অতৃপ্তির মাঝে তৃপ্তিময় সে পর্ব -২৫+২৬

#অতৃপ্তির_মাঝে_তৃপ্তিময়_সে
#লেখিকা- সালসাবিল সারা
পর্ব -২৫
____________________
৫৬.
–“ভাই,হাত কে’টেছে তোর।দেখি!”
রিয়ানা অনুনয় করে আদ্রিনকে।কিন্তু, সে বিমূঢ়।নড়চড় নেই।তার মায়ের দিকেই এক দৃষ্টিতে চেয়ে।ইনায়ার মুখশ্রী ব্যথিত।আদ্রিনের হাতের রক্তিম তরল পদার্থের জন্যে বুকের ভেতরটায় উত্তাল মায়ের।সকলে আদ্রিনের হাতের তালু ব্যান্ডেজ করতে অনুনয় বিনয় করলেও এক বিন্দু নড়েনি সে অত্র স্থান হতে।এক ধ্যানে চেয়েই রইলো মায়ের অবয়বে।তার পরবর্তী কাজ যেনো তার মায়ের মুখ থেকে কিছু বেরুনোর উপর নির্ভরশীল।
ইনায়াকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিন অধর বাঁকা করে হাসে।আঘাত পাওয়া হাত পকেটে পুরে মায়ের দিকে হালকা ঝুঁকে বলে,
–“অবাক লাগে এটা ভেবে,তুমি আমার সত্যিকারের মা!”

–“আদ্রিন,তোমার কি ব্যথা লাগে না?পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফেললে কিভাবে?ড্রেসিং করা লাগবে।”
আদিবার কথা যেনো তার কানে ঢুকলো না।

শক্ত মুখে সে সম্মুখে পা ফেলে।কয়েক কদম এগিয়ে সে আবারও পিছু ফিরে।তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেনো ইনায়াকে ঝলসে দিচ্ছে!
–“পৃথিবীতে সবাই স্বার্থপর হলেও মা স্বার্থপর হয় না।কথাটা আজ ভুল মনে হচ্ছে।”
হাতের তালুর রক্ত ট্রাউজারের পকেটে ভেসে উঠেছে যেনো। তালুর চামড়া কাটলেও নরম স্থান হতে রক্ত একটু বেশি বেরোই।ভাবলেশহীন আদ্রিন দ্বিতীয় তলায় চলে যায়।পারিবারিক ভাবে বিয়েটা অসম্ভব,এটা তার মগজে বিঁধেছে ভালো করেই।ফোন বন্ধ করে সে।কিছু সময় নীরবে থাকা শ্রেয় তার।মাথায় কূটনৈতিক আরো পরিকল্পনা দরকার এখন।পকেট থেকে হাতের তালু বের করে।সেই স্থান রক্তিম। ট্রাউজারেই হাত চেপে রক্ত বন্ধ করার জন্যে উদ্যত হলো।পরক্ষণে এইসব বিষয় ছেড়ে তৃপ্তিকে নিজের করে নেওয়ার ভাবনায় মশগুল হয় আদ্রিন।হাতের কথা ভুলেই বসলো।
.
মিনিট দশেক পরে ইনায়া,রিয়ানা এবং দাদী এসেছে আদ্রিনের কক্ষে।রিয়ানা’ই এতক্ষণ যাবত মাকে বুঝিয়েছে।ইনায়া রাজি হলেও শর্ত জুড়ে দেয়।যদি দেখে আদ্রিনের হাত ব্যান্ডেজ করা তাহলে সে কস্মিককালে যাবে না ঐ মেয়ের বাড়িতে।আর যদি দেখে ব্যান্ডেজ করা নেই,তাহলে ছেলেকে বাঁচাতে যা করার তাই করবে।সকলে বিছানার ধারে যায়।রিয়ানা এবং ইনায়ার দৃষ্টি সোজা আদ্রিনের হাতের তালুতে।কিছুটা রক্ত ফ্লোরে।অতটা বেশি নয়।এই প্রথম রিয়ানা ভাইয়ের রক্তাক্ত হাত দেখে খুশি হলো যেনো।খুশি অন্তরে চাপা রেখে রিয়ানা কঠিন ভাষায় মাকে বলতে আরম্ভ করে,
–“খুশি হয়েছো?আরো অপেক্ষা করবে?তুমি কি চাও,আমার ভাইটার কিছু হোক?”

আদ্রিন মাথা তুলে চায়।বিরক্তিতে তার মুখ কুঁচকে।বেশ চওড়া গলায় বললো,
–“এইখানে কি?আমি ডেকেছি?এসেছো কেনো?এতো নাটক আর ভালো লাগে না।রাতেই আমি ফার্ম হাউজে শিফট করছি।সারাজীবনের জন্যে।”

আঁতকে উঠে ইনায়া।ছেলেকে সে হারাতে রাজি না।এক মেয়ের জন্যে তার ছেলে এমন হবে,জানলে কখনোই সে বিয়ের ব্যাপারটায় তুলতো না।কেনো সেদিন অন্য মেয়ের সাথে তৃপ্তির ছবিটাও ছেলের কাছে গেলো,এই নিয়ে আফসোসের শেষ নেই তার।মনে মনে সহস্র গাল মন্দ করলো ইনায়া।ছেলের হাতের চামড়ার লাল অংশটা দেখে মায়ের মন নরম হয়।হিংস্রতা চেপে ইনায়া এইবার মুখ খুললো,
–“কাউকে কোথাও শিফট হওয়ার দরকার নেই।আমরা যাচ্ছি ঐ মেয়ের বাড়িতে।মা,সবাইকে বলুন আটটার দিকে আমরা রওনা দিবো।”
ইনায়া আর থামে না।বুলেটের গতিতে কক্ষ ত্যাগ করে।ছেলের জন্যে ঐ দুশ্চরিত্রা মহিলার মেয়ের হাত চাইতে যাবেন, এটা ভাবতেই ইনায়ার চক্ষুতে হিংস্রতা ছেয়ে যায়।ইহকালে সে এই মেয়েকে সংসারে সুখী হতে দিবে না।মনের মাঝে হিংসাত্মক ভাব তার বেড়েছে শতগুণ।
____
রিয়ানা ক্ষত পরিষ্কার শেষে ব্যান্ডেজ করছে আদ্রিনের হাতে।নিশ্চুপ আদ্রিন।তাই কথা শুরু করলো রিয়ানা,
–“এখনো চুপ করে থাকবি?একটু হাসলে কি হয়?সব ব্যবস্থা করেছি ভাই।”
–“আম্মি মন থেকে বলেনি কিছু। মানুষের মন কিভাবে এতটা শক্ত হয় আমি বুঝিনা।”
আদ্রিনের গম্ভীর কণ্ঠস্বর।
–“ইস,কে বলছে এইসব কথা?তুই কেমন?বোনের বাড়িতে যেতে তোকে কতবার ফোন করা লাগতো?সারাক্ষণ বিজনেস,নাহলে ট্যুর এইসব নিয়েই তো থাকতি।মাঝে তৃপ্তি এসে আমার ভাইটাকে যা একটু সামাজিক করেছে।”
রিয়ানা হাসে।
আদ্রিন ঝিম মেরে বসে।পরক্ষণে সে আবারও বলে,
–“অরিত্রনকে ফোন করে জানিয়ে দিও,আমরা যাবো আজ।লোকটা আম্মির ডুপ্লিকেট।”
–“আঙ্কেল বলিস ভাই।”
–“শ্বশুর ডাকতে চাই ডাইরেক্ট।”
আদ্রিন তির্যক হাসে।রিয়ানা ভাইরে বাহুতে চিমটি কাটে,
–“এতো ফাজিল তুই,আগে জানতাম না!”

–“আমিও জানতাম না।তৃপ্তি মেয়েটা আমাকে এলোমেলো করেছে।”
আদ্রিন ভাবলো,মুখে আওড়ালো না কিছু।

ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে দ্রুত।নিজের অবয়ব আয়নায় দেখে আদ্রিন। গালে হাত বুলায়।ট্রিমার নিয়ে দাড়ির ব্যবস্থা করে।এলোমেলো আদ্রিনের জায়গায় এখন পরিপাটি আদ্রিন।ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গায়ে পাঞ্জাবি জড়ায়। হাতে ঘড়ি লাগানো অবস্থায় সে ভাবে,
–“আজ যেনো কোনো কাহিনী না হয়।”

৫৭.
তৃপ্তি এবং বাকি সবাই অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে আগের বাড়িতে চলে আসে একেবারের জন্য।তৃপ্তির নির্দেশ।মেয়েটা বাবাকে ছাড়া আর কিছুই বুঝছে না এখন।যদিও বাবা রেগে ছিলো আদ্রিনের গতরাতের কাজে,কিন্তু রিয়ানার ফোন পেয়ে সব রাগ কই চলে গেলো!এছাড়াও তৃপ্তি তার সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করছে এতেই তার সকল জয় নিহীত।মেয়েকে আর বকাঝকা না করার সিদ্ধান্তে অটল অরিত্রন।আদ্রিনের উপরও বড্ড সন্তুষ্ট,ছেলেটা কথার খেলাফ করেনি।

তৃপ্তি এখনো এই খবর হতে বেখবর।সে বিশ্রামে মগ্ন।তবে,বাড়ির কেউ থেমে নেই।আদরের মেয়েকে দেখতে আসবে ছেলেপক্ষ।তাই তৃপ্তির কাকীরা এটা সেটা তৈরি করতে উদ্যত হয়।প্রস্তুতির কিছু অংশ কম রাখবেন না উনারা।
সাতটার দিকে অর্পা উপস্থিত হয় তৃপ্তির নিকট।ডেকে তুলে তাকে।তৃপ্তি অবাক হয়ে তাকে শুধায়,
–“কিরে এইভাবে উঠিয়েছিস কেনো আমাকে?”
–“ম্যাডাম,আপনার জন্যে সব প্রস্তুতি আর আপনি ঘুমাচ্ছেন?”
অর্পা হাসে।
–“কি হয়েছে?”
তৃপ্তি হাই তুলে।
–“আদ্রিন দাদা আর উনার পরিবার আসছে।”
অর্পার কথাটা শেষ করা মাত্রই কেশে উঠে তৃপ্তি।

সত্যি কি আদ্রিন আসছে তার পরিবার নিয়ে?কই তাকে তো কিছু বলেনি আদ্রিন!অজানা অনুভূতিতে তৃপ্তির পেটে মোচড় দেয়।অদ্ভুত লাগে সবকিছু।বালিশের পাশ হতে দ্রুত মোবাইল নেয়।না,কোনো মেসেজ বা কল আসেনি।হিসাব কিছুতেই মিলছে না তৃপ্তির।সে ভোঁতা মুখে জবাব দেয়,
–“মশকরা করছিস?আদ্রিন আমাকে জানায়নি কিছু।”
–“উনার বোন ফোন করেছে।উফ,জলদি কর মেয়ে।উনার এসে যাবে যেকোনো সময়।”
এর মাঝে প্রিয় এসে তৃপ্তিকে জড়িয়ে ধরে,
–“বড় আপু,আমিও কি শাড়ি পড়বো তোমার মতো?”

ভ্রু কুঁচকে তাকায় তৃপ্তি।অর্পা হেসে বলে,
–“তোর দাদী শাড়ি দিয়েছে।এটাই পড়তে হবে তোর।আর প্রিয়,তুই কেনো শাড়ি পড়বি?শাড়ি পড়বে তোর বোন।”
–“প্রিয়, লাভির কাছে যাও।সে তোমাকে রেডি করবে।”
তৃপ্তির নির্দেশে প্রিয় চলে যায়।

প্রিয় যেতেই কয়েকবার ফোন দেয় সে আদ্রিনকে।কিন্তু, ফলাফলের উন্নতি নেই।ছেলেটার ফোন বন্ধ।কিছু হয়েছে কি?রাজি করাতে যেয়ে মা -ছেলের যুদ্ধ হয়নি তো?

ভাবুক তৃপ্তির ভাবনার মাঝে তার তৈরি হওয়া শেষ।অর্পা মেয়েটার হাতের কাজ দ্রুত এবং পরিপাটি।
সাদার মাঝে লাল পাড়ের শাড়িটা তৃপ্তির গায়ের সাথে মিশে।গলায় চওড়া স্বর্ণের চেইন। খোঁপায় গুঁজে রজনীগন্ধার গাজরা।কানে ছোট দুল।হালকা প্রসাধনী মুখশ্রীতে আর অধর লাল রঙে আবৃত।ব্যস তৃপ্তির সাজগোজের ইতি ঘটে।অর্পা তার চোখের কাজল তৃপ্তির কানের পিছে লাগিয়ে বলে উঠে,
–“যা লাগছে তোকে,আদ্রিন দাদা অজ্ঞান না হয়ে যায়!”
তৃপ্তি কিছু বলে না।লাজুক ভঙ্গিতে অন্যপাশ চেয়ে।
কাকীরা,দিদা একে একে এসে তাকে দেখে গেলো।অনুপস্থিত কেবল অর্ক আর তার বউ।হুট করেই ঘরের মেয়েকে দেখতে আসবে,এটা কি কেউ জানতো!

আটটার পরে গাড়ির শব্দ শোনা গেলো।তৃপ্তি তার ঘরেই বসে।গাড়ির শব্দগুলো যেনো যমের শব্দ।বুকের ভেতরে তোলপাড়।কক্ষে সে একাই।ধীর পায়ে জানালার ধারে যায়।পর্দার আড়ালে দাঁড়ায়। উঁকি দিতেই দেখতে পায়;ইনায়া, সাফা,আদিবা,দাদী,রিয়ানা এবং আরো কয়েকজন লোক।আদ্রিনের চাচারা হবেন হয়তো! রাফিকেও দেখেছে সে।অথচ আদ্রিনের দেখা নেই।কাহিনী কি আন্দাজে আসলো না তৃপ্তির। গেইটও বন্ধ হলো।
ভাবুক তৃপ্তি বিছানার পাশে আসে। অস্থিরতায় হাত ঘেমে।কোলাহলের শব্দ স্পষ্ট।এতো বড়ো বাড়ি তাদের অথচ,এখানেও শব্দ আসছে!
মিনিট বিশেক পার হয়।অর্পার আগমন পুনরায়।এসেই হাঁপিয়ে উঠে,
–“বাবারে,আদ্রিন দাদার পরিবারের সবাই হাসিখুশি।কি সুন্দর মিলেমিশ।যেনো আজ তাদের প্রথম দেখা নয়।”

ইনিয়ে বিনিয়ে তৃপ্তি অর্পাকে জিজ্ঞাসা করে,
–“কে কে এসেছে?”
–“আদ্রিন দাদার পরিবারের সবাই। উনি আসবেন এখনই।আলাদা গাড়ি করে আসছে শুনলাম।”
অর্পার কথায় তৃপ্তি জবাব দেয়,
–“উনি জীবনেও চেঞ্জ হবেন না।আজ পরিবারের সবার সাথে আসলে কি এমন হতো?সব সময় মন মতো করাটা উনার জন্যে বাধ্যতামূলক।এতো এক রোখা এই ছেলে!”

অর্পা তাড়া দেয় তৃপ্তিকে।মূলত তাকে ডাকতে এসেই কথায় জড়িয়ে গিয়েছিল সে।
নিচে নামতেই তৃপ্তির হাত-পা বরফের ন্যায় হলো।আতংকে তার আশপাশ আঁধার লাগছে।বিশেষ করে ইনায়া।তার চক্ষু শকুনের মতো তীক্ষ্ণ।তৃপ্তি আসতেই আদ্রিনের দাদী, চাচীরা তাকে নিজের নিকট টেনে বসায়।রিয়ানা নানান আলাপ জুড়ে দেয় তৃপ্তির সাথে।
সেই সময়ে তৃপ্তির ছোট কাকার ছেলে জনি আসে আদ্রিন সমেত।আদ্রিনকে দেখে তৃপ্তির কাকীরা মন ভরে আশীর্বাদ করে।তৃপ্তির পছন্দের জুড়ি নেই।এমন সুদর্শন ছেলেই যায় তৃপ্তির মতো স্নেহে ভরপুর মেয়ের সাথে।
.
মাথা তুলেনি তৃপ্তি।যে ছেলের বাহুডোরে আজ সকালেও আবদ্ধ ছিলো সেই ছেলেকে দেখতে এখন তার ভারী লজ্জা লাগছে।কেনো?কি কারণে?তাদের সম্পর্কটা এইবার পবিত্র হবে তাই!খুশিতে?মাথা উপরে না তুললেও আদ্রিনের কোলে থাকা হাতের ব্যান্ডেজ দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি তৃপ্তির।এই নিয়ে মনে এক নতুন প্রশ্নের সৃষ্ট হয়।

নাস্তার পর্ব শেষ।সকলে খেতে গেলে তৃপ্তি তার রুমেই চলে আসে।বড়রা কথা বলছে বিয়ের ব্যাপারে।এইসব শোনা তৃপ্তির সম্ভব না।উপরে আসার সময় আদ্রিনের দিকে একবার ফিরেছিলো,তবে চেহারা দেখেনি।

মাথা হতে আঁচল ফেলে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় মেয়েটা।অধরে প্রশান্তির হাসি।কেমন এক সুখ সারা সত্তায় বিচরণ করছে।

–“তৃপ্তি,আছিস?”
অর্পার প্রশ্নে তৃপ্তি বিনা দ্বিধায় বলে,
–“উফ,আজ এতো খুশি লাগছে!আমার আদ্রিন তার কথা রেখেছে।অর্পা ইচ্ছা করছে উনাকে জড়িয়ে বুকের মাঝে মিশে যায়।”

–“উম, তোদের ব্যাপার।আমি ভাইয়াকে দিতে এসেছিলাম।”
অর্পার অট্টহাসিতে বিচলিত হয় তৃপ্তি। আধশোয়া হয়ে বসতেই অর্পার পিছে দৃশ্যমান হয় আদ্রিনের অবয়ব।যে বর্তমানে ভ্রু কুঁচকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
অর্পা চলে যায় আদ্রিনকে ভেতরে যেতে বলেই।

তৃপ্তির নজর বিস্ফোরিত।সকালের আদ্রিন আর এখনের আদ্রিনের মাঝে বিরাট তফাৎ।মুখশ্রী কেমন জ্বলজ্বল করছে আদ্রিনের।খুশিতে কি?

–“আসো।আমি রেডি।জড়িয়ে ধরো।”
আদ্রিন দু হাত বাড়িয়ে দেয়।
–“আমি…আমি এইভাবেই বলেছি।”
উঠে দাঁড়ায় তৃপ্তি।
–“তোমার মুখ থেকে যা বেরুই,সব পূরণের দায়িত্ব আমার।”
প্রাণখুলে হাসে আদ্রিন। শাড়ির আঁচল চেপে ধরে তৃপ্তি।সম্মুখে আসলেই আদ্রিনের বুকে হাত ঠেকায় সে,
–“কেউ এসে যাবে।”
–“আসুক।”
পরপর আদ্রিন তার অধর ছুঁয়ে দেয় তৃপ্তির ললাটে।
তার দুবাহু আকড়ে ধরে তৃপ্তি। পরে ব্যান্ডেজ দেওয়া হাত তুলে বলে,
–“কি হয়েছে হাতে?”
–“কিছু না,মেহেবুবা।এতো সুন্দর কেনো তুমি?”

তৃপ্তি বুঝে আদ্রিন বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চায়।তাই সে আলতো করে আদ্রিনের বুকে মাথা রাখে।ঘটনা পুরোটা না জানলেও আন্দাজ করে সে।আদ্রিন যে তার বহু পূর্বপরিচিত!
–“আপনার আম্মিকে রাজি করাতে এমনটা করেছেন?”
শক্ত করে তার কোমর চেপে ধরে আদ্রিন।অস্ফুট শব্দ করে তৃপ্তি।সরে যায় মেয়েটা।সরাসরি দৃষ্টি মিলে দুজনের।
–“সব জেনে যাও কেনো,মেহেবুবা?”
–“দেখেছেন!আমি জানতাম আপনি শান্ত হয়ে কিছুই করতে পারবেন না।আর কখনোই…”
থেমে যায় তৃপ্তি।

আদ্রিনের আঙ্গুল তার অধরে।ফিচেল কণ্ঠে আদ্রিন বলে উঠে,
–“কিছু বলো না আর।এই সুন্দর জিনিসগুলো আমার শান্ত থাকতে দিচ্ছে না।এতো ধৈর্য ধরেছি,এদের বলো আমাকে আরেকটু ধৈর্য ধরে রাখার শক্তি দিতে।এরা বরাবরই আমার দুর্বলতা,জান।”

–“আপনিও না!দেখি সরুন।”
তৃপ্তি হাসে।জানালার পাশে যায়।আদ্রিন তার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে।আকাশে চাঁদ উঠেছে বিশাল।আলোকিত গগণ।তৃপ্তিকে বুকে টেনে নেয় আদ্রিন।তৃপ্তি নরম সুরে তাকে প্রশ্ন করে,
–“এইবার সব ঠিক হবে তো,আদ্রিন?”
–“হুম।ঠিক না হয়ে যাবে কই?”
আদ্রিন হাসে।তার এই হাসি তৃপ্তির সকল অবসাদ দূর করার অন্যতম হাতিয়ার।

হঠাৎই গাড়ির হর্ন আর গেইট খোলার আওয়াজ আসে।দুজনেই নিচে দিকে তাকিয়ে।গাড়ি থেকে বের হয় মেহের আর তার বাবা।

তৃপ্তির অস্থিরতা বাড়ে।এদেরকে সে চিনে।মেহের ছেলেটার ছবি দেখিয়েছিল তার বাবা।তারা এইখানে কেনো?আবার কি হতে যাচ্ছে?

–“এরা কারা?তোমার আত্মীয়?”
আদ্রিনের প্রশ্নে তৃপ্তি সরাসরি জবাব দেয়,
–“বাবার বন্ধু আর উনার ছেলে।হাসপাতালেও এসেছিল উনারা।”
তৃপ্তির কথায় সবটা বুঝে আদ্রিন।এদের কারণেই তার মেহেবুবাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসেছিল ক্রোধে!সেই ক্রোধ এখন স্বয়ং তার সামনেই?

আদ্রিন তৃপ্তির কাঁধ চেপে সম্মুখে ফেরায়।তৃপ্তি এক প্রকার ভীত।কি হবে নিচে এখন,এটা ভেবেই তার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।তার মুখে আঁধার দেখে আদ্রিন তাকে ভরসা দেয়,
–“ভয় পায় না,জান।কিছু হবে না।”
–“ইনায়া আন্টি আছে।উনার কি না কি বলে?আমার ভয় হচ্ছে খুব আদ্রিন।নিজের উপর আর দোষ আমি নিতে পারবো না।”
আতংকে তৃপ্তির সত্তায় কম্পন ধরে।আদ্রিনের রাগ হয়।প্রচুর রাগ।আবারও বাহিরের মানুষের জন্যে কি ঝামেলা হবে?তার মেহেবুবা কষ্ট পাবে?নাহ,এইবার সে কিছুতেই পরিস্থিতি বিগড়াতে দিবে না।এই মেয়েকে যে তার চায়,সারাজীবনের জন্যে দরকার তাকে।
রাগে আদ্রিনের চেহারার রং পাল্টাচ্ছে।রাগ সংবরণ করতে সে তৃপ্তির ঘাড়ে হাত চেপে বেশ ঝুঁকে দুজনের কপাল এক করলো।পরক্ষণে আদ্রিন ফিসফিসিয়ে বললো,
–“আচ্ছা,এইসব আজাইরা মানুষ কি আমাকে কখনোই ভালো ভাবে থাকতে দিবে না?”
#অতৃপ্তির_মাঝে_তৃপ্তিময়_সে
#লেখিকা- সালসাবিল সারা
পর্ব -২৬
________________
৫৮.
–“আপনি আবার ঝামেলা করার ফন্দি করেছেন,
আদ্রিন?”
পা থামে আদ্রিনের।বাঁক ফিরে পেছনে।জানালার সাথে লেপ্টে আছে প্রিয়তমার সত্তা।চেহারায় স্পষ্ট দ্বিধা।
আদ্রিন হাসে।হালকা গা দোলে তার। বৃদ্ধাঙ্গুলের সাহায্যে কপালের কিনারা ঘষে জবাব দেয়,
–“আমাকে ঝামেলাকারী মনে হয় তোমার?প্রথম শ্বশুরবাড়িতে এসে ঝামেলা করা আদ্রিনের পার্সোনালিটির সাথে যায় না।”
তৃপ্তি ভোঁতা দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সম্মুখে অবস্থিত প্রেমিক পুরুষের পানে।হাসিমুখে ছেলেটাকে দিব্যি সুখী মনে হলেও,তৃপ্তির মনে সায় দেয় না। হুট করে যদি রেগে যায়?বিশ্বাস নেই এই ছেলের।
–“আপনি পারমিশন দিলে যাবো নিচে?যায়?”
প্রশ্ন করলো আদ্রিন। তৃপ্তি মৌনতা দূর করে জবাব দেয়,
–“হু।”
–“সি ইউ সুন,ডার্লিং।”
অধর চৌখা করে ইশারায় করে আদ্রিন।রক্তিম হয়ে উঠে মেয়েটার গাল।মনে মনে আওড়ায়,
–“ফাজিল!”
–“নিচে আসার দরকার নেই।প্রয়োজনে আমি আসবো উপরে। ঐ বাস্টার্ড তোমাকে দেখুক,এটা আমার সহ্য হবে না।”
আদ্রিনের অবয়ব কক্ষ ত্যাগ করে।কেমন যেনো তীক্ষ্ণ ছিলো তার কণ্ঠস্বর।তার অন্তরে ক্রো’ধ ভর করছে কি আবারও?কে জানে!ছেলেটার ভেতরকার এবং বাহিরের রূপ বদলায় দ্রুত।অতিদ্রুত।
নিচে সব শান্ত থাকার জন্যে দোয়া করলো তৃপ্তি।অযথা ঝামেলা সে চায় না।অন্তত ইনায়ার সম্মুখে না।

তৃপ্তি ঠাঁই দাঁড়িয়ে জানালার ধারে।কেমন শীতল হাওয়া আসছে।বৃষ্টির পূর্বাভাস।চাঁদটাও এখন মেঘে ঢেকে।অথচ খানিক পূর্বেও কি সুন্দর চাঁদ উঠেছিলো!তৃপ্তির অধর প্রসারিত হয়।তার ধারণা আদ্রিন ছিলো এতক্ষণ যাবত তাই চাঁদও তাদের দর্শনে এসেছিলো।এখন আদ্রিন নেই,তাই চাঁদেরও কি অভিমান হয়েছে আদ্রিনের উপর?নিজের বোকামিতে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে মানবী।কিসব উদ্ভট কথা ভাবছে সে।মনটা কি আজ বেশি আনন্দিত?অতি খুশি?হ্যাঁ,হয়তো-বা।মনের বোঝা যে আজ থেকে অল্প অল্প করে গায়েব হচ্ছে।আদ্রিন থাকতে তৃপ্তির কোনো চিন্তা নেই,আবার তৃপ্তি ভাবে,
–“এই ছেলের জন্যেই আমার যত চিন্তা হয়।উফ, নিচে যেনো সব ঠিক থাকে।”
.
আদ্রিন আসতেই অরিত্রন অধরে মেকি হাসি ফুটিয়ে তুললো।ইনায়া অদ্ভুত দৃষ্টিতে ছেলেকে পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত।বাকি সবাই মুটামুটি হাসিখুশি।মেহের নামক ছেলেটার অবয়ব দেখেই আদ্রিন আন্দাজ করলো এই সেই ছেলে।রূপম তার পাশেই।অরিত্রন উঠে দাঁড়ালো আদ্রিনের সম্মুখে।তবে,আদ্রিনের দৃষ্টি এখনো মেহেরের উপর আটকে।ছেলেটা বেশ গোছানো।ব্যবসায়িক প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট তার ব্যক্তিত্বে।অরিত্রন হাতের ইশারায় আদ্রিনকে বলে উঠলো,
–“পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি,আমার ফ্রেন্ড আর ওর ছেলে।আর এই হলো আদ্রিন,আমার মেয়ের বাগদত্তা।”
আদ্রিনও ইশারায় মাথা নাড়িয়ে সায় দিল কেবল।মুখ খুললো না।বেরুলো না একটি শব্দও।মেহের ছেলেটা মলিস হেসে উঠে এলো সন্তর্পণে।হাত মেলানোর জন্যে উদ্যত হতেই আদ্রিন হাত মেলালো বিনা সংকোচে।

–“নাইস টু মিট ইউ।”(আপনার সাথে সাক্ষাৎ করে ভালো লাগলো)
মেহের বললো হাসিমুখে।
–“সেম হেয়ার।”
আদ্রিন তার থমথমে সুর বজায় রাখলো।

অরিত্রন দুজনকেই বসার নির্দেশনা দিয়ে নিজ বন্ধুর নিকট যায়।

–“তৃপ্তি,ঠিক আছে সে?”
মেহের প্রশ্ন করে আদ্রিনকে।
–“ইয়াহ।ভালোই আছে।”
আদ্রিনের সোজাসাপ্টা জবাব।দুজন বেশ দূরত্বেই আছে বাকি পরিবারবর্গ হতে। মেহের ঘাড়ের পেছনে হাত বুলিয়ে পুনরায় তাকে প্রশ্ন করে,
–“ভাগ্য অনেক বড় জিনিস।তাই না?”
–“এটা সবাই জানে।”
আদ্রিন কেমন বিরক্ত।মেহেরের পরবর্তী কথাটা তার ঠিক আয়ত্বে আসছে।
–“হুম।এইযে গতকাল আমি যখন তৃপ্তিকে প্রথম দেখেছিলাম,বিলিভ মি;আমি ভেবেছি এই মেয়েকে আমার সারাজীবনের জন্যে আমি পেতে চলেছি।বাট…”
মেহেরকে থামিয়ে আদ্রিন দু পকেটে হাত গুঁজে এক ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
–“বাট,সি ইজ ওনলি মাইন।ওর ব্যাপারে অন্য ছেলের মুখে কিছুই শুনতে চাই না আমি।বিয়েতে অবশ্যই আসবেন।আলবিদা।”
তার রুক্ষ কণ্ঠে মেহের বুঝলো এই ছেলে তৃপ্তির প্রতি ওভার পসেসিভ।
মেহের কিছু বলার পূর্বে আদ্রিন তাকে টপকিয়ে সামনে এগোয়।সাফা এবং প্রিয়কে কাছে ডাকে।সকলে বসতে বললেও আদ্রিন তাদের কথার বিপরীতে বলে উঠে,
–“তৃপ্তি আর ওদের নিয়ে বেরুচ্ছি।আপু তৃপ্তিকে নিয়ে আসো।আমি গাড়ি বের করছি।”

অরিত্রন দ্বিমত জানালো,
–“তৃপ্তির শরীর এখনও দূর্বল।এইভাবে বাহিরে যাওয়াটা…”
–“প্রবলেম নেই।আমি আছি মেহেবুবার জন্যে।নিশ্চিন্তে থাকুন।বিয়ের তারিখ দ্রুত দেওয়ার চেষ্টা করবেন।আল্লাহ্ হাফেজ।”
মায়ের দিকে চোখের ইশারায় কিছু বুঝিয়ে চলে যাচ্ছে আদ্রিন। ইনায়া ছেলের ইশারা বুঝে।রেগে নিজের ভ্যানিটি ব্যাগ খাঁমচে ধরে মহিলা।
অরিত্রন কিছুক্ষণ থমকে রইলো।তৃপ্তির বাড়ির সকলেও।যখন বুঝলো “মেহেবুবা” বলতে তৃপ্তিকে বুঝিয়েছে,তখন সকলে একগাল হাসলো।নত মাথায় অরিত্রন ভাবে,
–“এমন স্ট্রেট ফরোয়ার্ড,নির্লজ্জ কেনো এই ছেলে?”

৫৯.
শাড়ির আঁচল মাথায় চেপে গুটি পায়ে গাড়ির নিকট পৌঁছায় তৃপ্তি।সাথে আছে রিয়ানা,অর্পা এবং রূপম।আদ্রিন তাকে নিচে নামতে নিষেধ করে নিজেই কেনো ডেকে পাঠালো বোধগম্য হলো না তৃপ্তির।বেরিয়ে আসার পূর্বে মেহেরের বাবার সাথে সাক্ষাৎ করলেও মেহের এবং তৃপ্তি মোলাকাত করেনি। নত দৃষ্টিতে সবার থেকে আড়ালে বাহিরে আসলো।রিয়ানা এমনকি অর্পাও জবাব দিচ্ছে না একটিও।তৃপ্তি হদতন্ত দৃষ্টিতে গাড়ির ভেতরে তাকালো।আদ্রিন ড্রাইভিং সিটে বসে পেছনে অবস্থানরত দুই বাচ্চাকে মোবাইলে কিছু একটা দেখাচ্ছে।রিয়ানা সেসব দেখে হাসলো নির্বিঘ্নে,
–“কেনো এসেছো বুঝেছ এখন?তোমার উডবি বেরুবে আমাদের নিয়ে।”

রিয়ানার কথায় সম্বিত ফিরে পেলো আদ্রিন।মোবাইল আড়াল করে পেছনে বাঁক ফিরে বলে,
–“বাকি সিক্রেট পরে দেখাবো।এখন আমরা একটু ঘুরবো।মজা হবে,তাই না?”
সাফা এবং প্রিয় একত্রে দুহাত তুলে আত্মহারা হয়ে বললো,
–“ইয়ে!”
–“আসো। দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”
আদ্রিনের প্রশ্নে তৃপ্তি অকপট দৃষ্টিতে তাকায়।সে গাড়ি স্টার্ট দিতে উদ্যত। জানালায় হাত রেখে তৃপ্তি তাকে প্রশ্ন করে,
–“বৃষ্টি আসতে পারে।এমন সময় কই যাবেন?এছাড়া বাসায় সবাই আছে।”
আদ্রিন কিছু বলার পূর্বে রূপম বলে উঠলো,
–“আরে যা তো।ভাইয়া বেরুচ্ছে, যা।এতো কথা বলিস কেনো?আমি আর অর্পা আছি। যা মাইন্ড ফ্রেশ করে আয়।”

তৃপ্তি ভাইয়ের পানে চেয়ে শুধায়,
–“তোমরা যাচ্ছো না কেনো?”
–“ফ্যামিলি ট্যুর দিবো সবাই মিলে।এখন যদি এরাও চলে আসে,তাহলে বিয়ের তারিখ নিয়ে বড়দের মাঝে নিশ্চয় বাকবিকন্ডটা দেখা দিবে।আদিব ভাই আছে সেখানে।উনার সাথে এই দুইজনের মতামত থাকলে বিয়েটা আগাবে।আমি আর দেরী করতে চাচ্ছি না,জান।আসো তো।”
আদ্রিনের জবাবে গালখানা কেমন জ্বললো।বাকি সবাই হাসছে। রূপম তার মাথায় হাত বুলিয়ে অর্পার হাত টেনে ভেতরের দিকে যাচ্ছে।অর্পা চিল্লিয়ে বলে,
–“আদ্রিন দাদা,আপনি সেরা।”

–“এই মেয়ে,আসো।হাবুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি?”
আদ্রিনের উক্তিতে তৃপ্তির লাজ আরো বৃদ্ধি পায়।ধীরে গাড়িতে উঠে।এই মানুষটা জীবনেও শুধরানোর নয়।অন্যদিকে রিয়ানা হেসে কুটি কুটি।

বাঁকা দৃষ্টিতে তৃপ্তি চায় আদ্রিনের পানে।তার অধর প্রসারিত।তৃপ্তিকে লজ্জায় ফেলে সে হাসছে!ইচ্ছাকৃত এমন মজা নিচ্ছে সে?লোকটা এমন হবে কে জানতো?তৃপ্তির নিজেরও হাসি পায়।কিন্তু,সংবরণ করে নিজেকে।বাম দিকে ফিরে বাহিরের পরিবেশে মনোনিবেশ করে।
কিছু সময় পরেই, বাদলের দেখা মিলে।ঝপঝপ
বৃষ্টির শব্দে পরিবেশ মুখরিত।
–“নতুন মামী,আমাকে ড্রয়িং করাবে না আর?”
সাফার প্রশ্নে তৃপ্তি পিছন ফিরে,
–“হ্যাঁ।একটু সুস্থ হয়ে যায়।এরপর তোমাকে,বাকি স্টুডেন্টদের আবারও নিয়মিত ড্রইং ক্লাস নিবো।”
–“ওকে মামী।”
ছোট্ট সাফা সন্তুষ্ট তৃপ্তির উত্তরে।

গাড়ি থামে রেস্টুরেন্টের সামনে।রিয়ানা নামে প্রিয় এবং সাফা সমেত।তৃপ্তি নামতে নিলে থামায় রিয়ানা,
–“কিছুসময় একা থাকো আমার ভাইয়ের সাথে।আমি বাচ্চাদের সামলে নিবো।”
–“কিন্তু,আমরা কোথায় যাবো?”
তৃপ্তির প্রশ্নে স্টিয়ারিং ঘুরায় আদ্রিন,
–“বড্ড প্রশ্ন করো।বৃষ্টির ফিল নাও তুমি।”

গাড়ি এগোচ্ছে এলোমেলো ঠিকানায়। সাইড মিরোরে তৃপ্তি পরিষ্কার দেখে রিয়ানা বাচ্চা দুজনকে নিয়ে ইতিমধ্যে ভেতরে প্রবেশ করেছে।

কিছুদূর যেতেই আদ্রিন নিজের বাম হাত এগিয়ে দেয় তৃপ্তির নিকট।তৃপ্তি ধরে না।মুখ গোমড়া করে,
–“আপুর সাথে থাকলে কি এমন হতো?প্রিয় আর সাফা অদ্ভুতভাবে চেয়ে ছিলো।বাচ্চাগুলো কি ভাবছে খোদা জানে!”
সিটে গা এলিয়ে দেয় তৃপ্তি।তার গালে হাতের উল্টোপিঠ স্পর্শ করে আদ্রিন,
–“বাচ্চারা কিছু ভাবছে না।ভাবছি আমি।আর মাত্র কয়েকদিন পরেই আমার বউ হবে তুমি।তোমার সাথে দেখা অপূর্ণ স্বপ্নগুলো বাস্তব হবে।ভাবতে পারছো আমি কতো খুশি?”
লাজে ভাষা হারায় তৃপ্তি।জানালায় অযথা আঁকিবুকি করে।কেমন যেনো অস্থিরতা ভর করলো তনুয়।অবাধ্য চুলগুলোকে অযথা বাধ্য করতে দিশেহারা সে। টের পেয়ে আদ্রিন বাম হাতেই তৃপ্তির কোমর চেপে নিজের কাছে আনে।আতঙ্কিত তৃপ্তি আদ্রিনের বুকের দিকটায় খামচে ধরে,
–“আরে,করছেন কি?বৃষ্টি হচ্ছে,এক্সিডেন্ট হতে পারে।”

গাড়ির গতি কমে।রাস্তার কিনারায় থামে।অঝোর বর্ষণে জানালার কাঁচে অনবরত পানির ঝাপটা।ঝাপসা সবটা।সোডিয়াম লাইটের পাওয়ার সুবিধার নয়।তাও,আদ্রিন দেখছে।তার তৃপ্তিকে।হাজারো ভিড়ে এই মেয়েকেই চায় সে। লাজে,শঙ্কায়,খানিকটা চিন্তিত মেয়েটাকে কি আবেদনময়ী লাগছে!গলার দিকটায় দৃষ্টি পড়তেই স্থগিত করে নজর।আঁচলের অবস্থা সুবিধার নয়।ঝুঁকে যায় সে।তৃপ্তিকে মিশে নেয় বুক পিঞ্জিরায়।পরক্ষণে গালে ছুঁয়ে দেয় বেশমাল অধরের স্পর্শ।ফিনফিনে সুরে বলে,
–“এইযে তুমি কিছুদিন পর আমার বউ হবে,
সারাজীবনের সঙ্গী হবে;এইসব ভাবতেই আমার অন্যরকম লাগছে,বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।ইচ্ছে করছে,আজই তোমাকে নিজের করে নিই।এত্ত ভালোবাসাময় কেনো তুমি?তোমাকে দেখলে নিজের ভেতরকার সত্তা বলে উঠে,’দেখ আদ্রিন এই মেয়েটা তোর মনের সর্বনাশী,তোর তৃপ্তিময়ী।’তোমাকে সারাজীবনের জন্যে আপন করে নেওয়ার অধিকার কেবল আমার।এই আহানান শেখ আদ্রিনের।”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here