#অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম
#পর্ব–০৮
#লেখিকা—ইসরাত বিনতে ইসহাক
সকাল হতেই জানতে পারলাম শরীফ ভাইয়া, সকালের আলো ফুটতেই, বেরিয়ে পরেছেন সিলেট সেনানিবাস এর উদ্দেশ্যে….
“বুঝলাম আমার সাথে রাগ করে ওনি ছুটি শেষ হওয়ার একদিন আগেই চলে গেলেন”।
এতো রাগ কেন ওনার বুঝিনা?
মরিয়ম আপু বললেন_মা ভাই এমনিতেই তেমন ছুটি পায়না, তাহলে একদিন আগে চলে গেল কেন? আন্টি চুপ করে রইলেন।কিছু বললেন না।
শরীফ ভাইয়া চলে যাওয়াতে বাসাটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মনে হয় যেন এই এসে বলবেন, “পিচ্চি কি করো? পিচ্চি তুমি এটা পারো? পিচ্চি রা আবার এটাও পারে, পিচ্চি এই, পিচ্চি সেই”। কিন্তু না কেউ এসে আমাকে আর বিরক্ত করে না।
হঠাৎ চোখে পরলো,ড্রেসিন টেবিলের উপর পারফিউম এর কন্টিনার দিয়ে একটা কাগজ চাপা দেওয়া,
কাগজ টা হাতে নিয়ে দেখলাম_
লিখা আছে__
প্রতিবার ছুটিতে যাওয়ার সময় বুকটা অনেক বড় হয়ে যায় আর ছুটি শেষে হয়, না যেতে চাওয়া অবস্থা।একটা নির্দিষ্ট গন্ডির ভিতরে থেকে চাকুরী করাটা সত্যিই একটু কঠিন। এত কষ্টের মাঝে যখন কয়েকটা দিন,সব কর্মকান্ড থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তখন সত্যি একটু অন্যরকম ভাল লাগা কাজ করে। আমাদের জীবনের একটা বিশাল অংশ জুড়ে থাকে আমাদের কাজ। এ কাজে ব্যয় করা লাগে নিজের জীবেনের অনেকখানি সময়।
কিন্তু এবারের ছুটি কাটানো টা সত্যিই আমার জন্য খুব স্পেশাল ছিল, কিন্তু শেষ টা সুন্দর হলো না, আফসোস।যাই হোক ভালো থেকো এবং সাবধানে থেকো।
ইতি
বাঁদর আর্মি।
এবার আমার খুব খারাপ লাগছে, কারণ আর্মি দের কাজের সম্পর্কে কিছু টা হলেও ধারণা আছে, খুবই কষ্ট তাদের এই জীবনটা।আর সেখানে কিনা আমার জন্য শরীফ ভাইয়া, শান্তি তে ছুটি গুলো কাটাতে পারলেন না।
মরিয়ম আপুর কথা শুনতে পেলাম খুব উত্তেজিত হয়ে কথা বলছেন, কি হয়েছে জানতে রুম থেকে বের হলাম।
শুনলাম ফারজানা আপুর বিয়ে, তিন দিন পর শুক্রবার দিন। মরিয়ম আপুর শ্বাশুড়ি মা কল করে বললেন_মরিয়ম আপু যেন আজকেই চলে যান। বিয়ে বাড়ি বলে কথা, বাড়ির বউ না থাকলে কি চলে। তাই আপু বিকালে চলে যাবেন।
শরীফ ভাইয়া এই জন্যই হয়তো বলেছিলেন, ফারজানা আপুই যদি বিয়ে না করে, তাহলে আমার মতামত কি? আচ্ছা ঐদিন কি এমন কথা হয়েছিল তাদের মধ্যে???
“ফ্লাসব্যাক…..
ঐ দিন শরীফ ফারজানা কে বলে ফারজানা তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।
জ্বি, ভাইয়া বলুন?
জানি না তুমি কথা গুলো শুনে কিভাবে নিবে বা তোমার রিয়েক্ট কি হবে। কিন্তু কথা গুলো তোমাকে জানানো উচিৎ, এবং তোমার ও জানা উচিৎ। ভাইয়া আপনি বলুন না কি বলবেন?
ফারজানা শরীফা কে দেখেছো?
না ভাইয়া ওকে দেখিনি এখনো, তবে ওর কথা শুনেছি ভাবীর কাছে।ওহহ আচ্ছা। আমি শরীফা কে পছন্দ করি। আমি বিয়ে করলে ওকেই করতে চাই।
ফারজানা চুপ করে থাকে।
শরীফ বলে,স্যরি ফারজানা আমি তোমাকে হার্ড করতে চাইনি। না ভাইয়া এভাবে বলবেন না।
জানেন তো আমি এতদিন একটা দ্বিধার মধ্যে ছিলাম।
আমাকে একজন খুব পছন্দ করে। ওনি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। আমার ও তাকে খারাপ লাগে না কিন্তু আপনার এবং আমার ফ্যামিলি সবাই চাইছে আপনার আর আমার বিয়ে দিতে তাই বরাবরের মতই ওনাকে আমি রিজেক্ট করে আসছি। আজকে আপনার কথায় আমার দ্বিধা কেটে গেল।
আমার কোন প্রবলেম নেই ভাইয়া আপনি নিসংকোচে শরীফা কে বিয়ে করতে পারেন।
আমি যে তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ দিব? না ভাইয়া ধন্যবাদ দিতে হবে না। আমাদের বিয়ে হলে আমরা কেউ ই সুখি হতে পারতাম না। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
“আল্লাহু আকবার”
হুম ফারজানা তুমি ঠিক বলেছো। তো বিয়ে কবে করছো?বাবা মাকে বলে দেখি কি বলে তারা।
বর্তমান,
যার ফলস্বরূপ ফারজানার বিয়ের ডেট ও ফিক্সড হয়ে গিয়েছে।
_________
কেন জানি না, শরীফ ভাইয়ার কথা খুব বেশিই মনে পরছে। আচ্ছা আমি আবার ওনার মায়ায় পরে গেলাম নাতো? দূর এসব কি ভাবছি?
শরীফ ভাইয়ার ভুত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।
মরিয়ম আপু বিকাল হতেই চলে গেলো। আন্টি কে বার বার বুঝিয়ে গিয়েছে তারা যেন বিয়েতে যায়। মরিয়ম আপুর শ্বশুড় মশাই কল করে ইনভাইট করেছেন।
আমাকেও আপু বললেন আমি যেন আন্টি আংকেলের সাথে যাই। আন্টি পরেছেন বিপদে, রাগে দুঃখে বিয়েতে যেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু আবার না গিয়েও পারবেন না।যতই হোক মেয়ের শ্বশুর বাড়ি বলে কথা। না গেলে মেয়েকে সারাজীবন কথা শুনতে হবে।
বিয়ের দিন উপস্থিত হলো_
আন্টি,আংকেল আর সাইফ গিয়েছে বিয়েতে। আমাকে অনেক বলেছে তাদের সাথে যাওয়ার জন্য কিন্তু আমি যাইনি। একদিকে ভয় আরেক দিকে কষ্ট তাই গেলাম না। আন্টি মন খারাপ করে গেলেন আমাকে নিতে পারেন নি বলে। আংকেল তো বলেন আমি যাবনা, সাবিনা তুমি আর সাইফ যাও। মেয়েটা একা একা বাসায় কিভাবে থাকবে তাই তোমরা যাও।
আন্টি রাজি হলেও আমি হলাম না, অনেক বুঝিয়ে তাদের সবাইকে পাঠালাম।
এখন একা একা বাসায় ভোড় হচ্ছি। ছোট ছাদে গিয়ে কিছু সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভাবছি আমার জীবনই কেন আনন্দ গুলো স্থায়ী হয় না। কেন ক্ষনিকের জন্য আসে?এর থেকে ভালো না আসা।
দুপুরে খাবার খেতে ইচ্ছে করলো না। না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম।এই ঘুম ভাঙ্গল আসরের আযান শুনে। দেখলাম আন্টি তারা এখনও আসেনি।
আর ভালো লাগছে না এরকম একা একা।
অবশেষে মাগরিবের আজান হতে কিছু সময় আগে আন্টি তারা আসলেন।
সাইফ এসেই বিয়ে বাড়ীতে কি কি করলো তা বলতে লাগলো। আবার আন্টির ফোন এনে বর আর বউয়ের ছবি দেখালো। দেখে ভালো লাগলো তাদের জুটি টা পারফেক্ট হয়েছে।
সাইফ বললো ফারজানা আপু নাকি আমি গিয়েছি কিনা জিজ্ঞাসা করেছে। পরে আমি যাইনি শুনে আমার সাথে রাগ করেছে। সাইফ কে বলেছে আমাকে বলতে।
এরপরের দিন,
কাজ নেই পড়াশোনা নেই কতো আর এভাবে ভালো লাগে তাই, আংকেল এর কাছে গেলাম বই আনার জন্য। শুনেছি আংকেল এক সময় ভার্সিটির বাংলা প্রফেসর ছিলেন। এখন রিটায়ার্ড করেছেন। সেই সুবাদে আংকেলর অনেক বই পড়া হয়েছে এবং একটা লাইব্রেরী আছে।
“শুনেছি বাংলা নিয়ে যারা পড়াশোনা করেন তারা অনেক বইপোকা হয়ে থাকেন”।
আংকেল ও তার ব্যাতিক্রম নয়, তিনি এখন ও অনেক বই পড়েন।
আংকেল আমার বই পড়ার কথা শুনে খুবই খুশি হলেন আর বললেন তুমি লাইব্রেরী থেকে তোমার ইচ্ছে মতো বই নিয়ে পড়ো।
আমিও খুশি মনে লাইব্রেরী রুমে এসে, বই খুঁজতে লাগলাম কোন টা পরবো? একে একে প্রত্যেকটা বইয়ের নাম দেখছি। হঠাৎ চোখে পরলো, শরীফা নামের একটা বই। খুব কৌতুহল নিয়ে বইটা হাতে নিলাম।
আমার নামে নামে বইটা।
খুব ইচ্ছে করছে বইটা পড়তে, ঠিক করলাম এটাই পড়বো আমি।
“শরীফা”
“কাশেম বিন আবুবাকার”
বইটা পড়া শুরু করলাম,যত পড়ছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। উপন্যাসের নায়ক ফারুক খুবই ধার্মিক।যত পড়ছি ততই আমি ফারুকের প্রতি মুগ্ধ হচ্ছি, আচ্ছা ছেলেরা কি আজকাল এরকম ভালো হয়??
হঠাৎ শরীফ ভাইয়ার কথা মনে পরলো। শরীফ ভাইয়া ও ভালো কিন্তু, নামাজ কালাম নিয়ে ফাঁকি দেয়। শরীফ ভাইয়া উপন্যাসের ফারুকের মতো ধার্মিক হলে অনেক ভালো হতো!
বইটা অনেক খানি পড়ে বুঝতে পারলাম উপন্যাসের নায়িকা হচ্ছে শরীফা। শরীফা ফারুক কে অনেক ভালোবাসে কিন্তু ফারুক শরীফা কে বুঝে না, নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করে কি জানি??
“বেচারা শরীফা খুব কষ্ট পাচ্ছে। শরীফার জন্য আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে”।
“আচ্ছা শরীফ ভাইয়া ও এরকম কষ্ট পাচ্ছে”??
মনে হয় এতো কষ্ট পাবেন কারণ উপন্যাসের মতো তো আর বাস্তব সব হয়না।
আমি কখনো ছেলেদের নিয়ে তেমন ভাবিনি। আব্বুর স্বপ্ন সত্যি করবো বলে, খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা নিয়েই থাকতাম। তাই ছেলেদের কে জানার প্রতি কোন দিন ইন্টারেস্ট যাগে নি।
আর বিয়ে নিয়ে তো ভাবা অনেক দূর। উপন্যাস টা পড়ে, শরীফ ভাইয়া কে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা শরীফ ভাইয়া কি ফারুকের মতো এতটা ভালো হবে?
শরীফা অনেক ধৈর্য্য ধারণ করার ফল পেল। ফারুক নিজেই শরীফা কে বিয়ের প্রস্তাব দিল। অবশেষে শরীফা আর ফারুকের মিলন হলো। তাদের মিলন টা খুব চমৎকার ছিল।
বইটা পড়ে এতো ভালো লাগছে, আজকে আমি বইটা শেষ না করে উঠতেই পারবোনা।এক কথায় অসাধারণ উপন্যাস টা।
প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি,পড়ছি আর খারাপ লাগছে এখনি শেষ হয়ে যাবে।
অবশেষে তিন ঘণ্টা সময় নিয়ে আমি বইটা পড়ে শেষ করলাম। শেষ পর্যায়ে পড়ে আমি যেন বাক শক্তি হারিয়ে ফেললাম। তাদের পরিনতি কেন এমন হলো??ভালো হলে কি খুব বেশি খারাপ হতো??
স্থির হয়ে চেয়ারেই বসে রইলাম, আমার যেন বিশ্বাস ই হচ্ছে না। তখনি আন্টির কান্নাকাটির আওয়াজ শোনা গেল। আন্টি কান্না করছে কেন? আমার অন্তর টা যেন কেঁপে উঠলো!!!
“বই টা রেখে দৌড়ে আন্টির কাছে গেলাম”।
আন্টি তুমি এভাবে কান্না করছো কেন? আন্টি কান্নার জন্য কিছু বলতেই পারছে না।
“আংকেল বললেন শরীফা রে জানি না আমাদের জীবনে কি ঝর আসতে চলেছে”!!!
আংকেল কান্না করতে পারছেনা ঠিকই কিন্তু খুব ভেঙে পড়েছেন।
আংকেল আমাকে বলো না কি হয়েছে।
আংকেল বললেন_ শরীফ আগামীকাল ভোরের ফ্লাইটে মালয়েশিয়া যাচ্ছে একটা খুব বড় মিশনে যেখানে ওর জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। ওখানে ওর যাওয়ার কথা ছিল না কিন্তু শরীফ নাকি নিজ উদ্যোগেই যাচ্ছে।
শরীফের একজন আর্মি কলিগ শরীফ কে না জানিয়ে কল করে আমাদের জানালো।
ছেলে টা জেনে শুনে এরকম একটা ডিশিসন
কেন নিল বুঝতে পারছি না। আগামীকাল যেহেতু যাবে তাই এখন আর এই ডিশিসন ক্যান্সেল করা যাবে না।
সবকিছু শুনে আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে শরীফ ভাইয়া আমার সাথে জিদ করে এরকম একটা ডিশিসন নিয়েছেন।
আমি আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিনা। কোন রকমে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।
আমার একটা কথাই বার বার মাথায় আসছে।
উপন্যাসের শরীফা আর ফারুকের পরিনতি। তাদের মাঝে সবকিছু ঠিক হওয়ার পর একটা সাপের কামড়ে ওদের মৃত্যু হলো!!
এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। অঝোরে কাঁদতে শুরু করলাম। শরীফ ভাইয়ার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার কি হবে??
আমি তো আর বাঁচতে পারবোনা,এই অপরাধ বোধ নিয়ে আমি কিভাবে….
সংবাদপত্রে অনেক দেখেছি, আর্মি অফিসার রা এরকম মিশনে গিয়ে আর ফিরতে পারেননি। আপনজনের কতো হাহাকার, কষ্ট…
আমার ইচ্ছে করছে আ..আমি আমি শরীফ ভাইয়া কে জাপটে ধরে বলি আমি আপনাকে বিয়ে করবো, আপনি আমাকে একা রেখে যাবেন না….. আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না…..
#অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম
#পর্ব–০৯
#লেখিকা—ইসরাত বিনতে ইসহাক
আমার ইচ্ছে করছে আ..আমি আমি শরীফ ভাইয়া কে জাপটে ধরে বলি আমি আপনাকে বিয়ে করবো, আপনি আমাকে একা রেখে যাবেন না….. আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না…..
যোহরের আজান হতেই, দীর্ঘ সময় নিয়ে শাওয়ার নিলাম। শাওয়ার নিয়ে এসে নামাজ টা পড়ে,ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় তাকাতেই দেখলাম চোখ গুলো খুব ফুলে গিয়েছে। বুঝলাম দীর্ঘক্ষণ কান্না করার ফলে এই অবস্থা হয়েছে।
এগুলো আর না ভেবে রুম থেকে বের হলাম। দেখলাম আন্টি সেই আগের অবস্থানেই আছেন। এখন আর সাউন্ড করে কান্না করতে পারছেনা, তাই চোখের পানি গুলো গড়িয়ে পড়ছে।
আমি পাশে বসে শান্তনা দিয়ে বললাম, আন্টি এভাবে কান্না করলে তোমার শরীল খারাপ করবে। শুধু শুধু এভাবে কান্না না করে নামাজের মোনাজাতে আল্লাহ তা’আলা কে বলো, তোমার দোয়া আল্লাহ্ পাক ঠিক কবুল করবেন। কারণ তুমি যে “মা”।
মায়ের দোয়া যে কখনো বিফলে যায় না।
আন্টি বললেন, শরীফা আমি কেমন মা বল তো?যে নিজের ছেলের মনের কথা বুঝতে পারলাম না।
আমি ঐ দিন রাতে তোর আর বাবাইর কিছু কথা শুনতে পেয়েছিলাম। তুই কেন বাবাইর কথা শুনলি না শরীফা??
আর তোকেই বা কি বলবো? তুই তো আমাদের কথা ভেবেই,শুনিস নি বাবাইর কথা।
যা হওয়ার তা হবেই আন্টি। তুমি শুধু দোয়া করো, আল্লাহ তা’আলা যেন শরীফ ভাইয়া কে শহি সালামতে ফিরিয়ে আনেন।
অনেক বুঝানোর পর আন্টি গেল শাওয়ার নিতে। এদিকে আমি সব খাবার ডাইনিং টেবিলে রাখছি, কারণ আংকেল মসজিদ থেকে এসে খাবার খাবেন। সাইফ ও খাবে, সাইফ টা ছোট বলে কিছু বুঝতেই পারছে না। কেন সবাই এভাবে কান্নাকাটি করছে, শুধু ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকে।ক্লাস থ্রি তে পড়া ছেলে কতটুকুই বা তার জ্ঞান….
খাবার টেবিলে ঠিক করে বসে রইলাম তখন আংকেল আর সাইফ আসে। আংকেল খুব ভেঙে পড়েছেন, আদরের বড় ছেলে বলে কথা। বাবা মায়ের কাছে সব সন্তান রাই আদরের কিন্তু বড় সন্তানের প্রতি মায়াটা একটু বেশিই থাকে।
খাবার বেরে দিলাম দু’জন কে, আংকেল কোনরকম অল্প খেয়েই উঠে গেলেন।
আন্টি কে খাবার খেতে ডাকতে গিয়ে দেখি,জায়নামাজে বসে কান্না করছে। আন্টির কান্না দেখে আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না, আমিও কেঁদে দিলাম।
অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম কারণ আমি ও যদি এরকম করি তাহলে ওদের সামলাবে কে?
আন্টি কে খাবার কথা বলতেই বললেন খাবেন না।তা তো হতে দেওয়া যায় না তাই প্লেটে করে খাবার নিয়ে এসে, আমার হাতেই ভাত মেখে আন্টির সামনে তুলে ধরলাম।তাও খাবে না বলছে, অনেক বুঝিয়ে কিছু খাবার খাওয়াতে পারলাম।
খাওয়ানো শেষে টেবিল থেকে সব খাবার গুছিয়ে রেখে দিলাম। আমার কিছুতেই খেতে ইচ্ছে করছে না। তাই সব গুছিয়ে রুমে চলে এলাম।
খুব অশান্তি লাগছে, কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না।
রাতের বেলাও না খেয়েই কাটিয়ে দিলাম। শুধু পানি খেয়ে রইলাম।
ঘুমানোর অনেক ট্রাই করছি কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না।এপাশ ওপাশ করেই চলেছি। ঘুম না আসলে কতটা যন্ত্রনা হয়, এটা শুধু তারাই বুঝবে যাদের রাত নির্ঘুম কাটে।
আর না পেরে উঠে গেলাম, রুমের লাইট জ্বালিয়ে দেখলাম ঘড়িতে তিন টা বাজে। বাথরুম থেকে অজু করে এসে তাহাজ্জুদ পড়া শুরু করলাম। শুনেছি তাহাজ্জুদ নামাজ এর সময় শয়ং আল্লাহ তা’আলা প্রথম আসমানে এসে বলেন_ কে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিবে।যা চাইবে তাই দিব। “সুবহান আল্লাহ”।
মোনাজাতে কেঁদে কেঁদে আল্লাহ তা’আলার কাছে, শরীফ ভাইয়ার জন্য দোয়া করলাম এবং সবার জন্যও করলাম।
ফজরের আজান হতে, নামাজ পড়ে তারপর জায়নামাজ থেকে উঠলাম।
__________
এখন সকাল ছয়টা বাজে হয়তো শরীফ ভাইয়া প্লেনে উঠে গেছেন।
আন্টির রুমে গিয়ে দেখলাম আন্টি জায়নামাজে বসে আছেন। আমি গিয়ে সবার জন্য নাস্তা তৈরি করা শুরু করলাম। আমি রুটি তৈরি করার ময়দা কাই করতে পারিনা কখনো চেষ্টা করেও দেখিনি, কিন্তু আজকে চেষ্টা করে পারলাম।
সবার জন্য,পরটা বানাচ্ছি। গতকাল থেকে কিছু খাইনি বলে মাথা কেমন ঝিমঝিম করছে।তাও কষ্ট করে পরটা বেলে নিলাম। নতুন বানাচ্ছি বলে বানাতে বানাতে আটটা বেজে গেল। সবাইকে ডেকে আনলাম, আন্টি কে জোর করে খেতে আনলাম।
আমি এবার না পেরে একটা পরটা খেয়ে নিলাম।
এভাবেই খেয়ে না খেয়ে চলছে সবার।
মরিয়ম আপু কল করে অনেক কান্নাকাটি করলেন এবং শরীফ ভাইয়ার ছোট বোন
মেহের আফরোজ আপুও মরিয়ম আপুর থেকে শুনে কল করে আংকেলের সাথে খুব কান্নাকাটি করলেন।আর বার বার বলছিল শরীফ ভাইয়ার সাথে এবার দেখা করতে পারলো না। মেহের আপুর অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল এক্সাম চলছে তাই বাসায় আসতে পারেননি।
দু’দিন পর….
সাইফ আর আংকেল বসে টিভি তে সংবাদ দেখছে। আমি আন্টি কে রান্নার কাজে সাহায্য করছি। এখন আর আন্টি কিছু বলেনা কাজ করলে। ইনফেক্ট কিছুই বলেনা, দিনে পাঁচটা কথাও ভালো করে বলেনা।সব সময় মনমরা হয়ে থাকেন। আংকেল তাও কিছু কিছু বলেন।
তরকারির জন্য আলু কাটছি তখন সাইফ এসে বলে “মা” “ভাবীমনি” দেখে যাও কেমন আগুন লেগে গেছে…
আমি আন্টি দু’জনেই গেলাম টিভির রুমে। আংকেল বললেন সাবিনা এবার মনে হয় সব শেষ হয়ে গেল গো সাবিনা,সব শেষ….
টিভি তে তাকিয়ে দেখলাম, মালয়েশিয়া থেকে সংবাদ প্রচার হচ্ছে।একটা বড় এড়িয়া জুরে আগুনে সব পুরে ছাই হয়ে যাচ্ছে।ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগেই অনেক দালান পুরে গিয়েছে। এখন যা বাকি সেগুলো ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিভানোর চেষ্টা করছে।
একজন সাংবাদিক ওখানকার অবস্থা সম্পর্কে বলছেন_
“The incident was on the spot, five army from Bangladesh and ten army from Among them ten people were killed and five were injured.The condition of five people is reported to be alarming.”
সাংবাদিকদের কথা শুনে আমার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল,দপ করে নিচে বসে পড়লাম। আন্টি আংকেলের আর্তনাদে পুরো এপার্টমেন টায় যেন হাহাকার ভয়ে গেল।
আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না যে শরীফ ভাইয়ার কিছু হতে পারে। আমি যেন পাথর হয়ে গেলাম। আমার বুক ফেটে যাচ্ছে কষ্টে কিন্তু কাঁদতে পারছিনা।
আচ্ছা ঐ পাঁচ জনের মধ্যে তো শরীফ ভাইয়া না ও থাকতে পারে তাই না।
না না শরীফ ভাইয়ার কিছু হতে পারে না। আমাকে রেখে ওনি এভাবে চলে যেতে পারেন না।
এই মিশনেই শরীফ ভাইয়ার যেতে হলো? যেখানে ওনি জানতেন ওনার প্রানের ঝুঁকি রয়েছে!! কেন করলেন ওনি এরকম কেন??
আমাকে কি একটু সুযোগ দেওয়া যেত না??
আমার কিছুতেই আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না। মরে গেলেই যেন আমি সব কষ্ট গুলো থেকে মুক্তি পাবো।
খবর পেয়ে মরিয়ম আপু এবং মেহের আপুও আসলেন। আংকেল অনেক চেষ্টা করেও জানতে পারেন নি, শরীফ ভাইয়ার কি অবস্থা।
শরীফ ভাইয়ার অফিসে কল করেছিলেন কিন্তু তারাও এখন পর্যন্ত জানতে পারেন নি,কারা কারা নিহত বা আহত হয়েছেন।
বেশ কিছুদিন চলে গেল,
মরিয়ম আপু আর মেহের আপু আন্টি আর আংকেল কে সামলে চলেছেন।
আমি খাওয়া দাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। জানি না আল্লাহ পাক আমাকে মাফ করবেন কিনা। কিন্তু আমি ঠিক করেছি খাবার না খেয়ে নিজেকে শেষ করে দিব।
কি হবে এই জীবন দিয়ে,যে নিজের বাবা কে নিজ চোখে খুন হতে দেখেছে।যে কিনা পরিবারের থেকে বিছিন্ন। আর এখন তো আর কি বলবো…..
তিনমাস অতিবাহিত হয়ে গেল শরীফ ভাইয়ার কোন খুঁজ নেই।সবাই ধরেই নিয়েছে শরীফ ভাইয়া আর নেই।
আমি ও মনে হচ্ছে দিন দিন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কিছুদিন যাবত খুব পেট ব্যথা হয়।ব্যাথা সহ্য করতে খুব কষ্ট হয়। কাউকে কিছু বলি না।কি ই বা বলবো? আন্টি আংকেল এবং বাসার সবাই কে দেখলেই মনে হয় সব কিছুর জন্য আমি ই দায়ি।
সত্যি বলতে আমি ই তো দায়ী। আমি যদি শরীফ ভাইয়া কে ফিরিয়ে না দিতাম তাহলে তো শরীফ ভাইয়া ওখানে যেতেন না আর এরকম ও হতো না।
ছোট ছাদে ফ্লুরে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম।যা এখন আমার রোজকার অভ্যাস। হঠাৎ পেটে তিব্র ব্যাথা অনুভব করছি।যা এতো দিনের ব্যাথা থেকে মনে হচ্ছে তিন গুণ বেশি।
কিছুতেই ব্যাথা সহ্য করতে পারছি না। সময় যাচ্ছে আর যেন ব্যাথা ভেরেই চলেছে।
ব্যাথা আর সহ্য করতে না পেরে নিচে ঢলে পরলাম। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।
_______
চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলাম, একটা অচেনা রুমে আমি। চারিদিকে ভালো করে লক্ষো করে বুঝতে পারলাম আমি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি। তখন একজন নার্স আসলেন আমাকে দেখে বললেন ম্যাম আপনার জ্ঞান ফিরেছে?
আজকে আট দিন পর আপনার জ্ঞান ফিরলো। আমি এক্ষুনি আপনার বাসার সবাই কে জানাচ্ছি।এই বলে ওনি চলে গেলেন।
“আমি উঠে বসলাম, বুঝতে পারলাম শরীল বেশ দুর্বল”।
কিছুক্ষণ পর, আন্টি, আংকেল, সাইফ, মরিয়ম আপু, মেহের আপু সবাই আসে। সবাইকে দেখে খুব অবাক হলাম, মানে সবাই এখানে আমার জন্য চলে এসেছে???
সবার ফেইসে হাসির রেখা স্পস্ট। বুঝতে পারছি না, আমার সুস্থতার জন্যই কি তাদের এই আনন্দ? নাকি অন্য কিছু??……
#চলবে….
#চলবে…
(আসসালামু আলাইকুম।
আমি দুঃখিত প্রতিদিন গল্প দিতে পারিনা বলে, সময় পাইনা লিখার তাই দিতে পারিনা।)