#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[৩৭]
এতোটা ভেঙে পরিস না অয়নকে ঠিক খোঁজে পাওয়া যাবে দেখিস।
বলেই চোখের জল মুছে দিলাম অন্তরার।
ও পাগলের মতো বিহেব করছে করবে নাই বা কেন? সকাল থেকে অয়ন কে পাওয়া যাচ্ছে না। মা হয়ে সন্তান এর বিপদ এ শান্ত কি ভাবে হবে? এই কষ্ট যে আমার চেনা। আমার ও কান্না পাচ্ছে। কিন্তু অন্তরার সামনে নিজেকে শান্ত রাখছি। ওকে সাহস দেওয়ার জন্য।কিন্তু কান্না লুকাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।কে করল এমন আমি তো ভাবছি হৃদয়। কিন্তু কেন ও তো সন্তান মানে না তাহলে এভাবে? কিছু মাথা ঢুকছে না কে অয়নকে কিডন্যাপ করতে পারে। আর সারাদিন চলে গেল কেউ মুক্তি পণ চেয়ে কল করলো না কেন?
এটা তো সন্দেহ জনক বেশি। আদ্র আমাকে বাসায় রেখে নিশামের সাথে বেরিয়েছে। ওদের ও হৃদয় এর উপর সন্দেহ কিন্তু ওর তো নিশানাও পাচ্ছে না কোথায় ঘাপটি মেরে বসে আছে কে জানে?
হঠাৎ অন্তরার ফোন কল বেজে উঠলো,
অন্তরালে এদিকে খবর নেই ও খাটে হেলান দিয়ে চোখ এর পানি ফেলছে।আমি উঠে ফোন হাতে নিলাম ট্রি-টেবিলের উপর থেকে।
নিশাত দিতে পারে ভেবে কিন্তু ফোন হাতে নিয়ে নিরাশ হলাম আননোন নাম্বার। কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে কল রিসিভ করলাম।
হ্যালো বলার আগেই ওপাশের কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম। এটা তো হৃদয়! ও অন্তরাকে কল করেছে?
অন্তরার সামনে কথা বলা যাবে না। আর নিজেকে কন্ট্রোল করে কথা বলতে হবে। ও হয়তো ভাববে কল রিসিভ করেছে অন্তরা কিন্তু তা তো নয়।
আমি ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে এলাম। কিছু বলার আগেই হৃদয় এর কথায় স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। ও বুঝলো কি করে আমি কথা বলছি তাও বেলকনিতে থেকে।ও কি বাই এনি চান্স আমার আশেপাশে আছে।আমি বেলকনি থেকে বাইরে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। আমার ঘোর বিশ্বাস হৃদয় আমাদের ফলো করছে।
খোঁজে লাভ নেই আমি তোমার আশেপাশে নেই।
আমি আবার চমকালাম।
তো যার জন্য কল করেছিলাম। আমার ছেলে আমার কাছে আছে অযথা কান্না কাটি অফ করতে বলো।আর ওকে খোঁজা ও অফ করতে বলো।
হোয়াট? আপনার ছেলে মানে?
আমি সব জানি।
সেটা অস্বাভাবিক কিছু না আমি নিজেই সব বলেছিলাম আপনি অস্বীকার করেছিলেন।
হুম করে ছিলাম এখন স্বীকার করছি। আরেকটা কথা কাল তুমি আমার সাথে দেখা করো তো। ইম্পর্টেন্ট কথা আছে তোমার সাথে। আমার ভয়ে তো ফোন অফ করে রেখেছো। কিন্তু আমার নজর এ সব সময় ই আছো।
অয়নকে ফিরিয়ে দিন।ও আপনার ছেলে না।
মিথ্যা বলে লাভ নেই জানেমান। আমি সব জানি।
জানলেই কি আপনি ওর জন্মদাতা হলেও আসল পিতা নিশাত ভাই।ওনি ওর দায়িত্ব পালন করেছে। আপনি বাবা হওয়ার যোগ্য না।আমার মেয়েকে কি করেছেন। ওকে ফিরিয়ে দিন। এতো অন্যায় করেছেন আপনার বুক কাঁপছে না। কি করে করতে পারেন। একজন সন্তানকে তার মার থেকে আলাদা করেছেন। আবার আরেক জন কে? এদিকে মাইশা নিখোঁজ ওকেও আপনি তুলে নিয়েছেন তাইনা। এতো পাপ কিভাবে করেন? আপনার মধ্যে কোন মনুষ্যত্ব নাই অমানুষ একটা।
রিল্যাক্স জানেমান এসব বলে লাভ নাই। আর একটা কথা শুনো এই অমানুষ টার সাথে তোমাকে থাকতে হবে।
জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা অফ করেন যতসব। আমি কোন দিন ও আপনার সাথে দেখা করবো না।
করবে খুব করবে। যদি মেয়েকে চাও তো করবে?
মেয়ের কথা শুনে থমকে গেলাম।
হৃদয় কল কাটার আগে কোথায় দেখা করবে বলে দিয়েছে।সাথে এটাও বলেছে কাউকে বলা যাবে না যদি বলি তাহলে অয়নের ক্ষতি করে দেবে।
মাথা ভনভন করছে আমার। অন্তরালে কাছে এলাম ও জিজ্ঞেস করলো কে কল করেছিলো আমি রং নাম্বার বলে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম।
কি করবো আমি এখন? দুজন কলিজার টুকরো ওর কাছে আছে।আমার আদ্রিতা তো আগে থেকেই এখন অয়ন কি করবো আমি? কাউকে বলতেও পারবো না নাহলে যদি কোন ক্ষতি করে বসে।না না চিন্তায় মাথা ব্যাথা করছে তখন আদ্ররা এলো।আজকে এখানে থাকবো আমরা। তাই যাওয়ার তারা নেই। আমি মাথা নিচু করে আকাশ পাতাল ভাবছি। আদ্র রা অয়ন এর কোন খোঁজ পায়নি। শুধু একটা ক্লো পেয়েছে। একটা ছবি সেই অয়নকে কিডন্যাপ করেছে। লোকটাকে অয়ন এর স্কুলে থেকে অয়নকে নিয়ে যেতে সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে। তার খোঁজ চালাচ্ছে। লোকটাকে ওরা কেউ চিনেনা।
সব শুনে অন্তরা ছুটে এসে হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো দেখার জন্য কে লোকটা। এমন ভাবে এলো যেন ওই চিনে লোকটাকে। সবার সন্দেহ হৃদয় কে ওকে খোঁজ ছে কিন্তু কেউ ওকে দেখনি কোথাও। দেখবে কি ভাবে ও তো নাই। আছে ছদ্রবেশে। অন্তরা লোকটা কে দেখেই চিৎকার করে উঠল,
আমি একে চিনি।
আদ্র নিশাত একসাথে অবাক হয়ে বলে উঠল, কি ভাবে?
অন্তরা ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলল, এই তো সেই কালকের লোকটা! এই লোক কেন আমার অয়নকে কিডন্যাপ করলো কি শত্রুতা আমাদের সাথে।
নিশাত এগিয়ে এসে বলল,
কালকের লোকটা মানে কি অন্তরা? তুই লোকটাকে চিনিস কি করে?
এই লোকটার সাথে কালকে শপিং মলে কথা হয়েছিলো।অয়ন অসাবধানতায় লোকটার সাথে ধাক্কা খায়। আর লোকটার শপিং ব্যাগ পরে যায়্ আমি পরে গিয়ে সরি বলি লোকটাকে। এই লোকটা আমার অয়নকে কেন?
বলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো অন্তরা।
নিশাত কি যেন ভাবছে? তারপর চলে গেলো নিজের রুমে। আদ্র আমার কাছে এসে নিচু কন্ঠে বলল,
কি হয়েছে এমন দেখাচ্ছে কেন?
কি হয়নি তো?
মুখ দেখে তো অন্য কিছু মনে হচ্ছে?
কিছু না।
আদ্র আর কিছু বললো না। বেরিয়ে গেলো।অন্তরা কে জোর করে একটু খাবার খাইয়ে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিলাম।
তারপর ওর পাশে ঘুমিয়ে পরলাম।
_____________
অয়ন সেই থেকে কেঁদেই যাচ্ছে। হৃদয় কোন ভাবেই সামলাতে পারছে না।খালি মাম্মা পাপ্পা বলে কাঁদছে। খেলনা দিয়ে রেখেছে সেদিকে ওর খেয়াল নেই।
হৃদয় এগিয়ে এসে বললো ,
আমি তোমার পাপ্পা অয়ন।
অয়ন রেগে তাকিয়ে বলে, তুমি পঁচা আমাকে ধরে নিয়ে এসেছো! আমার পাপ্পা বাসায়।
না অয়ন ওইটা তোমার পাপ্পা না। আমি তোমার পাপ্পা। আজ থেকে তুমি আমার সাথে থাকবে।
না তুমি আমাকে আমার মাম্মার কাছে দিয়ে এসো আমি তোমার সাথে থাকবো না।
হৃদয় চকলেট এনে নিলো,
তোমাকে অনেক চকলেট দেবো। খেলনা গাড়ি দেবো।
কিছু লাগবে না আমার।
হৃদয় এর রাগে চেয়াল শক্ত হয়ে আসছে তাও দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সহ্য করে বলছে অনেক কিছু কিন্তু অয়ন শুনছে না। খাবার আবার সামনে দিতেই তা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
হৃদয় এর রাগে আকাশে উঠে যায় ঠাস করে চড় মেরে বসে।
অয়ন হাত পা ছুড়ে কান্না করছে। হৃদয় রেগে বেরিয়ে গেলো।
________________
পরদিন আদ্ররা চলে গেলো সকাল সকাল ও লোকটাকে শেষ যেখানে দেখা গেছে সেই স্থানে। অন্তরার বাসার লোক চলে এসেছে ওর মা বাবা ওর পাশে বসে আছে।
দশটা বাজতেই আমি লুকিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসি। হৃদয় এর সাথে দেখা করতেই হবে আমাকে। বাসার সামনে থেকে ওটোতে উঠে চলে আসি যথা স্থানে। গাড়ি থেকে নামতেই একটা মাইক্রো গাড়ি আসে। একদম আমার কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পরে। আমি চমকে পিছিয়ে গেলাম।ভেতরে থেকে মাক্স পরিহিত একটা লোক এসেছে আমাকে গাড়িতে বসতে বলে আমি কেন বলতেই বলেই হৃদয় তাদের পাঠিয়েছে।
আমি উঠবো না বলেও উঠে পরি আর সাথে সাথে লোক দুটো আমার চোখ বেঁধে দেয়।
ভয় পেয়ে আমি বলে উঠি,
আমার মুখ বাঁধছেন কেন?
স্যারের নিষেধ।
আমি আর কথা বলতে পারলাম না।পনেরো বিশ মিনিট পর আমাকে টেনে কোথাও নিয়ে এলো। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে।
চোখের বাঁধন খুলতেই সামনে হৃদয় কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আমি চারপাশ তাকিয়ে দেখছি একটা রুমে আমি দাঁড়িয়ে আছি।
তাহলে চলেই এলে আমার কাছে।
আমি রেগে বললাম, অয়ন কোথায় আমার আদ্রিতা কই?
বলতে বলতে অয়ন কোথা থেকে ছুটে এসে আমার কোমর জড়িয়ে ধরলো।
আমি ওকে দেখে বিস্মিত নাক মুখ লাল হয়ে আছে। অনেক কেঁদেছে বোঝা যাচ্ছে।
আমাকে ওর মাম্মার কাছে নিয়ে যেতে বলছে আর হৃদয় কে পঁচা বলছে। পাষাণ একটা আমি ঘৃণার চোখে তাকালাম হৃদয়ের দিকে।
কিছু খেয়েছো?
না।
আমি হৃদয়কে খাবার দিতে বললাম,
অয়ন কে খাইয়ে বললাম ওকে একটু পর মাম্মার কাছে নিয়ে যাব এখন খেলতে বলে বেরিয়ে হৃদয় কে বললাম,
আপনি ওকে কেন ধরে এনেছেন?
আমার ছেলে এখন থেকে আমার কাছে থাকবে তাই।
অন্তরার কি হবে তো পাগল হয়ে গেছে।
আই ডোন্ট কেয়ার।
আপনি একটা পাষাণ।
সেটা আমি জানি। এবার বলো তুমি কি একেবারে চলে এসেছো।
মানে।
মানে আমার সাথে সংসার করার জন্য।
আপনার সাথে সংসার করবো আমি পাগল পেয়েছেন আমাকে। আমি অয়ন কে নিতে এসেছি।
তাই আমার নিজের মেয়েকে নিবে না।
কোথায় আমার মেয়ে?
উত্তেজিত হয়ে।
আছে ওর জায়গায় আছে তুমি চাইলে আমি একটা ছবি দেখাতে পারি।
বলেই ফোন থেকে একটা বাচ্চার হাসি মুখের ছবি বের করলো যে হৃদয় এর গলা জড়িয়ে হেসে তাকিয়ে আছে।
কে এটা?
নিজের মেয়েকে চিনছো না?
আমার আদ্রিতা?
ইয়েস। দেখছো কতো হ্যাপি আমাকে পাপ্পা বলে আর তোমাকে মা। খুব ভালো করেই মানুষ করেছি এবার তুমি চলো আমাদের পরিবারটা সম্পূর্ণ হোক।
ওইটা কোন পরিবারই না। আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিন কোথায় ও।
আমাকে মেনে না নিলে ওকেও যে পাবেনা। আদ্র কে ডিবোর্স দিয়ে একেবারে চলে এসো সব পাবে।
আমার রাগ উঠে গেল আমি রেগে হৃদয় এর গালে চর মেরে বসলাম।
রাগে হৃদয় আমার হাত মোচড়ে ধরলো,
তোমার সাহস তো কম না আমার গালে হাত তুলো।
ব্যাথায় আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। হৃদয় রাগে গজগজ করতে করতে হাত ছেড়ে দিলো।
________________
নিশাত রা মাইশা কে খুঁজে পেয়েছে।ওর অবস্থা খারাপ তাই হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু হৃদয়কে পায়নি। স্নেহার ফোন ট্রাগ করে ওরা নতুন রাস্তায় নামলো।
আদ্র ছটফট করে একটা কথাই বলছে,
স্নেহার কিছু হবে না তো। এমনিতেই ওর এই অবস্থা। আমার খুব ভয় করছে এতোটা রিক্স না নিলেও হতো।
নিশাত ওর ঘাড়ে হাত রেখে বলল, চিন্তা করো না। ঠিক থাকবে স্নেহা।
তাই যেন হয়।
একটা নিরিবিলি জায়গায় এলো ট্রিন সেটের ঘর এখানে এখানে কি হৃদয় আছে কিন্তু স্নেহার ফোন ট্রাগ করে তো এটাই পেলাম।
অদ্ভুত বাসা তো পুলিশ ফোর্স নিয়ে নেমে ঘিরে ফেললো বাসা কিন্তু একি বাসা তো ফাঁকা কেউ নেই এখানে। কিন্তু ভেতরে এসে ফোন পায়।
আদ্র ফোন হাতে নিয়ে ধপ করে মাটিতে বসে পরলো।
এদিকে হৃদয় আড়াল থেকে দেখতে পেয়েছে স্নেহা ফোনটা খুব সাবধানে রাখছে। ওর খটকা লাগে কোন পরিকল্পনা না করে স্নেহা এসেছে মনে হয়না। তাই ও স্নেহার মুখে চোখ বেঁধে দেয় আর সবাইকে বলে ছদ্রবেশে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। আর স্নেহার ফোনটা ফেলে যায়।
।
।
।
।
চোখের সামনে হৃদয় এর ছিন্নভিন্ন দেহটা পড়ে আছে। ট্রাকটা একদম ওর গাড়ির সাথে এমন ভাবে লেগেছে যে ওর গাড়িটা একদম উল্টো হয়ে পরে গেছে। একেক খন্ড একেক স্থানে পড়ে আছে। নিরিবিলি রাস্তা বিধায় আশেপাশে মানুষ কম। হৃদয় মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছে।
ওর গাড়িতে ও একা ছিলো তাই মৃত্যু একাই হলো।
এদিকে হৃদয় নিজে ছদ্রবেশে একা গাড়ি উঠে আর স্নেহা আর অয়ন কে এক গাড়িতে দুইজন বডিগার্ড সহ বসায়। কারন রাস্তা কেউ সামনে পড়ে গেল ও যাতে তাদের সামাল দিতে পারে।স্নেহাদের গাড়ি আগে যাচ্ছে আর ওর গাড়ি পেছনে একটা মোড় ঘুরার সময় একটা ট্রাক খুব দ্রুত আসে আর এই অঘটন টা ঘটে। সামনে স্নেহাদের গাড়ির ড্রাইভার লুকিং গ্লাস এ তা দেখেই গাড়ি থামিয়ে ফেলে।
স্নেহার চোখ হাত বাঁধা ও কিছু দেখতে না পেলেও শব্দ শুনেছে তা শুনে কেঁপে উঠছে।
তিনজন গাড়ি থেকে নেমে যায় দৌড়ে। এখন স্নেহা আর অয়ন একা গাড়িতে। স্নেহার মুখ বাধা হয়নি তাই অয়ন কে জিজ্ঞেস বলে,
অয়ন আমার হাত খুলে দেতো।
অয়ন খুলে স্নেহার হাত খামচে বসে আছে। স্নেহা হাত ছারিয়ে চোখ খুলে পেছনে তাকিয়ে আতকে উঠে,
ছুটে হৃদয় এর কাছে আসে ওর মাথা দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। ও কাছে যেতেই হৃদয় শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকে।জান বের হবে এমন।
হৃদয় এর মাথা নিজের কোলে তুলে স্নেহা উত্তেজিত হয়ে বলে,
আপনার কিছু হতে পারেনা আমার মেয়ের খোঁজ না দিয়ে। ওকে যে আমি আপনি না বললে খোঁজে পাব না। কোন অচেনা শহর এ রেখে এসেছেন বলেন।
হৃদয় কথা বলার চেষ্টা করেও সফল হচ্ছে না। আ আ আ করে যাচ্ছে।
স্নেহার চোখ এত সামনে হৃদয় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।
স্নেহা চিৎকার করে উঠল,
কথা বলুন কোথায় আমার মেয়ে বলে যান।
হৃদয় আর কথা বললো না।
তখন নিশাতদের গাড়ি এলো ওরা দৌড়ে বেরিয়ে এলো আদ্র স্নেহার কাছে দৌড়ে এসে বলে,
এসব কি করে হলো তোমার কিছু হয়নি তো।
স্নেহা গলা ফাটিয়ে কাঁদছে। আদ্র কে দেখেই ওর হাত খামচে ধরে বলল,
আমার সব শেষ হয়ে গেল। হৃদয় আমার সামনে মরে গিয়ে আমার সন্তানকে নিয়ে গেলো।আর কখনো ওকে পাব না আমরা।কখনো না।
কাঁদতে কাঁদতে স্নেহা জ্ঞান হারালো।
অয়ন নিশাত কে দেখেই তার কোলে ঝাঁপিয়ে পরেছে। বাচ্চা ছেলে ভয়ে জমে গেছে একদম।
আদ্র স্নেহা পাঁজাকোলা তোলে গাড়ি গিয়ে বসে। চোখে মুখে পানি দেয়।
হৃদয়কে মৃত ঘোষণা করা হয়। স্নেহার জীবন থেকে বিপদ সরে গেলো কিন্তু হারিয়ে ফেললো নিজের সন্তান। যার খবর শুধু হৃদয় জানতো।
অনেক দিন পর
সবার জীবনে সুখ নেমে এসেছে।অতীত আঁকড়ে ধরে কেউ পরে থাকে না। আস্তে আস্তে বাস্তব মেনে নেয় সবাই। এরাও মেনে নিয়েছে।
স্নেহা জমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছে একটা ছেলে ও মেয়ে যাদের নিয়ে ওর সংসার সুখে আছে। আদ্র ভালোবাসা আর সন্তান দের নিয়ে। আগের সন্তান কে ভুলতে পেরেছে।
কিন্তু পুরোপুরি না।
স্নেহা আবার আজ মন খারাপ করে বারান্দায় অন্ধকারে করে বসে আছে। আদ্র এগিয়ে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে চুমু খেলো। আর বলল,
কি হয়েছে আবার ওর জন্য মন খারাপ করছো?
আজ ওর জন্ম দিন আদ্র।
হুম জানি তো তার জন্য সারাদিন কতো মানুষ কেই খাওয়ালাম জানবো না।
হুম। আমার মেয়ে ভালো আছে তো।
ইনশাআল্লাহ ভালো আছে আমার বিশ্বাস।
ওর সাথে কোন দিন কি দেখা হবে না আমাদের।
হবে যদি আল্লাহ চায়। পৃথিবীটা গোল তাই ঘুরতে ঘুরতে একদিন দেখবে সে তোমার চোখের সামনে চলে এসেছে।
আমি তাকে চিনবো তো।
অবশ্যই চিনবে।
আদ্রিতা সোনা আমার তুই যেই অচেনা শহরেই থাক না কেন একদিন নিজের এই শহরে ফিরে আসিস।
পেছনে থেকে তখন দুইজন পাঁচ বছর এর ছেলে মেয়ে ঝগড়া করতে করতে এলো।
আদ্র তারাতাড়ি স্নেহা ছেড়ে দিলো।
আব্বু সাদ আমার চকলেট নিয়ে নিয়েছে।
বলেই ঠোট উল্টিয়ে ফেললো সাদিয়া। আদ্র মেয়ে।
সাদ বললো, মিথ্যা আমি ওরটা নেয়নি।এটাও আমার চকলেট।
রেগে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে।
সব তোর তাই না।
বলেই সাদিয়া সাদের মাথার চুল টেনে ধরলো।
শুরু হলো ঝগরা।
আদ্র টেনে মেয়েকে কোলে নিলো। স্নেহা ও ছেলেকে কোলে নিলো দুজনকে বুঝাতে লাগলো। ঝগড়া করতে মানা করতে লাগলো।
দুজনের ঝগড়া মিটিয়ে সমান করে চকলেট দিয়ে বিদায় করলো।
।
।
।
স্নেহার ভাই ভাবি এক হয়ে গেছে । না হওয়ার কারন ও নেই। কারন মহুয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরে। পাশ্চিত্ত করছে শত অবহেলার পর ও সিগ্ধর পায়ে পরে কেঁদেছে। ভালোবাসা দিয়ে আপন করতে চেয়েছে ব্যর্থ হয়ে ও হার না মেনে আশা নিয়ে বসে থেকেছে তা তো সিগ্ধ নিজের মন গলিয়ে আপন করে নিয়েছে।
ওদের আর সন্তান হবে নাই একটা বাচ্চা এতিম খানা থেকে দত্তক এনে নিজের বাবা মা হওয়ার অনুভূতি অনুভব করছে। দুজনেই সুখে আছে।
।
।
।
অন্তরা ও নিশাতকে মেনে নিয়েছে। একসাথে থাকতে থাকতে ভালোবাসা তৈরি হতে রায় ওদেরও তাই হয়েছে। অয়ন অনেকটা বড় হয়েছে
হাই স্কুল এ পড়ে। খুব পরিপাটি থাকতে পছন্দ করেও লেখা পড়া নিয়ে থাকে। দেখতে না চাইতেও হৃদয় এর মতো হয়েছে অনেকটা।
অন্তরার একটা এক বছর এর মেয়েও আছে । সুখি পরিবার এখন ওরাও।
সবাই ভালো আছে সুখে আছে। ঝরঝাপ্টা অনেক এসেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাই ভালো আছে। সবার জন্য দোয়া করবেন।
শুধু ভালো নেই একজন। সে এখনো পথ চেয়ে আছে।
একটু পর বুঝি পাপ্পা মাম্মা কে নিয়ে আসবে। মাম্মার একটা ছবি নিয়ে সে শীতের রাতে বারান্দায় বসে কাঁপছে। সেই আর কেউ না হিয়া।
আমেরিকার একটা বাসায় বসেই আছে তার সাথে আছে ন্যানি। যে মায়ের মতো ওকে বড় করে তুলছে।
কখনো কি অচেনা শহর থেকে নিজের শহরে আসতে পারবে। পারবে কি বাবা মা ভাই বোন দের কাছে আসতে। আপন মানুষ এর কাছে আসতে। জানা নেই সেটা আমার ও। তাই আর বড় করলাম না এখানেই শেষ হলো এই গল্প।
হিয়াকে ফিরিয়ে আনলাম না কেন বলতে পারেন তাই বলছি এটা এই ভাবেই ভাবা ছিলো। নামটা ছিলো অচেনা শহর তাই সেটার মান রাখতে হবে তো।
সমাপ্ত
( অনেকদিন হলো গল্পটার যারা পাশে থেকেছেন তাদের অনেক অনেক ভালোবাসা। )