অজানা পৃথিবী পর্ব -০৫

#অজানা_পৃথিবী
#কলমে_লাবণ‍্য_ইয়াসমিন
#পর্ব_৫

জ্ঞান ফিরে কুহেলী একটা অচেনা পরিবেশে নিজেকে আবিষ্কার করলো। রুমটা ওর নিজের না তাহলে কার, কথাটা ভেবে ও উঠে বসলো। চারদিকে নানারকম দামি দামি আসবাবপত্রের ছড়াছড়ি। খুব সৌখিন মানুষের যত্ন নিয়ে সাজানো গোছানো হাতের কাজ। কুহেলী আশেপাশে উঁকিঝুকি দিয়ে হঠাৎ মনে হলো রুমটা ওর চেনা কিন্তু এই মূহুর্তে ঠিক মনে পড়ছে না। মনে করতে ওর বেশ সময় লাগলো। এটা ওর শশুর বাড়ি। সেদিন নানারকম ফুলে সাজানো ছিল তাই আজকে চিনতে অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু ও তো এখানে আর ফিরতে চাইনি তাহলে ওকে এখানে কেনো আনা হলো? কুহেলীর রাগ হলো ও বিছানা থেকে নেমে বাইরে দাঁড়ালো। মাথাটা ভার হয়ে আছে। চলতে গেলে মাথা টলছে। এমন সময় খটখট শব্দ করে লোকটা ভেতরে আসলো। কুহেলী ভ্রু কুচকে ফিসফিস করে বলল,

> আমাকে এখানে এনেছেন কেনো? বলেছিলাম তো আমি আর ফিরবো না।

> আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর কারো দ্বিতীয় স্ত্রী নেই আর তুমি আমাকে আবারও বিয়ে দেবার পায়তারা করছো?তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি। ভালো খারাপ যাই লাগুক কপালে ছিল ভেবে মেনে নাও। নয়তো কিন্তু আমি ঠিক মানিয়ে নিতে শিখিয়ে দিবো।

> হুমকি দিচ্ছেন?

> না অধিকার দেখাচ্ছি। মহিলা মানুষকে হুককি দিতে নেই। নিরীহ প্রাণির জ্ঞানকাণ্ডে কিছুই নেই জানা আছে।

> বাজে কথা বলছেন কেনো? আমি মহিলা আপনাকে কে বলেছে শুনি?

> তাহলে কি মহিলার আড়ালে পুরুষ মানুষ? এই জন্যই বলি আমার মতো সুদর্শন পুরুষ মানুষকে স্বামী হিসেবে পেয়েও কেনো তার আকর্ষণ হয়না। আসলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ না বিকর্ষণ হয়।এবার বুঝলাম কাহিনী সত্যিই।

লোকটা কথা বলছে আর মিটিমিটি হাসছে। কুহেলীর শরীর জ্বলে যাচ্ছে। এই লোকটাকে ওর একদম সহ‍্য হচ্ছে না। লোকটা অতিরিক্ত বাজে। ও রাগে কান্না করে ধরা গলাই বলল,

> আপনি খুব খারাপ মানুষ।

> জানিতো আমি খারাপ। আচ্ছা এবার বলোতো তোমার আর আবিরের ব‍্যাপারটা ঠিক কি? ছেলটা কে আর ঘটনা কি আমাকে বলবে?। আমি চেষ্টা করবো তোমাকে সাহায্য করতে কিন্তু বউ ছাড়া সম্ভব না। বেডারে না হাজির করলে আমার সংসারের শান্তি ফিরছে না।

কূহলেরীর চোখমুখে খুশীর ঝিলিক দেখা খেলো। লোকটা ওকে সাহায্য করতে চেয়েছে তাই। কুহেলীর আবেগাপ্লুত হয়ে বলল,

> সত্যি ওকে খুঁজবেন?

> হুম সত্যিই কিন্তু আমাকে অবিশ্বাস করলে চলবে না। তোমাকে আমার সব কথা বিশ্বাস করে বলতে হবে।

> করবো আর সব বলবো আপনাকে। আবিরকে আমি তিনবছর আগে দেখেছিলাম সুরমা হাউজের চার নাম্বার টেবিলে। খুব উদাসীন ছিল ছেলেটা। মুখটা করুণ করে বসে ছিল। আমি গিয়েছিলাম আমার বান্ধবী রুনার সঙ্গে দেখা করতে কিন্তু ওর লেট দেখেই আমি ছেলেটার সঙ্গে গিয়ে বসি। কথায় কথায় আলাপ হয় তারপর ফোন নাম্বার দেওয়া নেওয়া হলো। মাঝেমাঝে কথা হতো এভাবেই আমাদের সম্পর্ক তৈরী হলো। মধ‍্যবিত্ত ঘরের ছেলে ছিল তাই চাকরির জন্য অনেক ঘুরাঘুরি করে যখন একটা চাকরির ব‍্যবস্থা হলো তখন ও আমাদের বাড়িতে প্রস্তাব পাঠালো। আমার বাবা মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হলেন। তারপর ধুমধাম করে বিয়ের ব‍্যবস্থা করলেন কিন্তু বিয়েটা শেষ পযর্ন্ত হলো না। এখন শুনছি আপনি আমার বর। সেই একদিনের মধ্যেই কি জানি হয়ে গেলো।

> অদ্ভুত কিন্তু আমার বাসা থেকে তোমাকে দেখতে গিয়েছিল। তুমি হাসিখুশি ছিলে। গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের সব ভিডিও গুলো আছে সময় করে দেখবা তাহলে ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আচ্ছা আবিরের বাসার ঠিকানা আছে?

> না যাওয়া হয়নি কখনও। ভেবেছিলাম বউ হয়ে একবারে যাবো।

> এভাবে বলো না হিংসা হচ্ছে। পরে কিন্তু ঝগড়া হলে আমি খোঁটা দিবো।

> আমার কষ্ট নিয়ে আপনি মজা করছেন? প্রতিটা সেকেন্ড আমি ভিষন যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। প্লিজ সাহায্য করুন।

> আমি চেষ্টা করবো ওকে খুঁজতে কিন্তু তুমি কোনরকম পাগলামি করবে না। আর দাদুকে কি বলেছো? উনি মারা গেছেন? কুহু এসব শুনলে আমাদের পরিবার আমাকে নিয়ে চিন্তা করবে। ভাববে তারা আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে মাথা খারাপ একটা মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে, বুঝেছো?

> হুম কিন্তু দাদু সত্যিই মারা গিয়েছিল আমার মনে আছে।

> তোমার ঘুমের অনেক প্রয়োজন। সারাদিন ঘুমাবে।আমি আসছি এখন।

কুহেলী মাথা ঝাকিয়ে অনুমতি দিলো। লোকটা খারাপ না বেশ ভালো। আবিরকে খুজতে সাহায্য করবে। একবার ওকে পেয়ে গেলে সব রহস্যের সমাধান হবে। আবির নামের একজন আছে এটাই সবাইকে বিশ্বাস করাতে হবে। কুহেলী ফোনটা খোঁজ করলো কিন্তু পেলোনা। কোথায় আছে জানা নেই। হয়তো লোকটার কাছে নয়তো সেই কফি হাউজে পড়ে আছে। থাকলে আবিরকে একটা ফোন করা যেতো। ওর এসব ভাবতে ভাবতেই দরজায় নক পড়লো। কুহেলী তাড়াতাড়ি মাথায় শাড়ির আচলটা উঠিয়ে নিলো। ও লক্ষ্য করলো দরজা একটু একটু করে খুলে গেলো। ছোট্ট একটা মুখ দরজা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে। ঘোমটার আড়ালে থাকা কুহেলীর চোখদ্বয় উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। সবুজ রঙের পোশাকে অদ্ভুত সুন্দর একটা বাচ্চা ছেলে উঁকি দিচ্ছে দরজা দিয়ে। কুহেলী মিষ্টি হেসে ইশারা করে পিচ্চিটাকে নিজের রুমে নিমন্ত্রণ জানালো। পিচ্চিটা ধীরগতিতে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। সাদা ফর্সা গায়ের রঙের সঙ্গে সবুজ রঙের পোশাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে বাচ্ছাটাকে। কুহেলী বাচ্চাটার একটা হাত ধরে অন‍্যহাত ওর মুখে রাখলো।

> সরলতার সঙ্গী জটিলতা, মায়ার দুনিয়া ছেড়ে আযানা দুনিয়ায় আগমন কেনো?

বাচ্চা ছেলের মুখে এরকম শক্ত একটা কথা শুনে কুহেলীর কৌতূহল সপ্তসাগরপার হলো। ও ভ্রু কুচকে বলল,

> সত্যি মিথ্যা মিলেমিশে একাকার।সাধ‍্য কি আর চেনার কোনটা মায়া আর কোনটা অজানা?

> বাঁচতে হলে চিনতে হবে বাধা কিসের শুনি?

কুহেলী কিছু বলতে গেলো কিন্তু বাচ্চাটা ওর হাত ছুটিয়ে নিয়ে দৌড়ে চলে গেলো। কি অদ্ভুত ছেলেটা। কুহেলীর মনে হলো ও বাচ্চা না কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। কি বুদ্ধি একদম বুদ্ধিজীবী। ওর এসব ভাবতে ভাবতেই একজন ভদ্রমহিলা ভেতরে আসরো। কুহেলী সালাম বিনিময় করে জানলো এটা ওর ফুপি শাশুড়ি। ভদ্রমহিলা ওকে খাবার খেতে ডাকতে এসেছে। কুহেলী উনার সঙ্গে নিচে গেলো। ডাইনিং রুমে বিশাল একটা খাবার টেবিল সেখানে বাড়ির সবাই উপস্থিত আছে শুধু সেই বাচ্চাটা নেই। কুহেলীর চোখ তাকেই খুজেঁ চলেছে। খাওয়া শুরু হলো তবুও সে আসলো না দেখে ও পাশের একজনকে জিঞ্জাসা করলো বাচ্চা একটা ছেলে ছিল সে কোথায় আছে? কিন্তু ওর কথা শুনে পাশের লোকটা ভ্রু কুচকে থাকলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল এবাড়িতে নাকি কোনো বাচ্চা নেই। বাড়ির সবথেকে ছোট হচ্ছে জুবায়ের মানে ওর স্বামী। কুহেলীর খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ আগে তাহলে ও কাকে দেখলো? ওকে এভাবে দেখে ওপার থেকে জুবায়ের ইশারা করলো খেয়ে নিতে। কুহেলীর হাত মুখে উঠছে না। আগে ওই বাচ্চার পরিচয়টা জানতে হবে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here