অতৃপ্তির মাঝে তৃপ্তিময় সে পর্ব -০৫

#অতৃপ্তির_মাঝে_তৃপ্তিময়_সে
#লেখিকা- সালসাবিল সারা
পর্ব -৫
___________
(১৩)
–“তোমাকে ‘মেহেবুবা’ বলার নির্দিষ্ট কারণ নেই, আবার থাকতেও পারে।এতো ভেবোনা।বাসায় যাও।অনেকক্ষণ তাকিয়ে আছো আমার দিকে।আমার জরুরি তলব আছে।তোমার অনুমতি পেলে আমি কি যেতে পারি?”
আদ্রিনের তির্যক চাহনী সত্যিকারে তৃপ্তির নজরে আটকে।ছেলেটার সকল কথায় কেবল ধাঁধা।কেমন প্যাঁচানো।এই বুঝি সে ভাবলো, সবটা বুঝেছে।কিন্তু আফসোস,পরবর্তী আদ্রিনের কথায় সে নিজের ভাবনা বদলাতে বাধ্য।
তৃপ্তি নামতেই হাত নাড়িয়ে তাকে বিদায় জানিয়ে রিকশাচালককে যেতে নির্দেশ দিল আদ্রিন।তৃপ্তির উত্তরের অপেক্ষা করলো না।
তৃপ্তির মন ব্যথিত।তবে মেয়েটার চেহারা দেখে তা বুঝার জো নেই।তৃপ্তির নিজেরই আমলে আসছে না তার মন খারাপের আসল কারণ।আদ্রিন থেকে সে অন্য কোনো উত্তরের প্রত্যাশায় ছিলো হয়তো!তার বুকের ভেতরকর তোলপাড় স্পষ্ট।তবে,কঠোর মেয়েটা বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করতে করতে সেই তোলপাড় থামিয়ে দিলো।আঁখিতে ভেসে এলো মায়ের মুখশ্রী।পুনরায় স্মরণে এলো কালো অতীত।নিজের আর্তনাদের চিৎকার তার কানে এখনো বাজে।আঁখি বুঁজে মেয়েটা সামলে নিলো নিজেকে।নেত্রযুগলের কার্নিশ রক্তিম।না চেয়েও কেনো আদ্রিনের প্রতি সে ঝুঁকে পড়ে জানা নেই তার।হয়তো,আদ্রিনের প্রতি তার অনুভূতিই এর আসল মোহরা।ফ্ল্যাটের দোরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে তৃপ্তি মাথা নাড়ায় দুদিকে। গালে আলতো হাতে চড় দিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে আওড়াতে থাকে,
–“পাষাণ হৃদয়কে আরো পাষাণ করতে হবে।কিন্তু,
আদ্রিনের করা এমন যত্নে কি তা সম্ভব?”
ভেতর সত্তা কোনো উত্তর দিলো না।পাথর হৃদয়ের নিরুত্তর তৃপ্তি কলিংবেল চাপলো।বারংবার চোখের পলক ফেলে সবটা ভুলার বৃথা চেষ্টায় সে।

সোফায় বসা অরিত্রন তৃপ্তির দৃষ্টি গোচরে এলেই চমকে উঠে সে।বাবা কবে এলো!বাহিরে অন্যমনস্ক না থাকলে,তৃপ্তি ঠিকই নিজের বাবার জুতো দেখেই বাবার উপস্থিতির টের পেতো। প্রিয় তার বাবার উরুর উপরে শায়িত।ঘুমে ঢুলছে মেয়েটা।অরিত্রনের হাতের স্পর্শে মেয়েটার এই গতি।তৃপ্তি স্বয়ং তার বাবার হাতের ছোঁয়ার পাগল ছিলো।তার বাবার হাতে যেনো মাথা ব্যথা সরানোর ঔষধ আছে।কি সুন্দর ছিল পূর্বের দিনগুলো!যে সময়,সে এবং তার মা দুজনেই অরিত্রনের ছোঁয়ার আশায় রাতে বসে অপেক্ষা করতো।শান্তির ঘুমের জন্যে সেই মানুষটার স্পর্শ ছিলো যথার্থ।
বাবাকে এড়িয়ে সম্মুখে যেতেই চামেলী পথ আটকে দাঁড়ালো তার,
–“পুবালীর বিয়ের জন্যে বেরুতে হবে কাল।তোর বাবা কাপড় নিয়ে এসেছে।পিসি পাঠিয়েছে বললো।”
তৃপ্তি টেবিলে বিদ্যমান প্যাকেটের পানে দৃষ্টি জ্ঞাপন করলো।এটাই সেই দাওয়াত, যার দরুণ দুই ভাইবোনের তুমুল সংঘর্ষ হয়েছিল সেদিন।অতঃপর বিয়ের তারিখ ফাইনাল হলো তবে।সোফায় বসে তার ভাই শকুন দৃষ্টিতে চেয়ে তার অবয়বে।তৃপ্তির উত্তরের আশায়।মিনিট খানেক অতিবাহিত হলে রূপম খেঁকিয়ে উঠে,
–“ও যাবে না,লাভি।সেদিন আমাকে মারলো দেখলে না?”

–“পিসি যেহুতু কাপড় পাঠিয়েছে,তাহেল আমি যাবো।তবে দুইদিনের বেশি থাকতে পারবো না।”
তৃপ্তির বরফ কণ্ঠ।অত্যন্ত শীতল এই স্বর।

–“সত্যি তুই যাবি, তৃপ?”
রূপম অত্যধিক খুশি হলে এই নামেই ডাকে বোনকে।
–“যাবো বললাম।এখন কি আবার মত পরিবর্তন করবো?”
–“এই না না।”
রূপম এসে আলিঙ্গন করলো বোনকে।বাবার প্রশান্ত অধর দেখে বোনের প্রতি কোনো রাগ অবশিষ্ট নেই তার মনে।

তৃপ্তি নিজেকে ছাড়িয়ে নিজ কক্ষে ফিরলো।তার ক্লান্ত তনুতে শক্তি নেই যেনো।মস্তিষ্কের একপাশ আদ্রিনের দখলে তো অন্যপাশ পারিবারিক নানান ঝামেলা,
অতীত এইসবের দখলে।বিরক্ত হয় তৃপ্তি।শীতের মাঝেও ঠান্ডা পানিতে গোসলের মতো সিদ্ধান্ত নিতে এক সেকেন্ড সময় ব্যয় করলো না মেয়েটা। এই হিম আবহাওয়ায় বরফ গলা পানির লাহান ঠান্ডা পানি তার মস্তিষ্কের সকল দুর্ভাবনা কা’টাতে যেনো ব্যাপক পটু।
গোসল শেষে মেয়েটা বেরুলো থরথর শরীরে।সাত পাঁচ না ভেবে আলেয়ার নতুন কাপড়ের লাইভ সেশন নিজের টাইমলাইনে শেয়ার করার পাশাপাশি সকল সোসিয়াল মিডিয়ায় শেয়ার করলো।ইতিমধ্যে তৃপ্তির নিকট অর্ডারের জন্যে মেসেজ আসলে মেয়েটা ব্যস্ত হলো সেই কাজে।তাদের কালেকশনের ব্যাপক চর্চা রয়েছে।অল্প কিছু কাজ মেয়েটা হ্যান্ডেল করে বাকি কাজ মডারেটরদের সপে কম্বলের অভ্যন্তরে হস্তান্তর করলো নিজ হিম তনু।মাথায় হাজারো চিন্তার সমাবেশে বুঁজে এলো মেয়েটার আঁখি।পরপর তার আঁখিতে ভাসলো,
আদ্রিনের তাকে মেহবুবা বলার ঘটনা এবং তার মায়ের মৃত্যুদিনের নিজস্ব সেই আর্তনাদ।

(১৪)
হেডলাইটের সিগন্যাল বুঝে নিজ গাড়ির সন্ধান পেলো আদ্রিন।রুদ্র তাহলে তার কথার খেলাপ করলো?রিক্সা থামলো আদ্রিনের কথায়।ভাড়া মিটিয়ে থমথমে মুখভঙ্গিতে সে এগিয়ে গেলো গাড়ির দিকে।বিচলিত রুদ্র।সে ভয়ে।নির্দেশনা না মানার কারণে নিশ্চিত আদ্রিন তাকে বেজায় ধমকাবে।তবে সে ছিলো নিরুপায়।স্বয়ং ইনায়ার আদেশে রুদ্র তার নিয়ম ভেঙেছে।আদ্রিন রুদ্রের পাশের সিটে নিজের অবস্থান ঠিক করলো।
–“বাড়ি যেতে বলেছিলাম।”
আদ্রিন স্বাভাবিক ভাবেই মনোভাব ব্যক্ত করলো।
–“ইনায়া আন্টি বলেছে আপনাকে পিক করতে।আন্টি আমাকে আপনাদের বাড়িতে কাজ দিয়েছেন,তাই উনার ঋণের কাছে আমি হেরেছি। সরি স্যার।”
রুদ্র অনুতপ্ত।
–“তুমি আমার আন্ডারে কাজ করো।”
শক্ত হচ্ছে আদ্রিনের কণ্ঠস্বর।
–“উনি বললেন,উনার শরীর খারাপ।তাই আমি অমান্য করিনি উনাকে।আমি আপনাকে ফোন দিয়ে জানাবো ভেবেছিলাম।কিন্তু,আন্টি আমাকে আগেই মানা করেছিলেন আপনাকে সোজা যেনো পিক করি,বিনা ফোনেই।তাই গাড়ি ঘুরিয়ে এই রাস্তায় আপনার অপেক্ষায় ছিলাম।”
–“আমাকে ইন্ডিয়া নিতে পারছে না তাই উনার শরীর খারাপ।এগুলো জাস্ট নাটক।”
আদ্রিনের কণ্ঠে বিরক্ত।
–“আন্টির সাথে ইন্ডিয়া গেলে কি সমস্যা?”
রুদ্রের পাল্টা প্রশ্নে আদ্রিন নিজ কপালে বৃদ্ধা আঙ্গুল ঘষলো,
–“যে মেয়ের জন্যে গাড়ি নষ্টের নাটক সাজিয়েছি,সেই মেয়েটাই ইন্ডিয়া না হওয়ার প্রধান সমস্যা।”

–“উনাকে পছন্দ করেন?”
রুদ্র আবারও প্রশ্ন করলো।
–“অনেক।”
কোট খুলে গা এলিয়ে বসলো আদ্রিন।
–“তাই উনাকে রিক্সায় দেখে উনার পিছু নিয়েছিলেন!কিন্তু,সেই গোডাউনের সামনে উনাকে দেখে,সুগন্ধা এলাকায় কেনো গিয়েছিলেন? ঐ এলাকায় যাবে উনি এটা কিভাবে জানলেন আপনি?”
রুদ্রের যেনো প্রশ্নের শেষ নেই।
–“ম্যাজিক।”
এক ভ্রু উঁচু করে উত্তর দিলো আদ্রিন।পরক্ষণে সে তাকালো জানালার বাহিরে।তন্ময় হতে তৃপ্তির সকল কর্মসূচির সময়কাল এবং স্থান প্রথম দিনেই জোগাড় করেছিলো আদ্রিন।তাইতো সে জানতো,গোডাউন হতে তৃপ্তির পরবর্তী অবস্থান।নিজেকে এইভাবে রহস্যময় রাখা আদ্রিনের প্রিয় কাজ।নিজের কাজে রুদ্রের লাহান মানুষের অবাক চেহারা দেখতে আদ্রিনের ভালোলাগা নি’হিত।

বাড়িতে প্রবেশ করতেই মেঝ চাচী এবং ছোট চাচী আদ্রিনের পথ আটকালো।রুদ্র আদ্রিনের কোট হাতে রুমে ছুটেছে।
সারাদিনের মিটিং,প্রজেক্টের কাজে সাইটে যাওয়া,আশিক জৈনের সমেত ডিলের ব্যাপারে দেখা করা সব মিলিয়ে ক্লান্ত আদ্রিন।তার উপর চাচীদের আগমনে সে বিরক্ত,
–“কিছু বলবে?”

–“তোমার মা অসুস্থ।মায়ের কথায় কেনো পাত্তা দিচ্ছো না?”
মেঝ চাচী মিনার কণ্ঠে অনুনয়।
–“আম্মি জানে,তার কথাটা আমার পছন্দ নয়।তাহলে আমি কিভাবে সেই কাজ করি?মা এতো অসুস্থ হলে,বিকালে শপিংয়ে গেলো কিভাবে? আম্মি কি জানেনা,তার ছেলে তার মতোই শকুন দৃষ্টির অধিকারী?”
আদ্রিন পকেটে হাত গুঁজলো।আদ্রিনের জন্য তার মায়ের ঠিক করা ডিটেকটিভ এখন তার আন্ডারেই কাজে নিয়োজিত।যার পিঁপড়ে ভাগ জানেনা ইনায়া।আদ্রিন তার মাকে মরীচিকায় রেখেছে।
আদ্রিনের কথায় দুই চাচী দমলো।ছেলেটা সব জেনে যায় কিভাবে, তা আয়ত্বে এলো না তাদের।
–“একবার দেখা করে আসো?উনি সত্যি অসুস্থ।”
ছোট চাচী আদিবা বললো।
–“এমন অনেক অসুস্থ আমি ছিলাম,যখন আম্মি আমার পাশে ছিল না।অসুখ হবে সেরে যাবে।নাহলে ডাক্তার ডাকো।আমি রেস্ট নিবো।”
বক্তব্য শেষে পা এগুতে নিলেও থামে তার পদচলন।
–“আদিবা,মিনা তোমরা কাকে বুঝাচ্ছো?এই ছেলে কখনো ফিলিংস বুঝবে আমাদের? মা না থাকলেও তার কিছু যায় আসে না। ”
ইনায়া শুকনো মুখে নেমে আসে দ্বিতীয় ফ্লোর হতে।
–“আমি যেদিন মৃত্যু সজ্জায় ছিলাম,সেদিন আমার জন্যে তোমার ফিলিংস এসেছিল আম্মি।আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না তোমার।নিজের হেল্থের চিন্তা করো।”
আদ্রিন আর দাঁড়ায় না।শেষ কথার পরপর সে পুনরায় আওড়ালো,
–“দশ মিনিটে আমার রুমে খাবার চাই।”
আদ্রিনের কণ্ঠস্বর রান্নাঘরে পৌঁছেছে।সকল কর্মচারী তার খাবার প্লেটে সাজাতে আরম্ভ করলো দ্রুত গতিতে।

–“ভাবী এখন কি করবেন?”
মিনা আহত সুরে প্রশ্ন করলো।
–“আমার কাজের জন্যেই ওর সাথে এতো দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।কিন্তু,আমিও ওর মা।কিছুতেই আমি পান্নার মেয়েকে আমার ছেলের বউ করবো না।এর জন্যে যা করতে হবে তাই করবো।”
শক্তমুখে কথাটুকু বললেও,আঁখি ভরে আসে ইনায়ার।

রুদ্র সব শুনে আড়ালেই।এই পরিবারকে তার ব্যাপক ভয় হয়।রা’জ’নী’তিতে এই পরিবার সবচেয়ে হিং’স্র সাথে সফল।পাশে বাঁক ফিরতেই জানালার কাঁচ ভেদ করে তার দৃষ্টি পড়লো বাগানের দিকটায়।আদ্রিনের ছোট চাচা “মোস্তাক শেখ” র’ক্ত’মাখা ছু’রি পরিষ্কার করছে।এটা তার অতিপ্রিয় ছু’রি,রুদ্র এতো বছরে এটা বেশ বুঝেছে।নিশ্চয়,প্রিয় কোনো শ’ত্রুকে খু’ন করে তৃপ্ত সে।
আদ্রিন এবং রাফি রা’জ’নীতিতে যোগ না দেওয়াতে সে সন্তুষ্ট।সাথে আদ্রিনের আন্ডারে কাজ করে স্বস্থি পায়।নাহলে ঠিকই,তার কাজ থাকতো,এমন রা’জনৈতিক।

(১৫)
খাবার শেষে আদ্রিন বিশেষ কিছু কাজ খতম করে।ঘুমানোর পূর্বে সে মোবাইল হাতড়ে মেসেজ বক্স ওপেন করলো।উদ্দেশ্য তার মেহেবুবার খোঁজ নেওয়া।তবে তার ধারণা বিফল।মেয়েটা অফলাইনে।শেষ মেসেজ তৃপ্তির ছিলো,
–“রাতে খেয়েছেন?”
আদ্রিন আলতো হাসলো।পড়নে শার্ট খুলে বিছানায় উবুত হয়ে পরিবর্তন করলো নিজের অবস্থান।জবাবে লিখলো,
–“খেয়েছি অনেক আগেই।তুমি?”
মেয়েটা হতে কোনো জবাব এলো না।আদ্রিন তার টাইমলাইনে ঢুকে বেশ কিছু ছবি,পোস্ট ইত্যাদি চেক করছে।তার আঁখির পাতা ভারী হয়।বড্ড ক্লান্ত সেই দুচোখ।পরক্ষণে সে মেসেজ পাঠালো,
–“ঘুম তুমি?আমি ঘুমায়,মেহেবুবা।”
ফের সে মেসেজে লিখলো,
–“আবারও মেহেবুবা বললাম।তুমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে কি?আমার মতে, তোমার সাথে মেহেবুবা নামটা মানানসই।এই নামে ডাকবো তোমাকে মাঝে মাঝে।এই নাম শোনার অভ্যাস করে নাও।”
নিজের পাঠানো মেসেজ দুতিনবার পড়ে আপনমনে প্রশান্তি মিললো আদ্রিনের।সারাদিনের ক্লান্তিতে,এই তৃপ্তি নামের মেহেবুবাতেই যেনো আদ্রিন বুদ হয়ে রয়।
.
শুক্রবারের দরুণ অফিসের চাপ নেই।এলার্ম সেট করেনি সে আজ,তাই উঠলো দেরীতে।চারিদিকে খুতবা পাঠের শ্রুতিমধুর শব্দ।ঘড়িতে দৃষ্টি বুলায় আদ্রিন।বারোটা বেজে চল্লিশ মিনিট।বিছানা হতে নামতে তার অবয়ব ভেসে উঠলো বিশাল আয়নায়।নিজের পেটানো শরীর পর্যবেক্ষণ করে ডানে বামে কিছুক্ষণ ব্যায়াম করলো মানবটা।বালিশের পাশ হতে মোবাইল হাতড়ে নিয়ে তৃপ্তির মেসেজ চেক করতেই দৃষ্টি তার চড়কগাছ।
–“আপনি না পাগল।যেটা মন চায় ডাকবেন।আমি কাজিনের বিয়েতে যাচ্ছি।দুদিন পর ফিরবো।”
পরপর আদ্রিনের নজর গেলো,তৃপ্তির প্রোফাইল ছবির উপর গোলাকার নীল বৃত্ত।সেখানে আলতো হাতে চাপ দিতেই ভেসে উঠলো তৃপ্তির স্টোরি।কালো রঙের আনারকলি,এলোমেলো চুলের বেণী,বড় দুল, মেকাপে আবৃত মুখেও সেই মনোরম চীন দেশীয় মেয়েদের লাহান মুখশ্রীর আস্তরণ ভেসে উঠলো তৃপ্তির।আদ্রিনের উদোম তনুর খাঁজে খাঁজে বিন্দু বিন্দু ঘামের দেখা মিললো।আশ্চর্য!এখন তো শীত।তাও এই মেয়ের এলাহী রূপ দেখে ছেলেটা নাস্তানাবুদ।সেই ছবির রিপ্লাইয়ে সে লিখলো,
–“সুন্দর লাগছে।সবাধানে থেকো।অন্যর নজর থেকে বাঁচা তোমার প্রয়োজন।”
পরবর্তী কথা সে মুখেই আওড়ালো,
–“নাহলে,সেই অন্যের নজর আমি উঠিয়ে ফেলবো।আমার মেহেবুবার দিকে তাকানোর পরিণাম হবে ভয়া’বহ।”
হিং’স্রতা ফুটে উঠলো আদ্রিনের মনোরম মুখমণ্ডলে।
জুমাআহ’র দেরী হওয়ায় তাগিদে মোবাইল ছুঁড়ে বিছানায় রাখলো।পাঞ্জাবি হাতড়িয়ে নিতে গিয়ে সে খেয়াল করলো তার হাত মুষ্ঠিবদ্ধ।তার ব্যাপক রাগ উঠলেই এমন হয়।তার মানে এখন সে রেগে।তীব্র রেগে।আর কারণটা কেবল সেই জানে।মনে মনে সে দোয়া করলো,তৃপ্তির উপর যেনো কারো নজর না পড়ে।পরিবারের মতো হিং’স্রতা প্রকাশ না করলেও,একই রক্তের সে।তার র’ক্তে হিং’স্রতার ছাপ আরো করুণ।
—–
বিকাল বেলাও তৃপ্তির কোনো খবর পেলো না।ফোন দিয়েও লাভ হয়নি।নেটওয়ার্ক নেই জানাচ্ছে তৃপ্তির নাম্বারে ডায়াল করলেই।আদ্রিন অফিসের কিছু কাজ সারছে,তবে তার মস্তিষ্ক তৃপ্তির মাঝেই সীমাবদ্ধ।কোন মুল্লুকে গিয়েছে তৃপ্তি এটা নিয়েই তার যতো ঝামেলা।রাত পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে সে সিদ্ধান্ত নিবে তৃপ্তির ব্যাপারে।

–“দাদুভাই?”
আদ্রিনের দাদী দরজায় কড়া নেড়ে ভেতরে এলো।আদ্রিন নিজে গিয়েই এগিয়ে আনলো তার দাদীকে।
–“বসো।নিচে ডাকলেই পারতে।”
আদ্রিন হাসলো।
–“তুমি ইন্ডিয়া যাচ্ছো না কেনো?”
–“কারণে।”
আদ্রিনের দৃষ্টি ল্যাপটপের গভীরে।
–“মেয়েটাকে দেখি?”
আদ্রিন নিজ মোবাইলে তৃপ্তির ছবি বের করলো। দাদীর হাতে দিতেই উনি অচিরেই বললেন,
–“মা শাহ্ আল্লাহ্।”
–“হুম,সুন্দর আমার মেহেবুবা।”
–“তোমার মা তাহলে মানছে না কেনো?”
দাদীর চিন্তিত প্রশ্ন।
–“আম্মি মেনে না নিলেও কি?আমার ফার্ম হাউজ আছে।বাবার লিখে দেওয়া।সেখানেই চলে যাবো।তবে,চিন্তার বিষয় হলো আমার মেহেবুবাকে নিয়ে।তাকে পটানো সহজ না।”
–“কেনো?আমার নাতি কম কিসে?”
–“কম বেশীর জন্যে না।ওর পরিবার নিয়ে ঝামেলা।চিন্তায় থাকে সারাক্ষণ।”
আদ্রিন কাজে মশগুল তবে তার মস্তিষ্ক দাদীতে আবদ্ধ।
–“কি হলো ওর পরিবারের?ওর বাবা-মা নেই?
দাদীও চিন্তিত হচ্ছে তৃপ্তির জন্যে।
–“বাবা আছে।মা নেই।ওর বাবা হিন্দু,মা মুসলিম। তবে তার বাবা বিয়ের সময় এবং বহু বছর মুসলিম ছিলেন। গোপনীয় কারণে আবারো হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন উনি।”
–“কি?এইটা কেমনে সম্ভব?মেয়ের ধর্ম কি?”
–“মুসলিম।”
আদ্রিন বেশ শান্ত।
–“তাও,মেয়ের গায়ের রক্ত তো দুই ধর্মের মিশ্রণ।এই জন্যেই তোমার মা মানে না এই মেয়েকে।আমারও মনে হয়..”
দাদীর কথায় শব্দ করে ল্যাপটপ বন্ধ করে আদ্রিন।পরক্ষণে সে চিল্লিয়ে বলে,
–“ওর বাবা হিন্দু,মা মুসলিম।এটা কি ওর দোষ?মেয়েটাকে আমার চাই।আমি ওকে আমার বিয়ের জন্যে সিলেক্ট করেছিলাম,প্রেমের জন্যে নয়।তাই দুনিয়া উল্টে গেলেও সে আমার হবে।”

আদ্রিন উঠে দাঁড়ায়।প্রবীণ দাদী নিজের ভুল বুঝে।আসলেই তো মেয়েটার দোষ কি তাতে?
–“আমি বুঝেছি দাদুভাই।প্রথমে ভুল..”
আদ্রিন হাঁটু গেড়ে বসে দাদীর সম্মুখে।দাদীর গালে এক হাত ছুঁয়ে নরম কণ্ঠে শুধালো,
–“তৃপ্তির রক্তের মিশ্রণে আমার মন গলেনি দাদী।ওকে দেখেই আমার মন গলেছে।ওর শরীরে যেমন রক্ত থাকুক না কেনো,ও মানুষ তো।আমার তৃপ্তি সে।আমার মেহেবুবা।”

চলবে…..
কপি করা বারণ।সকলের সুন্দর মতামতের আশায়।গল্পটা পুরোই আমার মনের কল্পনার সংমিশ্রনে লিখা। কারো ধর্ম,জাতিকে কষ্ট দেওয়ার কথা আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবিনা।গল্পকে কেবল গল্প হিসেবে নিবেন,অন্য কিছুর সাথে মেলাবেন না।সকল ধর্মের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা রয়েছে।
ছবি কালেকশন: ইনস্টাগ্রাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here