হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব -০২+৩

#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০২ ও ০৩
স্নিগ্ধ প্রকৃতি,হিমেল হাওয়া বইছে।আকাশে শুভ্র মেঘের আনাগোনা।সূর্য প্রায় হেলে পরছে পশ্চিমে।লাল আভা ছড়িয়েছে চারদিকে। ছাদের আনাচে কানাচে গাছ-গাছালিতে ভরপুর।এমন একটা মনোরম পরিবেশেও মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আরাবী।আর কিইবা করবে ও? এমনিতেই কাঁপা-কাঁপি করতে করতে ওর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর একটু পর বোধহয় শ্বাস আটকে মা’রা যাবে ও এমনটাই মনে হবে ওকে দেখলে।প্রায় আধাঘন্টা যাবত এমনভাবে দাঁড়িয়ে আরাবী।ভ*য়ের পাশাপাশি বিরক্তও হচ্ছে।ছাদে এসেছে পর থেকে জায়ান নামক ব্যাক্তিটি একটা কথাও বলেনি ওর সাথে না নিজ জায়গা হতে একটু নড়চড় করেছে।সেইযে এসে রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে ফোনে কি যেন দেখছে তো দেখছেই।এদিকে যে তার সামনে একটা মানুষের ভ’য়ের চোটে দম ব*ন্ধ মা*রা যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে সেদিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই।আরাবী যে একপলক তাকিয়ে লোকটাকে দেখবে সেই সাহসও হচ্ছে না ওর।কি একটা অবস্থা।গলাটা শুকিয়ে গিয়েছে বা*জেভাবে।লোকটা কি তাকে পছন্দ করে নি?তাই তো কিছুই বলছে না।না করারই কথা।ওর গায়ের রঙটা তো শ্যামলা বর্ণের।আর মানুষ হলো সুন্দরের পূজারি।আর এতো বড়লোক বাড়ির ছেলে কি ওর মতো শ্যামলা গায়ের মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হবে নাকি?যাই হোক বিয়েটা না হলেই ভালো।আরাবী এখনই বিয়ে করতে চায়না।সবে মাত্র অনার্স কমপ্লিট করেছে ও।মাস্টার্সের ভর্তি হয়েছে এইতো কিছুদিন পর থেকেই ক্লাস শুরু হবে ওর।ও মাস্টার্স কমপ্লিট করে একটা চাকরি করতে চায়।তারপরেই বিয়েটা করার ইচ্ছা আরাবী।মনেপ্রানে চায় ওর সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটি যেন বিয়েতে না করে দেয়। তাহলেই হলো।কিন্তু এই বিয়েটা ভেঙ্গে গেলে যে ওর মা ওকে কি করবে আরাবী জানে না।এই শ্যামবর্ণের জন্যে ওর দু-তিনিটা সম্বন্ধ ফিরত চলে গিয়েছে।এই জন্যে কম কথা শুনায়নি ওকে লিপি বেগম।তবে আরাবী এটুকু ভেবে পায় না।ওর ভাই আর ওর ছোট বোনের গায়ের রঙ ফর্সা,ওর আব্বু আম্মুও ফর্সা।তাহলে ও এমন শ্যামলা গায়ের রঙ পেলো কিভাবে? এই প্রশ্নটা প্রায় জাগে ওর মনে।কিন্তু কাউকে জিজ্ঞেস করে না।এমন বাচ্চামো প্রশ্ন করা নেহাতই বোকামি বলে গন্য করবে সবাই।আরাবী চাপা শ্বাস ফেললো।ঠিক তখনই ছাদে এসে উপস্থিত হয় ইফতি।ইফতি সাখাওয়াত পুরো নাম। নিহান সাখাওয়াতের ভাই মিহান সাখাওয়াতের ছেলে ইশতিয়াক ইফতি সাখাওয়াত।ইফতি ছাদে এসেই চাপা স্বরে জায়ানকে ডেকে উঠলো,
-‘ ভাই,তোকে ডাকছে নিচে।’

কথাটা বলেই ইফতি দ্রুত পায়ে নিচে চলে গেলো।জায়ান ফোনটা পকেটে রেখে ছাদ থেকে নামার জন্যে অগ্রসর হলো।আরাবী ইফতির ঝড়ের মতো আসা যাওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছিলো।পরক্ষনে জায়ানকে ভালো মন্দ কিছু না বলে চলে যেতে দেখে আরাবী নিজেও নিচে যাওয়ার জন্যে অগ্রসর হলো।কিন্তু কাঁপাকাঁপির কারনে ঠিকঠাকভাবে হাটতেও পারছে না মেয়েটা।তার উপর এই শাড়িটাও তার সাথে যেন শ’ত্রুতামি শুরু করেছে। শাড়ির কুচিগুলো ঢিলে হয়ে বার বার নিচের দিক চলে যাচ্ছে। ফলে আরাবীর হাটতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। হাটার মাঝে একসময় শাড়ির কুচিতে পা পেঁচিয়ে পরে যেতে নেয় আরাবী।ভ’য়ে মৃদ্যু চিৎকার করে উঠে।নিজেকে রক্ষার জন্যে যা পায় তাই স্বজোড়ে আঁকড়ে ধরে মেয়েটা।ভ’য়ে প্রাণপাখি উড়ে যাওয়ার উপক্রম ওর।আজ যেন সব ওর সাথে উল্টাপাল্টা হচ্ছে।সাথে সাথে কোমড়ে কারো শীতল হাতের স্পর্শে সর্বাঙ্গ মৃদু ঝংকার দিয়ে কেঁপে উঠে।হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো হু হু করে।ব্যাপারটা ও যা ভাবছে তা যদি হয়ে থাকে।তাহলে আরাবী এখনই এই মুহুর্তে লজ্জায় কেঁদে দিবে।অলরেডি ওর চোখজোড়া ভিজে উঠেছে।ভেজা ভেজা চোখজোড়া নিয়েই আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো আরাবী।আর ওর আন্দাজ করা ব্যাপারটাই সত্যি।একমুহূর্তে ও জায়ানের বাহুডোড়েই বন্দি।সাথে নিজেও খামছে ধরে আছে জায়ানের গায়ে পরিহিত কোট’টা। লোকটার দিকে তাকালো আরাবী ভয়ে ভয়ে।সাথে সাথে যেন হৃদয়ের মাঝে কেমন করে উঠলো আরাবীর।নিজেও বুঝতে পারলো না কিছু।এমন সুদর্শন ছেলে না-কি ওকে বিয়ে করবে? গ্রে কালার সুট কোট পরিহিত,ফর্সা গায়ের ছেলেটা অধিক সুদর্শন। সূর্যের লাল আভায় অন্যরকম লাগছে, গালে চাপদাড়ি,পুরু ভ্রুজোড়ায় ওই চোখদুটোর সৌন্দর্য যেন দ্বিগুন হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।চোখের দিকে তাকাতেই আরাবীর যেন অন্য জগতে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো।দিন দুনিয়া ভুলে বেহায়ার মতো ওই চোখের দিকেই তাকিয়ে রইলো।চোখের পলক ফেলাও যেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওর।হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠের চাপা ধমকে হুশ ফিরে আসে আরাবীর,
-‘ ডা’ফার একটা।শাড়ি পরে হাটতে না পারলে পরো কেন? এখন নিজেও পরতে সাথে আমাকেও ফেলতে,ইডি’য়ট একটা।’

আরাবী এমন ধমকে ভ’য়ে কেঁপে উঠলো।ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই হাশফা’শ করতে লাগলো আরাবী।জায়ানও আরাবীকে ছেড়ে দিলো।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরাবীকে একপলক দেখে তারপর হনহনিয়ে চলে গেলো নিচে।এদিকে আরাবী ক্যাব’লাকান্তের মতো দাঁড়িয়ে। ভাবছে লোকটা একমুহূর্তে ওর সাথে কথা বললো।তাও কিভাবে?প্রথম কথাতেই ধম’কে ধাম’কে একাকার করে দিলো। আর ওইবা কি? মানছে লোকটা সুন্দর তাই বলে এইভাবে হা*বলার মতো তাকিয়ে থাকার কোন মানে হলো? কিভাবে তাকিয়েছিলো ও? লোকটা কি ভাববে এখন আরাবীকে?নিশ্চয়ই ভাববে আরাবী ছ্যা*ছড়া মেয়ে।নিজের মনে আরো শত রকম উল্টাপাল্টা ভাবনা চিন্তা করতে করতে নিচে নেমে আসলো আরাবীও।সাথি বেগম এগিয়ে এসে আরাবীকে টেনে নিয়ে আবারও নিজের পাশে বসালেন। নিহান সাহেব জায়ানের পক্ষ থেকে জানালেন তার ছেলের এই বিয়েতে কোন আপত্তি নেই। এখন আরাবী মতামত দিলেই হলো।জিহাদ সাহেব মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-‘ আরাবী,আম্মু তোমার কোন আপত্তি আছে এই বিয়েতে?’

আরাবী কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।কিইবা বলবে ও?ছেলে মেয়েদের আলাদা কথা বলতে পাঠালো তারা।অথচ আধাঘন্টা খামোখা সং সেজে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুজন।কেউ কোন কথা বলে নি।লাস্টে আসার সময় জায়ানই আগে কথা বললো কিন্তু ওটাকে কথা বলে না ওটাকে ধম’কাধম*কি বলে।এখন আরাবী তাদের এসব কথা কিভাবে বলবে?জিহাদ সাহেব আবারও একই প্রশ্ন করতে আরাবী নড়েচড়ে বসলো অপরপাশে সোফায় বসা লিপি বেগমের দিকে আঁড়চোখে তাকাতেই তিনি চোখ রা’ঙ্গিয়ে আরাবীকে ইশারা করলো হ্যা বলার জন্যে।আরাবী ঠোঁটে ঠোঁট চেপে আলতো করে মাথা দুলালো।সাথে সাথে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বললো।দীর্ঘশ্বাস ফেললো আরাবী।নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েও বাবা মায়ের খুশির জন্যে হ্যা বলে দিলো আরাবী।ভবিষ্যতে যা হবে দেখা যাবে।আরাবী জানে ওর বাবা কখনো ওর খারা’প চাইবে না।বাবার উপর সেই ভরসা আছে ওর।তাই আর দ্বিমত করলো না।।এদিকে সাথি বেগম হাসি মুখে বলে উঠেন,
-‘ ভাই সাহেব ছেলেমেয়েদের যেহেতু কোন আপত্তি নেই।আমরা চাইছিলাম বিয়েটা যেন খুব দ্রুতই হয়ে যাক।আপনার কোন আপত্তি আছে?’

জিহাদ সাহেব বলেন,
-‘ নাহ নাহ আমার কোন আপত্তি নেই, আলহামদুলিল্লাহ! ‘

নিহাদ সাহেব বলেন,
-‘ তাহলে এই মাসের তো আর পনেরোদিন আছে।তাহলে জিহাদ সাহেব সামনের মাসের ১ তারিখেই ওদের বিয়ের ফাইনাল ডেট। কি বলেন?’

-‘ জি আচ্ছা,আপনারা যা ভালো মনে করেন।’

সবার মতামতে আগামী মাসের ১ তারিখই বিয়ের দিন নির্ধারন করা হলো। জায়ানের পরিবার আরাবীকে আংটি পরিয়ে দিলেন আর পাঁচ হাজার টাকা সালামিও দিলেন।তারপর তারা সন্ধ্যার হালকা নাস্তা করে চলে গেলেন।রাতের ভোজনের জন্যে অনেক সাধলেন জিহাদ সাহেব আর লিপি বেগম কিন্তু তারা কেউ রাজি হলো না তাতে।জায়ান’রা চলে যেতেই জিহাদ সাহেব হেসে বলেন,
-‘ শুনলে লিপি আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আমার আরাবী আম্মুর এতো ভালো ঘরে বিয়ে হবে।অবশ্য হবে নাই বা কেন?আমার আম্মুর মতো মেয়ে লাখে একটা হয়।আমার আম্মাটা আমার কাছে সেরা।’

জিহাদ সাহেব মেয়েকে বুকে টেনে নিলেন।আরাবী চোখ বন্ধ করে বাবার বুকে মাথা ঠেকিয়ে রাখলো।তার বাবা এই বিয়েতে অনেক খুশি।আর বাবার খুশি জন্যে আরাবী সব করতে রাজি।কারন এই মানুষটাকে পৃথিবীর সবথেকে বেশি ভালোবাসে ও।

#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।সবার রেস্পন্স আশা করছি। আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যগুলো আমাকে লিখার অনুপ্রেরণা দেয়।

#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৩
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আরাবী। আপন ভাবনায় ব্যাকুল সে।মাথায় চিন্তার শেষ নেই।কি থেকে কি হয়ে গেলো হঠাৎ। কয়েকপলকের মাঝে ওর জীবনের মোড় পুরোই ঘুরে গেলো।হাতের দিকে তাকালো আরাবী।সেখানে মাঝের আঙুলে পরা আংটিটার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।আচমকা আংটিটায় হালকা স্পর্শ করলো আরাবী।স্পর্শ করা মাত্র হালকা কেঁপে উঠলো ও।আর মাত্র হাতে গোনা পনেরো দিন তারপরেই বাবা মায়ের আদরের কন্যা বিদায় নিয়ে চলে যাবে অন্যের বাড়ির বউ হয়ে। সারাজীবনের জন্যে একজন পুরুষের সাথে ওর জীবন জুড়ে যাবে ওর।স্বামি স্ত্রীর পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হবে ওরা।লম্বা শ্বাস ফেললো আরাবী।সকল চিন্তা চেতনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলো।যা হবার তা হবেই খামোখা টেনশন করে লাভ নেই।আরাবী রুমে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো। তৎক্ষনাত দরজায় হুলস্থুলভাবে কেউ বা’রি দিতে লাগলো।আরাবী ভড়কে গেলো এমন করায়। দ্রুত পায়ে গিয়ে রুমের দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই আরাবীর ছোট বোন ফিহা হুরমুরিয়ে ওর রুমে প্রবেশ করলো।আরাবী ভ্রু-কুচকে তাকালো ফিহার দিকে।এদিকে ফিহা আরাবীর পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করে বললো,
-‘ কিরে তোর না-কি বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে? আব্বু বললো।’

আরাবী ড্রেসিংটেবিলের দিকে যেতে যেতে বলে,
-‘ আব্বু যেহেতু বলেছো তাহলে তাই হবে।’

ফিহা রেগে গেলো আরাবীর কথায়।রাগি গলায় বলে,
-‘ বিয়ে ঠিক হতে না হতেই তোর ভাব বেড়ে গিয়েছে তাই নাহ আরাবী?’

আরাবী শান্ত কন্ঠে বলে,
-‘ সম্মান দিয়ে কথা বল ফিহা।আমি তোর বড় বোন।’

-‘ বড়বোন মাই ফুট।তোকে বড়বোন মানে কে? তোকে কোন দিক দিয়ে আমার বোন মনে হয়? আমার সাথে তো তোর কিছুই মিল নেই।বা চেহারায় না গায়ের রঙে।সো নিজেকে আমার বোন বলবি না কোনদিন।’

আরাবী’র চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো ফিহার কথায়।মেয়েটা এতো বেয়া*দপ হচ্ছে দিন দিন।কারো পরোয়া করে নাহ।মানুষকে নূন্যতম সম্মানটাও করতে জানে নাহ এই মেয়ে।আরাবী শক্ত গলায় বলে,
-‘ ফিহা আমার রুম থেকে বের হো।তোর এসব অহেতুক কথা আমি শুনতে চাই নাহ।’

-‘ যাবো না কি করবি তুই?’

আরাবী এবার বেশ চটে গেলো।রাগি আওয়াজে বলে,
-‘ ফিহা আমি কিন্তু তোকে থাপ্পর দিতে বাধ্য হবো। বের হো আমার রুম থেকে।’

কথাগুলো বলে আরাবী হাত উঁচিয়ে ফিহা রুম থেকে বের হবার জন্যে ইশারা করলো।ওমনি ফিহা নজরে আসে আরাবী হাতে পরিহিত স্বর্ণের আংটিটা।ফিহা দ্রুত পায়ে এসে আরাবীর হাত চেপে ধরলো। আচমকা এমন করায় বেশ অবাক হলো আরাবী।নিজের হাত ছাড়াতে চাইলো ফিহা থেকে।কিন্তু ফিহা ছাড়ছে নাহ।আরাবী বিরক্ত হয়ে বললো,
-‘ কি করছিস ফিহা? হাত ছাড়।’

ফিহা আরাবীর হাতের আংটিটা টেনে খুলার চেষ্টা করতে করতে বলে,
-‘ এই আংটিটা অনেক সুন্দর। আমাকে দে না আমি একটু পরি।দু তিন দিন হাতে দিয়ে তারপর তোকে ফেরত দিয়ে দিবো।’

-‘ ফিহা কি হচ্ছে কি এসব?ছাড় আমার হাত।ছাড়।’

ফিহা আর আরাবী ধস্তাধস্তি শুরু করে দিলো।ফিহা আংটিটা খুলার চেষ্টা করতে লাগলো।আরাবী সহ্য করতে না পেরে ফিহাকে সজোড়ে ধাক্কা মারলো।ফিহা ছিটকে পরলো গিয়ে বিছানার উপর।আরাবী হাত চেপে ধরলো।ফিহা শক্ত করে হাত ধরায় হাতের কব্জিতে বেস ব্যাথা পেয়েছে আরাবী।আবার যেই আঙুলে আংটি পরা সেই আঙুলটাও অনেক খানি ছি*লে গিয়েছে।র’ক্ত বের হচ্ছে।এদিকে বিছানায় পরে গিয়ে ফিহা ন্যাকা কান্না করতে লাগলো চিৎকার করে।
-‘ আম্মু, আব্বু, ভাইয়া দেখে যাও আরাবী আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।আম্মুউ!’

ফিহা একটুও ব্যাথা পায়নি শুধু শুধু অভিনয় করছে।এদিকে ফিহার কান্না শুনে সবাই ছুটে আসলো আরাবীর রুমে।লিপি বেগম গিয়ে ফিহাকে আঁকড়ে ধরলো।জিহাদ সাহেব আরাবীর কাছে গেলেন দ্রুত।কারন তিনি দেখেছেন আরাবীর হাত থেকে র’ক্ত ঝরছে। লিপি বেগম রাগি গলায় আরাবীকে বলে,
-‘ কি সমস্যা তোর? ফিহাকে কেন ধাক্কা দিয়েছিস তুই?’

আরাবী মাথা নিচু করে নিলো।চাপা আওয়াজে বলে,
-‘ আমি ইচ্ছে করে ধাক্কা দেইনি আম্মু।’

-‘ চুপ একদম ন্যাকা সাজবি নাহ।তুই যে ফিহাকে দেখতে পারিস না তা আমি ভালোভাবেই জানি।’

-‘ কি বলছো আম্মু।এমনটা কেন হবে? ফিহা আমার বোন।’

ফিহা এই কথা শুনে চেচিয়ে বলে,
-‘ একদম আমাকে নিজের বোন বলবি না। তুই আমাকে বোন মানিসই না। তাহলে কি তুই আমাকে ধাক্কা দিতি?’

-‘ ফিহা তুই তো আমার সাথে জোড়জুড়ি করছিলি?’

-‘ একদম মিথ্যা বলবি না আরাবী।নাহলে আমি তোকে চড় মারবো বলে দিলাম।’

লিপি বেগমের ধমকে চুপ হয়ে গেলো আরাবী।এদিকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আরাবীর বড় ভাই ফাহিম।এতোক্ষন সে চুপচাপ সব দেখছিলো।মেজাজ তু’ঙ্গে উঠে গিয়েছে ওর।ফাহিম একটা কোচিং সেন্টারে পড়ায়।ফিহাও সেখানে পড়ে।ফাহিমের পড়ানো শেষ হলে ফিহাকে নিয়েই একেবারে বাড়ি ফিরে আসে ফাহিম। আজকেও তাই হয়েছে।ফ্রেস হয়ে আসতেই ওর বাবা জানায় আরাবীর বিয়ে ঠিক হয়েছে তাও তার বাবার অফিসের বসের ছেলের সাথে।শুনে খুব খুশি হয় ফাহিম।কিন্তু এই কথাটা শুনার সাথে সাথে ফিহা যে উঠে আরাবীর রুমের দিকে গিয়েছে সেটা ও লক্ষ করেছে।তাই নিজেও পিছু পিছু এসেছে।সে জানে ফিহার স্বভাব কেমন।এবং এতোক্ষন যা হচ্ছিলো সবই দেখেছে ও। ফাহিম রাগি চোখে ফিহার দিকে তাকিয়ে বলে,
-‘ মিথ্যা আরাবী না মিথ্যা বলছে ফিহা।ফিহা এসেই আরাবীকে ওর শশুড়বাড়ি থেকে পরিয়ে যাওয়া আংটিটা নেওয়ার জন্যে টানাটানি করছিলো।আরাবী হাতে ব্যাথা পাওয়ার কারনেই ফিহাকে ধাক্কা দিয়েছে।আমি নিজেই সব দেখেছি।’

-‘ ভাই..ভাইয়া কি বলছো তুমি এসব?’

জিহাদ সাহেব ধমকে উঠলেন ফিহাকে,
-‘ বেয়াদ*প মেয়ে।বড়বোনের এনগেজমেন্টের আংটি নেওয়ার জন্যে এসব করতে তোমার লজ্জা করলো নাহ? যাও নিজের ঘরে যাও। নাহলে চড়িয়ে গাল লাল করে দিবো।’

ধমক খেয়ে ফিহা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো নিজের রুমে। লিপি বেগম এইবার ফাহিমকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-‘ সামান্য একটা আংটির জন্যে আরাবী এমন করলো।আর তুই ফিহাকে এর জন্য দোষ দিচ্ছিস।’

জিহাদ সাহেব বেশ রুক্ষ কন্ঠে বলেন,
-‘ এটা সামান্য আংটি না লিপি সেটা তুমিও জানো।এটা ওর বাগদানের আংটি।’

লিপি বেগম কিছু বলতে নিবেন তার আগেই জিহাদ সাহেব তাকে থামিয়ে বলেন,
-‘ আমি আর কিছু শুনতে চাই না।তোমার গুনধর ছোট মেয়ের কাছে যাও তুমি।এই বিষয়ে যেন আর কোন কথা না উঠে।আর ফিহা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিও বড়বোনের সাথে কিভাবে বিহেব করতে হয়।’

লিপি বেগম স্বামি কথায় দমে গেলেন। রাগি চোখে আরাবীর দিকে তাকিয়ে চলে গেলেন।ফাহিম এইবার এগিয়ে এসে বলে,
-‘ বাবা যাও তুমি রুমে যাও।খাওয়ার আগে তোমার মেডিসিন আছে।আমি আরাবীকে দেখছি যাও তুমি।’

ছেলের কথায় জিহাদ সাহেব আরাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তারপর চলে গেলেন।তিনি যেতেই ফাহিম আরাবীকে ধরে বিছানায় বসালো।তারপর ফার্স্টএইড বক্স এনে আরাবীর হাতটা ব্যান্ডেজ করে দিলো।আরাবী মাথা নিচু করে আছে।ফাহিম আরাবীর মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে বলে,
-‘ তুই এতো তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেলি কিভাবে বলতো আরাবী? তোর নাকি বিয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছে।বাবার কাছে কথাটা শুনে একটু রাগ লেগেছিলো।এভাবে হুটহাট কি কোন কিছু হয় বল? পরে যখন শুনলাম বাবার অফিসের বস নিহান সাখাওয়াতের ছেলে জায়ান সাখাওয়াতের সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে ততোটাই খুশি হলাম।ছেলেটা অনেক ভালো।আমার থেকে দু ব্যাচ সিনিয়র ছিলো সে ভার্সিটিতে ।তাই তাকে বেশ ভালোভাবেই চিনি আমি।ছেলেটা একটু গম্ভীর তবে মনের দিক দিয়ে বেশ ভালো।আমি যতোটুকু দেখেছি।’

আরাবী কিছু বললো না চুপ করে রইলো।ফাহিম এইবার ধীর আওয়াজে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ তুই কি এই বিয়েতে রাজি আরাবী?’

আরাবী হাসিমুখে তাকালো ভাইয়ের দিকে তারপর বলল,
-‘ আমার আব্বু আর ভাইয়া যেহেতু বলছে এখানে বিয়ে হলে আমি সুখে থাকবো।আর তারা যেহেতু রাজি তাই আমিও রাজি।আর আমার যেহেতু কোন পছন্দ নেই।তাই তোমাদের পছন্দই আমার পছন্দ ভাইয়া।আমি এই বিয়েতে খুশি।হয়েছে?এটাই তো শুনতে চেয়েছিলে তুমি?’

ফাহিম হেসে আরাবীর গাল টেনে দিলো,
-‘ সব জানিস দেখি।’

-‘ তোমার বোন বলেই তো সব জানি।’

ফাহিম বোনকে বুকে টেনে নিলো।আরাবীও ভাইকে জড়িয়ে ধরলো।ওর আব্বু আর ভাই যেহেতু বলেছে লোকটা ভালো আর ফ্যামিলিও ভালো।তাহলে আরাবীর আর কোন চিন্তা নেই।ওর আব্বু আর ভাই ওর জন্যে বেস্ট’টাই সিদ্ধান্ত নিবে ও জানে।
_____________
নূর আর ইফতি ফিসফিস করছে।নূর হলো জায়ানের ছোট বোন।নূর বলছে,
-‘ ইফতারি ভাইয়া জায়ান ভাইয়ার কি হয়েছে বলোতো?’

ইফতি নূরের কথায় বিরক্ত হয়ে তাকালো নূরের দিকে।চাপা ধমকে বলে,
-‘ বেয়া*দপ মেয়ে।ইফতারি কি হ্যা? আমার নাম ইফতি ঠিকঠাকভাবে বল।নাহলে থাপ*ড়িয়ে কান লাল করে দিবো।’

নূর মুখ কালো করে বললো,
-‘ আমি তোমাদের দুই ভাইয়ের একবোন আমাকে মা*রতে পারবে তুমি?’

ইফতি রাগি কণ্ঠে বললো,
-‘ তাহলে তুই উল্টাপাল্টা নামে ডাকিস কেন আমায়?’

-‘ উফ,আচ্ছা বাদ দেও।এটা বলো ভাইয়া আমাদের ভাবিকে দেখে কি রিয়েকশন দিয়েছিলো?’

-‘ কি আর রিয়েকশন দিবে?ব্যাটা জন্মের নিরামিষ।ওর মতো আমি আর কাউকে দেখি নি।’

নূর ভাব নিয়ে বললো,
-‘ দেখবা কেমনে আমার জায়ান ভাইয়ার মতো একপিছই হয়।’

ইফতি নূরের মাথায় চা*টি দিয়ে বলে,
-‘ ও মানুষ না রোবট।’

-‘ উফ, ভাইয়া মারলা কেন?’

-‘ তোরা দুটো বের হো আমার রুম থেকে।আমার কাজে সমস্যা হচ্ছে।’

ওদের খুনশুটির মাঝে হঠাৎ জায়ানের গম্ভীর গলার আওয়াজে দুজনেই ভড়কে গেলো।নূর নিজেকে সামলে নিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে,
-‘ ভাইয়া বলছিলাম কি…’

জায়ান নূরকে আর বলতে দিলো না।তার আগেই ওকে থামিয়ে দিয়ে নিজে বলে,
-‘ কোনরকম অযথা কথা বললে এখনই চুপ যা।’

-‘ আরে ভাইয়া শুনে তো নিবে আমি কি বলি।’

-‘হু!’

-‘ বলছিলাম কি ভাবি কে দেখে তোমার কেমন লেগেছে।’

নূরের প্রশ্নে জায়ানের তেমনটা একটা পরিবর্তন দেখা গেলো না।জায়ান ল্যাপটপে আঙুল চালাতে চালাতে উত্তর দিলো,
-‘ হু,ভালো।’

হতাশ হলো নূর আর ইফতি।এতো ইনিয়েবিনিয়ে প্রশ্নটা শেষমেষ করলো ওরা।আর জায়ান উত্তর দিলো কি এটা? ‘ হু,ভালো।’ এটা কোন উত্তর হলো?
ওদের ভাবনার মাঝে জায়ান ল্যাপটপ কোল থেকে রেখে তীক্ষ্ণ চোখে নূর আর ইফতির দিকে তাকিয়ে বলে,
-‘ আর কিছু আস্ক করবি?নাহলে যা বের হো।’

নূর মুখ ফুলিয়ে নিলো।তার এই ভাইকে কিছু জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। শুধু ত্যাড়াব্যাকা উত্তর দিবে। নূর ইফতির হাত ধরে টানতে টানতে জায়ানের রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। তারপর ইফতিকে ঝারি দিয়ে বলে,
-‘ কেমন মানুষ তুমি।ভাইয়া আর ভাবি ছাদে একা কথা বলতে গেলো তুমি একটু লুকিয়ে চুরিয়ে দেখবা না ওরা কি করছিলো তখন।’

ইফতি বিরক্ত হলো নূরের এতো বকরবকর শুনে।বললো,
-‘ থামবি তুই?আমি বেহা*য়া নাকি বড় ভাই আর ভাবি একা একা কি করছিলো তা উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখবো।চল এখান থেকে জলদি ভাইয়া নাহলে রেগে যাবে।’

ইফতি নূরকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।এদিকে জায়ান ওদের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।ধীর আওয়াজে বললো,
-‘ আমার মনের অনুভূতি সম্পর্কে জানাটা এতো সহজ ব্যাপার না।যাকে আমি মন দিয়েছি সে ছাড়া আমার চোখের ভাষা,আমার মনের অনুভূতি কেউ বুঝবে নাহ।’

তারপর ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে বিরবির করলো,
-‘ আর মাত্র পনেরো দিন।’

#চলবে___________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।গল্পে রেস্পন্স এতো কমে গেলো কেন হঠাৎ? ভালো লাগছে না গল্পটা?🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here