#অতঃপর_প্রেমের_আগমন
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১১
ঘুমের মাঝে কেউ টা*ন দিয়ে বসিয়ে দেয়ায় ভীষণ বি’র’ক্ত হলো আয়ানা। কোনো মতে চোখ টে*নে খুলতেই ঘুম উড়ে গেলো তার। কারণ আদ্রিশ তাকে টে*নে উঠিয়েছে আর এখনো তার হাত ধরে আছে। আদ্রিশ আয়ানার নিভুনিভু চোখ দেখে গালে হালকা চা*প’র দিয়ে বললো,
— আজান হয়ে গেছে নামাজ পড়ে নাও। আমিও মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে আসছি।
আয়ানা এবার খেয়াল করে দেখলো আদ্রিশের গায়ে একটা শুভ্র রঙের পাঞ্জাবী। চেহারায় পবিত্র একটা ভাব বিদ্যমান। তাকে দেখতে নিষ্পাপ, পবিত্র লাগছে। আয়ানার কেনো যেনো আদ্রিশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভীষণ ভালো লাগছে। সে চেয়েও নিজের চোখ ফেরাতে পারছে না।
আয়ানা কে একদৃষ্টিতে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অ’স্বস্তি হতে লাগলো আদ্রিশের। সে আয়ানার হাত হালকা ঝাঁ*কি দিলো। হাত ঝাঁ*কি দেয়ায় হুশ ফিরলো আয়ানার। ভীষণ লজ্জা পেলো সে। এতক্ষন আদ্রিশের দিকে বে*হা’য়া’র মতো তাকিয়ে ছিলো সে। আদ্রিশ কি ভাবলো তাকে নিয়ে চিন্তা করে লজ্জায় মাথা নিচু করলো আয়ানা। আদ্রিশ বুঝলো আয়ানা লজ্জা পাচ্ছে। তাই সে আয়ানা কে উদ্দেশ্য করে বললো,
— উঠে নামাজ পড়ে নাও। আমি আসি।
আয়ানা মাথা না’ড়া’লো। আদ্রিশ আর এক সেকেন্ড দাঁড়ালো না। রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আয়ানা বিছানা থেকে উঠে চলে গেলো অজু করতে। তার আগে থেকেই সকাল সকাল উঠার অভ্যাস আছে তবে দুই তিনদিন ধরে অনেক বেশি ক্লা’ন্ত থাকার কারণে ঘুম ভা*ঙে নি তার।
অজু করে নামাজ পড়ে বেলকনিতে চলে আসলো আয়ানা। একটা শীতল হাওয়া ছুঁয়ে গেলো তার দেহ, মন। ভোরের প্রকৃতি তার খুব প্রিয় তেমনি রাতের আকাশ ও। তার রুম ছাদের সাথে থাকায় তার একটা সুবিধা ছিলো। ভোরের প্রকৃতি আর রাতের আকাশ উপভোগ করতে পারতো সে। বিশেষ করে রাতে আ’ধা’র ভরা আকাশের দিকে কতো কতো সময় যে সে তাকিয়ে থেকেছে তার হিসাব নেই। তার সকল মন খা’রা’পে’র সঙ্গী এই আকাশ।
নিজের চিন্তা ভাবনার মাঝে আয়ানার চোখ গেলো নিচের দিকে। আদ্রিশ আসছে নামাজ শেষ করে। আদ্রিশ কে আসতে দেখে রুমে চলে আসলো আয়ানা। আদ্রিশ রুমে প্রবেশ করে আয়ানা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
— তুমি বই খাতা বের করে বসো। আমি আসছি।
আয়ানা আদ্রিশের কথা মতো বই খাতা নিয়ে বসলো। বইয়ের পাতা উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলো। আদ্রিশ একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার পড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আয়ানা এক পলক আদ্রিশের যাওয়ার দিকে দেখে আবার বই দেখায় মন দিলো।
টেবিলের উপর ধোঁয়া ওঠা কফির মগ রাখতেই অবাক হলো আয়ানা। একবার কফির মগের দিকে আর একবার আদ্রিশের দিকে তাকাতে লাগলো সে। দুই মগ কফি নিয়ে এসেছে আদ্রিশ। সে টেবিলের আরেক পাশে চেয়ার টে*নে বসলো। আয়ানা কে এভাবে তাকাতে দেখে চোখ ছোট ছোট করে বললো,
— কি?
আয়ানা হ*ক’চ’কি’য়ে গেলো। নজর সরিয়ে নিম্ন স্বরে বললো,
— আপনি বানিয়েছেন?
আদ্রিশ গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— হ্যা, আর কে বানাবে। খালা নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছেন আবার। আরও এক দেড় ঘন্টা পর উঠবেন। আর এই সামান্য কাজ আমিই যখন পারি তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে কেনো করাবো।
আদ্রিশের চিন্তা ধারায় মুগ্ধ হলো আয়ানা। মনে মনে ভাবলো, ‘লোকটা এতো ভালো কেনো? ইস এতো ভালো কিছুই কি লেখা ছিলো আমার কপালে! স্বামীর হাতের কোনো কিছু খাওয়ার সৌভাগ্য কতো জনেরই বা হয়?’
আদ্রিশ আয়ানা কে অন্যমনস্ক দেখে বললো,
— কি হলো আবার কি চিন্তা করছো? কফি খাও ঠান্ডা হয়ে যাবে নাহলে।
আয়ানা কফির মগ তুলে নিয়ে একটা চুমুক দিলো। বেশ মজা হয়েছে কফি টা। আদ্রিশ ও কফি খেতে খেতে আয়ানার বইয়ে কিছু দা*গা’দা*গি করতে লাগলো।
প্রায় দেড় ঘন্টা পড়ানোর পর উঠলো আদ্রিশ। আয়ানা কে অনেকগুলো পড়াও দিয়েছে সে। আয়ানাও সন্তুষ্ট আদ্রিশের পড়ানোতে। আয়ানা আদ্রিশের কাছে পড়ে বুঝলো আদ্রিশ খুব ভালো বুঝাতে পারে। খুব সুন্দর করে তাকে বুঝিয়েছে। আদ্রিশ আয়ানা কে উদ্দেশ্য করে বললো,
— যা যা পড়া দিয়েছি রাতের মধ্যে কমপ্লিট করে রাখবে। কোচিং থেকে যা পড়া দিবে তাও পড়ে রাখবে। তুমি যেহেতু পিছিয়ে আছো তাই ডাবল পড়তে হবে। জানি ক*ষ্ট হবে তবুও স্বপ্ন পূরণ করতে হলে এছাড়া কোনো উপায় নেই। আর যা যা বুঝতে সমস্যা হবে সেগুলো মার্ক করে রাখবে। আমি রাতে এসে বুঝিয়ে দিবো। ঠিক আছে?
আয়ানা মৃদু স্বরে বললো,
— হুম।
আদ্রিশ বললো,
— গুড। এবার যাও রেডি হয়ে আসো। নাস্তা করে এরপর কোচিং এ যাবো আমরা। তোমাকে কোচিং এ পৌঁছে দিয়ে আমি মেডিকেলে চলে যাবো। অলরেডি পাঁচ দিন ছুটি করে ফেলেছি। আর করা ঠিক হবে না। আর শোনো তোমাকে কোচিং এ আমি নিয়ে যাবো আর ছুটির সময় নিচে ড্রাইভার আঙ্কেল থাকবে। আম্মু কে বলে দিবো সময় মতো গাড়ি পাঠিয়ে দিতে। সময় পেলে আমি নিয়ে আসবো। তোমার ফোন কোথায়?
এতক্ষন আদ্রিশের কথা মনোযোগ সহকারে শুনছিলো আয়ানা। কিন্তু ফোনের কথা জানতে চাওয়ায় মন খা’রা’প হয়ে গেলো তার। তার তো কোনো ফোন নেই। আদ্রিশ আয়ানার হঠাৎ মন খা’রা’প হতে দেখে কিছু একটা ধারণা করলো। বললো,
— ফোন নেই?
আয়ানা মাথা না’ড়া’লো। আদ্রিশ আয়ানা কে সহজ করার জন্য বললো,
— আচ্ছা সমস্যা নেই। কোচিং এ কোনো সমস্যা হলে ওখানে স্টুডেন্টদের জন্য ফোন আছে সেখান থেকে বাসার কাউকে কল দিও। কারোর ফোন নাম্বার সাথে রেখো কেমন?
আয়ানা মৃদু মাথা না’ড়ি’য়ে আচ্ছা বললো।
——
আয়ানা রেডি হয়ে নিচে নেমে দেখলো আদ্রিশ ডাইনিং টেবিলে বসে ফোনে কিছু একটা করছে। আহিল ও সাথে আছে। সে কিছুক্ষন পর পর ভাই কে গু*তা দিয়ে কিছু একটা বলছে। আহিলের বাবা মনোযোগ সহকারে পত্রিকা দেখছেন। আয়ানা সবাই কে একবার দেখে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো। রান্নাঘরে এসে দেখলো অনু আর মীরা মিলে সব রান্না শেষ করে ফেলেছে। এখন সব বাটিতে বের করছে। এটা দেখে খা’রা’প লাগলো আয়ানার। মীরার মতো সেও তো এই বাড়ির বউ। তারও তো দায়িত্ব আছে। সে কিছু কাজ এগিয়ে দিলে তো তার শাশুড়ি আম্মু কে আর ক*ষ্ট করা লাগতো না।
অনুর নজর দরজার দিকে যেতেই দেখলো আয়ানা মুখটা কে ছোট করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। অনু আয়ানার সামনে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
— কি হয়েছে আমার ছোট্ট মেয়েটার? এভাবে মুখ গো’ম’ড়া করে আছে কেনো?
আয়ানা চোখ তুলে তাকাতেই অনু বেগম দেখলেন আয়ানার চোখে পানি ট’ল’ম’ল করছে। সে অ’স্থি’র হয়ে আয়ানার গালে হাত রেখে বললেন,
— কি হয়েছে আম্মা? কাঁ*দ’ছো কেনো? আদ্রিশ নাকি তোমাকে এতক্ষন পড়িয়েছে। ও কি ব*কা দিয়েছে তোমাকে? দিলে বলো এখনই ওর তেরোটা বা*জা’বো।
আয়ানার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। সে মাথা ঝাঁ*কি’য়ে আটকানো গলায় বললো,
— না,,, উনি কিছু বলে নি।
অনু বেগম আদুরে গলায় বললেন,
— তাহলে কি হয়েছে আম্মু কে বলবে না?
আয়ানা বললো,
— তোমরা দুজন মিলে এতো কাজ করেছো। আর আমি তোমাদের কোনো হেল্প করতে পারলাম না। আমারও তো দায়িত্ব আছে। এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছি। কিন্তু….
আয়ানা বেগম অনুর গালে আস্তে একটা থা*প্প*ড় মে*রে বললেন,
— শোনো এই মেয়ের কথা। কালকে কি বলেছিলাম মনে নেই? নিজের সম্পূর্ণ মনোযোগ পড়াশোনা তে দাও। ঘর সামলানো, এসব কাজের জন্য এখনো অনেক সময় পড়ে আছে। আর আমরা কই এতো কাজ করেছি। আমরা সবসময় মিলে কাজ করি। এতে কাজ সহজ হয়ে যায়। প্রীতি (আহিলের মা) ও তো আমাদের সাথে ছিলো। সে একটু দরকারে বাইরে গিয়েছে। আর মিনা আপা আজ একটু অসুস্থ তাই তাকে রেস্ট নিতে বলেছি। নাহলে সেও আমাদের কাজে হেল্প করে।
আয়ানা বারংবার মুগ্ধ হয় অনুর কথায়। এ মুগ্ধতা যেনো শেষ হওয়ার নয়। প্রতিবার অনুর প্রতিটা কথায় তার জন্য সম্মান বেড়ে যায় আয়ানার মনে। তার আফসোস হয়, ‘ইস সব মেয়েরা কেনো এমন শশুর বাড়ি পায় না? কেনো সবার চিন্তা ভাবনা তার সামনে দাঁড়ানো মানুষটার মতো সুন্দর হয় না?’
মীরা এগিয়ে এসে আয়ানার মাথায় একটা গা*ট্টা মে*রে বলে,
— এতো চিন্তা ভাবনা করতে হবে না। পড়াশোনায় মন দেন। নাহলে পড়ে আদ্রিশ ভাইয়া ধরে কে*লা’বে আপনাকে। যা গিয়ে টেবিলে বস।
আয়ানার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। মীরা তার সাথে খুব কমই কথা বলতো। তার উপর বিয়ের দিনের ঘটনার পর আয়ানা ভেবেছিলো মীরা হয়তো তার উপর খুব রে*গে আছে। কিন্তু আজ এভাবে কথা বলায় মহা খুশি হয় সে। নিজের আবেগ ধরে রাখতে না পেরে একবার মীরা কে আরেকবার অনু কে জড়িয়ে ধরে দৌড়ে চলে যায় রান্নাঘর থেকে। আয়ানার কা*ণ্ডে হেসে ফেলে অনু আর মীরা।
চলবে?
(