#অদ্ভুত_আসক্তি
#পর্ব_৭ (ভালোবাসাময় রাজ্যে বীনির প্রবেশ)
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ
ভীষণ চিন্তিত অবস্থায় তৃষ্ণা ব্যালকনিতে ডিভানে গা এলিয়ে বসে আছে। মন ও মস্তিষ্কের সবটা জুড়ে রয়েছে তার নয়নতারা। ড্রিংক করেছে প্রতিবারের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত।
তবুও এই নেশা কাবু করতে পারেনি তাকে। মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বুলি আওড়াচ্ছে,“এই এতো বছরের জীবনে প্রথম কোনো নারীকে অন্য চোখে দেখলাম। আআমার কাছে তো নারী মানে ছিলো শরীরের ক্ষুধা। কিন্তু আজ! কারো চোখের মায়ায় আটকে গেলাম। কারো মিষ্টি এক হাসি পাগল করে দিলো আমাকে। নয়নতারা! আপনি কী করলেন এটা? আপনার শরীর নয়, আপনার মন পাওয়ার যে বড্ড তৃষ্ণা জেগেছে আমার। আপনার ভয়, জড়তা, চিন্তা সবটাকেই কেনো এতো মনে ধরলো? আপনাকে একরাতের শয্যাসঙ্গী নয়, সহস্র জনম এই দুনিয়ার বুকে চলতে গিয়ে পাশে রাখতে চাই। আচ্ছা, প্রথম দেখায় ভালোবাসা হয়? হয়না তো! তবে এটাকে কি বলবো? মনের সন্ধি? জীবনে যা চেয়েছি, সবটাই চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস রেখেছি, পাবো। আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী নই। তৈরি করে নেওয়াতে বিশ্বাসী। নিজের যা লাগবে, সব নিজের করে নিয়েছি। কিন্তু আজ প্রথম, আপনাকে নিয়ে ভয় হচ্ছে। আপনাকে আমার লাগবে নয়নতারা। আমার একাকী জীবনের একমাত্র সঙ্গী হিসেবে, লাগবেই। পাবো তো?”
সেখানে হুট করেই আগমন ঘটলো আশিকের।
তৃষ্ণাকে উদ্দেশ্য করে বললো,“স্যার! হাতে নতুন কিছু মাইয়া আছে। পাঠামু?”
তৃষ্ণা সোজা বাক্যে “না” করে দিলো।
আশিক পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,“মাইয়া গুলো সবডি সুন্দর আছে। বড় ঘরের বেশিরভাগ গুলাই। আপনের লেইগা আইসে।”
তৃষ্ণা দাঁড়িয়ে পড়লো। ক্রুর কণ্ঠে বললো, “তুমি বেশি বলা শুরু করেছো আশিক। যেটুকু বলা হবে, সেটুকু করবে। নাও লিভ!”
শেষ কথাটিতে তেজ ছিলো অনেক বেশি। আশিক সেখান থেকে প্রস্থান করলো।
তৃষ্ণা আকাশের পানে তাকিয়ে বললো,“হয়তো আমার জীবনের প্রথম নারীর জায়গা আপনাকে দিতে পারিনি। তবে শেষটা আপনিই।”
_____________________
“নিশা! এতো রাতে চেচামেচি কিসের দেখ তো!”
আরহানের মায়ের এরূপ কথার ভিত্তিতে নিশা নিচে চলে এলো। আসতেই নিশার কপাল কুঁচকে এলো। রূপ! মনে হয় পৃথিবীর একমাত্র মেয়ে এটাই, যাকে দেখলে সবার কপাল কুচকে আসে। অবশ্য বিরক্তিতেই। নিশা স্তব্ধ দাঁড়িয়ে, রূপের এখানে আসার কারণ খুঁজতে লাগলো। ও তো লন্ডনে ছিলো। এখানে হঠাৎ?
নিশাকে দেখে রূপ মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলো,“কেমন আছো সুইটহার্ট?”
নিশা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো,“এইতো ভালো আছি। তুমি কেমন আছো আপু? আর এখানে?”
“আ’ম ফাইন। আর এসেছি দুদিন আগেই। আরহানের সাথে দেখা করেই ফ্রেন্ডের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। বোঝোই তো! এতবছর বাদে এসেছি।”
নিশা “হুঁ” বলতেই রূপ পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,“আচ্ছা! আরহান কোথায়? রুমে?”
নিশা মৃদু স্বরে “না” বললো।
“তবে কোথায়? রাত অনেক হয়ে আছে। এখন বলো না অফিসে, আমি জানি এই টাইমে ও অফিসে থাকে না।”
আরহানের ঘটনা ভাবতেই নিশার ঠোঁটের কোন ঘেঁষে হাসি ছড়িয়ে পড়লো।
বললো,“ভাইয়া আমাদের ফার্মহাউজে আছে। জানো আপু কি হয়েছে আজ?”
“কি?”
“ভাইয়া বিয়ে করে নিয়েছে।”
রূপ চিৎকার দিয়ে উঠলো,“হোয়াট?”
নিশা, রূপের এই চিল্লানোর মানে তৎক্ষণাৎ বুঝে গেলো। যাই হোক, কিছু করার নেই এখন আর।
নিশা, রূপকে গেস্ট রুমে নিয়ে গিয়ে বললো,“ফ্রেশ হয়ে নাও। মাকে ডেকে আনছি।”
নিশা চলে গেলো। রূপ বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো। অবাধ্য অশ্রুকণা লুকোতে অক্ষম সে। কি করবে এখন সে? মেয়ে হিসেবে যেমনই হোক, তার ভালোবাসাটা সত্যি ছিলো। অনেকক্ষণ বাদে ফোনে কল এলো রূপের। নামটা দেখে সাথে সাথে ফোন হাতে নিলো। এই মুহূর্তে একেই প্রয়োজন রূপের। মাহী! ছোট বোন হলেও, বেস্ট ফ্রেন্ড ওর। সবকিছুর সলিউশন থাকে এই মেয়েটির কাছে। হয়তো এটার সলিউশন ও আছে।
কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মাহীর আওয়াজ এলো,“দিভাই,কি খবর?”
রূপ কেঁদে দিলো। কান্নার সাউন্ড ওপাশে যেতেই মাহী অস্থির হয়ে পড়লো।
অনবরত ভাবে জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে,“কি হয়েছে তোর? দিভাই! বল কি হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে? আরহান আবারও বাজে ব্যবহার করেছে? বোন আমার, বল না কি হয়েছে?”
রূপ কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো,“আমার আরহানকে হারিয়ে ফেলেছি আমি। কেড়ে নিলো আমার আরহানকে।”
মাহী থমকে গেলো। মিনিট খানেক পর নীরবতার অবসান ঘটিয়ে বললো,“ক্লিয়ারলি বল!”
রূপ আবারও কেঁদে দিলো।
কাঁদতে কাঁদতেই বললো,“আরহান বিয়ে করে নিয়েছে। ও অন্য কারো হয়ে গিয়েছে।”
মাহী স্তব্ধ, বিমূঢ়। কিছুক্ষণ পর নিজেকে ধাতস্থ করে শান্ত কন্ঠে বললো,“আরহানকে অন্য কারোর হতে দেওয়ার মতো দয়ালু আমি নই।”
কল কেটে দিলো মাহী। ওপাশে আবারও কাউকে কল দিয়ে বললো,“বিডি ব্যাক করবো।”
____________________
ঘড়িতে এখন দশটা বেজে মিনিটের কাটা পঁচিশের ঘরে ছুঁয়েছে। আমি কাবার্ড এর সামনে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি। তখনকার ভাবনায় আসা ঐ কথাটি অনেক বাজে ভাবে পোড়াচ্ছে আমাকে। লোকটি কি আমার উপর জোর খাটাবে? আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নেবে? এতসব ভাবনা জেঁকে বসেছে মাথায়। বিয়ে যেভাবেই হোক, হয়ে গিয়েছে। আমাকে মেনে নিতেই হবে। হাজার হোক, বৈধ অধিকার আছে উনার আমার উপর। কিন্তু, আমি এসবে প্রস্তুত নই। আমার ভাবনা কাটলো আরহানের ওয়াশরুম থেকে বেরোনোর শব্দে। পুরো শরীর কেঁপে উঠলো আমার। কী হবে এখন?
আরহান আমার সমস্ত ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করে, বেডের একপাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,“আমি জানি তুমি এসবের জন্য প্রস্তুত নও, জোর করবোনা কখনোই। আর ভয় পেয়োনা। তোমাকে শুধু একনজর দেখার জন্যই রাতে তোমার কাছে যেতাম। খুব বেশি ইচ্ছে হলে, কপালে চুমু খেতাম। এটুকুই।”
আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি। ভাবছি, সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ি।
ভাবনা মতো তাই করতে যাবো, তখনই আরহানের আওয়াজ শুনতে পেলাম,“বেড যথেষ্ট বড় আছে। কারো এখানে শুতে ইচ্ছে না হলে, বলতে পারে। আমি গিয়ে সোফায় শুবো। যদিও আমি সোফায় ঘুমোতে পারি না।”
অগত্যা এখানেই শুতে হলো আমায়। কেনো যেনো চাইলাম না, আমার জন্য কারো ঘুম নষ্ট হোক।
চোখে একদমই ঘুম নেই। সম্পূর্ণ অপরিচিত এক জায়গায়, অপরিচিত কারো সাথে শুয়ে, কি করে ঘুমোবো? চোখ দুটো বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম,“নিয়তি কি অদ্ভুত এক জিনিস। মুহূর্তেই পুরো দুনিয়া এফোঁড় ওফোঁড় করে দিতে পারে। এইযে! আমার দুনিয়া পাল্টে গেলো। দুদিন আগেও, এই সময়টা আমি ব্যালকনিতে দাড়িয়ে অশ্রুপাত করতাম বা ছাদে চন্দ্রবিলাস। আচ্ছা বাবা, ছোট মা, আপু ঠিক আছে তো? এই লোকটিকে অতোটা খারাপ লাগছে না। খারাপ হলে, এতোক্ষণে অনেক কিছুই করে ফেলতে পারতো। উফ! মাথা কাজ করছে না আমার।
গভীর রাতে ঘুমন্ত আমি উষ্ণতা পেলাম। একটা চেনা স্মেল পেলাম। এই স্মেলটা কিভাবে চেনা? মনে পড়ছে না। তবে খুব পছন্দের। আরো গুটিয়ে গেলাম সেদিকে। স্মেলটা অনুসরণ করে ঘ্রানেন্দ্রিয় সেদিকে নিলাম। শক্ত ও লোমশ কিছুতে ঠেকে গেলো। ওভাবেই রইলাম। দুই হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে নিলাম। সাথে সাথে অনুভূত হলো, কোনো কিছুর দৃর বন্ধনে আবদ্ধ হলাম আমি। কোথাও থেকে ধুক বুক ধুক বুক সাউন্ড ভেসে আসছে আমার কানে। কোমরে ঠান্ডা কিছু একটার স্পর্শ পেলাম। কিছু স্পর্শ বোধহয় ভীষণ ভালোবাসাময় হয়ে থাকে।
_______________
ব্যালকনিতে রাখা দোলনার উপর বসে গুনগুনিয়ে গান গেয়ে যাচ্ছে রুশী। চোখ দুটো বন্ধ। ভাবনায়, তার ভাবনার রাজার আগমন হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। তাকে নিয়ে ভেবে চলেছে। তার কেয়ারিংস! খুব বেশিই পছন্দ রুশীর।
এই “তার” কথাটি, অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে। অয়নকে নিয়ে ভাবতে ভীষণ ভালো লাগে রুশীর। গতকাল থেকে একটা প্রশ্ন রুশীর এই ছোট্ট মাথাটিতে প্রেশার ক্রিয়েট করছে।
আপন মনেই বার বার প্রশ্ন করে যাচ্ছে,“এই প্রশান্তিময় অনুভূতির নাম কি ভালোবাসা?”
“ছোট মনি! তোমারে বড় স্যার ডাকতাছে।”
মাসুরা খালার আওয়াজে রুশী চোখ মেললো। অয়নকে নিয়ে ভাবতে গেলে, রুশীর ঠোঁটের কোণে হাসি সর্বদা থাকেই।
সেই হাসি মাখা ঠোঁটে মাসুরা খালার উদ্দেশ্য বললো,“আচ্ছা, আসছি।”
মাসুরা খালা চলে গেলো। রুশী কিছু সময় বাদে উঠে দাঁড়ালো। বাবার ঘরের উদ্দেশ্য পা বাড়ালো।
দরজার সামনে গিয়ে নক করে বললো,“বাবা, আসতে পারি?”
রুশীর বাবা রুমে বসে বই পড়ছিলেন। ভীষণ সখ উনার বই পড়ার। কিশোর কাল থেকেই এই অভ্যেসটা তৈরি হয়েছিলো। আর পরিবর্তন করতে পারেননি, কিংবা চাননি পরিবর্তন করতে।
উনি বইয়ের পাতা থেকে মুখ তুলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,“আয় মা। বস এখানে।”
রুশী এগিয়ে গিয়ে তার বাবার সামনে বরাবর খাটে বসে পড়লো। রুশীর বসতেই ওর বাবা বললো,“একটা কথা বলার ছিলো তোকে মা।”
রুশী মৃদু হেসে বললো,“তা বলো না!”
রুশীর বাবা, রুশীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, “কালকে আমার বন্ধু আসবে। পরিবার সহ। তাই ভার্সিটিতে যাওয়া লাগবে না তোর।”
“ওহ্ আচ্ছা! এই কথা! তো বেশ। যাবো না।”
রুশীর বাবা আবারও হাসলো খানিকটা। রুশীকে উদ্দেশ্য করে বললো,“অনেক রাত হয়েছে, ঘুমিয়ে পড়। যা!”
রুশীও তার বাবাকে ঘুমোতে বলে চলে গেলো। কে জানে? হয়তো আরো এক ভাগ্য কাল পরিবর্তন হতে যাচ্ছে।
________________________
সকালে পিটপিট করে চক্ষুদ্বয় হালকা খুললাম। পুরোপুরি না, আবছা অন্ধকার দেখছি। একটু বাদেই বুঝতে পারলাম, আমি বালিশে শুয়ে নেই। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখবো যে, সেই অবস্থায় নেই আমি। কোনো কিছুর শক্ত বন্ধনের আবদ্ধ আমি। কর্ণকুহরে, মিষ্টি এক শব্দ ঢেউ খেলছে। নাসিকা পথে সেই স্মেলটা পাচ্ছি। মিনিট খানেক যেতেই বুঝতে পারলাম আমি কোথায়! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি কারো লোমশ বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছি। শরীরের অধিকাংশ আরহানের উপর। শাড়ি অগোছালো হয়ে আছে। দ্রুত উঠে পড়লাম। আমার উঠার ধরনে আরহানও জাগনা পেয়ে গেলো।
আমি তেজী কন্ঠে বললাম,“আপনি! আপনি বিশ্বাসঘাতক। আপনি বলেছিলেন, আমার সুযোগ নেবেন না। আপনাকে বিশ্বাস করেছিলাম আমি। কিন্তু! কিন্তু আপনি!”
আরহানের কি যেনো হলো, আমার দিকে অন্যরকম একটা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। আমার দিকে এভাবে তাকাতেই আমি খেয়াল করলাম, আমার শাড়ি ঠিক নেই।
ঠিক করে উনার দিকে আঙুল তুলে কিছু বলতে যাবো, উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,“যা বলছো, ভালো বলছো। এবার একটু খেয়াল করে ধন্য করো, কে কার জায়গা থেকে সরে এসেছে? আজ ছেলে হয়েছি বলে কিছু বলতেও পারলাম না।”
কথাটা শেষ করেই বেড থেকে উঠে একটা টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আমি ততক্ষণে খেয়াল করেছি, উনি উনার জায়গাতেই ছিলেন। আমিই উনার কাছে এসেছি। ইশ! কিভাবে বললাম। আর নিজের এমন কাজে লজ্জা লাগছে। কি করে একটা ছেলের এতোটা কাছে যেতে পারলাম?
চোখ ঘুরিয়ে আয়নাতে দেখতেই, শাড়ির ফাঁক দিয়ে অনাবৃত কোমরে জ্বলজ্বল কিছু দেখতে পেলাম।
চলবে…!
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ🖤]#অদ্ভুত_আসক্তি
#পর্ব_৮ (ভালোবাসার এক খেলা। জিতবে কে?)
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ
“ভালোবাসা! পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর একটি শব্দ হচ্ছে ভালোবাসা। আর পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান বা ভাগ্যবতী মানুষটি হচ্ছে সে, যে কাউকে ভালোবেসেছে। মনের সবটুকু ভালোবাসা কেবল ও কেবলমাত্র একজনের নামেই বরাদ্দ করেছে। এবং এর চেয়েও ভাগ্যবান বা ভাগ্যবতী হচ্ছে সেই ব্যক্তিটি, যে গোটা একটা মানুষের সবটুকু ভালোবাসা একাকী নিজের নামে পেয়েছে। কারো হৃদযন্ত্র থমকে যাওয়ার কারণ হয়েছে।
ভালোবাসায় অবিরাম সুখ উপলব্ধি করা যায়, ভালোবাসায় মানসিক শান্তি লাভ করা যায়। ঠিক তেমনই, মরণসম যন্ত্রণা এই ভালোবাসাতেই পাওয়া যায়। আমি নিঃসন্দেহে একজন ভাগ্যবান পুরুষ। কারণ আমার সম্পূর্ণ হৃদ কোঠায় কেবল একটি মাত্র নারী স্থান পেয়েছে। আপনমনে মস্তিষ্ককে সুধাই, ‘সেই একটি নারী ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো নারীকে, ভালোবাসার নজরে দেখলে, এই চোখ যেনো গলে যায়। তাকে ছাড়া সকল নারী আমার জন্য নিষিদ্ধ। আমি যে এক নারীতেই আসক্ত।’
ভালোবাসার মানুষটির প্রথম আগমন হুট করেই হয়ে যায়। ব্যাপারটি সম্পূর্ণ অনাকাঙ্খিত। তবে প্রথম যখন নয়নে নয়নে সাক্ষাৎ হয়, দু জোড়া নয়ন নিজেদের লক্ষ্য নিজেরাই তৈরি করে নেয়। একদম অগোচরে। মনের কোঠায় তখন ভালোবাসা নামক এতো কঠিন এবং ভারী শব্দ আসে না। আসে একটাই কথা,‘এমন একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেলে, মন্দ হতো না।’ এরপর যখন বার বার সাক্ষাৎ হতেই থাকে, মনের মাঝে জন্ম নেয় তার প্রতি আগ্রহ। এই আগ্রহ নিয়ে তাকে জানতে থাকে। তার ভালোলাগা, না লাগা; ইচ্ছে, অনিচ্ছে; পছন্দ সবটাই জেনে নেওয়া হয়। তার প্রতি অদৃশ্য এক মায়া তৈরি হয়ে যায়। হ্যাঁ! মায়াবিনীর মায়াজালে সেচ্ছায় আবদ্ধ হয়ে যায়। মন-মস্তিষ্ক সবটা জুড়ে সেই একটি মানুষের রাজত্ব চলে। দিন দিন সে অভ্যেসে পরিণত হয়। তৈরি হয় এক আসক্তি। বড্ড অদ্ভুত আসক্তি।
তুমি আমার এই আসক্তি। তোমায় যেদিন প্রথম দেখেছিলাম, অদ্ভুত এক ভালোলাগা ছেয়ে গিয়েছিলো আমার কিশোর মনে। বাড়ি ফেরার পর, মনকে বার বার শুধিয়েছিলাম,‘কি আছে এই পিচ্চিতে? যা আমাকে এতটা মুগ্ধ করেছে?’
ধীরে ধীরে পিচ্চিটা বড় হলো। মনের কাছে ধরা পড়ে গেলাম। এতদিনের অনুভূতি সবটাই পরিষ্কার হয় গেলো আমার কাছে। ভাবলাম, ‘এই পিচ্চিটা যে করেই হোক আমারই হবে।’
কিন্তু, আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আমি গরীব বামুন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়াচ্ছিলাম। তোমাকে দুচোখ ভরে দেখে, ধন্য হবো। কিন্তু ছোঁয়ার সাধ্য যে নেই আমার।
কোন হাতে ছুবো? কোন যোগ্যতায়? মন মস্তিষ্ক পুনরায় আমার সাথে খেলায় মেতে উঠলো। একজন বললো, ভালোবাসায় সব জায়েজ, মন থাকলেই হয়। অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই। তো অন্যজন বললো, স্বার্থপর এই দুনিয়ায় ভালোবাসা বলতে কিছু নেই। যা আছে তার কিছুটা ক্ষমতা, বাকিটা টাকা। হেরে গেলো মস্তিষ্কের কাছে মন। দূরত্ব বাড়িয়ে দিলাম। ধীরে ধীরে অনেকটা দূরে চলে গেলাম। অভ্যেস কাটিয়ে উঠলাম। কিন্তু, কিন্তু আবার!
আবার তোমার আঙিনায় আমার আগমন ঘটলো। এবার তোমার নয়নে আমি, আমার জন্য অপেক্ষা দেখেছি। তোমার চোখে ভালোবাসা দেখার সুখ অনুভব করেছি। কি ভাগ্য আমার!
সবটা জানিয়ে দিলাম। পরিচয়টা নাহয় গোপন থাক। আর মনের কথাটাও জানিয়ে দিয়ো। কিভাবে দেবে? বলছি। যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে আজ সাদা ড্রেস পরবে। আর যদি না হয়, তবে কালো।
ইতি
হয়তো কেউ একজন”
গভীর মনোযোগ সহিত চিঠিটা পড়ছিলো নিশা। সকালে ব্রেকফাস্ট করে যখন কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো, তখন এই চিঠিটা আসে। সাদা রঙ্গা কাগজে নীল অক্ষরে লেখা। নিশা চিঠির প্রতিটি শব্দের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিলো। ভালোবাসার এতো সুন্দর সঙ্গা সে এর আগে শোনেনি।
তবে এখন মনে প্রশ্ন উঠছে,“চিঠিটি কে দিয়েছে? এতো ভালোবাসাময় একটা চিঠি! আচ্ছা! রুদ্র ভাইয়া? কিন্তু সে কেনো চিঠি দিতে যাবে? কখনো তো এমন কিছু করেনি যাতে আমি বুঝবো, রুদ্র ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে। তবে কি আমার কলেজের কোনো ছেলে? হয়তো তাই হবে। কিন্তু আমিতো অনেক আগেই নিজের মনটা রুদ্র ভাইয়ার নামে লিখে দিয়েছি।”
কথাটা শেষ করে গিয়েই, কলেজ ইউনিফর্ম বাদ দিয়ে একটা কালো রঙের ড্রেস পরে নিলো নিশা। রুদ্রর রিয়েকশন যদি অন্যরকম হয় তবে বুঝে নেবে, এটা রুদ্র পাঠিয়েছে। আর নিশাও সবটা বলে দেবে তখন। গাল দুটো লাল হয়ে এসেছে নিশার। হয়তো চিন্তায় নয়তো লজ্জায়।
__________________________
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখে যাচ্ছি। চোখ আমার কোমরে। এই বেলি চেইনের দিকে। কি সুন্দর দেখতে? কিন্তু কথাটা হচ্ছে যে, এটা আমার কোমরে এলো কি করে? দীর্ঘক্ষণ এই নিয়ে গবেষণা চালালাম। ফলাফল তবুও শূন্য। এরই মধ্যে আরহান ওয়াশরুম থেকে বেরোলো।
আমি আরহানকে কিছু বলতে যাবো, তার আগেই আয়নাতে মাত্র শাওয়ার নিয়ে আসা আরহানকে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। একটা ট্রাউজার পরা আর গলায় টাওয়াল প্যাচানো। গায়ে বিন্দু বিন্দু পানি কনা। চুলগুলো দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে। কি স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে!
আরহান আয়নাতে আমাকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসলেন। আমি তবুও সেভাবেই তাকিয়ে আছি।
আরহান হাসতে হাসতেই বললেন,“হারিয়ে যাচ্ছি না, সারাজীবন আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার জন্যে হলেও তোমার হয়ে আমি আছি। এবার ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো। ব্রেকফাস্ট করতে হবে তো নাকি!”
আমি নড়ে চড়ে দাড়ালাম। ইশ! কি লজ্জা! আরহান একটা টি শার্ট পরতে পরতে চলে গেলেন। আমার আর এই বেলী চেইনের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা হলো না।
আয়নায় পুনরায় নিজের এই লজ্জামাখা চেহারা অবলোকন করলাম। লজ্জা? হয়তো বৈধ সম্পর্কের জোর এটাই।
একেবারে শাওয়ার নিয়েই বেরোলাম। লাল পারের একটা সাদা শাড়ি পরলাম। চুলগুলো মুছে টাওয়ালটা নিয়ে ব্যালকনিতে শুকাতে দিলাম। এক পলক সকালের এই ধূসর রঙ্গা মেঘলা আকাশটা দেখে নিলাম। হয়তো একটু আগেই বৃষ্টি হয়েছিলো। আকাশ একটু একটু করে পরিষ্কার হচ্ছে। আমার মনের কালো মেঘ গুলোও হয়তো এভাবেই, এক পশলা বৃষ্টি হয়ে সরে যাবে।
রুম থেকে বেরোলাম। এখানে আসার পর থেকে আর বের হইনি। চিনিনা কোথায় কি আছে! কালকে খাবার গুলোও সার্ভেন্ট এসে দিয়ে গিয়েছে। রুম থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির কাছে চলে এলাম। পুরো বাড়িটা চোখ ঘুরিয়ে নিলাম। সবকিছুতেই আভিজাত্যের ছোঁয়া। সিঁড়ি বেয়ে নেমে পড়লাম। আরহানকে খুজে চলছি।
তখনই আরহানের শব্দ ভেসে এলো,“বা দিকে কিচেনে চলে এসো।”
আমি বা দিকে তাকালাম। আরহান! বাইরে থেকে দেখলাম, আরহান রান্না করছে। পা জোড়া গতিশীল হয়ে এলো আমার। দ্রুত পায়ে কিচেনে চলে এলাম। প্রশ্ন হলো, বাড়িতে এতো এতো সার্ভেন্ট থাকতে আরহান কেনো রান্না করতে এলো? বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি আমি। ব্যাপারটা খুবই অবিশ্বাস্য ঠেকলো আমার কাছে।
আরহান আমার এরূপ প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি একবার দেখে পুনরায় কাজে মনোযোগী হয়ে বললেন,“বউয়ের জন্য রান্না করতে পারবো না?”
আমি এবার অবাকের ফাইনাল স্টেজে চলে গিয়েছি। কি বলছেন উনি? আমার জন্য রান্না! সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ঘটনা এটা। চোখের কার্নিশে অজান্তেই এক ফোঁটা জল চলে এলো। এতশত না পাওয়ার ভীড়ে কিছু পাওয়ার স্বাদ বোদহয় এমনটাই হয়।
এরই মধ্যে আরহানের রান্না হয়েছে। আমাকে মিষ্টি হেসে বললো,“ডাইনিংয়ে গিয়ে বসুন তো এখন।”
আমি এগোলাম। উনিও খাবার এনে সার্ভ করে দিলেন। আমি নিষ্পলক উনাকে দেখে যাচ্ছি। ঘেমে গিয়েছেন উনি। লোকটা আমাকে এতো ভালোবাসেন!
হুট করেই মনে হলো পরিবারের কথা। প্রশ্ন করে বসলাম,“আমার পরিবারের সবাই কোথায় আছে? আপনার তো আমাকে লাগতো, পেয়ে গিয়েছেন তো। এবার তো উনাদের ছেড়ে দিন।”
আরহান চেয়ার টেনে আমার পাশে বসতে বসতে বললেন,“ছেড়ে দিলেই তুমি পালাতে চাইবে না, তার কি গ্যারান্টি?”
আমি তড়িঘড়ি করে বললাম,“আমি এখানেই থাকবো, কোথাও যাবো না। আপনার সব কথা মেনে চলবো। আপনি ছেড়ে দিন ওদের।”
“শিউর তো?”
“হ্যাঁ।”
“ওকে, ফাইন। তাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু তুমি যদি এই বাড়ি থেকে এককদম বাইরে যাও, তো তাদের এই দুনিয়া থেকে…”
আরহানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে উঠলাম,“যাবো না কোথাও। ছেড়ে দিন উনাদের।”
আরহান আমার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,“এখন খাওয়া শুরু করো। অনেক কষ্টে রেঁধেছে তোমার বর। ওনলি ফর ইউ শুকতারা।”
___________________________
শাওয়ার নিয়ে বেরোতেই রুশী দেখলো ওর মা রুমেই আছে। মাকে দেখে ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে ফেললো রুশী। মায়ের সাথে ওর সখ্যতা নেই বললেই চলে। সেখানে হুট করে রুমে চলে আসাটা সম্পূর্ণ “হতে পারে না” টাইপের ব্যাপার।
হাতের টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওর মায়ের কাছে এলো রুশী।
রুশীর মা রুশীকে দেখে ঠোঁট প্রসারিত করে বললো,“বাড়িতে মেহমান আসছে তো, একটু রেডি হয়ে নিতে হবে। এই শাড়িটা পরে নে।”
রুশী অবাক! ওর মা শাড়ি পরতে বলছে? তবুও কিছু বললো না রুশী। যেমনটা ভাবছে, তেমনটা হবে না। আর যাই হোক, না জানিয়ে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না ওর পরিবারের কেউ। কোনো প্রশ্ন না করেই তৈরি হয়ে নিলো।
রুশীর মা চলে গেলো। যাওয়ার পূর্বে পুনরায় মেয়েটিকে দেখে নিলো। এই নজর ভালোবাসায় ভরা ছিলো। অনেকটা সেরকম। কিরকম? নাই বললাম…
___________________________
আরহানের বাড়ি এসেছে রুদ্র। আরহান আমার জন্য কিছু জিনিস কিনে রেখেছিলো। এবাড়িতেই আছে। মূলত সেগুলো আনতেই আরহান রুদ্রকে এই বাড়িতে পাঠিয়েছে। আর রুদ্রও পেয়ে গেলো এক বাহানা। তার নিশাপাখিকে দেখার। এই সুযোগ হাতছাড়া না করে দ্রুত চলে এলো রুদ্র।
ড্রইং রুমের সোফায় বসে আছে। আরহানের মা কিছুক্ষন রুদ্রের সাথে কথা বলে চলে গেলো। রুদ্র অপেক্ষা করছে নিশার।
বিড়বিড় করে আউরাচ্ছে, “কখন যে আসবে মেয়েটা! টেনশনে যে আমি শুকিয়ে দশবছরের পুরনো ভাতের পাতিলের মতো হয়ে গিয়েছি, এটা কি চোখে পড়ে না কেনো মেয়েটার?”
কালো ড্রেস পরিহিত নিশাকে দেখে থমকে গেলো রুদ্র। কি মিষ্টি লাগছে! তবে, সেজন্য থমকে যায়নি রুদ্র। গিয়েছে এজন্য, কারণ চিঠিটি রুদ্রই নিশাকে লিখেছিলো। তারমানে কি নিশা রুদ্রকে প্রত্যাখ্যান করলো? মেনে নিতে পারছে না রুদ্র। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো।
ঠোঁটের কোণে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে কষ্টটাকে আটকে রাখলো। দেখিয়ে কি হবে?
এদিকে নিশা রুদ্রকে স্বাভাবিক দেখে ভাবলো,“যা ভেবেছি তাই। এটা রুদ্র ভাইয়া লেখেনি। লিখলে নিশ্চয় রিয়েক্ট করতো।”
দুই পাশ থেকে দুজনেই দুটো দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কিন্তু কেউ কারো দীর্ঘশ্বাসের আওয়াজ শুনতে পারেনি। ইশ! কতো বড় এক ভুল বোঝাবোঝি হয়ে গেলো।
________________________
ক্যাম্পাসে অয়ন একা বসে বসে ভাবছে, “কি এমন হয়ে গেলো যে আজ দুটোর একটাও এলো না। বীনির খবর না হয় মানলামই। ওর প্রায়ই মিস যায়। কিন্তু রুশী? ও তো ভার্সিটি মিস দেওয়ার মতো মেয়ে না। পড়ার জন্য না হলেও, আড্ডার জন্য ঠিকই আসে। যাক আজকে না এসে ভালোই করেছে। নিজেকে প্রস্তুত করে নেই। কালকে ওকে মনের সব কথা বলে দেবো। হ্যাঁ! রুশীকে ভীষণ ভালোবাসি। এটা জানিয়ে দেবো ওকে। পুরো ক্যাম্পাসের সকলের সামনে রুশীকে প্রপোজ করবো আমি।”
ভাবতে ভাবতেই ঠোঁটের কোণে হাসি চলে এলো। সেই প্রথম থেকে অয়ন রুশীর উপর দুর্বল হয়ে পড়ে। রুশীর প্রতি অয়নের খেয়াল রাখা, যত্ন করা, পসিসিবনেস সবটাই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ছিলো। অয়ন অনেক ভেবেছে, রুশীকে সবটা বলবে। কিন্তু! হ্যাঁ, একটা কিন্তু থেকে যেতো সবসময়। এখন অয়ন জানে, রুশীও অয়নকে ভীষণ ভালোবাসে। শুধু উপলব্ধি করতে পারছে না। তাইতো বলে দেবে। আবারও হাসলো অয়ন।
মাথার পেছনের চুলগুলোয় হাত বুলিয়ে বলছে,“মেয়েটা বড্ড পাগল টাইপের। ভালোবাসতে পারে আকাশ সমান। শুধু বলতে গেলেই, সে জানে না ভালোবাসা কি?”
মাথা নিচু করে ফেললো অয়ন। মাটির দিকে তাকালো।
মৃদু হাসির রেখা ঠোঁটে রেখেই বললো,“এই ধরণীর বুকে তোর আর আমার সহস্র পূর্ণিমা হোক। তুই দৌঁড়ে বেড়াবি। আমি মুগ্ধ ও স্থির নয়নে দেখে যাবো। তোর কাজল কালো চোখে আমি নিজেকে দেখবো। তোর মিষ্টি হাসির কারণ হতে চাবো। পৃথিবীর সমস্ত সুখ তোর নামে বরাদ্দ করবো। তোর জীবনের একমাত্র পুরুষ হবো। অনেক স্বপ্ন আমার তোকে ঘিরে জান। অনেক স্বপ্ন।”
______________________________
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেলো। তৃষ্ণা একটা গানের রেকর্ডিং শেষে বাড়ি ফিরলো। এর মধ্যে তার নয়নতারার খোঁজ নিতে ভোলেনি। কিন্তু, পেয়েছেটা কই? খুব ক্লান্ত তৃষ্ণা।
রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে নিলো। বেরোতেই সেখানে আশিককে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কপাল কুচকে ফেললো। এই ছেলেটা একদম ম্যানারলেস। আশিক, তৃষ্ণাকে দেখে মাথা নুইয়ে ফেললো।
মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,“স্যার একটা খবর পাইসি। ম্যামের ব্যাপারে।”
তৃষ্ণা উৎকন্ঠিত হয়ে পড়লো। তৃষ্ণার ব্যাকুলতা দেখে আশিক বলতে লাগলো,“বেলা গরাইতেই একটা গাড়িত কইরা ম্যামের আব্বা, সৎমাও আর বুইনে আইসে। কিন্তু ম্যাম আহে নাই।”
তৃষ্ণা চকিত চাহনি আশিকের পানে পড়তেই আশিক বললো, “এহন কি করমু স্যার?”
“বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি। গাড়ি বের করো।”
আশিক “আইচ্ছা“ বলে প্রস্থান করলো। খানিকক্ষণ বাদে তৃষ্ণা বাঁকা হাসলো।
একপলক আয়নাতে নিজেকে দেখে বললো, “আপনাতে আসক্ত আমি নয়নতারা। ভীষণ অদ্ভুতভাবে আসক্ত।”
__________________________
সোফায় ল্যাপটপ কোলে নিয়ে কাজ করছিলো আরহান। কলিং বেলের আওয়াজে আরহান সেদিকে খেয়াল এলো। এখন তো একজনেরই আসার কথা। ল্যাপটপ পাশে উঠে গেলো নিচে। আমি এতক্ষন ব্যালকনিতে বসে ছিলাম। আরহানের এরকম ভাবে যেতে আমিও দেখলাম। জানিনা কেনো, তবে আমিও উনার পিছু পিছু এলাম।
আরহান নিচে গিয়ে রুদ্রকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো, “এনেছো”
রুদ্র স্মিত হেসে হাতের ব্যাগটি এগিয়ে বললো,“জি স্যার এনেছি।”
আরহান “গুড” বলে হাত থেকে ব্যাগটি নিয়ে চলে যেতে নিলেই রুদ্র একটা কথা বলে উঠলো। আরহান সেখানেই থমকে গেলো।
সে এমনটি কখনোই ভাবে নি। এদিকে আমিও ততক্ষণে তাদের কাছেই চলে এসেছিলাম। রুদ্রের কথা আমার কানেও এসেছে। আমাকে ঘিরে এতো কাহিনী, আমারই অগোচরে?
চলবে কি..?
[