অজানা তুমি পর্ব ২৫+২৬

#অজানা_তুমি
#রুবাইতা_রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব -২৫

– “আমার দিকে একটু ফিরতে পারবে?”

শুনে লজ্জায় বিছানার চাদর খামচে ধরলাম।কি বলছেন এসব?আমাকে ওনার দিকে ফিরতে কেনো বলছেন?আমার তো লজ্জা লাগছে।কাত হয়ে বসা অবস্থাতেই দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলাম।ইস কি লজ্জা!

– “হেই কি হলো?”

বলে উনি আমার কাধে হাত দিলেন।এতেই যেনো শরীরে তীব্র ঝটকানি লাগলো।আবার দ্রুতই সরিয়ে নিলেন।

– “আব সরি!আমি জানি তুমি ঘুমাও নি।তাহলে খালি খালি জোর করে কেনো ঘুমাচ্ছো?এদিকে ফেরো!দুই একটা কথা বলি।”

বলে উনি চুপচাপ বসে রইলেন।আর কোনো কথা বললেন না।ধীরেধীরে ঘুরে বসলাম উনার দিকে।উনি আমার দিকে কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন আর ড্যাবড্যাব কনে তাকিয়ে ছিলেন।কিন্তু আমি বুঝতে পারি নি।তাই ঘোরার সময় ওনার বুকের কাছে মুখটায় হালকা বারি খেলাম।ইস!আবার দ্রুত সরে গেলাম।আয়রান মুচকি হাসলো।আমি তাকিয়ে রইলাম।আয়রানও আমার দিকে কাত হয়ে শুয়ে আছে আমিও একইভাবে শুয়ে আছি।মাঝখানে দুই তিন ইন্ঞি ফাকা হয়তো।আয়রান হাসি থামিয়ে বলতে লাগলো

– “সরি!”

– “আবার কেনো?”

– “আমার জন্য তোমাকে জেল পর্যন্ত খাটতে হয়েছে।শুধু আমার জন্য।আমি থাকলে এসব তোমার সাথে কখনো হতো না।আই এম সরি।ভেরি সরি!”

বলতে বলতে ওনার কন্ঠের উচ্চতা নেমে এসেছে।গলা ধরে এসেছে।

– “এভাবে বলছেন কেনো?আপনার কোন দোষ নেই।শুধু শুধু নিজেকে দোষারোপ করবেন না।”

– “তুমি বুঝতে পারছো না।আচ্ছা বাদ দাও।তোমার বাসার জিনিসগুলো কি এখনো ওখানেই পড়ে আছে?তোমার বই,খাতা,জামা-কাপড়,তোমার মা-বাবার জিনিস পত্র?সেগুলো কি আছে।আনতো চাও?আনলে বলো আমি গিয়ে নিয়ে আসবো?”

মলিন হাসলাম। কিছু বললাম না।

– “কি হলো?বলছো না কেন?”

– “না নেই!”

– “নেই মানে?”

– “নিয়ে গেছে সবকিছু!”

বলে ছলছল চোখে তাকালাম আয়রানের দিকে।আয়রান প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

-“তোমার মা-বাবার সৃতি।তুমিই দেখিয়েছিলে।আনতে চাও না ওইগুলো?তোমার সব…মানে বুঝতে পারছি না।একটু বুঝিয়ে বলো!”

-“বাদ দিন না।পরে কথা বলি এসব নিয়ে?”

-“না প্লিজ….”

-“প্লিজ থামুন।”

-“হুম।”

তারপর কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজমান।আয়রান আমার দিকে তাকিয়ে আছে বুঝতে পারছি।হয়তো আমার মনের কথাগুলো বোঝার চেষ্টায় আছে।

এদিকে আয়রানের মনটা আকুপাকু করছে।তার দৃষ্টি রুহির ফর্সা সেই নরম তুলতুলে হাতের উপর।খুব করে ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে করছে তার।গলা শুকিয়ে আসছে।তাই ঘনঘন ঢোক গিলছে।কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে।রুহির ফোলা ফোলা গোলাপি গাল,স্ট্রেট সিল্কি চুলগুলো,চশমা না পড়ায় ফুলে থাকা চোখগুলো তাকে তীব্র আকর্ষন করছে।আয়রান কপালের ঘামটুকু মুছে নিয়ে চোখ বন্ধ করলো।নইলে আরো অনেককিছু ইচ্ছে করবে তার।পাশে এরকম মায়াবী এক নারী থাকলে যে কারো মাথা নষ্ট হয়ে যাবে।সেখানে রুহি তো তার স্ত্রী।তার উপর আয়রানের সম্পূর্ণ অধিকার আছে।কিন্তু আয়রান জোর করে সেই অধিকার খাটাতে চায় না।কি থেকে কি হয়ে গেলো।

আমি আয়রানের দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছি।কেমন ছটফট করছে।একবার চোখ খুলছে তো একবার এক চোখ খুলে আমাকে আড়চোখে পরখ করে আবার ফট করে বন্ধ করে নিচ্ছে।পা দিয়ে পা ঘষছে।এতে খসখস করে শব্দ হচ্ছে।যা খুবই বিরক্তিকর।কপাল কুঁচকে ওনার হাবভাব লক্ষ করছি।আয়রান আচমকা আমার গা ঘেঁষে দুই হাত চেপে ধরলো।তারপর গাল চেপে ধরে ঠাস করে চুমু খেয়ে ঝড়ের বেগে সরে গিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি।কি করলো এটা উনি?তাহলে এর জন্যই এরকম করছিলেন?উফ মনে হচ্ছে নিজের সবশক্তি দিয়ে আমার গাল ধরেছিলো।ব্যাথা করছে।গাল মুছে আমিও চোখ বন্ধ করে উল্টো দিকে শুয়ে পড়লাম।লজ্জায় কান গরম হয়ে গেছে।

গভীর রাতে
কোমড়ের উপর ভারী কিছুর অনুভব হতেই ঘুমটা ভেঙে গেলো।বিরক্ত হয়ে সরিয়ে দিলাম।কিন্তু আবার ধপ করে সেই ভারি কিছু আমার উপর পড়লো।পিটপিট করে উল্টো দিকে তাকিয়ে দেখি আয়রান আমার উপর নিজের ডান পা উঠিয়ে হা করে ঘুমাচ্ছে।চাদর দেখে মনে হচ্ছে সাপ পেঁচিয়ে ধরেছে। ফিক করে হেসে দিলাম ওনার অবস্থা দেখে।পা সরিয়ে ঠিকঠাক করে শুইয়ে দিলাম।বুঝিনা ছেলেদের শরীরে এতো ওজন কেনো?মনে হয় হাত পা লোহা দিয়ে তৈরি।আবার ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে তাকিয়ে দেখি আয়রান টাওয়াল দিয়ে মাথা মুচছে আর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।আমি বুঝতে না পেরে সোজা হয়ে উঠে বসে দেখি টপাসটা পিঠের দিকে দিয়ে অনেক উপরে উঠে গেছে।তাড়াতাড়ি ঠিক করে ভ্রু কুঁচকে আয়রানের দিকে তাকালাম।সে হাসতে হাসতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে গেলো।এতো তাড়াতাড়ি উঠলো যে?মাত্র ৬টা বাজে।যাই হোক আমারও উঠা উচিত।এভাবে ঘুমিয়ে থাকলে সবাই খারাপ ভাববে।

-“আরে উঠলে কেনো?আরো একটু ঘুমাও।”

-“আপনি এতো তাড়াতাড়ি উঠলেন কেনো?”

-“আমি তো জগিং করতে যাবো।তাই তাড়াতাড়ি উঠলাম।তুমি ঘুমাও।”

-“তাহলে এখন গোসল করলেন কেনো?আমি তো জানি জগিং করে এসে মানুষ গোসল করে।আপনি দেখি উল্টা।”

-“আরে গোসল করে গেলে ফ্রেশ লাগে।গরমটা একটু কম লাগে।এসে তো আবার গোসল করবো।”

-“দুইবার?”

-“হুম।আচ্ছা উঠে পড়েছোই যখন চলো আমার সাথে দুজোন যাই।ভালো লাগবে।”

-“না না আমি যাবো না।আমি এতো হাটতে পারি না।”

-“আরে চলো পারবে পারবে।”

-“না বললাম তো।”

-“চিল্লাচ্ছো কেন?”

বুঝলাম আয়রানের কিছুটা রাগ উঠেছে।তাই আর কিছু বললাম না।উনি ফুসফুস করতে করতে ওখানেই চেইন্জ করতে লাগলেন।ঠাস করে শার্ট খুলে ঠাস করে ফেললো।আমি পরিস্থিতি বুঝতে পেরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।নিচে নেমে দেখি বাড়ির সব সার্ভেন্টরা রান্নাঘরে নিচে ফ্লোরে বিছানা পেতে শুয়ে আছে।কয়েকজন স্টোর রুমে ঘুমাচ্ছে।বাড়ির সবাই গভীর ঘুম।আমি সার্ভেন্টেদর কাছ দিয়ে ধীরে রান্নাঘরে চলে গেলাম যাতে ওনারা উঠে না যায়।চুলার কাছে গিয়ে কফি বানাতে লাগলাম।

-“হেই!”
#অজানা_তুমি
#রুবাইতা_রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব -২৬

ওনার দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম।জগিং সুটে আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন।এক হাতে ওয়াটার বোতল।মাথায় হুডি দেওয়া।সামনে দিয়ে ছোট ছোট চুল।কোরিয়ান আক্ট্রেসদের মতো।কি কিউট লাগছে!যাই হোক।আমি কফি বানাতে বানাতে বললাম

-“কি?এভাবে হেই হেই করতে করতে আসলেন কেনো?কিছু লাগবে?”

-“তোমাকে লাগবে।”

-“মজা করা বন্ধ করুন।আমি এখন সেই মুডে নেই।”

-“আরে আমি সিরিয়াস।চলো আমার সাথে তুমিও জগিং এ যাবে।যাও রেডি হও।”

-“মানে?বললাম তো আমি যাবো না।তারপরও আবার কি?আমি বেশি হাটতে পারি না।শেষকথা আমি যাবো না।”

-“তোমাকে যেতেই হবে।এছাড়া বাড়ির সবার উঠতে এখনো অনেক অনেক দেরি হবে।তুমি একা একা টো টো করে কি করবে?এর থেকে ভালো চলো।”

-“দেরি হবে মানে?কতো দেরি?”

-“প্রায় ১০টা বাজবে।”

-“এতো দেরি করে ওঠেন ওনারা?”

-“না।তঁবে দাদি বেশি দেরি করেন না ৯টায় উঠে যান।নুরানি উঠে ১০,১২টা বাজিয়ে।কলেজ লেখাপড়ার উপর কোনো মনযোগ নেই।সারাদিন শুধু সাজুগুজু।আটাময়দা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে।সাথে দাদিকেও এড করে।”

-“বাহ।ভালোই তো।”

-“এতো হেসো না।চলো!”

-“না।”

-“হ্যা।”

-“নাাাা।”

আয়রান আমার হাত জোরে ধরে উপরে নিয়ে গেলো।

-“চেইন্জ করো।”

-“চেইন্জ করো মানে?কি পড়বো?”

-“হায়রে।ওয়েইট।”

বলে আলমারি খুলে পারপেল কালারের একটা লেডিস জগিং সুট বের করলো।আমি কোমড়ে হাত দিয়ে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে ওনার কান্ড দেখছি।আয়রান ওইটা আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন।

-“নাও ধরো এইটা পরো।”

-“দাড়ান দাড়ান।এই মেয়েদের গুলো আপনি কই পেলেন?এগুলোও পড়েন নাকি?”

-“ধুর।এগুলো আমি পড়বো কেন?তোমার ননদীনির জন্য কিনেছিলাম।কিন্তু সেতো এগুলো পড়ে আর এতো কষ্ট করে ব্যায়াম করবে না।ছুঁয়েও দেখে নি।তাই আলমারিতে রেখে দিয়েছে।কেনো?তুমি কি ভেবেছিলে?”

-“কিছু না।আমি যাবো না।আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না?”

-“তোমাকে যেতেই হবে।আমার কতো ইচ্ছা ছিলো নিজের বউকে নিয়ে দুইজন একসাথে এক্সারসাইজ করবো।আর তুমি?আমার ইচ্ছার কোনো দাম দিচ্ছো না।কেমন স্ত্রী তুমি হ্যা?”

-“ইশ দেখো কি ঢং শুরু করেছে।আচ্ছা যাচ্ছি।তো আপনি বাইরে যান!”

-“এইতো লাইনে এসেছো।যাচ্ছি!”

বলে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন।বিরক্ত হয়ে পড়ে নিলাম।কেমন কেমন লাগছে।যদিও অস্বস্তি হচ্ছে।কারণ এগুলো তো কোনোদিন পড়ে এতো কষ্ট করে জগিং করি নি।পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছি।এখন সেটাও হারাম করে দিয়েছে।ধুর!উপরের পার্টটা আরো একটু নিচে টেনে নিলাম।যাক মোটামোটি ভালোই লাগছে দেখতে।তঁবে আরো আরো স্লিম হলে হয়তো ভালো লাগতো।জ্যাকেটটার সামনে থেকে চেইন ফুল লাগিয়ে দিলাম।যাতে বাজে দেখতে না লাগে।চুলগুলো পনিটেইল করে উপরে বেধে দরজা খুলে নিচে চলে গেলাম।দেখি ডাইনিং টেবিলে বসে আয়রান আপেল চিবাচ্ছে।আমি গিয়ে টোকা দিতেই উঠে স্ক্যান করে বললো

-“হেই পারফেক্ট মানিয়েছে তোমাকে।লুকিং হট।”

-“ইশ প্রশংসার কি অবস্থা!”

-“সরি সরি।চলো।”

দৌড়াতে দৌড়াতে মনে হচ্ছে হাটুর হাড্ডিগুলো ভেঙে যাবে এমন অবস্থা।আর উনাকে দেখো দিব্বি ব্যাঙের মতো লাফাতে লাফাতে যাচ্ছেন।

-“এই দাড়ান একটু আমার জন্য।”

আয়রান দৌড়েই চললো।আমি দাড়িঁয়ে রইলাম।আর পারছি না।মনে হচ্ছে ১০০মাইল দূরে চলে এসেছি।কান্না পাচ্ছে প্রচুর।কি একটা অবস্থা!

-“এইযে আয়রন ম্যান আমি আর যেতে পারবো না।আপনি যান।আমি ব্যাক করি।”

-“না না না।এতোটুকু আসতেই এতো কষ্ট হয়ে গেলো?ওয়েইট!”

বলে আয়রান দৌড়ে এসে আমাকে পিঠের উপর তুলে নিলো।

-“এইইইইইইইই! এটা কি করলেন?নামান!নামান বলছি।”

-“কথা বলো না।দুই হাত দিয়ে শক্ত করে আমার গলা আঁকড়ে ধরো।পড়ার ভয় নেই।তুমি কতো হালকা।আহারে!”

-“হালকা না আমি।যথেষ্ট ওজন আছে আমার এর বেশি দরকার নেই।আচ্ছা আপনি যদি এরকম নিয়ে দৌড়াতে পারেন তো দৌড়ান।আমার কোনো আপত্তি নেই।”

-“এতোই যখন ভালো লাগে তখন ওই সময় এতো “নামান নামান”করছিলে কেন?”

-“ওইটা একটু একটু করতে হয়।”

-“ওওও বুঝলাম এইবার।তোমরা মেয়েরা বাইরে সবকিছুতে শুধু ছাড়ো ছাড়ো করো কিন্তু মনে মনে আবার অন্যকিছু।বুঝলাম এবার!সব ক্লিয়ার এখন!”

-“জ্বি না।ওইরকম আমি নই!”

-“তাহলে কোন রকম?”

-“আপনার এতোকিছু জানতে হবে না। সামনে ওই পার্কের বেন্ঞে বসিয়ে দিন।”

-“ওকে!”

আয়রান গিয়ে বসিয়ে দিলো।তারপর দাড়িঁয়ে ঘনঘন শ্বাস নিতে লাগলো।আকাশে এখনো রোদ উঠে নি।পার্কের আশেপাশে আরো অনেক মানুষজন হাটাহাটি করছে ব্যায়াম করছে।তো কেউ গল্পের আসর বসিয়ে দিয়েছে।আমাদের বেন্ঞের পাশেই তিনজন মহিলা আমার দিকে কেমন কেমন করে তাকাচ্ছে আর আয়রানের দিকে তাকিয়ে কি যেনো বলছে।পার্কের আশেপাশে সুন্দর সুন্দর ফুল গাছ দিয়ে ভরা।পরিষ্কার এবং সতেজ একটা পরিবেশ।

-“কি অবস্থা আপনার?আমি নাকি খুব হালকা?তাহলে এতো কষ্ট হলো কেন?”

-“কোথায়?”

-“না এতো জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন যে?মনে হচ্ছে আমাকে নিয়ে আপনি শ্বাস করতে পারছিলেন না।”

-“একটু ভালোভাবে শ্বাসও নিতে দেবে না এখন।”

-“না এমন করছেন যেনো আমি আপনাকে সারাদিন অনেক অত্যাচার করি?”

-“হেই না না।তুমি কতো সুইট,কিউট।এগুলা করতে পারো নাকি তুমি?”

-“হুহ পাম দেওয়া বন্ধ করুন।উফ গরম লাগছে আমার।”

-“তো জ্যাকেটের সামনের চেইনটা খুলে ফেলো!”

-“কিহহহ?”

-“কি হলো এভাবে ঘাবড়ে গেলে কেনো?যেভাবে গলা পর্যন্ত আটকে রেখেছো গরম তো লাগবেই।বাই দ্যা ওয়ে তোমার ইচ্ছা এটা!খুললে খুলো!না খুললে খুলো না।”

বলে আয়রান জ্যাকেটটা খুলে ফেললো।সেটা আমার কোলের উপর ফেলে পুশ আপ করতে লাগলো।বাহ বাহ পাবলিক প্লেসে নিজের সিক্স প্যাক ফিগার দেখাতে বসে গেছে।উনার স্কাই কালারের টি-শার্টটা ভিজে একাকার হয়ে গেছে।পুশ আপ করায় দুই হাতের রগগুলো ফুলে উঠেছে।চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি ওই তিন মহিলা আয়রানকে দেখে অকারণেই লজ্জা ভাব আনতে চাইছে।বুঝলাম না এই বুড়ি বয়সে নিজের ছেলের সমান একজনের দিকে তাকিয়ে কি ভিমড়োতি শুরু করেছেন এরা।কিছু বললেও তো তেলের মতো টগবগিয়ে উঠবে।বিরক্ত হয়ে বসে রইলাম।কপাল থেকে পানি চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে।আকাশে সূর্যের তাপ ধীরেধীরে বাড়ছে।

-“হেই!”

-“ইশশশ এই আপনি হেই হেই ছাড়া আর কিছু বলতে পারেন না?কথায় কথায় শুধু হাই হুই করেন কেনো?”

-“ওইযে ছোটবেলার অভ্যাস। চাইলেও ছাড়তে পারবো না।”

-“তো কিসের জন্য হুই করে উঠলেন বলে ফেলুন!”

-“তুমি এরকম রাগ করছো কেন?কি সমস্যা হ্যা?দুটো মিষ্টি কথা বলতে পারো না?বিয়ের আগে তো একদম নরম ছিলে।তুলোও লজ্জা পেত তোমাকে দেখে।এখন তো দেখছি কাচা মরিচ লজ্জা পাবে তোমাকে দেখে।”

-“হ্যা এখন এরকম লাগবেই।বিয়ে হয়েছে না?পুরান হয়ে গেছি!জানি সব সময় এরকমই হয়।বিয়ের আগে একরকম বিয়ের পরে আরেক রকম।আমি!আমি থাকবোই না।”

বলে ন্যাকা কান্না করতে লাগলাম।আয়রান হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।এ কোন রুহিকে দেখছে ও?যে এরকম এক্টিংও করতে পারে?জানা ছিলো না।

-“হয়েছে এক্টিং করা?এখন আমার পিঠের উপর উঠো।তোমাকে নিয়ে পুশ আপ করবো।”

-“কিহ?আপনার মাথার কয়টা তার ছেঁড়া একটু বলবেন?এই পাবলিক প্লেসে বাচ্চাদের মতো আপনার পিঠে উঠে হাম্বা হাম্বা খেলবো?”

আয়রান না হেসে পারলো না।আমি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছি।উনি কোন আক্কেলে পিঠে উঠতে বলছেন আমাকে?

-“আমি তোমাকে এটাই দেখাতে চেয়েছিলাম যে তুমি এতোটাই হালকা তোমাকে নিয়ে পুশ আপ করা কোনো ব্যাপারই না।”

-“আবার?আমি হালকা?এতো শখ?আচ্ছা দাড়ান।”

বলে ধুমধাম করে পা ফেলে ধপাস করে উনার পিঠে চড়ে বসলাম।

-“আরে একটু আসতে।”

-“নিন করুন।কি হলো শুরু করুন!”

উনি হেসে পুশ আপ করতে লাগলেন।আর আমি পায়ের উপর পা তুলে রাণীর পোজ নিয়ে ভ্রু কুঁচকে বসে আছি।

বাড়িতে ফিরে দেখি দাদি শ্বাশুড়ি আর আমার ননদীনি উঠে গেছে।

দাদি- “আরে তোরা এসে গেছিস?আমি আরও ফোন দেবো তোদের ভাবছিলাম।নাতবউকে না দেখে সত্যি চিন্তায় পড়ে গেছিলাম।যাক এখন চিন্তামুক্ত হলাম।”

নুরানি -“হায় তুই শেষ পর্যন্ত ভাবিকেও ছাড়লি না।”

তাকিয়ে দেখি আয়রান কের্সের ফিতা খুলছে।কে কি বললো তাতে তার কিছুই যায় আসে না এরকম অবস্থা।আমি চেইন্জ করে খেতে বসলাম সবার সাথে।উপরে এসে আয়রানকে বললাম

-“আপনি কি অফিসে যাবেন?”

-“না।দাদু যেতে দেবে না আজকে।নতুন বউ বিয়ে করে ঘরে একা রেখে অফিসে যাওয়া চলবে না।বাণীতে আমার দাদু।”

-“ঠিকই আছে।”

ভালো লাগছে না বসে বসে।বিছানার এক কোণায় এলিয়েনের মতো পড়ে আছি।আয়রান লেপটপ নিয়ে কাজ করছে।

আমি বিরক্ত হয়ে নিচে চলে গেলাম।দাদু সোফায় বসে কাথা সেলাই করছেন।উনি আসলেই খুব ভালো।আমাকে একদম নিজের নাতি বানিয়ে ফেলেছেন এই কয়েকদিনে।আমি গিয়ে উনার পাশে বসলাম।

-“দাদু তুমি কি করছো?”

-“এইতো দাদুমনি কাথা সেলাই করছি আমার পুতিনদের জন্য।”

উনার কথায় হেসে দিলাম।

-“তাই নাকি?”

-“হুম।আয়রান দাদু কি করছে রে?”

-“ওইতো লেপটপ নিয়ে বসেছে।”

-“কিহ?আবার টেলটপ নিয়ে বসেছে?এই ছেলেকে নিয়ে আর পারি না।কাথা সেলাই হয়ে গেলে আমরা দুইজন পিঠা বানাবো ঠিক আছে?এখন ততোটুকু সময় তুই টিভি দেখ যা।”

-“আচ্ছা।”

বলে ড্রয়িংরুমে চলে গেলাম।কিন্তু রিমোট পাচ্ছি না।সব জায়গায় তন্নতন্ন করে খুজেও পেলাম না।শেষে টিভির পাশে ড্রয়ার খুলতেই পেয়ে গেলাম।সাথে কিছু ছবি পেলাম।এগুলো কিসের ছবি?

____চলবে____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here