অতঃপর প্রণয় পর্ব শেষ

#অতঃপর_প্রণয়
#অরিত্রিকা_আহানা
#অন্তিমপর্ব

সোহেলি আয়াজে সাথে কথা বলছিলেন। ইরিন গুটিগুটি পায়ে ভেতরে ঢুকলো। খাটের ওপর মাথা নিচু করে বসে রইলো। সোহেলি তার কাছে এগিয়ে আসতেই ফুঁপিয়ে উঠলো। ক্রমেই ফোঁপানো বাড়লো। সোহেলি বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখলেন মেয়েটার মুখখানা শুকিয়ে এতটুকুন হয়ে গেছে। আঙ্গুলের ডগায় অভিমানী মুখখানা তুলে ধরতেই ইরিন তাঁকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো। ছোট বাচ্চাদের মত গলা ফাটিয়ে কাঁদলো। কাঁদতে কাঁদতে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেললো। সোহেলি অনেক কষ্টে তাকে শান্ত করলেন। মুচকি হেসে তার চোখের পানি মুছে দিয়ে ফিসফিস করে বললেন,

—“কান্না বন্ধ কর। আয়াজ আসছে। ”

ইরিনের ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষন উনার দিকে চেয়ে রইলো। পরোক্ষনেই খুশিতে,লজ্জায়, আনন্দে মুখখানা রাঙ্গা হয়ে উঠলো।সোহেলি হেসে উঠে বললেন,

—“মেরে তোকে সোজা করবে বলেছে। নে ধর কথা বল?”

ইরিন হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলো। ফোন কানে দিয়ে চুপ করে রইলো।ওপর পাশে থেকে আয়াজ চুপচাপ ফোন কানে ধরে রইলো। ইরিনের ফোঁপানোর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আওয়াজটা তার বুকে গিয়ে লাগছে একদম। নরম, কোমল স্বরে বললো,

—”হ্যালো।”

তার গলা শুনেই ইরিনের কান্নার বেগ বেড়ে গেলো। গলা জড়িয়ে এলো। নিজেকে সামলে কোনরকমে মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলো সে,

—হ্যা…লো?

আয়াজ খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে মোলায়েম কন্ঠে বললো,

—“পাগলামি করে লাভটা কি হলো? নিজেও কষ্ট পেলি আমাকেও কষ্ট দিলি!”

কান্না চাপাতে গিয়ে ইরিনের হেঁচকি উঠে গেছে। ফুঁপিয়ে উঠে বললো,

—“আপনি আসবেন?”

—“আমি গাড়িতে।”

ইরিনের সমস্ত হৃদয় জুড়ে কত ডিগ্রী গলনাংকের শীতল স্পন্দন বয়ে গেলো সে নিজেও জানে না। মলিন মুখখানায় ফুটে উঠলো হাজার পাওয়ারি নিঃশব্দ হাসি। খুশিতে ঝলমল করে উঠলো। সোহেলি গভীর দৃষ্টিতে তাকে পর্যবেক্ষণ করছেন আর হাসছেন।


চেইঞ্জ করার জন্য আলমারি খুলতেই আয়াজের বুকের ওপর টলে পড়লো ইরিন। বিস্ময়ে হাঁ হয়ে আছে আয়াজ! আলমারির ভেতর ইরিন? কীভাবে?.কেমন করে?..ইরিন জ্ঞান হারিয়েছে। ওকে পাঁজকোলা করে তুলে তাড়াতাড়ি খাটে শুইয়ে দিলো সে।চোখে মুখে পানির ছিটা দিলো।

সন্ধেবেলা যখন ইরিনের জ্ঞান ফিরলো হাতে স্যালাইন পুশ করা দেখলো। ভালো করে চোখ বুলিয়ে দেখলো আয়াজের ঘরে।রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ!..রুমে আয়াজ নেই। সে উঠে বসার চেষ্টা করতেই আয়াজ গলায় ঝোলানো তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। খালি গা!বুকের কাছে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে,মোমের মত পলিশ করা মনে হচ্ছে ওর শরীরটাকে। লজ্জা মাথা নামিয়ে ফেললো ইরিন। আয়াজ মাথা মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করলো ,”এখন কেমন লাগছে?”

—“ভালো!”

আয়াজ কাছে এসে ওর স্যালাইন চেক করে বললো,

—“স্যালাইন শেষ! তুই খুলতে পারবি?”

ইরিন মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। সে খুলতে পারবে না। আয়াজ ওর পাশে বসে খুব যত্নসহকারে ক্যানুলা আলগা করে দিলো।ব্যথায় ‘আহ’ করে উঠলো ইরিন। চোখে পানি চলে এলো। আয়াজ ব্যতিব্যস্ত হয়ে তার সুই বিঁধানো জায়গায় ফুঁ দিতে শুরু করলো। কোমল গলায় বললো,

—“একটু ধৈর্য ধর। সামান্য ব্যথা। একটু পরেই কমে যাবে।”

ইরিনের ব্যথা করছে না। সামান্য একটু সুঁইয়ের ফোঁড়ে আর কতটুকুই বা ব্যথা লাগে। তবে হাত সরাল না সে। চুপচাপ বসে রইলো।আয়াজ তুলোতে হেক্সিসল নিয়ে তার কাটা জায়গা মুছে দিয়ে। তারপর একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো। ইরিন মুগ্ধ হয়ে দেখছে। কি সুন্দর স্নিগ্ধ মুখ! দেখলেই ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। অথচ ইরিন? দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে। ব্যান্ডেজ লাগানো শেষে আয়াজ বললো,

—“হয়ে গেছে। আর ব্যথা করবে না।”

ইরিন বেরোতে গিয়ে দরজার কাছ থেকে আবার ফিরে এলো। তার হাতে স্যালাইন এর খালি ব্যাগ আর তুলো। আয়াজ খাটের ওপর লম্বা হয়ে শুয়েছে। শরীর ভীষণ ক্লান্ত লাগছে তার। একে শরীর খারাপ তার ওপর জার্নি করে এসেছে। ইরিনকে ফিরে আসতে দেখে বললো,

—“কিছু বলবি?”

এতক্ষন যাবত কারো সাড়া শব্দ না পেয়ে ইরিন মাথা নিচু করে বললো,

— “বাসায় কেউ নেই?”

—“আমি কি করে জানবো?..চুরি করতে এসেছিস তুই,তুই জানিস না বাসায় কেউ আছে কি নেই?”

ইরিনের মুখ লজ্জায় আরক্তিম হয়ে গেলো।ইসশ!..জ্ঞান হারালো কিভাবে সে? কি সুন্দর আয়াজকে সারপ্রাইজ দেওয়া যেত?আলমারি খুললেই টুক করে চুমু খেয়ে নিতো আয়াজের গালে। তার হঠাৎ বেহুঁশ হয়ে যাওয়ার কারনে পুরো প্ল্যানটাই মাটি! এদিকে আয়াজ কম্বলের নিচে মাথা মুড়িয়ে নিয়েছে।

ইরিনের প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে,এমন কেন এই মানুষটা? একটু ধরা দিলে কি হয়? এই যে ইরিন সোনালি কালারের ব্লাউজের সাথে টকটকে লাল শাড়ি পরে সেজেছে কার জন্য?..একটা বার দেখলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে?..উনার প্যান্টের জিপ আটকে যাবে? না ট্রাউজারের ফিতে?..নাকি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে পৃথিবীর ঘোরা?..কোনটাই আটকাবে না। তাহলে?…হি ইজ টু রুড!
কাকে সারপ্রাইজ দেবে বলে ইরিন আলমারিতে ঢুকে বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলো?..এসব তো উনার চোখে পড়ে না?..কেবল ইরিনের রাগটাই চোখে পড়ে। হাতের তুলাটা ফেলে দিলো সে,স্যালাইন ব্যাগটাও ছুঁড়ে মারলো। তারপর সটাং করে আয়াজের কম্বলের নিচে ঢুকে পড়লো, আহ! মিষ্টি ঘ্রাণ! মুখ বন্ধ করে নাক দিয়ে লম্বা নিশ্বাস টানলো সে। মাত্র সাওয়ার নিয়েছে আয়াজ। সারা গায়ে মিষ্টি গন্ধ!

—“কি ধারালো শাড়ি পরেছিস?..আমার চামড়া ছিলে যাচ্ছে। সর।”

—“যাক ছিলে সরবো না আমি!”

আয়াজ কিছু বললো না। চুপচাপ শুয়ে রইলো। ইরিন তাকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,

—“আপনি কি টায়ার্ড?”

আয়াজ উপরে নিচে মাথা দোলালো।

—“আমি আদর করে দিলেই দেখবেন সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে।”

আয়াজ তব্দা মেরে খানিকক্ষণ তার দিকে চেয়ে রইলো। হতবাক হয়ে বললো,

—“এসব অশ্লীল কথা কোথায় শিখেছিস তুই?..লজ্জাশরম নাই তোর?”

ইরিন দ্বিগুন বেগে তার টি-শার্ট মুঠোয় চেপে ধরে বললো,

—“না নেই।”

—“আমার লজ্জা লাগছে ইরিন ছাড়!..কি করছিস?”

—“লাগুক!…আমি তো লজ্জা পাচ্ছি না?”

ইরিন আয়াজের টি-শার্ট টানাটানি শুরু করে দিলো। আয়াজ ওর হাত চেপে ধরে বললো,

—“কি করছিস কি তুই?”

ইরিন ফিসফিস করে তার কানে কিছু একটা বললো। আয়াজ বিড়বিড় করে বলল,

—“মাত্র গোসল করে এসেছি আমার ঠান্ডা লেগে যাবে।”

—“লাগুক!”

—-“তুই কি চাইছিস ঠাণ্ডায় আমি মরে যাই?”

—“আমি কেন চাইবো আপনি মরে যান?..আমি তো আপনাকে মারতে চাই, এইযে এভাবে চেপে ধরে!”

আয়াজ ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে বলল,”বুকের ওপর থেকে সর ইরিন,আমার প্যালপিটিশন হচ্ছে,তুই ভর্তা করে ফেলছিস আমাকে!”

—“ভর্তাই করবো আপনাকে..কেন ভর্তা করবো জানেন?..আপনাকে খাওয়ার জন্য! গিলে ফেলবো একদম!”

—-“তুই না একটু আগে বেহুঁশ হলি? গায়ে এত জোর এলো কী করে?..ভালো কথা,তুই আলমারিতে ঢুকেছিলি কেন?”

—“আপনার জামাকাপড় খাওয়ার জন্য,তখন তো আপনি ছিলেন না তাই আপনার জামাকাপড় খাবো বলে ঢুকেছি,ওগুলোতে আপনার গায়ের মিষ্টি একটা ফ্লেভার আছে।এখন তো আপনি চলে এসেছেন তাই আপনাকে গিলে খাবো!”

—“হজম করতে পারবি?”

—“হজম করবো কেন?”

—“তাহলে গিলে কি করবি?”

—“স্টোর করে রাখবো। আপনি যাতে আমাকে ছেড়ে আর কোথায় যেতে না পারেন সেই জন্য। ”

—“আচ্ছা?”

—“হুম।”

আয়াজ হাই তুললো। সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমে চোখ ঢুলুঢুলু তার। ইরিনের ওর মুখের কাছ থেকে হাত নামিয়ে দিয়ে বললো,

—” এই আপনি হাই তুলছেন কেন? আমি এখন আপনাকে ঘুমাতে দেবো না।”

—“ঘুম আসছে তো?”

—“না আপনি এখন ঘুমাতে পারবেন না।”

—“আয় তুইও ঘুমা।”

আয়াজ ওকে টেনে নিতেই ইরিন তার বুকের ভেতর ঢুকে গুটিসুটি মারলো ঠিকই কিন্তু শান্ত থাকলো না। একবার এদিকে নড়ছে, তো আবার অন্যদিকে। কনুই দিয়ে আয়াজকে ঠেলা শুরু করে দিলো। শক্ত করে চেপে ধরলো তাকে। আয়াজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

—“থাক লাগবে না আমার ঘুমানো। ঘুম হয়ে গেছে!..তুই দয়া করে ছাড় আমাকে!.আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ”

ইরিন ছাড়লো না। একেবারে সেঁটিয়ে রইল আয়াজের সাথে। তার বুকে আলতো করে কামড় বসিয়ে দিলো বিজয়ী হাসি বলল,

—“আর কখনো আমাকে কষ্ট দিবেন? বলুন। বলুন বলছি। না হলে আবার কামড় দিবো?”

আয়াজ মুচকি হাসলো। আদুরে গলায় বললো,

—“কষ্ট হয় তাহলে?”

ইরিনের হাসি হাসি মুখটা চুপচাপ হয়ে গেলো। জবাব না দিয়ে পলকহীন ভাবে আয়াজের মুখের দিকে চেয়ে রইলো সে। কি নিষ্ঠুর লোক! কষ্ট দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করছে কষ্ট হয় কি না? ইরিন কেন বলবে? কিচ্ছু বলবে না। আয়াজ ঠোঁট কামড়ে হেসে চলেছে। ইরিন রাগে আয়াজের নাক বরাবর ধারালো কামড় বসিয়ে দিলো। আয়াজের হাসি বন্ধ হয়ে গেলো। ব্যথায় নাকমুখ কুঁচকে বললো,

—“হ্যাঁ কামড়া, কামড়া। কামড়ে হাড্ডিমাংস সব তুলে নে, বদ মেয়ে। আমি তো আছিই শুধু তোর অত্যাচার সহ্য করার জন্য।”

ইরিন চট করে তার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে নিলো। আয়াজ স্তব্ধ! দুহাতে তাকে আঁকড়ে ধরলো ইরিন। সে পরাস্ত! প্রতিবাদহীন ভাবে পরাস্ত!..এতদিনের রাগ,জেদ,অভিমান সব ইরিনের পাগলামির কাছে পরাজিত!

একেরপর এক হাঁচি দিয়ে যাচ্ছে আয়াজ ,একেতো জ্বর,তারওপর দুবার গোসল!…হাঁচি সাথে শরীর গরম অনুভূত হচ্ছে। ইরিন মিটমিট করে হাসছে।রক্তচক্ষু নিয়ে তার দিকে তাকালো আয়াজ।
এদিকে তার ঢাকায় আসার খবর শুনে রেশমি এসেছে দেখা করতে।
ভেতরে ঢুকেই আয়াজের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো রেশমি,

—“তোর ঘাড়ের কাছে লাল হয়ে আছে কেন আয়াজ? নাকের ওপর কি হয়েছে?”

আয়াজ নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দিলো,

—“আলমারির ইঁদুর কামড়ে দিয়েছে!”

—“কি? আলমারিতে ইঁদুর?”

—“হ্যাঁ। গোসলের জন্য জামাকাপড় নিবো বলে আলমারি খুলেছিলাম,..খুলতেই লাফ দিয়ে কাধে উঠে গেলো। ঝেড়ে ফেলে গোসল করতে গেলাম…!”

রেশমি চোখবড় বড় করে তাকিয়ে আছে।সাততলায় ইঁদুর?..তাও আলমারিতে? অবাক হয়ে বললো,

—“তারপর?”

—“তারপর আর কি গোসল করে কম্বলের নিচে ঢুকতেই ইঁদুরটা আবার হাজির,…পুরো শরীর ঝাঁজরা করে দিয়েছে কামড়ে।”

ইরিনের হাসি হাসি মুখটা চুপসে গেছে। অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বসে আছে সে। লজ্জায়, অস্বস্তিতে চোখমুখ, কান পর্যন্ত লাল হয়ে গেছে। মুক্তা মুখটিপে হেসে যাচ্ছে।

রেশমি মুক্তার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো,

—“সাততলায় ইঁদুর আসলো কি করে ভাবি? তোমরা ওষুধ আনো নি? ইঁদুরের কামড় কিন্তু মারাত্মক, প্লেগ রোগের সম্ভাবনা আছে। এই আয়াজ তুই টিকা নিয়েছিস তো!”

আয়াজ বোনের সাথে তাল মিলিয়ে বললো,

—“টিকা? হ্যাঁ নিবো। তবে এই বাসায় বোধহয় একটাই ইঁদুর। আমি একটু আগেই ভাবিকে বলছিলাম ইঁদুর মারার ওষুর আনতে হবে! রাত বিরাতে কামড় দিলে তো সমস্যা?”

সোহেলি আড়ালে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলেন আর মুখ টিপে হাসছেন। ইরিন যে আয়াজের আলমারিতে লুকিয়ে ছিলো সেটা তিনি জানতেন। কিন্তু রেশমি তো আর জানে না?.সে আলমারিতে ইঁদুর ঢোকার কথা শুনে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে। আয়াজ সুযোগ বুঝে মজা নিচ্ছে।.রেশমি আরো কিছু বলার জন্য মুখ খুলছিলো সোহেলি এসে তাকে টেনে ভেতরে নিয়ে গেলেন।তারপর যতটুকু বলা যায় বললেন, বাকিটুকু ইশারা ইঙ্গিতে ঘটনার সারসংক্ষেপ বুঝিয়ে দিলেন।

রেশমি ভেতরে চলে গেলে আয়াজ উঠে দাঁড়ালো। আজকে রাতেই আবার তাকে ব্যাক করতে হবে। ছুটি নিয়ে আসতে পারে নি। তার ডিউটির ভার অন্য একজনের কাছে দিয়ে এসেছে। হস্পিটাল থেকে একটু আগেও ফোন এসেছে। ইরিন তার চলে যাওয়ার খবর শুনেছে। হাঁ কিংবা না কিছুই বলে নি। চুপচাপ নিজের ঘরে চলে গেলো। আয়াজ একটু পর নিজের জামাকাপড় গোছানোর জন্য রুমে ঢুকতেই ইরিন ফট করে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো। ঘরের লাইট অফ। আয়াজ লাইটের সুইচ হাতড়ে লাইট অন চাইলে ইরিন বাধা দিলো।

—“লাইট বন্ধ থাক।”

জিরো পাওয়ায়ের ডিম লাইটটা অন করল সে।ড্রেসিংটেবিলের ওপর বড় মোমবাতি জ্বলছে। তার পাশে দাঁড়ালো ইরিন। ওর পরনে কালো জর্জেট শাড়ি। কালো স্লিভলেস ব্লাউজের সাথে পরেছে। গলায় চিকল স্বর্নের একটা লকেট। হাতে কালো রেশমি চুড়ি। আয়াজ হাঁ করে চেয়ে রইলো কিছুক্ষন। তার শরীর ঝিমঝিম করছে। মোহাবিষ্ট লাগছে। দ্রুত দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে বললো,

—“তুই আমার চাকরি খেতে চাইছিস বদ মেয়ে। আমি তোকে ছাড়বো না। ছুটি নিয়ে আসি তারপর তোর এসব ঢং আমি বের করবো।”

ইরিন মুখ টিপে হাসছে। আয়াজ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছে, কিন্তু বেরোচ্ছে না। ইরিন দুহাতের চুড়ি রিনিঝিনি বাজিয়ে বললো,

—“আমি কি আপনাকে আটকে রেখেছি? আপনি যান। ”

আয়াজ দরজা বন্ধ করে ফিরে এলো। ইরিন দুহাত মুখে চাপা দিয়ে হাসছে। আয়াজ কে তার দিকে অগ্নিচক্ষু নিয়ে তাকাতে দেখে কাছে এগিয়ে গেলো সে। নিজের ক্ষীন কটিতে আয়াজের শক্ত পেশিবহুল হাত দুটো রেখে ফিসফিস করে বললো,

—“যাবেন? বাজি রাখলাম? আপনি যদি যেতে পারেন…”

—“চুপ। বেয়াদপ!”

ইরিনের হাসি থামছে না। দুহাতে আয়াজের গলা জড়িয়ে ধরে খিলখিল করে হাসছে সে।

আয়াজ বিড়বিড় করে বললো, “এবার বোধহয় নিউমোনিয়া হয়ে যাবে! ”


রাত্রিবেলা আয়াজের বুকের ওপর শুয়ে আছে ইরিন। আয়াজ ফোনে কথা বলছে। তার কথা বলা শেষ হতেই ইরিন ওর শার্টের বোতাম ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,

—“বাসর রাতে প্রত্যেক স্বামী তার বউকে গিফট দেয়। হিসেবমত আজকে আমাদের…!”

এইটুকু বলে ইরিন বখাটে টাইপ একটা চোখ মারলো।

—“তুই দিন দিন ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস ইরিন!”

—“এখন বলুন আপনি আমাকে কি গিফট দিবেন?”

—“তুই আমাকে সালাম করেছিস? বিয়ের রাতে তো বউরা স্বামীদের পা ছুঁয়ে সালাম করে।”

—“ইশস শখ কত!”

—“তাহলে আবার গিফট চাইছিস কেন?”

—“কিপ্টুস একটা।”

—“হ্যাঁ কিপ্টুস!”

আয়াজ উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই ইরিন টুক করে তাকে সালাম করে বসলো। আয়াজ হতবম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। যেন হঠাৎ করে কি ঘটেছে বুঝতে পারছে না সে। ইরিন গুটি গুটি পায়ে তার বুকের কাছে সরে এসে অভিমানী কন্ঠে বললো,

—“আমার কোন গিফট লাগবে না। আপনি শুধু সারাজীবন আমাকে এভাবে ভালোবাসবেন তাহলেই হবে। আপনি আমাকে ভুল বুঝলে আমার ভীষণ কষ্ট হয়। আমি সবার মত বলতে পারি না কিন্তু আমার কষ্ট হয়। খুব কষ্ট হয়। ”

আয়াজ মুচকি মুচকি হাসছে। ইরিন ফুঁপিয়ে উঠে বললো,

—“আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো। আর কোন পাগলামি করবো না। কিন্তু আপনি আর কখনো এভাবে রাগ করে চলে যাবেন না। বলুন যাবেন না?”

—“যাবো না।”

—“গেলে?”

আয়াজ মিটমিট করে হাসতে হাসতে বললো,

—“যাবো কিভাবে? তুই নিজেই তো গিলে নিয়েছিস?

ইরিন লজ্জা পেয়ে বললো,

—“যাহ!”

আয়াজ শব্দ করে হাসছে। কি সুন্দর লাগছে তার হাসিটা। ইরিন ঠোঁট কামড়ালো। আরেকটু জ্বালাবে নাকি মানুষটাকে? পরে ভাবলো নাহ!সে তো ভালো হয়ে যাবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছে। আয়াজ একেবারে ওর কানের সাথে ঠোঁট লাগিয়ে ফিসফিস করে বললো, “আরেকটু পাগলামি তুই করতেই পারিস হরিণ। আমি কিছু মনে করবো না।”

(

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here