অচেনা শহর পর্ব ৩০+৩১

#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[৩০]

হাঁটু ভাঁজ করে বসে মাথা রেখে কেঁদেই যাচ্ছি। চোখের পানি বাধা মানছে না এতো বড় সত্য শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছী। এমনটা কল্পনাতেও ভাবিনি।এতো বড় ধোঁকা হৃদয় এর থেকে খাব কখনো ভাবিনি। বারবার অন্তরা মলিন মুখ টা চোখের সামনে ভেসে উঠছে ও এসব জানলে কি করবে? এই কয়দিন ও কতোটা কষ্টে ছিলো সেটা আমি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি ও মে খুব ভালোবাসে‌ এই প্রতারক টাকে। আমরা এতোদিনে একটুও আঁচ করতে পারলাম না কিভাবে? কতোটা বিলিভ করতাম হৃদয় কে নিজের ভাই মনে করেছি সেই এমন হবে।
অন্তরার সামনে আমি কি করে দাড়াবো আমার জন্য ওর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল।
হৃদয় কেন এমনটা করলো কেন ও তো অন্তরাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো ওদের এনগেজমেন্ট অবধি হয়েছে তাহলে কিছু আমার মাথায় ঢুকছে না কিছু না।
কেমন জানি সব ধোঁয়াশা লাগছে সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
একটু আগে হৃদয় আমাকে জানিয়েছে ও আমাকে কিডন্যাপ করে এনেছে। তার কারন ও নাকি আমাকে ভালোবাসে। কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। অন্তরার কথা বললে ও বলে ওর সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছে। কিন্তু এতো কিছু অভিনয় ছিলো আর আমরা কেউ বুঝতে পারলাম না।
হৃদয় বলে,
আমি কি না করেছি আদ্রকে তোমার থেকে আলাদা করতে বলো। আদ্রকে গুলি করালাম শালা মরে গিয়ে ও মরলো না। সুস্থ হয়ে কি করলো আমাকে কিনা আমার ভালোবাসা মানুষের বিয়েতে সাক্ষী হিসেবে ধরলো। রাগে আমার মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছিলো জান কিন্তু নিরুপায় ভালো সাজার অভিনয় করতে গিয়ে আমাকে তোমাদের বিয়েতে থাকতে হলো। চেষ্টা করেও বিয়ে আটকাতে পারলাম না তাই তো মাইশা কে দিয়ে ওইসব করে তোমাকে ওই আদ্রর মার কাছে খারাপ করেছিলাম যাতে তোমাদের মেনে না নেয়। আর আমি ভেবেছিলাম আদ্রর নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে যাবেনা তারা না মানলে তোমাকে ছেড়ে দেবে আর তখন আমি তোমায় সাহায্য করবো কিন্তু আমার কপাল খারাপ শালা তোমাকে নিয়ে বাসা থেকে চলে আসতে চাইলো। এতো ভালোবাসা আমি চাইনি। ভালো তো আমি শুধু তোমায় বাসবো কিন্তু আদ্র হতে দিচ্ছিলো না। তাইতো আদ্রকে বিদেশে যাওয়ার জন্য রাজি আমি করলাম তুমি ভেবেছো তোমার কথা শুনে গিয়েছে ইটস রং। আদ্রকে রাত ভড় আমি বুঝালাম তোমার থেকে দূরে যাওয়া উচিত এতে তুমি ওর ভালোবাসা বুঝবে আর আদ্রকে এটাও বললাম গিয়ে ওর সাথে যোগাযোগ করো না। আদ্র না রাজি হলো না ও তোমাকে এক সেকেন্ড না দেখে থাকতেই পারবে না। রাগে আমার মন চাইলো এর চোখ উঠিয়ে ফেলি কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করে ভালো করে বুঝালাম এটাই যে আদ্র দূরে গেলে তুমি ওর মর্ম বুঝবে শেষে রাজি হলো। আমি প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। ও যাওয়ার পর তোমাকে বাসা থেকে তারিয়ে দেবে আমি তোমাকে আমার বাসায় আনবো সব ঠিক ছিলো। রাস্তায় ছেলেরা তোমাকে ডিস্টাব করবে আমি হিরো হয়ে তোমাকে বাঁচাবো কিন্তু মাঝখানে সব গেটে দিলে তুমি ওই বাসায় গিয়ে আর বের হলে না। আমি সারা রাত ওই বাসার বাইরে মশার কামড় খেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার সমস্ত প্লান নষ্ট করে দিলে। পরে অন্তরার থেকে জানতে পারলাম ওইটা নিশাত এর বাসা।
আরেকটা কথা কি যেন বলছিলে অন্তরার সাথে এসব কেন করেছি আরে ওর সাথে এসব না করলে আমি তোমার কাছাকাছি থাকতে পারতাম নাকি।আর না তোমার সমস্ত ইনফরমেশন পেতাম। বোকা মেয়ে কি সুন্দর আমার অভিনয় টাকে ভালোবাসা ভেবেছে। বড্ড বোকা।
এতো কিছু করেও আমি তোমায় পেলাম না তাই তো ওকে ইগনোর করা শুরু করলাম এতো নাটক আর সহ্য হচ্ছিলো না।

সব শুনে স্তব্ধ করা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি সব কিছু হৃদয় করেছে মাইশা কে নিয়ে। আর অন্তরার সাথে সব মিথ্যে। আমি রেগে ওর গালে চর মেরে বসলাম।

ছিঃ ছিঃ ছিঃ আপনি এতো খারাপ। কতো ভালো ভেবেছিলাম। আর আপনি এসব করেছেন। অন্তরার সাথে এসব কেন করলেন কেন ওর জীবনটা নষ্ট করলেন।

একটা সত্য কথা বলি আমি কিন্তু তোমার আগে অন্তরাকে লাইক করেছিলাম কিন্তু সেটা জাস্ট
প্রেম করার জন্য। আর একবার যে মেয়েকে আমার ভালো লাগে তাদের আমি নিজের করেই ছারি। কিন্তু পরে তোমাকে দেখে আমার হার্টবিট বেড়ে গেল। আমি কিভাবে যেন তোমাকে ভালোবেসে ফেললাম। কিন্তু ওই আদ্রর জন্য বাগে আনতে পারিনি। তাই অন্য রাস্তা ধরলাম। আর আজ আমি সফল।

আপনার বাবা মা তো অন্তরাকে দেখতে গিয়েছিলো সেসব কি ছিল।

সেসব নকল বাবা মা আমার বাবা কে জানো?

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।

আমার বাবা হলো আদ্রর বাবার বিপক্ষে পার্টি ওই আদ্রর বাবার জন্য সে ভোটে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে। কি সুন্দর তাইনা বাবা ছেলের শত্রু একজন।

দরজা খুলার আওয়াজে সম্মতি পেলাম হৃদয় খাবার আর ড্রেস নিয়ে এসেছে।

আমার সামনে এসে বললাম,‌ ড্রেস চেঞ্জ করে খাবার টা খেয়ে নাও দুইদিন পর আমার আর তোমার বিয়ে।

বিয়ের কথা শুনে চমকে তাকালাম।

আমি বিবাহিত আপনি সেটা জানেন কিন্তু।

হুম জানি তো ওইটা কোন বিয়ে নাকি আর আমি জানি আদ্র আর তোমার এখনো স্বামী স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়নি। আর হলেও আমি তোমায় ছারতাম না।

আদ্র আপনাকে পেলে খুন করে ফেলবে।

পেলে তো করবে। তার আগে আমি তোমাকে আমার করে ফেলবো।

হৃদয় চলে গেলো আমি এক নজর খাবারের এর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম খাব না আমি কিছুতেই না।
ওদিকে আদ্র কি অবস্থায় আছে কে জানে। ও খুব পাগলামো করছে আমি জানি।
এখানে থেকে কি করে বের হবো আদ্র আমাকে এই প্রতারকটার থেকে বাঁচাও।
আমি উঠলাম ও না নরলাম ও এইভাবেই থাকবো কিছু করবো না যতক্ষন এখানে থাকতে হবে খাব না‌ গলা দিয়ে আমার খাবার নামবে না।

এদিকে আদ্র কোন ভাবেই স্নেহাকে পাচ্ছেৎনা আনন্দের স্থানে এখন সবাই থমথমে মুখ করে আছে। বিয়ের বদলে এমন কিছু কেউ আশা করে নি। আদ্রকে কেউ সামলাতে পারছে না তাই শেষে রাহাত ওকে নিয়ে আলাদা করে বলল,
মাইশার কথা এসবে ওর হাত আছে। ওকে ধরলে পাওয়া যাবে স্নেহাকে।

আদ্র রাহাত এর কথা শুনে শান্ত হলো। ছুটে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো। ওর সাথে রাহাত আশিক ও গেল। উদ্দেশ্যে মাইশাদের বাড়ি সেখানে গিয়ে ও নিরাশ হলো মাইশা বাসায় নেই। কোথায় থাকতে পারে ও ইচ্ছে করে লুকিয়ে আছে। কারন এসবের পর ওকে আমরা খুঁজব ও জানতো তাই লুকিয়েছে। রাত হয়ে গেছে মাইশার খোঁজ পাওয়া যায় নি আদ্র পুলিশ এর কাছেও গিয়েছিলো তারা খোঁজ করছে।
স্নেহার কিছু হলে আমি মাইশা কে খুন করে ফেলবো।
রাগে গজগজ করতে করতে বললো।
রাহাত ওর ঘারে হাত দিয়ে বলল,
কিছু হবে না স্নেহার দেখিস।
আমার ভয় করছে খুব।
ভয় পাস না।
কিন্তু আদ্র শান্ত হতে পারছে না। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে ভয় হচ্ছে স্নেহার কোন ক্ষতি হবে না তো। আমি তোমাকে সেভ রাখতে পারলাম না আমি ব্যর্থ। নিজের ওয়াইফকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলাম না। আদ্রর চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।
রাহাত জোর করে বাসায় নিয়ে এলো সবাই চিন্তিত হয়ে আছে। আদ্রর চোখ গেল সিগ্ধর দিকে তার কাছে গিয়ে পায়ের কাছে বসে কাঁদতে লাগলো বাচ্চাদের মতো। সিগ্ধ ও কাঁদছে বোনের জন্য।
আদ্র কে কেউ বাসায় রাখতে পারলো না এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতেছে। ওর অবস্থা একদম নাজে হাল হয়ে গেছে।



এদিকে হৃদয় রুমে এসে দেখে স্নেহা সেই ভাবে বসেই ফুপাচ্ছে। খাবার পরে আছে ছুঁয়ে ও দেখে নি জামা কাপড় ও পরেই আছে ও যে নড়েও নি দেখেই বুঝা যাচ্ছে হৃদয় এসে স্নেহাকে খেতে বললো। স্নেহা সাথে সাথে না করে দিলো ও খাবে না কিছু।
হৃদয় খাওয়ানোর ট্রাই করছে ও আচমকা হৃদয় এর পা চেপে ধরে বলল,
আমাকে আদ্রর কাছে যেতে দেন প্লিজ। আদ্র কষ্ট পাচ্ছে। আমাকে যেতে দিন।
হৃদয় সেসব তোয়াক্কা করলো না খেতে বলল। স্নেহার হাত পায়ে থেকে সরিয়ে।‌
কিন্তু স্নেহাকে রাজি করাতে পারলো না তাই বিরক্ত হয়ে রেগে বেরিয়ে গেলো।
সারারাত কেঁদে ভাসিয়ে দিলো স্নেহা। ওভাবেই ঘুমিয়ে পরে।
পরদিন সকালে রাহাত এসে আদ্রকে বলে চল আমার সাথে আমি জানি কোথায় আছে মাইশা।
কিভাবে?
রাহাত আদ্রকে নিয়ে যায় একটা বাসায়। রাহাত মাইশার সাথে হাত মিলিয়েছিল তখন মাইশা বলেছিলো ও এখানে এসে থাকে তাই সন্দেহ হয়েছে ওর। এখানে এসে মাইশা কে পেয়ে যায়। আদ্র মাইশা দেখেই তো গলা চেপে ধরে।
বল স্নেহা কোথায়? কি করেছিস ওর সাথে?
আচমকা আদ্র দের এখানে দেখে মাইশা হতবাক ও ভাবতেই পারেনি এতো তারাতাড়ি আদ্র ওকে ধরে ফেলবে।
রাহাত অনেক কষ্ট আদ্র কে ছারিয়ে এনে বলে।
এসব করিস না মাইশার থেকে আমাদের স্নেহার কথা জানতে হবে।

তখন কিছুটা শান্ত হয় আর মাইশা জিজ্ঞেস করে।
মাইশা বলে ও কিছু জানে না।
হাজার বার জিজ্ঞেস করেও ওর মুখ থেকে কিছু জানতে পারে না রাগে আদ্র ওর বাসার চেয়ারে লাথি মারে আর চিৎকার করে বলে,

রাহাত ওকে বলতে বল সব। না হলে ওকে আমি এখানেই পুঁতে ফেলবো।

যাই করুক মাইশা মুখ খুলে না। তাই না পেরে ওকে একটা চেয়ারে শক্ত করে বেধে রুমে বন্ধ করে ফেলে। সব কিছু রাহাত করে। আদ্র তো ওকে মেরে ফেলতে চাইছে। তাই ওকে অনেক কষ্টে দূরে রেখেছে ওকে মারলে স্নেহাকে আমরা পাব না।

সব না বলা পর্যন্ত এভাবে থাক তুই।
বলে রাহাত আদ্র কে জোর করে নিয়ে পুলিশ এর কাছে আসে তারা একটা গাড়ি পেয়েছে যেটা কালকে আদ্র বাসা থেকে যেতে দেখা গেছে সিসি ক্যামেরাতে।
বাসায় যে সিসি ক্যামেরা ছিলো সব অফ করে কাজ করেছে এজন্য তার কোন ফোটেজ পায়নি‌।এটা রাস্তার ফোটেজ সেই গাড়িটা পেয়েছে কিন্তু তার মালিক বাবুল এসবের কিছুই জানে না বলছে। তিনি নাকি কালে একজন লোকের কাছে ভাড়া দিয়েছিল।
এখন সেই ভাড়া দেওয়া লোকটাকে খুঁজছে আর বাবুল কেও পুলিশ জেলখানায় আটকে রেখেছে তাকে ও সন্দেহ করেছে।
#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[৩১]

মাইশা কে সকালে বেধে রেখে গেছে আর এখন সন্ধ্যা। এখন অবধি ওকে খুলে নি।আর না রাহাত বা আদ্র ওর সামনে এসেছে। মাইশার সামনে একটা লোক বসে আছে তাকে মাইশা চিনে না। একে রেখেছে ওকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য।মাইশার সারা শরীর ব্যাথা করছে এতো শক্ত করে বেধেছে ওকে হাত পা ব্যাথা হয়ে আছে। মুখ বেধে রেখে কপালে ঘাম হয়ে পরছে খিদের জ্বালায় পেট ব্যাথা করছে। বাথরুমের যাওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে সারা দিন না যাওয়ার জন্য তল পেট ব্যাথা হয়ে আছে। তার সাথে সকাল থেকে না খাওয়া। আদ্রর কড়া নিষেধ সব কিছু না বলা পর্যন্ত আমাকে ছাড়বে না এভাবে বেঁধে রাখবে না খেতে দেবে। মরলে এইভাবেই মরতে হবে ও অবশ্যই এটা চায়নি আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলতো রাহাত এর জন্য এইভাবে আছি।
আমি কষ্ট চোখ মেলে ছুটাছুটি করছি বাথরুমে যাওয়াটা খুবই দরকার না হলে এখানেই করে ফেলতে পারি।
গলা ও শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে এতো পানি পিপাসা পেয়েছে আমার।আমি ছটফট করছি দেখে সামনের লোকটা এগিয়ে এলো,

ছটফট করে লাভ নেই স্যার আপনাকে মারতে মানা করেছে।

আমি হাত পা সকালে অনেক নাড়িয়েছি ছাড়ানোর জন্য পারিনি উল্টো কেটে গেছে মনে হয় জ্বলছিলো। এখন নাড়ানোতে ফুঁপিয়ে উঠলাম আবার কেটে গেছে বোধদয় আমি লোকটার দিকে অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছি। তাকে আমার মুখের বাঁধন খুলে দিতে বলছি লোকটা বুঝলো না আমাকে ধমকে বিছানায় গিয়ে বসলো। তারপর খাবার খেতে লাগলো চিকেন। আমি লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি কি যে খিদে পেয়েছে তার উপর পছন্দের চিকেন আমার খুব পছন্দ। কিন্তু লোকটা আমার দিকে তাকালো না আমি মুখ দিয়ে এবার শব্দ করতে লাগলো।তা গুঙ্গরানি বের হলো লোকটা আয়েশ করে পানি খেয়ে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলল,

কি হয়েছে খিদে পেয়েছে?

আমি সাথে সাথে মাথা নাড়লাম যদি লোকটা দেয়। কিন্তু না বিদ্রুপ হাসি দিয়ে বলল আমাকে খেতে দেবে না। আমি মুখের বাঁধন খুলে দেওয়ার কথা টা বুঝাতে লাগলো অবশেষে এ বুঝলো আর খুলে দিলো।
আমি বড় শ্বাস নিলাম।

আমাকে পানি দিন একটু খুব পানি পিপাসা পেয়েছে। আর এসব খুলুন আমি বাথরুমে যাব।

কিছু দেওয়া যাবে না। স্যার এর আদেশ। আপনি ওনার উওর না দেওয়া পর্যন্ত এইভাবেই থাকবে। এক ফোঁটা পানিও দিতে মানা করছেন।
বলেই মুখ আবার বেঁধে দিলো।আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।
লোকটা দরজা খুলে চলে গেল আমি ব্যথিত হয়ে পরে র‌ইলাম করুন ভাবে। লোকটা অনেকক্ষণ পর এলো আর এসে একবার আমার দিকে তাকিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। আমার বিছানা এটা আমি আর সহ্য করতে পারলাম না গুঙরাতে লাগলাম। এভাবে থাকলে আমি মরেই যাব যা দেখছে মরে গেলে না আদ্রকে পাব।না আমার সব বলে দিয়ে নিজের কথা ভাবতে হবে।লোকটা বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে কি জিজ্ঞেস করলো আমি কথা বলার চেষ্টা করলাম মুখ খুললো আমি বললাম,

আদ্রকে আসতে বলো।

লোকটা ফোন বের করে আদ্রকে কল করলো।
আধা ঘন্টা পর তখন এগারোটার মতো বাজে
আদ্র এলো সাথে আশিক রাহাত আছে। আমাকে জিজ্ঞেস করলো

আমি জানি না হৃদয় কোথায়? কিন্তু ও কোথায় থাকতে পারে আমি বলতে পারবো তার আগে আমাকে বাথরুমে যেতে দে। আর একটু পানি দে।

হৃদয় নাম শুনে চমকালো সবাই আদ্র বলল,
হৃদয় কোথায় মানে আমি কি তোকে হৃদয় এর কথা জিজ্ঞেস করেছে ও কোথায় আমি জানি ও বিদেশে গেছে কাজে। স্নেহাকে কে কিডন্যাপ করেছে তার কথা বল।
রেগে বলল আদ্র।

মাইশা দূর্বল গলায় বলল, হৃদয় ই নিয়ে গেছে ওকে।

হোয়াট?

সেই অচেনা লোকটা পানি দিলো খেয়ে একটু ভালো লাগলো। তারপর আমি হৃদয়ের এর সব খুলে বললাম ওরা খুব অবাক হলো আদ্র রাগে গজগজ করতে লাগলো।
আমাকে ওইভাবে ফেলেই সব শুনে বেরিয়ে গেল।

আমি পেছনে থেকে বলল,
আমাকে ছেড়ে দে আমি তো সব বললাম।

শুনার মতো কেউ নেই আমি আর পারবো না কাজটা করেই ফেলবো তখন ওই অচেনা লোকটা আমার হাতের পায়ের বাঁধন খুলে দিলো।
আমি দৌড়ে বাথরুমে গেলাম।
একটু পর বের হতেই আবার আমাকে ধরে বেঁধে ফেললো।
হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম।

আবার বাঁধছেন কেন?

স্যার আপনাকে ছাড়ার কথা বলেনি।

তারমানে আমাকে এভাবেই থাকতে হবে।

হুম।

সব বলেও লাভ হলো না।
__________________

মধ্যে রাতে খিদের যন্ত্রণায় চোখ মেলে তাকালাম। আমি এখন ও ফ্লোরে বসে হাঁটুতে মুখ গুজে আছি। সারাদিন আমাকে এখানে থেকে উঠাতে পারিনি আর না খাওয়াতে পেরেছে। সকালে একটু খেয়েছিলাম । তাও নিজের জন্য না আদ্রর জন্য আমাকে অসুস্থ দেখলে কষ্ট পাবে তাই। বিছানায় উপর খাবার পরে আছে খেতে ইচ্ছে করছে তবুও খাচ্ছি না। পানির বোতল নিয়ে পানি খেয়ে কাঁদতে লাগলাম কালকে নাকি ওই জানোয়ারটা আমাকে বিয়ে করবে। আদ্র এখনো এলো না কেন আমাকে নিতে।
চোখ বুজে মাথা কোনায় ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে র‌ইলাম চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। চোখে আদ্রর বিয়ের পোশাক পড়া হাসি মুখটা ভেসে উঠলো কতো খুশি ছিলো আদ্র এখন ও কেমন আছে কি করছে আল্লাহ জানে।
ওইভাবে ঘুমিয়ে পরলাম। হঠাৎ তীব্র আওয়াজ এ ধরফরিয়ে উঠলাম। মাথা তুলে তাকালাম চমকে। এমন শব্দ আসছে কোথা থেকে। দরজা নরছে কেউ দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে কে? আমি ভয়ে আতকে উঠলাম দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে র‌ইলাম দরজার দিকে কে মন করছে? হৃদয় সে এমন করবে কেন মনে হচ্ছে দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে কে? বাইরে শুরগুল শোনা যাচ্ছে কি হচ্ছে ভয়ে আমি কাঁপতে লাগলাম।
দরজা খুব মজবুত এতো সহজে খোলা পসিবল না। ভাঙাও না। হঠাৎ থেমে গেল দরজা ধাক্কা আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি।
তখন ই দরজা খুলে গেল স্বাভাবিক ভাবেই আমি ভয়ার্ত চোখে তাকালাম কে আছে দেখার জন্য। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো আদ্র। আদ্রকে দেখেই আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি আদ্রর শুকনো মুখটার দিকে। আদ্রর এখানে কিভাবে? ভয় নিমিষেই দূর হয়ে গেল। আদ্র আমাকে খুঁজতে চারপাশে তাকিয়ে দেখতে পেয়ে ছুটে এসে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।

আদ্ররা মাইশার থেকে সব শুনে হতভম্ব হয়ে বেরিয়ে এসে কেউ কল্পনা করতে পারেনি হৃদয় এর কথা আর না বিলিভ করেছে। তাই পুলিশ কে খবর দেয় নিশাত চলে এসেছে ওর ফোর্স নিয়ে সবাই মাইশার বলা জায়গায় আসে আর একটা বাসা পায় নির্জন এই জায়গাই। পুলিশ পুরো বাসা ঘিরে ফেলে আদ্র নিশার রাহাত ভেতরে ঢুকে। বাইরে কিছু গুন্ডা পাহাড়ায় থাকে তাদের ধরে নিয়েছে পুলিশ।
ভেতরে ঢুকে ওরা একটা রুমে হৃদয় কে পায় ও নেশা করছে। ওর পাশে বসা একটা মেয়ে হৃদয় কে দেখে সবাই চমকে উঠে। তারমানে মাইশার কথা সত্যি। আদ্র এক সেকেন্ড দেরি না করে ওর নাক বরাবর ঘুসি মারে। আচমকা আঘাত এ হৃদয় চমকে উঠে। আর চোখের,সামনে আদ্র নিশাত পুলিশ ড্রেস পড়া রাহাত সবাইকে দেখে ভয় পেয়ে পায়।
আদ্র ওর কলার টেনে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করে বল স্নেহা কোথায় কার করেছিস ওর সাথে?
হৃদয় নেশায় বুঁদ হয়ে আছে কিছু বুঝতে পারছেনা ও ভাবছে নেশার ঘুরে ভুল দেখছে কিন্তু মার খেয়ে বুঝে এসব ভুল না সত্যি। কিন্তু ওরা আসলো কি করে? আমার লোক ক‌ই? আদ্র একের পর এক আঘাত করছে নিশাত আর রাহাত ওকে থামায়।
শত মার খেয়েও হৃদয় মুখ খুলে না তখন আদ্র নিজে থেকে খুঁজে আমার রুমের কাছে আসে আর তালা দেখে সন্দেহ হয় কারন কোন রুমে তালা নাই তাই নিজে ভাঙার চেষ্টা করে পারে না। আবার হৃদয় এর কাছে গিয়ে চাবি চায় ও দেয় না। তখন আদ্র নিজেই ওর পকেটে খুঁজে খুঁজে প্যান্টের পকেট থেকে চাবি নিয়ে আসে আর আমাকে পায়।
মাইশা আর হৃদয় কে নিশাত থানায় নিয়ে যায়।আর আমাকে আদ্র বাসায় নিয়ে আসে সারা রাস্তা আমি আদ্রর বুকের সাথে লেপ্টে থাকি ভয়ে আমার হাত পা এখনো কাঁপছে।
বাসায় আসতেই সবাই আমাকে জরিয়ে ধরে একে একে। সকালে ভাইয়ার কাছে যাই।রাতে তাকে ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো হয়। তাই আর যাইনা আসতে আসতে ভোর হয়ে যায়। বাসায় এসেই আমি খেয়েছি তারপর ঘুম।
ভাইয়াকে ধরে কাঁদি ভাইয়া ও কাঁদে।
পরদিন রুনা আপুরা চলে যায়। অন্তরার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। সব শুনাল পর থেকে পাথর হয়ে আছে না কথা বলছে না কাঁদছে। আমাকে গিয়ে কতো কথা বললাম না তাকালো না কথা বললো বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো আমার। অন্তরা আর অলি চলে গেল আদ্র যেদিন আমাকে শশুর বাড়ি নিয়ে এলো সাথে আমি ভাইকেও নিয়ে এলাম। বিয়ে সব আপাতত বাদ। এই বাসায় একটা পার্টি এর আয়োজন করে আমার আর আদ্রকে পরিচয় করিয়ে দেবে শুনলাম। তা ঠিক হলো এক সপ্তাহ পরে।
আমি এখনো মাঝরাতে আদ্র বলে ভয়ে চিৎকার করে উঠি আমার মনে হয় আবার আদ্রর থেকে আমাকে আলাদা করে দিবে।
আস্তে আস্তে আমি স্বাভাবিক হয়।
দুইদিন পর পার্টির আয়োজন করেছে জাইন হঠাৎ এসে জানালো অন্তরা সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে ও হসপিটালে। আদ্র সেখানেই আছে চমকে দাঁড়িয়ে পরলাম ওকে নিয়ে আমিও হসপিটালে এলাম।

অন্তরা মাথা নিচু করে বসে আছে চোখ দিয়ে গলগলিয়ে পানি পরছে আন্টি আন্কেল বাইরে রেখে বসে আছে। তাদের রাগের কারনটা আমি জানতে পারলাম। অন্তরা প্রেগন্যান্ট। এটাই ওর সুইসাইড এর কারন। বাসায় এটা জানার পর অনেক বকাবকি করেছে তাই নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি অন্তরার কাছে আসতেই দেখলাম কাঁদছে।আমাকে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো।

আমি খুব পাপ করে ফেলেছি রে স্নেহা এখন কি হবে আমার। আমার জন্য সবাই এতো কষ্ট পাচ্ছে আর আমি সবার মান সম্মান নষ্ট করে দিলাম।পাড়া প্রতিবেশী সবাই আমার করা অন্যায় এর জন্য বাবা মা কে কথা শুনিয়েছে। হৃদয় কেন করলো আমার সাথে এমন কেন কি ক্ষতি করেছিলাম আমি ওর। ও যেহেতু তোকে ভালোবাসে তাহলে আমাকে নিয়ে কেন খেললো। কেন আমার জীবনপা নরক করে দিলো কেন?

কিছু বলতে পারছি না আমি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছি অন্তরার দিকে।এই কদিন একটু ও কাঁদেনি পাথর হয়ে বসে ছিলো। আর আজ সমস্ত কষ্ট বাইরে বেরিয়ে এসেছে ওর কি বলে সান্তনা দেয় ওকে।
আমি কিছু বলতে পারলাম না বেরিয়ে এলাম রুম থেকে। সিদ্ধান্ত নিলাম হৃদয় কে এই সন্তান এর কথা বলবো তাতে যদি ও অন্তরাকে মেনে নেয়।
হৃদয় এর সাথে দেখা করলাম কিন্তু অদ্ভুত ও বলল ওই সন্তান ওর না। মুখের উপর না করে দিলো আর আমার সাথে খারাপ কথা বলতে লাগলো ঘৃণার চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে এলাম।

পরদিন সকালে মাইশার বাবা এলো এসেই আদ্রর পা চেপে ধরে মেয়েকে ভিক্ষা চাইলো।মাইশাকে জেলে থেক ছাড়াতে পারবে না আদ্র না চাইলে। আদ্র তো একটু ও রাজি না কিন্তু একজন বাবার কষ্ট আমি উপলদ্ধি করলাম আর মাইশা ছেড়ে দিতে বললাম। তখন ও আমি জানতাম না জনি আমার ভাইয়ের শশুর।
মাইশা কে ছাড়া হলো।

পার্টির দিন এলো কোন রকম শেষ হলো আমার মনটা খারাপ‌ই ছিলো। অন্তরার জন্য মনটা বিষন্ন হয়ে আছে। সেদিন রাতে খবর পেলাম একটা যা শুনে শকড আমি‌। অন্তরা আর নিশাত এর বিয়ে। সেখানে গেলাম বিয়েটা কাকির নিষেধ এ হচ্ছে তিনি অন্তরাকে এভাবে কষ্টে রাখবেন না ওর দায়িত্ব নিবে। তাই এই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিশাত সেটাই রাজি কারণ মার কথা সে খুব শুনে কাকা এতে অমত করে কিন্তু কাকি কানে নেয়না। অন্তরা ও রাজি হয় না কিন্তু নিজের বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে যায়। নিশাত স্বীকার করে অন্তরা গর্ভের সন্তান কে নিজের সন্তানের স্বীকৃতি দেবে। কাকা রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায় ব্যাপারটা আমার খারাপ লাগে। আদ্র এখনো ও জানে না নিশাত তার ভাই।

সময় নিজের গতীতে চলতে লাগে। হৃদয় জেলেই আছে ওকে ও বাপ ও ছাড়াতে পারেনা। আদ্রর অনুমতি ছাড়া ছাড়াতে পারবে না কিন্তু তিনি নিজের ছেলেকে ছাড়ানোর সব চেষ্টা করছে।

একদিন বিকেল থেকে আদ্র আমাকে রুমে ঢুকতে দিচ্ছে না আমি ভ্রু কুঁচকে সোফায় বসে আছি। তো একবার আশার রুমে যাচ্ছি আদ্র এমন কেন করছে আমার মাথা ঢুকছে না। আদ্র এখন অফিসে যায়।
রাতে আমাকে আশা শাড়ি পরিয়ে সাজাতে লাগলো আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করছি এসব কেন করছে? সে আমাকে চুপ করিয়ে দিয়ে নিজের কাজ করছে।

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here