হৈমন্তীকা পর্ব ৩+৪

হৈমন্তীকা

৩.
তুষারের চিন্তায় ঘুম আসছে না হৈমন্তীর। ছেলেটার পাগলামি দিন দিন বাড়ছেই। এমতাবস্থায় হৈমন্তীর কি করা উচিত? চড়, থাপ্পড়, অপমান, কিছুই তো বাকি রাখে নি সে। তবে হ্যাঁ, তুষারের বাবাকে নালিশ দিলে কিছু একটা হতে পারে হয়তো। কিন্তু হৈমন্তীর মন সায় দেয় না এতে। তুষারের জন্যে অদ্ভুদ মায়া হয়। মতিভ্রষ্ট হয়ে কিভাবে মরিচীকার পিছু ছুটতে ছেলেটা! তুষার যা চায় তা কি আদৌ সম্ভব? হৈমন্তী দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ঘুম আর আসবে না তার। মাথা ভীষণ ব্যথা করছে। এখন একটু কড়া চা খেলে মন্দ হয় না। যেই ভাবা সেই কাজ! রান্নাঘরে গিয়ে চা বানিয়ে আনলো সে। মুক্ত বাতাসের মাঝে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।

বিল্ডিংটা পাঁচ তলা। হৈমন্তীর পরিবার দু’তলায় থাকে। আর তুষাররা থাকে তিন তলা। হৈমন্তীর বারান্দার সঙ্গে তুষারের রুমের বারান্দা উপর-নিচ লাগানো। হৈমন্তী যখন চা খাচ্ছিল তখন হঠাৎ উপর থেকে তার চায়ের কাপে ছোট্ট একটা পাথর টুপ করে এসে পরলো। ফলসরুপ কাপে থাকা কিছু চা ছিটকে পরলো তার হাতে। সূক্ষ্ণ ব্যথায় অল্প চেঁচিয়ে উঠল হৈমন্তী। দ্রুত কাপটি টেবিলে রেখে ফু দিতে লাগলো হাতে। তখনি আবারও একটা ছোট্ট পাথর এসে পরলো তার বারান্দার মেঝেতে। তবে এবারের পাথরটা ভিন্ন। পাথরের গায়ে মোড়ানো রয়েছে একটি হলুদ রঙের কাগজ। হৈমন্তী এগিয়ে গেল সেদিকে। কাগজটা নিয়ে খুলতেই চমৎকার হাতের লেখা ভেসে উঠল তার সামনে,

‘দুঃখীত হৈমন্তীকা। আমি ইচ্ছে করে ফেলি নি পাথরটা। আপনি কি বেশি ব্যথা পেয়েছেন?’

লেখাটা পড়ে ভড়কে গেল হৈমন্তী। উপরে উঁকি দিতেই দেখতে পেল তুষারকে। তার মতো করে সেও বারান্দার রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। ভড়াকানো গলায় ক্ষীণ স্বরে হৈমন্তী বলে উঠল,
— “আপনি এখানে কি করছেন? আর এগুলো কি ধরণের বেয়াদবি? কাপে পাথর ফেলেছেন কেন?”
— “আমি তো সরি বলেছি হৈমন্তীকা। চাইলে এন্টিসেপ্টিকও দিতে পারি। রুমে আছে, দিব?”
— “লাগবে না আপনার এন্টিসেপ্টিক। কালকে না আপনার ক্লাস আছে? এত রাতে না ঘুমিয়ে এখানে কি করছেন?”
— “একই প্রশ্ন তো আমিও করতে পারি। আপনি এত রাতে না ঘুমিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন কেন হৈমন্তীকা?”

হৈমন্তীর কপালে সূক্ষ্ণ ভাঁজ পরলো। কণ্ঠে তেজ এনে বললো,
— “আমার যা ইচ্ছে আমি করবো। আপনাকে কৈফিয়ত দিতে হবে কেন? যান, রুমে গিয়ে ঘুমান।”
ওপাশ থেকে একরোখা উত্তর, “যাবো না।”
রাগে হৈমন্তীর নাক কাঁপতে শুরু করলো। ছেলেটা এত ঘাড়ত্যাড়া! তুষারের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছেই মিইয়ে গেল তার। টেবিল থেকে কাপ উঠিয়ে ক্ষীপ্ত কণ্ঠস্বর ছুঁড়ে দিলো,
— “আপনি থাকুন! আমিই চলে যাচ্ছি!”

তুষার রেলিং গলিয়ে খানিক ঝুকল। হৈমন্তীর যাওয়ার দিকে স্থির দৃষ্টি মেলে ম্লান হাসলো মাত্র।

_____________

পরেরদিন ছিল রবিবার। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস হতে এখনো ১ঘন্টা বাকি। হৈমন্তী আজ একটু তাড়াতাড়িই চলে এসেছে ভার্সিটি। সাথে রয়েছে তার প্রিয় বান্ধবী পারু। তারা দুজনে মিলে ক্যান্টিনে বসে ছিল। স্যান্ডউইচ খেতে খেতে পারু বেশ আহ্লাদী স্বরে বললো,
— “তোকে যে ছেলেটা পছন্দ করে… কি যেন নাম?”
হৈমন্তী আগ্রহহীন ভাবে জবাব দিলো, “তুষার।”
— “ও হ্যাঁ তুষার। ছেলেটা কি এখনো তোর পেছনে ঘুড়ে?”
— “হ্যাঁ।”
— “কিছু বলিস নাই?”
— “কালকে চড় মেরেছিলাম ডান গালে।”

শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো পারু। কণ্ঠে একরাশ বিস্ময় ঢেলে বললো,
— “ডাইরেক চড় মেরে দিলি? এত সুন্দর একটা পোলারে চড় মারতে তোর বুক কাঁপলো না হৈমন্তী? তুই এত পাষাণ? আমি হইলে তো কবে হ্যাঁ বলে দিতাম। ছেলেটার কপালটাই আসলে খারাপ! তোর মতো দজ্জাল মহিলাকে পছন্দ করছে!”

হৈমন্তী চোখ মুখ কুঁচকে তাকালো। বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে উঠল,
— “তুই আমার বন্ধু নাকি ওর? ওর এত গুণগান গাইছিস কেন? এ বিষয়ে আর একটা কথাও বলবি না পারু। ওর নাম যেন তোর মুখে আর না শুনি!”
পারু স্যান্ডউইচে অল্প কামড় দিয়ে ঠোঁট উলটে বললো,
— “এভাবে বলছিস কেন?”
— “চুপ থাক!”
পারু সত্যি সত্যি চুপ হয়ে গেল এবার। আর একটা কথাও বললো না।

কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরই হৈমন্তী জিজ্ঞেস করল,
— “কয়টা বাজে পারু?”
— “৯ টা চল্লিশ। তোমাদের ক্লাস তো একটু পরেই তাই না?”
পারু কিছু বলবে, তার আগে আগেই পেছন থেকে পুরুষালী কণ্ঠে কেউ বলে উঠল কথাটা। হৈমন্তী ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো। অচেনা এক ছেলে দাঁড়িয়ে আছে তাদের একটু দূরেই। সে এগিয়ে আসলো এবার। অনুমতি ছাড়াই হৈমন্তীর পাশের চেয়ারে বসে পরলো। এক হাত এগিয়ে হৈমন্তীর উদ্দেশ্যে বললো,
— “আমি ইভান। তোমার এক বছরের সিনিয়ার। কেমন আছো?”

আকস্মিক এমন ঘটায় বিব্রতবোধ করল হৈমন্তী। হাত না মিলিয়েই ম্লান হেসে বললো,
— “জি ভালো আছি। আমি আসলে আপনাকে ঠিক চিনলাম না। আপনি কি আমাকে চিনেন?”
হাত না মেলানোয় খানিক অপমান বোধ করলো ইভান। তবে মুখে তা প্রকাশ পেল না। হাত গুটিয়ে স্বাভাবিক হেসেই বললো,
— “জুনিয়রদের সব খবরাখবর থাকে আমাদের কাছে। তুমি আমাকে চেনো না রাইট? সমস্যা নেই। কিছুদিন যাক। চিনে যাবে।”

কথাটা কেমন যেন লাগলো হৈমন্তীর। পছন্দ হলো না। তবুও ভদ্রতা রক্ষার্থে ক্ষীণ হাসলো সে। ইভানের একটা বন্ধু তাকে ডাকতেই সে বিদায় জানিয়ে চলে গেল। হৈমন্তী হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেন! সুদীর্ঘ শ্বাস ফেলে পাশে তাকাতেই ভয়ে মাথা পিছিয়ে নিলো। তার পাশে বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুষার। তাকিয়ে আছে তো তাকিয়েই আছে! চোখের পলক ফেলেছে না একদমই। হৈমন্তী বুকে হাত রেখে বড় বড় নিশ্বাস নিলো। হুট করে তুষারকে দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিল সে। একটু শান্ত হতেই রাগী গলায় বললো,
— “সমস্যা কি আপনার? এমন ভূতের মতো চলাফেরা করেন কেন?”

সেকথার জবাব দিলো না তুষার। উলটো গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলো, “ছেলেটা কে?”
— “মানে?”
— “একটু আগের ছেলেটা কে?”
— “আপনাকে কেন বলবো?”
টেবিল থেকে পানির বোতল নিলো তুষার। আলতো চুমুক দিয়ে কাঠাকাঠ ভাবে বললো,
— “আমার হবু বউয়ের ওপর লাইন মারছিল সে, হৈমন্তীকা! আর আমার জানা লাগবে না ছেলেটা কে?”

__হৈমন্তীকা

৪.
টেবিলের ওপর মাথা রেখে একমনে সেন্টারফ্রুড চিবুচ্ছে তুষার। তার দৃষ্টি কোথায় যেয়ে ঠেকেছে ঠিক বুঝতে পারছে না হৈমন্তী। সর্তক চাহনিতে পর্যবেক্ষণ করে নিচ্ছে তুষারকে। তাকে দেখলে মনে হয় না সে হৈমন্তীর চেয়ে ছোট। বরং উচ্চতায় ও শারীরিক গঠনে বরাবরই তুষার হৈমন্তীর উর্ধে। গায়ের রঙটাও তার চেয়ে উজ্জ্বল। প্রশস্ত বুক, পেটানো শরীর, দুই বাহু ফুলে ফেঁপে আছে। চেহারায় এক আলাদাই মায়ার ফলন। আঁখি জোড়ার মণি একটু বেশিই বাদামী নয়? হ্যাঁ, অন্যদের থেকে একটু বেশিই বাদামী তুষারের চোখের মণি। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিঁজিয়ে নিলো হৈমন্তী। তুষারের প্রতি আরেকটু মনোযোগী হতেই তুষারের দৈবাৎ কথায় ভড়কে গেল সে।

— “এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছেন কেন হৈমন্তীকা? আমি তো আপনারই, ভালো ভাবে দেখুন।”

হৈমন্তী হকচকালো। দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলো। খানিক লজ্জাও পেল। এভাবে তাকানো উচিত হয় নি তার। তাকানোর ই-বা কি প্রয়োজন ছিল? নিজের ওপর প্রচন্ড রাগ হলো হৈমন্তীর। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল, ঘড়ির কাটা নয়টা পঞ্চান্নতে এসে ঠেকেছে। একটু পরেই ক্লাস শুরু হবে। চেয়ার থেকে ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে। গম্ভীর সুরে বললো,
— “মরীচিকার পেছনে না ছুটে পড়াশোনায় মন দিন তুষার। আপনার না এখন ক্লাস চলছে? ক্লাস বাদ দিয়ে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করছেন কেন?”

জবাবে বিস্তর হাসলো তুষার। আয়েশি ভঙ্গিতে বসে দু’হাত উঁচিয়ে আড়মোড়া ভাঙলো। এরপর পেটে হাত রেখে মন খারাপ করে বললো,
— “আমার ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে হৈমন্তীকা। কিছু কিনে দিন তো! খাবো।”

হৈমন্তী চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। পরক্ষণেই পারুকে ইশারায় উঠতে বলে ক্যান্টিনের কর্মরত ছোট্ট ছেলেটিকে ডেকে বললো,
— “মিন্টু, তোর এ ভাই যা চায় তাকে দেয়। আমি ক্লাস শেষে এসে টাকা দিয়ে দেবো।”

মিন্টু অন্যান্য টেবিল মুছছিল তখন। হৈমন্তীর কথা শুনে উপর-নিচ মাথা নাড়ালো শুধু। তুষার উদাসীন গলায় বললো,
— “আমি যা চাই তা এ বাচ্চা ছেলে দিতে পারবে না হৈমন্তীকা।”
— “মানে?” বিহ্বল কণ্ঠে প্রশ্ন ছুড়লো হৈমন্তী।
তুষার আগেই মতোই বললো,
— “আমি তো আপনাকে চাই হৈমন্তীকা। খুব করে চাই। ও কি আমার হৈমন্তীকাকে আমাকে দিতে পারবে?”

হৈমন্তী ফোঁস করে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাঁড়লো। এই ছেলের সাথে কথা বলাই বেকার। কিসব উদ্ভট কথাবার্তা বলে! হৈমন্তীর ইচ্ছে করে, তুষারের কান আচ্ছামতো মলে দিতে। নিজের ইচ্ছেটাকে সংযত রাখলো সে। আড়চোখে একবার তুষারকে দেখে পারুকে নিয়ে চলে যেতে লাগল সেখান থেকে।
পেছন থেকে তুষার উঁচানো গলায় বলে উঠল,
— “আমার উত্তরটা এখনো দেন নি হৈমন্তীকা!”

হৈমন্তী দাঁড়ালো। তবে পেছনে ফিরল না। তুষার প্রশ্ন করলো,
— “ছেলেটা কে হৈমন্তীকা?”
তখনকার মতো এবারও প্রত্যুত্তরে কিছুই বললো না হৈমন্তী। পা চালিয়ে তুষারের দৃষ্টির বাহিরে চলে গেল।

___________________

ভার্সিটি শেষে পরিচিত বিল্ডিংয়ের কাছাকাছি আসতেই বেশ অনেকখানি ক্লান্ত হয়ে পরলো হৈমন্তী। দারোয়ান চাচা তাকে দেখে মুচকি হাসলেন। স্নেহপূর্ণ কণ্ঠে বললেন,
— “আইজ তোমারে বেশি কেলান্ত দেখাইতেছে যে? কলেজ আলারা বেশি খাটাইছে নাকি?”
হৈমন্তীও একটু করে হাসলো। বললো,
— “হ্যাঁ চাচা। একেবারে জান বের করে দিছে।”
— “যাও! যাও! তাত্তাড়ি বাসায় গিয়া বিশ্রাম নাও। ভালা লাগবে।”

জবাবে হৈমন্তী মাথা হেলিয়ে সম্মতি দেয়। গেট পেরিয়ে উঠোনের দিকে নজর যেতেই দেখতে পায় তুষারকে। মাথা নিচু করে বেঞ্চে বসে আছে সে। তুষারদের ক্লাস বহু আগেই শেষ হয়েছে। ও বাসায় না গিয়ে এখানে বসে আছে কেন? মস্তিষ্কে কৌতূহল জাগলেও বিষয়টা অত ঘাটালো না হৈমন্তী। তবে আরেকটু আগাতেই স্পষ্ট হয়ে এলো তুষারের মুখশ্রী। তার কপালের ডান পাশটা রক্তে শোভিত হয়ে আছে। হাতের আঙ্গুলেও রক্তের খানিক অস্তিত্ব বিরাজমান। হৈমন্তী আঁতকে উঠল। দ্রুত পদে তুষারের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। কাঁপা স্বরে ডাকলো, “তুষার?”

সে ধীর স্থির ভঙ্গিতে তাকালো। দৃষ্টি অত্যাধিক স্বাভাবিক ও শীতল। হৈমন্তীর কাছে ভালো ঠেকলো না সেই চাহনি। ভেতরটা দারুণ ভাবে কেঁপে উঠল। তুষার তখন মিহি স্বরে জবাব দিলো,
— “হু?”
— “আপনার এ অবস্থা কিভাবে?”
— “জানি না।”

কলেজের সাদা শার্টের বুকের দিকটায় রক্ত লেগে আছে। কপাল বেয়ে রক্তের বিন্দুকণা গড়িয়ে পরতেই ব্যস্ত হয়ে পরলো হৈমন্তী। তুষারে পাশে বসলো। ব্যাগ থেকে কি যেন বের করতে করতে কাঁপা কণ্ঠে তেজের অস্তিত্ব ঢেলে বললো,
— “ডাক্তার দেখান নি কেন এখনো? এখানে এভাবে বসেই-বা আছেন কেন?”

তুষার জবাব দিলো না। নির্নিমেষ চেয়ে রইল হৈমন্তীর ব্যথাতুর আঁখি জোড়ার পানে। হৈমন্তীর সেদিকে খেয়াল নেই। ব্যাগ থেকে বেন্ডেজ বের করে কোনোভাবে লাগিয়ে দিলো তুষারের ক্ষত স্থানে। হাতের ক্ষতগুলোর জন্যও বেন্ডেজ বের করতে গিয়ে জানতে পারলো, তার কাছে আর বেন্ডেজ নেই।
বিরক্তি সূচক নিশ্বাস ফেলল হৈমন্তী। তুষারের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— “ডাক্তার না দেখিয়ে এখানে বসে ছিলেন কেন?”
— “আপনার জন্য।” তুষারের সাদামাটা উত্তর।

হৈমন্তীর রাগ আরও বাড়লো। তুষারের হাতের ক্ষত চেপে দিলো সে। তুষার প্রথমে ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠলেও, পরক্ষণেই সশব্দে হাসতে লাগল। বাম গালের সূক্ষ্ণ টোলটা বেড়িয়ে এলো তখন। আলতো হাতে হৈমন্তীর নাক ছুঁয়ে দিয়ে মোলায়েম স্বরে তুষার আওড়ালো,
— “সর্বদা নাকের ডগায় রাগ নিয়ে ঘোরেন কেন হৈমন্তীকা? ভালোবাসতে পারেন না? একবার ভালোবেসে দেখুন। উজার করে দিব সব!”

কিন্তু তুষারের আবেগী কথায় মন গললো না হৈমন্তীর। সে কাঠাকাঠ গলায় প্রশ্ন ছুড়লো,
— “কার সাথে মারামারি করে নিজের এ অবস্থা করেছেন?”

কিঞ্চিৎ নড়ে উঠল তুষার। চেহারায় পরিবর্তন এলো। গম্ভীর হলো সে। তবে কোনোরূপ জবাব দিলো না। হৈমন্তী আবারও প্রশ্ন করলো,
— “কথা বলছেন না কেন তুষার?”
তুষার এবারও নিশ্চুপ। হৈমন্তী কিছু সময় চুপ থেকে কি যেন ভাবলো। অতঃপর আটকে আসা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— “আপনি কি ইভানকে কিছু করেছেন তুষার?”
এতক্ষণে তুষার বললো,
— “কোন ইভান হৈমন্তীকা?”
— “মোটেও না চেনার ভান করবেন না তুষার। সত্যি করে বলুন, আপনি কার সঙ্গে মারামারি করে এসেছেন?”
তুষার নিষ্প্রভ স্বরে বললো,
— “ওই ছেলেটা একদম ভালো না হৈমন্তীকা। আপনার সঙ্গে টাইমপাস করতে চেয়েছিল সে।”

হৈমন্তীর আর বুঝতে আর বাকি রইলো না কিছু।

___________________

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here