অদ্ভুত সম্মোহনী পর্ব ৪

#অদ্ভুত_সম্মোহনী ♥
#PART_04
#FABIYAH_MOMO🍁


একটা মনুষ্য প্রাণী এই রুমটাতে জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে!! নিশ্বাস ছাড়ার মতো শব্দ রুমটায় অদ্ভুতভাবে প্রতিফলিত হয়ে বিক্ষিপ্ত হচ্ছে।। মনে হচ্ছে দীর্ঘদিনের জমানো রাগ স্ফুলিঙ্গ আকারে ফুস ফুস করে বের হচ্ছে।।কি ভয়ঙ্কর!! রাগের প্রতিটা নিশ্বাস এতো ভয়ঙ্কর! যতবার শ্বাস ফেলছে ততবার ভয়ে গা ছমছম করছে। কান্নায় ফুপিয়ে উঠছি আমি!! গলায় কন্ঠস্বর ডলা পাকিয়ে আটকে গিয়েছে প্রচুর!! হঠাৎ আমার ডান গালে বুড়ো আঙ্গুলের ছোঁয়া অনুভূত হলো, এরপর চারটা আঙুলের স্পর্শ বাম গালে পড়লো! হাতের ছোঁয়া পেয়ে শরীর আমার কাকভেজা হয়ে উঠেছে। আমি কাপছি! সে আঙ্গুলের স্পর্শ আলতো থেকে তীব্রভাবে করতেই দুগালে প্রচন্ড ব্যথায় কুকড়ে উঠি আমি! এই সুযোগে সে আরো জোরে চেপে ধরে!!দাতেঁর সাথে গালের ভেতরের চামড়া লেগে অসহ্য ব্যথা করছে আমার!! ছুটাছুটি করতে নিলে সে গাল ছেড়ে চুলের মুঠি টেনে বলে উঠে,

— বারবার! বারবার! বারবার! একই ভুল! বারবার একই ভুল! তুমি…তুমি…ছেলেদের সাথে ঘেষাঘেষি করতে পারো না!! না না নাহ্!…পারো না!! তুমি ওর দিকে তাকাতেও পারোনা!! কেনো তাকাবে তুমি? কেনো তাকাবেএএএ!!

দাঁতে দাঁত চিবিয়ে চেচিয়ে বলে উঠলো সে! গলার স্বর ভয়ানকের চেয়েও ভয়ানক! কারন, এই স্বর এই ব্যক্তির আসল কন্ঠস্বর না। একটা রোবটের মতো কন্ঠস্বর তার! কোনো মার্ধুয্য নেই স্বরে! ঘ্যাটঘ্যাট করে কথা বলে!কান্নায় ফুপিয়ে উঠছি আমি!! গলার কন্ঠস্বর ডলা পাকিয়ে আটকে গিয়েছে প্রচুর!! হঠাৎ আমার ডান গালে বুড়ো আঙ্গুলের ছোঁয়া অনুভূত হলো, এরপর চারটা আঙুলের স্পর্শ বাম গালে পড়লো! হাতের ছোঁয়া পেয়ে শরীর আমার কাকভেজা হয়ে উঠেছে। আমি কাপছি! সে আঙ্গুলের স্পর্শ আলতো থেকে তীব্রভাবে করতেই দুগালে প্রচন্ড ব্যথায় কুকড়ে উঠি আমি! এই সুযোগে সে আরো জোরে চেপে ধরে!!দাতেঁর সাথে গালের ভেতরের চামড়া লেগে অসহ্য ব্যথা করছে আমার!! ছুটাছুটি করতে নিলে সে গাল ছেড়ে চুলের মুঠি টেনে বলে উঠে,

— ন্যাকা কান্না বন্ধ কর ! তোর ন্যাকা কান্না দেখলে মাথায় রক্ত চড়ে!… কিরে? কথা কানে যায় না? কান্না থামা বলছি!
এ কথা শুনে আমি আরো জোরে কান্নার জোয়ার খুলে বসি! সে আমার চুলের মুঠি ছেড়ে দেয়! দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার!! ছটফট লাগছে!! বদ্ধ রুমে অক্সিজেন লেভেল অনেকটাই কম বিধায় আমার নার্ভাস সিস্টেম দূর্বল করে দিচ্ছে…আমি শ্বাস নেওয়ার জন্য মুখে বাধা কাপড়টা সরানোর জন্য মুখ ডানেবামে ঝাকাচ্ছি।। আমার পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে পৌছাতে থাকলে সে মুখের উপর থেকে কাপড়টা খুলে দিলো। আমি হাফ ছেড়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলাম। এই বদ্ধ খাচায়কে এভাবে যন্ত্রণা দিচ্ছে জানি না! কে আমার সাথে এমন করছে জানি না! কে আমার উপর অধিকার ফলাচ্ছে জানি না! আমি হেচকি তুলে ফুপিয়ে কাদঁছি। সে আমার ফুপানো শব্দে থমকে গেলো কিনা জানি না আমার চোখে ফের কাপড় বেধে চেয়ার থেকে দাড় করিয়ে কোথাও নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিলো। আমি ভয়ে ভয়ে চোখ থেকে কাপড় সরাতেই বাইরের দরুন আলো চোখে গিয়ে বিধলো। আমি এদিকওদিক মুখ ফিরিয়ে চোখ কচলে দেখছি। কেউ নেই। আমি এখানে একা। কিন্তু চার নাম্বার রুমের দরজাটা খোলা। ওখানেও কেউ নেই, খালি। এই রুমটা গেস্টরুম হিসেবে পূর্বে ব্যবহৃত হলেও এখন এটা সদাইপাতি ও পুরোনো ভাঙা জিনিস রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। কাজেই এই রুমের ঘুণে খাওয়া একটি চেয়ারে আমাকে রাখা হয়েছিলো বুঝা শেষ! কিন্তু থ্রেড দিয়ে কে আমায় আটকপালে রেখেছিলো সেটাই মহা রহস্য!

সিড়ি ধরে উঠছি আর চোখে বাধা কাপড়টা হাতে নিয়ে মুচড়ে চলছি। সিড়িতে একপা ফেলি আর মাথায় একগাদা প্রশ্নের ঝুলি খুলি। কে ছিলো, কেনো বলেছিলো, কি দোষ আমার, সে কেনো এভাবে বাসাভর্তি মানুষের মাঝে স্টোররুমে নিবে? আমি যে ছাদে যাচ্ছিলাম সেটা কিভাবে জানে? আমার উপর ক্যামেরা লাগিয়েছে? নাকি আশেপাশে থেকেই সে নজর রাখছে? এখানে বিরাট ঘাপলা আছে! এখানে কেউ তো আছে যে আমার টাইম টু টাইম আপডেট নিচ্ছে। কিন্তু কে করবে এমন জঘন্য কাজ? বাসায় শুধুমাত্র পাচঁজন পুরুষ। আব্বু, ফুপা, শাকিল ভাইয়া, নিবির ভাইয়া ও সাদ ভাইয়া! অবশ্যই এই লিস্টে প্রথম তিনজন ব্যক্তি এমন জঘন্যতম কাজ করবেনা। শেষের দুইজন নিয়ে কোনো সন্দেহ পুষতে না চাইলেও মাথায় প্রচুর সন্দেহ কাজ করছে। কেনো জানি মনে হচ্ছে তাদের দুজনের মধ্যে কেউ একজন এমনটা করেছে! আমি চিন্তামগ্ন অবস্থায় ছাদের খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলে দেখি ছাদের রেলিং ধরে কেউ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে ছাদের রেলিংয়ে দুইহাতের তালু রেখে চুপ করে আছে। আমি সব চিন্তা সাইডে ফেলে উনার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম। উনার পাশে দাড়িয়ে রেলিংয়ে হাত রেখে উনার দিকে তাকাতেই মনে হলো এই ব্যক্তিটার মন খারাপ। একরাশ অভিমান, একবুক পরিমাণ অভিক্ষেপ, এক আকাশ পরিমাণ অভিযোগ তার মধ্যে চেপে আছে। সে পূব আকাশের দিকে নয়ন দিয়ে মনের কথা ব্যক্ত করছে।। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাতাসের সখ্যতা জানান দিচ্ছে, এখন “পড়ন্ত বিকেল”। আমিও নিশব্দে ছাদ থেকে নিচের দুনিয়া দেখছি। সব ছোট ছোট পিপিলিকার মতো দেখতে লাগছে। হঠাৎ কেউ নরম কন্ঠে পাশ থেকে বলে উঠলো,

— আকাশটা খুব অদ্ভুত তাই না?

আমি কিছুটা চমকে উঠে উনার দিকে বিষ্ময় সূচকে তাকিয়ে আছি। মানে হলো, আমি উনার কথার কিছুই বুঝিনি। সাদ ভাইয়া আমার দিকে না তাকিয়ে আকাশের দিকে চোখ রেখে রেলিংয়ে কনুই বসিয়ে হাতের তালুতে থুতনি রেখে অপর হাতটি রেলিংয়ের উপর মেলে দিলো। নম্র কন্ঠে বলে উঠলো,

— ব্যাখ্যা শুনবে?

আমি হ্যাঁ সূচকে মাথা নাড়িয়ে কৌতুহল দৃষ্টিতে জানার আকাঙ্ক্ষা বোঝালাম। সাদ ভাইয়া একবার আমার দিকে তাকিয়ে ফের চোখ ঘুরালো আকাশের দিকে,

— আকাশটা আমার কাছে খামের মতো। এখানে লক্ষ লক্ষ কথা রাখা যায়। কাউকে যেসব কথা বলা যায় না সেটা আকাশে মন খুলে বলা যায়। আমি মনে করি, আকাশের পানে কথা বলা মানে বিধাতার কাছে মনের কথা বলা। বিধাতার সাথে ডিরেক্টলি কথা বলা। তবে নামাজে যেমন আল্লাহর কাছে সব খুলে বলা যায়, তেমনি দ্বিতীয় অপশন হিসেবে আকাশেও কথা বলি আমি। আমার অন্যরকম ভালো লাগে। মনে শান্তি মেলে…

কথাগুলো বলতেই প্রশান্তি সূচকে দৃষ্টি রেখে মুচকি হাসি দিলেন সাদ ভাইয়া। মানুষটা আসলেই ব্যতিক্রম। কথাগুলোও বেশ ভিন্নরকম। এতো সুন্দর করে কথা বলেন, কথার প্রতিটা লাইন বারবার কানে লাগে। গুছিয়ে কথা বলা, কথা বলার সময় ঠোঁটে হাসি রাখা, সবসময় সবাইকে নিয়ে সম্মান দিয়ে চলা, সবকিছুতেই সৌন্দর্য উনার! সুন্দর পাপড়ি ভরা চোখ, হালকা লালচে ঠোঁট, লম্বা উচুঁ হাইট, পার্ফেক্ট ফিগার সব! চুলগুলো গাঢ় ব্রাউন রঙের। উনার গায়ের রঙের সাথে চুলের প্রকৃতিগত রঙটা যত মানিয়েছে…এই রঙটা উনাকে ছাড়া অন্য কাউকে মানাতো কিনা সন্দেহ আছে!! কিন্তু সাদ ভাইয়ার সবকিছুই যেনো আনকমন, অন্যরকম। সাদ ভাইয়াকে নিয়ে চিন্তার অগোচরে ভাবতে থাকলে হঠাৎ হৈ হুল্লোড় করে ছাদের দরজা দিয়ে রূপ আপু, শাকিল ভাইয়া, নাইমা আপু ও নিবির ভাইয়া ঢুকে। আড়চোখে তাদের আগমন বুঝে আমি সাদ ভাইয়ার কাছ থেকে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকাতেই শাকিল ভাইয়া প্রশ্ন ছুড়ে বলে উঠে,

— কিরে! তুই এখানে কি করোস? এই টাইমে এখানে কি?

আমি ও সাদ ভাইয়া মাথা ঘুরিয়ে উনাদের দিকে তাকাই। সবাই আমাদের দিকে এগিয়ে এসে আমাদের মতো ছাদের রেলিং ধরে দাড়ালো।
— ভাই নিচে দেখছো কেমন হূলস্থূল অবস্থা? মনে হচ্ছে কালকেই বিয়ে! এমন হৈচৈয়ে মাথা ঠিক থাকবে?এইজন্য ছাদে আসছি।
— ভালো করছোস। নিচে আম্মু ফুপি যেই চিল্লাচিল্লি শুরু করছে আর বলিস না। থাকার মতো পরিস্থিতি নাই। শোন এক কাজ কর! তুই পাটিটা নিয়ে আয়! রাইফা আর নাইমা যা, হালকা নাস্তা কফি আন। আমি বিজয়কে বলতেছি কোল্ড ড্রিংক আনতে। জলদি জলদি কর!

সবাই শাকিল ভাইয়ার আদেশমতো সব ছাদে রেডি করে বসার, খাওয়ার ও গানবাজনার ব্যবস্থা করলো। সবাই আমরা গোল হয়ে বসলাম। মাঝে কোল্ডড্রিংক, পিরিচ দিয়ে ঢাকা কফি, ট্রেতে চানাচুর-বিস্কুট ও নিমকি সাজানো। শাকিল ভাইয়া উনার গিটারটা নিয়ে এসেছেন। ছাদের একপাশে ওয়ারলেস সাউন্ড বক্স রাখা। আমার ডানে শাকিল ভাইয়া, বামে নাইমা আপু। সবাই কৌতুকের আসর শেষ করে খাওয়া পর্ব হাত দিলো। নাইমা আপু মাঝখান থেকে কফির মগ তুলে বলে উঠলো,

— গাইজ অনেক হেসেছি সিরিয়াসলি! লাইফের এই দিনগুলো অনেক মিস করবো। জানো, আমার বাংলাদেশে আসা নিয়ে প্রচুর মন খারাপ ছিলো। কিন্তু বিলিভ মি! এখন মনে হচ্ছে বিডিতে এসেই বেটার হয়েছে! নাহলে দেশি ট্রেন্ডিশানটা যা হেভ্বি মিস করতাম!

সবাই আপুর বিয়ের টপিকে কথা তুলে এই হাসছে, এই সেন্টি খাচ্ছে। আমার মাথায় আড্ডার আমেজ ঢুকছেনা কিছুতেই। বিকেলের দিকে আমার উপর যে হামলা হলো!! মনে উঠলে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে সিউর!! আমি অন্যমনষ্ক হয়ে পড়লে নিবির ভাইয়া তুড়ি বাজিয়ে বলে উঠে,

— পুচকি কি ভাবছিস?? বিয়ে করবি নাকি!!
আমি কপালকুচকে ঝাঝালো সুরে বললাম,
— বেশি কথা বলবা না ভাইয়া! একদম বেশি বেশি করছো কিন্তু! বড় বোনকে এখনো ‘আপু’ বলে ডাকতে জানো না! আবার তুমি ফালতু কথা বলছো!
— তোর বুদ্ধির বিকাশ আর হলো না গাধি। আজীবন হাটুর নিচেই থাকবে তোর বুদ্ধি! যা… কি জিজ্ঞেস করলাম! আর তুই কি জবাব দিলি!!
— নাইমা আপু কিছু বলো! দেখো ভাইয়া কি শুরু করছে!!

সবাই আমার কথা শুনে হো হো করে হাসিতে ফেটে পড়লো। হাসাহাসির থামতেই শাকিল ভাইয়া বলে উঠলো,
— বোরিং লাগছে বাল। কেউ গান ধর! ভাগ্লাগেনা বোরিংনেস! বাড়িতে বিয়ে আর তোরা সব কি ফাউ জোক্স নিয়ে বসলি! এই সাদ? গিটারটা তুলে গান শুরু ধর তো।।

আমিসহ সবাই হকচকিয়ে সাদ ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া যে গান নামক মহাকাজ জানে এটা আমাদের জন্য কারেন্টের শকের চেয়ে কম না! সাদ ভাইয়া হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
— গান আর আমি? ইজ্জত পান্চার করিস না দোস্ত!! এইসব গানটান আমি পারিনা!!
— মেয়েদের মতো ঢঙ কমায়া কর সাদ। তুই যে জোশ গান জানোস পুরা ক্যাম্পাস জানে! গিটারটা তুল!

সাদ ভাইয়া গান জানে এমন বাক্য শোনার পর পরই সবার মধ্যে উত্তেজনা কাজ করছে!! রূপ আপু তো ইতিমধ্যে তোষামোদ শুরু করেছে সাদ ভাইয়াকে।। সবার চাপাচাপিতে শেষমেশ গিটার হাতে জোরে শ্বাস ছেড়ে বলে উঠলেন,
— দেখো, আমি সবার মতোই বাথরুম সিঙ্গার। গানটান খুব একটা পারিও না। মিস্টেক হলে এডভান্স সরি চেয়ে নিচ্ছি! কেমন?
সবাই চিল্লাহুল্লা করে সাদ ভাইয়ার কথায় সায় দিলো। সাদ ভাইয়া গিটারে আঙ্গুল বসিয়ে স্মুথ একটা টিউন তুলে চোখ বন্ধ করে নিলেন। সবার নজর শুধু সাদ ভাইয়ার দিকে! ভাইয়া ধীরে ধীরে গুণগুণ করে সুর তুলে গান শুরু করলেন। গানটা নিউ সং “রূপকথা”। সবাই মুগ্ধ হয়ে সুরেলা গানের মিষ্টি মূহুর্ত উপভোগ করছে…

মনের যতো কথা আছে বলতে এবার
কাছে আয়…
তোমায় পেলে সব মনগড়া অভিমান আমার
ভেঙ্গে যায়…

চেয়েছি সবটা সময়…
তোকে আমার প্রার্থনায়🍁

আমি আমার মাঝে আজ, শুধু তোকে খুজে পাই।
আমি তোমাকে ভেবে কতো রূপকথা সাজাই।

সাদ ভাইয়া যতক্ষণ গান গাচ্ছিলেন ততক্ষণ যেনো প্রকৃতির বাতাস হনহন করে গা শিতল করছিলো। কতটা মনোযোগ দিয়ে গানের দুনিয়ায় ডুব দিয়েছে…কতটা সুন্দর করে সবাই চোখ বন্ধ রেখে গানের সুর উপভোগ করছে, সবকিছু যেনো কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই গিয়েছে কেউ গাচ্ছে। কারোর গানের মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে সবাই চুপ হয়ে যাবে ভাবা যায়?? সাদ ভাইয়া গান শেষে জোরে জোরে কাশতে লাগলেন। সবাই অবাক হয়ে চোখ খুলে সাদ ভাইয়ার দিকে তাকায়। সাদ ভাইয়া গিটার রেখে হাতের উল্টোপিঠ মুখের কাছে এনে কাশছেন। হঠাৎই সবাইকে আরো দুদফা চমকে দিয়ে গিটার ফেলে সাদ ভাইয়া যক্ষ্মা রোগীর মতো কাশতে কাশতে ছাদ ত্যাগ করলেন। আমরা সবাই প্রচন্ড আশ্চর্য হয়ে আছি! নিবির ভাইয়া উদগ্রীব কন্ঠে বলে উঠলেন,

— Its weird! সাদের কি হলো গাইজ? এমন ভয়ঙ্কর কাশাকাশি! কেউ জানিস কিছু এ ব্যাপারে?

আমরা সবাই না সূচকে মাথা নাড়াই। নিবির ভাইয়া ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা শুরু করলে রূপ আপু বলে উঠে,
— ভাইয়া আমি আর সাইফা দেখে আসি? সাদ ভাইয়ার যদি কিছু প্রয়োজন পড়ে?
আপু আর অনুমতির প্রয়োজন বোধ করলেন না। কথাটুকু শেষ হতে দেরি, আমার হাত টান দিয়ে নিচে দৌড়ে যেতে দেরি না। নিচে নামতেই আম্মুর সাথে দেখা হওয়ার সুবাদে জানা গেলো সাদ ভাইয়া মুখে রুমাল চেপে আমার রুমে ঢুকেছেন। বাকিটা ইতিহাস জানার জন্য আমার রুমে ঢুকলে আপু লেবুর পানি আনার জন্য আগেই রান্নাঘরে দৌড় লাগায়। ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ দেখে রুমে পায়চারি করছি। প্রচুর কাশির শব্দ আসছে ভেতর থেকে। বেগতিক হারে কাশি। আমি দরজায় নক করে কিছু জিজ্ঞেস করলে কেমন হবে ভেবে পাচ্ছিনা! কাজেই চিন্তার প্রহর আরো ঘন হয়ে আসছে আমার।। এদিকে দেখি কাশির আওয়াজ কমছেই না। না পারতেই দরজায় টোকা মেরে বলে উঠি,

— ভাইয়া আপনি ঠিক আছেন?? আপনার কি কিছু লাগবে?? ভাইয়াকে বলে ডাক্তার আনার ব্যবস্থা করবো??

একগাদা প্রশ্ন করে দরজায় কান লাগিয়ে ভেতরকার স্থিতি বুঝার প্রয়াস চালাচ্ছি।। কাশির শব্দ কিছুটা কমেছে কিন্তু পুরোপুরি কমেনি। হঠাৎ কাশির আওয়াজ গায়েব হয়ে গেলো! আমি কোনো শব্দই পাচ্ছিনা ভেতর থেকে! খট করে দরজা খুলতেই আমি ভারসাম্য বিগড়ে চোখ খিচে ওয়াশরুমে ছিটকে যাই। কারো উপর আছড়ে পড়লাম কিনা জানি না।। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আমার কবজি ধরে আছেন সাদ ভাইয়া। সাদ ভাইয়া ছেড়ে দিলেই ধপাস করে মেঝেতে পড়বো আমি। সাদ ভাইয়া কবজি টেনে ঠিক করে দাড় করিয়ে দেন। আরেকহাতে রুমালে মুখ ডুবিয়ে কাশতে কাশতে বলে উঠলেন,

— দরজায় কান দেওয়া কেমন ম্যানার্স রাহা? এইরকম করলে লোকে ভালো বলবে! স্টুপিড কোথাকার!

সাদ ভাইয়ার এহেন রাগ সম্বন্ধে কিছুতেই সারমর্ম মিলাতে পারছিনা। আমি ভ্যাবাচেকা হয়ে দাড়িয়ে থাকলে সাদ ভাইয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুড়ে পাশ কাটিয়ে চলে যান। আমি ভ্রুকুচকে ওয়াশরুমের বেসিনের দিকে তাকাতেই দেখি ছোপ ছোপ লাল রক্ত!

-চলবে🍁

-Fabiyah_Momo🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here