#হয়ত
পর্ব:- ৩৩
.
-‘ We inadvertently fall in love. But true love is not easy to find….কী মনে হয়, বর্ষণ ভাইয়ের প্রতি তোর ভালোবাসা সত্যিকারের ভালোবাসা?’
-‘ হঠাৎ সাহিত্যিক হয়ে গেলি যে?’
-‘ খারাপ লাগছে তোর জন্য।’
-‘ সীমা আমার ভালোবাসা সত্যি না মিথ্যা তা তো আমি জানি না। তবে আমাদের গল্পের সমাপ্তি ঘটেছে। No matter how it ended. It will always remain ever fresh in my heart.’
-‘ গেম অফ ট্রোন্স।’
তাপৌষি সীমার কথায় হেসে দিল। বাড়ি থেকে বের হয়ে এই ছোট ঘরে থাকতে ওর খারাপ লাগছে না। বরং নিজেকে মুক্ত বিহঙ্গ মনে হচ্ছে।
-‘ আরেকটু ভাত নে।’
-‘ না এই মেলা। আর না।’
-‘ সারাদিন তো পেটে কিছুই পড়েনি। আরেকটু নে।’
-‘ এই টুকু সময়ে তুই যা খাওয়ালি তা সারাদিনের খাবারকেও হার মানাবে।’
-‘ তাপৌষি..’
-‘ বলে ফেল।’
-‘ আঙ্কেল সত্যি কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় নি তোর চলে আসাকে কেন্দ্র করে?’
-‘ হুম…. দেখিয়েছে তো। বলেছে মুখের উপর কথা বলার ট্রেনিং আমি মা’য়ের কাছে থেকে পেয়েছি। ধীরে ধীরে মা’য়ের মতো একটা বেয়াদব হচ্ছি।’
সীমা গভীর নিশ্বাস ফেলে তাপৌষিকে কিছুক্ষণ দেখল। তারপর বলল,
-‘ তোকে একবারের জন্যও আটকাল না?’
-‘ না। খুব সুন্দর একটা মহিলা হোস্টেল খুঁজে পেয়েছিল আমাকে রাখার জন্য জানিস? আমি বাবার ঠিক করা হোস্টেলে থাকছি না বলে রাগ দেখিয়েছে সামান্য। তবে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে আমার হাতে পাঁচ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়েছে। আসার সময় বাবার হাতে এই ছিল। শুভ্রা আন্টি লকারের চাবি দেয়নি।’
-‘ তুই টাকা নিয়েছিস?’
-‘ কেন নিব না?’
-‘ তুই তো প্রচণ্ড আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মেয়ে।’
-‘ তো? শুন সীমা, যেই মানুষটার থেকে টাকা নিয়েছি সেই মানুষটা আমার বাবা। আমার জন্মদাতা। প্রতিটা বাবা-মা’র সন্তানের প্রতি স্পেসিফিক কিছু দায়িত্ব থাকে। বাবা সেই দায়িত্ব গুলো ছোট বেলায় পালন করেছে। কিন্তু কলেজে উঠার পর থেকে আমি আমার বাবাকে পাইনি। বাবার দেওয়া এই পাঁচ হাজার টাকায় আমার একমাসও চলবে না। সামনের মাসে আবার ভার্সিটি ভর্তি। আচ্ছা রুম জোগাড় হয়েছে?’
-‘ না রে। এই হোস্টেলে পাবি না। তবে আমি একটা আপুর সাথে কথা বলেছি এই পাশের হোস্টেলের। আপুর রুমমেট চলে যাবে। এরপর তুই থাকতি পারবি। উনি হোস্টেল সুপারের সাথে কথা বলে নিবেন। ততদিন তুই আমার সাথে থাক।’
তাপৌষি জানালা দিয়ে উঁকি মেরে পাশের হোস্টেল দেখার চেষ্টা করলো। তবে অন্ধকারে বুদ হয়ে আছে রাজশাহী শহর। হালকা হালকা কুয়াশা পড়ছে।
-‘ একটা চাকরির খুব দরকার রে সীমা।’
-‘ হয়ে যাবে। এতো চিন্তা করছিস কেন? আরেকটু মাংস দেই? মোড়ের হোটেল থেকে নেওয়া। এই হোটেলের মাংস রান্না খুব ট্যাস্ট।’
তাপৌষি আর সীমা দুজনে শব্দ করে হেসে উঠলো।
-‘ আরে আর হাসিস না। ভাত নাকে উঠবে।’
-‘ তুই তো হাসাচ্ছিস।’
-‘ আর হাসাবো না। নে খা এবার।’
.
তাপৌষি মহা চিন্তায় পড়েছে। এইটুকু বিছানায় ওরা দুজন ঘুমাবে কীভাবে। ফ্লোরেও তো জায়গা নেই। এতো চিপা ঘর!
-‘ কী চিন্তা করিস?’
-‘ এইটকু জায়গায় দুজনে ঘুমাব কীভাবে? ‘
সীমা বিছানায় উঠে একটু বাকা হয়ে শুল তারপর তাপৌষিকে পাশে শুতে ইশারা করলো। সত্যি দুজনের হয়ে গেছে। যদিও পা একটু বাইরে রয়েছে। তবে ঘুমে সমস্যা হবেনা কোন।
-‘ বুঝলি রে “যদি হও সুজন, তেঁতুল পাতায় ন’জন”।
তারপর কিছু সময় থেমে,
-‘ একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’
-‘ কর।’
-‘ তোর খারাপ লাগে না নিজের বাবার দ্বিতীয় বিয়েতে?’
-‘ তোর খারাপ লাগেনি আন্টির দ্বিতীয় বিয়েতে?’
-‘ প্রথমে মেনে নিতে চেষ্টা করেছিলাম তো। কয়েকদিন থেকেছিও ওদের সাথে। কিন্তু খারাপ লেগেছে খুব। খারাপ লেগেছে বলেই এখন একা থাকছি। একা চলার স্বপ্ন দেখছি।’
তাপৌষি সীমার কথায় হাসল। সীমা নিজের কথাতেই উত্তর পেয়ে গেছে।
-‘ওহ বুঝেছি। এই শুভ্রা মহিলাটা কেমন রে?’
-‘ মহিলার মানসিক সমস্যা আছে।’
-‘ মানে?’
-‘ শুন দুই দিন আগের ঘটনা। রাতে উনার প্রচণ্ড মাথা ব্যথা শুরু হয়েছিল। তাই ঔষধ খান। ঔষধ খাওয়ার কয়েক মিনিট পর ‘ঘুম আসে না, ঘুম আসে না’ বলে কুত পাড়া শুরু করেন। তারপর জেদ ধরেন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ঘুমের ঔষধ খাবেন। বাবা যখন মানা করে সে কী ঝারি তার! বাধ্য হয়েই বাবা ঘুমের ঔষধের জায়গায় গ্যাসের ঔষধ খাওয়ায়। তারপর সকালে উঠে ওই মহিলা কী বলেছে তা শুনলে তুই হাসবি।’
-‘ কী বলেছে?’
-‘ বলেছে, “দেখলি বলেছিলাম না ঘুমের ঔষধ খেতে হবে? রাতে ভালো ঘুম হয়েছে। ভাগ্যিস জোর করে ঔষধটা খেয়েছিলাম।” ভাব একবার এই মহিলার কী রকম মানসিক সমস্যা।’
তাপৌষির কথা শুনে সীমা হো হো করে হেসে দেয়।
-‘ আসলে অতি চালাক মানুষেরাও মাঝে মাঝে বোকামি করে।’
তারপর কিছুক্ষণ থেমে সীমা সরু গলায় বলল,
-‘ তাপৌষি..’
-‘ কী?’
-‘ শুন..’
-‘ বল।’
-‘ মহিলার ছেলের নামটা যেন কী?’
তাপৌষির মস্তিষ্কে গতকাল রাতের ঘটনা হঠাৎ হানা দিল। চোয়াল শক্ত করে উত্তর দিল,
-‘ নীলাভ্র।’
-‘ হ্যাঁ.. ওই নীলাভ্রকে কোন শাস্তি দিবি না?’
-‘ শাস্তি… শাস্তি তো পেতেই হবে। “কারমা” অর্থাৎ ভাগ্যে বিশ্বাস করিস? ওই জানোয়ার নিজের কাজের শাস্তি পাবে। প্রকৃতি শাস্তি দিবে।’
-‘ এতো বড় অন্যায় করেছে যে তোর সাথে, তোর বাবার মন বিষিয়ে দিয়েছে যে তোর বিরুদ্ধে তাকে তুই শুধু প্রকৃতির হাতে ছেড়ে দিবি?’
তাপৌষি রহস্যের হাসি হাসে। বর্ষন বলতো, মানুষ ভুল করলে একবার সুযোগ দেওয়া উচিত। তবে তাপৌষি জানে নীলাভ্রকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার কোন মানেই হয়না। যে ছেলে নারীর সম্মানে হাত দেয় তার হাত থেকে কী লাভ?
-‘ সীমা আমার সাথে এক জায়গায় যেতে পারবি?’
-‘ হ্যাঁ যাব কিন্তু কোথায়?’
-‘ গেলেই দেখতে পাবি।’
-‘ কবে যাবি। ‘
-‘ দুই তিনদিন পর। আপতত লাইট বন্ধ কর। ঘুম পাচ্ছে।’
————
সীমা একবার গোটা বিল্ডিং এ চোখ বুলিয়ে নিল। তারপর হাত ঘড়ির দিকে তাকাল। সময় আট টা বেজে দশ মিনিট।
“অদিতিয়া” (কাল্পনিক) এর্পাটমেন্ট কমপ্লেক্স। ”
-‘ তাপৌষি এত সকাল সকাল আমরা এখানে কী করছি?’
-‘ সামনে রিকশায় উঠছে যে ছেলেটা তাকে দেখতে পাচ্ছিস?’
-‘ হ্যাঁ।’
-‘ নীলাভ্র।’
সীমা চোখ দুটো একটু ছোট করে তাকাল। ঠোঁটটা একটু চোখা করে বলল,
-‘ ওহ। কিন্তু আমরা এখানে কী করছি। এই তাপৌষি কই যাস? ‘
-‘ রিকশায় উঠ। মামা আগের রিকশাটা ফলো করেন।’
সীমা ফিস ফিস করে বলল,
-‘ তোদের না গাড়ি আছে? রিকশা কেন নিল?’
-‘ একটা গাড়ি। হয়ত বাবা নইলে বাবার বউ নিয়ে বের হয়েছে। আর এই তুই এমন ফিসফিস করে কথা বলছিস কেন?’
-‘ আসলে সিক্রেট মিশন টাইপ ফিল হচ্ছে। এমন মুখ চোখ ঢেকে বের হয়েছি। নিজেদের আন্ডারকভার এজেন্ট মনে হচ্ছে।’
————
-‘ সীমা যা বলেছি বুঝেছিস তো? পারবি তো করতে?’
-‘ আহ, তুই ভুলে যাস কেন আমি সীমা দ্য গ্রেট। তুই শুধু দেখে যা। ‘
-‘ বাজারে অনেক মানুষ। তুই তোর কাজটা করতে পারলে বাকী কাজ আপনা আপনি হয়ে যাবে।’
————
নীলাভ্র এসেছে সাহেব বাজারে। কিছু শার্টের কালেকশন দেখতে হবে। বন্ধুরা সবাই মিলে বান্দরবন ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করছে। এর আগেও কয়েকবার নীলাভ্র সেখান থেকে ঘুরে এসেছে। এ ট্রিপের জন্য ও রাজি হতো না। তবে তাপৌষির বিদায় উপলক্ষে কোন পার্টি দেওয়া হয়নি। তাই বন্ধুদের আবদারে এই ট্যুরের সম্পূর্ণ খরচ নীলাভ্র দিবে।
আড্ডি মার্কেটের বাইরে আজ অসম্ভব ভিড়। কয়েকদিন পর রাজশাহী তে জারকাটা দেওয়ার মতো শীত পড়বে। পশ্চিম অঞ্চল হওয়ায় তাপমাত্রা পাঁচ এর নিচে নেমে যাবে।
শীত উপলক্ষে ফুটপাত গুলোতে তাই শীতের কাপড় নিয়ে বসেছে হকাররা।
.
হঠাৎ চলার সময় নীলাভ্রর মনে হলো কেউ ওকে ল্যাং মারলো । কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেকে রাস্তায় পড়া থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করলো সে । হলো কী?
-‘ এই ছেলে বাসায় মা বোন নেই? বাইরে মেয়েদের গায়ে হাত দিস। লজ্জা নাই?’
-‘ কী বলছেন এসব?’
বাজারে থাকা এক অপরিচিত লোক এগিয়ে এলো।
-‘ কী হয়েছে আপা?
-‘ কী হবে আর ভাই। রাস্তায় দাঁড়িয়ে শীতের কাপড় দেখছিলাম। এই ছেলে হঠাৎ আমার কোমরে চিমটি কাটে। আমি তো প্রথমে বুঝিনি। সরে এসে এইখানে দাঁড়িয়েছি। এখানে এসেও আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। কত বড় শয়তান একবার ভাবুন। এই এদের মতো নোংরা ছেলেদের কারণে মেয়েরা আজ সুরক্ষিত নয়।’
নীলাভ্রকে এরই মধ্যে কয়েকজন চেপে ধরেছে যাতে পালাতে না পারে। ঘটনা সম্পর্কে অজ্ঞাত নীলাভ্র নিজের সামনে দাঁড়ান কালো বোরখা পড়া মেয়েটার কথা শুনে আশ্চর্যের স্বর্ণ শিখরে অবস্থান করছে। নিজেকে ধাতস্থ করতে পারছে না।
.
ভিড়ের মাঝে দাঁড়ান তাপৌষি সীমার অভিনয় দেখে কম অবাক হয়নি। এই অভিনয়ে যে কেউ ভাববে নীলাভ্র এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
সীমা নেকাব পড়া মুখে রুমাল দিয়ে চেপে ধরে কান্না কান্না গলায় বলল,
-‘ দেখে তো ভালো পরিবারের ছেলেই মনে হয়। কাজ এমন নির্লজ্জের মতো।’
ভিড়ের মাঝে কেউ একজন বলে উঠল,
-‘ এমন বড় ঘরের ছেলেরাই উচ্ছন্নে যায়। ‘
তাপৌষি গলার স্বর চিকন করে বলে উঠল,
-‘ এরে ধরে পিটানো উচিত। মেয়েদের সম্মানে হাত দেয়। এই হাত ভেঙে ফেলা উচিত।’
নীলাভ্র চমকে উঠেছে। কলিজা এখন গলায় অবস্থান করছে। কথায় আছে, “পাবলিকের মার কেওড়া তলা পার।’
-‘ দেখুন এক্সকিউজ মি। আসলে আপনার কোন ভুল..’
কথা সমাপ্ত হওয়ার আগেই ক্ষেপে থাকা পাবলিক নীলাভ্রর উপর চরে বসেছে। কিল, লাথি, ঘুসি বর্ষিত হচ্ছে নীলাভ্রর শরীরের উপর।
বাংলাদেশে একজন মার খেলে উৎসুক জনতা সেটা দেখে, ভিডিও করে, ইউটিউবে দেয়। কেউ কেউ আবার বীরত্ব দেখাতে ছুটে যায় মারতে। আজকেও এমন অনেক মানুষকে দেখা গেল ফুটপাতে।
-‘ আরও মারেন একে। আরও মারেন।’
সীমা জোরে জোরে চেঁচাচ্ছে। তাপৌষি একবার মাটিতে পড়ে মার খাওয়া নীলাভ্রর দিকে তাকাল। একজন লোক ওর বাম হাতের উপর দাঁড়িয়ে আছে। সেইদিন এই হাতটাই প্রথম তাপৌষির দিকে এগিয়ে এসেছিল।
-‘ সীমা চল।’
-‘ আরেকটু থাকি না। জানোয়ারটাকে মার খেতে দেখতে ভালো লাগছে খুব।’
-‘ না চল।’
তাপৌষি ওখানকার একজন লোককে ডেকে সীমার দিকে ইশারা করে বলল,
-‘ আমার বড় আপা অন্তঃসত্ত্বা। বুঝতেই তো পারছেন এই অবস্থায় এতো চাপ! ওনাকে বাসায় নিয়ে যেতে চাচ্ছি। আপার শরীর খারাপ লাগছে। একটা রিকশা ঠিক করে দিবেন?’
-‘ আচ্ছা আপা দাঁড়ান। ‘
ভিড়ের মাঝে তাপৌষির বলা কথাটা অনেকেই শুনেছে।
-‘ এই হারামি পোয়াতি মহিলার গতরে হাত দিসে রে। এরা নুলা বানা। এর হাত পা কাইটা আমি আজ কুত্তারে খাওয়ামু।’
বুড়ি ভিক্ষুক মহিলার কথা বলার ধরণ শুনে সীমা হেসে দিয়েছে।
-‘ হাসিস না এখন। চল আগে এখান থেকে।’
—————
নীলাভ্রকে সাধারণ জনতা পেটানোর পর বাজারের তত্ত্বাবধায়নে থাকা পুলিশ ওকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে নিয়ে এসেছে। বাড়িতে খবর দেওয়ার পরপরই শুভ্রা ও ফরিদ সাহেব এসেছেন। বাজারে ঘটা সব ঘটনা শুনে ফরিদ সাহেবের মনে হচ্ছে তাপৌষির সাথে অন্যায় করা হয়েছে হয়ত।
শুভ্রা সেই কখন থেকে ‘আমার বাবুটা, আমার বাবুটা’ করে যাচ্ছে।
.
নীলাভ্রর হাতে ফ্রাকচার হয়েছে। দুই হাত সোজা করতে পারছে না। হাত মনে হচ্ছে গুড়াগুড়া করে দিয়েছে। পায়ের অবস্থাও ভালো না। ও যে মরে যায় নি এই ঢের।
-‘ আমার ছেলের যে এই অবস্থা করেছে তাকে আমি ছাড়বো না ফরিদ। তাকে আমি ছাড়বো না।’
-‘ ইভটিজিং জনীত ঘটনা শুভ্রা।’
-‘ তুমি এসব বিশ্বাস করো?’
ফরিদ সাহেব শুভ্রার কথার জবাব না দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করলেন। ফোনে কারো সাথে কথা বলে শুভ্রার দিকে তাকালেন। বললেন,
-‘ এম্বুলেন্স এসে গেছে, চলো।’
————–
-‘ তাপৌষি উঠে যা। আর কত ঘুমাবি?’
-‘ উফ আর একটু।’
-‘ দেখ এশা এসেছে।’
তাপৌষি চোখ পিটপিট করে চাইলো। সামনে এশা আর সীমা উৎসুক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ও ঘুম ঘুম কণ্ঠে এশার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিল,
-‘ কখন এলি?’
-‘ একঘণ্টা হয়ে গেছে। বাপ রে যে ঘুম ঘুমাস তুই।’
-‘ এমা ডাকবি না?’
-‘ না ডেকে ভালো হয়েছে। তোদের দুপুরের এডভেঞ্চারের গল্প শুনছিলাম। হ্যাঁ রে তাপৌষি, তুই কি আগে থেকেই জানতিস নীলাভ্র জানোয়ারটা আজ বাজারে যাবে?’
-‘ না।’
-‘ তাহলে এমন প্ল্যান করলি কীভাবে?’
-‘ প্ল্যান তৎক্ষণাৎ করেছি। আগে উদ্দেশ্য ছিল সীমাকে সাথে নিয়ে ওরে পিটানোর। আশে পাশে গাছের ডাল,কাঠ, লোহা যা পেতাম তাই দিয়ে পিটিয়ে আসতাম। কিন্তু এই সবের আর প্রয়োজন হয়নি। সুযোগ নিজ পায়ে হেটে এসেছে।’
-‘ কী বুদ্ধি রে তোর! আমাদের ভোলা ভালা তাপৌষির মাথায় যে এমন বুদ্ধি তা তো জানা ছিল না।’
সীমা খোচা মেরে বলল,
-‘ আমাদের ভোলা ভালা তাপৌষি ঢাকা থেকে স্পেশাল ট্রেনিং নিয়ে এসেছে বুঝলি এশা। ট্রেনার বর্ষণ সাহেব।’
তাপৌষি হালকা হেসে বলল
-‘ এই তোরা থামবি?’
এশা হঠাৎ সিরিয়াস হয়ে বলল,
-‘ তাপৌষি তুই আমার সাথে চল।’
-‘ না রে।’
-‘ কেন না?’
-‘ প্লিজ এশা।’
-‘ ওকে ফাইন। বাই।’
-‘ কই যাচ্ছিস? ‘
-‘ নিজের বাসায়।’
-‘ রাগ করিস না।’
-‘ রাগ করছি না রে। তবে তোর জন্য কিছু করতে পারছি না বলে খারাপ লাগছে। প্রিয় বান্ধবীর কষ্টের সময় সাহায্য করতে পারছিনা। কেমন বান্ধবী আমি?’
-‘ ধুর বোকা। তোরা যে আমার পাশে আছিস এটাই অনেক।’
তাপৌষি সত্যি বলেছে। বাসা থেকে বের হয়ে আসার পর ও অনেক ভেঙে পড়েছিল। কী করবে ভেবে পাচ্ছিল না। সে সময় সীমা ফোন দেয়। সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। এই যে আজ এতো হাসি খুশি রয়েছে ও, এসবের কারণ সীমা আর এশা। জঘন্য সেই রাতটা চোখের সামনে হঠাৎ ক্ষণে ক্ষণে হানা দিলেও তাপৌষির উপর প্রভাব ফেলতে পারেছে না শুধুমাত্র এই বান্ধবীদের জন্য। মাঝে মাঝে কাউকে সাহস যোগালে সে অনেক বেশি আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠতে পারে।
.
চলবে…
( গঠনমূলক মন্তব্য আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। দয়া করে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন সকলে।)