অচেনা শহর পর্ব ১৫

#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[১৫]

আপনি আমার সাথে কি ঝগড়া করতে চাইছেন?

তাইতো চাইছি অনেকদিন হলো ঝগড়া হয় না।

কিন্তু আমার এখন ঝগরা করা মন নাই আমি আজকে খুবই খুশি। আমি সারাটা দিন কতটা চিন্তায় ছিলাম জানেন আপনি।

জানি তো।

জেনে শুনে আপনি আমাকে কষ্ট দিলেন তাই না।

সব সময় তো একাই কষ্ট পাও। এখন না হয় একটু জেনে শুনেই দিলাম।

যাই বলেন। ঝগড়া আমি করছি না।

কথাটা বলে আদ্রর হাত থেকে খাবার মুখে পুরে নিলাম। আদ্র আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে আমি উজ্জ্বল মুখ করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি‌।‌আদ্র আমার উপর রাগ করেনি। এতদিন পর আদ্রর স্বাভাবিক আচরণ দেখে যেন আমার সারা শরীরে সুখ বয়ে গেল। মন চাইছে আদ্রকে জাপটে ধরে বুকে মাথা রাখি।
জ্বরের শরীর আমার কাঁপছে খেতে এতো বিচ্ছিরি লাগছে কি বলবো তেতু হয়ে আছে মুখ তবুও আদ্রর হাতে খাচ্ছি। আদ্রর যত্নে আদর মাখা হাতে খাবার খাওয়াটা মিস করতে চাইনা। অন্যমনস্ক হয়ে খাচ্ছিলাম তো ফট করে গলায় আটকে গেল খাবার।

গলার হাত দিয়ে কেশে উঠলাম।আমার কাশি দেখে আদ্র ভয় পেয়ে গেল। উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

কি হলো তোমার?

আমি কাশির জন্য কথা বলতে পারছি না। আদ্র উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করতেছেই আমি হাত বাড়িয়ে পানি দেখালাম। পানি দেখাতেই আদ্র ছুটে পানি নিয়ে এসে খাওয়ালো পানি খেয়ে আস্তে আস্তে আমার কাশি কমে এলো।
আদ্র আমার মাথায় হারাচ্ছে। কাশি থামতেই জিজ্ঞেস করলো,
কি এতো ভাব বলো তো এখন‌ই কি হতো?

আমি বললাম, কিছু হতো না আপনি আছেন তো।

এতো বিশ্বাস কবে হলো আমার উপর।

আগে থেকেই। আপনার উপর বিশ্বাস প্রথম থেকেই ছিলো।

আদ্র আমার দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি আর খেলাম না আদ্র জোর করছিল কিন্তু খাইনি‌। আদ্রকেও খেয়ে নিতে বললাম ও আমাকে খাওয়ানো প্লেট থেকে বাকি খাবার খেয়ে নিলো।আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি আদ্রর খাওয়ার দিকে। মনে মনে এটা দেখে আমি তৃপ্তির হাসি দিলাম।
আদ্র আমাকে ওষুধ খাইয়ে দিলো। তারপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

এবার ঘুমাও।

আমি হাঁ করে আদ্র দিকে তাকিয়ে আছি অপলক।
আদ্র আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নিজেকে এত ভাগ্যবতী সুখী মনে হচ্ছে আমার। মনে মনে একটা কথাই বলছি এখন যদি আমি মরে ও যাই তবুও সেটা সুখের মৃত্যু হবে কারণ আমার পাশে আছে আদ্র আছে।আমি একা বারিয়ে আদ্রর হাত মাথা থেকে টেনে নিজের বুকের চেপে ধরলাম।

আদ্র আমার এতো সুখ লাগছে আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না।আপনি আমাকে ভুল বুঝেননি। এখনো কতো কেয়ার করেন এসব দেখলে আমার সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করে। জানেন আমি …

আদ্র বাম হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরলো।
ঘুমাও পরে কথা শুনবো।

আমি আদ্রর হাত মুখ থেকে সরিয়ে জরানো কন্ঠে বললাম,,
আমাকে বলতে দিন।আপনাকে কতো কথা বলার আছে জানেন এক মাস আমি কতোটা কষ্ট পেয়েছি।আপনি ঠিকই বলেছিলে আপনি চলে গেলে আমি আপনার শুন্যতা অনুভব করবো ঠিকই করেছি প্রতিটা মুহুর্তে আমাকে আপনার শূন্যতা কুরে কুরে খেয়েছে। আপনি সেদিন রাগ করে কথা না বলে কেটে দিলেন আর ফোন দিলেন না জানেন আমি কতোটা কষ্ট পেয়েছিলাম।কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। রাত ভর অন্ধকারে একা কেঁদে বুক ভাসিয়েছি। আস্তে আস্তে আমি যে আপনাকে ভালো……

আদ্র বাকরুদ্ধ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কথা বলতে বলতে মাঝ পথেই ঘুমিয়ে পরলাম।
আদ্র আমাকে মাঝপথে থামতে দেখে দেখ আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। আমি যেটা ভাবছি তুমি কি সেটাই বলতে চাইছিলে স্নেহা। কথাটা ভাবতে আদ্রর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। স্নেহার মুখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে। তারপর স্নেহার ধরে রাখা হাতের দিকে তাকালো। এখনো শক্ত করে আদ্রর ডান হাত ধরে আছে স্নেহা। আদ্র স্নেহার হাত উঁচু করে হাতের উপর পরপর দুবার নিচের ঠোঁট ছোঁয়ালো।

“আমি চাই তুমি সব সময় আমার হাতে এভাবে ধরে থাকো স্নেহা। কখনো কোন পরিস্থিতিতে না ছাড়ো।”

স্নেহা আদ্র কথা শুনতে পেল না কিন্তু আদ্র নিজের মতো বলেই গেল।
তারপর স্নেহার মুখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে র‌ইলো আদ্র এই মেয়েকে ও পাগলের মতো ভালোবাসে। যার চোখেও ইদানিং নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে পায় সেটা দেখেই আদ্রর প্রাপ্তির আনন্দ পায়। ভালোবাসা মানুষের চোখেও নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে পাওয়া যে কতোটা আনন্দে সেটা একমাত্র যে দেখে সেই বুঝে।
আদ্র মাথা নিচু করে স্নেহার ঘুমন্ত অবস্থায় কপালে চুমু দিলো।
গালে হাত দিয়া আদ্র স্নেহার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

মাঝরাতে আমি চিৎকার দিয়ে উঠে বসে। আদ্র আমার পাশে শুয়েছিল। আমার চিৎকার শুনে চমকে ওঠে,,,
হাত বাড়িয়ে ডিম লাইট জ্বালিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দেখে আমার সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে আছে। ভয়ে থরথর করে কাঁপছি আমি।
আদ্র ভয় পেয়ে যায় আর আমার কাঁধ ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে,,

কি হয়েছে স্নেহা তুমি চিৎকার করলে কেনো? খারাপ কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছো?

আদ্র আমি খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছি।ভাইয়াকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি ভাইয়ার খুব বিপদ।আমার ভাইয়া কে বাঁচাতে হবে সাহায্য করতে হবে ভাইয়া খুব কাঁদছিল। আমার কাছে ক্ষমা চাইছিল। তারপরই একটা ট্রাক এসে না আমি ভাইয়া কিছু তে দেবানা ভাইয়া যত খারাপই হোক আমি ভাইয়া কিছু হতে দিতে পারব না।
আমি পাগলের মত ভাইয়াকে নিয়ে নানান কথা বলে যাচ্ছি। আদ্র আমার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু এটুকু বুঝতে পারছে আমি কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছি যার জন্য এমন করছি। তাই আদ্র আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে। জরিয়ে ধরে শক্ত করে বুকের মাঝে চেপে ধরে।

স্নেহা প্লিজ স্টপ তুমি দুঃস্বপ্ন দেখেছো?কারো কিছু হয়নি দেখো তুমি ঘরে আছো?

আদ্র আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে আমি বুঝতে চাইছি না। আমার বারবার মনে হচ্ছে ভাইয়া বড়োসড়ো কোন বিপদ আসতে চলেছে। যেভাবে হোক ভাইয়ের সাথে দেখা করতে হবে আর এটা স্বপ্ন ছিল। আমি আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে গেলাম।

আমি মাথা উঁচু করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,
এটা স্বপ্ন হলেও আমার ভাইয়ের জন্য চিন্তা হচ্ছে আদ্র।

তোমার জ্বর ছেড়ে গেছে ঘামে গেছো? জ্বর আসলে এমন ভুল ভাল স্বপ্ন দেখে সবাই। আমি আগে দেখতাম কত। যখন ছোট ছিলাম আমিও অনেক বাজে বাজে স্বপ্ন দেখতাম তখন আম্মু আমাকে সামলে নিতো।
আদ্র নিজের মায়ের কথা বলে নিজের মুখটা ছোট করে ফেলল।
আমি বুঝতে পারলাম কেন এমন করেছে।

আমার আম্মু এত খারাপ না স্নেহা।কিন্তু আমমুকে খুব ভালোভাবে ভুল বুঝানো হয়েছে।

আমি হালকা হেসে বললাম, সেটা আমি জানি এইসব কিছু করেছে মাইশা আপু।

মাইশার নাম শুনতে আদ্র চেয়াল শক্ত করে ফেলল।

ওর এমন অবস্থা করব ও তোমার পা ধরে ক্ষমা চাইবে দেখো। কিন্তু এই সবকিছু মাইশা একা করেনি আরেকজন আছে তাকে খুঁজে বের করতে হবে আগে।

আরেক জন কে?

জানিনা কিন্তু সেও তোমার উপর খুব কেয়ার ফুল।

মানে। অবাক হয়ে বললাম।

মানেই টাই বের করতে হবে। এখন কথা না ঘুমাই ঘুম পাচ্ছে খুব।

বলে আদ্র আমাকে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়ল। আর আমার মাথায় একটু চিন্তা ঢুকে গেল। মাইশা আপুর সাথে আরেকজন আছে সে কে হতে পারে।

আদ্র তখন‌ই আমার কপালে কিস করলো ফট করে আমি চমকে উঠলাম। আদ্র বলে উঠলো,,
চুপচাপ ঘুমাও চিন্তা বাদ দিয়ে।

~~চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here