অদ্ভুত সম্মোহনী পর্ব ৫

#অদ্ভুত_সম্মোহনী ♥
#PART_05
#FABIYAH_MOMO🍁

🍁
বেসিনের উপর ছিটছিটে রক্ত ফোটা দেখে কপাল কুচকে এলো আমার! মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো, “সাদ ভাইয়া কি অসুস্থ!!বেসিনে রক্ত কেনো??” আমি তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেরিয়ে সাদ ভাইয়াকে ডাকতেই ফুপির কাছ থেকে জানতে পারি সাদ ভাইয়া তাড়া দেখিয়ে চলে গেছেন। হতাশ মনে রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে শুলাম। ফোনটা নিয়ে গ্যালারি চেক করছি। পুরোনো কিছু ছবি দেখছি। হঠাৎ ফোনে মেসেজ আসলো, “সাদকে নিয়ে ভাবা বন্ধ করো! ছেলেটাকে খতম করতে দ্বিধা বোধ করবো না! আমি কে তা জানার চেষ্টাও করবে না!” আমি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি। মেসেজটা যত ছোট তত বেশি ভয়ঙ্কর লাগছে! কেউ এভাবে দিনদুপুরে থ্রেড দেয়? আমি চিৎকার করে আপু, ভাইয়া সবাইকে ডাকলাম! আপু, ভাইয়ার রুম কাছাকাছি থাকায় সবাই হুড়হুড়িয়ে আমার চিৎকারে রুমে এসে উপস্থিত। সবাই একেএকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে হুলস্থুল অবস্থা পাকিয়ে ফেলছে। আমি ভীত চাহনিতে ঢোক গিলে কাপা হাতে ফোনটা এগিয়ে দেই। নিবির ভাইয়া ফোনটা ঝটকা মেরে হাত থেকে নিয়ে দেখতে শুরু করে। সবাই স্ক্রিনে চোখ দিয়ে বড় বড় করে তাকিয়ে দেখছে। দেখা শেষ হলে, নাইমা আপু আমার পাশে বসে বলে উঠে,

— তোর নাম্বার কি স্টেন্জার কাউকে দিয়েছিস?
আমি চোখ নিচু করে মাথা নাড়িয়ে ইশারা বোঝাই আপুকে। ওমনেই নিবির ভাইয়া ফট করে সবার সামনে বলে উঠে,
— তোর এক্স নাকি?
সবাই আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার আদৌ কোনো রিলেশন নেই, কথাটা বড় আপু ও ভাইয়া জানলেও নিবির ভাইয়ার প্ররোচনায় ঝোঁক চেপে উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে সবাই,

— ধুধুধুর… ককি ফালতু ককথা বলছো ভাই? আমি আর রিলেশন? রাস্তায় কুত্তাও জানে সাইফা তাসনিম রাহার কোনো প্রেম-রিলেশন থাকতে পারেনা। আর তুমি কিনা এক্সের দিকে চলে যাচ্ছো?
— তাহলে কে দিলো এই মেসেজ ?
— আমি কি জানি আজব! আমায় কেনো জিজ্ঞেস করছো!

সবাই আমার সামনে ডিসকাশন শুরু করলো। আননোন নাম্বারটা ফোনে টুকে ন’বারের মতো কল দিলো নিবির ভাই। কিন্তু ওই একই কথা, ”কাঙ্খিত নাম্বারটিতে সংযোগ দেওয়ার সম্ভব হচ্ছেনা, অনুগ্রহ করে আবার ডায়াল করুন ধন্যবাদ।” সবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলেও শাকিল ভাইয়া আর নিবির ভাইয়া যে ঘাপটি মেরে বসে থাকার মতো বান্দা না, তা আমি খুব ভালো করেই জানি। হঠাৎ আম্মু এসে দরজার দাড়িয়ে তাড়াহুড়ো কন্ঠে বলে উঠে,
— কিরে বাপু, তোরা সব এখানে!! আমি তোদের কোথায় কোথায় না খুজলাম!!জুয়েলার এসেছে। উপরে চল!
.
.

ঘড়িতে ঠিক আটটার কাটা ছুয়ে বসেছে। আমরা সবাই জড়ো হয়ে আমার রুমে “স্টেন্জার” ব্যক্তিকে খোজার চেষ্টা করছি। প্রথমত আমাকে স্টোররুমে আটকে থ্রেড দিয়েছে!দ্বিতীয়ত আমার নাম্বারে মেসেজ করে থ্রেড দিয়েছে!এই ঘটনা শুনার পর থেকে, আমার ফোনটা নিবির ভাইয়া জব্দ করে রেখেছেন। কিছুদিন আমার ফোন ছাড়া সময় কাটাতে হবে এই দুঃখের কথা ভেবে চোখে কান্না চলে আসছে!! ইশশশ….কষ্ট! নাইমা আপু একটা ডায়েরি হাতে মুখে কলম ঢুকিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। রূপ আপু ফোনের টুংটুাং মেসেজে একটু পর পর রিপ্লায় করছেন। নিবির ভাইয়া কোলে ল্যাপটপ বসিয়ে ঘোর দৃষ্টিতে কাজ করছেন। শাকিল ভাইয়া সেই ব্যক্তির লাতাপাতা ট্রেস করছেন। হঠাৎ নিবির ভাই চিল্লিয়ে বলে উঠে,

— ইয়াহুউ! গট ইট!

আমি চমকে উঠে বুকে ফু ফু দিয়ে উঠলাম। নাইমা আপুও রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছে, রূপ আপু হকচকিয়ে উঠেছে, শাকিল ভাইয়া ধমক দিয়ে নিবির ভাইকে বলে উঠে,
— ধুর বেটা! এমনে চিল্লাস কেন? কি হইছে?
নিবির ভাইয়া খুশি খুশি মুখে ল্যাপটপ আমাদের দিকে ঘুরিয়ে বলে উঠলেন,
— লুক এভ্রিবডি! ছেলেটার নাম্বার ট্রেস করে ফেলেছি! ছেলেটা তোর সাউথের দিকে যেই রোডটা গেছে ওই রোডের কাছাকাছি থেকে টেক্সট করছে! এই দেখ…

নিবির ভাইয়ার এইটুক ইনফরমেশন শুনে সবাই “সাব্বাশ” প্রতিধ্বনিতে মেতে উঠে! পরক্ষনে শাকিল ভাইয়া হুংকার কন্ঠে বলে উঠে,
— শালার বেটা! তোর অবস্থা কেমনে টাইট মারি দেখিস! কোন্ জায়গায় চোখ ফালাইছিস! শালা তোরে হারে হারে টের পাওয়াবো!

সবাই খুব খুশি হলেও কেনো জানি আপুর মুখে একচিলতে হাসি নেই। শুকনো মুখে বসে আছেন উনি। বারবার ফোনের স্ক্রিনে মেসেজিং করছেন আপু, অস্থিরতার ভাব প্রকাশ পাচ্ছে উনার মধ্যে। কি নিয়ে ছটফট করছেন কে জানে? মনে হচ্ছে ছটফটানির উছিলায় অক্কা পাবেন আপু! ডাইনিং রুম থেকে খাবাবের জন্য ডাক পড়লে সবাই খেতে চলে যাই। আপু ‘খাবো না, ইচ্ছা নেই’ বলে রুমে ঘুমাতে গেলে শোয়া নিয়ে ব্যাঘাত ঘটে। আপুর রুমে মামা-মামি ঠাই নিয়েছে। জায়গা নেই সেখানে। তাই কাথা বালিশ নিয়ে আমার রুমে শুতে এসেছে আপু। খাওয়া পর্ব শেষে লাইট নিভিয়ে শুয়ে আছি। বিছানার বামে শুয়েছে আপু, ডানে শুয়েছি আমি। আপুর চোখে ঘুম নেই। ফোনের স্ক্রিনে চোখ মেলে দিয়েছেন ঘন্টাখানিক ধরে। আমিও বিরক্ত মুখ নিয়ে অন্যকাত হয়ে কাথার মধ্যে ঢুকে পড়ি। আপু আজ সকাল থেকে কেমন বিহেব করছে বুঝতে পারছিনা। সাদ ভাইয়া যাওয়ার পর পরই আজগুবি বিহেব করছে আপু। মন বলছে, নিশ্চয়ই কিছু ঘাপলা আছে!! সাদ ভাইয়ার একটা জিনিস মাথায় ঢুকছেনা! উনি অসুস্থ হলে বাসা থেকে কোথায় চলে গেলেন? সবাই কল করেছেন। সবাই! কারোর ফোন রিসিভ করেননি উনি। কেনো উধাও হয়ে গেলেন জানা নেই কারোরই।

সকালে নাস্তা খেয়ে রুমে বসে আছি। ড্রয়িং রুমে কি যেনো কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছে সবাই। আমি বিছানা গুছিয়ে কাথা ভাজ করে বালিশের নিচে রাখতেই আপুর ফোনটা চোখে পড়লো। কালরাতে আপু কার সাথে তুমুল মেসেজিং করেছেন সেটা দেখার জন্য মনটা আকুপাকু করছে প্রচুর। দরজার দিকে উকি দিলাম। আপু এখন কেমন ব্যস্ততার মধ্যে আছেন সেটা পরোখ করার জন্য। যতটুকু বুঝলাম আপুর কাজ আধঘন্টার আগে শেষ হবে কিনা সংশয় আছে! তাই আশ্বস্ত হয়ে চট করে ফোনটা তুলে মেসেন্জারে ঢুকলাম। বারবার দরজার দিকে নজর দিচ্ছি। যদি বায়চান্স আপু কাজ ফেলে ফোনের জন্য আসে তাহলে বিপদ! আমি ডাটা কানেকশন অন করে লিস্টের প্রথম কাতারের মেসেজ চেক দিচ্ছি আর দরজায় তাকাচ্ছি। কখন জানি আপু এসে পড়ে! আপু দেখলেই সর্বনাশ! আমি নাম চেক করছি, ওমনেই দরজায় উকিঝুকি দিয়ে আপুর ব্যস্ততার পরিমাপ করছি। হঠাৎ নতুন একটা মেসেজ আসাতে দরজা থেকে চোখ ফিরিয়ে মেসেজের দিকে তাকাতেই চোখ থমকে চোয়াল ঝুলে যায়! নিশ্বাস ঘন হয়ে যাচ্ছে প্রচুর! এই নাম এভাবে লিস্টে ফাস্ট প্রায়োরিটিতে থাকবে!! গলা শুকিয়ে আসছে আমার! কি করে সম্ভব! কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছিনা! ইংলিশ ওয়ার্ডে Sadman Araaf উঠেছে! টেক্সটে ক্লিক করে মেসেজ দেখার মতো সাহস টুকু পাচ্ছিনা। কিভাবে পসিব্যাল সাদমান আরাফ আপুকে টেক্সট দিবে? যেই ব্যক্তিকে দশটা জিজ্ঞেস করলে একটার উত্তর দেয়, সেই ব্যক্তি মেসেন্জারে আপুকে টেক্সট দিবে? মনের মধ্যে উথালপাথাল করছে মেসেজটা দেখে! মনে হাজারটা ভয় পুষে ঠোট খিচে টেক্সটে ক্লিক করে মেসেজটা পড়তে লাগলাম। জানা নেই মেসেজটার মধ্যে আমার কি করুণ দশা হতে পারে… বুকের বাম সাইডটা প্রতিটা অক্ষর পড়তেই ধপাস ধপাস করছে..

” I warn you rup! I warn you! Don’t you dare to text me again! I don’t want to see your face again! Keep your dirty mind away from me! Remind it, if you do something wrong, it will be harmful for you! This Sad doesn’t care for you nor he will! Get lost ! ”

-চলবে

-Fabiyah_Momo🍁

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here