভাবে যাবে লোকটার সামনে?এই ব্যাক্তির উপসস্থিতি টের পেলেই তো আরাবীর ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসে।কাঁপাকাঁপি করতে করতে জ্ঞান হারাবার মতো অবস্থা হয়ে যায়।নূরকে যে বলবে ও যাবে নাহ সেটাও পারবে নাহ।মেয়েটা না আবার খারাপ কিছু ভেবে বসে।এদিকে নূরকে এমন বকবক করতে দেখে ইফতি বলল,
-‘ আস্তে কথা বল।শ্বাস নেহ।এতো কথা কিভাবে বলিস তুই?’

নূর মুখ কুচকালো।প্রতিবাদি সুরে বলে,
-‘ আস্তে কথা কেন বলবো? মুখ দিয়েছেই আল্লাহ কথা বলার জন্যে।যা মনে আসবে ডিরেক্ট বলে ফেলবো।কোন থামাথামি নেই।’

নূরের এমন বাচ্চামো কথায় আলিফা হেসে দিলো।ইফতি তাকাতেই আলিফা নিজের হাসি বন্ধ করে আবারও সিরিয়াস মুড নিয়ে দাড়ালো।তা দেখে ইফতি হালকা হাসলো।নূর আরাবীকে নিয়ে ওদের টেবিলের সামনে নিয়ে দাড়ালো।ঠিক তখনই জায়ান কথা বলা শেষ করে এসেছে।জায়ানকে দেখেই আরাবী মাথা নিচু করে রইলো।জায়ান আরাবীর দিকে অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে।নূর বললো,
-‘ ভাইয়া দেখো সার্প্রাইজ।ভাবিকে নিয়ে আসলাম।’

জায়ান শীতল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ হু! কোথায় পেলি ওকে?’

ইফতি জবাবে বলে,
-‘ গরম লাগার কারনে ভাবি আর ওনাত ফ্রেন্ড ক্যাফের এসেছে কোল্ড ড্রিংস এর জন্যে।ক্যাফেতেই দেখা হলো মাত্র। তাই নূর আমি গিয়ে নিয়ে আসলাম।আমাদের সাথে যেন জয়েন করে।ভালো করেছি না ভাইয়া।?’

জায়ান ইফতির কথা পরিপ্রেক্ষিতে কিছুই বললো না। শীতল চাহনীতে সে তাকিয়ে আরাবীর দিকে।আরাবী চোখ তুলে একবার তাকালো জায়ানের দিকে।তাকাতেই জায়ানের ওই শীতল চোখের চাহনী দেখে ওর অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন লোকটা ওর দিকে? কি যেন আছে ওই দৃষ্টির মাঝে।আরাবীর বুকের ভীতর এফোড় ওফোড় করে দেয় ওই চাহনী।আরাবী ভয়ের সাথে ঢোক গিললো।শুকিয়ে যাও গলাটা একটু ভিজানোর বড্ড দরকার।জায়ানের শান্ত কন্ঠ শোনা গেলো,
-‘ হেভ আ সিট।’

নূর জায়ানের কথা শুনে টেনে আরাবীকে বসিয়ে দিলো।ইফতিও আলিফাকে বসার জন্যে বললো।আলিফা আরাবীর দিকে তাকালো।আরাবীর একপাশে নূর বসেছে অন্যপাশ খালি।আরাবীর হবু বর সামনে দাঁড়ানো সেই বসবে ওই খালি জায়গাটায়।আলিফা পরিস্থিতি বুঝে অপরপাশে গিয়ে বসে পরলো।ওর পাশে বসলো ইফতি।তবে মাঝে যথেষ্ট জায়গা রেখে বসেছে ছেলেটা।আলিফার ভালো লাগলো ব্যাপারটা দেখে।এদিকে আরাবী চুপচাপ বসে ক্রমাগত হাত কচলাচ্ছে।নার্ভাসনেসের ঠ্যালায় ও বোধহয় ম’রে টরে যাবে।আরাবী বিরবির করলো,
-‘ ইয়া মাবুদ। আমাকে একটু স্বাভাবিক করে দেও।’

কিন্তু তা আর হলে তো?আরাবীর কাঁপাকাঁপি আরো একধাপ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্যে জায়ান ধপ করে বসে পরলো ওর পাশে।একদম ওর গা ঘেষে বসলো।আরাবীর শ্বাস গলায় আটকে গেলো।পুরো শরীর বরফের জমে গিয়েছে ওর।জায়ানের বাহু আরাবীর বাহুর সাথে একেবারে লেগে।আরাবীর যেখানটায় জায়ানের স্পর্শ করছে।আরাবীর মনে হচ্ছে সেই জায়গাটায় কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।এসির মাঝেও ঘামতে লাগলো আরাবী।জায়ান আরাবীর অবস্থা দেখে সবার আড়ালে ঠোঁট কামড়ে মৃদ্যু হাসলো।আলিফা আর ইফতি নূরের বকবক শুনতে ব্যস্ত।জায়ান মাথাটা নিচু করে আরাবীর কানে ফু দিলো।এমন করাতে ভয়ানকভাবে কেঁপে উঠলো আরাবী।হাটুর কাছের জামা সজোড়ে খামছে ধরলো।হৃৎপিন্ডটা বোধহয় বুক চিরে বেড়িয়ে আসবে।আরাবীর সেই কাঁপা হাতটা জায়ান নিজের হাত দ্বারা চেপে ধরলো।জায়ানের এক একটা কান্ডে যেন আরাবী চারশো চল্লিশ বোল্ডের ঝটকা খাচ্ছে।কি হচ্ছে ওর সাথে কেন হচ্ছে? লোকটা এমন কেন করছে?সেদিনের জায়ান আর আজকের জায়ান এক নাহ।কোনভাবেই এক নাহ।অন্তত আরাবীর কাছে তো নাই।জায়ান আরাবীর হাতটা আরো একটু শক্ত করে ধরে।আরাবীর কানে ফিসফিস করে বললো,
-‘ টেক আ ব্রিথ।’

আরাবী সাথে সাথে মাথাটা সরিয়ে ফেললো।জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে আরাবী। জায়ানের হাতের মাঝে থাকা হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।কিন্তু কোনভাবেই পারছে।আরাবী এইবার না পেরে কাঁপা গলায় নিচু কন্ঠে বলে,
-‘ হাতটা ছাড়ুন প্লিজ।’

জায়ানের কোন জবাব নেই।সে নির্বিকার।ইয়া মাবুদ এই কোন লোকের খপ্পরে পরলো ও, ভাবছে আরাবী।আরাবী আবারও বলে,
-‘ ছা..ছাড়ুন নাহ প্লিজ।’
জায়ানের ভাবলেসহীন উত্তর,
-‘ উহু,এইভাবেই থাকুক।’

এই উত্তরে যেন আরাবীর কেঁদে দেবার মতো অবস্থা।ঠোঁট ভেঙ্গে কান্না আসছে ওর।’এইভাবেই থাকুক!’ বললেই হলো নাকি? এমনভাবে আরাবী থাকবে কিভাবে? এইযে আরাবীর হাত-পা কাঁপছে,হাপানি রোগির মতো শ্বাস নিচ্ছে,হৃৎপিন্ড ধরাস ধরাস করছে।এইভাবে কি থাকা যায়?উহু! একদম নাহ।আজ আরাবীর ম’রেই যাবে।একদম মরে যাবে। সেদিন ওকে কি ধমকটাই নাহ দিলো।জায়ানের ধমক খেয়ে আরাবীর রূহ উড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো।আর আজ লোকটা এসব কি করছে? একটা মানুষ রাতারাতি এমন ভাবে বদলে যেতে পারে কি করে?মানে কিভাবে?জানা নেই আরাবীর।কিচ্ছু জানা নেই।
#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৫
‘ হাতে ব্যাথা পেলে কিভাবে?’

জড়সড় হয়ে বসা থাকা আরাবীর উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা করলো জায়ান।আরাবী এহেন প্রশ্নে কি উত্তর দিবে ভেবে পেলো না।তবুও আমতা আমতা করে বলে উঠলো,
-‘ আং..আংটিটা খুলার সময় একটু ছি..ছিলে গিয়েছিলো।’
জায়ান ভ্রু-কুচকালো আরাবীর কথা শুনে।ব্যান্ডেজটায় এখনো তাজা র’ক্ত ভেসে আছে।আলতো করে হাত ছোঁয়ালো সেখানে জায়ান।জায়ানের স্পর্শে জায়গাটা কেমন শিরশির করছে আরাবীর।জায়ানের ধীর আওয়াজ,
-‘ ব্যাথা আছে?’
-‘ উঁহু।’
-‘ এখনো র’ক্ত লেগে যে?’
-‘ ব্যাগের সাথে লেগে আবার ব্যাথা পেয়েছিলাম।’
-‘ চলো আমার সাথে।’

আকস্মিক জায়ানের এই কথায় আশ্চর্য হলো আরাবী।চোখ তুলে তাকালো জায়ানের দিকে।জায়ান নির্বিকারে ওর দিকে তাকিয়ে। কিন্তু জায়ানের চোখে আরাবী দেখতে পাচ্ছে একরাশ ব্যাকুলতা,অস্থিরতা।তবে কি তা ওর জন্যেই?কিন্তু ওর জন্য কেনই বা এতো অস্থির আর ব্যাকুল হবে লোকটা?আজ নিয়ে মাত্র দু’দিন হলো ওদের দেখা।আরাবী বিরবির করলো,
-‘ আপনি আস্ত একটা ধাধা।এই ধাধার উত্তর আমি মিলাবো কিভাবে?’
-‘ কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে অপেক্ষা করতে হয়।’

হকচকিয়ে গেলো আরাবী। এতো আস্তে কথা বললো তাও লোকটা শুনে ফেললো।কি ভয়া’নক ব্যাপার স্যাপার। আরাবীর ভাবনার মাঝে জায়ান গম্ভীর স্বরে বলে,
-‘ চলো।’

আরাবী মিনমিন করে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ কো..কোথায় যাবো?’
-‘ ডাক্তারের কাছে।’
আরাবী অবাক।
-‘ কিন্তু কেন?’

কোন উত্তর দিলো না জায়ান।সে এখনো আরাবীর হাতের ব্যান্ডেজের দিকে তাকিয়ে।আরাবী শুকনো গলায় বলে,
-‘ লা..লাগবে নাহ তো।একটুখানি কেটেছে।আমার ব্যাগে ব্যান্ডেজ আছে।আমি আলিফাকে দিয়ে করিয়ে নিবো।’

কথাটা শোনা মাত্রই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো জায়ান আরাবীর দিকে।আরাবী ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো।আশ্চর্য লোকটা এভাবে তাকাচ্ছে কেন? একটু আগেই তো কি সুন্দর নরম কন্ঠে কথা বলছিলো।এখন আবার সেদিনের মতো তাকাচ্ছে।

-‘ ভাই তুমি কিছু বলছো নাহ কেন?’
নূরের প্রশ্নে আরাবী দ্রুত জায়ান থেকে একটু সরে বসার চেষ্টা করতে লাগলো।কিন্তু জায়ান তা হতে দিলে তো। সে এখনো আরাবীর হাত ধরে বসে।তবে খুব নরম স্পর্শে ধরেছে আরাবীর হাতটা।যেন আরাবী একটুও ব্যাথা না পায়।বুকের ভীতরটা কেমন কেঁপে কেঁপে উঠছে।জায়ানের একটুখানি ছোঁয়াতেই যেন আরাবীর মন আরাবীকে বলছে।ইনিই সেই জন যেইজন তোকে সবসময় সবকিছু থেকে আগলে রাখবে। তোর একমাত্র নির্ভরযোগ্য, ভরসাযোগ্য ব্যাক্তি।যার কাছে তুই নির্দ্বিধায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারবি।কিন্তু মন এমনটা কেন বলছে? কি কারনে এমন হচ্ছে? যেখানে অন্যসব ছেলে আরাবীর দিকে একটু আঁড়চোখে তাকালেই আরাবীর অসস্থি লাগে।সেখানে জায়ান আরাবীর সাথে প্রায় একপ্রকার গা ঘেসে বসে আছে।সাথে ওর হাত ধরে আছে।কিন্তু আরাবীর একটুও খারাপ লাগছে না।বরং সারা মনপ্রাণ জুড়ে ভালোলাগার প্রজাপতিরা এদিক সেদিক উড়াউড়ি করছে।আনমনেই আরাবীর ঠোঁটের কোণে লজ্জা রাঙা হাসি ফুটে উঠলো।এতোক্ষনের ভয়,ড’র,জড়তা সব যেন একনিমিষে কোথাও গায়েব হয়ে গেলো।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই নূর সিদ্ধান্ত নিলো দূরে কোথায় ঘুরতে যাবে।আরাবী আর আলিফাকেও ওদের সাথে যেতে হবে।তা শুনে আরাবী ভড়কে গেলো।সে কিভাবে যাবে? দুপুর তিনটা বাজে।বাড়ি ফিরতে হবে।নাহলে ওর বাবা চিন্তা করবেন।আর বাবাকে যে ফোন করে জানাবো।তো জানাবেটা কি?যে ও জায়ানের সাথে আছে?এটা আরাবী কখনই বলতে পারবে নাহ।লজ্জায় আরাবী তৎক্ষনাত ম’রে যাবে।কি মনে করবে ওর বাবা আর মা। বলবে বিয়ে ঠিক হয়েছে একদিনই হয়নি। এখনি হবু বর এর সাথে ঘুরাঘুরি শুরু করে দিয়েছে।আরাবী ইতস্ততভাবেই বলে উঠলো,
-‘ নূর বলছিলাম কি,তোমরা ঘুরতে যাও।আমি অন্য একদিন যাবো নেহ তোমাদের সাথে।আলিফাকে ওর বাড়ি ফিরতে হবে।আংকেল আবার একটু ইস্ট্রিক্ট ওর বিষয়ে।’

জায়ান আরাবীর কথা শুনে শীতল দৃষ্টিতে তাকালো।আরাবী সেটা বুঝতে পেরে এদিন ওদিক নজর ঘুরিয়ে নিলো।জায়ান বলে উঠলো,
-‘ আরাবী ঠিক বলছে।ইফতি..’
-‘ জি ভাই।’

ইফতি এগিয়ে আসতেই।
-‘ নূরকে নিয়ে তুই চলে যাহ।আমি আরাবী আর আলিফাকে ড্রপ করে সোজা অফিসে আসছি।’
-‘ আচ্ছা ভাই।’

আরাবী জায়ানের ড্র‍প করে দেওয়া কথা শুনে কিছু বলবে।তার আগেই জায়ানের ঠান্ডা কন্ঠ,
-‘ ডোন্ট স্যে আ ওয়ার্ড। আমি যেহেতু বলেছি ড্রপ করে দিবো।মানে দিবো।’

আরাবী সাথে সাথে বলতে চাওয়া কথাটা গিলে ফেললো।যেইভাবে তাকায় লোকটা।মানুষ কথা আর বলবে কিভাবে? ইফতি আর নূর মিটিমিটি হাসছে ওদের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে। জায়ান বিরক্ত হলো এই দুটোর কান্ডে। চাপা ধমক দিয়ে বললো,
-‘ কি সমস্যা তোদের?’
নূর হাসি বন্ধ করে সাথে সাথে বলে,
-‘ কোন সমস্যা নেই ভাইয়া।এইযে তুমি ভাবির সাথে আরেকটু টাইম স্পেন্ড করতে চাচ্ছো।আমার আর ইফতি ভাইয়ার এতে কোন সমস্যা নেই।তুমি চাইলে ভাবির সাথে আজ সারাটাক্ষন থাকতে পারো।এতেও আমার আর ইফতি ভাইয়ার কোন সমস্যা নেই।’

একনাগারে কথাগুলো বলে ফেললো নূর।নূরের এমন কথায় জায়ান কোন গুরুত্ব দিলো না।এদিকে ইফতি আর আলিফা হেসে দিয়েছে।আর আরাবী লজ্জায় পারে নাহ মাটি ফাঁকা করে তার মধ্যে ঢুকে যেতে। কি একটা অবস্থা।এইভাবে তাকে লজ্জা দেওয়ার কোন মানে আছে? নূর মেয়েটা অতিরিক্ত কথা বলে।আরাবী ঠোঁট ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।ইফতি হাসি থামিয়ে বলে,
-‘ নূর চল। দেরি হয়ে যাচ্ছে।আসি ভাবি।ভালো থাকবেন।’
-‘ আসি ভাবি।আমি কিন্তু আবার তোমার সাথে দেখা করবো।নেক্সট দেখা হলে কিন্তু আমরা ঘুরতে যাবো বলে দিলাম।আমরা শপিং ও করবো।এখন আমি একা নই তুমিও আছো আমার দলে।দুজন মিলে একসাথে ভাইয়ার পকেট খালি করবো।’

জায়ান বিরক্ত হয়ে ইফতিকে ইশারা করলো নূরকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। ইফতি ইশারা বুঝতে পেরে সাথে সাথে নূরের মুখ চেপে ধরলো।
-‘ আরে বোন আমার চুপ যা। এতো কথা বলিস নাহ।’

নূর ইফতির হাতে কামড় দিয়ে দিলো।ব্যাথা পেয়ে ইফতি হাত সরিয়ে নিলো।নূর রাগি গলায় বলে,
-‘ আমার কথা বলার সময় ডিস্টার্ব করবা নাহ ভাইয়া।নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।’
-‘ আচ্ছা বুঝেছি।চল তো।ভাইয়া রেগে যাচ্ছে।’

নূর মুখ ভেংচি কেটে বাইকে গিয়ে উঠে বসলো ইফতি গিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।ওরা যেতেই জায়ান আরাবীর উদ্দেশ্যে বলে,
-‘ গাড়িতে উঠো।’

জায়ান ফ্রন্ট সিটের দরজা খুলে দিতেই আরাবী গাড়িতে উঠে বসলো।আলিফা নিজেই গাড়ির দরজা খুলে পিছনে বসতে বসতে বলে,
-‘ আমি নিজেই উঠতে পারবো ভাইয়া।আপনি বরং আপনার বউয়ের দিকে নজর দিন।’

জায়ান নিস্তব্ধে বাঁকা হাসলো।বললো,
-‘ নজর আমার সবসময় তার দিকেই থাকে।’

কথাটা শোনা মাত্রই আরাবী চোখ বড় বড় করে তাকালো।লোকটা কিসব বলে আলিফার সামনে।একটুও কি লজ্জা নেই নাকি।হঠাৎ টুং করে একটা মেসেজ আসে আরাবীর ফোনে।আরাবী মেসেজটা ওপেন করে দেখে আলিফার মেসেজ। মেসেজটা পড়েই আলিফা লজ্জায় হাসফাস করতে লাগলো।এতো অস’ভ্য এই মেয়েটা।কিসব নির্ল’জ্জ কথাবার্তা লিখে মেসেজ পাঠাচ্ছে।মেসেজটা আবার পড়ল আরাবী।লাজুক হাসলো ও।আলিফার উদ্দেশ্যে লিখে পাঠালো,
-‘ অস’ভ্য কথা কমিয়ে বল।সে আছে এখানে।আমাকে আর লজ্জা দিস নাহ প্লিজ।’

বান্ধবীর মেসেজের উত্তর দেখে আলিফা মিটিমিটি হাসতে লাগলো।এদিকে জায়ান এসে গাড়িতে বসলো।তারপর বলে,
-‘ সিট বেল্ট বেধে নেও।’

আরাবী জিভ কাটলো।ইস,সে তো এটার কথা ভুলেই গিয়েছিলো। আরাবী দ্রুত সিট বেল্ট লাগালো।জায়ান গাড়ি স্টার্ট দিলো।এর মধ্যে আর কোন কথা হলো নাহ।সবার আগে আলিফার বাড়ি পরায়। আলিফাকে আগে নামিয়ে দিলো জায়ান।আলিফা যাওয়ার সময় আরাবীকে চোখ টিপ মেরে গিয়েছে।বিনিময়ে আরাবী চোখ রাঙ্গানি দিয়েছে আলিফা। তারপর আবারও গাড়ি চলতে শুরু করলো।একেবারে আরাবীদের বাড়ির গেটের সামনে এসে থামলো।আরাবী সিট বেল্ট খুলেছে মাত্র।হঠাৎ জায়ান বললো,
-‘ তোমার ব্যাগটা দেও।’

বুঝতে পারলো না আরাবী।
-‘ অ্যাঁ?’
-ব্যাগ!’

জায়ান চোখের ইশারায় দেখালো।আরাবী এইবার বুঝলো জায়ানের দিকে ব্যাগটা এগিয়ে দিলো।জায়ান ব্যাগটা নিলো না।তবে বললো,
-‘ ব্যান্ডেজ বের করো।’

আরাবীর আজ কি হয়েছে কে জানে?ও মন্ত্রমুগ্ধের মতো জায়ান যা যা বলছে তাই করছে।আরাবী ব্যান্ডেজ বের করে জায়ানের দিকে এগিয়ে দিলো।জায়ান সেটা হাতে নিয়ে বিনাবাক্যে আরাবীর হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।খানিক কেঁপে উঠলো আরাবী তবে কিছু বললো না।জায়ান খুব যতনে আরাবীর হাতের ব্যান্ডেজটা খুলে ফেললো।খুব নরমভাবে স্পর্শ করছে।যেন আরাবীকে একটু জোড়ে ছুঁলেই আরাবী ব্যাথা পাবে। জায়ানের প্রতিটা স্পর্শে আরাবী দেহ মন কেমন চনমনিয়ে উঠছে। পায়ের তলায় সুরসুরি লাগছে।আরাবী ঠোঁট কামড়ে বসে রইলো।জায়ান সুন্দরভাবে আবারও আরাবীর হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলো।তারপর আরাবীর হাত দ্রুত ছেড়ে দিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।আরাবী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে জায়ানের দিকে।জায়ান চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই শক্ত কন্ঠে বলল,
-‘ যাচ্ছো না কেন?’

আরাবী কথাটা শুনেই হুরমুরিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো।এ কেমন লোক রে বাবা।এইভাবে বলার কি আছে? লোকটা অদ্ভুত। এই নরম তো আবার এই গরম।আরাবী বাড়ির দিকে পা বাড়াতে নিয়েও থেমে গেলো।এভাবে চলে যাওয়াটা ভালো দেখায় নাহ। হাজার হোক লোকটা ওর হবু বর।আরাবী আবার ফিরে আসলো।জায়ানের দিকের দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালো।ইতস্ততভাবে জানালায় ঠকঠক আওয়াজ করলো।
-‘ আবার কি চাই?’

নাক মুখ কুচঁকে এলো আরাবীর।এটা কেমন প্রশ্ন?আরাবী নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে,
-‘ জি বাড়িতে আসুন।’

জায়ানের জবাব নেই।আরাবী জানালা দিয়ে ভীতরে জায়ান কি করছে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই দেখা যাচ্ছে না।ফোঁস করে শ্বাস ফেলে আরাবী নিজেই আবার বলে,
-‘ বাড়িতে আসুন।এইভাবে গেটের কাছ থেকে চলে যাবেন।বিষয়টা খারাপ দেখায়।’
-‘ আসলে কি খাওয়াবে?’

জায়ানের সোজাসাপটা প্রশ্ন।এমন প্রশ্নে আরাবী কি উত্তর দিবে জানে নাহ।জীবনেও শুনে নি কাউকে বাড়িতে আসার কথা বললে সে ব্যাক্তি সোজাসাপটা জিজ্ঞেস করে ‘আসলে কি খাওয়াবে?’। এই জায়ান নামক ব্যাক্তিটা অদ্ভূত, বড্ড অদ্ভূত।আরাবী ধীর আওয়াজে বলে,
-‘ আপনি আগে আসুন তো।আমি আপনার জন্যে চা,পাকোরা,পাস্তা,নুডুলস।যা যা আপনি খেতে চান বানিয়ে দিবো।’
-‘ বাট আই লাভ সুইটস মোর।’

আরাবী সরল মনে বললো,
-‘ হ্যা তাও বানিয়ে খাওয়াবো।আমি রসমালাই,গোলাপজাম, বানাতে পারি।’
-‘ এইগুলা না অন্য মিষ্টি।’

কথাটা বলেই জায়ান গাড়ির জানালা খুলে অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকালো আরাবীর দিকে।আরাবী সাথে সাথে দৃষ্টি নত করলো।জায়ান বাঁকা হেসে বলে,
-‘ বাড়ি যাও।আমি আসবো নাহ।কারন আমি জানি আমি যেই মিষ্টির কথা বলছি তুমি তা আমায় বিয়ের পর ছাড়া দিতে পারবে না।আর আমিও বিয়ের আগেই মিষ্টি খেতে চাই নাহ।’

গোলমেলে কথাটা বুঝতে পারলো না আরাবী।চিন্তায় বিভোর সে কথাটা নিয়ে।আরাবী ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।হঠাৎ পিছন থেকে জায়ান ডেকে উঠলো,
-‘ আরাবী…!’

ইস, কি সুন্দর সেই ডাক।একেবারে আরাবীর কলিজায় গিয়ে লাগে। কারো মুখে নিজের নামটা শুনতে এতো ভালো লাগে জানা ছিলো না আরাবীর।আরাবী সময় নিয়ে পিছনে ঘুরে তাকালো।আরাবী তাকাতেই জায়ান শীতল কন্ঠে বললো,
-‘ আর কখনো আমার সামনে ঠোঁট কামড়াবে নাহ।আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ দেন।’

কথাটা শেষ করতে দেরি জায়ানের গাড়ি ছুটিয়ে যেতে দেরি নেই।আরাবী হা করে জায়ানের যাওয়ার পথের পাণে তাকিয়ে রইলো।জায়ানের এমন অদ্ভূত কথাবার্তা ওর মাথায় কিলবিল করতে লাগলো।জায়ানের কথার অর্থ ভাবতে ভাবতে আরাবী নিজেদের ফ্লাটে চলে আসলো।লিপি বেগম দরজা খুলে দিলেন।ভ্রু-কুচকে আরাবীকে খানিক দেখলো তবে কিছু বললো না।কারন বসার ঘরে জিহাদ সাহেব বসে আছেন।তাই মুখ ফিরিয়ে চলে গেলেন।আরাবী বাবার সাথে কিছু কথা বলে রুমে চলে আসলো।গোসল করে ফ্রেস হয়ে আসলো।এখনও ভাবছে জায়ানের কথা।বিরবির করে বার কয়েক জায়ানের কথা আওড়ালো।হঠাৎ কিছু একটা বুঝে চমকে উঠলো আরাবী।থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো।র’ক্ত হিম হয়ে গিয়েছে ওর।আকস্মিক চাঁপা চিৎকার দিয়ে বালিশে মুখ গুজে দিলো আরাবী।ভাজ্ঞিস কেউ শুনেনি।কারন ওর রুমটা বসার ঘর থেকে একটু সাইডে।আরাবীর লজ্জায় দ’ম বন্ধ হয়ে আসছে।নাক,কান,গাল গরম হয়ে গিয়েছে।আরাবী বালিশে মুখ গুজে বিরবির করলো,
-‘ শেষমেষ কিনা এমন নির্ল’জ্জ ছেলেকেই আমার বর হতে হলো?অস’ভ্য, অ’সভ্য,অস’ভ্য।’

#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।গল্পটা ভালো লাগছে কিনা অবশ্যই জানাবেন।জায়ানকে কি এই লুকেই ভালো লাগছে?নাকি অন্যরকম ক্যারেক্টার করবো ওর?জানাবেন কিন্তু।
#চলবে________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।জায়ানের এই ডেঞ্জা*রাস রূপ পছন্দ হয়েছে তো সবার?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here