অচেনা শহর পর্ব ১৯+২০

#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[১৯]

ভাইয়া কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি আদ্রর টিশার্ট শক্ত করে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে কেঁদেই যাচ্ছি। কিছু তেই কান্না থামাতে পারছিনা। বুকের ভেতরটা শুন্য লাগছে ভাইয়া ঠিক হবে তো।
তখন ওই অবস্থায় আমি রাস্তায় পারেই বসে পরি নরাচরার শক্তি হারিয়ে ফেলি কাঁপতে কাঁপতে ফোন বের করে আদ্রকে শুধু বলি আমি যেখানে আছি সেই জায়গায় যেন ও তারাতাড়ি চলে আসে।
আদ্রকে বলতেই ও ছুটে আসে ততক্ষনে রাস্তায় লোকজনের ভিড় লেগে যায়।
সবাই ভাইয়ার চারপাশে ঘিরে ধরে নানান কথা বলতে লাগে আমি কাছে যেতে পারি না। আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। আদ্র আমার কথা মতো গাড়ি নি আসে ওর সাথে জাইন ও আসে।
ওরা এসে রাস্তায় একপাশে এতো মানুষের ভিড় দেখে ভয় পেয়ে যায় স্নেহার কিছু হয়নি তো।
বুকে হাত দিয়ে আদ্র ভিড়ের দিকে যাবে তখন ওর খেয়াল হয় ভিড় বাদে রাস্তায় গান পাশে স্নেহা বসে থরথর করে কাঁপছে। আর মুখে হাত দিয়ে কেঁদে চলছে এটা দেখেই ওর বুকের ভেতর ধক করে উঠে।

দৌড়ে এসে স্নেহার পাশে বসে ওর মুখে দিকে তাকায় কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।
কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই আমি মাথা উঁচু করি। আদ্রকে দেখেই ওর হাত শক্ত করে

খামচে ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় বলি,,
আদ্র আমার ভাই…

গলায় কথা আটকে আসছে। আদ্র উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,,

কি হয়েছে ভাইয়ের বলো?

আমি হাত উঁচু করে ভিড়ের দিকে দেখিয়ে বললাম,
ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছে।

আদ্র আমার কথা শুনে থমকে ভিড়ের দিকে তাকায়। আমি কথাটা বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি তারপর চোখ খুলে হসপিটালে বেডে নিজেকে পায়।
আদ্র আমার হাত ধরে বসে আছে। আমার ভাইয়ার কথা মাথায় আসতেই ধরফরিয়ে উঠে বসি।

উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগি,,,আদ্র ভাইয়া কোথায় ভাইয়া ঠিক আছে তো?

আদ্র আমাকে কাঁধ শান্ত হতে বলে। কিন্তু আমি ওর কথা শুনছি না তাই একটা ধমক দেয় তা শুনে চুপ করে যায়। কিন্তু ফুপাতে লাগি।

প্লিজ স্নেহা এমন করো না। এতোটা হাইপায় কেন হচ্ছো? নিজেকে শক্ত করো আল্লাহ কে ডাক। এই ভাবে কান্না করলে কি কিছু হবে মাঝখান থেকে তুমি অসুস্থ হয়ে পরছো। ভাইয়া কেমন আছেন এখনো জানি না কারণ তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তুমি এতোটা পাগলামো করলে আমি কোনদিকে যাবে বলো তো। এতোটা পেশার নিয় না প্লীজ আল্লাহ চাইলে ভাই ইনশাআল্লাহ ঠিক হবে যাবে দেখো। আল্লাহ্ উপর ভরসা রাখো আর নিজেকে শান্ত রাখো‌।

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। কিন্তু কান্না আটতে পারিনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছি। আদ্রকে জোর করে ধরে ভাইয়ার কেবিনের সামনে এসে বসে আছি। আদ্র আমার মাথা হাত বুলিয়ে শান্ত থাকতে বলছে।

স্নেহা ছারো আমাকে ডাক্তার আসছে।

আদ্রর কথা শুনেই আমি ওকে ছেড়ে দেয়। আদ্র উঠে ডাক্তার এর কাছে যায় আমি ও পেছনে পেছনে যায়।

আদ্র ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করে ভাইয়ার কা অবস্থা ডাক্তার হাসি মুখেই ভালো আছে বলে। কথাটা শুনে আমার দেহে যেন প্রান ফিরে আসে আমি হাত উঁচু করে চোখের পানি মুছে ডাক্তার এর কাছে যাচ্ছি ভাইয়ের সাথে দেখা করার কথা বলার জন্য তখন ডাক্তার বলে উঠে,,

উনার আঘাত মাথা কম ছিলো তাই বেঁচে গেছে কিন্তু শরীর এ আঘাত বেশি আর বিশেষ করে পায়ে আঘাত খুব গুরুতুর মনে হচ্ছে পা দুটো ড্র্যামেজ হয়ে গেছে।

কথাটা শুনেই আমার পা থেমে যায়।
ডাক্তার কথাটা বলেই চলে যায়। আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে চমকে এগিয়ে আসে।

স্নেহা প্লিজ….

আদ্র ভাইয়ের পা নষ্ট হয়ে গেছে। আমি দেখেও কিছু করতে পারিনি আমার চোখের সামনে সব হলো।
বলেই কেঁদে উঠলাম।

নিজেকে কেন দোষারোপ করছো? তুমি কি করতে বলোতো?

আমি জানি না আমার এইসব কিছুর জন্য নিজেকেই দায়ী লাগছে।

তুমি দায়ী না স্নেহা। নিজেকে দায়ী করা অফ করো। চলো ভাইয়াকে দেখে আসি।

আদ্র আমাকে ধরে ভাইয়ার কেবিনে নিয়ে গেল ভাইয়া বিছানায় নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে।মুখে অক্সিজেন মাস্ক।‌হাতে স্যালাইন দেওয়া পায়ে ব্যান্ডেজ করা গাড়িটা যাওয়ার সময় পায়ে উপর দিয়ে যাচ্ছিলো তাই এই অবস্থা। ভাইয়া জ্ঞান ফিরে যখন দেখবে তার পা শেষ তখন কেমন রিয়েক্ট করবে আল্লাহ জানে।
স্নেহা কাঁদছে তাই আদ্র ওকে নিয়ে বাইরে এলো।
আরো এক ঘন্টা পর সিগ্ধর জ্ঞান ফিরলো।
জ্ঞান ফিরতেই স্নেহা আর আদ্র ভেতরে গেল। সিগ্ধ চোখের সামনে নিজের বোন কে দেখে ছলছল চোখে তাকিয়ে র‌ইলো। ডাক্তার ওর অক্সিজেন খুলে নিয়েছে সেটা ছারাই ঠিক আছে তাই।

ও বুঝতে পারছে না এখানে কি ভাবে এলো।
আজ সকালেই তো মহুয়া ওকে ডির্বোস দিয়েছে। সাথে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। সেই শোকটা ও মানতে পারিনি তাই তো বাইরে এসে চায়ের দোকানে বসে ছিলো। এমনিতেও দুইদিন ধরে ওকে অফিসে যেতে হয়না মহুয়ার বাবা যায়।
নিজের জীবনের গতি দেখছে সিগ্ধ। এটা ওর পাপ্য ছিলো হ্যা।
পর কে আপন ভাবার শাস্তি আর আপনকে পর করার।
উদাস হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগে এই জীবন রেখে লাভ কি মরে যাওয়া ভালো। কিন্তু একবার যে বোনটার সাথে দেখা করতে হবে খুব অভিমান হয়েছে যে তার এই অকৃতজ্ঞ ভাইয়ের উপর হবে তো ও তো তেমন একজন‌ই স্নেহা ওকে ঘৃণা করে ওর মুখ দেখতে চায়না কিন্তু তাও একবার ওর কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবো।চাইতেই হবে অনেক অন্যায় করেছি আমি কিন্তু হঠাৎ রোড পার হ‌ওয়ার সময় একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে পথে যায় সাথে গাড়িটা আমার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায় এতো ব্যাথা হয় যেন জান বের হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীতে আমার সময় শেষ কিন্তু আফসোস ক্ষমা চাওয়া হলো না।
আস্তে আস্তে চোখে অন্ধকার নেয়া আসে।
চোখ খুলে নিজেকে হসপিটালে বেডে পাই বুঝতে পারি কেউ আমাকে বাঁচিয়েছে কিন্তু কে যেই হোক তার জন্য আমি ক্ষমা চাওয়ার একটা সুযোগ পেলাম।
এখন স্নেহাকে খুঁজে পেতে হবে। তখন দরজা খুলে কেউ ভেতরে ঢুকে তাকে দেখে থমকে যাই স্নেহা দাড়িয়ে আছে।
এটা কার আমি সপ্ন দেখছি নাকি।

স্নেহা আমাকে ঠিক আছি কিনা জিজ্ঞেস করছে।

আমি বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি ওর সাথে আরেকটা অপরিচিত ছেলে কে এই ছেলে?
হঠাৎ মনে পরে স্নেহা বলেছিলো ওর স্বামী এখন ও সব।
এটা কি ওর বর?

আমি গিয়ে ভাইয়ার হাত ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলাম। ভাইয়ার আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

কাদিস না এটা আমার পাপ্য ছিলো। কিন্তু তুই আমাকে কোথায় পেলি।

ভাইয়ার তোমার এই অবস্থা আমি মেনে নিতে পারছি না সবার মতো তুমি ও আমাকে ছেড়ে যেতৈ চাও?

আমাকে না ঘৃণা করিস তাহলে কষ্ট পাচ্ছিস কেন?

আমি কিছু বললাম না।

তোদের উপর যে অন্যায় করেছি তার কাছে এটা কিছুই না। আমি তো চেয়েছিলাম মরে যেতে কিন্তু জানিস ওই সময় আমার আফসোস হচ্ছিল মরার আগে তোর কাছে ক্ষমা চাইতে পারলাম না‌।

ভাইয়া এসব বলো না। তুমি কেন এসব চাইছো আমি তোমাকে ওইদিন অপমান করেছি তাই‌?

না রে নিজের অপর্কম বুঝতে পেরেছি স্নেহা এখন এই মুখ নিয়ে আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না।
তাদের উপর যে অন্যায় করেছে কোনভাবেই ক্ষমার যোগ্য না।আমি জানি আপন মানুষ কে পর ভেবে যাদের আপন ভেবে গিয়েছিলাম আজ তারাই আমাকে লাথি মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।তারা ঠিকই করেছে জানিস। নিজের বাবা-মাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম আজ তারাই পৃথিবীতে নেই মরার আগে তাদের মুখ দেখতে পারলাম না না তাদের কবরে মাটি দিতে পেরেছি।আমার মত অভাগা সন্তান আর কটা আছে বলতো না ছেলে হতে পেরেছি ভালো না ভালো ভাই হতে পেরেছি না।হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম শুধু একজনের স্বামী কিন্তু আমি সেখানেও ব্যর্থ আমার জায়গাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণী। যে সবার ঘৃণার পাত্র সবার চোখের বিষ। এইটা অবশ্য আমি তৈরি করেছি। আমার বেঁচে থাকার কোন অধিকারই নেই তবুও কিভাবে বেঁচে গেলাম বলতো।আমার জন্য কাঁদছিস? এই চোখের জল ফেলার মতো কেউ কি আমার আছে? তোর চোখে নিজের জন্য পানি দেখতে পারবো আশা করিনি।
#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[২০]

এক সপ্তাহ পর হসপিটালে থেকে ভাইয়াকে বাসায় আনা হয়েছে। ভাইয়া এখন সুস্থ কিন্তু তার পা ভাঙা হাঁটতে পারে না। কষ্ট হলেও মনে শান্তি যে ভাইয়া সুস্থ আছে।
বাসায় আসার পনেরো দিন হলো। ভাইয়া এখনো আমার দিকে অপরাধীর মতো তাকিয়ে থেকে। আমি কিন্তু তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি তবু ও ভাইয়ার মুখটা কাদো হয়ে থাকে।
এই পনেরো দিনে দুই বার এসেছে আদ্র মা এই বাসায় ছেলের জন্য পাগল পাই। কিন্তু আদ্রকে গলাতে পারি না। কেঁদে কেটে চলে গেছে আরেকবার এসে আমার হাত চেপে ধরলেন উনি আমি বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে গেলাম।

উনি আমি কিছু বলার আগেই বলে উঠলো,
“আমার ছেলেটা কে ফিরিয়ে দাও মা আমি পারছিনা। আমার একটা মাত্র ছেলে সে আমার সাথে কথা বলে না কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যায় আমি জানি তুমি বললে ও তোমার কথা শুনবে। আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার জানি এর পর আমার কথা শুনবে না কিন্তু তুমি বলো আমার জায়গায় থাকলে তুমি কি করতে? আমার কাছে এখনো তুমি খারাপ ই আছো কারণ আমি যা দেখেছি তারপর তোমাকে আমার মন থেকে মানতে পারবো না। কিন্তু আমি আমার ছেলের ইগনোর ও মানতে পারবো না। ওর জন্য তোমাকে ও মেনে নেব কিন্তু সেটা উপরেই মনে থেকে নয়। তুমি চাইলে আবার ওই বাড়ি ফিরতে পারো কিন্তু আমি তোমাকে মন থেকে মানতে পারবো না। ছেলের জন্য এটা আমি সহ্য করবো। ”

আমি ছলছল চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি এতৈ ঘৃণা উনার চোখে নিজের জন্য দেখে আমার চোখে থেকে গাল বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো।
উনি আবার বললেন,

“আমার ছেলেকে এভাবে আমার থেকে আলাদা করো না প্লিজ ওকে তুমি ভিক্ষা দাও। ”

উনি আরো অনেক কথা বলে চলে গেলেন। আমি ধপ করে সোফায় বসে পরলাম তো চোখ দিয়ে গলগলিয়ে পানি পরছে। বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে আমার।
তখন খটখট শব্দ শুনে তারাতাড়ি চোখের পানি মুছে ফেললাম তাকিয়ে দেখি ভাইয়া হুইল চেয়ারের করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।

একি একা আসছো কেন আমাকে ডাকতে?

ভাইয়া আমার কাছে এসে বলল,
তুই কাদছিলি কেন স্নেহা?

ভাইয়া কথা শুনে চকিতে তাকালাম, ভাইয়া আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে,
কি হলো বল?

ক‌ই কাঁদছিলাম? আমি কাঁদতে যাব কেন কি সব বলছো?

আমাকে মিথ্যা বলিস না স্নেহা আমি জানি তুই কাদছিলি? ভাইকে বলবি না নাকি আমি তোর অকৃতজ্ঞ ভাই বলে নিজের কষ্টের কথা আমাকে বলা যায় না।

ভাইয়া কথা শুনে আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। ভাইয়া কে জরিয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলাম।
ভাইয়া আমার কান্না দেখে হকচকিয়ে গেল। ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে আমার?

আমি কথা বলতে পারছিনা কেঁদে যাচ্ছি ভাইয়ার বুকটা পেয়েছে আমার আপন ভাই আমার রক্তের ভাই আমি একটু শান্তিতে কাঁদতে চাই। ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। হঠাৎ বলে উঠলাম,
ভাইয়া এখন বাবা বেঁচে থাকলে কতো খুশি হতো তাইনা আমাদের এইভাবে দেখে।

বলেই মাথা উঁচু করে ভাইয়া দিকে তাকালাম ভাইয়া মুখটা মলিন করে আছে চোখের কোণে জল চিকচিক করছে তার।আমি কথা কাটিয়ে বলল,
আমি কতোটা খুশি ভাবতে পারবে না ভাইয়া আমি আবার আমার সেই আগের ভাইয়াকে ফিরে পেয়েছি যে আমি বলার আগেই আমার মন খারাপ ধরে ফেলতো। আমার কষ্ট হলেই নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিতো।কতো মিস করছি এই সময় গুলো ভাবতে পারবে না ভাইয়া। আমি কল্পনা ও করি নি সব আবার ফিরে পাবো।

ভাইয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম।
ভাইয়া বলল,
তোর শশুর বাড়ির কেউ তোকে মেনে নেয় নি তাইনা‌?

ভাইয়া কথা শুনে থমকে সরে এলাম।অবাক হয়ে ভাইয়ার দিকে আছি।ভাইয়া কা করে জানলো এসব। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
তুমি জানলে কি করে?

আমি তোদের কথা শুনেছি সব একটু আগে।

ভাইয়াকে সব বললাম সব শুনে ভাইয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার ফোনটা বিয়ে হয়েও সুখের মুখ দেখলো না এই সব কিছুর জন্য তো কোন না কোন ভাবেই ওই দায়ী।
_______________

রাতের খাবার শেষ করে আদ্র রুমে এসে বসে তখন স্নেহা এসে ওর পাশে বসে ওর মায়ের সাথে করা বলার কথা তুললো আদ্র কি বলল না এবার আমি ওর হাত আঁকড়ে ধরে বললাম,

প্লিজ মার সাথে কথা বলেন উনি খুব কষ্ট পাচ্ছে।

জানি।

তাহলে কথা বলেন না কেন? উনি আপনার মা সেইটা ভুলে যাবেনা না প্লিজ তাকে কষ্ট দিয়ে আমার সুখে থাকতে পারবো না।আর আমি চাইনা সবার বিরুদ্ধে গিয়ে আপনাকে নিয়ে সংসার করতে।

আদ্র আমার দিকে মুখোমুখি হয়ে বসলো, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

আমি কি তোমাকে বলেছি আমি সবাই ছাড়া এখানে সংসার পাতবো একা। এটা আমার করা হলে এতো দিনে তোমার থেকে স্বামীর অধিকার অনেক আগেই নিতাম।আমি আমার পরিবারে সবাইকে নিয়ে আমাদের বিবাহিত জীবন শুরু করবো।

আমি আদ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। আদ্র এগিয়ে এসে আমার কপালে চুমু দিলো আমি আবেশেই চোখ বন্ধ করে নিলাম ্সত্যি আদ্র এখনো আমাকে সে ভাবে স্পর্শ করেনি। আমাদের সম্পর্কটা এখনো থেমেই আছে। কিন্তু আদ্রর ফ্যামিলি কি কোন দিন আমাকে মেনে নেবে।

আদ্র আমার গালে হাত দিয়ে বলল, এতো চিন্তা করো না সবাই তোমাকে শুধু মেনে না খুব ভালোবাসবে দেখো।

আমি ছল ছল চোখ করে বলল,
আমার ভয় হয়। মায়ের চোখে আমার জন্য যে ঘৃণা দেখেছি সে কি কখনো,

খারাপ কথা ভেবে না ভালোটা ভাব।

আমার মাথায় খারাপ টাই আসে।

তাহলে কিছুই ভাবতে হবে না।

ধুর আপনি বললেই বুঝি আমার ভাবনা অফ হয়ে যাবে।

তুমি সব সময় রং টাই ভাববা সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।

আপনি আজ কোথায় গিয়েছিলেন?

কথাটা শুনে আদ্রর মুখের রং চেঞ্জ হয়ে গেল। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি ওর দিকে।

কি হলো কথা বলছেন না কেন?

মাইশার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।

আদ্রর মুখে মাইশার নাম শুনতেই আতংকে উঠলাম। বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে হয়তো বুঝতে পারলো।

আদ্রকে আজ মাইশা কল করে সকালে। মাইশার নাম্বার দেখেই তো আদ্র হতদম্ব হয়ে যায় তারপর মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে তাহলে চলে এসেছে।
ফোন রিসিভ করতেই আদ্র কে দেখা করতে বলে সাথে সাথে আদ্র রাজি হয়ে যায়।
রেস্টুরেন্টে এসেই দেখে মাইশার শুকনো মুখ টা গম্ভীর হয়ে বসে আছে আদ্র গিয়ে বসতেই মাইশা তেজি কন্ঠে বলে উঠে ,,

তুই আমার সাথে এমনটা কি করে করতে পারলি আমি তোর ফ্রেন্ড আদ্র। ওই সামান্য মেয়েটার জন্য আমাকে এইভাবে কষ্ট দিলি।

ওই মেয়ে বলবি বা না ও আমার ব‌উ আমার জীবন। ওকে সামান্য ভেবে একদম ভুল করবি না।

আমার এতোদিনের ভালোবাসা একটুও বুঝতে চাইলি না আর ওই মেয়েটা দেখেই পাগল হয়ে গেলি তোরা সবাই কি পেয়েছিল বলতো ওই মেয়েটার মাঝে কি আছে ওর। আমার দিক থেকে ও সব কিছুতেই কমতি আমি ওর থেকেও সুন্দরী, স্মার্ট, ধনী আর ওর থেকে ও আমি তোকে অনেক দিন আগে থেকে ভালোবাসি সেই প্রথম থেকেই আমি তোর পেছনে পরে আছি । কিন্তু তাও আমার দিকে ফিরে ও তাকালি না ওই ইডিয়েট মেয়েটার জন্য পাগল দেওয়ানা হয়ে গেলি।কি নেয় আমার কেন তুই আমাকে ভালোবাসতে পারলি না কেন বল?

আদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
আমি তোকে আগেও বলেছি এখনো বলছি। আমি তোকে শুধু ই ফ্রেন্ড ভাবি এর থেকে বেশি কিছু না।তোর জন্য আমার ওই ফিলিংস টা কখনো আসি নি যা স্নেহার জন্য অনুভব করেছি।

কেন করিস নি?

এক কথা আমি বারবার বলতে পারবো না তুই ওই ছেলেটাকে দিয়ে স্নেহার নামে যা বলেছিস সব আম্মুর কাছে গিয়ে স্বীকার করবি কাল।

ইম্পসিবল।

তোকে আমি নিচু করতে চাইছি না ভালো ই ভালোই স্বীকার করে নে না হলে। এই ভিডিও টা দেখাতে বাধ্য হবো এটা তোর বাবা মার কাছেও যাবে। তারপর কি হবে ভাবতে পারছিস আমি এটা নিউজ এ ও দিয়ে দেব। কেমন হবে তখন?

তুই এটা করবি না আমি তোর ফ্রেন্ড।

করবো রে আমার স্নেহা তোর জন্য কষ্ট পেয়েছে এতো সহজে তোকে ছারি কি করে।

তুই এসব কিভাবে পেলি।
অবাক হয়ে।

তখন‌ই রাহাত এগিয়ে এলো। মুখে শয়তানি হাসি।

মাইশা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,, তুই আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলি?

মাইশা বাঁকা হাসলো তারপর আদ্র পাশে বসে পরলো।

~~চলবে~~
~~চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here