অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম পর্ব ১০+১১

#অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম
#পর্ব–১০
#লেখিকা—ইসরাত বিনতে ইসহাক

সবার ফেইসে হাসির রেখা স্পস্ট। বুঝতে পারছি না, আমার সুস্থতার জন্য‌ই কি তাদের এই আনন্দ? নাকি অন্য কিছু??……

আমি তাদের দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে দেই। তখন আন্টি আর আংকেল এসে বলে এই বোকা মেয়ে কাদছিস কেন? আমি এবার আন্টি কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম আন্টি আমি বাঁচতে চাই না, আমি বাঁচতে চাই না আন্টি।

আন্টি বলল দিব এক মাইর। এরকম কেউ বলে? আমাদের কথা একবারও ভাবলি না? না খেয়ে খেয়ে এভাবে নিজেকে কষ্ট দিলি। না খেয়ে তোর কি অবস্থা হলো।আর যদি এরকম পাগলামি করিস তো দেখবি আমি তোকে কিরকম বকে দেই।

তখন মেহের আপু এসে বললো “মা” এবার আমাকে একটু সাইট দাও তো। আমার তো ওর সাথে কথাই হলো না।

আন্টি আমার কাছ থেকে উঠে যেতেই মেহের আপু আমার সামনে বসলেন। বসে বললেন
শরীফা,,,উফস স্যরি ভাবীমনি।
ভাবীমনি কেমন আছো তুমি?

আমি মেহের আপুর কথা শুনে, অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। মেহের আপু অবস্থা বুঝে বললেন সাইফ তো তোমাকে ভাবীমনি ডাকে তাই না তো সে জন্য আমি ও ভাবীমনি বলেই ডাকবো।

তো এবার বলো, এখন কেমন লাগছে?
জ্বা,আপু আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন? আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

মরিয়ম আপু ও বললেন শরীফা তুমি একদম ঠিক করোনি এভাবে না খেয়ে থেকে?আরো কিছু সময় অতিবাহিত, হলে তো তোমার বড় কিছু হয়ে যেতে পারতো। সাইফ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে, এরকম ভাবে সবাই আমাকে এত্তো ভালবাসে। অথচ তাদের সাথে আমার আদৌও কোন রক্তের সম্পর্ক নেই।

ডক্টর এসে চ্যাক‌আব করে বললেন, আমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে। পরে সব কিছু ঠিক করে হসপিটাল থেকে বের হলাম।

মরিয়ম আপু আর মেহের আপু শপিং মলে যাবেন আমাকেও নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমি যাইনি। আমার এসব কিছুই এখন আর ভালো লাগে না। তাই আন্টি আংকেলের সাথে বাসায় চলে আসলাম।

বাসায় এসে দেখি কয়েক জন মিলে বাসা খুব নিখুঁতভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে ব্যাস্ত। আমি এসব আর না ভেবে রুমে চলে এলাম। রুমে এসে আবার শরীফ ভাইয়ার কথা খুব মনে পড়ছে। মনে পরতেই চোখের কোণ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে।

আন্টি এসে বললেন শাওয়ার নিয়ে নিতে। আন্টির কথা মতো শাওয়ার নিয়ে আসলাম। আন্টি কি করে দেখার জন্য আন্টির কাছে গেলাম, গিয়ে দেখি আন্টি অনেক আইটেম রান্না করতে ব্যাস্ত। এতো রান্না দেখে আন্টি কে জিজ্ঞাসা করলাম, আন্টি বাসায় কি কোন মেহমান আসবে? আন্টি বললেন অনেক টা মেহমান বলতে পারিস, তবে মেহমানের থেকেও বেশি।

আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না আন্টির কথা।

রান্না শেষ করে এসে, আন্টি নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিল। এবং কিছু মেডিসিন ছিল ঐ গুলো ও দিল।

বিকাল চারটার দিকে মরিয়ম আপু আর মেহের আপু শপিং করে বাসায় ফিরলেন। তাদের শপিং দেখে খুব অবাক হলাম। এতো এতো কিছু তারা একদিনে কেন কিনলো বুঝতে পারলাম না। একদম দুই ট্রলি, এছাড়াও কতো গুলো শপিং ব্যাগ তো আছেই। আমি আর লজ্জায় কিছু জিজ্ঞাসা ও করতে পারলাম না।

সবাইকে বেশ স্বাভাবিক লাগছে। মনে হয় যেন গত চার মাস আগে কিছুই হয়নি।

আমি বসে বসে এসব ভাবছি তখন কলিং বেল বেজে উঠল। কাউকে দেখতে না পেয়ে আমি ই গেলাম দরজা খুলার জন্য।

দরজা খুলে ভুত দেখার মত চমকে গেলাম। সামনে শরীফ ভাইয়া। অবশ্য গত চার মাস যাবত আমি এরকম ই দেখে আসছি। প্রায়ই মনে হয় শরীফ ভাইয়া এসেছেন। এবার ও আমার কল্পনা মনে করে, আমি ভিতরে চলে আসি।

তখন কেউ শরীফা বলে ডাক দেয়। আমি আবার ঘুরে তাকাই, এবার ও শরীফ ভাইয়া কে দেখছি। তখন আন্টি এসে বলে বাবাই!!

আন্টি আবার বলেন ক‌ই গো দেখে যাও বাবাই চলে এসেছে। মরিয়ম,মেহের,সাইফ তোরা ক‌ই??

আন্টির কথা তে বুঝতে পারলাম আমি স্বপ্ন বা কল্পনা করছি না। মানুষ টা সত্যিই আমার সামনে। আমার যেন বিশ্বাস ই হচ্ছে না।

“আমার অবচেতন মন বুঝতে পেরেই, শরীফ ভাইয়া কে জাপটে ধরলাম”।

জাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম। ততক্ষণে বাসার সবাই উপস্থিত হয়েছে। আমার সেদিকে কোন খেয়াল নেই।

শরীফ ভাইয়া, থতমত খেয়ে গেলেন আমার এহেন কান্ড দেখে।সবাই উপস্থিত আছে বলে সবার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে সবাই যখন মুচকি হাসলো তখন শরীফ ভাইয়া আমাকে আলতো করে জড়িয়ে নিলেন।

আর বললেন এই পিচ্চি এভাবে কাঁদছ কেন? একদম কাঁদে না। এটা বলেই আমাকে ছাড়াতে নিলেন কিন্তু আমি কিছুতেই ছাড়বো না। আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম, এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই উনি পালিয়ে যাবেন।

ছাড়ছি না বলে শরীফ ভাইয়া আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন, তোমাকে এমনি এমনি আমি পিচ্ছি বলি বলো?সবাই দেখছে আর তুমি কিনা এভাবে….

এরপরেও যদি তুমি এভাবে থাকতে চাও তো থাকো আমার কিন্তু কোন প্রবলেম নেই। আমি তো চাই সারাজীবন তোমাকে এভাবে জড়িয়ে রাখি।

শরীফ ভাইয়ার এরকম কথায় আমি লজ্জায় উনাকে ছেড়ে দিলাম। ছেড়ে দূরে এসে দাঁড়ালাম।

আন্টি তখন শরীফ ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন। শরীফ ভাইয়া বললেন”মা” দেখ আমি একদম ফিট আছি। কাঁদে না প্লিজ…

আন্টি বললেন তুই কেন এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলি বাবাই?? তুই যদি ওখানে যেতি তাহলে কি হতো আমাদের বল??

মা তোমাদের সকলের দোয়া আছে বলেই তো আমি ওখানে যেতে পারিনি। যাওয়া ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছিল।

শরীফ ভাইয়ার কথায় বুঝতে পারলাম শরীফ ভাইয়া মালয়েশিয়া যাননি।আর এদিকে আমরা কি না কি ভেবে বসে ছিলাম।

তারপর আংকেল এবং আপু তারা শরীফ ভাইয়া কে জড়িয়ে নেয়, শরীফ ভাইয়া তাদের পরম আবেশে জড়িয়ে নেয়।

________

শরীফ ভাইয়া শাওয়ার নিয়ে আসতেই সকলে মিলে খাবার খেয়ে নেয়। আমাকে সবাই আবার তাদের সাথে খেতে বলে কিন্তু আমি খাইনি।আমনিতেই একবার খেয়েছি তাই আমার একটু ও খিদে নেই।

এখন বুঝতে পারলাম আন্টির সেই মেহমানের থেকেও বেশি মানুষ টা আসলে শরীফ ভাইয়া ছিল।

সন্ধ্যাবেলা সবাই একসাথে বসে নাস্তা করছি আর সবাই বিভিন্ন কথা বার্তা বলছে‌। তখন আংকেল বললেন শরীফা তোমার বাসার ফোন নাম্বার টা দাও তো মানে তোমার মা কে যেন পাওয়া যায়, এরকম নাম্বার।

আংকেল এর কথা শুনে অবাক হলাম। আংকেল কেন হঠাৎ ফোন নাম্বার চাইছে??

তারপর মেজ আপুর ফোন নাম্বারটা দিলাম কারণ আম্মু তো মেজ আপুর বাসায় আছে।
আংকেল আমার কাছ থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে কল করলেন। দ্বিতীয় বার রিসিভ হলো, আংকেল আমার কথা বলে পরিচয় দিলেন আপুকে।আপু মনে হয় বড় আপুর কাছ থেকে শুনেছে, তাই আংকেল কথায় সহজেই চিনতে পারলো। আংকেল আম্মুর সাথে কথা বলতে চাইলেন পরে আম্মু কে আপু ডেকে দিলেন।

ওপাশে আম্মুর কথা শুনতে পারছি না, কিন্তু আংকেল আম্মুর সাথে কুশল বিনিময় করেন এরপর আংকেলের কথা শুনে আমি হা হয়ে গেলাম।
আংকেল আমার আর শরীফ ভাইয়ার বিয়ের কথা বলছেন!!

আংকেল এর কথায় বুঝতে পারলাম আম্মু সম্মতি দিয়ে দিয়েছেন বিয়েতে। কারণ আংকেল বলছেন আগামী পরশু দিন বিয়ের কাজটা সম্পুর্ন করতে চাই। আপনারা সবাই আসলে খুব খুশি হবো?

তারপর ই আংকেল মন খারাপ করে বললেন, আমরা জানি আপনাদের পরিস্থিতি। আচ্ছা তাহলে জোর করছি না আসার জন্য। আপনি ওদের জন্য নতুন জীবনের জন্য দোয়া রাইখেন।

আংকেল কথা বলে আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিলেন। এতো মাস পর আম্মুর কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম। কথা বলতে বলতে কেঁদেই দিলাম। আম্মু আমাকে অনেক কিছু বুঝালেন।
মেজ আপুর সাথে ও কথা বললাম এবং আমার একমাত্র ভাইটি যার সাথে আমার খুনসুটি ঝগড়া লেগেই থাকতো ও আমার সাথে কথা বলতে বলতে কেঁদে দিল। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ওদের সবাইকে কিন্তু সে ভাগ্য তো আমার নেই।

কথা শেষ হতেই আন্টি আমাকে বললেন, শরীফা তোর অনুমতি না নিয়েই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। তোর মতামত কি বল তো? আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে রইলাম।কিছু বলতে পারছি না। তখন মেহের আপু বললেন নিরবতা সম্মতির লক্ষণ। আপুর কথা শুনে সবাই হেসে উঠল।

রাতে সবাই খাবার খেয়ে যারযার রুমে চলে গেল। আমার ভালো লাগছে না বলে, ছোট ছাদে গেলাম। গিয়ে দেখি শরীফ ভাইয়া ওখানে দোলনায় বসে আছেন। আমি যেতেই উনি বুঝতে পারলেন, তাই বললেন শরীফা এখানে এসে বসো।

আমি উনার কথা মতো একটু দূরত্ব নিয়ে বসলাম। শরীফ ভাইয়া বললেন এতো দূরে বসেছো কেন? আমি লজ্জায় কিছু বললাম না। পরে শরীফ ভাইয়া নিজেই এগিয়ে এসে আমার কাছাকাছি বসলেন।

তো ম্যাডাম নিজের এই অবস্থা কেন করেছেন? আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে আপনাকে কেউ প্রেমে ছ্যেকা দিয়েছে বা আপনার স্বামী মারা গিয়েছে। আমি বুঝতে পারলাম উনি আমাকে টিপ্পনী কেটে কথা গুলো বলছেন। তাই আমি এ ব্যাপারে কিছু বললাম না।

আপনি ঐদিন এভাবে চলে গেলেন কেন?
আর একটিবার কল করলেন না আবার কল রিসিভ ও করলেন না। সবার কি অবস্থা হয়েছিল জানেন আপনার টেনশানে?

সবার কি হয়েছে জানিনা, তবে আমার পিচ্চি টার অবস্থা তো করুন!! তো পিচ্চি কি আমাকে ভালবাসে??

আমি কিছু বলতে না পেরে, উনার কাঁধে মাথা রাখলাম।

শরীফ ভাইয়া আবারও বললেন, তবে তুমি কিন্তু ঠিক করোনি এভাবে নিজেকে কষ্ট দিয়ে। মায়ের সাথে যখন কথা হলো, তখন তোমার কথা বললো। তোমাকে হসপিটালে এডমিট করা হয়েছে, অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। তখন আমার কি অবস্থা হয়েছিল জানো?? সাথে সাথে ছুটি কেটে চলে এলাম।

আমি শরীফ ভাইয়ার কথা শুনতে শুনতে উনার কাঁধেই ঘুমিয়ে গেলাম। সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গতেই দেখলাম আমার রুমে শুয়ে আছি। বুঝতে পারলাম শরীফ ভাইয়া আমাকে রুমে নিয়ে এসেছেন। আচ্ছা উনি কি আমাকে কোলে করে নিয়ে এসেছিলেন?? না হলে তো সম্ভব নয়। এটা ভাবতেই লজ্জায় আমি শেষ…..
#অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম
#পর্ব–১১
#লেখিকা—ইসরাত বিনতে ইসহাক

আচ্ছা উনি কি আমাকে কোলে করে নিয়ে এসেছিলেন?? না হলে তো সম্ভব নয়। এটা ভাবতেই লজ্জায় আমি শেষ…..

এসব ভাবছি তখন মেহের আপু আসেন। মেহের আপু এসে বললেন ভাবীমনি তারাতাড়ি ফ্রেস হয়ে আসো, নাস্তা করে নিবে। আজকে তো তোমাদের গায়ে হলুদ তাই কিছুক্ষণ পর মেহমান আসতে শুরু করবে।

জ্বি আপু আমি এক্ষুনি আসছি।আপু চলে যেতেই আমি বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসলাম। এখন ভাবছি শরীফ ভাইয়ার মুখোমুখি কিভাবে হবো! আমি তো লজ্জায় মরেই যাবো। তাই রুম থেকে বের হচ্ছি না। এবার আন্টি ডেকে গেলেন, তাই ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও রুম থেকে বের হলাম।

ডাইনিং এ গিয়ে দেখি সবাই বসে আছে, আমি যেতেই আংকেল বললো শরীফা তোমার জন্য‌ই অপেক্ষা করছি,বসো। আমি বললাম জ্বি আংকেল।

শরীফ ভাইয়ার জন্য সবজি আর রুটি তৈরি করা হয়েছে। কারণ ওনার ফিট থাকতে হবে, আর্মি বলে কথা।আর আমাদের জন্য পাস্তা,নুডুলস তৈরি করা হয়েছে। আমার পাস্তা খুব ভালো লাগে কিন্তু নুডুলস না। অতঃপর সবার ব্রেকফাস্ট শেষ হলো। খাবার টেবিলে শরীফ ভাইয়া চুপচাপ খেয়ে নিলেন কিছু বললেন না, আমিও বেঁচে গেলাম।

রুমে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম।

বেড একটু অগোছালো বলে ঠিক করেছি, তখন দরজার লাগানোর সাউন্ড শুনতে পেলাম। পেছনে ঘুরে দেখলাম শরীফ ভাইয়া রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়েছেন, আমি উনাকে দেখে, চোখ বের হয়ে যাবার উপক্রম।

আ, আপনি এখানে?
হুম, কেন আসতে পারি না?সবাই দেখলে কি ভাববে?আই ডোন্ট কেয়ার। কি বলছেন?প্লিজ আপনি এখান থেকে যান,,,,
যাবো একটা সর্তে।কি?
গতকাল রাতে আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলে। সেই প্রশ্নের জবাব এখন দিবে। আমার মনে পড়ছে না উনার কোন প্রশ্নের জবাব দেইনি। তাই জিজ্ঞাসা করলাম কোন প্রশ্ন?

উনি দুষ্টু হাসি দিয়ে বললেন,ঐ যে তোমার অসুস্থতার কারণ?? কেন নিজেকে এভাবে কষ্ট দিলে?ভালোবাসো আমায়?

উনার এহেন প্রশ্ন শুনে আমি থতমত খেয়ে গেলাম। এখন কি বলি? হ্যা ও বলতে পারবো না আবার না ও বলতে পারবো না।
প্লিজ আপনি এখান থেকে চলে যান, কেউ এসে পরতে পারে। আমি ঘুরে কথা গুলো বললাম।তারপরেই শরীফ ভাইয়া এসে আমার কাঁধে ওনার থুতনি রাখলেন। উনার স্পর্শে আমি কেঁপে উঠলাম, আমি সরে আসতে নিলেই শরীফ ভাইয়া বললেন সামনে তাকাও। সামনে তাকিয়ে দেখি ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় আমাদের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে।

উনি বললেন আজকের দিনটা শুধু, তারপর তুমি শুধু আমার। উনার এরকম কথা শুনে আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলাম। উনি আবার বললেন,ঐদিন রাগ করে চলে গিয়েছিলাম বলেই আজকে আমাদের এই দিন আসলো। হয়তো তোমার বা বাবা-মা সকলের কষ্ট হয়েছে, কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি তোমাদের আর কখনো কষ্ট পেতে দিব না।

আমি এবার বললাম প্লিজ আপনি এবার যান। উনি বললেন আমার প্রশ্নের জবাব তো পেলাম না? আমি চুপ করে রইলাম তখন উনি বললেন আচ্ছা ঠিক এখন আর প্রেসার দিচ্ছি না। তোমার যখন ইচ্ছে হবে তখন বলবে।এই বলে উনি আমার কাঁধে হালকা করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলেন। আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম আমার মনে হচ্ছে পুরো জমে বরফ হয়ে গেছি।

প্রায় দশ মিনিট এভাবেই দারিয়ে র‌ইলাম। পরে দেখি উনার কোন সাড়াশব্দ নেই তাই ঘুরে তাকিয়ে দেখি উনি আগেই চলে গেছেন।

আচ্ছা আমি বারবার উনি উনি বলছি!ক‌ই একবার তো শরীফ ভাইয়া বলছি না? তাহলে কি উনার কথাই ঠিক হলো,,,, উনি তো বলেছিলেন আমি নিজেই নাকি উনাকে আর ভাইয়া বলে ডাকবো না। কিন্তু নাম নিয়ে কিভাবে ডাকবো? উনি আমার থেকে যে কতো বড়।

________

বাসায় আন্টিদের কিছু আত্মিয় এসেছে,যারা খুবই কাছের মানে বেশিই আপন এবং তাদের বিয়েতে ইনভাইট না করলেই নয় তাদেরকে বলা হয়েছে। তাদের মধ্যেই কয়েক জন এসেছেন আর বাকি জন শুনেছি আগামীকাল আসবেন।
বিয়ের অনুষ্ঠান ততো জাঁকজমকপূর্ণ করা হবে না, এটা আংকেলের ইচ্ছে।

আংকেল বলেছেন যে বিয়েতে খরচ কম হয় সে বিয়েতে আল্লাহ তা’আলার রহমত বেশি থাকে আর সবচেয়ে বেশি ভালো হয় যদি বিয়েটা মসজিদে হয়। তাই ছোট ভাবেই করা।

বিকেল হতেই মেহের আপু আর মরিয়ম আপু দু’জনে মিলে সেই কখন থেকে সাজানো শুরু করেছেন কি বলবো,,, আমার এতো সাজগোজ কখনোই ভালো লাগে না, কিন্তু তাদের তো আর কিছু বলতে পারছি না।
আমাকে হলুদ শাড়ি এবং কাঁচা ফুলের গহনা একে একে পরালেন। আপুদের কাছে শুনেছি উনার ইচ্ছেতেই নাকি কাঁচা ফুল আনা হয়েছে আমাকে সাজানোর জন্য।

আজকে আমাকে এতো সাজানো হচ্ছে না জানি আগামীকাল কিভাবে সাজায়!

আমি এসব ভাবতে ভাবতেই তাদের সাজানো শেষ হয়। তারপর আয়নার সামনে দাড় করিয়ে আপুরা বললো শরীফা দেখো তো কেমন হয়েছে। আমি আয়নায় তাকিয়ে নিজেকেই যেন চিনতে পারছিনা। কখনোই এরকম সাজানো হয়নি নিজেকে।

মেহের আপু বললেন ভাইয়া তো তোমাকে দেখলে চোখ সরাতেই পারবে না। আমি লজ্জা রাঙ্গা হয়ে গেলাম আপুর কথা শুনে।

অতঃপর আমাকে বড় ছাদে নিয়ে গেলেন আপুরা।ছাদ টা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে যদিও নরমাল, কিন্তু সুন্দর লাগছে।

আর উনি আমার আগেই এসে বসে আছেন। আমি তাকাতেই চোখে চোখ পরে গেল। উনি হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছেন। আমাকে উনার পাশেই বসানো হলো। আশেপাশে এতো মানুষ দেখে বুঝলাম আন্টি দের ভাড়াটে প্রতিবেশী আন্টিরা এসেছেন।

মেহের আপু আমাকে খুব সুন্দর করে হাতে মেহেদি দিয়ে দিচ্ছেন আর উনাকে দিয়ে দিচ্ছেন মরিয়ম আপু।এক পর্যায়ে উনি আমাকে বললেন শরীফা তোমাকে আজকে এতো সুন্দর লাগছে না জানি আগামীকাল কতো সুন্দর লাগে। আমি উনার কথা শুনে লজ্জায় শেষ কিসব বলেন উনি,যদি আপুরা শুনতে পায়,,,,
তখনি মরিয়ম আপু বললেন ভাই তুই তো এখনি শরীফার থেকে চোখ সরাতে পারছিস না, আগামীকাল তোর কি অবস্থা হবে কে জানে। এই বলে মরিয়ম আপু হেসে দিলেন সাথে মেহের আপু ও ।

মেহেদী দেওয়া শেষ হতে হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম এস অক্ষর দিয়ে খুব সুন্দর করে ডিজাইন করেছেন আপু। আসলেই অনেক সুন্দর হয়েছে। এখন আমার উনার হাতের মেহেদী ডিজাইন দেখতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু আপুরা আছে বলে ইচ্ছে টাকে দমিয়ে রাখতে হলো।

গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হলো রাত দশটার দিকে। আমি নিচে এসে শাওয়ার নিয়ে নিলাম, তারপর রাতের ডিনার করে রুমে এসে আর ভালো লাগছে না, খুব ঘুম পাচ্ছে তাই ঘুমিয়ে পড়লাম।

টেবিল ঘড়ির এলার্ম এর সাউন্ডে ঘুম ভাঙ্গল। নামাজ পড়ার জন্য এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম। তাই উঠে ফ্রেস হয়ে অজু করে নামাজ আদায় করে নিলাম।একটা জিনিস খুব ভালো লাগে উনি এখন নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। উনি এসেছেন যাবত আমি প্রত্যেক নামাজের ওয়াক্তে খেয়াল করে দেখেছি, হয়তো বাসায় পড়ে নেন না হয় মসজিদে যান আংকেলের সাথে।

আল্লাহ তা’আলার কাছে আমার এই আর্জি আল্লাহ তা’আলা যেন শরীফা গল্পের ফারুক এর মতো ধার্মিক মানুষ হিসেবে উনাকে কবুল করে নেন আমিন।

বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না তাই আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘুম ভাঙ্গল দশটার দিকে, এতো সময় ঘুমিয়ে ছিলাম,কেউ ডাকলো না।ফ্রেস হয়ে আসলাম, কিন্তু রুম থেকে বের হতে লজ্জা লাগছে। মরিয়ম আপু এসে বললো শরীফা তুমি উঠেছো?চলো নাস্তা করে নিবে। আমি বলতে পারছি না কিছু।

আপু আসলে আমি…
মরিয়ম আপু বললেন আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমার খাবার টা এখানে নিয়ে আসছি।এই বলে আপু কিছুক্ষণ পরেই, দু’রকম পিঠা সেমাই নিয়ে আসলেন। আমি অবাক হয়ে বললাম আপু পিঠা তৈরি করেছে কে? আমি আর ফুফি মিলে করেছি। ওহহ আচ্ছা। হুম, তুমি এবার খেয়ে নাও আমি যাই অনেক কাজ বাকি আছে।

আপু যেতেই আল্প করে খেয়ে নিলাম।

বেলকনিতে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আব্বু-আম্মু,আপুরা সবার কথা খুব মনে পড়ছে।
তখন আন্টির ডাক শুনতে পেলাম। তাই রুমে আসলাম,আন্টি বললেন শরীফা তোর আম্মু কল করেছেন। এটা শুনতেই আনন্দে আমার মন ছুঁয়ে গেল। তারপর আম্মু আপু ভাই সবার সাথে কথা বলে নিলাম, আমি কান্না করছি সাথে আম্মু ও কান্না করে দেয়। তারপর আমাকে অনেক বুঝালো। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এই সময় টাতেও আমি আমার পরিবারের কাছে থাকতে পারলাম না,হায় আফসোস।

__________

বিয়ের সময় উপস্থিত হলো। আমাকে লাল বেনারসী শাড়ি সাথে অনেক গহনা দিয়ে সাজানো হয়েছে। আজকে আর আপুরা সাজায়নি, আজকে পার্লার থেকে একটা মেয়ে আনা হয়েছে। আমি বলেছিলাম হালকা সাজ দিতে কিন্তু আপুরা বললো বিয়েতে গর্জিয়াস সাজ হলে ভালো লাগে না তাই তাদের ইচ্ছে মতোই সাজানো হলো আমাকে।

আপুরা ও শাড়ি পরেছে। খুব সুন্দর লাগছে, ইনফেক্ট বাসায় সবাই কেই খুব সুন্দর লাগছে।

অতঃপর বিয়ে সম্পুর্ন হলো, কবুল বলার সময় আমার বুক ফেটে কান্না আসছিল, কিছুতেই কবুল বলতে পারছিলাম না। আন্টি আমার পাশে এসে বসে অনেক বুঝালেন। বললেন তোর এক মা তোর পাশে নেই তো কি হয়েছে আমি তো আজকে থেকে তোর মা। আন্টির কথায় কিছুটা কষ্ট লাঘব হয়, তারপর বলি কবুল।

সবাই বলছে শ্বশুর শাশুড়িকে সালাম করো পরে আমি আন্টিকে সালাম করতেই আন্টি বললেন,,,
আজ আমার ঘরটা আলোকিত হয়ে উঠলো তোকে ব‌উ হিসেবে পেয়ে।

বাসার অতিথিরা সবাই নতুন বউ দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
কিন্তু আমার খুব দুর্বল লাগছে তাই আর বসে থাকতে পারছিনা।
সেই যে সাজানোর পর থেকে বসিয়ে রেখেছে তো রেখেছে। এই মুহূর্তে একটু একা থাকা দরকার।
আর মাগরিব আর ইশার নামাজ গুলোও পড়া হয়নি। কিন্তু নতুন বউ কাকে কি বলবো?

আর বললে কিনা কি বলে বসে? কিন্তু এ মুহুর্তে একটু রেস্ট দরকার।

শরীফ কি যেন একটা দরকারে মায়ের রুমে আসছিলো আমাকে এখনো চেয়ারে বসা দেখেই রুমের বাহিরে গিয়ে ওর ছোট বোনকে ডেকে বললো,,, মেহের তুই কিরে? একটু বিবেক বুদ্ধি ও নাই নাকি তোর?
-মেহের অনেকটা বিরক্তি নিয়ে উফ ভাইয়া!!! কি করেছি কি আমি? এমনিতে প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে কি বলবি বল?
-তোর ক্লান্ত লাগছে তাইনা!!! শরীফা কে সেই যে দুপুর থেকে বসিয়ে রেখেছিস সেদিকে কোন খেয়াল আছে তোদের?
-বাব্বাহ!!! কেয়া বাত হে ভাইয়া? ব‌উ হতে না হতেই এত্ত ভালোবাসা…

#চলবে……

#চলবে…

(আসসালামু আলাইকুম।
আমি দুঃখিত প্রতিদিন গল্প দিতে পারিনা বলে, একদম সময় পাইনা।আর আজকে কিন্তু সবার কাছ থেকে মন্তব্য চাই-ই চাই। না হলে পরের বার আরো লেইট হবে গল্প দিতে 😁)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here