অনুভবে তুই পর্ব -১৯+২০

#অনুভবে_তুই
#লেখনীতে-ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১৯

ড্রইংরুমের ভেতর শুনশান নীরবতা। কেউ কোনো কথা বলছে না৷ সারাক্ষণ হাসি-ঠাট্টায় মেতে থাকা পুরো পরিবারটির মানুষজন এভাবে চুপচাপ বসে আছে তা মেনে নেওয়া যেন খুব কঠিন। সুহানা শেখের পাশে বসে থাকা তাঁর মেয়ে ইশা যখন ভ্রু কুঞ্চন করে তার দিকে তাকালো, সুহানা শেখের মুখটা মিইয়ে গেল। থমথমে চেহারায় অপ্রস্তুত হাসলেন তিনি। এতক্ষণ বাড়ির দুই কর্তা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। কেউ-ই কিছু বলছে না দেখে ইমতিয়াজ সাহেব গলা ঝাড়লেন। নিজের ছেলের মুখে বোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনতে পেয়ে রেগে গেলেন তিনি। উৎসকে খানিকটা উঁচু স্বরেই ধমক দিলেন, ‘মাথা খারাপ হয়েছে তোর উৎস? কিছু করি না বলে ভাবিস না তোর বাবা শাসন করতে জানে না!’

এতক্ষণে ঘরের ভেতরে থাকা নীরবতা ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেল। বাবার রাগ দেখেও দমে গেল না উৎস। শান্ত ভঙ্গিমাতেই সে তার বক্তব্য সবার সামনে উদ্যম নিয়ে বলতে লাগলো, ‘আমি সেটা ভাবিনা আব্বু। আর আমার মাথাও খারাপ হয় নি। আমি যা বলছি সজ্ঞানেই বলছি।’

‘আমার তো মনে হয় না তুই সজ্ঞানে আছিস। তোর ফুফুর নামে এসব বলার মানেটা কী? আর ওর সাথে রোজার চলে যাওয়ারই বা কী কানেকশন?’

উৎস বলতে গিয়ে থেমে গেল। আদ্রিশ দরজা দিয়ে ঢুকছে, বোধহয় বাইরে থেকে ফিরেছে। ড্রইংরুমের আলোচনার শেষ কথাগুলো ওর কানে গিয়েছে। আদ্রিশ এসেই সুহানা শেখের মুখোমুখি একটা সোফায় বসে পড়লো। গায়ের কোর্ট-টা খুলে পাশে রেখে শার্টের তিনটে বোতাম খুলে সে চাচার কথার জবাব দিল, ‘সেটা আমাদের প্রিয় ফুপিকেই জিজ্ঞেস করো না ছোটচাচা। তাহলেই তো ব্যাপারটা খোলাসা হয়ে যায়। তাই না?’

সুহানা শেখের রক্তশূণ্য চেহারা। তার মনটা খচখচ করছে। আদ্রিশকে কী মেয়েটা সব জানিয়ে দিয়েছে? সুহানা শেখ থমথমে গলায় বললেন, ‘কোন ব্যাপার খোলাসা করার কথা বলছিস বাবা?’

ফুফুর চেহারা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো আদ্রিশ। বিরক্তিকর একটা নিঃশ্বাস ফেলে পাশে পড়ে থাকা কোর্টটা মুঠোতে চেপে ধরলো সে। ব্যগ্র কন্ঠে বলল, ‘বুঝতে পারছো না? নাকি বুঝতে চাইছো না তুমি?’

‘কিছু না বললে বুঝবো কি করে আমার ভুলটা কোথায়?’

আদ্রিশ কপালে ভাঁজ ফেলে বলল, ‘ওয়েল। সরাসরি কথা বলতে আমি পছন্দ করি। সো বলেই ফেলি, আমাদের ছোট মা’র একমাত্র আদরের বোনের মেয়ে যাকে তোমরা রোজা বলো৷ সে বিগত কয়েক মাস যাবৎ আমাদের বাড়িতে থাকছে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। মেয়েটা যথেষ্ট নম্র, ভদ্র, মার্জিত ব্যবহার এবং ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। আমাদের বাড়ির সকলেই ওকে ভালোবাসে। কিন্তু হুট করেই তুমি যেদিন এলে সেদিন থেকে ওর ব্যবহারে পরিবর্তন দেখা গেল। একপর্যায়ে আমাদের বাড়ি ছেড়েও চলে গেলো। কাউকে কিছু না বলেই। অবশ্য সবাই জানে, রোজা ওর বাড়িতে বেড়াতে গেছে। কিন্তু এটা সত্য নয়৷ সে বরাবরের মতো আমাদের বাড়ি ছেড়ে গেছে।’

নিশিতা হতভম্ব হয়ে বললেন, ‘মানে? রোজা আর আসবে না? ও তো আমাকে কিছু বললো না?’

চাচীর কথার পিঠে আদ্রিশ হেসে বলল, ‘তাহলে বুঝো, তোমার বোনের মেয়েটা কেমন? তোমাকেই যখন কিছু বলে নি বাড়ির অন্যদের সে কেন বলবে? বোধহয় দয়া হয়েছিল, তাই উৎসকে জানিয়ে দিয়েছে।’

নেহা-ফিহা একসাথে ভাইয়ের দিকে তাকালো। উৎস মাথা নেড়ে আদ্রিশের কথায় সায় জানাতেই নিশিতা রাগী স্বরে বললেন, ‘ও বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে আর তুই আমাকে কিছুই জানাস নি? উলটো বলেছিস, বাড়ির জন্য মন কেমন করছিল বলে তুই ওকে গ্রামে বেড়াতে নিয়ে গেছিস!’

মায়ের কথার জবাবে উৎস মুখ কালো করে বলল, ‘তোমার বোনের মেয়েটা তো ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে চুপ করিয়ে দিয়েছে। নেহাৎ কাজের আন্টি আমাকে সবটা জানিয়েছে। নয়তো জানতেই পারতাম না ওর চলে যাওয়ার পেছনে কারণ কী!’

আদ্রিশের মা মিতালি রুক্ষ স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কারণটা ঠিক কী? আমাদের বাড়িতে কী ওর কোনো সমস্যা হচ্ছিলো?’

আদ্রিশ জবাবে বলল, ‘হ্যাঁ। প্রথম সমস্যা ফুপি, দ্বিতীয় সমস্যা আমি।’

ঘরভর্তি উৎসুক সদস্যরা হতবাক হয়ে গেলো ওর কথায়। ইনায়েত সাহেব শক্ত কন্ঠে বললেন, ‘এত ভনিতা না করে আমাদের বলবে তো হয়েছেটা কী?’

আদ্রিশ চোখ সরিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘একটু অপেক্ষা করো, সব জানতে পারবে।’

‘বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছো কেন?’

‘বিভ্রান্তি নয় বাবা। আমি ব্যাপারটা ধীরে-সুস্থে বোঝাতে চাইছি। ফুপির ভুলটা ধরিয়ে দিতে চাইছি। রোজার সঙ্গে আমাদের নেহা-ফিহা-ইশা-উৎস সবার সাথেই ভালো সম্পর্ক ছিল। শুধু ওদের না, বাড়ির প্রতিটি মানুষের সাথে ওর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু আমার সঙ্গে ছিল না। কেন জানো? প্রথমত আমি একটু রাগী, হুটহাট যে কাউকে ধমকে ওঠি। তবে গুরুত্বপূর্ণ কারণটা হলো ওকে আমার ভালো লাগতো। মানে পছন্দ করতাম। এজন্য ওর পিছু নিতাম, জ্বালাতাম যা আমার কাছে ঠিক মনে হতো সেটাই করতাম যেটা রোজা পছন্দ করতো না। সেজন্য আমাকে এড়িয়ে যেতো সবসময়। প্রয়োজন ছাড়া কোনো শব্দ ওর মুখ থেকে বের হতো না। আমি ওর প্রতি আরও এট্রাক্টিভ হয়ে পড়ি, একসময় বুঝতে পারি ওর জন্য আমার অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। আর তাঁর নাম ভালোবাসা। আমি ওই চুপচাপ, রাগী, ইগোওয়ালী, অহংকারী রোজানুকে যখনই বুঝতে শুরু করলাম তখনই আমার প্রিয় ফুপি আমার অনুভূতির অপব্যাখ্যা দেন ওর কাছে। ফলশ্রুতিতে ওর মনে তৈরি হয় রাগ, ঘৃণা। রোজা আমায় ভুল বুঝে, নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখতে চলে গেছে একমাত্র ফুপির কটুক্তি সহ্য করতে না পেরে। আচ্ছা ফুপি, আমিতো তোমাকে এসব বলি নি, তুমি কোথা থেকে জানতে পারলে যে আমি রোজাকে পছন্দ করি?’

সুহানা শেখ কিছু বললেন না। তা দেখে ইশা কপাল কুঁচকে বলল, ‘আমি বলেছিলাম মা’কে। তুমি রোজার প্রতি কেয়ারিং ছিলে, যেটা ফিহা আপু আর আমার চোখে পড়েছে। মাঝেমধ্যে গল্পের খাতিরে মায়ের সাথে শেয়ার করতাম। মা হয়তো সেখান থেকেই কিছু একটা আন্দাজ করে নিয়েছে।’

আদ্রিশ রোজাকে পছন্দ করে কথাটি জানতে পেরে উপস্থিত মুরুব্বি আর নেহা সবাই-ই চমকে ওঠলো। ফিহা আগেই তা অনুমান করেছিল। আর উৎস নির্বিকার, সে পুরো ব্যাপারটাই ভাইয়ের কাছ থেকে জেনেছে। এদিকে সুহানা শেখ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য মুখভঙ্গি পালটে কড়া স্বরে বললেন, ‘আমি তো কিছুই জানি না। ও- মেয়েকে আমি কি বলব? তাছাড়া ও হয়তো দেখতে রুপসী, এছাড়া আর কিছু আছে নাকি?’

ফুফুর ভড়কে যাওয়ার ব্যাপারটা চোখে পড়লো উৎসের। সে চুপচাপ বসে সুহানা শেখের কান্ডকীর্তি দেখছিল। বাড়ির এসব অশান্তিতে উৎস নিজেকে জড়াতে চায় না কোনোদিনই। কিন্তু যেখানে রোজাকে এতটা অপদস্ত হতে হয়েছে সেখানে দরকার পড়লে অবশ্যই প্রতিবাদ করবে। হোক সে নিজের ফুফু বা অন্য কোনো ব্যক্তি। এবার কঠোর গলায় সে বলল, ‘কথাটা দু’রকম হয়ে গেল না ফুপি? তুমি কিছুই জানো না, আবার ওর রূপ-গুণ নিয়ে কথা বলছো৷ এতেই বোঝা যায় তোমার ওকে পছন্দ নয়।’

ফ্যাসাদে পড়ে গেলেন সুহানা শেখ। আমতাআমতা করতে লাগলেন। ভাইদের সামনে এখন কীভাবে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবে? ইশা তো তার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দেবে। ভাবিদের সামনেই বা কোনমুখে কীভাবে দাঁড়াবে? চিন্তায় অস্থির হয়ে গাইগুই শুরু করে দিতেই ইশা তিক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘রোজাকে তুমি কেন অপছন্দ করো মা?’

সুহানা শেখ অবাক হওয়ার ভান করে বললেন, ‘সেটা কখন বললাম?’

ইশার মুখখানা অপমানে থমথম করছে। মা যখন মিথ্যে বলেছে তখন তখন তার চোখমুখ দেখেই যা বুঝার বুঝে নিয়েছে সে। ছলছল করছে দু’টি চোখ। থমথমে গলায় সে মা’কে জিজ্ঞেস করে, ‘তাহলে ওকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বাধ্য করেছো কেন?’

সুহানা শেখ মেয়ের প্রশ্নে সাজানো কথাগুলোতে তালগোল পাকিয়ে ফেলতে লাগলেন৷ বড় ভাই-ভাবিদের সামনে নিজের দোষ স্বীকার করতে নারাজ তিনি। একপর্যায়ে নিজের ইমেজটা বজায় রাখতে গর্জে ওঠে বললেন, ‘তুই চুপ থাক। বড়দের মাঝে এত কথা বলছিস কেন? আর যে মেয়েটা চলে গেছে তাকে নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন তোর? ওই মেয়ে রুপের যাদুতে আদ্রিশকে বশ করে ফেলেছে, সেটা দেখছিস না!’

আদ্রিশ বিরক্ত মাখা কন্ঠে বলল, ‘ফুপি প্লিজ চুপ করো। তোমাকে কে বলেছে রোজা আমাকে বশ করেছে?’

সুহানা শেখ বিদ্রুপাত্মক কন্ঠে বললেন, ‘নয়তো এসব কথা তোকে জানালো কেন? এতেই বুঝা যায় কে ধোঁয়া তুলসী পাতা আর কে বিচুটি পাতা।’

আদ্রিশ শান্ত থাকার চেষ্টা করে বলল, ‘তোমার সমীকরণে ভুল আছে। এসব রোজা আমাকে বলবে কেন? সে আমার সাথে নিজে থেকে কোনোদিন কথাই তো বলেনি। সেখানে তোমার নামে বিচার দিবে? সে তাঁর আত্মসম্মানবোধ নিয়ে বসে আছে। ও- মেয়ে এসব আমাকে বলবে? ছোট হয়ে যাবে না? আসলে তুমি যখন এসব ওকে বলছিলে তখন কাজের খালা সেখানেই ছিল, তিনি সব শুনতে পেয়ে উৎসকে জানিয়েছে। আর মানতে না পারলেও এটাই সত্য, আমি রোজানুকে ভালোবাসি।’

সুহানা শেখের গায়ে কেউ যেন আগুন ধরিয়ে দিলো। তিনি কর্কশ স্বরে বলতে লাগলেন, ‘কেন ভালোবাসবি? ও কোন দিক থেকে তোর যোগ্য? ও-ইতো দেখতে সুন্দর। এসব মেয়ের চরিত্র কেমন হয় ঢের জানা আছে। সারাক্ষণ রোজা রোজা করে একেকজন অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিস! আমার ইশা কোনদিক থেকে কম? ওর দিকে তো ফিরেও তাকাস না।’

আদ্রিশ হতভম্ব। ফুফুর কথার মানে বুঝতে কষ্ট হলো না ওর। ইশাকে কেন অন্য নজরে দেখতে যাবে? ওকে তো সারাজীবন বোনের মতো ভালোবেসে এসেছে। ফুপি কি তাহলে ওর থেকে এসব আশা করে বসে ছিল? আর হিংসার বশেই রোজাকে অপমান করেছে? এসব শুনে ইশা ঘৃণাভরে ওর মা’কে দেখলো। মা এখনো ওই একটা স্বপ্ন নিয়েই পড়ে আছে? যেখানে ও নিজেই রাজি না। ইশা এবার আর চুপ থাকতে পারলো না৷ বলে ওঠল, ‘তুমি যে আমার মা, ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। ছিঃ!’

সুহানা তেড়ে ওঠলেন, ‘বড় বড় কথা মুখে? এক চড়ে দাঁত ফালাবো তোর। মায়ের কথার অবাধ্য হয়ে অন্যের মেয়ের গুণগান গাইতে লজ্জা করে না? শেষমেশ আদ্রিশকে নিলো তো পটিয়ে? তুই কী করেছিস আজ পর্যন্ত? রুপ-যৌবন কিছুই তো কাজে লাগাতে পারলি না। বেহায়া মেয়ে!’

ইনায়েত সাহেব বোনের লাগামহীন কথাবার্তায় বেশ চটে গেলেন। তাঁর বাড়ি থেকে সুহানা শেখ রোজাকে অপমান, অপদস্ত করেছে আর তিনি জানতেই পারলেন না? আবার ইশার সাথেও কি বিশ্রি ভাষায় কথা বলছে! আদ্রিশকে মেয়ে জামাই কর‍তে চায়? কখনো তো মুখফুটে বলেন নি সুহানা শেখ। যেখানে মেয়েই রাজি না সেখানে এত কথার মানে কী? ইনায়েত সাহেবের মুখ রাগে থমথম করছে। তিনি সটান ওঠে দাঁড়িয়ে বললেন,’তুই আমার বোন হয়ে এরকম একটা কাজ করলি? রোজা তো আমাদের ইশার চেয়েও বয়সে ছোট। আর তুই ইশার সাথে কীভাবে কথা বলছিস? তোর মনে যা ছিল কখনো তো আলোচনা করিস নি আমাদের সাথে? তাহলে?
আমাদের বাড়ির মান-সম্মানের কথাটাও একবার ভাবলি না? খুব তো বলিস তুই আমাদের ভালো চাস। এসবই তার নমুনা?’

সুহানা শেখ মাথা নিচু করে বললেন, ‘ওই মেয়ের জন্য আমাকে কথা শুনাবেন বড় ভাই?’

ইনায়েত সাহেব স্পষ্ট গলায় বললেন, ‘তুই আর কখনো আমদের বাড়িতে আসবি না। ইশা আমাদের বাড়িতেই থাকবে৷ তোর মতো মায়ের দরকার নেই ওর, যে নিজের মেয়েকে অবধি কটু কথা বলতে ছাড়ে না। তুই মা? আমার তো ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে। এসব মহিলার জায়গা আমার বাড়িতে হবে না। বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে।’

সুহানা শেখ ব্যথিত চোখে তাকিয়ে রইল। বড় ভাইয়ের কাছ থেকে এমন কথা আশা করেন নি তিনি। ছোট ভাইয়ের দিকে তাকালেও আশানুরূপ কোনো ফল পাওয়া গেল না। কেউই তার হয়ে সুপারিশ করলো না। ইশা মায়ের থেকে এই ব্যবহার আশা করে নি। সবার চোখে ওকে নিচু করিয়ে দিয়েছে। ছলছল করা চোখ থেকে বেরিয়ে এলো পানি। একপর্যায়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ দোতলায় চলে গেল নেহার সঙ্গে। উৎস বসে মোবাইল স্ক্রল করছে। আদ্রিশ নিষ্পলক দৃষ্টিতে ফুফুর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সুহানা শেখ সবার মুখেই তার জন্য ঘৃণা দেখতে পেয়ে দমে গেলেন। কথা বলার সাহস হলো না তার। লজ্জায়, অপমানে গাঁট হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন কেবল। বুঝতে পারলেন, এ বাড়িতে তার উপস্থিতি কেউই কাম্য করছে না৷ নিজের সন্তানও না। বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে তার। ভুলটা বুঝতে তার বড্ড দেরি হয়ে গেল সুহানা শেখের। একরাশ ঘৃণাযুক্ত চোখ আর অপমান নিয়ে সেভাবেই তিনি বেরিয়ে এলেন ভাইয়ের বাড়ি থেকে।
#অনুভবে_তুই
#লেখনীতে-ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-২০

সুহানা শেখ যে রাতে চলে গেলেন, সেইরাতে কারোরই ঠিকমতো খাওয়া হলো না। নেহার বিয়ের শপিং উপলক্ষে সবার মধ্যে যে উত্তেজনা কাজ করছিলো নিমিষেই তা ম্লান হয়ে গেল৷ নিজের একমাত্র ছোটবোনের কার্যকলাপ আদ্রিশের বাবা এতোটাই ক্ষুণ্ণ হন যে, রাতে আর ঘর থেকেই বের হননি। ইমতিয়াজ সাহেবও লজ্জিতবোধ করেন। ভায়রায় মেয়েকে এভাবে অপমানিত করেছে তারই বোন আর তিনি এতদিন পরে জানলেন? মিতালি-নিশিতা ননদের কান্ডে বিমূঢ় হয়ে গেলেন। বাড়ির মেয়েদের কারোরই মন ভালো নেই। তবে উৎস দিব্যি আছে। সে খাওয়াদাওয়া সেরে নিজের ঘরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মগ্ন। তার মতে, যে অন্যায় করেছে সে প্রাপ্য শাস্তি পেয়েছে, এতে না খেয়ে থাকার মতো তো কিছু হয় নি। কিন্তু আদ্রিশকে স্বাভাবিক দেখায়। পূর্ব দিনগুলোর মতোই নিজের কর্মকান্ড বজায় রেখেছে। খাওয়াদাওয়া সেরে, অফিসের কিছু ফাইল নিয়ে বসে কাজ দেখলো অনেক রাত পর্যন্ত। তারপর নিজ হাতে তৈরি করা কড়া কফির মগটা নিয়ে ব্যলকনির ইজি চেয়ারটাতে বসে থাকে। কফির ঘ্রাণে নিস্তেজ দৃষ্টিজোড়া যখন হঠাৎ হঠাৎ রোজার ব্যলকনিতে পড়ে, বুকের ভেতর চিনচিনে সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করে আদ্রিশ। নিজেকে মনে হয় পৃথিবীতে একা বসবাসরত একজন মানব। নিদারুণ একাকীত্বতা নিয়ে ব্যলকনিতেই কেটে যায় সারাটি রজনী। শেষ রাতের বর্ষণের মনোমুগ্ধকর ছন্দপতনে হালকা করে চোখ খুলে তাকায়, ঘুমে ব্যঘাত ঘটে। পূর্ব দিকের কৃষ্ণাভ আসমানে উদিত জ্বলন্ত নক্ষত্রটির পানে তাকিয়ে ভাবে, রোজা কি ওকে কখনোই অনুভব করে না?

ওদিকে গ্রাম্য স্নিগ্ধ বাতাস যখন জানালা ভেদ করে ভারী পর্দাগুলো ওড়িয়ে দেয়, কপাট অবলোকন করে রোজাও বাইরে দৃষ্টি দেয়। পাশে ঘুমিয়ে থাকা চাচাতো বোনটিকে একপলক দেখে আড়ালে চোখ মুছে। রাত গভীর হলেই ওর মনে পড়ে যায় ক্ষতগুলো। নেহার এনগেজমেন্টের দিন ওর সাথে করা আদ্রিশের ব্যবহারগুলো। সত্যিটা কি আদৌ জানেনা! কিন্তু আজকাল মনের কোণে যে ছোট্ট ভাবনা হুটহাট উদয় হয়, সেখানে আদ্রিশকে নির্দোষ বলেই মনে হয়। ওর বেদনাভরা কথাগুলো মনে পড়লেই রোজার মন খারাপ হয়। লোকটা ওকে ভালোবাসে, তা সে জানে। কিন্তু এই যে, রাত হলেই আদ্রিশকে দেখার ইচ্ছে জাগে, এলোমেলো চুলে, ক্লান্ত শরীরে যখন রোজার হাতের কফি খেতে খেতে যে সুখপূর্ণ বাঁকা হাসিটা দিতো রোজা সেটা খুব মিস করে। দিনের আলোতে মানুষটা সারাক্ষণ ওর মনোজগতে নিঃশব্দে বিচরণ করে। গোধূলির রক্তিম আলোয় বেপরোয়া লোকটিকে দেখার যে তীব্র বাসনা জাগ্রত হয়, কিছুতেই তা সামাল দিতে পারে না রোজা। বাড়ির সকলের সামনে নিতান্তই ভালো থাকার অভিনয় চালিয়ে গেলেও, রোজা জানে, সে আসলে ভালো নেই। আচ্ছা, মানুষটা কী ওকে ভুলেই গেল? গ্রামে চলে আসার পর একদিনও তো খোঁজ নেয় নি! রোজার কপট অভিমান হয়, রাগ হয়। বাড়ির পেছনের জঙ্গল থেকে নাগচাঁপার সুবাস ভেসে আসে। ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়। রাতের নীরবতাকে দুমড়েমুচড়ে মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের সুমধুর কন্ঠে উচ্চারিত হয় ফজরের আযান। নির্ঘুম রাতের শেষ প্রহরটাতে মন খারাপ ভাবটাকে কয়েক মুহূর্তের জন্য ভুলে থাকতে রোজা বিছানা ছেড়ে ওঠে বসে। চুলগুলো হাতখোঁপা বেঁধে নিয়ে গায়ে ওড়না জড়িয়ে নেয়। বেশ ঠান্ডা লাগছে। পায়ে স্যান্ডেল চাপিয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে। সিঁড়িকোঠা অন্ধকার। ভয়ভয় ভাবটা কাটিয়ে কলপাড় থেকে অযু সেরে আসে। তারপর নিজের ঘরে ফিরে নামাযে বসে।
নামাজ শেষ হতেই খুলে রাখা জানালা বন্ধ করে গুটিশুটি মেরে বিছানায় শুয়ে পড়ে। দু-চোখ ভারী হয়ে নেমে আসে ঘুম।

সকালে ফোন বাজার বিরক্তিকর শব্দে রোজার ঘুম ভাঙে। বালিশের নিচ থেকে হাতড়ে ফোনটা বের করে ঘুমুঘুমু চোখে স্ক্রিনে তাকিয়ে উৎসের নাম দেখতে পায়। ফুল নেটওয়ার্ক পেয়ে যাওয়ায় রোজা দ্রুত উঠে বসে। মুহূর্তেই চোখ থেকে ঘুম পালিয়ে যায়। কলটি রিসিভ করে জিজ্ঞেস করে, ‘হ্যালো ভাইয়া?’

উৎস জবাব দেয়, ‘এখনো ঘুমাস না-কি? কন্ঠস্বর এমন কেন?’

রোজা অস্ফুট স্বরে বলল, ‘ঘুমাচ্ছিলাম। রাতে ঘুম হয় নি। তুমি তো বাড়িতে পৌঁছে আর ফোন দাওনি? মা অপেক্ষায় ছিল! তোমার শরীর ঠিক আছে তো? ভালোভাবে পৌঁছাতে পেরেছো তো?’

‘হুম ভালোই আছি আলহামদুলিল্লাহ।’

ইতস্তত করে রোজা জিজ্ঞেস করে, ‘বাসার সবাই কেমন আছে? ভালো আছে তো?’

বোনের প্রশ্ন শুনে উৎসের হাসি পেয়ে যায়। কোনোরকমে হাসিটা আটকে বলে, ‘এত প্রশ্ন একসাথে? বাসার সবাই ভালো আছে। আসলে তুই কার খোঁজ নিতে চাচ্ছিস?’

রোজা থমকায়। ধরা পড়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ওঠেপড়ে লাগে। কপালে ভাঁজ ফেলে ঢোক গিলে। তারপর কম্পিত কণ্ঠে বলে, ‘কারোর না তো!’

উৎস নির্বিকার হয়ে বিছানায় বসে। গলার স্বরটা পালটে যায়। অনেকটা গম্ভীর সুরেই বলে, ‘আমার থেকে লুকিয়ে লাভ নেই রোজানু। তুই আসলে ভাইয়ের খবর জানতে চাইছিস। খোঁজ নিয়ে কোনো লাভ আছে? তুই কিছু কর‍তে পারবি? সে তো দেবদাসের মতো নিজের ঘরে পড়ে আছে। খাবারটাও নিজ ঘরেই খায়, তাছাড়া খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয় না, কারো সাথে বেশি কথাও বলে না।’

ফোনটা কানে রেখেই রোজা ডান-পাশে তাকায়। ওর পাশে শুয়ে ছিল চাচাতো বোন মিলা। এতক্ষণ খেয়াল করেনি রোজা। মিলা হয়তো অনেক আগেই ওঠে বেরিয়ে গেছে, ঘরে নেই। রোজা দরজাটা লাগিয়ে দেয়। তারপর ব্যস্ত গলায় প্রশ্ন করে, ‘কেন? ওনার কি হয়েছে?’

‘কি হবে? ভালোবাসায় ব্যর্থ প্রেমিকদের যে অবস্থা হয়, তাই হয়েছে। তুই জানিস, বাড়িতে সেদিন কত বড় একটা ঝামেলা হয়ে গেছে?’

‘কীসের ঝামেলা?’

‘ফুপির কারণে তুই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছিস, তা জেনে আব্বুরা খুব ক্ষেপে গেছে। ফুপিকে তো বাড়িতে আসতেই মানা করে দিয়েছে।’

রোজা আঁৎকে ওঠে বলল, ‘সামান্য কারণে এটা করার প্রয়োজন ছিল না৷ ঝামেলাটা তোমার ভাই তৈরি করেছে। ওনার জন্যই তোমাদের ফুফু আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন। শাস্তিটা তোমার ভাইয়ের প্রাপ্য।’

উৎস রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চাপিয়ে বলে, ‘তুই যদি সামনে থাকতি না, আই সোয়্যার তোর গালে দশটা থাপ্পড় লাগাতাম। যতক্ষণ না তোর গাল ফেটে রক্ত বেরুতো, ততক্ষণ থাপ্পড় চলতেই থাকতো। এই মেয়ে, তুই কী খাইয়া বড় হইছিস? যেটা জানোস না সেটা নিয়ে অহেতুক একজনকে দোষারোপ করিস কেন? ফুপি তোকে বলছিল যে ভাই তাকে এসব বলছে? বল..’

উৎসের রাগ আর ধমক শুনে চমকে ওঠে রোজা। পরক্ষণেই নিজেকে স্বাভাবিক বোঝাতে শুকনো হেসে বলে, ‘না। ওনি তো বলেন নি।’

‘তাহলে এতো ভ্রান্ত ধারণা মনের মধ্যে রাখিস কেন? ভাই তো এই সম্বন্ধে কিছুই জানায়নি।’

‘তাহলে?’

উৎস ওকে পুরো ঘটনাটা খুলে বলে। সমস্ত ঘটনা শুনে রোজার মুখমন্ডল রক্তিম বর্ণ ধারণ করে। অবশেষে মানুষটাকে ভুল বুঝলো সে? উৎস যতক্ষণ কথা বললো ততক্ষণে একটি শব্দও ব্যয় করে নি রোজা। নিজের ওপর রাগে জর্জরিত হয়ে যায়। সুহানা শেখের জন্য নির্দোষ মানুষটাকে ভুল বুঝে এত কথা শুনিয়েছে ভাবতেই নিজের গালে ঠাস করে চড় মারার প্রয়াস জাগে। উৎসের কলটি কেটে সে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে বিছানায়!

————————

ইনায়েত সাহেব বসে আছেন ড্রইংরুমের সোফায়। তিনি ছাড়াও ইমতিয়াজ সাহেব, বাড়ির দুই বউ মিতালি, নিশিতা, আদ্রিশ আর উৎস আছে। নেহা-ফিহা-ইশা তিনজন নিজেদের ঘরে। ড্রইংরুমের পরিস্থিতি খুব গম্ভীর। কারো মুখেই রা নেই। যদিও কি কারণে আলোচনায় বসা হয়েছে তা আন্দাজ কর‍তে পারছে আদ্রিশ, কিন্তু বাবার কথা শুরু হওয়ার অপেক্ষায় আছে সে। বিমূঢ় পরিস্থিতিটাকে শিথিল করে তুলতেই ইনায়েত সাহেব গলা ঝাড়লেন। নিজ পুত্র আদ্রিশের দিকে দৃষ্টি রেখে বললেন, ‘তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে।’

আদ্রিশ গম্ভীর গলায় বলল, ‘রোজার বিষয়ে তো?’

‘হুম, ঠিক।’

আদ্রিশ ভ্রু কুঁচকালো, ‘কি জানতে চাও?’

‘তুমি কী সত্যিই ওকে পছন্দ করো?’

আদ্রিশ ব্যগ্র কন্ঠে জবাব দেয়, ‘সত্যিই।’

ইনায়েত সাহেব নড়েচড়ে বসেন। সচরাচরই আদ্রিশ স্পষ্টবাদী, সেটা জানেন তিনি। কিন্তু ছোট ভাইয়ের ভায়রার মেয়েকে যে আদ্রিশ পছন্দ করে বসে থাকবে ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবেননি তিনি। বাড়ির সকলেই খুব পছন্দ করে রোজাকে, অবশ্য তিনি নিজেও করেন। নেহা-ফিহা-ইশাকে যেভাবে নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখেন, রোজার সম্বন্ধেও ঠিক ততটাই কনসার্ন তিনি। আদ্রিশের কাছ থেকে উত্তর পেয়ে আবারও জিজ্ঞেস করেন, ‘এটাকে কি ভালোবাসা ধরে নেব? নাকি মোহ? দুটোর মধ্যে বিশাল পার্থক্য আছে কিন্তু। তুমি বুঝেশুনে কথা বলো।’

আদ্রিশ সামান্য হেসে বলল, ‘আমি ছোট বাচ্চা নই বাবা। যথেষ্ট বুঝি। আমি নিজের কাছে খুব ভালোভাবেই পরিষ্কার আছি। আমার দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। তোমাদের কী এতে আপত্তি আছে?’

ইনায়েত সাহেব ভাই ও ভাইয়ের বউয়ের দিকে তাকালেন। কারোরই এতে আপত্তি নেই। মিতালির সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তিনি বেশ পছন্দই করেন রোজাকে। আর বাড়ির ছোট সদস্যরা তো রোজা বলতে পাগল। সবার মতামত নিয়েই তিনি আদ্রিশের প্রশ্নের উত্তর দিলেন, ‘আমাদের কারো কোনো আপত্তি নেই।’

আদ্রিশ স্মিত হেসে বলে ওঠলো, ‘আমারও কোনো সংশয় নেই। কিন্তু ছোটচাচীর বোনের মেয়েটার সংশয় আছে। জানোই তো, অহেতুক বিষয়ে সন্দেহ করে সে আমাকে কতটা অবিশ্বাস করেছে! সম্পর্ক হয় তখনই, যখন দুজন দু’জনকে বিশ্বাস করে, ভরসা করে। কিন্তু রোজার মধ্যে তার ছিঁটেফোঁটাও দেখি নি আমি। আসলে ও কোনোদিনই বুঝতে চায়নি আমাকে। তাছাড়া আমাদের মধ্যে যতটুকু সম্পর্ক ছিলো, তা অনেকদিন আগেই চুকেবুকে গেছে। তাই আমি চাই, এ ব্যাপারটা নিয়ে তোমরা আর মাথা ঘামিও না। সবচেয়ে বড় কথা কী জানো? রোজা আমাকে ভালোবাসে না।’

একথা শুনে উৎস কিছু একটা বুঝাতে চাইলো আদ্রিশকে। কিন্তু সে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলো ব্যাপারটা যেন এখানেই শেষ হয়। আর কোনো কথা উঠুক বা বাড়াবাড়ি হোক তা ও চায় না। সবার উদ্দেশ্যে এই কথাটা ব্যক্ত করে ড্রইংরুম থেকে প্রস্থান করে আদ্রিশ। উৎস ওর যাওয়ার পানে নির্বাক চেয়ে থাকে। ভাইয়ের চাপা অভিমানটা বেশ ভালোভাবেই টের পায় সে। নেহা-ফিহা-ইশাকে ব্যাপারটা জানায় ও। সবারই মনক্ষুন্ন হয়৷ চারজন বসে শলাপরামর্শ করে। ঠিক করে নেহার বিয়েকে উপলক্ষ্য করে জোরজবরদস্তি করেই হোক, রোজাকে এ বাড়িতে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। বাড়ির কারোরই যখন ওদের সম্পর্কে আপত্তি নেই, একটা সুযোগ নিয়ে দেখাই যাক না রোজা-আদ্রিশের বন্ধনটা হয় কি-না!

————————————————————————-

[
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here