#অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম
#পর্ব-১৪
#লেখিকা–ইসরাত বিনতে ইসহাক
আমি ঘুম থেকে উঠে পাশ ফিরে দেখি শরীফ খাটে নেই।তার মানে উনি আরো আগে উঠেছে।
আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দুপুর সাড়ে বারটা বাজে।
আমি এতক্ষন ঘুমালাম!!ইয়া আল্লাহ সবাই কি ভাববে? বাড়ির নতুন বউ এতক্ষণ ঘুমিয়েছে?
আমি না!উফফ, এতো ঘুম কাতুরে হলে চলে? দূর…
উনি ও তো আমাকে জাগিয়ে দিতে পারতো? এসব ভাবনার মাঝে ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ হলো।
আমি ওদিকে তাকিয়ে দেখি উনি বেরুচ্ছে।
-উনি আমার দিকে লক্ষ্য করে বললেন, উঠে গেছো? আমি বললাম, আপনি আমাকে আরো আগে ডেকে দেননি কেন?
-আরে বাবা আমিও তো মাত্র উঠলাম তোমাকে কখন উঠাবো।
-কি? এখন সবাই কি বলবে বলেন তো?
-উনি মুখ মুছতে মুছতে বললেন,, কি আর বলবে? এরকম সবারই হয়। আমরা নব দম্পতী সবাই বুঝে নিবে।আর তাছাড়া আজ রাতের ঘুমটা ও আমরা ঘুমিয়ে নিয়েছি একসাথে তাইনা ?
আমি একটু জোরে বললাম, কি??? উনি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললেন, কই কি? কিছু হলে তো সবাই জানবে তাইনা?
-উফ!! আপনি না!!কি আমি?
– কিছুনা।আরে বলো বলো???
-আপনি একটা অসভ্য লোক।
-উনি আমার দিকে আগাতে আগাতে বললেন, অসভ্যতামির কিছু তো এখনো করিনি। একটু অসভ্যতামি দেখাবো?
আমি খাটের অন্যপাশে সরে গিয়ে বললাম, এই একদম কাছে আসবেন না।কেন কাছে আসলে কি হবে?প্লিজ না এখন কিছু করবেন না।
উনি কাছে আসার আগেই আমি দৌঁড়ে ওয়াশরুমে ডুকে গেলাম। আমাকে এভাবে পালাতে দেখে উনি শব্দ করে হেসে উঠলেন।
বিকালের দিকে মেহের আপু একটা শাড়ি এনে আমাকে বললেন, ভাবীমনি মা এটা তোমাকে রাতে পরতে বলেছে?
আমি শাড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সবুজ রংয়ের উপর গোল্ডেন কালারের সুতার কারুকাজ করা একটা বেনারসী ।
সবুজ আমার পছন্দের কালার, তাই বেনারসীটা অসম্ভব সুন্দর লাগছে। সাথে গোল্ডেন কালারের ফুল হাতার কলার দেওয়া একটা ব্লাউজ। তার সাথে সবুজ আর গোল্ডেন কালারের পাথরের গোল্ড প্লেটের একসেট গয়না।
মেহের আপু বললেন,ভাবীমনি শাড়িটা আমি চয়েজ করে কিনেছি। তোমাকে দেখে ধারনা করেছি এটাতে তোমাকে বেশ মানাবে।
কিন্তু আপু আমি তো শাড়ী….
সমস্যা নেই আমি শিখিয়ে দিবো। আর আজ আমি তোমাকে সাজিয়ে দিবো।
সন্ধ্যার দিকে অতিথিতে পুরো বাড়ি ভরে গিয়েছে। আমাকে মেহের আপু শাড়ী পরিয়ে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়ে দিয়েছি।
মেহের আপু সাজানো শেষ করে বললেন,, মাশাআল্লাহ্। কি সুন্দর লাগছে ভাবীমনি তোমাকে। আমার ধারনার থেকে ও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে তোমাকে। ইশ!নজর না লেগে যায়!
আজ তো ভাইয়া তোমার থেকে চোখ ফিরাতে পারবেনা। একেবারে ফিদা হয়ে যাবে। আমি ছেলে হলে কিন্তু তোমাকে জোর করে হলেও বিয়ে করে নিতাম বুঝলে বলে আমার দিকে একটা উড়ো কিস ছুড়ে মারলো।
আমি বললাম,আপু!!কি করছো?? আর এভাবে বলছো কেন? লজ্জা লাগছে তো!!
আচ্ছা ভাবীমনি তুমি এতো লজ্জা কই পাও বলোতো?? কাল রাতে যখন ভাইয়ার সাথে ছিলে তখন তোমার এতো লজ্জা কই ছিলো।
-আমি দুহাতে মুখটা ঢেকে বললাম,আপু প্লিজ! মেহের আপু বললেন আমরা বললে তো যত লজ্জা এসে ভর করে। থাক আর কিছু বলছিনা তুমি এখানে বসো আমি একটু আসছি। আমি আয়নায় নিজেকে দেখছি এ যেন অন্য এক শরীফা, মনে হচ্ছে। নিজেকে নিজেই চিনতে পারছিনা।
এদিকে শরীফ বেচারা সেই দুপুরের পর থেকে বউটাকে খুঁজে পাচ্ছেনা।
মহিলাদের মাঝে বসিয়ে রেখেছে শরীফা কে। মেয়েদের ভিড়ের ভিতর দিয়ে ওদিকে যেতে ও পারছেনা। দুপুরের পর থেকে শরীফা একবার ও রুমে আসেনি।
আসেনি মানে আসতে দেয়া হয়নি। মেহের কে কয়েকবার বলেছে শরীফা কে ডেকে দিতে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। মেহের টা ও হয়েছে দুষ্টের হাড্ডি।
শরীফ মনে মনে বলে,,, বিয়ে করে লাভ কি হলো। নতুন বিয়ে করেছি বউটা এখন একটু পাশে পাশে থাকবে তা না। আমার মা,, বোন কেউ বুঝেনা বউটাকে আটকে রাখছে এভাবে। আর এদিকে আমার কি যন্ত্রনা হচ্ছে সেটা তো আমি বুঝি। শরীফ রেডি হচ্ছে আর এসব ভাবছে।
ফোনের রিংটোনের শব্দে আনাসের ভাবনা কাটলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো শরীফার বোনের নাম্বার থেকে কল।
শরীফ ফোন কানে নিয়ে বললো, আসসালামু আলাইকুম আপু।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছেন ভাইয়া?জী আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা সবাই কেমন আছেন?এইতো আছি আলহামদুলিল্লাহ।
-ভাইয়া শরীফা কে দেখে রাইখেন প্লিছ। জানেন নি তো ওর কতো বিপদ।
আপু আপনি চিন্তা করবেন না। শরীফা আমাদের এখানে ভালো থাকবে আর সেইফ ও থাকবে ইনশা আল্লাহ।
-জানি ভাইয়া কিন্তু কি বলেনতো অনেক আদরের বোন ও আমাদের তো তাই খুব চিন্তা হয়। ভাইয়া ভুল ত্রুটি হলে বুঝিয়ে নিয়েন।
-জী আপু আপনি চিন্তা করবেন না।
-আমার বোন টা কোথায় এখন?
-আপু ও বোধহয় আম্মুর রুমে । কথা বলবেন?
-হুম। কিন্তু সমস্যা হলে থাক আমি পরে ফোন দিবো।
-না আপু আমি শরীফা কে ডেকে। আপনাকে একটু পরেই ফোন দিবো।
-আচ্ছা।
শরীফ কল কেটে মেহেরের ফোনে কল দিলো। মেহের ফোন ধরলো। ওপাশ থেকে শরীফ বললো,৷ তোর ভাবীমনি কে একটু রুমে পাঠাতো?
-ভাইয়া তুই কিরে? এখানে অনেক মানুষ আছে এখন পাঠানো যাবেনা।
-একটা থাপ্পড় দিবো ফাযিল। আমি শখ করে ফোন করিনি। শরীফার আপু ওর সাথে কথা বলবে তাই আসতে বলেছি।
-ওহ আমি তো মনে করেছি…
-তুইতো কত কি মনে করিস। রাখ ফোন রাখ। তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দে ওকে শরীফ ফোন কেটে দিলো।
আমি রুম থেকে কোনভাবে বের হতে পারছিনা। পুরো বাসায় মানুষ গিজগিজ করছে। আধা ঘন্টা পর অনেক চেষ্টার পর ভালো করে মাথার কাপড় টেনে কেউ না দেখতেই আমি একরকম দৌঁড়ে রুমে আসলাম। রুমের দরজা খোলাই ছিলো। আমি রুমে ঢুকে দরজাটা আটকে দিলাম। একটা বড়সড় নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বললাম,,আল্লাহ বাঁচলাম!!!
বাব্বাহ!!! মানুষ যে নতুন বউ একটা পেলে কতরকম প্রশ্ন করতে পারে? এতক্ষণ নিজেকে সার্কাস সার্কাস লাগছিলো।
আমি পুরো রুমে ভালো করে পরখ করলাম কোথাও কেউ নেই। আপু তো বললো উনি নাকি বলেছে আপু ফোন করেছে। তাহলে কোথায় ফোন আর উনি বা কোথায় গেলো? আমি সবেমাত্র মাথার কাপড় ফেলে একটু বসেছি তখনি পিছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে মাথা রাখলেন।
আমি ভয় পেয়ে চমকে গিয়ে মাথায় কাপড় তুলতে গিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে উনাকে দেখতে পেয়ে বললাম, আপনি!!!! ভয় পেয়ে গেছিতো!!! এভাবে শব্দ না করে জড়িয়ে ধরার কোন মানে হয়??
শরীফের শরীফার কথায় কোন খেয়াল নেই। শরীফ শরীফার কে দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেলো। এ যে আকাশ থেকে পরীদের রাণী নেমে আসলো। একেবারে অপ্সরা। না না ও অপ্সরাকে হার মানাবে। সবুজ পরী। মনে হয় আকাশের চাঁদটা মাটিতে নেমে এসেছে।
আমি উনাকে হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে বললাম,শুনছেন?? আপনি ঠিক আছেন তো?
শরীফ ধ্যান ভঙ্গের মত করে বললো হুম,,, হ্যা,,,হ্যা,, বলো,, কিছু বলেছো?
-না কিছু বলিনি। আপনি কি এতক্ষন ভিনগ্রহে ছিলেন?
-জী না শরীফা গ্রহে ছিলাম?
-কি????
-না কিছুনা।
-এতক্ষন কোথায় ছিলেন আপনি? রুমে তো দেখিনি।
-বারান্দায় ছিলাম। তুমি এখন এভাবে সেজে আমার সামনে এসেছো কেন?
-আমি ভয় পাওয়া কন্ঠে বললাম, কেন এভাবে সেজেছি বলে রাগ করেছেন। আসলে আপু জোর করে সাজিয়ে দিয়েছে। আপনার ভালো না লাগলে সব মুছে ফেলছি।
উনি আমার হাত ধরে বললেন,,বেশি বুঝো কেন? আমি কিছু বলেছি? আসলে তোমাকে এভাবে মোহনীয় রূপে দেখে আমার চোখে নেশা ধরে যাচ্ছে উল্টাপাল্টা কিছু করতে ইচ্ছে করছে। মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। কেমন কেমন যেন করছে মনটা। ইচ্ছে করছে,,,,
আমি উনার মুখে হাত দিয়ে বললাম এই একদম না। প্লিজ না সরে যান। উল্টোপাল্টা কিছু করবেন না।
উনি আমার হাত সরিয়ে দুহাত দিয়ে আমার মুখটা তুলে ধরে কপালে ভালোবাসার পরশ ছুঁয়ে দিলেন। আমি আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম।তারপর আমার ঠোঁটি আস্তে করে ঠোঁট ছুঁইয়ে, ছেড়ে দিয়ে বললেন ম্যাডাম আমি অতোটা ও পাগল না। এখন কিছু করবোনা যা হবার রাতে হবে। ভালোবাসায় মাখামাখি হবো। কাছাকাছি আসা হবে একে অপরের অস্তিত্বে মিশে যাবো। এই রাত হবে তোমার আমার।
-আমি বললাম, আচ্ছা এভাবে লজ্জা দিয়ে কথা বলতে আপনার একটুও মুখে বাঁধেনা?
-না বাঁধেনা। বউয়ের সাথেই তো বলছি বাহিরের কোন নারীর সাথে তো না বলে ফোন নিয়ে আপুর ফোনে ডায়াল করে আমার কানে দিয়ে বললেন,, নাও আপুর সাথে কথা বলো। ফোনটা আমাকে দিয়ে উনি আবারো আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
আপুর সাথে কথা বলে আম্মু ফোন ধরতেই মা মেয়ে দুজন দুপ্রান্ত থেকে শব্দ করে কেঁদে উঠলাম।
-আম্মু তোমাদের ছাড়া থাকতে কষ্ট হচ্ছে আমার, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে
-ওর মা কান্না থামিয়ে বললো,,, তুই কাঁদলে আমরা ভালো থাকবো কি করে। এমন পরিস্থিতিতে মেয়ে বিয়ে দিয়েছি চাইলেও একটু দেখতে পারবোনা…..
#অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম
#পর্ব-১৫
#লেখিকা–ইসরাত বিনতে ইসহাক
আমি আবারো হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠি।
-কাঁদিস না মা। এখন ওটাই তোর বাড়ি। আমাদের কাছে তো দুদিনের অতিথি হয়ে ছিলি। এখন ওরাই তোর আপনজন। তোর শশুর শাশুড়ির কথা মেনে চলিস মা। জামাইয়ের কথামতো চলার চেষ্টা করবি সবসময় ।তাহলে সংসারে সুখ আসবে মা।
-হুম। তোমরা দোয়া করো।
-আচ্ছা জামাইকে দে তো কথা বলবো।
আমি ফোনটা উনার দিকে বাড়িয়ে ধরে বললাম আম্মু কথা বলবে। উনি ফোন কানে নিয়ে সালাম দিয়ে শাশুড়ির সাথে কথা বলতে লাগলেন। কথা শেষ করে ফোন কেটে আমার দিকে তাকাতেই দেখলেন এখনো ফুঁপিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছি।
উনি বললেন, কাঁদছো কেন?
-আমি জবাব না দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে বসলাম।
– কাঁন্না করার কি আছে?এমনভাবে কাঁদছো মনে হচ্ছে আমরা তোমাকে মেরেছি,,, কষ্ট দিচ্ছি,,, বা খাবার দিইনি। দেখো এভাবে কান্নাকাটি করলে কিন্তু আর কখনো কথা বলতে দিবোনা একদম বলে দিলাম?
-আমি টেনে টেনে বললাম,, আপনি,, কি,,করে,,, বুঝবেন আপনজন ছেড়ে এতো গুলো দিন থাকার কষ্ট কেমন। আপনাকে কিছুই ছাড়তে হয়নি তাই এভাবে বলতে পারছেন।
শরীফ আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন,,, সরি,,,সরি আমি ওইভাবে বলতে চাইনি। দেখো এভাবে কাঁন্নাকাটি করলে কি হবে বলোতো?এটাই এখন তোমার বাড়ি। তোমার সংসার। আর তুমি এভাবে কান্নাকাটি করলে, আম্মু তো আরো বেশি কষ্ট পাবে। উনাদের কষ্ট দেওয়াটা কি ঠিক হবে বলো। প্লিজ এভাবে কেঁদোনা আমার ও কষ্ট হচ্ছে।
আমি এবার শরীফ কে জড়িয়ে ধরে কান্না জড়ানো কন্ঠে বললাম, বিশ্বাস করুন আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে আব্বু আম্মুর জন্য। উনি আমার মাথায় হাত ভুলিয়ে বললেন,, আমি বুঝতে পারছি তো।
আমার মুখে হাসি ফোটাতে বললেন, আয়নায় গিয়ে দেখোতো কেমন পেত্নীর মত লাগছে তোমাকে? কাঁদলে একেবারে পেত্নী পেত্নী লাগে তোমাকে। আমি কান্না থামিয়ে বললাম,, কি!!আমি পেত্নী?
-হুম পেত্নি তো আমার পেত্নী।
আমি উনার বুকে নাক ঘষতে লাগলাম
শরীফ বললেন দেখোতো কেঁদে কেঁদে আমার শার্টটা ভিজিয়ে দিয়েছো। আর কখনো আমার সামনে কাঁদবেনা বলে দিলাম। কাঁদলে তোমাকে একটুও ভালো লাগেনা।
-আমি বললাম আচ্ছা আর কাঁদবোনা।
-হুম মনে থাকে যেন। বোকা মেয়ে!!! এভাবে বাচ্ছাদের মত কেউ কাঁদে? অবশ্য তুমি তো বাচ্চাই।
দেখোতো এতো সুন্দর করে সেজেছো সব নষ্ট করে দিয়েছো যাও মুখ ধুয়ে আসো আবার।
আমি মুখ ধুয়ে রুমে আসলাম। উনি বললেন দেখেছো নাক মুখ ফুলে কি অবস্থা। আচ্ছা শুনো আমি বাহিরে যাচ্ছি তুমি এখানেই থাকো ।
মেহের না আসা পর্যন্ত রুম ছেড়ে বের হবেনা। আর কোন পুরুষ মানুষের সামনে তোমাকে কেউ যেতে বললে যাবেনা। বলবে যে আমি নিষেধ করেছি কেমন?
-আচ্ছা।
উনি বেরিয়ে যেতেই আমি দরজা আটকে দিলাম। কিছুক্ষণ পর মেহের আপু এসে আমাকে নিয়ে গেলেন।
পুরো অনুষ্ঠান টা ভালো ভাবেই সম্পন্ন হলো। আমি না খেয়ে শুয়ে পড়েছি।
শরীফ সবার সাথে কথাবাত্রা সেরে রাত এগারোটায় রুমে আসে। ব্যস্ততায় খেতেও পারেনি। খাটের দিকে চোখ যেতে দেখলো শরীফা গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে।। ঘুমন্ত শরীফার মুখটা কেমন মায়াবী লাগছে। ঘুমালে নাকি মেয়েদের অন্যরকম সুন্দর লাগে যেমন এখন শরীফা কে লাগছে।
সত্যি এ সৌন্দর্য্যের কোন তুলনা হয়না। শরীফ না চাইতে ও গিয়ে ওর কপালে হালকা করে ঠোঁট ছোঁয়ায়।
এরপরের দিন ঘুম থেকে উঠে ঘড়িতে সময় দেখি সকাল সাড়ে পাঁচটা বাজে। উনি এখনো মসজিদে যায় নি? আজকে আর মসজিদে জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করা হবে না…
এই যে শুনছেন??
বেশ কয়েক বার ডাকলাম তাও উঠছে না। তাই মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো। নিজের চুল হাতে নিয়ে উনার কানের মধ্যে সুরসুরি দিতে লাগলাম।
উনি একপ্রকার লাফিয়ে উঠলেন।
শরীফা এভাবে কেউ ঘুম থেকে তুলে? একটু আদর করলেই তো আমি উঠে যাই। হুম, হয়েছে সেই কখন থেকে আপনাকে ডেকেই চলেছি, উঠার কোন নাম ই নেই।
এটা বলতেই উনি আমার পেটে ঠোঁট ছুঁয়ে, জড়িয়ে ধরে অলস ভঙ্গিতে আবার ঘুমিয়ে পরেন। আমি এবার না পেরে বললাম প্লিজ উঠেন নামাজের সময় শেষ হয়ে যাবে। উনি আগের অবস্থায় থেকেই বললেন তাহলে একটু আদর করো। আমি এক্ষুনি উঠে যাচ্ছি। আমি পারবো না। তাহলে আমি ও উঠবো না,আর আমি নামাজ আদায় করতে না পারলে তোমার দুষ।
আমি এবার আর না পেরে, উনার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম। আর এতে একটুও কাজ হলো না, উনি একের পর এক হাত দিয়ে ওনার গাল,নাক দেখিয়ে দিচ্ছেন। আমি এবার আর না পেরে দিলাম এক দৌড়। একদম বাথরুমে,,,,,
এদিকে শরীফ হাসতে হাসতে শেষ শরীফার কান্ড দেখে।
তারপর আমি ফ্রেস হয়ে অজু করে আসার পর ওনি ও ফ্রেস হয়ে অজু করে আসলেন,দুজনেই নামাজ আদায় করে নিলাম।
আজকে ঠিক করেছি সকালে কিছুতেই ঘুমাবো না আর আমি। জানি উনি ঠিক জোর করে আমাকে ঘুমিয়ে থাকতে বললেন।তাই উনাকে মনে করিয়ে দিতে বললাম,কি ব্যাপার বলেন তো, এখন যে আপনি আর এক্সারসাইজ করতে যান না??
শরীফ বললেন তোমার জন্যই তো যেতে পারি না….কি!! আমার জন্য? আমি কি আপনাকে ধরে রাখছি নাকি যেতে নিষেধ করছি??
তা করোনি। কিন্তু আমার পিচ্চি বউটা কে ছেড়ে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। হুম, হয়েছে।যখন মুটু হয়ে যাবেন আর আপনাকে চাকরি থেকে বের করে দিবে তখন বুঝবেন।
তা হচ্ছে না “ইনশা আল্লাহ”
এটা আমার স্বপ্নের চাকরি, কিছুতেই হাড়াতে দিব না। তাহলে যান এক্সারসাইজ করতে। আচ্ছা বাবা যাচ্ছি। এই বলে শরীফ চলে গেলেন। আমি বেড ঠিক করছি হঠাৎ উনি এসে আমার গালে উনার ঠোট ছুয়ে দৌড় দিলেন।
উনার এহেন কান্ড দেখে হেসে দিলাম আমি।
রুম ছেড়ে বের হলাম,দেখি সবাই ঘুমিয়ে আছে। এখন আমি কি করবো??
ছোট ছাদে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করি। আটটার দিকে মা ঘুম থেকে উঠে নাস্তা তৈরি করছে, আমি যাই সাহায্য করতে। সেই আগের মতই আমাকে কাজ করতে দিবে না। এবার আমিও বলি মা তোমার কথা আমি আর শুনছি না।
জোর করেই রুটি বানালাম। সবজি রান্নার জন্য তরকারি কাটলাম। তারপর মা রান্না করতে শুরু করলেন। বাসায় কয়েক জন মেহমান আছেন। তাদের জন্য কিছু পিঠা তৈরি করলাম।
অনেক সময় যাবৎ বসে বসে পিঠা তৈরি করার ফলে পা ব্যাথা হয়ে যায়, তাই মা বললো শরীফা এবার ঘরে গিয়ে একটু রেস্ট কর,যা। মা তুমি একা সব পারবে?
তখনি মরিয়ম আপু আসেন,আর পিঠা গুলো দেখে আপু বললেন বাহ এতো সুন্দর করে পিঠা তৈরি কে করেছে মা?? শরীফা করেছে।বেচারি সেই সকাল থেকে বসে বসে এগুলো করেছে, তাই বলছি এখন রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে, কিছুতেই যাচ্ছে না।
মরিয়ম আপু বললেন এখন তো আমি এসে গেছি। আমি মাকে হেল্প করছি। তুমি যাও শরীফা।
আমি রান্না ঘর ছেড়ে, সাইফের রুমে গেলাম, গিয়ে দেখি ও এখনও ঘুমাচ্ছে। আমি ডাক দিতেই, একটু চোখ খুলে আবার ঘুমিয়ে পরে।ভাই দুইটা পুরাই একরকম।
এই কিরে তোকেও কি এখন আদর করে ঘুম থেকে তুলতে হবে??
সাইফ এবার, পিটপিট করে চোখ খুলে বলে,ভাবীমনি তুমি কি ভাইয়া কে আদর করে ঘুম থেকে তুলেছো?
আমি আমতা আমতা করে বললাম কখন বললাম আমি? তুমি ই তো বললে,,
তুই ভুল শুনেছিস,উঠ তো এবার। এই বলে আমি তারাতাড়ি চলে এলাম। দুইটা ভাই ই বাঁদর।
শরীফ বাহির থেকে আসার পর সবাই একসাথে নাস্তা করলাম। আজকে উনি জোর করে আমাকে সবজি খাইয়েছেন। আমার ছোট বেলা থেকেই সবজি ভালো লাগে না। অবশ্য পরে খেয়ে দেখি খারাপ না খেতে ভালোই লাগে।
দুপুরের পর সব মেহমান চলে যায়। উনি কোন এক কাজে বাহিরে যান। এই আসা একদম এশার নামাজের পর আসেন। আমি কেমন জানি উনাতে অব্যস্থ হয়ে পড়ছি। উনি না থাকলে একদম ভালো লাগে না।১৪৭
রাতে খাবার খাওয়ার পর শরীফ বললেন,,,,
“আমি উনাকে মনে মনে নাম নিয়ে ডাকি কিন্তু উনাকে শুনিয়ে এখন নাম নিয়ে ডাকি নি, কবে যে পারবো আমি নিজেও জানি না”।
চল ছাদে যাই?রাত্রে খাওয়ার পর অল্প একটু হাঁটা শরীরের জন্য উপকারী।
আমি বললাম জ্বি, জানি আর এটা হাদীসের কথা। উনি বললেন আচ্ছা তাই নাকি? আমি তো হাদীসের কথা জানতাম না তবে, আমাদের শরীরের ফিটনেস এর জন্য আমরা করে থাকি আর কি। ওহহ আচ্ছা।
দু’জনে ছাদে এসে একটু হাঁটাহাঁটি করে, দুলনায় এসে বসলাম।
দশমীর চাঁদের আলোয় সারা ছাদ আলোকিত হয়ে আছে। শরীফ আমার চিবুকে হাত দিয়ে তুলে ধরে অনেকক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
“শরীফার মুখের উপর চাঁদের আলো পড়ে রূপসীকে আরো রূপসী করে তুলেছে”।
“শরীফের তন্ময় হয়ে সেই রূপসুধা পান করতে লাগলো। শরীফা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিল। শরীফের খুব ইচ্ছে হলো তার গোলাপী ঠোঁট একটা চুম্বন এঁকে দিতে। অতঃপর শরীফ নিজেকে সংযত রাখতে না পেরে, শরীফার তুলতুলে গোলাপী ওষ্ঠে ছোট্ট করে একটা চুম্বন এঁকে দিল। শরীফের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে শরীফা লজ্জা রাঙ্গা হয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো”।
আমার তো ছুটি আর দু’দিন আছে। তোমাকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো বলো তো??
উনার কথায় আমি মাথা তুলে তাকালাম। কথাটা যেন বুকে গিয়ে বিদলো। সাথে চোখে পানি টলমল করছে, তাই এদিক সেদিক তাকাচ্ছি না হয় ঠিক গরিয়ে পরবে।
শরীফ আমার অবস্থা বুঝতে পেরে আমাকে উনার সাথে জড়িয়ে নিলেন। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, উনাকে ছেড়ে যে আমি এক মূহুর্ত ও ভাবতে পারিনা।কি করে থাকবো আমি এতো গুলো দিন ওনাকে ছেড়ে???
আমি নিরবে চোখের পানি বিশর্জন দিচ্ছি।
শরীফ বললেন এই পিচ্চি এভাবে কাঁদছ কেন? মাত্র তো কয়েক মাসের ব্যাপার…..
#চলবে….
#চলবে…..