#অচিত্তাকর্ষক
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|৩|
জুভান বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই নিধি দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। ঘটনার আকস্মিকতায় জুভান প্রথমে কিছুটা বিস্মিত হলেও পরক্ষণেই তার বাহুডোরে নিধির উপস্থিত টের পেয়ে সে এক ঝটকায় তাকে দূরে সরিয়ে দিল। বাড়ির এত মানুষের সামনে নিধি ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেল তখন। তাই ব্যাপারটা কে স্বাভাবিক করার জন্য সে হেসে হেসে বললো,
‘কেমন আছো জুভান?’
কিন্তু জুভান তার প্রশ্নের কোনোরুপ জবাব না দিয়ে মা’র কাছে গিয়ে তাকে সালাম করলো। তারপর মা’কে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘কেমন আছো মা?’
মারিয়াম আহমেদ হেসে জবাব দিলেন। বললেন,
‘ভালো আছি বাবা। তুই কেমন আছিস?’
‘আমিও ভালো আছি।’
তারপর সে জারার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘কিরে পুচকি, খুব বড়ো হয়ে গেছিস দেখছি। এইদিকে আয়।’
জারা তার ভাইয়ের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ভাইকে খুব ভালোবাসে সে। জুভান ও খুব শক্ত করে বোন কে বুকের মাঝে জড়িয়ে নেয়। তার কপালে চুমু খায়।
সবার সাথে সাক্ষাৎ এর পর্ব চুকিয়ে জুভান এবার জিজ্ঞেস করলো,
‘স্মৃতি কোথায় মা?’
মারিয়াম আহমেদ নাকের পাল্লা ফুলিয়ে কঠিন গলায় বললেন,
‘কই আবার থাকবে, রুমে বসে বসে তখন থেকে সেজেই চলছে। এই যে নিচে এত হৈ চৈ হচ্ছে, একবার কি একটু নিচে আসতে পারছে না? না, সে আসবে না, সারাক্ষণ ঐ রুমেই বসে থাকবে। যা, তুই ই উপরে গিয়ে দেখা করে আয়। সে তো মহারানী, নিচে নামতে আবার উনার কষ্ট হবে না।’
জুভান মায়ের কথার পিঠে আর কিছু বললো না। সে চুপচাপ উপড়ে উঠে যায়। তার পেছন পেছন নিধিও উপরে উঠে। নিজের রুমের কাছে গিয়ে দেখে দরজা ভেতর থেকে লক করা। জুভান দরজায় নক করে। মিহি গলায় স্মৃতি কে ডাকে,
‘স্মৃতি দরজা খুলো, আমি এসেছি।’
সঙ্গে সঙ্গেই দরজা টা খুলে গেল। লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরনে তার প্রেয়সী কে দেখে জুভান আক্রাস্ত হয়ে পড়ল। সে রুমে এসে দরজা আটকে দিল। আর সেই দরজা আটকানো দেখে নিধি জ্বলে পুড়ে খাঁক হয়ে গেল।
স্মৃতি নতুন বউয়ের মতো লজ্জা পাচ্ছে। জুভান তার কাছে এগিয়ে গেল। স্মৃতির গালে আলতো করে হাত ছুঁইয়ে বললো,
‘কেমন আছো, স্মৃতি?’
স্মৃতি মুচকি হেসে বললো,
‘ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?’
‘তোমাকে দেখে ভালো হয়ে গিয়েছি।’
স্মৃতি চোখ তুলে জুভানের দিকে চাইল। জিজ্ঞেস করলো,
‘নিধি কে দেখেছেন?’
জুভান চোখ মুখ শক্ত করে জবাব দিল,
‘না, প্রয়োজন পড়েনি।’
স্মৃতি ঠোঁটের কোণের হাসি টা বিদ্যমান রেখে বললো,
‘না তাকিয়ে ভালোই করেছেন, একবার তাকালে আর চোখ ফেরাতে পারতেন না।’
জুভান কিছুটা অপ্রসন্ন হলো। বললো,
‘আসার পর থেকেই কেবল ওর কথাই বলছো। আমি কি ওর কথা শুনতে চেয়েছি? আমার প্রয়োজন নেই ওকে দেখার। তুমিই আমার জন্য যথেষ্ট।’
‘সেটা কি ওকে বিয়ে করার সময় মনে ছিল না, জুভান?’
স্মৃতির প্রশ্নে জবাব হারিয়ে ফেলে জুভান। সে তার সামনে থেকে সরে বিছানায় গিয়ে বসে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
‘এতদিন পর এসেছি। প্লিজ কিছুটা সময় আমাকে একটু শান্তি দাও।’
স্মৃতি স্বাভাবিক গলায় তখন বললো,
‘ঠিক আছে, আপনি ফ্রেশ হোন। আমি আপনার জন্য শরবত আনছি।’
স্মৃতি এই বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আর বের হতেই দরজার বাইরে নিধি কে দেখতে পেল সে। নিধির মুখ টা দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাগে যে সে ফেটে পড়ছে। আর তাকে আরো রাগানোর জন্য স্মৃতি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে নিচে নেমে গেল। সত্যি সত্যিই তার এহেন কাজে নিধি আরো বেশি জ্বলে উঠল। সে বড়ো বড়ো পা ফেলে স্মৃতির রুমে গেল। সেখানে জুভান তার জুতা খুলে সবেই মোজাতে হাত দিয়েছে তখনই নিধি এসে চেঁচিয়ে বলতে লাগল,
‘সমস্যা কী তোমার? আমাকে কেন ইগনোর করছো? আমিও তোমার বউ। স্মৃতির মতো তোমার উপর আমারও যথেষ্ট অধিকার আছে। তাহলে আমাকে কেন সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করছো, বলো কেন?’
জুভান উঠে দাঁড়াল। চোখ মুখ নিমিষেই উগ্র হয়ে উঠল তার। কপালের রগগুলো ফুলে উঠল। দাঁতে দাঁত চেপে সে বললো,
‘বিয়ে তোমাকে আমি এমনি এমনি করেনি। করেছি ঐ জমির জন্য। তোমার বাবা বিয়ের আগে বলেছিল, আমাকে ঐ জমি টা দিবে তার বিনিময়ে আমি যেন তোমাকে বিয়ে করি। আর শুধুমাত্র ঐ জমির জন্যই আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। কিন্তু তোমার ঐ ছোটলোক, মিথ্যাবাদী বাবা আমাকে এখনও জমি টা দেননি। উনি ভেবেছেন উনাকে আমি ছেড়ে দিব। ভেবেছেন শ্বশুর বলে রেহাই পেয়ে যাবেন। কিন্তু উনি জানেন না উনি কার সাথে এই গেইম খেলছেন। উনাকে আমি আস্ত রাখবো না নিধি। আমার জমি আমি না পেলে বাপ মেয়ে দুজনেরই প্রাণনাশ আমার হাতেই ঘটবে। কথাটা তোমার বাবা কে বলে দিও।’
নিধি আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। রাগে ক্ষোভে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল। এত বছর পরও এই লোকটার ঐ জমির লোভ কমলো না। ভেবেছিল এবার দেশে আসলে সবটা ঠিক হয়ে যাবে। জুভান হয়তো সেই জমির কথা ভুলে যাবে। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। উল্টো সে এখন তাকে হুমকি দিচ্ছে। জমি না পেলে সে মানুষ পর্যন্ত খু*ন করবে নাকি। কী সাংঘাতিক! নিধি আর না দেরি করে তার বাবা কে কল দিয়ে সবকিছু বলে। নিধি বাবা তাকে আশ্বাস দিয়ে বলেন,
‘আমি আসছি মা। আমি এসে সবকিছু ঠিক করে দিব।’
জুভান ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখল, স্মৃতি তার জন্য শরবত বানিয়ে নিয়ে এসেছে। সে আলতো হেসে শরবত এর গ্লাস টা হাতে নেয়। স্মৃতি তাকে তখন বলে,
‘আমি নিচে খাবার বাড়ছি। খেতে আসুন।’
সে চলে যেতে নিলেই জুভান তাকে ডাকে। স্মৃতি ফিরে তাকিয়ে বলে,
‘আর কিছু লাগবে?’
জুভান এগিয়ে যায় স্মৃতির কাছে। তার কপালে চুমু খেয়ে বলে,
‘মন খারাপ?’
স্মৃতি না সূচক মাথা নাড়ায়। জুভান পুনরায় জিজ্ঞেস করে,
‘সারাদিন খুব কাজ করেছো, তাই না?’
স্মৃতি তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,
‘না, কাজ কই করলাম। সারাদিন তো রুমেই ছিলাম।’
‘আমি বুঝি স্মৃতি। তোমাকেও আর মা’কেও। আর তোমাদের দুজনকেই আমি খুব ভালোবাসি। তাই প্লিজ, মায়ের কথা ভেবে আমার সাথে মন খারাপ করে থেকো না।’
স্মৃতি হেসে বললো,
‘বললাম তো মন খারাপ করিনি। এখন যেতে দিন। মা নয়তো আবার রেগে যাবে।’
জুভান মুচকি হেসে স্মৃতির গালে আলতো করে তার ওষ্ঠাধর ছোঁয়াল। স্মৃতি লজ্জা পেল খুব। সে তাই লজ্জা লুকাতে দ্রুত সেই স্থান প্রস্থান করলো।
চলবে…