অঙ্গারের নেশা, পর্ব: ৯+১০

অঙ্গারের নেশা
নাঈমা হোসেন রোদসী
পর্ব~৯

প্রতিদিনের তুলনায় আজ একটু দ্রুতই ফিরে এলো বাড়িতে সুফিয়ান। মিসেস অদিতি ড্রইংরুমে বসে ম্যাগাজিন পড়ছিলেন। সুফিয়ানকে বাসায় তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন। মনে মনে ভয় পাচ্ছেন তিনি, সুফিয়ানকে প্রানেশা বলে দেয়নি তো?
সে ভেবেছিলো এসে তাকে সবার প্রথমে ধরবে সুফিয়ান। কিন্তু, সুফিয়ান ভেতরে ঢুকে রুমের দিকে অগ্রসর হলো। তিনি হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। যাক প্রানেশা তাহলে কিছু বলেনি!
সুফিয়ান সিঁড়ি বেয়ে দোতালায় নিজের রুমে ঢুকতেই দেখলো রুম ফাঁকা। ভ্রু কুচকে খানিক এদিক ওদিক তাকালো। ওয়াশরুমের দরজাও তো খোলা। তাহলে, কী প্রাণ তাকে ছেড়ে চলে গেলো! ভেবে সুফিয়ানের মুখ হিংস্র হয়ে উঠলো। এই মুখ যদি প্রানেশা তাহলে হয়তো তার ভয়ে কলিজা বেরিয়ে যেতো। সুফিয়ানের কপালের রগ টানটান হয়ে উঠলো। রুম থেকে বেরোনোর জন্য উদ্যত হতেই বারান্দার থেকে কিছু পড়ার শব্দ এলো। মাথা ঘুড়িয়ে সেদিকে তাকাতেই দেখলো প্রানেশা দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে নিজ মনেই ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। প্রানেশা তাকে ছেড়ে যদি যায় তাহলে সেদিনই হবে প্রানেশার শেষ দিন। বারান্দায় নিজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিরবির করে বললো –
‘ প্রাণ,আমি তোমায় এমন ভাবে নিজের সঙ্গে জড়াবো যে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পথ পেয়েও তুমি যেতে পারবেনা অথবা এই সুফিয়ান তোমায় যেতে দেবে না’

হাস্যজ্জল ভঙ্গিতে সেদিকে পা বাড়ালো সুফিয়ান। প্রানেশা দোলনার ফাঁক গলিয়ে বাহিরের মৃদুমন্দ হাওয়া উপভোগ করছিলো। গায়ে গোলাপি রঙের সুতি থ্রি পিস। এক পাশে ওরনা জড়ানো। বাতাসে পিঠে বিছিয়ে থাকা চুলগুলো থেমে থেমে উড়ছে। সুফিয়ান এসে দোলনায় বসতেই কারো অস্তিত্ব অনুভব করলো প্রানেশা। কিন্তু কিছু না বলে চুপচাপ মাথাটা সুফিয়ানের বুকের উপর রাখলো। সুফিয়ান একটু নয় বেশ খানিকটা অবাক হলো। প্রানেশা, কারো উপর যতই রাগ থাকুক, ঘৃণা করুক, কথা না বলে কখনোই থাকে না। মাঝে মাঝে কথা বলতে বলতে বাচ্চাদের মতোন হাঁপিয়ে ওঠে। ভাঙ্গা রেকর্ডারের ন্যায় বাজতেই থাকে। আজ কোনো কথা বললো না এতে অবাক হওয়ারই কথা। সুফিয়ান বার কয়েক ডাকলো-
‘প্রাণ? ‘

‘প্রাণ, কথা বলবেনা? ‘

প্রানেশা চোখ বন্ধ করে নিরুত্তর বসে রইলো। সুফিয়ানের সঙ্গে কথা বলার পর অনেকটা সময় তার মনটা ফুরফুরে ছিলো। ঘর থেকে বের হয়ে রান্নাঘর থেকে কফি করতে গেছিলো। সেসময়ই রেয়ানও এসেছিলো। প্রানেশা কোনো কথা না বলে চলে আসতে নিলেই, রেয়ান তার পা ধরে বসে পড়লো। প্রানেশা হকচকিত হয়ে দুই কদম সরে গেলো।
‘এসব কী রেয়ান! সরো বলছি’

রেয়ান হুহু করে কাঁদলো। পায়ে দুবার ঠোঁট ছুঁইয়ে অনুতপ্ত ভরা ভাঙা কন্ঠে বললো –
‘ক্ষমা করে দাও প্রানেশা, আমি সেসময় খুব রেগে গেছিলাম। তোমায় প্রতিদিন ওর সাথে দেখলে আমার ভেতর জ্বালাপোড়া হয়, কলিজা ছেড়ার মতোন ব্যাথা হয়। তাই, হানিমুনের কথা শুনে খুব রেগে গেছিলাম। ক্ষমা করে দাও। আমার কাছে ফিরে এসো প্লিজ, আমি তোমাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো ‘

প্রানেশা চোখ জ্বলা শুরু হলো। সত্যি সত্যি মনে পড়ে গেলো, সেই রাত জেগে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রেমালাপ। প্রথম গান শোনানো, হাজারো পথ পাড়ি দেয়ার স্বপ্ন দেখা, বিয়ের পর ঘোরাঘুরি করতে যাওয়ার পরিকল্পনা। একের পর এক চোখে ভাসতে লাগলো স্মৃতির পাতা। হঠাৎ করেই মনে পড়লো, সে বিবাহিত। এখন একজনের স্ত্রী। তাকে জড়িয়ে আছে অনেক গুলো সম্পর্ক। ভালোবাসার একজন মানুষ। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দ্রুত পদে নিজের রুমে এসে পড়ে প্রানেশা। নরম হলে তার চলবেনা, আজকের ঘটনা তার মনে বেশ প্রভাব ফেলেছে৷ নতুন করে সব শুরু করার জন্য কয়েক পা এগিয়েছে প্রানেশা, ফিরে আসার পথ নেই। চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টেনে ঘরে এসে দোলনায় বসেছিলো তারপর তিন ঘন্টা হয়ে গেছে সেভাবেই বসে আছে সে৷
সুফিয়ান খেয়াল করলো তার শার্টের পাশটা ভেজা ভেজা লাগছে। চমকে প্রানেশার গাল উঁচু করে দেখতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো । চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে, আর জলের ধারা বয়ে যাচ্ছে দু পাশ বেয়ে৷ ভীষণ বিচলিত হয়ে উঠলো সুফিয়ান৷ এমন ভাবে কান্না তখনই করে যখন খুব কষ্ট পায় প্রানেশা। চঞ্চল বৈশিষ্ট্যের হলেও ভেতরে বেশ চাপা স্বভাবের সে। সবার সামনে নিজের দুঃখ প্রকাশ করেনা কখনো।প্রানেশা গাল মুছে দিয়ে ব্যাথিত গলায় সুফিয়ান বললো –
‘কী হয়েছে প্রাণ? এমন করে কান্না করছো কেনো! কেউ কিছু বলেছে তোমাকে! নাম বলো, শেষ করে দেবো তাকে ‘

প্রানেশা সেভাবেই চোখ বন্ধ করে অশ্রু ঝড়াচ্ছে।সুফিয়ান ব্যস্ত হয়ে প্রানেশাকে আদর করে বললো –
‘কী হয়েছে প্রাণের? আমাকে বলবেনা? ‘

প্রানেশা ছোট বাচ্চার ন্যায় সুফিয়ানের গলা জড়িয়ে কোলে বসলো। সুফিয়ান দুই হাতে জাপটে ছোট পাখির মতো৷ কিছুক্ষনের মধ্যেই কান্না থামিয়ে সোজা হয়ে বসলো প্রানেশা। সুফিয়ানকে অবাক করে আদুরে বিড়াল ছানার মতো মাথা গুঁজে শুয়ে পড়ে সুফিয়ানের কোলের উপর। সুফিয়ান সযত্নে হাত বুলিয়ে দেয় মাথায়। প্রানেশা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো –
‘ফ্রেশ হননি?’

সুফিয়ান বুঝতে পারলো প্রানেশা কথা এড়িয়ে যাচ্ছে। পুরোনো কোনো কথা আর মনে করিয়ে দিতে চাইলো না। তাই সেও স্বাভাবিক ভাবে বললো –
‘না, মাত্রই এলাম। এই শীতে এভাবে বসে আছো কেনো?’

প্রানেশা প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বললো-
‘আর কিছু বললেন না তো!’

‘কিসের ব্যাপারে?বালি?’

‘হু’

‘সব যদি বলেই দেই তাহলে গিয়ে কী লাভ! কালই সব দেখো ‘

প্রানেশা লাফিয়ে উঠলো, বাচ্চাদের মতোন তালি দিয়ে বললো –
‘সত্যিই! কাল কখন যাবো? ‘

সুফিয়ান হেসে বললো –
‘কাল সকাল সাতটায় রওনা হবো, বালিতে গেলে পাসপোর্টের কোনো ঝামেলা নেই। যত আগে বুকিং দেয়া যায় তত ভালো, যদিও আমি মাত্র তিন দিন আগে দিয়েছি। আমরা সিঙ্গাপুর ট্রেনজিটে যাবো, বাংলাদেশ থেকে সরাসরি বালির কোনো ফ্লাইট নেই তাই ‘

প্রানেশা উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো –

‘কাল সকালে গেলে তো অনেক কাজ বাকি! আমি তাহলে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নেই ‘

‘হ্যা যাও, আমি ফ্রেশ হয়ে এসে হেল্প করছি ‘

প্রানেশা লাফিয়ে চলে যাচ্ছিলো কী মনে করে যেনো পিছিয়ে এসে বললো-
‘শুনুন ‘

সুফিয়ান সামনে তাকিয়ে দেখতেই প্রানেশা ফট করে গাল চুমু খেয়ে ‘থ্যাংক ইউউ’ বলে এক দৌড়ে ঘরে চলে গেলো। সুফিয়ান হা করে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে হেসে উঠলো। অস্ফুটস্বরে বললো –

‘আমার পাগলী’

চলবে…..

অঙ্গারের নেশা
নাঈমা হোসেন রোদসী
পর্ব~১০

সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে সকাল সাতটায় রওনা হলো সুফিয়ান ও প্রানেশা। ঘুরতে যাওয়ার আগের দিন রাতে কখনোই প্রানেশার ঘুম আসে না। দুইটার দিকে সুফিয়ান বকে ঘুম পাড়িয়েছে৷ সাতটায় সুফিয়ানের সঙ্গে রওনা দিলো প্রানেশা উদ্দেশ্য ‘বালি’

সিঙ্গাপুর ট্রানজিটে চার ঘন্টার ফ্লাইট শেষ করে কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছালো
টানা দশ ঘন্টার ট্রানজিট শেষে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা ওড়ার পর দুজন বালি পৌঁছে গেলো।

প্রানেশার মাঝে তেমন ক্লান্তি নেই বললেই চলে। সবকিছু তার কাছে স্বপ্ন মনে হচ্ছে। গায়ে একটা লং টপস আর জিন্স, গলায় স্কার্ফ, চুল পনিটেইল করে বাঁধা। সব মিলিয়ে বয়স কম মনে হচ্ছে। সতেরো, আঠারোর মেয়ে মনে হয় দেখতে। সুফিয়ান হাসলো নিজমনেই। সুফিয়ানের গায়ে কোর্ট প্যান্ট। কিছুটা সামনে একজন লোক দাঁড়ানো হোটেলে নেয়ার জন্য। তাই দুই তিন মিনিট হেঁটে যেতে হবে। প্রানেশা হাঁটতে হাঁটতে বেখেয়ালি ভাবে সুফিয়ানের হাত জরিয়ে ধরে উৎসাহিত হয়ে বললো-
‘ বালি সম্পর্কে কিছু বলুন না! ‘

সুফিয়ান হেসে বললো –
‘এতক্ষণ যে ধৈর্য ধরে চুপ আছো এতে অবাক আমি’

প্রানেশা সরু চোখে তাকিয়ে বললো-
‘আপনি কী আমায় বাঁচাল বলতে চাইছেন?’

সুফিয়ান হাসি আঁটকে বললো-
‘কী বলো প্রাণ! তুমি আর বাঁচাল! দুটো দুই প্রান্তের বস্তু ‘

প্রানেশা বুঝতে পারলো সুফিয়ান তার সাথে মজা নিচ্ছে। সুফিয়ানের হাত ছেড়ে দূরে গিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। গাল ফুলিয়ে বিরবির করে বললো –
‘বদ লোক! কাল থেকে বারবার জিজ্ঞেস করছি বলে ভাব বেড়েছে, আর জিজ্ঞেসই করবো না ‘

সুফিয়ান হেসে প্রানেশার বাহু এক হাতে জড়িয়ে গা ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে বললো-

‘সরি, শোনো। বালি ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপ এলাকা ও প্রদেশ। জাভা শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে ইন্দোনেশিয়ার ৩৩তম প্রদেশ। আর আগেই বলেছিলাম যে, বালিকে পৃথিবীর ‘অন্তিম স্বর্গদ্বান’ বা ‘লাস্ট প্যারাডাইস অন আর্থ’ও বলা হয়। ‘

‘অন্তিম স্বর্গদ্বান কেনো বলা হয়? পৃথিবীতে তো আরও বহু সুন্দর জায়গা আছে! ‘

‘সেখানের মানুষদের দেয়া নাম এটি, জনসংখ্যায় হিন্দুদের বাস বেশী। হিন্দু -৮৩.৫%,মুসলিম -১৩.৪%, খ্রিস্টান -২.৫%, বৌদ্ধ -০.৫% ‘

প্রানেশা আরও প্রশ্ন করতে নিয়েছিলো কিন্তু গাড়ির কাছে এসে পড়ায় আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না।
গাড়ির কাছাকাছি আসার পর পেছনে আরেকটা গাড়ি থেকে দুই তিনজন কালো পোশাকধারী ব্যাক্তি নেমে এলো। প্রানেশা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো –

‘এরা কারা?’

সুফিয়ান ট্রলিগুলো তাদের এগিয়ে দিতে দিতে বললো-
‘আমাদের বডিগার্ডস’

‘মানে! আমাদের আবার বডিগার্ড কেনো লাগবে?’

‘এতো কথা না বলে ওঠো’

অবাক ভাব কাটিয়ে ওঠার আগেই সুফিয়ান প্রানেশাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো ৷ প্রানেশা চুপচাপ বসে গাড়িতে মাথা এলিয়ে দিলো। গাড়ি চলতে শুরু করলেই প্রানেশা বাহিরের পরিবেশ উপভোগ করতে থাকলো৷ সুফিয়ান প্রানেশার এক হাত মুঠিবদ্ধ করে নিজেও চুপ করে রইলো। কিছুক্ষণ পরই হোটেলের সামনে গাড়ি থামলো। এত বড় হোটেল দেখে একই সাথে অবাক আর পুলকিত হয়ে উঠলো প্রানেশা। দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে আসলো। সুফিয়ান সানগ্লাস পড়ে গাড়ির বাহিরে আসতেই প্রানেশা লাফ দিয়ে সুফিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো,উৎকন্ঠার সঙ্গে বললো- ‘থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ!’

সুফিয়ান মৃদু হেসে প্রানেশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই প্রানেশা ছেড়ে দিলো। প্রানেশার হাত ধরে সামনে এগোতেই হুরমুড়িয়ে একজন ব্যাক্তি এসে দাঁড়িয়ে গেলো।নাক মুখে একরাশ ভয়ের রেখা। সুফিয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে লোকটার যে হাঁটু কাপছে তা ভালোই বুঝলো প্রানেশা। সুফিয়ানকে হালকা হাতে ধাক্কা দিয়ে বললো-‘এই লোকের কী হাঁটু কাঁপার রোগ আছে? ‘
সুফিয়ান হেসে বললো –
‘হ্যা প্রাণ, তবে সবসময় না। ব্যাক্তিভেদে এই রোগের দেখা মিলে। ‘

প্রানেশা ভ্রু কুচকে বললো-
‘বড়ই অদ্ভুত রোগ!’

লোকটি ভীষণ ভীতু তা বোঝাই যায়। টিস্যু দিয়ে কপালের ঘাম মুছে হাত পেছনে রেখে কাঁপতে কাঁপতে বললো-
‘গুড মর্নিং স্যার, গুড মর্নিং ম্যাম’

সুফিয়ান ঠোঁট চেপে হেসে বললো –
‘ মিস্টার তনিম, আপনার এই ভীরু স্বভাব বদলান। আপনাকে মেরে তো ফেলছি না ‘

তনিম জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মনে মনে বললো-
‘ সেটাও বা অসম্ভব কী!আপনাকে দেখে তো সিংহেরও মুত্রত্যাগ হয়ে যাবে’ কিন্তু মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললো –
‘কী যে বলেন স্যার, সব কিছু রেডি আছে। আপনার আর ম্যামের জন্য হোটেলের সবচেয়ে বড় রুমটা বুক করা হয়েছে। আসুন স্যার ‘

সুফিয়ান প্রানেশার হাত এখনো ধরেই আছে। প্রানেশা সবার এহেন কান্ডে বেশ হকচকিয়ে গেছে। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন মোটাতাজা বডিগার্ডরাও এই ঠান্ডায় ঘেমে ভিজে উঠছে। এরকম হওয়ার কারণ কিছুতেই বের করতে পারলো না সে। কিন্তু সন্দেহ রয়েই গেলো। সুফিয়ান তিন তলার রুমটায় ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলো। প্রানেশা নরম তুলতুলে বেড দেখে বিছানায় গড়িয়ে পড়লো। সুফিয়ান গায়ের কোর্ট খুলে পাশে হ্যাংগারে রেখে বললো –
‘প্রাণ, যাও আগে একটা হট বাথ নাও। অনেক বড় জার্নি হয়েছে ‘

প্রানেশার আরামে ঘুম পেয়ে যাচ্ছে। এখন আর উঠতে ইচ্ছে করছেনা। মুখের উপর নরম বালিশ লাগিয়ে ঘুমঘুম গলায় বললো –
‘উমহুম! পরে’

সুফিয়ান গায়ের শার্ট খুলে প্রানেশার হাত ধরে ওঠানোর চেষ্টা করলো। হালকা শক্তি দেয়ায় প্রানেশা দোল খাচ্ছে , হেসে বললো –
‘বৃথা চেষ্টা, আমি ঘুমাবো’

সুফিয়ান বুঝতে পারলো এভাবে কাজ হবেনা। মুখে বালিশ থাকায় প্রানেশা এখনো সুফিয়ানকে খালি গায়ে দেখেনি। সুফিয়ান বালিশ সরিয়ে প্রানেশাকে কাছে টানতেই প্রানেশা চোখ মেললো। উদাম গা দেখেই মুখ কুঁচকে ভেংচি কেটে বললো-
‘নির্লজ্জ কোথাকার! ‘

সুফিয়ানের জ্বালায় শেষমেষ না পেরে উঠে বসলো। সুফিয়ানের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বকতে বকতে ওয়াশরুমের কাচের গ্লাসটা ঠাস করে বাড়ি দিয়ে লাগিয়ে দিলো। সুফিয়ান প্রানেশার মেকি রাগে হেঁসে ফেললো।

টেবিলের উপর থেকে সবচেয়ে দামী ওয়াইনের বোতল নিয়ে গ্লাসে ঢেলে দুটো আইস ঢেলে ব্যালকনির ফাঁক গলিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে পান করতে থাকলো নীল চোখের সুপুরুষটি। গায়ে তার ছেলেদের লং নাইটি। বোঝা যাচ্ছে, মাত্রই ঘুম থেকে উঠেছে সে। সকালে উঠে দুই গ্লাস কড়া মদ্যপান না করলে তার পুরো দিনটাই পানশে হয়ে ওঠে। ব্যালকনির বাম দিকে নিজের সুবিশাল আভিজাত্যপূর্ণ কক্ষের দিকের বড় একটা ফ্রেমের দিকে তাকিয়ে পূর্ণ নজরে কিছুক্ষণ তাকালো সে। খোচালো শজারুর কাঁটার ন্যায় লম্বা চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে, নারীচিত্রের ফ্রেমের দিকে তাকিয়ে বললো-
‘আপনাকে আমি এখনো ভুলিনি স্রোতস্বিনী , আপনি যে আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে নিজের বিচরণ চালান! আপনার রূপের স্রোতের ধ্বংসাত্মক তান্ডব আমার দু চোখের পাতা এক হতে দেয়না। খুব শীঘ্রই আমার হবেন আপনি ‘

সোনায় মোড়ানো ফ্রেমের ভেতরের হাত বাড়ানো হাস্যজ্জল নারীটির ওষ্ঠে হাতের আঙুল ছোঁয়লো সে। ফ্রেমের আরও ঘনিষ্ঠে এসে নারীটির গভীর ডাগর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো –

আঁধারে শ্রাবণ রাতে সে এসেছিলো বলে,
জোৎস্নারা হেঁসেছিলো ঘরময় জুড়ে।
প্রজাপতি এসেছিলো দলবল নিয়ে ,
আজ সে নেই বলে তারা যাবে চলে।
সেও কী গভীর রাতে মোর নাম জপে?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here