#অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤
#পর্ব_৩১ [প্রথমাংশ]
#কায়ানাত_আফরিন
-‘Around the world in 80 days’ মুভিটার নাম শুনেছেন আফরা?
আফরা নিষ্প্রভ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ফারহানের দিকে। ওরা দুজনেই এখন বসে আছে লাউয়াছড়া বনের এক প্রান্তে সুদৃশ্যমান পরিত্যাক্ত রেললাইনটির মধ্যে। জায়গাটি এখন মূলত ছবি তোলার জন্যই বিখ্যাত। তবে আজ মানুষের সমাগম কম বলে এই রেললাইনটি একেবারেই নির্জন লাগছে। দু’ধারে আচ্ছাদিত ঘন সবুজ বন আর মাঝপথ দিয়ে সরু একটি রেললাইন, দেখলেই কেমন যেন এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি জেগে ওঠে মনে। আফরা রেললাইনের এই সরু পথে কেমন যেন আবিষ্ট হয়ে ছিলো কিছুক্ষণ। হঠাৎ ফারহানের এই প্রশ্নটি শুনে আফরা মিহি কন্ঠে জবাব দিলো,
-‘নামটা তো চেনা চেনা লাগছে,,,তবে চিনতে পারছি না।’
ফারহান ম্লান হেসে দিলো ওর কথায়। বলে ওঠলো,
-‘কি বলছেন? অস্কারপ্রাপ্ত হলিউড মুভি এটা। আর আপনি এর নাম মনে করতে পারছেন না? আমি তো ভেবেছিলাম আমার প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গেই আপনি বোধহয় উত্তর দিয়ে দিবেন। ‘
আফরা ভ্রুজোড়া হালকা কুঁচকে ফেললো ফারহানের এমন কথায়। মনে মনে বিরক্তও হলো বটে। এই ছেলেটা একটু সুযোগ পেলেই চেষ্টা করে ওর সঙ্গে ঠাট্টা করার যা এতবছরে কেউ কখনোই ওর সঙ্গে করেনি। আফরা আগবাড়িয়ে এবার বলে ওঠলো,
-‘আরে ,আমি তো এমনেই বলেছিলাম৷ আপনার কথা শুনে মুভিটার কথা সব মনে পড়ে গিয়েছে৷ আমি,, আমি দেখেছি এই মুভি। তাই আমায় বিভ্রান্তিতে ফেলবেন না।’
আফরা মুখ ফুলিয়ে বলে ফেললো কথাটি।ফারহান যেন আরও সুযোগ পেয়ে গিয়েছে এতে। তাই বিদ্রুপ হেসে জিজ্ঞেস করলো,
-‘তাই নাকি, তো কত সালের মুভি এটা? আমি তো দেখিনি তাই আমায় কাহিনীটা বলবেন কিন্ত।
আফরা এবার উত্তর দিতে গিয়ে দমে গেলো। কেননা আসলেই ও মুভিটার কথা মনে করতে পারছে না। ফারহান এবার গা ছাড়া হাসি দিয়ে শুয়ে পড়লো নরম ঘাসের সবুজ প্রান্তরে। কেননা ও আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলো আফরা এ ব্যাপারে জানে না। নিজের বোকাসুলভ আচরণের জন্য আফরাও বেশ লজ্জা পাচ্ছে। পূর্বে কখনোই নিজের ব্যাক্তিত্বকে তুলে ধরার জন্য আফরা কোনো ছেলের উদ্দেশ্যে এরকম আচরণ করেনি। এই প্রথম , এই প্রথম আফরা নিজের গন্ডি পেরিয়ে এক ভিনদেশী ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হলো। আর হলোটা কি? যেখানে ও নিজের ব্যাক্তিত্ব তুলে ধরার প্রচেষ্টায় আছে ততবারই ও নিজের বোকামিসুভ কর্মকান্ডের সাথে ফারহানের পরিচয় ঘটাচ্ছে। আফরা এবার সরু গলায় জিজ্ঞেস করলো,
-‘এভাবে গা ছাড়িয়ে হাসছেন কেনো? এখানে কি কোনো কমেডি শো চলছে?’
-‘আপনি কমেডি শো থেকেও একটা সিরিয়াস জিনিস আফরা। আমার এইবারের ট্যুর টা আপনার উইয়ার্ড আচরণের জন্য আরও জমপেশ হয়ে ওঠবে।’
-ভনিতা না করে বলে ফেলুন মুভিটা কত সালের আর হঠাৎ কথাটি এখানে উঠাচ্ছেন কেনো?
থমথমে গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লো আফরা। এমন একটা ভঙ্গি নিয়েছে যে ফারহান যদি না জানে তাহলে এখনই ওকে কেটেকুটে পিসপিস করে ফেলবে। আর যাই হোক নিজের পছন্দের মানুষের হাসির পাত্র কখনোই আফরা হতে চাইবে না।
ফাহান নিজের হাসি থামিয়ে মেঘলা আকাশএর থেকে চোখ সরিয়ে তাকালো পাশে বসা আফরার দিকে। আফরার কালচে বাদামী চুলগুলো আকাশের মেঘপুন্জের ন্যায় উড়ে চলছে হাওয়ার তালে। ফারহান এবার বলে ওঠলো,
-‘Around the world in 80 days’ …….অস্কারপ্রাপ্ত এই হলিউড মুভিটার একটা বিশেষ সিন এখানে শ্যুট কর হয়েছিলো ১৯৫৫ সালে। তারপর ১৯৫৬ সালে এটা রিলিজ হয়। এই মুভিটার নাম শুনেই বুঝতে পারছেন মেইনলি জার্নি নিয়ে পুরো কাহিনীটা সাজানো হয়েছে। এর বেশি আমি স্পয়লার দিতে পারবো না। আপনি দেখে নিয়েন মুভিটি।’
আফরা রুদ্ধশ্বাস ছাড়লো। ফারহানের চোখে মুখে একধরনের চাপা হাসি। এবার সে বলে ওঠলো,
-‘তো , আপনি না বলেছেন এই মুভিটি আপনি দেখেছেন? তাহলে বুঝতে পারলেন না যে মুভিটার একটা সিন এর সাথে এই জায়গার কোনো মিল আছে কি-না?’
আফরা আহত চোখে তাকালো অন্যদিকে। কেননা ফারহান ওর মিথ্যাটি ধরতে পেরেছে। আসলে ও অ্যামেরিকান নাগরিক হওয়া সত্বেও এত পূর্বের এই হলিউডমুভিটা কেন দেখেনি , ফারহানের এই কথাটা ওর ইগোতে লেগেছিলো। তাইতো এই কথাটি বলে ফেলে নিজের ইগো বজায় রাখার জন্য। আফরাকে কিছু বলতে না দেখে ফারহান অগোচরে বিদ্রুপ হাসি দিলেও তা ধরে ফেললো আফরা। এখানে আসার পর থেকেই ফারহান রীতিমতো ওকে হ্যারাস করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। নিজেকে আফরা আর দমাতে পারলো না। অগত্যাই ছোট ব্যাগটা ফারহানের দিকে সজোরে ছুড়ে মেরে উঠে দাঁড়ালো। ক্রুদ্ধ গলায় বলে ওঠলো,
-‘আপনি একটা স্টুপিড , ডাফার , রাসকেল। এক্ষুণি আমায় বাসায় দিয়ে আসুন। আপনার সাথে একমুহুর্তও আমি এখানে থাকবো না।’
ফারহান উদ্ভ্রান্ত। হঠাৎ আফরাকে এতটা উত্তেজিত হতে দেখে ওর যেন কথা বলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবুও নির্বিকার ভাবে বলে ওঠলো,
-‘এত হাইপার হওয়ার মতো কি বললাম?’
এই বলে ফারহান ঝুঁকলো আফরার দিকে। বললো,
-‘নিজের বোকামির রাগ আমার ওপর ঝাড়ার চেষ্টায় আছেন বুঝি?’
আফরাকে আর পায় কে। ফারহানের কথা শুনে একপ্রকার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে ওর হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিলো।এই লোকটা আসলেই অসভ্য , অসভ্যের ওপর অসভ্য। একটা মেয়ের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয় তার আংশিক ধারনা এই লোকটার মগজে নেই। পারে শুধু মারামারি আর রাত বিরাতে ভূতের মতো রেইনকোর্ট পড়ে টি এস্টেটে ঘুরঘুর করতে। আফরা এবার হাল ছেড়ে দিলো। বলে ওঠলো,
-‘থাকুন আপনি। আমি গেলাম।’
বলেই আফরা বড় বড় পা ফেলো বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ফারহান হাত চেপে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। ওর চোখে মুখে এখন বিস্ময় আর কৌতুহলতার চাপ। আফরার হঠাৎ প্রেশার কুকারের মতো হাইপার হয়ে ওঠা ওর মস্তিষ্ক তরঙ্গে অন্য উন্মাদনা ছাড়িয়ে দিচ্ছে।
ফারহান ঠোঁটজোড়া নাড়িয়ে মৃদু কন্ঠে বলে ওঠলো ,
-‘আই হ্যাভ নেভার সিন উইয়ার্ড গার্ল এজ লাইক এজ ইউ আফরা! বাট আই লাইক ইট।’
আফরার তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠা ভঙ্গিমা নিমেষেই শীতল হয়ে গেলো ফারহানের কথায়। ফাহানের ওর উদ্দেশ্যে বলা শেষ কথাটি ওর কর্ণকুহরে হারমোনিয়ামের মতো সুর তুলছে। আফরার কাছে ইংরেজী ভাষাই হলো প্রথম ভাষা , সহজ এবং সাবলীল ভাষা। হয়তো ফারহান এটা ভালোমতই জানতো , তাই নিজের ক্ষুদ্র এই কথাটি অচিরেই আফরাকে শান্ত করার জন্য আফরাকে বলেছে। ফারহান এবার আলতো হেসে বলে ওঠলো,
-‘আপনিই প্রথম এবং একমাত্র মানুষ যার সাথে আমি এতটা হাসি ফুটিয়ে কথা বলেছি। কথা বলেছি আনন্দের সাথে। আপনাই প্রথম এবংএকমাত্র মানুষ যার কথায় আমি কৌতুহল বোধ করেছি। কেন জানেন? কারন এর উত্তর আমি নিজেও জানিনা। আমি শুধু জানি আপনি অন্যরকম আর এই অন্যরকমটাই আমার ভালোলাগে।’
আফরার শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো এবার। ওর সারা শরীরেই তুমুল উত্তেজনা। শরীরটা কেমন যেন অনুভূতির আবেশে অবশ হয়ে আসতে চাইলেও পারলোনা ফারহানের হাতের উষ্ণ স্পর্শের জন্য।ফারহান এবার আড়ষ্ট কন্ঠে বললো,
-‘আমার প্রতি রাগ কমেছে?’
-‘হ-হ্যাঁ।’
আফরার সম্মোহনী কন্ঠের মৃদু উত্তর। ফারহান এবার নিষ্প্রভ হয়ে বলে ওঠলো,
-‘তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? চলুন আমার সাথে? আজ আপনাকে এই মেঘাচ্ছন্ন আকাশের এক চরম দৃশ্যের কাছে নিয়ে যতে চাই। ভাগ্যক্রমে যদি বৃষ্টি হয় সেটা আমাদের সৌভাগ্য। আপনার এই সিলেট পরিভ্রমণের একটা উল্লেখযোগ্য স্মৃতি হবে মেঘালয়ের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত ওই জায়গাটি। তাহলে প্রস্তুত তো?নাকি আবারও রাগ করে ফিরে যাবেন?’
আফরা না করতে পারলো না। যতই হোক, শীতল প্রতিক্রিয়াহীন মানুষটার সঙ্গ অত্যন্ত বিব্রতকর হলেও ওর প্রচন্ড ভালোলাগে। একথায় প্রচন্ড প্রচন্ড ভালোলাগে।
.
.#অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤
#পর্ব__৩১ [দ্বিতীয়াংশ]
#কায়ানাত_আফরিন
রৌশিন আর ইলা মার্কেটের কাছাকাছি আসতেই দেখতে পেলো। একপাশে বিশার ভীড়। জণগণের ঠেলাঠেলিতে রীতিমতো উপচে পড়ছে সবাই সেদিকে। ভিড়ভাট্টা রৌশিনের কখনোই পছন্দ না। অগত্যাই সে চেয়েছিলো জায়গাটি কোনোভাবে অতিক্রম করে গিফট শপের কাছাকাছি যেতে। কিন্ত বাধঁ সাধলো ইলা। মেয়েটা বরাবরই কৌতুহলপ্রবণ। ওদিকটায় কি হয়েছে না জেনে ও যাবে না। রৌশিন এবার ইলাকে বুঝিয়ে বললো,
-দেখ্ ইলা , আমাদের এভাবে ভিড়ভাট্টায় যাওয়াটা উচিত হবে না। এমনিতেও এসব জায়গাতেই কিছু লোভী পুরুষ স্পর্শ করার পৈশাচিক আনন্দ খুঁজে। তুই কি ভুলে গিয়েছিলি যে কলেজে সেবার কি হয়েছিলো?
ইলার মনে পড়ে গেলো সেদিন কলেজের কথা। নির্বাচনের আগ মুহুর্তে কলেজের পরিবেশ কিছুটা উত্যপ্ত ছিলো আর সেসময় আফরা আর ও কৌতুহলবশত প্রধান ভবনের কাছাকাছি যাওয়াতে একদল লোক ওদের বাজেভাবে স্পর্শ করেছিলো। বিষয়টা ফারহানের কানে যাওয়াতে যেই ভয়ঙ্কর আঘাত দিয়েছিলো ওদের, এই কারনে সারা কলেজে বিষয়টা দাবানলের মতো ছড়িয়ে যায়। রৌশিন আর মারুফও সেখান থেকে বাদ পরেনি। ইলা এবার শান্ত হলো। মনক্ষুন্ন হয়ে মার্কেটের দিকে এগোতেই ওর কানে গেলো যে শুটিং চলছে এখানে। তাও আবার কোনো এক ওয়েব সিরিজের।
ব্যস ইলাকে আর পায় কে। পারলে রৌশিনকে ছেড়েই হতদন্ত হয়ে সেদিকটায় ছুটে চলে যায়। রৌশিন বহুবার থামানোর চেষ্টা করেও পারলো না। তাই বাধ্য হয়ে ওকেও যেতে হলো সেদিকটায়।
দেশের বিখ্যাত দুই অভিনেতা অভিনেত্রীর ওয়েব সিরিজের শুটিং এখানে হওয়াতে ভীড়ভাট্টা নেহাত কম নয়। রৌশিন আর ইলা অপার পানে সেদিকটায় তাকিয়ে ছিলো। এতদিন ওরা টিভি স্ক্রীনের সামনের পর্দা দেখেছে। তবে পেছনের পর্দায় এধরনের দৃশ্য ওদের কাছে অদেখা। লাইটিং, মেকআপ, অ্যাকশন , কাট সবকিছুই নতুন লাগছে ওদের কাছে। হঠাৎ ওরা খেয়াল করলো এক মধ্যবয়স্ক লোক একজনের সাথে প্রচন্ড রাগারাগি কযছে। সম্ভবত উনি এই সিরিজের ডিরেক্টর। অনেকটা ক্রুব্ধ গলায়ই উনি সামনের ব্যাক্তিকে বলছেন,
-‘এতটা ইরিসপন্সিবল কিভাবে হতে পারো তোমরা? জানো পাবলিক স্পটে শুটিং করাটা কত চ্যালেন্জিং? এর মধ্যে একজন কো আর্টিস্ট হুট করে বললো আসবে না। মানে ,,,,, আমি কি সিরিয়াসলি কোনো শুটিং করাচ্ছি?’
লোকটির কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই চোখ গেলো রৌশিনের দিকে। রৌশিন স্তব্ধ। কেননা লোকটা বেশ অদ্ভুতভাবেই তাকিয়ে আছেন। অতঃপর উনি হাত বাড়িয়ে বললেন,
-তুমি একটু এখানে আসো তো মা?
রৌশিন কিছু বুঝলো না। তবে জ্ঞানবোধের দরুন সে গার্ডদের পাড়ি দিয়ে এগিয়ে গেলো উনার দিকে। লোকটা আড়ষ্ট কন্ঠে বললেন,
-তুমি এক্টিং করতে পারো?
-জ্বী,,,,,,,,,,মানে , কলেজের থিয়েটারেই যা একটু আধটু করেছি।
অপ্রস্তুতভাবে কথাটি রৌশিন বললেও লোকটি যেন অমাবস্যায় পূর্ণিমা পেয়ে গেলো। খুশিতে আপ্লুত হয়ে সে বলে ওঠলেন,
-আসলে, আমাদের ওয়েব সিরিজের এক কো আর্টিস্ট হঠাৎ করেই আজ আসেননি। তোমায় শুধু ওর জায়গায় ছোটট একটা রোল প্লে করতে হবে। বেশি কিছু না , তুমি নায়কের কাছে যাবে আর চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বলবে যে অমি চিঠিটা দিয়েছে আপনাকে। অমি হলো নায়িকার ক্যারেক্টারের নাম।
সিনটা ছোট। তবে নেহাত গুরুত্বহীন নয়। এই সিনটার ওপর ভিত্তি করেই হয়তো পুরো ওয়েব সিরিজটা সাজানো হয়েছে। তাই বিচলিত ডিরেক্টর সাহেব।এদিকে রৌশিন কিছুটা চিন্তিত। একেতো মারুফের গিফট কেনা এখনও হয়নি তার ওপর এই লোকের অনুরোধ অগ্রাহ্য করাটাও ওর শরীর সায় দিচ্ছে না। তাছাড়া এত বড় দুই অভিনেতার সাথে ছোট একটা সুযোগ মিস করার কোনো মানেই হয়না। তবুও মারুফের কথা ভেবে রৌশিন না বলতে চাইলেও বাঁধ সাধলো ইলা। বললো, গিফট আর ওর সারপ্রাইজ হিসেবে টাঙ্গুয়ার হাওরের ট্যুর ফাহিমের সাথে ও ম্যানেজ করবে। তবুও রৌশিনকে ও এই চান্সটা মিস করতে দেবে না।রৌশিন তাই পরিশেষে রাজি হয়ে গেলো চরিত্রটিতে অভিনয় করতে।
_________________________
লাউয়াছড়া বনের সীমানাপ্রাচীর পেরিয়ে উত্তরধার দিয়ে চলে গিয়েছে একটা সুন্দর পিচঢালাই রাস্তা। ফারহান আফরাকে নিজের কথার মোহে ফাসিয়ে শেষমেষ নিয়েই এলো ওর পছন্দের জায়গাটিতে। ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। সেই সাথে প্রবাহমান একধরনের শীতল ঠান্ডা বাতাস।দুধারে অবস্থিত দেবদারু গাছের উচ্চতার মোহে আফরা পাগল হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়সমান পাইনগাছের সৌন্দর্যগুলো তো দুর্বিষহ। আফরা বৃষ্টির পানিতে ভিজতে থাকলো একটু একটু করে। তাকালো ফারহানের দিকে। ছেলেটাকে আচ্ছন্নময়ী লাগছে। ওর সিক্ত জুবুথুবু সুঠাম দেহের গঠনে যে কেউ নেশাময় হতে বাধ্য। কি আছে এই ছেলেটার মধ্যে? যা ওদের প্রথম সাক্ষাত থেকেই আফরাকে ভাবুক করে তুলেছে। ফারহান নির্বিকার। চোখের মায়াময় শীতল দৃষ্টি যেন আরও বেশি ঘোরযুক্ত। ঠোঁটজৈড়া সে হালকা নাড়িয়ে বলে ওঠলো,
-‘জায়গাটা ভালোলেগেছে?’
-আপনাকে তার থেকেও বেশি।
চমকপ্রদ হয়ে ওর দিকে তাকালো ফারহান। আফরা যেন নিজের মধ্যে নেই। ওর পুরো দৃষ্টিই কাঙাল হয়ে আছে ফারহানকে দেখার জন্য। ফারহান মাথা নত করে আশপাশ তাকালো। ভঙ্গিমায় নির্বিকারত্বের ছাপ। সে জানে আফরার মনের সুপ্ত অনুভূতিগুলো। জানে কতটা দুর্বল সে ফারহানের প্রতি। তবুও ফারহান পরোয়া করতে চায় না। ওর ধারনা, বিদেশিনী তো ! হয়তো ফিরে গেলেই সে মোহ কটে যাবে।তবে এখন ও নিজেও এই বিদেশিনীর প্রতি দিন দিন বৈরাগী হয়ে ওঠছে। কিন্ত সেদিন ফাহিম যে বলেছিলো ওর আফরাকে পছন্দ? হ্যাঁ,আফরা সেদিন রাগ করে চলে যাওয়ার পর ফাহিম এসেছিলো ফারহানের কাছে। বলেছিলো নিজের সুপ্তমনের কথা। তাহলে ভাই হয়ে কিভাবে প্রতারণা করতে পারবে সে?তবুও ফারহান নিজেকে আশ্বস্ত করলো, এটা কোনো ফ্যান্টাসী নয় যে সে ফাহিমের জন্য নিজের অনুভূতি ধামাচাপা দিয়ে ফেলবে। এটা একটা গল্প। এক বিদেশিনী আর তার থেকে অনুতিদূরে শ্রীমঙ্গলের এক মিঃ রেইনকোর্টম্যানের গল্প। তাকে যদি স্বার্থপর হতে হয় তবে হবে সে স্বার্থপর। কিন্ত স্যাক্রিফাইজ করতে পাবে না।
বৃষ্টি শুরু হয়েছে তুমুল গতিতে। দুজন এবার দৌড়ে পথের একেবারে অন্তিম প্রান্তে চলে গেলো। এ যেন এক নিদারুন অনুভূতি। ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে পুরো পথপ্রাঙ্গন নতুনত্ব ধারন করেছে। আফরা ভিজে টুইটুম্বুর। সেই সাথে ফারহানও। উন্মাদনা দুজনকে পাগলপ্রায় করে দিচ্ছে। ফারহান এবার জিজ্ঞেস করলো,
-‘কদন ফুল লাগবে?’
-‘হ্যাঁ।’
ফারহান পথের একপাশ থেকে গাছ থেকে ফুল ছিড়ে পড়িয়ে দিলো আফরার কালচে বাদামী চুলে। ভেজা চুলের সাথে তা লেপ্টে অপাররূপ ধারন করেছে। ফারহান বিমূঢ়। মেয়েটাকে এই রূপে ভয়ংকর আবেদনময়ী লাগছে। নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে ফারহান। তবুও বেড়াজাল পাড়ি দিয়ে সে হঠাৎ আফরার হাত টেনে নিয়ে এলো নিজের কাছে। ওর দৃষ্টি প্রখর। আফরা তাই অবাক হলো এই ফারহানকে দেখে। ফারহান এবার বলে ওঠলো,
-‘আপনি রূপ তেজস্বী আফরা, আপনার সবকিছু আমায় ঘোরে ফেলে দিচ্ছে। আজ আমাদের সম্পর্ক আরও একধাপ উপরে উঠলো এই বৃষ্টিস্নাত পরিবেশে। আপনি খুশি তো রূপ তেজস্বী?’
‘রূপ তেজস্বী’ এর মানে কি আফরা জানে না। তবে ফারহানের শীতল কন্ঠে এই কথাটি ঐর সর্বাঙ্গে প্রেমের স্রোত বয়ে দিয়েছে। নিজেকে মনে হয়েছে কিশোরী যার মনে সবসময় উৎফুল্লতা। ফারহান মানুষটা হয়তো গম্ভীর। তবে নিজের ভালোবাসার মানুষের জন্য সে ততটাই উন্মাদ হতে পারে যতটা আজ তার দৃষ্টি আফরার জন্য হচ্ছে। আফরা বুঝতে পেরেছে ওর এসব পাগলামির মানে। হ্যাঁ এটাই প্রেম। অতঃপর এটাই ওর প্রেমের গল্প❤…..
.
.#অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤
#পর্ব___৩২
#কায়ানাত_আফরিন
লাউয়াছড়া বন থেকে ঘুরে এসেছে আজ দু’দিন হতে চললো। কিন্ত আফরার কাছে মনে হচ্ছে এ যেন দু’দুটো বছর। বৃষ্টিসিক্ত সেই মুহূর্তে ফারহানের সেই নেশা মিশ্রিত কথা ওর হিহাহিতজ্ঞান এতটাই শূণ্য করে ফেলেছিলো যে আফরা হয়ে ছিলো বিমূঢ়।পুরোটা পথেই ওর চোখে মুখে ছিলো ফারহানের কথার মারাত্নক ঘোর। বৃষ্টির ছন্দের তুলনায় তখন ফারহান এর কথাগুলো ওর হৃদয়ে তোলপাড় করে তুলেছিলো। বাসায় এসেই আফরা নিজেকে ঘরে বদ্ধ করে নিলো। রাতে ইলা এলো , মিসেস নাবিলা-মিঃ ইফাজ এমনকি শেষে ফাহিমও ডাকতে এলো। আফরা সবার সাথে স্বাভাবিক থাকলেও এড়িয়ে চললো ফারহানকে। হ্যাঁ, ফারহান এখন আগের মতো নিজেকে বাহিরের ওই ছোট ঘরটিতে আলাদা করে রাখে না। এখন নিয়মিতই আসা-যাওয়া হচ্ছে। কখনও ফাহিমের সাথে কথা বলতে তো কখনও ইলার সাথে অবসরে একটু আলাপচারিতা চালাতে। মিঃ ইফাজও খুশি ছেলেটার এমন পরিবর্তন দেখে। কেননা রাজনীতি নামক বেড়াজালে আবিষ্ট হয়ে ফারহান এতটাই শক্ত পাথর হয়ে গিয়েছিলো যে নিজের জীবন, ভবিষ্যত নিয়ে ওর কোনো মায়া ছিলোনা। তাই বলা চলে মিসেস নাবিলা ছাড়া মোটামোটি ফারহানের বাংলোতে নিয়মিত আসা-যাওয়ার ব্যাপারটায় সবাই খুশি। তবে আফরা কেনো যেন দেখা পাচ্ছেনা ফারহানের। প্রতিবারই সে বারান্দায় দাঁড়ালে শুনতে পায় পাশে ফাহিমের ঘর থেকে উচ্চস্বরে কথাবার্তার শব্দ। ছেলেরা স্বভাবতই একটু উচ্চস্বরে কথা বলে।আবার ড্রইংরুমেও ফারহানের ধপধপ শব্দ কাপিয়ে তুলে কাঠের সিড়িটিকে। রাতে ওর ঘরের সামনে খালি জায়গাটিতে কত্তো কিছু করে এর মাঝে আফরার ঘরের দিকে উকি দিতেও ভুলেও না। ফারহান আসলে বুঝতে পারছে না এই উড়নচন্ডী মেয়েটার আবার হলোটা কি। মেয়েটাতো এমনিতেও অদ্ভুত, কাজ কর্ম তার থেকেও বেশি অদ্ভুত। এভাবে দু’দিন কেটে গেলো তবুও দুজনের অন্তরে কোনো ধরনের সংলাপ তো দূরের কথা, চোখাচোখিও হলোনা।
এখন তন্দ্রাচ্ছন্ন রাত। বাহিরে বাতাসের দাপটে সমানতালে উড়ে চলছে রঙহীন পর্দা। আফরার কানে মোবাইল , কথা বলছে পৃথিবীর ঠিক বিপরীত গোলার্ধে অবস্থানরত বাবার সাথে। যুগ কতটা অদ্ভুত তাইনা? এখন মুঠোফোনের সাহায্যেই দূর দূর যোগাযোগ করা যায় সবার সাথে। আফরার কিছু টাকার প্রয়োজন ছিলো। এখানে যদিও হোটেলে সে থাকেনি তবুও অন্যান্য যাবতীয় খরচের দরুন মোটামোটি শূণ্যের কোঠায় ওর ব্যাংক ব্যালেন্স। হাতে ইনকামের আলাদা কোনো সোর্সও নেই। মিঃ ইফাজের কাছ থেকে চাওয়া তো অসম্ভব তবে বাবার কাছে টাকা চেতেও ওর মধ্যে কেমন যেন সংকোচ কাজ করছে। কারনটিও খুব স্বাভাবিক। অ্যামেরিকা বা ইউরোপের মতো অন্যান্য উন্নত রাষ্ট্রে ১৮ বছরের পরই প্রত্যেক সন্তান আলাদা হয়ে যায়। নিজেদের টাকা দিয়ে নিজেরাই আনন্দ করে, জীবনযাপন করে। আফরাও এর ব্যাতিক্রম কিছু নয়। এখন তাই বাবার কাছে টাকাটা যাওয়া মোটেও ওর কাছে স্বাভাবিক কিছু নয়। তবুও নিজের সংকোচকে একপাশে সন্তর্পণে রেখে মিঃ আসিফকে বললো বিষয়টা। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর হঠাৎই প্রসঙ্গ উঠলো আফরার মায়ের। আফরার গলা ধরে আসছে। কেননা অ্যামেরিকা থেকে আসার আগে আফরার সাথে তুমুল তর্কাতর্কি হয়েছিলো উনার। তবে আফরা এখন বুঝতে পারছে, ওর মায়ের ওকে হুট করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিলো যৌক্তিক। ওর নিজের মধ্যে তুমুল পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে এখানকার মানুষদের সাথে ঘুরাফিরা করে। যদিও এটা একটা লং ভ্যাকেশন কিন্তু এই স্মৃতিগুলো আজীবন স্মৃতির পাতায় সন্তর্পণে রেখে দিতে পারবে।
কথার এক পর্যায়ে মিঃ আসিফ হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন যে ফাহিমকে ওর কেমন লাগে। আফরা প্রথমত কিছুটা হকচকিয়ে যায়। তবুও স্বাভাবিকতাই উত্তর দিলো এ কথার। আফরার জানে না যে বাবা হঠাৎ এসব প্রশ্ন ওকে কেন করলো। এভাবেই বেশ কিছুক্ষণ বাবা ও মেয়ের আলাপণ চললো সময় নিয়ে।
কথা শেষ করে মোবাইলটা আফরা রাখতেই খেয়াল করলো দরজার একপাশে ইলা দাঁড়িয়ে আছে। আফরা এতক্ষণ খেয়াল করেনি যে ইলা দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওখানে। তাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে সে ইলাকে বলে ওঠলো,
-‘আরে ইলা! তুমি কখন আসলে? খাটে এসে বসে পড়ো।’
ইলা খাটে এসে বসলো এবার। মুখে খুশির চরম রেশ। মেয়েটা কেমন যেন, সবসময়ই অস্থির থাকে। কথার মতো সর্দা বাচ্চামো ভাব বিদ্যমান। কেউ দেখলে বলতেই পারবে না যে এই মেয়ে অতলে এত সুন্দর একটি সম্পর্কে জড়িয়ে আছে৷ ইলার হঠাৎ এত দুরন্তপনা দেখে ভ্রু উচিয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আফরা। কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-‘হোয়াট হ্যাপেন্ড ইলা? তোমায় তো একটু বেশিই খুশি খুশি লাগছে যে?’
-‘আমি যে নিউজটা দেবো এটা শুনে তুমি আরও বেশি খুশি হয়ে যাবে।’
আফরা মাথা দুলিয়ে শুনলো ওর কথা। মুখে বরাবরের মতো মিহি হাসি ঝুলিয়ে ইলার নাক টিপে বলে ওঠলো,
-‘তাহলে তো নিউজটা শুনতেই হবে।’
-‘আগামীকাল আমার খুব কাছের একজন বন্ধুর জন্মদিন। আর সারপ্রাইজ হিসেবে আমরা চাচ্ছি ওকে টাঙ্গুয়ার হাওর নিয়ে যেতে। আর সম্ভবত সেখানে তোমারও যাওয়া হচ্ছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের নাম শুনেছো?’
-‘উহু।’
অপ্রতিভ হয়ে বলে ওঠলো আফরা। ইলা এবার বললো,
-‘না শুনে ভালোই হয়েছে। আমি চাই তুমি হাওর এর জীবন্ত দৃশ্য টা প্রথম দেখো। আমরা যেহেতু মাত্র কলেজে পড়ি মা তাই মরে গেলেও আমারে একা যেতে দিবে না৷ তাই ফারহান ভাই, ফাহিম ভাই, সাব্বির, শামসু আমি, তুমি-আমরা সবাই যাবো ওখানে।’
-‘তা তো বুঝতে পারলাম, তবে জন্মদিনটা কার? রৌশিনের?’
-‘না আপু! আমাদের বার্থডে বয় এর নাম মারুফ।আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবচেয়ে গাধা ছেলে হলেও আমার আর রৌশিনের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। ওইযে সেদিন রৌশিন আসলোনা আমাদের বাসায়, ও এসেছিলো আমার সাথে মারুফের গিফ্ট কিনতে মার্কেটে যাবে বলে।’
-‘রৌশিনকে তো আমি চিনিই, তবে এবার মারুফের সাথেও পরিচিত হয়ে নেবো।’
ইলা হাসতে হাসতে বললো,
-‘ অবশ্যই, তুমি যেই সুইট কিউট একটা মেয়ে! সবাই তোমার সাথে অল্প সময়ের মধ্যেই মিশে যাবে।’
-‘শুধুমাত্র ফারহান ছাড়া।’
কথাটি আফরা বললো বিড়িবিড়িয়ে। ইলা প্রশ্নসূচক ভাবে ওর মুখপানে তাকিয়ে থাকলেও আফরা নানা কৌশলে তা এড়িয়ে নিতে সক্ষম হলো। আফরা হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিলো এবার। মোটামোটি বেশ রাত হয়েছে৷ ইলা তাই দ্রুত ওর ঘরে চলে গেলো রৌশিনের সাথে কথা বলার জন্য। সেদিন মার্কেটে যাওয়ার পর থেকে কে জানে কি হয়েছে রৌশিনের? কারও সাথেই কোনো যোগাযোগ করছে না৷ ঘরে বসে আছে নানা চিন্তায় বুদ হয়ে। এতটাই বুদ হয়ে আছে যে মারুফ বা ইলা কারও কলই রসিভ করলো না।
.
.
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। রৌশিনদের জীর্ণশীর্ণ বারান্দাটিতে বাতাসের তীব্র ঝাপটাতে ঝপ ঝপ শব্দ তৈরি হচ্ছে। এসময় স্বভাবতই মানুষরা ঘোর সীমানার বাহিরে পা এগোনোর চেষ্টা করে না। আশপাশে যদি বাঁশঝাড় থাকে তবে তো আর কথাই নেই। রৌশিন জানালার কাছ ঘেঁষে আনমনে লিখে যাচ্ছে ডায়েরিতে ওর আত্নকথা। দুদিন জ্বরে থাকার কারনে তেমন কিছুই লিখতে পারিনি, এমনকি ওর জ্বর হয়েছে একথাটি পরিবার ছাড়া আর কাউকেই বলেনি।
জ্বরটি কোনো স্বাভাবিক কারনে হয়নি, হয়েছে একটা স্বপ্নকে কেন্দ্র করে। স্বপ্নটা নিতান্তই তুচ্ছ মনে হলো ওর কাছে৷ বলা বাহুল্য, নাটকের সেদিন অভিনয় করা ওর ছোট্ট চরিত্রটি ছিলো পরিচালকের জন্য আর ওয়েব সিরিজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেদিন সেই পুরো চিঠি আনা নেওয়ার প্রক্রিয়াটি ও এমনভাবে অভিনয় করেছে যে কেউ বলতে বাধ্য, এ বুঝি কোনো ক্যামেরা পর্দা নয়। মেয়েটি আসলেই এক নিতান্ত কোমলমতী কিশোরী যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে কোমলীয়তার চরম উপস্থিতি। ডিরেক্টর সাহেব অল্প মুহুর্তে এমন একটা শট পেয়ে একটু না, বেজায়ই খুশি হয়েছিলেন। তাই অফারও দিয়েছিলেন রৌশিনকে এভাবে কো আর্টিস্ট হিসেবে বেশ কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করার জন্য। এমন সুযোগ যে কারো জন্যই একটা বিশেষ সুযোগ হলেও রৌশিন হ্যা বলতে পারলো না৷ কারনটাও খুব যৌক্তিক। রৌশিন রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে। এভাবে অভিনয় কোনো রক্ষণশীল পরিবারের জন্য সহজ কাম্য নয়। তাই ওর না করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। বাসায় এসে সে যখন লম্বা এক ঘুম দিলো তখনই সে স্বপ্নে দেখতে পেলো ফাহিমকে৷ কোনোভাবে ফাহিম জেনে গিয়েছিল যে রৌশিন আড়ালে আবডালে পাগলের মতো ভালোবাসে ছেলেটাকে। যা শুনে ক্রোধান্বিত হয়ে সজোরে চড় মেরে দেয় রৌশিনের গালে৷ এটা নিতান্তই ছিলো এক দুঃস্বপ্ন। তবুও ওর মনে বিকট ভয় ঢুকে গেলো৷ চিন্তায় এতটাই নিমজ্জিত হয়ে পড়লো যে জ্বর বাধানোর ব্যাপারটাও বাদ পড়লো না৷ এখন জ্বর কিছুটা কমেছে৷ তাই ভাবলো একটু লিখালিখি করলে মন্দ কি! ব্যাস! তারপর শুরু হয়ে গেলো ডায়েরীর পাতায় কিছু বাক্য ফুটিয়ে তোলার প্রচেষ্টা। লেখার মধ্যে হঠাৎ ওর ঘোর কাটলো মোবাইলের রিংটোন এ। স্ক্রিনে বড় বড় অক্ষর এ ভেসে উঠেছে,
”ফাহিম ভাই! ”
এই দুটো শব্দের লিখা ওর বুকে তোলপাড় সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট ছিলো। রুমে নেটওয়ার্ক কম পাওয়া যায় বলে হুড়মুড়িয়ে মোবাইল নিয়ে চলে গেলো বারান্দায়। মোবাইল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ফাহিম আড়ষ্ট কন্ঠে বলে ওঠলো,
-‘তোমার নাম রৌশিন না হয়ে বুকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া রৌদ্রময়ী রাখলে ভালো হতো৷ এই মেয়ে! তোমায় দুদিন ধরে কল দিচ্ছি, আর তুমি কিভাবে পারো পাষাণের মতো আমার, এই ফাহিম এর আড়ালে থাকার চেষ্টা করতে?’
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ